শ্রাবন আধারে তুমিপার্ট:২

0
805

শ্রাবন আধারে তুমিপার্ট:২
লেখিকা:আফরিন ইসলাম

মানুষের প্রচন্ড চিৎকারের আওয়াজে আবরার আর রাইয়ের ঘুম ভাঙ্গে ৷তারা বাইরে আসতেই সবাই তাদের ঘিরে ধরলো ৷একজন বলল এই মাইয়া এতই যখন পুরুষ মানুষের লগে ঢলাঢলি করতে মন চায় ৷তাহলে নিজের মামারে বলতে পারিস নি ৷এই ভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে তামাশা করছোস কেন ৷এমন ভাব ধরে থাকিস যেন কিছুই বুঝিস না ৷আর তলে তলে পুরুষ মানুষের সাথে রাত কাটাতে ভালো লাগে না ৷

আরেকজন বলল তা হ্যা রে লুকিয়ে লুকিয়ে এই ভাবে অবৈধ সম্পর্ক কতবার করেছিস হ্যা ৷

আবরার এবার সহ্য করতে না পেরে বলল আপনারা এই সব কি বলছেন ৷কারো ব্যাপারে না জেনে কথা বলা উচিত না ৷কাল রাতে আমরা….

আবরার কথা শেষ করার আগেই আরেকজন বলল ব্যভিচার করে এখন আবার বড় বড় কথা ৷এই ওদের নিয়ে চল ৷

আবরার আর রাইকে নিয়ে বিচার সভা বসেছে ৷গ্রামের সবার একটাই কথা হয় রাইকে বিয়ে করতে হবে ৷নইলে তারা আবরারকে জেলে দেবে ৷রাইয়ের মামা মামি খবর পেয়ে দৌড়ে এসেছে ৷কাল সারারাত রাইয়ের মামা রাইকে খুজেছে ৷মামাকে দেখে রাই তার কাছে গেল ৷মামাকে জরিয়ে ধরতে গেলেই রাইয়ের গালে সজোরে থাপ্পর পড়লো ৷

রাইয়ের মামা বলল আমাকে একদম তুই ছুবি না ৷এই পাপ করার আগে তুই কেন মরে গেলি না ৷আমার মান সম্মান এভাবে তুই নষ্ট করে দিলি ৷

মামা বিশ্বাস করো আমি কিছু করি নি ৷ওনারা না জেনেই আমার নামে মিথ্যা কথা বলছে রাই বলল ৷

রাইয়ের মামি বলল হ্যা রে একে তো পাপ করেছিস আবার বড় বড় কথা ৷নিজের মাকে খেয়ে বসে আছিস ৷বাবার ঘরেও তো ঠাই হলো না ৷এখন আমাদের ঘাড়ে এসে পড়লি ৷

পরের কথা সহ্য করতে পারলেও নিজের মানুষদের এই অপবাদ রাই সহ্য করতে না পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ৷রাই বলল আমাকে তোমরা ভুল বুঝছো মামা ৷আমি ঐ লোকটার সাথে কিছু করি নি ৷

আস্তে আস্তে পুরো গ্রামে আবরার আর রাইয়ের কথা ছড়িয়ে পড়েছে ৷পুরো গ্রামে রাইকে ছি ছি করছে ৷আবরার বন্ধুরাও এলো ৷আবরার তার বন্ধু সাদির বাড়ীতে এসেছিল ওর বোনের বিয়েতে ৷সাদি অবস্থা খারাপ দেখে আবরারকে বলল

যা করার তাড়াতাড়ি কর আবরার ৷একবার যদি তোকে জেলে দেয় এরা তাহলে রক্ষা নেই ৷তোর বাবার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে ৷তাই যা করার ভেবে চিন্তে কর ৷

আবরার কিছুক্ষন ভেবে তারপর বলল ঠিক আছে আমি এই মেয়েকে বিয়ে করবো ৷

আবরার কথা শেষ হতেই সবাই কাজী আনতে গেল ৷অবশেষে আবরার আর রাইয়ের পনেরো লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে হলো ৷

রাইকে ওর মামা আর ঘরে তোলে নি ৷শেষ বিদায়ে নিজের কলিজার টুকরার দিকে ফিরেও তাকায় নি ৷

