বিস্তৃতির_মাঝে_তুমি_আমি #পর্ব_৪ #লেখিকা_অনামিকা_তাহসিন_রোজা

0
13

#বিস্তৃতির_মাঝে_তুমি_আমি
#পর্ব_৪
#লেখিকা_অনামিকা_তাহসিন_রোজা

“দেখুন ম্যাডাম! শুধুমাত্র আপনার কথাতেই আমি অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমি পারিনি। আমার চেষ্টার মধ্যে তো কোনরকম অবহেলা ছিল না। ”

রোজা ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। একটু আগে সে সিআইডি অফিসার মিস্টার আকরাম চৌধুরী সাথে দেখা করতে এসেছে। পাকিস্তান যাওয়ার আগে সে এই অফিসার কে জাভেদ রায়ান সম্পর্কে সমস্ত তথ্য বের করার দায়িত্ব দিয়েছিলো। আকরাম চৌধুরীর কথা শুনে রোজা একটু হেসে বলে উঠলো,
” আপনারা কী শুরু করেছেন বলুন তো? এই জাভেদ রায়ান সম্পর্কিত কোনো কিছুই দেখছি আপনাদের কাছে সিরিয়াস না। আমি যাকেই এই বিষয়ে বলছি, সেই বলছে পারেনি, পারছে না, সম্ভব না! এমন কেন বলুন তো?”

রোজার কথা শুনে আকরাম চৌধুরী একটু দমে গেলেন। অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বললেন,
“ম্যাম প্লিজ, এভাবে বলবেন না। আমি একজন সিআইডি অফিসার। এটা আমারও কাজ। শুধু শুধু আমি কেন এটা অবহেলা করব আপনি বলুন?”

রোজা ভ্রু কুচকে বলল,
“সেটা তো আপনারাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু আমি আপনাদের কাজে কোনো রকম সিরিয়াসনেস দেখতে পাচ্ছি না।”

এ পর্যায়ে আকরাম চৌধুরী চুপ থাকলেন। রোজা বাঁকা হেসে চেয়ার থেকে উঠে পড়ল। এরপরে আকরাম চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,
” আপনি আমার কোনো কাজই ঠিক মত করতে পারেননি। কেন পারেননি সেটাও আমি বুঝতে পারছি না। যাই হোক, শেষবারের মতো একটা কাজ দিচ্ছি। সেই কাজটা করে দিলে খুশি হবো।”

আকরাম চৌধুরী বিনয়ের সাথে বলল,
“বলুন ম্যাম, কি করতে হবে?”

রোজা বলল,
“জাভেদ রায়ান দেশে ফিরেছে। কারণ দেশে তার ফ্যাক্টরিগুলোতে আগুন লেগেছে। ৬৭ কোটি টাকা লস! এখন আপনার কাজ হলো, কে বা কারা জাভেদ রায়ানের ফ্যাক্টরি গুলোতে আগুন লাগিয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করা”

আকরাম চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে বলল,
” কিন্তু ম্যাম, এটা জেনে আমাদের কী লাভ?”

রোজা আবারও বাঁকা হেসে বলল,
” শত্রুর শত্রু বন্ধু হয় জানেন তো!”

বলেই হাতে থাকা সানগ্লাসটা পড়ে রোজা সিআইডি ব্যুরো থেকে বেরিয়ে আসলো।

<<<<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>>>>>>

সৌরভ কিচেন রুমে আহমেদের জন্য স্ট্রবেরির জুস বানাচ্ছে। একটু পরেই তার ফোন বেজে উঠলো। ভালো করে হাত মুছে সে ফোনটা তুললো।

” হ্যাঁ রিয়াদ ভাই! বলো!”

রিয়াদ আশেপাশে তাকিয়ে একটু সতর্ক হয়ে ফিসফিস করে বলল,
” শোন সৌরভ, ম্যাম একটু আগে সিআইডি ব্যুরতে গিয়েছিলো।”

সৌরভ না বুঝে বলল,
” কেনো?”

রিয়াদ আরো বেশি ফিসফিস করে বলল,
” আবার জিগায়! জানিস না তুই? আচ্ছা শুন,তুই শুধু আহমেদ স্যার কে বল যাতে উনি সাবধান হয়ে থাকে। ম্যাম জাভেদ রায়ানের ফ্যাক্টরিগুলোতে কে আগুন লাগিয়েছে সেটা বের করেই ছাড়বে। স্যারকে সাবধানে থাকতে বল। আর হ্যাঁ কোনো ক্লু যাতে না পাওয়া যায়!”

সৌরভ ভ্রু কুচকে বলল,
“কী বলছো রিয়াদ ভাই? তোমার কি মাথা টাথা গেছে সব? ম্যামের কি আবার ক্লু লাগবে? কোন ক্লু দরকার নেই উনার। বেশিক্ষণ না! তুমি দেখো,২৪ ঘন্টার মধ্যে বের করে ফেলবে যে আসলে আহমেদ স্যারই আগুন লাগিয়েছে!”

