শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_65
#Writer_NOVA
চোখ দুটো জ্বলতেছে। সারারাত ঘুমাতে দেয়নি পুঁচকেগুলো। সাথে আমার জামাইটা অডিও কল দিয়ে সারারাত জাগিয়ে রেখেছে। ফজরের নামাজের পর চোখ দুটো একটু বন্ধ করেছিলাম। সকালের হুলস্থুলে জেগে গেছি। এই তিনদিন আমার ঘুম চান্দের দেশে যাবে। খিচুড়ি খাওয়ার ধুম পরেছে। চোখে, মুখে পানি দিয়ে মাথায় আধ ঘোমটা টেনে বাইরে চলে গেলাম।আমাকে দেখেই নূর আপি ডাকলো।
— এই নোভি এদিকে আয়। তোকে খাইয়ে দেই।
— না গো, খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
— এদিকে আসতে বলছি।
—রাতে জোর করে একগাদা খাইয়ে দিছো।
— কথা কম বলে এদিকে আয়।
চুপচাপ তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। এখন না খেলে রাগ করবে সে। তন্বী, ইভা, অনন্যা,অর্থি এক টেবিলে গোল করে বসেছে। শাহীনুর আপু অনন্যাকে কি জানি বলেছে। যার জন্য অনন্যা রাগ করে খাবে না বলছে। আমি অনন্যাকে জিজ্ঞেস করলাম,
— কি হয়েছে অন্যা? খাবার নিয়ে রাগ কেন?
অনন্যার উত্তর দেওয়ার আগে মুখ টিপে হেসে ইভা বলে উঠলো,
—অন্যার প্লেটে কোন গোশত পরেনি। তাই অন্যা খাবে না বলছে।
অন্যা রেগে ইভার দিকে তাকালো। তারপর চেয়ার থেকে উঠে ইভার গালে জোরে টান দিয়ে বললো,
— তুই আরো মাইর খাবি।
ইভা এসব তোয়াক্কা না করে মুখ ভেংচি কেটে বললো,
— সত্যি কথা বললে সবারি গায়ে লাগে। এক পিস গোশত পরেনি বলে এতো কান্নাকাটি করার কি দরকার? খিচুড়ির বোল থেকে খুঁজে নে।
ইভার সাথে এবার সুর মিলালো অর্থি,
— থাক আপ্পি রাগ করিস না। আমার প্লেটে অনেক গোশত আছে। এখান থেকে দুই পিস নিয়ে যা। তবুও কান্না করিস না।
অনন্যা ফোঁস করে রেগে ওদের দুজনকে বললো,
— তোরা দুজন সত্যি আমার হাতে এখন মার খাবি। নোভা খালামণি ওদের কিছু বলো। নয়তো আমি যে ওদের কি বলবো তা আমি নিজেও জানি না। সকাল থেকে আমার পিছনে লাগছে।
আমি বলবো কি ওদের খুনসুটি দেখে মিটমিট করে হাসছি। তন্বীর দিকে তাকাতেই আমার মুখের হাসি মিইয়ে গেলো। ও মন খারাপ করে প্লেটের খাবার নাড়াচাড়া করছে। নিশ্চয়ই আমার ও তায়াং ভাইয়ার সাথে করা দুষ্টুমির কথা মনে পরে গেছে। আমি নূর আপির পাশ থেকে সরে তন্বীর সামনে চলে এলাম। ওর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলাম,
— কি রে কি হয়েছে তোর? আমাকে কি খাইয়ে দিবিনা?
তন্বী ছলছল চোখে আমার দিকে তাকালো। প্লেট থেকে এক লোকমা খিচুড়ি আমার মুখে দিয়েই চোখের পানি ছেড়ে দিলো। আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,
— একদম কান্না করবি না। তোরা কান্না করলে কিন্তু আমিও কান্না করবো। সেটা কি তোরা চাস?
তন্বী ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। তারপর কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো,
— আমার এখনো মনে হচ্ছে তোমার বিয়ে না। আমরা সবাই মিলে অন্য কারোর বিয়েতে আসছি। বিয়ে শেষ হলে তোমাকে নিয়ে ঢাকা চলে যাবো। কিন্তু এবার তো তা হবে না। তবুও মনটাকে মানাতে পারছি না।
তন্বী আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। আমি খেয়াল করলাম আপনাআপনি আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে। টেবিলের সবার মন খারাপ। মোবাইলে কল আসতেই আমি তন্বীকে ছেড়ে মোবাইলের দিকে তাকালাম। আমার জামাই মহাদোয় কল করছে। দুদিন ধরে সে যা শুরু করছে। মনে হচ্ছে অন্য কেউ এসে তার বদলে আমাকে নিয়ে যাবে। একটু সময় পরপর কল করছে। আমি সবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— তোমরা খেতে থাকো। আমার উনি ভিডিও কল দিয়ে ফেলছে। তার সাথে একটু কথা বলে নেই।
তন্বী চোখ মুছে টিপ্পনী কেটে বললো,
— তোমার জামাই তো দেখছি বিয়ের আগেই বউ পাগল হয়ে গেছে।
আমি মুচকি হেসে ওদের সামনে থেকে সরে গেলাম। কল রিসিভ করে তার দিকে একটা রাগী লুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
— সমস্যা কি? সারারাত কথা বলে মন ভরেনি? আবার সকাল সকাল কল?
