#পূর্ণিমাতিথিপর্ব-৪১
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
আজকে দুই দিন হইছে রুদ্র সাথে ফিরে এসেছি। এসেই দুজন দুজনের কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। রুদ্র হসপিটাল নিয়ে বিজি আর আমি আমার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। রুদ্র আমাদের বাসা থেকে এসেই ময়মনসিংহ চলে গেছে। হসপিটালের জরুরি কাজের জন্যই ময়মনসিংহ যাওয়া। ওখানে গিয়েই উনি অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। রুদ্র এতোটাই ব্যস্ত যে এক মিনিটের মতো স্বস্তির নিশ্বাস নেওয়ার মতো সময় নেই। কিন্তু এতো ব্যস্ততার মাঝেও আমার প্রতি উনার খেয়াল রাখা, কেয়ার করা একটুও কমেনি। হয়তো কাছে থেকে নিজে এসব করতে পারেন না। তবে দূর থেকেই আমার খেয়াল রাখছেন। আমার প্রতি বিন্দুমাত্র অনীহা উনি দেখান না।
আমার কখন কী লাগবে সবকিছুর খেয়াল রাখছেন।
মামুনিকে ফোন করে আমার খাবারের নজরদারি করেন। টাইমে টাইমে আমাকে ফোন করে খাবারের কথা মনে করিয়ে দেওয়া। সারাদিন কর্ম ব্যস্ততার পরও আমার আবদার রাখতে রাতে আমার সাথে ফোনে কথা বলা। অন্যান্য কপোত কপোতীর মতো হয়তো ঘন্টার ঘন্টার ফোনে কথা বলেন না। তবে মিনেট পাঁচেক আমার সাথে যতটুকু কথা বলেন ততটুকুই আমার জন্য এনাফ।
উনার ঢাকায় ফিরতে আরো তিন চার দিন লাগবে। তাই রুদ্র আমাকে আমাদের বাসায় চলে যেতে বলেছে। উনি এখন এখানে নাই আর আমি একা একা কলেজে যাব সেটা উনি হতে দিতে পারেন। একদমি না। আমাদের বাসায় চলে গেলে ভাইয়া কলেজে দিয়ে আসতে পারবে আবার নিয়েও আসতে পারবে।
আমি ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। ভাইয়া আমাকে নিতে আসছে। ভাইয়া নিজেও জানে না কী প্যারা নিতে আসছে। একবার শুধু বাসাই যায় ভাইয়ার জীবন জ্বালাময়, প্যারাময় করে দিব।
বুইড়া হয়ে গেছে এখনো বিয়ে করে না। মেয়েদের লাইন লাগিয়ে দিব আমারও দেখার আছে বিয়ে না করে যায় কই?
মিনিট দশেকের মাঝেই কলিংবেল বেজে ওঠলো বুঝতে পারলাম ভাইয়া এসেছে। আমি ব্যাগ হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হলাম। মামুনিকে বলে ভাইয়ার সাথে বেরিয়ে এলাম। ভাইয়া ব্যাগ নিয়ে আগে আগে হাঁটছে আর আমি ভাইয়ার পিছন পিছন হাঁটছি। ভাইয়াকে জ্বালানোর জন্য আমি একটু উচ্চ স্বরেই গেয়ে ওঠলাম,
বাবা আমার কী বিয়ে হবে না? বাবা…..