রিয়াদ সরু চোখে বলল,
” এমন ভাবে বলছিস যেন মনে হচ্ছে আহমেদ স্যার ধরা পড়লে তোর খুব ভালো লাগবে! তুই জানিস, ম্যাম এমনিতেই স্যারের ওপর কতটা রেগে আছে। এরপরে এসব জানতে পারলে স্যারের আর চান্স নেই!”

সৌরভ একটু হেসে বলল,
” আরে ধুর! রিয়াদ ভাই, আমাদের স্যার কি কাঁচা খেলোয়াড় নাকি?”

রিয়াদ মাথা চুলকে বলল,
” তা অবশ্য ঠিক! এগুলো তো আবার বাঘে বাঘে লড়াই!”

<<<<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>>>>>>>

ফোনে স্ক্রিনে মামনি লেখা ভেসে উঠেছে। রোজা তৃতীয়বারের মতো ফোনটা কেটে দিলো। এই পর্যন্ত তিনবার রাজিয়া রহমান রোজা কে কল করে যাচ্ছে, কিন্তু রোজা কোনমতেই ফোন ধরছে না! খুবই বিরক্তি নিয়ে রাজিয়া রহমান আবারো রোজা কে কল করলো।

রোজা একটা মিটিংয়ে ব্যস্ত ছিল। এভাবে বারবার কল করাতে সে বাধ্য হয়ে মিটিং এ বসে থাকা সকলের উদ্দেশ্যে বলল, “এক্সকিউজ মি প্লিজ! ”
বলেই রোজা ফোনটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। কলটা ধরার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে বাঘিনীর ন্যায় আওয়াজ আসলো,
“আমাকে কি ভেবেছিস তোরা? জোকার নাকি আমি? তোরা কি শুরু করেছিস আমাকে বলতো! একজন তো সেলিব্রেটি হয়ে গেছে। এমন সেলিব্রেটি হয়ে গেছে, যার সাথে দেখা করার জন্য এখন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া লাগে। আর একজন সারাদিন চোর ডাকাতের সাথে ওঠাবসা করচ্ছে! হায় আল্লাহ, এগুলো দেখার জন্য আমি এখনো বেঁচে আছি!”

রোজা ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলে বলল,
“মামনি, তুমি আবার শুরু করলে!”

রাজিয়া রহমান এবার বলল,
” আমি শুরু করেছি! হ্যাঁ তাইতো, আমি তো শুরু করেছি! আর তোরা! তোরা কি করছিস? তোরা আমার জীবনটাকে খেয়ে ফেলেছিস বুঝলি!”

রোজা নমনীয় হয়ে বলল,
“মামনি কেন ফোন দিয়েছো বলোতো? আমি একটা মিটিং এ ছিলাম। অনেক ব্যস্ত!”

রাজিয়া রহমান এবার একটু অসহায় কন্ঠে বলবো,
” হ্যাঁ বুঝেছি, এখন তো আমি পর হয়ে গেছি না! তোদের কাছে তো আমি এখন বোঝা! এখন তো তোদের কাজই তোদের সব! কি জানি আমি কেন এখনো বেঁচে আছি? মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ম’রে’ই যাই! ”

রোজা সাথে সাথে বলে উঠলো,
“আস্তাগফিরুল্লাহ!!! মামনি তুমি থামবে! কি চাও বলো তো! আমি জানি তুমি নিশ্চয়ই কোনো কারনে ফোন দিয়েছো, এই জন্য আমাকে ডাইভার্ট করতে এখন এসব কথা বলছো!”

সাথে সাথেই রাজিয়া রহমানের কুমিরের কান্না থেমে গেল। সে এবার একটু ভাব নিয়ে বলল,
“আজকে রাতে আমার বাড়িতে আসিস।এখানে রাতের খাবারটা খেয়ে যাস।”

রোজা বললো,
“ব্যাস !এটুকুই তো!”

“হ্যাঁ এটুকুই!তোদের কাছে তো আমার আর কিছু চাওয়ার নেই! শুধু সময় করে একটু আসিস রাত্রেবেলা। খাবারটা খেয়ে যাস আমার বাড়িতে। ”

রোজা বললো,
“আচ্ছা ঠিক আছে। রাতে তোমার বাড়িতে খেয়ে তবে আমি আমার ফ্ল্যাটে ফিরব। ওকে? এখন উল্টাপাল্টা কথা একদম বলবে না। খুবই ব্যস্ত! পরে কথা বলছি। রাখছি।” ফট করে ফোনটা কেটে দিলো রোজা।