— আমার বউ, আমার যতবার ইচ্ছে হবে তত কল করবো। আমার সাথে কথা বলতে হবে।
— আমার কি আর কোন কাজ নেই? সারাদিন আপনার সাথেই কলে কথা বলবো?
— নতুন বউয়ের আবার কিসের কাজ? তুমি কিছু করবা না। যা করার বাকি সবাই করবে। খবরদার কোন কাজে হাত দিবে না।
— ইস, ভালোবাসা দেখানো হচ্ছে। আমিও দেখবো বিয়ের পর এই ভালোবাসা কোথায় যায়?
এনাজ আমার কথার উত্তর না দিয়ে গানের সুরে বললো,
— আমি তোর ব্লাক কফি, তুই আমার সুগার
আমি তোর কোকাকোলা তুই আমার বার্গার
তোর ঐ হটনেসে জ্বলে আমি ছারখার
পারছি না আর বেবী তোকে খুব দরকার
— এখন গান গাওয়া হচ্ছে?
— তোমাকে রাগলে বেশি সুন্দর লাগে।
— এই আপনার কি কোন কাজ নেই?
— হ্যাঁ, আছে তো। আমি আমার টিডি পোকার সাথে কথা বলছি এটাও একটা কাজ।
— আপনি আমাকে জ্বালাতন করছেন অনেক।
— হুম আমি জানি। সবে তো শুরু। আরো কতকিছু যে সহ্য করতে হবে তোমাকে। এই অগোছালো ছেলেটাকে পুরোটা গুছাতে হবে ম্যাডাম।
— মেরে পিটিয়ে সোজা করার জন্য আসতেছি আমি। একটু অপেক্ষা করেন।
এনাজ আমার কথা শুনে চোখ দুটো ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকালো। আমি তার চেহারা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলাম। কথা বলতে বলতে সেই ছোট সবুজ ঘাসের মাঠের সামনে চলে এসেছি। এই মাঠেই ছিলো আমাদের শিশির ভেজা রোদ্দুর উপভোগ করা। একসাথে পাশাপাশি চলা। আমি ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে সেই মাঠটাকে দেখিয়ে এনাজকে বললাম,
— দেখেন তো চিনতে পারছেন কিনা?
— এটা ঐ মাঠটা না যেখানে আমরা খালি পায়ে একসাথে হেঁটেছিলাম?
— জ্বি হ্যাঁ। মনে আছে তাহলে?
— আমার মনে আছে। ভুলে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
— আমি এখন একা একা শিশির ভেজা রোদ্দুর উপভোগ করবো।
— একদম না। আমাকে ছাড়া তুমি কিছু করবে না।
— আমি আপনাকে ছাড়াই উপভোগ করবো।
— ভালো হবে না কিন্তু টিডি পোকা।
— আচ্ছা, পরে একসাথে করবোনি।
— এখন বাসায় যাও।
— তায়াং ভাইয়া কোথায়?
— কে জানে। ওর খবর জানি না। বেচারা অনেক ব্যস্ত। সবদিক সামলাচ্ছে।
— আর আপনি বসে বসে বউয়ের সাথে পেচাল পারছেন। ওদের সাথে হেল্প করলেও তো একটু কাজ কমে।
— আমি জামাই না, আমি কাজ করবো কেন?
— হু দুই পা মুড়ে খাটে বসে থাকেন।
— হ্যাঁ তাই তো করছি।হাতের মেহেদী দেখাও।
— এই যে দেখেন।
— আমার নাম লিখোনি?
— জ্বি আপনার শালিকারা লিখে দিয়েছে। দুই হাতেই লিখেছে। আপনার মেহেদী দেখি।
— ইমরানের বোন দিয়ে দিছে। আমার দুই হাতেও তোমার নাম লিখে দিছে।
— খুব সুন্দর হয়েছে।
— সত্যি?
— জ্বি হ্যাঁ। তা সকালের খাবার খেয়েছেন?
