#তুমিময়_বসন্ত পর্ব১৫.

0
445

#তুমিময়_বসন্ত পর্ব১৫.

#writer_Mousumi_Akter

ঘড়িতে সকাল সাতটা কোকিলের কুহু ডাক কান ভেদ করে মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করছে।আমি কানে হাত দিয়ে শব্দ কানে না পৌছানোর জন্য চেষ্টা করছি।ভীষণ ঘুম চোখে জড় সড় ভাবে এঁটে ধরেছে।এমন সময় কারো আলতো স্পর্শে কেঁপে উঠলাম আমি।আড়ষ্ট দুটো হাত আমায় আকড়ে ধরেছে খুব শুক্তপক্তভাবে।ঘুমে চোখ খোলার চেষ্টা করলাম।হালকা চোখ খুলে দেখি আয়াস আমায় জড়িয়ে ধরে রেখেছে।আয়াসের স্পর্শ ভীষণ ভালো লাগছে।সেই সাথে ভীষণ লজ্জা ও করছে।হঠাত আয়াস এমন করছে কেনো?জানিনা আমার কি হয়েছে আমি কেনো আয়াস কে বাঁধা দিতে পারছিনা।আয়াসের হাতের বাঁধন থেকে ছোটার জন্য চেষ্টা করছি কিন্তু আয়াস আরো শক্তভাবে জড়িয়ে ধরলো।

আমি একরাশ লজ্জা মুখে নিয়ে বললাম,

“দেখুন ছাড়ুন আমায়, এসব কি করছেন।আমার কিন্তু ভীষণ লজ্জা লাগছে।”

আয়াস মৃদু হেসে বললো,

“লজ্জা নারীর ভূষণ, লজ্জা লাগলে কি জড়িয়ে ধরা যাবেনা ডিয়ার মিসেস। ”

এটুকু বলেই আয়াস গালে একভাবে কতগুলো চুমু দিতেই আমজ খুব জোরে ধাক্কা মেরে দিলাম।সাথে সাথে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।ঘুম ভাঙতেই দ্রুত উঠে বসলাম আমি।বিছানার পাশে তাকিয়ে দেখি আয়াস নেই।আয়াস নেই দেখে মনের মাঝে একটু বিষন্নতা কাজ করলো।বোধহয় আয়াস থাকলেই ভালো হতো।হঠাত আয়াসের জন্য ভীন্ন এক অনুভূতি কাজ করছে।এই অনুভূতি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে হচ্ছে।হঠাত করেই তার জন্য ভালো লাগা কাজ করছে।তার কথা মনে হতেই কোথা থেকে ভালো লাগার হাসি দুই ঠোঁটের কোনায় জড় হচ্ছে।এবার যেনো আরো বেশী লজ্জা পেলাম আমি।লজ্জায় চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে আমার।কিছুক্ষণ আগের স্বপ্ন টা আমার একদম ই স্বপ্ন মনে হয়নি।মনে হচ্ছিলো যা হয়েছে তা সত্যি হয়েছে।ওটা যদি স্বপ্ন ই হবে তাহলে এখনো কেনো মনে হচ্ছে তার স্পর্শ শরীর জুড়ে রয়েছে।কেনো মনে হচ্ছে গালে তার ওষ্ট স্পর্শ এখনো লেগে আছে।কেনো আর রাগ হচ্ছেনা আমার তার প্রতি।আমি আয়াস কে নিয়ে এমন স্বপ্ন কিভাবে দেখলাম সেটাই বুঝতে পারছিনা।আমি তো তাকে নিয়ে কখনো ভাবিনি।কখনো আয়াস কে ভেবে এক মিনিট ভালো কিছু ফিল করিনি।তাহলে কেনো?এই কেনোর উত্তর কোথায় পাবো।কাল সারারাত মন খারাপে ঘুম হয় নি ঠিকভাবে।শেষরাত্রে কখন ঘুমের দেশে পাড়ি জড়িয়েছি নিজেও জানিনা।তবে মাত্র কয়েক ঘন্টার ঘুম ভীষণ গভীর ঘুম হয়েছে।গভীর ঘুমে বোধহয় এমন উদ্ভট স্বপ্ন দেখেছি।সব ই শ/*য়/*তা/*নে র কাজ এসব স্বপ্ন তারাই দেখায়।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি টি-পট এ গরম পানি,চায়ের কাপ,টি প্যাক আর চিনি সব ট্রে তে করে টি টেবিলে রাখা আছে।নিশ্চয়ই আয়াস রেখে গিয়েছে।সে জানে আমি চা খেতে খুব পছন্দ করি।দুইদিন আগে আমি বলেছিলাম আমার চা খেতে খুব ভালো লাগে।সে সাথে সাথে চিনামাটির টি-পট,চায়ের কাপ কিনে এনেছে।আমি যেনো চা খেয়ে রাজকীয় একটা ব্যাপার অনুভব করতে পারি।আমাকে বলেছিলো আমি তো কোনো রাজা নয়,রাজরাণীর মতো জীবন তোমায় দিতে পারবোনা তবে বউ একটু রাজকীয় ভাবে চা খাবে তার ব্যবস্থা ঠিক ই করতে পারি।সব থেকে সুন্দর জিনিস এতক্ষণ আমার চোখের আড়ালে ছিলো।একরাশ মুগ্ধতা আমার চোখের সামনে রয়েছে।চায়ের কাপের পাশে অনেক গুলো কৃষ্ণচূড়ার ডাল।অনেক গুলো কৃষ্ণচূড়া ফুল টকটকে লাল ভীষণ সুন্দর লাগছে দেখতে।ফুলগুলো হাতে নিলাম আমি।ফুল ভালো লাগেনা এমন কেউ আছে এই পৃথিবীতে তাও যদি হয় কৃষ্ণচূড়া ফুল।পাশে একটা চিরকুট রাখা আছে।চিরকুট টা হাতে নিয়ে খুলে পড়লাম,,