ভাইয়া পিছন ফিরে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই আমি চুপ করে গেলাম। ভাইয়া সামনে তাকাতেই আমি হেসে দিলাম।
ভাইয়াকে কিছুদিন ধরে আব্বু বিয়ের কথা বলছে। কিন্তু তার এক কথা। সে এখন কিছুতেই বিয়ে করবে না। ভাইয়াকে বিয়ের কথা বলতেই এখন ভাইয়া রেগে যাচ্ছে।
_______________
গত মিনিট বিশেক যাবৎ জ্যামে আটকে আছি। এতক্ষণ ধরে জ্যামে আটকে আছি কিন্তু জ্যাম ছাড়ার নাম গন্ধ নেই। অসহ্য লাগছে। এত বোরিং টাইম পাস করা যায়। ভাইয়াকে একটু জ্বালালে কেমন হয়? হুট করেই ভাইয়াকে জ্বালানোর একটা আইডিয়া মাথায় চলে আসলো। আইডিয়াটা মন্দ না। আমি গাড়ির জালানা দিয়ে মাথা বের করে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম। হঠাৎ করে দেখতে পেলাম অতিব সুন্দরী রমনী বসে আছে একটা ছেলের বাইকের পিছনে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে দুজন প্রেমিক প্রেমিকা। দুজনকে একসাথে মানিয়েছেও। আমি ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
ভাইয়া দেখ তো মেয়েটা দেখতে অসাধারণ না? তোমার বউ হলে কিন্তু মন্দ হবে না।
ভাইয়া আমার দিকে বিরক্তিকর চাহনি নিক্ষেপ করে বলে, তোর কোনো কমনসেন্স নেই। দুজনকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে প্রেমিক প্রেমিকা। আরেক বেডার প্রেমিকাকে ধরে বেধে আমার বউ বানিয়ে দিচ্ছিস।
তুমি আমাকে বকা দিলে। দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। আপু,, এই আপু।
ভাইয়া আমার মতিগতি বোঝার চেষ্টা করে আমাকে থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি তো আমিই ভাইয়াকে না জ্বালালে তো আমার পেটের ভাত হজম হবে না। ঐ আপুটা ইশারায় জিঙ্গেস করলো আমি তাকে বলছি কী না? আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালাম। ভাইয়া আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আমি মিষ্টি হেসে বললাম,
আপু তোমাদের যুগলবন্দিটা অসাধারণ। তোমরা দুজন মেইড ফর ইচ আদার। সারাজীবন এমনিই হাসিখুশি থেকো।
আপুটা মিষ্টি হেসে বললো, দোয়া করো।
অবশ্যই।
এবার ভাইয়াটা এদিকে ফিরে তাকাল। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, ধন্যবাদ পিচ্চি। আমরা দুজন মেইড ফর ইচ আদার নাকি জানি না। তবে ও আমার জীবনে এসে আমার জীবনটা পরিপূর্ণ করে দিয়েছি। আমাদের একসাথে পথ চলা প্রায় তিন বছরের। এই তিন বছরে ও কখনো আমার হাত ছেড়ে যায়নি। সব সময় আমার পাশে থেকেছে।
ভাইয়া আপনাদের মতো ভালোবাসার মানুষগুলো দেখতেও ভালো লাগে।
ঐ রাস্তার গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়ায় আপু আর ভাইয়াটা চলে গেলো। যাওয়ার আগে আমাকে বাই বলে গেলো। আমি এবার ভাইয়ার দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকালাম। ভাইয়া বুকে হাত দিয়ে বসে আছে।
তোর জন্য না জানি আমি কোনদিন হার্ট এ্যাটাক করে ফেলি।
হার্ট এ্যাটাক করলেও সমস্যা নেই আমার জামাই দিয়ে তোমাকে ফ্রী চিকিৎসা করিয়ে দিব। আমি অনেক মহান ব্যক্তি বুঝছো। তোমার মতো খানদানী ফকিরদের একটু হেল্প করতেই পারি।
