অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে #Part_14 #ইয়াসমিন_খন্দকার

0
1

#অশ্রুজলে_বোনা_বিয়ে
#Part_14
#ইয়াসমিন_খন্দকার

নিঝুম আবরাজের দূর্ঘটনার খবর শুনে আর ঠিক থাকতে পারে না। সাথে সাথেই সে ভীষণ অস্থির হয়ে ওঠে। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে সে দ্রুত দৌড়ে এপার্টমেন্টের বাইরে চলে আসে৷ আসার সময় অবশ্য নিজের সাথে করে কিছু টাকাও নিয়ে আসে যা আবরাজের মানিব্যাগে ছিল। কারণ বাইরে চলার জন্য তো টাকার দরকার আর নিঝুমের কাছে এই দেশের মুদ্রা অর্থ্যাৎ পাউন্ড ছিল না। তাই তাকে বাধ্য হয়েই টাকাটা নিতে হয়। বাইরে এসে নিঝুম একটা ট্যাক্সি দাঁড় করায়। আজ আবহাওয়া ভালো হয়ে যাওয়ায় আবারো রাস্তায় যান বাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। সেজন্য ট্যাক্সি পেতে তাকে কোন বেগ পেতে হয় না। অতঃপর নিঝুম সেই ট্যাক্সি চালককে হাসপাতালের ঠিকানাটা বলে দেয়। অতঃপর তিনি রওনা দেন।

হাসপাতালে পৌঁছে নিঝুম দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে লিফটের যায়। যিনি কল করেছিলেন তিনি বলেছিলেন আবরাজকে তিন তলায় এডমিট করা হয়েছে। তাই নিঝুম লিফটে উঠে তিন তলায় যাওয়ার জন্য বোতামে চাপ দেয়। এরপর তিন তলায় পৌঁছে গিয়ে রিশেপসনিস্টের কাছে গিয়ে বলে,”মিস্টার আবরাজ খান কোথায় এডমিট আছেন?”

“আপনি কি ওনার বাড়ির লোক?”

“হুম।”

“কেবিন নাম্বার ৭০৩ এ চলে যান। ওনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলে নেবেন। আপনাকে কিছু জরুরি কথা বলার আছে।”

নিঝুমের বুকটা ধক করে ওঠে। সে বলে,”কিছু কি হয়েছে?”

“যান। গেলেই জানতে পারবেন।”

নিঝুম অস্থির চিত্তে কেবিন নাম্বার ৭০৩ এর দিকে যায়। ভেতরে ঢুকেই দেখতে পায় আবরাজের মাথায় ব্যান্ডেজ করা এবং সে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। নিঝুম দেখতে পায় আবরাজের জ্ঞান ফিরেছে। সে চোখ খুলেই আছে। নিঝুম আবরাজকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”আপনি ঠিক আছেন তো?”

আবরাজ নিঝুমের দিকে অবাক চোখে তাকায়। অতঃপর বলে,”কে আপনি?”

আবরাজের কথায় নিঝুম অবাক হয়ে যায়। সে বলে,”আমাকে চিনতে পারছেন না? আমি নিঝুম।”

“নিঝুম..কই এই নামে কাউকে চিনি বলে তো মনে পড়ছে না। আচ্ছা, আমার নাম কি?”

আবরাজের কথা শুনে নিঝুম চরম বিস্মিত হয়। হতবাক স্বরে বলে,”কিসব বলছেন আপনি?”

এমন সময় নিঝুমের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডাক্তার এসে বলেন,”আপনি কি ওনার বাড়ির লোক?”

‘হুম।’

“আপনাকে কিছু জরুরি কথা জানানোর আছে। আসলে এই দূর্ঘটনার ফলে উনি মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলেন। যার কারণে ওনার একটা সার্জারি করতে হয়েছে আমাদের। সেই সার্জারির সারভাইবেল রেট অনেক কম ছিল কিন্তু থ্যাংকস গড যে উনি ভালো আছেন। তবে এই সার্জারির ফলে ওনার মেমোরি লস হয়ে গেছে। এখন তাই ওনার আর কোন স্মৃতিই মনে নেই।”

নিঝুম হতবাক স্বরে বলে,”কি!! ওনার আগের কিছু মনে নেই!”

“না, নেই।”

“ওনার কি স্মৃতি ফিরবে না ডক্টর?”

“হয়তো ফিরবে। তবে সময় লাগবে।”

নিঝুম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ডাক্তার আরো বলেন,”এখন ওনার খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আপনি যেহেতু ওনার পরিবারের লোক তাই আপনার ওনার বেশি খেয়াল রাখতে হবে। এক মুহুর্তের জন্যেও ওনাকে চোখের আড়াল হতে দেয়া যাবে না। আর ওনার মাথায় যেন চাপ না পড়ে সেই ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। বুঝতে পারছেন?”

“হুম।”

“গুড।”

এরইমধ্যে আবরাজ হঠাৎ করে বলে ওঠে,”আমি এখানে কি করছি? আমি এখানে থাকব না। আমায় এখান থেকে যেতে দিন।”

নিঝুম আবরাজকে বলে ওঠে,”আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন তারপর আমি আপনাকে আপনার বাড়িতে নিয়ে যাব।”

আবরাজ অবাক স্বরে বলে,”আমার বাড়ি আছে?”

“হ্যাঁ, আপনার খুব সুন্দর একটা এপার্টমেন্ট আছে। গেলেই দেখতে পাবেন।”

“আপনিও কি আমার সাথে থাকেন?”

নিঝুম মাথা নাড়ায়। আবরাজ জিজ্ঞেস করে,”আপনি আমার কি হন?”