“ছেড়ে আসা ট্রেন আর ফেলে আসা স্মৃতির জন্য কখনো আফসোস করতে নেই।
ট্রেন যেমন আবার আসে, ঠিক তেমনই স্মৃতি বুনার সুযোগও আবার ফিরে পাওয়া যাবে,
তবুও পিছু ফিরে তাকাতে নেই । শুধু অপেক্ষা করতে হবে ধৈর্য্য ধরে ।
পিছু ফিরে তাকানোই মানে ছলনাময়ীর মায়ায় পড়া।।
.
ফাথেয়া নুর।”

–চিরকুট টা পড়ে যেনো অতীত বিলীন হয়ে গেলো অনেকখানিক।এক কাপ চা ঢেলে নিয়ে এদিক ওদিক আয়াস কে খুজলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না।তাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছা করছে।চা খেতে খেতে পশ্চিম পাশের জানালা খুলে দিলাম।জানালা খুলে দিতেই ঝড় হাওয়ার মতো বাতাস ঘরে প্রবেশ করলো।এলোমেলো চুল বাতাসে আরো এলোমেলো হয়ে উড়ছে।সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে লাল লাল হয়ে আছে।ঠিক যেনো লাল ভালবাসার পৃথিবী। ইচ্ছা করছে খালি পায়ে ওখানে গিয়ে হাঁটি।এ বাসার পশ্চিম পাশের দিকটা একদম ই খোলামেলা।বেলকনিতে দাঁড়ালে শুধু এক নজরে কৃষ্ণচূড়ার সমাহার দেখা যায়।

–বেলকনিতে উঁকি দিয়ে দেখি আয়াস কালো ট্রাউজার,সাদা গেঞ্জি আর সাদা বুট পরে বাসার দিকে আসছে।মনে হচ্ছে জগিং এ গিয়েছিলো।আয়াসের সাথে পাশের ফ্লাটের আরাহান ভাইয়া আছে।সাথে সারিকা নামের মেয়েটাও আছে।সারিকা ও ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরে জগিং গেছিলো।সারিকাকে এমন পোশাকে আয়াসের পাশে আমার মোটেও ভালো লাগেনি দেখে।হয়তো অন্য কোনো মেয়ে হকে নেগেটিভ কোনো চিন্তা মাথায় আসতো না তার পোশাক নিয়ে।কিন্তু সারিকার পোশাক নিয়ে আমার মনে অনেক গুলো নেগেটিভ ভাবনা।মেয়ে মানুষ কেনো ওড়না ছাড়া এভাবে দৌড়াদৌড়ি করবে।