— না, ইমরান ডাকছে।
💖💖💖
আমি কথা বলার ফাঁকে এনাজের দৃষ্টির অগোচরে শিশির ভেজা ঘাসে হাত দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিচ্ছিলাম। ঠান্ডা শিশিরের স্পর্শে অনেকটা ভালো লাগছিলো। পেছন থেকে ঐশী চেচিয়ে ডেকে উঠলো।
— নোভা খালামণি!
— কি হয়েছে?
— তোমার বন্ধুরা আসছে।
— কোন বন্ধু?
— সবার নাম তো জানি না। একজনের নাম সাদ্দাম। এটাই শুধু জানি। তোমাকে খুজতাছে।
— কয়জন আসছে?
— পাঁচজন। তিনটা ছেলে দুইটা মেয়ে।
—তুমি যাও আমি আসতেছি।
— তাড়াতাড়ি আইসো।
ঐশী এক দৌড়ে আবার বাসার দিকে ছুটলো। আমি মোবাইলের দিকে ফিরতেই এনাজ জিজ্ঞেস করলো,
— কে আসছে?
— আমার কলেজ ফ্রেন্ডরা।
— আচ্ছা তাহলে বাসায় যাও। পরে কথা হবে।
— আপনি গিয়ে খেয়ে নিন।
— আচ্ছা, আর শুনো।
— জ্বি বলুন।
— আই লাভ ইউ 😘।
— লাভ ইউ টু।
— একটা গান পাঠাচ্ছি। শুনতে শুনতে যাও।
— ওকে, আল্লাহ হাফেজ।
— আল্লাহ বাঁচালে দুপুরে এসে নিয়ে যাবো। আরেকবার কল দিবো। ধরো কিন্তু।
— ধরবো না।
— তাহলে মাইর চলবে।
— এত সাহস আছে নাকি।
— হুম আছে তো।
— দেখা যাবেনি। এখন রাখছি।
— ওকে,আল্লাহ হাফেজ।
কল কেটে দিয়ে মুচকি হাসলাম। বিরবির করে বললাম, ‘পাগল”। সে গান পাঠিয়ে দিয়েছে। গানটা মৃদু সাউন্ডে ছেড়ে বাসার পথ ধরলাম।
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
সব কথার এক কথা এটাই
পৃথিবীতে শুধু তোকে চাই, তোকে চাই
আর কিছু যে নেই ভাবনায়
এই আমি শুধু তোর হতে চাই, হতে চাই
দুটি মনেই প্রেমে মাখা, তবে কেন দূরে থাকা
মন যে চাই তোকে, কাক ডাকা রোজ ভোরে
চলনা যাই এক হয়ে, সব বাধা জয় করে
দুটি মনেই প্রেমে মাখা, তবে কেন দূরে থাকা
সব কথার এক কথা এটাই
পৃথিবীতে শুধু তোকে চাই, তোকে চাই
আর কিছু যে নেই ভাবনায়
এই আমি শুধু তোর হতে চাই, হতে চাই
আর কত দিন যাবে, তুই ছাড়া এভাবে
চলনা যাই এক হয়ে, ভাবুক যে যা ভাবে
দুটি মনেই প্রেমে মাখা, তবে কেন দূরে থাকা
সব কথার এক কথা এটাই
পৃথিবীতে শুধু তোকে চাই, তোকে চাই
আর কিছু যে নেই ভাবনায়
এই আমি শুধু তোর হতে চাই, হতে চাই
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
গানটা শেষ হতেই সেটা অফ করে রুমে ঢুকলাম। সাফা, ঝুমা, তামিম, সাদ্দাম,শাকিল খাটে বসে আছে। আমাকে দেখেই সাফা, ঝুমা দৌড়ে এসে জাপ্টে ধরলো। আমি ওদের সরিয়ে দিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
— কে আপনারা? কাকে চাই?
ঝুমা সামনে এসে কান ধরে অপরাধী ভঙ্গিতে বললো,
— সরি বোন।রাগ করিস না প্লিজ।
— অপরিচিত মানুষের সাথে আমি রাগ করি না।
সাফা এগিয়ে এসে আমার এক হাত জড়িয়ে ধরে মুখটা কুচোমুচো করে বললো,
— প্লিজ বোনু এবারের মতো মাফ করে দে।
তামিম দাঁত কেলিয়ে বললো,
— আমি বলছিলাম নোভা রাগ করবে। তোরা কেউ শুনলি না। এবার ঠিক আছে না?
আমি মুখ ঘুরিয়ে কঠিন গলায় বললাম,
— রাগ করতে অধিকার লাগে। সেই অধিকার পাবো কোথায়? অপরিচিত মানুষের সাথে তো আর অধিকার দেখানো যায় না।
সাদ্দাম বসা থেকে দাঁড়িয়ে এক হাত উঁচু করে থাপ্পড় দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো,
— এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দিবো। তখন সবাই বলবে নতুন বউ বোকরা। বোকরা বউ কথাটা শুনতে তোর নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না। কি অপরিচিত মানুষ বলা শুরু করেছিস। আমরা অপরিচিত মানুষ?
