অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে #Part_9 #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
4

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_9
#ইয়াসমিন_খন্দকার

নিঝুমের থেকে এহেন ত্যাড়া উত্তর পেয়ে আবরাজের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সে নিজের মেজাজ হারিয়ে ফেলল এবং ফোনটা একটা আছাড় দিল৷ যার ফলে মেঝেতে পড়ে তার দামী ফোনটা ভেঙে গেল।

এদিকে এলা তো নিঝুমের প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷ সে নিঝুমের কাঁধে হাত রেখে বলে,”তোমার সাহস দেখে আমি মুগ্ধ নিঝুম। আমি ভাবতেও পারিনি একজন নেটিভ বাঙালি মেয়ে এতটা সাহসী আর স্পষ্টভাষী হতে পারে।”

নিঝুম মৃদু হেসে বলে,”শুধু আপনারা পশ্চিমা নারীরাই সাহসিকতা আর বীরত্বের পরিচয় দিতে পারেন এমনটা ভাববেন না। আমরা বাঙালি নারীরাও কোন অংশে পিছিয়ে নেই। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমরাও নিজেদের হয়ে প্রতিবাদ করতে শিখে গেছি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে একটা পিঁপড়াও ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেয় না।”

ম্যাক্স কিছুটা ভীত স্বরে বলে,”কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে যে আবরাজ না জানি কেমন রিয়্যাক্ট করে। ওর এপার্টমেন্টে যাবার পর না আবার কোন ঝামেলা হয়।”

এলা বলে ওঠে,”কোন ঝামেলা হবে না৷ আমি আছি না নিঝুমের পাশে। তাছাড়া আমাদের নিঝুমও কম যায়না।”

এলার কথায় নিঝুম হেসে ওঠে। অতঃপর তারা সবাই মিলে রওনা দেয় ইস্ট লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এর দিকে যা ঐতিহাসিকভাবে বাঙালি এবং বিশেষ করে সিলেটি বাঙালিদের বসবাসের জন্য পরিচিত। এটি লন্ডনের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি অবস্থিত এবং এখানে ঐতিহাসিক ও আধুনিক স্থাপত্যের সমন্বয় দেখা যায়। এটি টেমস নদীর উত্তরে অবস্থিত। এর পাশেই রয়েছে ক্যানারি ওয়ার্ফের মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক এলাকা।

ম্যাক্স একটা এপার্টমেন্টের সামনে গাড়ি থামালো। অতঃপর এলা ও নিঝুম গাড়ি থেকে নামলো। এলা নিঝুমকে বলে উঠল,”এই বিশাল বাড়িটা দেখতে পাচ্ছ এটাই আবরাজের এপার্টমেন্ট। ও এখানেই থাকে।”

নিঝুম জিজ্ঞেস করে,”কিন্তু আমি যে শুনেছিলাম উনি ওনার মামা-মামির সাথে থাকেন?”

এলা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আবরাজের মামি কয়েক বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তারপর আবরাজের মামা লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্কে চলে যান। এখন বেশিরভাগ সময় তিনি ওখানেই থাকেন এবং ওখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন। আবরাজেরও আর ঐ বাড়িতে মন টেকে নি তাই এখানে চলে এসেছে।”

নিঝুম বলে,”ও আচ্ছা।”

ম্যাক্স বলে,”এখনো মনে হয় আবরাজ ফেরেনি। তোমরা ভেতরে চলো।”

এলা নিঝুমকে বলে,”এসো আমার সাথে।”

নিঝুম এলার সাথে হাঁটতে শুরু করে। এলা নিঝুমকে এখানকার পরিবেশ, পরিস্থিতি সম্পর্কে বলছিল। সে বলল,”এখন আবহাওয়া বেশ শীতল যাচ্ছে, যেকোন সময় স্নো ফল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই তুমি সবসময় শীতবস্ত্র পড়ে থাকবে আর প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবার চেষ্টা করবে না।”

নিঝুম মাথা নাড়িয়ে সমর্থন জানায় তার কথায়। এরমধ্যে হঠাৎ করে ম্যাক্স বলে ওঠে,”দরজায় তো তালা মারা। আমরা ভেতরে কিভাবে ঢুকব?”