পাঁচ মিনিটের মাঝে আয়াস ঘরের ভেতরর প্রবেশ করলো।কপাল দিয়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফোঁটায় ফোঁটায় লেগে আছে,সমস্ত শরীর ঘামে চিপচিপে হয়ে আছে।আয়াস রুমে এসে বিছানায় বসে আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো,

“গুড মর্ণিং।”

আয়াস কে দেখেই স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যাওয়ায় ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম।আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আয়াস স্বয়ং ছিলো।ওর ও হয়তো সবটা মনে আছে।কিভাবে নিজের লজ্জা আটকাবো জানিনা।জানালার পর্দা ঠিক করতে করতে বললাম,

“হুম গুড মর্ণিং।”

“আমি গোসলে যাচ্ছি,এসে একসাথে নাস্তা করবো।”

“ঠিক আছে।”

আয়াস গোসল শেষে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে খালি বেরোলো টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে।সমস্ত শরীরে পানি লেগে আছে।বিয়ের পর আজ প্রথমবার আয়াস কে সুন্দর দেখাচ্ছে আমার চোখে।আয়াস হঠাত মাথা মোছা স্টপ করে আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো আমি দুই হাতের মুঠোয় করে শাড়ির আঁচল কচলাচ্ছি।আয়াস টাওয়াল টা বিছানায় ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,

“আমাকে দেখে লজ্জা পাচ্ছো কেনো তুমি?”

“কই নাতো।”

“কই নাতো মানে।আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছো তুমি।কাহিনী কী?”

“লজ্জা পেতে যাবো কেনো?”

“কেনো পাচ্ছো সেটাই জানতে চাইছি।কাহীনী কি মুগ্ধতা।”

“কোথায় লজ্জা পাচ্ছি।”

“কথা বলছো তাও চোখে মুখে লজ্জা। আবার বলছো কোথায় লজ্জা পাচ্ছি।”

“আপনার মনে হলে আমি কি করবো।”

“মনে মনে আমায় নিয়ে ফুলসজ্জা করোনিতো আবার।”

“দুনিয়ার বাজে কথা শুধু।”

“শাড়ি তো খুলে পড়ে গেলো।এইভাবে শাড়ি পরে যদি সারাক্ষণ কুচি খুলে পেট বের করে ঘুরর বেড়াও আমার পক্ষে নিজেকে সংযত রাখা কিভাবে সম্ভব।”

“শাড়ি শুধু খুলে যায়। আমার থ্রী পিছ কোথায়?”

আয়াস আমার সামনে কতগুলো থ্রি পিছ এনে ধরলো।আর বললো এইগুলা কিছু রেডিমেট আছে আর কিছু টেইলার্স এ দিতে হবে।তোমার মাও জানিনা তাই দিতে পারিনি।বিছানায় প্যাকেট গুলো বের করে দেখি বিভিন্ন কালারের থ্রি পিছ।

আয়াসের দিকে তাকিয়ে বললাম,

“এত কেনো?”

“তোমার কোন কালার পছন্দ আমি তো জানিনা।তাই সব কালার এনেছি।”

“এত বাজে টাকা খরচ করার কি প্রয়োজন। ”

“টাকা বাজে ভাবে আর কোথায় খরচ করলাম। বউ এর জন্য যদি এতটুকু খরচ না করি তাহলে টাকা ইনকাম করে লাভ কি।”

“তাই বলে অযাচিত খরচ করবেন।”

“অযাযিত খরচ না করে কি করবো।আমার কি আর ছেলে মেয়ে আছে যে তাদের জন্য জমাবো। ছেলেমেয়ে হওয়ার ও চান্স নেই।”

“কেনো আপনার কি শারীরিক কোনো সমস্যা আছে যে সন্তান হবে না।আমার তো কোনো সমস্যা নেই। ”

আয়াস কপাল টানটান করে আমার দিকে তাকালো।
আয়াস কে এইভাবে তাকাতে দেখে বললাম,

“যদি সমস্যা থেকে থাকে ডাক্তার দেখান।”

আয়াস জোরে কাশি দিলো।এক ভাবে কেশেই যাচ্ছে।যেনো ভীষণ ভাবে চমকে গিয়েছে।

চলবে,,

(রমজানে মাসে দুই একদিন পর পর গল্প দেওয়ার জন্য দুঃখিত।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here