আমি দুই হাত গুঁজে দরজার সাথে হেলান দিয়ে বললাম,
— আমার ফ্রেন্ড হলে হলুদের সকালে চলে আসতো। বিয়ের দিন সকালে আসতো না।
সাফা আমার দুই হাত ধরে অনুনয় করে বললো,
— প্লিজ বোইন রাগ করে থাকিস না। আমরা আসতে চাইলে কি আসতে পারি বল?
শাকিল মন খারাপ করে বললো,
— চল আমরা চলে যাই। এতদিন পর দেখা হলো এরপর দেখা হবে কিনা সন্দেহ। নোভা আমাদের না চেনার ভান করছে। বিয়ের আগেই বদলে গেছে। বিয়ের পর কি হবে আল্লাহ জানে।
শাকিল যেতে নিলেই আমি ওর হাত টেনে ধরলাম। চোখ পাকিয়ে বললাম,
—একে তো কালকে আসিসনি। তারপর আবার আমাকেই রাগ দেখানো হচ্ছে? চুপচাপ এখানে বস। এক পা বাইরের দিকে দিলে মার একটাও মাটিতে পরবে না।
সাদ্দাম কপাল কুঁচকে বললো,
— এতদিন পর সবার সাথে দেখা হলো। তোর বিয়ে উপলক্ষে প্রত্যেকটা রাজী করিয়ে একসাথে এলাম। তারপরেও তুই রেগে থাকবি?
আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
— আমাকে উদ্ধার করে ফেলছেন। তা কালকে আসেননি কেন? আমি বলে দেইনি যে হলুদের সকালে তোদের কে আমাদের বাসায় দেখতে চাই।
তামিম শাকিলের পিঠে একটা ঘুষি দিয়ে বললো,
— প্রত্যেকটায় নাটক শুরু করছিলো। একটাও আসতে চাইনি। তার এই সমস্যা, কারো বাসায় কেউ নেই বাসা পাহারা দিতে হবে। একেকজন ঢং করছে। আমি বলছি তোরা না গেলে আমি একাই যাবো। এর জন্য আমাকে সব মিলে বকছে। ওদের ছাড়া আমি যদি একা আসি তাহলে আমার সাথে কথা বলবে না। আমার, সাদ্দামের কোন দোষ নেই। সব দোষ এই তিনটার।
তামিম এই কথা বলতেই শাকিল,সাফা,ঝুমা ওকে ঘিরে ধরলো। এখন ওর ওপর ঝড় যাবে। আমি সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
— হইছে আর ঝগড়া করতে হবে না। সবাই ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নে। আমি তোদেরকে খাবার দিতে বলে দিচ্ছি। তোরা ফ্রেশ হয়ে সোজা প্যান্ডেলে চলে যাবি।
ওদেরকে রুমে রেখে প্যান্ডেলের দিকে চলে গেলাম। সকালবেলা অনেক আত্মীয়-স্বজন আসছে। তাদের সাথে কুশলাদি বিনিময় শেষে ওদের খাবারের ব্যবস্থা করলাম। খাওয়া শেষ হতেই একসাথে গল্পের আসর জমালাম। কতদিন পর সবার সাথে দেখা। কখন যে বারোটা বেজে গেছে খেয়াল নেই। আম্মু,ফুপ্পির বকা খেয়ে তবেই উঠলাম। আমাদের গল্পের ফাঁকে তন্বী,ইভারা পুকুর থেকে কলসি করে পানি নিয়ে এসেছে। এখন আমাকে হলুদ দিয়ে ভুত বানিয়ে গোসল করাবে। গোসল শেষ হতেই দেখলাম পার্লারের মেয়ে পনের মিনিট ধরে বসে আছে। আমি দ্রুত সাজতে বসে গেলাম। নয়তো আবারো বকা ফ্রী। এখন দুই থেকে তিন ঘন্টা আমাকে বসে থাকতে হবে অন্যের অধীনে। তারপর আবার বউ সেজে বসে থাকতে হবে। আমার পিঠের হাড্ডি আস্ত থাকলেই চলে। বসে থাকতে থাকতে না বেঁকেই যায়।
#চলবে
আগামীকাল ওয়েডিং স্পেশাল আছে। সবাইকে আবারো বিয়ের আমন্ত্রণ দিলাম। আমাদের বিক্রমপুর চলে এসেন🥳।
#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Weeding_Special
#Writer_NOVA
বাইরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে,”বর এসেছে, বর এসেছে”।কথাটা কানে আসতেই এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। সাজ পুরো কমপ্লিট। পার্লারের মেয়েটা হাতে গ্লিটার দিয়ে ডিজাইন করছে।এদিকে শীতের মধ্যেও আমার অস্থির লাগছে। লেহেঙ্গাটা অনেক ভারী। গোল্ডেন পাথরের ভারী কাজ করা। সাধারণত বিয়েতে লাল, খয়েরী রঙ বেশি পরা হয়। কিন্তু আমার লেহেঙ্গাটা এনাজের ফেভারিট আকাশি রঙের। এনাজেরও সেম কালারের শেরওয়ানি। ভেবেছিলাম আকাশিতে আমাকে মানাবে না। কিন্তু এখন দেখছি ভালোই লাগছে। অনন্যা আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,
— খালামণি, ফিতা কোথায়?