এলা ম্যাক্সকে বলে,”কেন, তুমি আবরাজের কাছ থেকে চাবি নেও নি?”

ম্যাক্স মাথা চুলকে বলে,”আমার তো সেটা মনেই ছিল না।”

এলা রাগান্বিত হয়ে বলে,”গবেট একটা। এখন কি হবে?”

নিঝুম বলে,”উনি কখন ফিরতে পারে?”

এলা জিজ্ঞেস করে,”উনি বলতে কার কথা বলছ?”

“আপনাদের বন্ধু..”

“ও আবরাজের কথা বলছ। ওর আসার তো কোন ঠিক ঠিকানা নেই। চলো একটা কাজ করি, তোমাকে লন্ডন শহরের কিছু বিশেষ যায়গা ঘুরিয়ে আনি।”

নিঝুম নম্রস্বরে বলে,”না মানে..আসলে আমি না জার্নি করে ভীষণ ক্লান্ত। তাই আর ঘুরতে ইচ্ছা করছে না। আমার একটু বিশ্রামের প্রয়োজন।”

এলা জিভ কেটে বলে,”হ্যাঁ, তাই তো। এই দেখো, আমার মাথাতেই ছিল না। আচ্ছা, তুমি দাঁড়াও আমি দেখছি কি করা যায়।”

ম্যাক্স বলে ওঠে,”আমি বরং আবরাজকে একটা ফোন করে দেখি ও কি বলে।”

এটা বলেই ম্যাক্স আবরাজকে ফোন লাগায়৷ কিছু সময় রিং হবার পর আবরাজ ফোনটা রিসিভ করে। ম্যাক্স আবরাজকে বলে,”কিরে কোথায় তুমি?”

“রাস্তায় আছি, কেন?”

“আমরা তো তোমার বউকে নিয়ে তোর এপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার তো তোমার থেকে চাবি নেয়ার কথাও মনে ছিল না। এখন কি করব?”

আবরাজ রেগে বলে,”একদম ঐ মেয়েটাকে আমার বউ বলবে না। আর একটা কাজ কর, তুমি আর এলা নিঝুমকে ওখানে রেখে বরং চলে যাও। আমি প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছি।”

“ঠিক আছে।”

বলেই ম্যাক্স ফোন রেখে দিয়ে এলাকে বলল,”আবরাজ তোমাকে আর আমাকে নিঝুমকে এখানে রেখে চলে যেতে বলল। চলো আমরা যাই।”

এলা বলে,”মানে টা কি? নিঝুমকে একা এভাবে রেখে আমরা চলে যাব?”

“আরে বুঝতে পারছ না কেন,ওরা হাজবেন্ড ওয়াইফ একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করবে। আবরাজ মুখে যাই বলুক না কেন নিঝুম তো ওর বউ। আমরা কেন শুধু শুধু কাবাবমে হাড্ডি হবো?”

ম্যাক্সের এই কথাটা খুব একটা হজম হয় না এলার। কারণ সে আবরাজকে যতটুকু চেনে সে যে নিঝুমের সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করার জন্য এমন বলছে না সেটা সে নিশ্চিত। এলার মাথায় ঘুরতে লাগল,”তাহলে আবরাজের উদ্দ্যেশ্য কি?”

