#পূর্ণিমাতিথিপর্ব-৫৪
#লেখিকা-তাসনিম জাহান রিয়া
রুদ্র শুধু রিসেপশনের কথা বলতেই সেই কথার ঘোর বিরোধীতা করলেন এনাম ভাইয়া আর নাইম ভাইয়া। উনাদের মতে রুদ্র বিয়েতে কেউ উপস্থিত থাকতে পারেনি তাই বিয়ের সকল অনুষ্ঠানই করা হবে। অনুষ্ঠান হিসেবে সিলেক্ট করা হয়েছে শহর থেকে অদূরে নাইম ভাইয়াদের বিলাশ বহুল দাদার বাড়ি। নাইম ভাইয়ারা সপরিবারে দেশের বাইরে থাকে। তাই ঐ বাসা খালিই পড়ে আছে।
ডিসিশন হলো আগামীকাল সকাল সকাল আমরা সবাই মিলে নাইম ভাইয়াদের ঐ বাসায় যাব আর অনুষ্ঠান চলবে পাঁচদিন ব্যাপী।
রুদ্র রেডী হচ্ছে হসপিটালে যাওয়ার জন্য। উনি হসপিটালে ছুটি জন্য যাচ্ছেন আর সবাইকে ইনবাইট করার জন্য। আমিও রেডী হয়ে নিলাম। আমাকেও তো ছুটি নিতে হবে। দুজনেই একসাথে বের হলাম।
__________________
স্যারের রুম থেকে বের হতেই দেখতে পেলাম আমার থেকে কিছুটা দূরেই ইফাদ স্যার দাঁড়িয়ে আছেন। উনার সাথে একজন মহিলাও আছে। একটু এগিয়ে যেতেই বুঝতে পারলাম মহিলাটা ইফাদ স্যারের মা। আরেক পা এগিয়ে যেতেই ইফাদ স্যারের মার কথা শুনে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।
তুই যেই মেয়েকে পছন্দ করেছিস, যাকে বিয়ে করতে চাস। সে তো তোকে সহ্যই করতে পারে না। জোর করে বিয়ে করে তো আর সুখী হওয়া যায় না। আর আমাকে যদি জিঙ্গেস করিস আমার ত্রয়ীকে কেমন লেগেছে? তাহলে আমি বলবো ত্রয়ী মেয়েটা হয়তো একটু সুন্দরী। কিন্তু আমার ওর বান্ধবী রিয়াকেই বেশি ভালো লেগেছে। মেয়েটা কতো হাসিখুসি। চঞ্চল, মিশুক। কতো সহজেই মানুষের সাথে মিশে যেতে পারে। তুই তো জানিস তোর পছন্দই আমার পছন্দ। তোর কোনো কিছুতেই আমি কোনো দিন আপত্তি করিনি। তোর স্বাধীনতাই হস্তক্ষেপ করি নাই। এবারও করতাম না। কিন্তু ত্রয়ী মেয়েটা তো তোকে পছন্দ করে না। আমার মনে হয় রিয়াই তোর জন্য একদম পারফেক্ট।
আস্তাগফিরুল্লাহ, নাউযুবিল্লাহ। আম্মু তুমি তওবা করো তাড়াতাড়ি। যে কথা বলেছো সেই কথা আর মনেও এনো না। রিয়া ড. রুদ্রর ওয়াইফ। বেচারা নিজের ওয়াইফকে নিয়ে কতোটা পসেসিভ তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। আমি ওর সাথে যাস্ট একটু কথা বলতাম দেখে ড. রুদ্র আমার দিকে যেভাবে তাকাতেন মনো হতো আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন।
আমি আর ঐদিকে পা বাড়ালাম না। আলতো হেসে ওখান থেকে চলে এলাম।