— কিসের ফিতা?
— গেইট আটকাবো সেই ফিতা।
— দেখ তো ওয়ারড্রবের দ্বিতীয় ড্রয়ারে নাকি।
— আচ্ছা, আমি দেখছি। লেখা কার্ডগুলো কোথায়?
— কোন কার্ড?
— ঐ যে ছন্দ লেখা কার্ডগুলো।
— টেবিলের ওপরে ইভা রাখছিলো। সেখানেই তো থাকার কথা।
— ওহ পাইছি।
— ওরা কি চলে আসছে?
— মসজিদের ঐখানে আছে।
— ফিতা পেয়েছিস?
— হুম, এই সবুজ রঙের এটাই তো।
— হ্যাঁ এটাই। আঙ্কেল তোমায় কল দিয়েছিলো?
— গাড়িতে থাকতে একবার দিয়েছিলো। আমি সাজতে ছিলাম তাই বেশি কথা বলতে পারিনি।
— তুমি যাবা?
— কোথায় যাবো?
— তুমি নাকি ইভাকে বলছো তোমার বিয়ের গেইট তুমি ধরবা।
— হু বলছি।
— তাই জিজ্ঞেস করছি যাবা?
— তোরা যা আমি আসতেছি।
অনন্যা ফিতা নিয়ে চলে গেল। আমি পার্লারের মেয়েটার দিকে তাকাতেই দেখি মেয়েটা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
— কিছু বলবেন আপু?
— আপনি গেইট ধরবেন?
— হ্যাঁ, কেন?
— গ্রামের মানুষ কি বলবে?
— কে কি বলবে তার তোয়াক্কা এখন আমি করি না।
— হঠাৎ আপনার এমন আজগুবি ইচ্ছে কেন জাগলো আপু?
— একটা ভিডিওতে দেখছিলাম বউ গেইট ধরে।তখব থেকে জাগছে। আপনি একটু তাড়াতাড়ি হাতের কাজটুকু শেষ করেন।
বেচারী আমার দিকে বিস্মিত চোখে এখনো তাকিয়ে আছে। আসলে তার হজম হচ্ছে না যে বিয়ের কনে বরের গেইট আটকাবে। তন্বী, নূর আপি, ইভার চেচামেচি শোনা যাচ্ছে। গেইট আটকানোর দায়িত্বে তারা আছে। আমি পার্লারের মেয়েটাকে তাড়া দিয়ে বললাম,
— আপু একটু তাড়াতাড়ি করেন না। ঐদিকে ওরা চলেও আসছে বোধহয়।
মেয়েটা দ্রুত হাত চালাতে লাগলো। আমি ছটফট করছি। কতখনে এখান থেকে যেতে পারবো। ইভা দৌড়ে আমার কাছে এসে বললো,
— বোইনে ভাইয়ারা চলে আসছে। জলদী আসো।
আমাকে আর পায় কে? আমি মেয়েটার থেকে আমার হাত সরিয়ে নিয়ে চট জলদী লেহেঙ্গা উঁচু করে দিলাম দৌড়। আসার সময় স্যান্ডেল জুতা পরে চলে আসছি। থাক গে লেহেঙ্গার নিচে দেখা যাবে না। গেইটের সামনে এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
— দেখি, দেখি আমাকে একটু সাইড দাও তো।
উপস্থিত সবাই আমাকে দেখে হতভম্ব। এনাজের চোখ চড়কগাছ।তায়াং ভাইয়া কপালে একটা চাপর মেরে বললো,
— তোর দ্বারাই এসব সম্ভব।
আমি ভাইয়াকে একটা ভেংচি কেটে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
— গেইটের টাকা নিয়ে কোন ঝামেলা করা যাবে না। আমার বোনেরা যা চেয়েছে তা দ্রুত দিয়ে দেন।
নূর আপি আমার সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
— বর দিতে না পারলে বরের বন্ধুদের ধরবো।
তায়াং ভাইয়া মুখটাকে কুচোমুচো করে বললো,
— আমি মেয়েপক্ষের লোক। আমাকে তোদের দলে নিয়ে যা।
তন্বী চোখ পাকিয়ে বললো,
— একদম না। যেখানে দাঁড়িয়ে আছো সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকো। সুবিধাবাদী লোক। টাকা চেয়েছি বলে এখন দল বদলের চিন্তা করছো? একটুও না। এতো ভালো আমরা নই।
ইভা চেচিয়ে বললো,
— দশ হাজার না দিলে গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবেন। জলদী টাকা দেন।
সবার হাতে নানা ছন্দ লেখা মাঝারি সাইজের কার্ড। প্রথমে তন্বী ওর হাতের কার্ডে লেখাটা জোরে চেচিয়ে বললো,
—এক বড় না, দুই বড়,এনাজ ভাইয়ের মন বড়।
ইভা ওর হাতে থাকা বড় কার্ডটাকে পড়তে লাগলো।
—-এই যে আইছেন দুলাভাই
আস্তে আস্তে তুলবেন হাই!