গাড়ী চলছে আপন গতিতে আবরার রাইকে নিয়ে নিজের বাড়ীর দিকে রওনা দিয়েছে ৷গাড়ীতে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলে নি ৷তবে আবরার ফোনে কারো সাথে কথা বলেছে ৷আবরার রাইকে নিয়ে বাড়ীতে ঢুকলো ৷গাড়ী ভেতরে যেতেই আবরার গাড়ী থেকে নেমে গেল ৷কিন্তু রাইকে বের হতে বলে নি ৷রাই চুপচাপ গাড়ীতেই বসে আছে ৷হঠাৎ কেউ একজন গাড়ীর দরজা খুলে দিল ৷রাই সেই দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে ৷বয়সের দিক থেকে রাইয়ের চেয়ে বড়ই হবে মেয়েটা ৷মেয়েটা কোমল গলায় বলল

আমার নাম মিশকা ৷সম্পর্কে তোমার ননদ হই আমি ৷ কি হলো নেমে এসো ৷বাড়ীর মধ্যে সবাই অপেক্ষা করছে তোমার জন্য ৷

রাই মাথা নিচু করে বেড়িয়ে এলো ৷রাইকে বাড়ীর ভেতর মিশকা নিয়ে গেল ৷রাই বাড়ীর ভেতরে যেতেই এক ভদ্র মহিলা বলে উঠলো

এই গাইয়া ভুতটাকে কেন বাড়ীর ভেতরে নিয়ে এলি মিশকা ৷অসভ্য মেয়ে কোথাকার ৷আমাদের ছেলেকে ফাসিঁয়ে বিয়ে করেনিলি ৷বড় লোক দেখলেই মাথা খারাপ হয়ে যায় না ৷রাই ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল মহিলাটার দিকে ৷

মিশকা এবার বলল প্লিজ ফুপি চুপ করো ৷কারো ব্যাপারে না যেনে কখনো কথা বলতে নেই ৷এতে পাপ হয় যানো না ৷

এই মিশকা তুই আমাকে জ্ঞান দিস না ৷

হঠাৎ একটা কঠিন কন্ঠস্বর রাইয়ের কানে আসতেই রাই চমকে উঠলো ৷

মিশকা এইটা বুঝি আমাদের আবরার বউ ৷

হ্যা মা মিশকা বলল ৷মহিলাটি রাইয়ের কাছে এসে দাড়ালো ৷নিজের হাত থেকে দুটো বালা খুলে রাইকে পড়িয়ে দিয়ে বলল সুখী হও ৷এবার আবরার ফুপু বলল

এটা কি করছো আনিলা ৷নিজের ঘরে কাল সাপকে ঠাই দিচ্ছো তুমি ৷

আমার ছেলে বিয়ে করে এনেছে ৷শ্বাশুড়ি হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করলাম ৷এখন এই মেয়ে কি করবে তা তার ব্যাপার ৷

রাই যখন বুঝতে পারলো বালা পড়িয়ে দেওয়া এই কঠিন গলার মানুষটি তার শ্বাশুড়ি ৷ তখন সে মাথা নুয়িয়ে আনিলা বেগমকে সালাম করতে গেল ৷

রাইয়ের হাত আনিলা বেগমের পা ছোয়ার আগেই তিনি রাইয়ের হাত ধরে ফেললেন ৷অতঃপর বললেন ছেলের বউরা মেয়ের মতো হয় ৷তুমি মিশকার থেকে কোনো অংশে কম নও আমার কাছে ৷আর কখনো আমার পা ছোয়ার মতো অপরাধ যেন না হয় ৷আমাকে নিজের মা মনে করবে সব সময় ৷কথা গুলো বলে আনিলা বেগম চলে গেল ৷

এতক্ষন সামনে দাড়িয়ে থাকা শ্বাশুড়ী নামক মানুষটা যে স্বচ্ছ মনের মানুষ তা রাই বুঝলো ৷তার কথা কঠিন স্বরে বললেও মনটা একেবারে নরম ৷

মিশকা রাইকে আবরার ঘরে নিয়ে গেল ৷

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here