এদিকে এলাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ম্যাক্স বলে ওঠে,”কিরে? দাঁড়িয়ে আছ কেন? চলো আমরা যাই।”

এলা বলে,”এভাবে নিঝুমকে একা রেখে যেতে আমার মন চাইছে না।”

ম্যাক্স বলে ওঠে,”আহ, তুমিও না শুধু শুধুই চিন্তা করছ। আবরাজ তো বললোই, ও প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। আমাদের শুধু শুধু চিন্তা করতে হবে না। চলো তো এখন। আজ মার্ভেল সিরিজের নতুন মুভি রিলিজ হবার কথা। আমি তোমার আর আমার জন্য টিকিটও কেটে রেখেছি। মুভি শুরু হবার টাইম হয়ে এসেছে। জলদি চলো আমরা মুভিটা দেখতে যাই।”

এলার মন একদম সায় দিচ্ছিল না। তাই সে বলে,”আবরাজ না আসা পর্যন্ত আমি যাব না।”

কিন্তু ম্যাক্স জোরাজোরি করতে থাকে। এই অবস্থা দেখে নিঝুম বলে,”আপনারা যান না। আমি সবকিছু সামলে নিতে পারবো।”

এলা বলে,”যা বলছ ভেবে বলছ তো? আবরাজ কিন্তু তোমার উপর রেগে থাকতে পারে। যদি রাগের মাথায়…”

নিঝুম বলে ওঠে,”আমি ওনার রাগকে বিন্দুমাত্র পরোয়া করি না। আপনারা যান, আমি এদিকটা সামলাতে পারব।”

এদিকে নিঝুমের সায় শুনে ম্যাক্স আরো বেশি জোরাজোরি করতে থাকে। শেষপর্যন্ত এলা রাজি হয়েই যায় ম্যাক্সের সাথে মুভি দেখতে যেতে। তবে যাওয়ার আগে নিঝুমকে বলে যায়,”সাবধানে থেকো। আর কোন সমস্যা হলে আমাকে জানিও।”

এই বলে সে নিজের ফোনটা নিঝুমের হাতে দিয়ে বলে,”এখানে ম্যাক্সের নাম্বার পাবে। তোমার কাছে মনে হয় এখনো এই দেশের সিম নেই, তাই আমার ফোনটাই দিলাম। যদি কোন দরকার হয় ম্যাক্সের নাম্বারে কল করো।”

বলেই এলা ম্যাক্সের সাথে চলে যায়। নিঝুম তাদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। তারা দুজন চলে যাবার প্রায় ২০ মিনিট পরে নিঝুম গাড়ির শব্দ শুনতে পায়। এর কিছু সময় পর হন্তদন্ত হয়ে নিঝুমের সামনে চলে আসে আবরাজ। তার চোখে যেন আগুন জ্বলছে। আবরাজ বলে ওঠে,”তুমি..তোমাকে জাস্ট আমার সহ্য হচ্ছে না।”

বলেই সে নিঝুমকে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে,”খুব তো বড় মুখে বলেছিলে আমার দয়ায় এখানে থাকতে আসো নি তাহলে আমার এপার্টমেন্টে কি করছ? দূর হয়ে যাও আমার চোখের সামনে থেকে।”

নিঝুমের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে এই ব্যাপারটা। সে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আমি যা বলেছিলাম তাই করে ছাড়ব। আপনার দয়ায় আমি থাকব না।”

বলেই সে ধুপধাপ পা ফেলে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে রইল। এলার দেয়া ফোনটাও তার থেকে পড়ে গেছিল ধাক্কা খেয়ে যেটা সে খেয়াল করল না। নিঝুম বাইরে এসে একটা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে রাগে, কাপতে থাকল। আবরাজের করা অপমানের কথা মনে করে তার চোখে জল চলে এলো। তবুও সে কাঁদল না। বলিষ্ঠ হয়ে চোখের জল মুছতে লাগল। এদিকে আকাশ হঠাৎ করে তুষারে ছেয়ে গেল। কিছু সময়ের মধ্যেই ভীষণ তুষার ঝড় শুরু হলো। নিঝুমের পরণে হালকা পোশাক থাকার দরুণ কে কাপতে লাগল। তার উপর তার লন্ডনের এত শীত সহ্যেরও ক্ষমতা নেই৷ কিন্তু তবুও সে আবরাজের এপার্টমেন্টে না ঢুকে ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল।
#গল্পঃঅশ্রুজলে
to be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here