পায়েশ দিমু ল্যাটকাইয়া, ছবি তুলবেন ভ্যটকাইয়া
আগে টেহা পরে বউ, মেয়া আমগো মৌটুসি মৌ
গরম গরম টেহা দিবেন, তাহলেই বউ নিতে পারবেন।
নূর আপি চেচিয়ে তায়াং ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—-আসসালামু আলাইকুম N
বর আসছে বিয়ে করতে আপনারা আসছেন কেন?
তায়াং ভাইয়া চোখ দুটো ছোট করে নূর আপির দিকে তাকাতেই নূর আপি ভেংচি কাটলো।ইভা চেচিয়ে বললো,
—আমাদের দাবি মানতে হবে,
দাবি মানলে আপুকে পাবে।
তন্বী আবারো বললো,
— এক বড় নাকি দুই বড়
সবাই একসাথে চেচিয়ে বললো,
— এনাজ ভাইয়ের মন বড়।
তন্বী ফের বললো,
— টাকা থাকলে পকেটে
সবাই চেচিয়ে বললো,
— বউ আসবে রকেটে।
তন্বী থামতেই নূর আপি বললো,
— বুকে চিনচিন করছে হায়
সবাই সমস্বরে চেচিয়ে বললো,
মন খালি টাকা চায়।
ইভা আমাকে খোঁচা মেরে বললো,
— তুমি কিছু বলো বোইনে।
— আমি কি বলবো?
— বলো কিছু।
— আচ্ছা বলছি।
এনাজের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হেসে বললাম,
—জাগো ভাই-বোনেরা জাগো,
আমার জামাই টাকা না দিলে,
জামাই-এর পাগড়ি লইয়া ভাগো।
এনাজ চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে আমার দিকে তাকালো। তারপর শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
—আমার বউ আমি নিবো,
গেইটে কেন টাকা দিবো।
সবাই একসাথে “ওহো” করে চেচিয়ে উঠলো। আমি তার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই সে এক চোখ মেরে দিলো। রওনক তন্বীর দিকে তাকিয়ে জোরে চেচিয়ে ছন্দের সুরে বললো,
—বাইচ্ছা নিবো দেইখা নিবো।
বউ নিবো না শালি নিবো,
একদাম ৫০০০ দিবো।
আমার চাচাতো ভাই মুহিন তার বিপরীতে চেচিয়ে বললো,
— দশ হাজারের এক টাকাও কম নয়।
Without টিয়া,No প্রিয়া।
তন্বী কিছু সময় থেমে আবারো চেঁচানো শুরু করলো।
—টাকা দেন তারাতারি
সবাই চেচিয়ে বললো,
—ঢুকে যান শশুর বাড়ি
এনাজ ফের চেচিয়ে বললো,
— আমার বউ আমি নিবো।
তার বন্ধুরা সব চিৎকার করে বললো,
— গেইটে কেন টাকা দিবো।
আমি সবাইকে হাত দিয়ে থামিয়ে বরের সাথের লোকগুলোকে বললাম,
— জলদী জলদী টাকা দিয়ে দেন। ওদের পাঁচ হাজার। বাকি পাঁচ হাজার আমার।
নূর আপি চেচিয়ে বললো,
— তুই কোথা থেকে আসছিস। যা ভাগ। এগুলো সব আমাদের।
অবশেষে অনেক ধানাইপানাই করে পাঁচ হাজারে দুই পক্ষ সম্মত হলো। পাঁচ হাজার দিতেই ওরা কাঁচি এগিয়ে দিলো। এনাজ ফিতা কাটার সাথে সাথে পার্টি স্প্রে, ফুলের পাপড়ির বর্ষণ শুরু হলো। আমি আর বেশি সময় এখানে থাকতে পারবো না।তাই লেহেঙ্গা উঁচিয়ে তাদের আগেই মারলাম দৌড়। ভাগ্যিস দুইপক্ষের মধ্যে কোন মুরব্বি ছিলো না। নয়তো এতখনে নানা কথা রটে যেতো। দরজার পাশের সোফায় গিয়ে বসলাম। এনাজ ও তার বন্ধুরা স্টেজে উঠেই নাচতে শুরু করলো।আমার জামাইটা খুশিতে না মান-সম্মান মেরে ফেলে। আমি তায়াং ভাইয়াকে হাতের ইশারায় ডাকলাম৷ ভাইয়া সামনে এসে বললো,
— কি হয়েছে? কিছু বলবি?