__________________
ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে সকাল সকাল দল বেঁধে রওনা দিলাম। ইফাদ স্যারকে স্পেশালি দাওয়াত করা হয়েছে। তবে ইফাদ স্যার আমাদের সাথে যাবেন না। উনি আলাদা যাবেন। ত্রয়ী যদি জানতে পারে ইফাদ স্যারও আমাদের সাথে যাচ্ছেন তাহলে ত্রয়ী বেঁকে বসতে পারে। হয়তো ত্রয়ী শেষ পর্যন্ত যাবেই না। ত্রয়ী জানে ইফাদ স্যার বিয়ের দিন যাবেন। ইফাদ স্যার আমাদের সাথে যাওয়ার প্ল্যানটা অবশ্য রুদ্রর। উনিই সব ব্যবস্থা করেছেন। উনার মতে ইফাদ স্যারের এখন ত্রয়ীর আশেপাশে থাকার দরকার।
_________________
নাইম ভাইয়াদের বাসায় যাওয়া হবে বাসে করে। এই প্ল্যানটা অবশ্য এনাম ভাইয়া আর ইলান ভাইয়ার। বাসে করে যাওয়ার কথা শুনেই রুদ্র নাক মুখ কুঁচকে ফেলেন। উনি কিছুতেই বাসে করে যাবেন না। বাসে করে না যাওয়ার জন্য উনি বিভিন্ন বাহানা করা শুরু করেন। বাসে যাওয়ায় কতো প্রবলেম হবে সেগুলো দেখাতে শুরু করেন। রুনা আপু প্রেগনেন্ট, এনাম ভাইয়ার আম্মু অসুস্থ। এই অবস্থায় উনাদের বাসে চড়া একদম ঠিক না। রুনা আপুর কথা বলতেই ইলান ভাইয়া দমে যায়। কিন্তু এনাম ভাইয়াকে কোনো মতেই দমাতে পারেননি। এনাম ভাইয়া ঠিক করেন রুনা আপু আর উনার আম্মু গাড়ি করে যাবেন আর সবাই বাসে করে। সেখানে বাদ সাধে রুনা আপু। উনি কিছুতেই গাড়ি করে যাবে না।
সবাই আনন্দ করে যাবে আর সে বরিং জার্নি করবে তা হতে পারে না। ইলান ভাইয়া চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই রুনা আপু চুপসে যায়।
বাসে ওঠতে গিয়েই রুদ্র নাক মুখ কুঁচকে ফেলে। তা দেখে ইলান ভাইয়া এসে ফেলে। নাইম ভাইয়া রুদ্রর পিঠ চাপড়ে বলে,
তুই কিন্তু গাড়ি করে যেতে পারিস। তুই বরং রুনাদের সাথে গাড়ি করেই চলে যা। আমি ইলান আর এনামকে ম্যানেজ করে নিবো।
রুদ্র আমার এক হাতে আগলে ধরে বলে, চলো রিয়া আমরা বরং গাড়ি করেই যাই।
ইলান ভাইয়া আমার আরেক হাত চেপে ধরে বলেন, তোকে যাওয়ার পারমিশন দিয়েছি রিয়াকে না। রিয়া আমাদের সাথেই যাবে।
রুদ্র ভ্রু কুচকে বলে, আমার বউ তোদের সাথে যাবে কেনো? আমার বউ আমার সাথে যাবে।
তুই বরং রিয়াকেই জিঙ্গেস কর রিয়া কাদের সাথে যেতে চায়?
ইলান ভাইয়া আমি অবশ্যই আপনাদের সাথে যাব। আমার বাসে করে জার্নি করতে অনেক ভালো লাগে। নাচ, গান হই হুল্লোড় উফ ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে।
রুদ্র আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়। আমি উনার দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলি,
আপনার তো বাসে চড়তে ভালো লাগে না। আপনি বরং গাড়ি করেই যান। আমি বাসে করেই যাব।
কথাগুলো বলেই আমি দুই লাফে বাসে ওঠে পড়লাম। আমি মাঝখানে সিটে বসতে গেলেই রুদ্র আমার হাত টেনে ধরে পিছনে নিয়ে এসে বসিয়ে দেয়।
এই আপনি আমাকে পিছনে নিয়ে আসলেন কেনো?