একের পর এক মেয়ে দেখিয়ে আমি ভাইয়াকে বিরক্ত করে যাচ্ছি। হঠাৎই আমার চোখ আটকে গেলো একটা মেয়ের ওপর। আমি এর আগে এতো সুন্দর মেয়ে দেখিনি। আপুটা সবদিক দিয়েই পারফেক্ট। এক কথায় অসাধারণ। ভাইয়াকে মেয়েটাকে দেখানোর পর ভাইয়া একটা কথায় বলেছিল,
মাশাল্লাহ।
এরপর ভাইয়া আর কোনো কথা বলেনি। নির্বিকার তাকিয়ে আছে ঐ আপুটার দিকে। আপুটাও আড় চোখে বার বার এদিকে তাকাচ্ছে। ততক্ষণে জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে। আমি গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে আপুটার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আপু আপনাকে আমার ভাইয়ার অনেক পছন্দ হয়েছে।
আপুটা কিছু বললো না শুধু মুচকি হাসলো আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম ভাইয়ার ঠোঁটের কোণে আলতো হাসি। তার মানে ভাইয়ার মেয়ে পছন্দ হয়েছে। নাহলে এতক্ষণে আমাকে দুই তিনটে ধমক মারতো।
_________________
রুদ্রকে একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু উনি কল রিসিভ করছেন না। দশ বারের মাথায় কল রিসিভ করলেন।
সরি, সরি,, সরি পিচ্চি। ফোনটা গাড়িতে ছিল আর আমি হসপিটালে ছিলাম তাই তোমার কল রিসিভ করতে পারিনি। প্লিজ রাগ করো না। সরি এগেইন।
ইট’স ওকে। এতোবার সরি বলতে হবে না। আমি আপনার কে হই যে আপনার ওপর রাগ করবো। আপনার ওপর রাগ করার কোনো অধিকার আমার নেই।
পিচ্চিটার বুঝি অভিমান হয়েছে? তো মহারানীর রাগ ভাঙানোর জন্য এই অধম কী করতে পারে?
আমার অভিমান ভাঙাবেন আপনি? আপনার এতো সময় আছে? আপনি তো মহা ব্যস্ত এই অতি তুচ্ছ রমনীর অভিমান ভাঙানোর সময় কী আপনার হবে?
একটু থেমে অভিমানী গলায় বললাম, আপনি কী বুঝতে পারেন না কেউ একজন আপনার ফোনের অপেক্ষায় সারাদিন বসে থাকে? আপনার কন্ঠস্বর কর্ণগোচর করার জন্য কারো বক্ষঃস্থলে চিন চিন ব্যথা হয়? আপনার চিন্তায় সারাদিন বিভোর থাকে কেউ একজন। নাকি আপনি বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকেন।
অভিমানী পাখি এতো অভিমান করলে চলে? তোমাকে তো বুঝতে হবে তোমার বর একজন ডক্টর। তার ওপর কত দায়িত্ব। তোমার বরের ওপর আস্তা রেখে বেঁচে আছে কতগুলো পরিবার। উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, আমার কী ইচ্ছে করে না তোমার সাথে একটুখানি সময় কাটানোর। তোমার কোলে মাথা রেখে রাত জেগে গল্প করতে। কিন্তু আমি নিরুপায়। নিজের দায়িত্ব তো আমি অবহেলা করতে পারি না। বুঝতে পারছো আমার কথা?
হুম। আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
হ্যাঁ বলো।
অরি আপুর সাথে কী আপনার এখনো যোগাযোগ হয়?
হুট করেই উনি চুপ করে গেলেন। উনি নিশ্বাসের আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই কর্ণগোচর হচ্ছে না। নিস্তব্ধ পরিবেশে বিকট একটা আওয়াজ হলো। পর পর কয়েকটা গাড়ির চাকার শব্দ হলো। আমার আর কিছু কর্ণগোচর হলো না। কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমি থমকে গেলাম।
চলবে………
[গতকাল গল্প দেওয়ার কথা থাকলেও গল্প দিতে পারিনি। তার জন্য দুঃখিত। গতকাল গল্প লেখার পর কপি করতে গিয়ে ডিলেট হয়ে গিয়েছিল। পুনরায় গল্পটা লেখার আর সময় হয়নি। তাই আর গল্পটা দেওয়া হয়নি।]