নিঝুমের মুখ হঠাৎ করে শুকিয়ে যায়। আবরাজ তো এই সম্পর্কটাকে স্বীকৃতিই দেয়নি জ্ঞানবশত। তাহলে কি তার এটা বলা ঠিক হবে? আবরাজ উত্তরের আশায় নিঝুম এর দিকেই তাকিয়ে ছিল। নিঝুম মলিন হেসে বলে,”আমি আপনার স্ত্রী।”

“আমার স্ত্রী!”

আবরাজের কিছু মনে পড়ছিল না। তাই সে নিজের মাথায় হাত রাখে। ডাক্তার বলে ওঠে,”আপনার নিজের মাথায় কোন চাপ নেয়ার দরকার নেই। আস্তে আস্তে সব মনে পড়ে যাবে। মিসেস খান আপনি নিজের হাজবেন্ডকে সামলান।”

“আচ্ছা।”

বলেই নিঝুম আবরাজে দিকে তাকিয়ে বলে,” মনোবল হারাবেন না। আমি আছি আপনার পাশে। আপনার পাশে থেকে আপনার স্মৃতিশক্তি ফেরাতে আমি আপনাকে সাহায্য করব।”

আবরাজ নিঝুমের দিকে অনেক আশা নিয়ে তাকায়। যেন নিঝুমই এখন তার একমাত্র ভরসা।

~~~~~~~~~~~~~
সেদিনটা আবরাজকে হাসপাতালেই কাটাতে হয়৷ ইতিমধ্যে ম্যাক্স এবং এলাও আবরাজের অসুস্থতার খবর পেয়ে নিজেদের কাজ মাঝপথে ফেলে ছুটে আসে আবরাজকে দেখার জন্য সেদিন দুপুরেই। তাদের দেখেই নিঝুম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এলা নিঝুমের দিকে এগিয়ে এসে বলে,”আবরাজ কেমন আছে এখন? শুনলাম ওর নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে। কিভাবে হলো এসব?”

নিঝুম সব ঘটনা খুলে বলে। এবং শেষে বলে,”উনি এখন নিজের সমস্ত স্মৃতি হারিয়ে ফেলেছেন। কিচ্ছু মনে করতে পারছেন না।”

ম্যাক্স করুণ স্বরে বলে,”তাহলে কি ও এখন আমাদেরকেও চিনতে পারবে না?”

নিঝুম না-বোধক মাথা নাড়ায়। ম্যাক্স এর মন খারাপ হয়ে যায়। এলা ম্যাক্সকে ভরসা দিয়ে বলে,”চিন্তা করো না। ওর যে বড় কোন ক্ষতি হয়নি এটাই অনেক। আশা করছি শীঘ্রই ও সুস্থ হয়ে যাবে।”

ম্যাক্স ও এলিনা আবরাজের সাথে দেখা করতে আসে। ম্যাক্স এসেই আবরাজকে বলে,”কেমন আছ তুমি?”

আবরাজ অবাক হয়ে বলে,”কে আপনি?”

“আমি ম্যাক্স আর ও হলো এলিনা। আমরা তোমার বন্ধু।”

আবরাজ নিজের মাথা চেপে ধরে বলে,”আমার কিচ্ছু মনে পড়ছে না”

নিঝুম বলে,”ঠিক আছে, তুমি নিজের মাথায় জোর দিও না। ধীরে ধীরে সব মনে পড়ে যাবে।”

আবরাজ নিঝুমকে বলে,”আমার না খুব ভয় লাগছে এমন অপরিচিত মানুষদের মধ্যে।”

“আপনার কি কাউকে বিশ্বাস হচ্ছে না?”

আবরাজ নিঝুমের দিকে আবেগঘন চোখে তাকিয়ে বলে,”আমার শুধু আপনাকেই বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে। অন্য আর কাউকে নয়!”

আবরাজের কথায় নিঝুমের মনে অন্যরকম অনুভূতি খেলা করতে থাকে। সে কি বলবে কিছু বুঝতে পারে না। এরইমধ্যে ডাক্তার এসে বলে,”আপনারা কেবিনটা ফাঁকা করুন প্লিজ, এভাবে এত লোক থাকা ভালো না। উনি যে কান্ডিশনে আছেন তাতে করে এত লোক সমাগম ওনার মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটাতে পারে।”

এলা বলে ওঠে,”ঠিক আছে, আমরা যাচ্ছি।”

বলেই এলা ও ম্যাক্স কেবিন থেকে বের হয়। নিঝুমও বের হতে যাবে এমন সময় হঠাৎ করে আবরাজ বলে ওঠে,”আপনি প্লিজ যাবেন না নিঝুম। আপনি গেলে আমার একদম ভালো লাগবে না। আপনি আমার পাশেই থাকুন প্লিজ।”

আবরাজের থেকে এমন কথা শুনে নিঝুম পুরোই অবাক হয়ে যায়। যেই আবরাজ জ্ঞানত কখনোই তার সাথে ভালো ব্যবহার করে নি আজ সে স্মৃতি হারানোর পর এতটাই বদলে গেল যে নিঝুমের সাথে এত ভালো ব্যবহার করছে, নিঝুমের উপর এতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। নিঝুম বুঝতে পারে না তার কেমন প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিৎ। তবুও আবরাজের অনুরোধ সে ফেলতে পারে না। আবরাজকে ভরসা দিয়ে বলে,”আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি সবসময় আপনার পাশেই আছি। আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাব না।”

নিঝুমের কথায় আবরাজের মুখে স্বস্তির হাসি ফুটে ওঠে।

to be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here