তোমার জন্য আমাকে বাসে করে যেতে হচ্ছে। ভাবছো আমি তোমাকে আমি এমনি এমনি ছেড়ে দিব। এখন রোমান্স চলবে। বাসে করে যাচ্ছি পাশে একজন হট এন্ড…….. চোখ মেরে বলে, বুঝতেই তো পারছো।
ছিঃ আপনি এসব কী ভাষা করছেন? আপনি আগেই ভালো ছিলেন।
আমি কখনোই ভালো ছিলাম না। আমি তো অন্য কাউকে বলছি না। নিজের বিয়ে করা বউকে বলছি। তোমাকে সবকিছু বলার লাইসেন্স আমার আছে। ইউ আর লুকিং হট।
ছিঃ।
আমি নাক মুখ কুচকে অন্য দিকে ঘুরে গেলাম। ঠিক তখনি উনার অট্টহাসি আমার কানে এলো। আমি উনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম।
আরে বাবা আমি মজা করছিলাম। তুমি সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেনো? তোমার সাথে এই ওয়ার্ডগুলো যায় না। তোমাকে দেখে কেউ বলবে না ইউ আর লুকিং হট। তোমাকে দেখে বলবে গুলুমুলু বাবুটা। বেবিডল। বুঝছো?
আপনি আমাকে অপমান করছেন কিন্তু।
আহা বাবুটা মান অপমানও বুঝে।
আমি উনার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাই। উনি আমার চোখ রাঙানো দেখে হো হো করে হেসে দেন।
_____________________
নাইম ভাইয়াদের আলিশান বাড়ি। এই জায়গাটাকে ঠিক শহরও বলা চলে না আবার গ্রাম বলা যায় না। কিন্তু জায়গাটা অসধারণ। বাড়িটার মাঝে একটা জমিদার টাইপ জমিদার টাইপ ভাব আছে। এই বাড়িটা দেখে কেউ বলবে না যে এখানে কেউ থাকে না। সারা বাড়ি ঝকঝকে তকতকে। বাড়ির সামনে বিশাল সাইজের বাগান। নাইম ভাইয়ার দাদু এই বাগানটা সখ করে করেছিলেন। এখানে চার পাঁচ জন কাজের লোক আছে। তারা এই বাড়ির আর বাগানের দেখাশুনা করে।
বাসে সবাই লাফালাফি করে টায়ার্ড হয়ে গেছে। এখানে এসেই যে যেখানে পেরে শুয়ে পড়েছে। কিন্তু আমার মাঝে কোনো টায়ার্ডনেস কাজ করছে না। আমি ফ্রেশ হয়ে রুদ্রকে টেনে তুললাম।
কী ব্যাপার রিয়া? এমন টানাটানি করছো কেনো?
ঘুরতে যাব তাই।
আমি প্রচন্ড টায়ার্ড। কোথাও ঘুরতে যেতে পারবো না।
আপনি না নিয়ে গেলে কিন্তু আমি একাই চলে যাব।
__________________
উনি সাইকেল চালাচ্ছেন। আর আমি সাইকেলের সামনে উনার কোমড় জড়িয়ে ধরে বসে আছি। মৃদু বাতাস বইছে। কেমন অদ্ভুত শির শির অনুভূতি হচ্ছে। মাঝে মাঝে আমি হাত দিয়ে উনার চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছি। গ্রামের মতোই আঁকাবাঁকা পথ। হুট করে উনি ব্রেক করাই আমি হালকা সামনে ঝুঁকে গেলাম। উনি এক হাতে আমাকে সামলে নিলেন। উনার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই আমি চমকে গেলাম। উনি অস্পষ্ট বললেন,
বিহান।
চলবে……..