<<<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>>>>>>

আসলে রাজিয়া রহমান হলো আহমেদের ফুপুর দূঃসম্পর্কের বোন। তবে তিনি আহমেদের ফুফুর খুব ভালো বন্ধু ছিলেন এবং তারা দুই বোনের মত থাকতো।আহমেদের বাবা আজ থেকে প্রায় চার বছর আগে মারা যায়, আর আহমেদের মা তার জন্মের এক বছর পরই মারা গেছে। বলতে গেলে সেই সময় আহমেদের মায়ের অভাবটা রাজিয়া রহমান পূরণ করেছিল। আহমেদের নিজের ফুপু কানাডাতে থাকে। রাজিয়া রহমানের সাথে আহমেদের বাবার অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল বলে রাজিয়া রহমান তাদের বাড়িতে থাকতো। এই কারণে আহমেদকে সে ছোট থেকে দেখাশোনা করে এসেছে। রাজিয়া রহমান অবিবাহিত। কোন এক কারনে সে কখনো বিয়ে করেনি। তবে আহমেদকে সে নিজের ছেলের থেকেও বেশি দেখে। আবার রোজার মা-বাবা যখন বেঁচে ছিল তখন রোজার মা রাজিয়া রহমানের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। যেই কারণে ছোটবেলা থেকেই রোজা রাজিয়া রহমানকে অনেক ভালো করে চিনে,।রোজার মা-বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে রোজাকে রাজিয়া রহমান নিজের মেয়ের মত করে দেখে এসেছে। বলতে গেলে সে রোজা এবং আহমেদকে নিজের ছেলে মেয়ের মত করে দেখে।আর রোজা এবং আহমেদও রাজিয়া রহমানকে তাদের মায়ের স্বরূপ সম্মান করে!!!

<<<<<<<<<<<<>>>>>>>>>>>>>

রাত আটটার মধ্যে রোজা সমস্ত কাজ শেষ করে গাড়িতে ওঠে পড়ে। অহনা বলে ওঠে,
” ম্যাম এখন কি ফ্ল্যাটে যাব? ”

রোজা বলল,
” না ফ্লাটে না,,,, মামনির কাছে যাব। ”

নাহিদ উৎসুক হয়ে বলল,
” কেন ম্যাম? আন্টি কি অসুস্থ?”

” আরে না, মামনি বলল রাতের খাবারটা যেন মামনির বাসায় খেয়ে যাই। মাঝে মাঝে মামনি যে কি এসব জেদ শুরু করে? কি আর বলবো? কিভাবে বোঝাবো বলোতো? এখন আমার সাথে মামনির বেশি দেখা করাটা খুবই বিপদজনক! আমার তো এখন শত্রুর অভাব নেই! যদি কখনো কোনোভাবে আমার কোনো শত্রু জানতে পারে যে, মামনি আমার আপনজন! তাহলে মামনির নিরাপত্তা থাকবে না! এটা আমি কিভাবে বোঝাবো? ”
অত্যন্ত বিরক্তির সাথে বলল রোজা।

অহনা বলল,
“ম্যাম, আন্টি তো আপনাকে অনেক ভালোবাসে। এই কারণে হয়তো,,,,আর আমরা তো বারবার আন্টিকে বলেছি আমরা কিছু সিকিউরিটি গার্ড রাখি আন্টির কাছে। আন্টি একা একা বাসায় থাকে। সিকিউরিটির দরকার আছে। কিন্তু আমাদের কথা তো শুনে না!”

রোজা বললো,
“এটাই তো সমস্যা! ”

নুরা বলে উঠলো,
” আপনারা কার কথা বলছেন ম্যাম?”

রোজা নুরার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার মামনির কথা বলছি। চলো আজকে পরিচয় করিয়ে দেবো।”

নাহিদ বলল,
” আমরাও যাব ম্যাম আপনার সাথে?”

রোজা বলল,
“তো কি আমি একা যাবো? তোমাদের কি মনে হয় মামনি আমাকে একা একা খাওয়ার জন্য ডেকেছে! তোমাদের কেউ খাওয়াবে এজন্য যেতে বলেছে! চলো যাই,বেশি রাত করা যাবে না।”

নাহিদ গাড়ি স্টার্ট দিল।

মিনিট দশেকের মধ্যেই তাদের গাড়ি একটি মাঝারি আকারের একতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। রাজিয়া রহমান একা একা থাকার কারণে খুব বেশি বড় বাড়ি নেয়নি। রোজা তাকে অনেক সুন্দর একটা বাড়িতে থাকতে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি সেটা মানে নি। রাজিয়া রহমানের এই বাড়ির পাশেই একটা রেস্তোরাঁ আছে, যেটা তার নিজের। তার হাতের রান্না অনেক ভালো। এই কারণে সে নিজ উদ্যোগে একটি রেস্তোরা খুলেছে, যেখানে মোটামুটি বেশ ভালোই লোকজন যাওয়া আসা করে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরল।
গাড়ি থেকে নামার পর রোজা নাহিদকে বলল,
” গাড়িটা ঠিকঠাক সাইড করে রাখো!”

এরপরে বাড়ির দিকে এগোতে গেলেই রোজার চোখ আটকে যায়। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে সামনের দিকে। রোজার পিছু পিছু অহনাও এসে রোজাকে এমন স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,সে সামনে তাকিয়ে দেখে যে, একটা নীল রঙের বড় গাড়ি পার্ক করা রয়েছে বাড়ির সামনে। বিষয়টা আন্দাজ করতে পেরে অহনা মনে মনে বলল,
” সিট! তাহলে আন্টি এই কারণে ম্যাম কে ডেকেছে! আজ যে আবার কেমন ঝড় উঠে কে জানে?”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here