— তোর বন্ধুকে থামা। বিয়ের খুশিতে তো পাগল হয়ে গেছে। স্টেজে উঠে লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে কিভাবে নাচছে দেখ?
— পাগলনীর জামাই তো পাগল হবেই। তুইও তো একটু আগে নিজের বিয়ের গেইট নিজে ধরছিস। তাহলে ও কেন নিজের বিয়েতে নাচতে পারবে না।
আমি দাঁত চেপে ওর দিকে রাগী লুকে তাকালাম। ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে গেল। একটু পর দেখি তায়াং ভাইয়া নিজেই স্টেজে উঠে বন্ধুদের সাথে নাচছে। আমি আমার কপালে একটা চাপর মেরে রুমে চলে গেলাম।
💖💖💖
খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ। আমাকে ইভা কয়েক লোকমা খাবার খাইয়ে দিয়েছিলো। এতটুকুই আমার চালান।এখন কাজী বিয়ে পরাবে। এনাজকে আমার পাশে বসানো হলো। এনাজের প্রত্যেকটা বন্ধুর বাবা আসছে। শুধু তায়াং ভাইয়া আব্বু মানে আমার খালু ছাড়া। কাজী দেখেই আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করলাম। পুরো রুমে মুরব্বিদের আনাগোনা। কাজী তার মতো করে বিয়ে পরানো শুরু করলো। এনাজকে কবুল বলতে বললে এক দমে তিনবার কবুল বলে ফেললো। ওর কবুল বলার স্প্রিড দেখে আমি কান্নার মধ্যেও ফিক করে হেসে উঠলাম। মাথা নিচু করে এনাজের হাতে একটা চিমটি কাটলাম। সে আহ্ করে উঠতেই সবাই আমাদের দিকে একসাথে তাকালো। আমার বড় চাচ্চু জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে বাবা?
এনাজ একবার আমার দিকে তাকিয়ে চাচ্চুকে বললো,
— কিছু না।
কাজী আমাকে কবুল বলতে বলছে। কিন্তু কান্নার দরুন আমার গলা বন্ধ হয়ে আসছে। আমি শুধু ফোঁপাচ্ছি। আব্বু আমার সামনে এসে বিষন্ন মনে বললো,
— কবুল বলো মা।
আব্বুকে দেখে আমার কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। আমার কান্নার শব্দে আব্বুর চোখ টলমল করছে। কাঁদতে কাঁদতে কবুল বলে দিলাম। রেজিস্ট্রার পেপারে সই করে কান্নায় ভেঙে পরলাম। একে একে বাকি কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সমাধা হলো। মোনাজাত নিয়ে মিষ্টিমুখ করার ধুম পরলো। মুরব্বিরা হাঁক দিলো এবার বের হতে হবে। বউকে বের করো। ব্যাস এতটুকু ছিলো। একটু কান্না থেমেছিলো সেটাও বেড়ে গেলো। কান্না করা অবস্থায় বড় ভাবী আমাকে সাথে নিয়ে দরজায় দাঁড় করালো। একটা নতুন কাপড় ধরে সাক্ষ্যিদের সাথে কি কি জানি বলালো এনাজকে দিয়ে। দরজা দিয়ে বের হতেই আব্বু সামনে এলো। তাকে জড়িয়ে ধরে সেকি কান্না। আম্মু তো এর মধ্যে দুইবার অজ্ঞান হয়ে গেছে। ইভা,অনন্যা,অর্থি,তন্বী,নূর আপি সবাই চোখ মুছছে। একে একে সবার থেকে বিদায় নিলাম। এখন আমি ফুপিকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। আমার একটাই কথা। আমি যাবো না। এদিকে সন্ধ্যা গড়িয়ে আসছে। তায়াং ভাইয়া এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— আমার এখনো মনে হচ্ছে না তুই আমাদেরকে ছেড়ে যাবি। যেদিন তোকে এই বাসায় রেখে গিয়েছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো প্রতিবারের মতো কিছু দিন পর তোকে এসে নিয়ে যাবো। কিন্তু এবার তোকে নিতে আসবো না। বাসায় কেউ আমার সাথে ঝগড়া করবে না। কেউ আমার সাথে লেগে থাকবে না। দুষ্টুমীর জন্য আম্মুর কাছে আর বকা খাবো না। তুই একদিন বলছিলি না এই সুখটা আমার সহ্য হবে না। আজ আমি সত্যি উপলব্ধি করতে পারছি। তোরা বিরক্ত না করলে আমি একটুও ভালো থাকবো না।বাসাটা আগের মতো চুপচাপ হয়ে যাবো। এই ভালোটা আমার সহ্য হচ্ছে না রে বোন। আমার কলিজা ফেটে যাচ্ছে।
ভাইয়া হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। ভাইয়াকে এভাবে কাঁদতে আমি কখনো দেখিনি। ইভা কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলছে। ভাইয়া আমাকে ছাড়তেই ও ঝাপিয়ে পরলো আমার ওপর। কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো,
— বোইনে যাইয়ো না তুমি। আমি তোমার নামে আম্মুর কাছে একটুও বিচার দিবো না। তোমার সবকাজ করে দিবো। তুমি যা বলবে তাই শুনবো। তোমার কোন কথার অবাধ্য হবো না। তবুও তুমি থেকে যাও।
তন্বী এগিয়ে এসে দুই হাতে আমাদের দুজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। ঐদিকে বরপক্ষের মুরব্বিরা যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে। তন্বী নাক টেনে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— অনেক মিস করবো তোমাকে নোভাপু। এতদিন তুমি আমাদের সাথে ছিলে। আমার কাছে মনে হয়েছে আমার একটা বড় বোন ছিলো আমার সাথে। এখন থেকে আমাকে একা কলেজ যেতে হবে। কোন ভুল করলে বড় বোনের মতো করে কেউ বকবে না। কেউ বলবে না এটা কেন করেছিস, ঐটা কেন করছিস? আমি তোমাকে সত্যি অনেক মিস করবো। অনেক মিস করবো।
অর্থি, অনন্যা এসে সামনে দাঁড়িয়ে মুখ আটকে কান্না করছে। ওদের দুজনকে ছেড়ে অনন্যা, অর্থিকে জড়িয়ে ধরলাম। অনন্যা হু হু করে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো,
— এখন থেকে নানা বাসায় আসলে তোমাকে অনেক মিস করবো খালামণি। তুমি তো থাকবে না।
অর্থি আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বড়দের মতো করে বললো,
— আর কান্না করো না খালামণি। তুমি কান্না করলে সবাই কাঁদবে। আগামীকাল আমরা তোমাকে গিয়ে নিয়ে আসবো। এখন কান্না বন্ধ করো।
একে একে নূর আপি, শাহীনুর আপু, সামাদ ভাইয়া, মুহিন, তিন ভাবী সবাইকে জড়িয়ে ধরে আরেকদফা কান্না করলাম। আম্মু এগিয়ে এসে আবার জড়িয়ে ধরতেই জোরে চিৎকার শুরু হয়ে গেলো। তায়াং ভাইয়া এগিয়ে এসে টেনে নিতে লাগলো। আমি ভাইয়ার হাতে ইচ্ছে মতো থাপ্পড় দিতে লাগলাম। চেচিয়ে বললাম,
— ভাইয়া আমাকে ছাড় আমি যাবো না।
— পাগলামি করিস না বোন।
— আমি যাবো না। আমি এখানেই থাকবো।
— কালকে এসে পরবি তো।
আমি ভাইয়ার কথা শুনতে নারাজ। ভাইয়া শেষে বাধ্য হয়ে আমাকে কোলে তুলে নিলো। তাও আমি ছটফট করে নিজেকে ছাড়াতে ব্যস্ত। সাথে ভাইয়ার বাহুতে কিল-ঘুষি তো আছেই। ভাইয়া আমাকে নিয়ে দ্রুত চলতে লাগলো। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে গলা ভেঙে ফেলছি। শরীরে শক্তিও পাচ্ছি না। গাড়ির সামনে এনে ভাইয়া দরজা খুলে ভেতরে বসিয়ে দিলো। আমার মাথা ভনভন করে ঘুরছে। তাও বাইরে যাওয়ার জন্য উঠতে নিলে এনাজ দুই হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে আটকে নিলো। ভাইয়া দরজা আটকে দিলো।আমার সারা পৃথিবী ঘুরছে। ধীরে ধীরে মাথাটা এনাজের কাঁধে এলিয়ে দিয়ে জ্ঞান হারালাম।
#চলবে