শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_66
#Writer_NOVA
মুখে পানির ঝাপটা পরতেই পিটপিট করে চোখ খুললাম। তাকিয়ে দেখি খালামণি মিষ্টি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। খালামণিকে দেখে দুঃখ উঠে গেলো। তাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলাম। খালামণি মাথায় আশ্বাসের সুরে বললো,
— কান্না করিস না। আমরা এখানে আছি তো। আমি আছি তোর তায়াং ভাইয়া আছে। মন খারাপ করে থাকিস না। তায়াং ওকে একটু ধর। তায়াং, এই তায়াং।
এনাম ভাইয়া বললো,
— তায়াং ভাইয়া এখনো আসেনি। কোথায় আছে বলতে পারছি না। কল করে দেখছি।
খালামণি পাশে থাকা মোহনাকে বললো,
— মোহনা যাও গিয়ে ওকে ধরে একটু দাঁড়াও। আমি বরণডালা নিয়ে আসছি।
মোহনা এগিয়ে এসে আমাকে ধরলো। এনাজ ওকে সরিয়ে দিয়ে ইশারায় বুঝালো আমি ধরতে পারবো। মোহনা মুচকি হাসি দিয়ে সরে গেলো। এনাজ এক হাতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। খালামণি যত নিয়ম আছে সব পালন করে বরণ করে নিলো। বাসায় ঢোকার পর সোফায় নিয়ে বসালো। এখন নাকি আবার ভিডিও হবে। বসে থাকতে থাকতে আমি শেষ। কোমড় ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। সব ফ্ল্যাটের মানুষ এসেছে নতুন বউ দেখতে। ভীড় কমতেই আমি সোফায় হেলান দিয়ে চোখ দুটো হালকা বন্ধ করে ফেললাম।
— নে শরবতটুকু খেয়ে নে।
খালামণি আমার সামনে এক গ্লাস শরবত বাড়িয়ে দিলো। আমারও বড্ড তেষ্টা পেয়েছিলো। তাই কোন কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলাম। খালামণির হাতে গ্লাসটা ফেরত দিতেই সে গ্লাস নিয়ে টি-টেবিলের ওপর রাখলো। এনামকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,
— তায়াং আসছে এনাম?
— না আন্টি। আমি কল দিয়েছিলাম। ভাইয়া বললো একটু বাসায় গেছে। সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে তারপর আসবে।
— আবার বাসায় গেছে কেন?
— তাতো জানি না।
— ওহ আচ্ছা। ঐদিকে বাসরঘর সাজানো হয়েছে? মেয়েটা এভাবে আর কতখন বসে থাকবে? সারাদিন ধরে বসে আছে।
— দুই দিন তো একটু কষ্ট করতেই হবে। ভাবীকে বসে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে গেলে চলবে না।
— গিয়ে দেখ সব কমপ্লিট হয়েছে কিনা।
— সাজানো বহু আগেই হয়ে গেছে। ভাবীকে রেখে আসেন। আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
এনাম চলে গেলো।সোফার ওপর দুই পা মুড়ে বসে ছিলাম। এনাজের দুটো বন্ধুকে দেখে দ্রুত পা নামিয়ে সুন্দর করে বসলাম। এদেরকে আগে কখনো আমি দেখিনি। আমাকে দেখে রাখার জন্য মোহনাকে রেখে খালামণি কিচেনের দিকে চলে গেল। দুই বন্ধুর মধ্যে একজন সামনে এসে মুখ টিপে হেসে বললো,
— ভাবী,আজকে কি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হবে নাকি?
আমি প্রথমে তাদের কথা বুঝলাম না। পরে বুঝতে পেরে আমি চোখ দুটো গোল গোল করে সামনের এনাজের দিকে তাকালাম। এনাজের গাল দুটো লাল টমেটো হয়ে আছে লজ্জায়।সে দ্রুত পায়ে সামনে এসে যে কথাটা বলেছে তার পিঠে এক চাপর মেরে বললো,
— শালা, চুপ কর। কোথায় কি বলতে হয় তা জানিস না? ছোট বোন আছে সামনে।
মোহনা হয়তো কথাটা শুনতে পাইনি কিংবা শুনলেও বুঝতে পারেনি৷ তাই অবাক চোখে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা নিচু করে মিটমিট করে হাসতে লাগলাম। আবারো ছেলে দুটো কিছু বলার জন্য মুখ খুলেছিলো। এনাজ দুইজনের মুখ চেপে বাসার বাইরে টেনে নিয়ে গেলো। আমি ফিক করে হেসে উঠলাম। আমার থেকে এনাজ বেশি লজ্জা পেয়েছে। মোহনা আমাকে হাসতে দেখে বললো,
— কি হয়েছে ভাবী?
— কিছু না।
— কিছু লাগলে বলো।
— আচ্ছা।
— বাসার বাকি সবাই গেলো কোথায়?
— আর কাউকে দেখছি না যে? ইমরান হাশমি ভাইয়া, শাহেদ ভাইয়া, রায়হান ভাইয়ার বোনকেও তো দেখছি না। তারা আসেনি?
— এসেছে তো। কোথায় আছে জানি না। আমাকে তোমার পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত করছে। তাই অন্য কোথাও যাওয়া মানা। আমি কোথাও গেলে সেই ফাঁকে যদি তোমাকে কেউ কিডন্যাপ করে নেয়। তাহলে এনাজ ভাইয়া হার্ট অ্যাটাক করবে।
আমি মিটমিট করে হাসলাম। কোন উত্তর দিলাম না। এনাজ মহাদোয়ের দেখা নেই। কি লজ্জাটা না পেয়েছে বেচারা। তার লজ্জা রাঙা মুখটা মনে পরতেই আমার হাসি আসছে। খালামণি কিচেন থেকে এসে বললো,
— মোহনা যাও তোমার ভাবীকে এনাজের রুমে বসিয়ে দিয়ে এসো।
— আচ্ছা আন্টি।(আমার দিকে তাকিয়ে) চলো ভাবী তোমাকে তোমার রুমে রেখে আসি।
মোহনার পিছু পিছু ধীর পায়ে সামনের দিকে এগুতে লাগলাম। যত এগুচ্ছি ততই ভয় করছে। আজকের থেকে নতুন জীবনের নতুন অধ্যায়, নতুন করে পথচলা তাও প্রিয় মানুষটার সাথে।
💖💖💖
বিশাল এক ঘোমটা টেনে বাসরঘরে বসে আছি। শীতের মধ্যেও কুলকুল করে ঘামছি আমি। আমাকে এখানে বসিয়ে মোহনা চলে গেছে দশ মিনিট ধরে। মনের ভেতর শয়তানি বুদ্ধি ঘুরছে। একবার ভাবছি কাজে লাগাবো। আরেকবার ভাবি দরকার নেই। তা নিয়ে এখন দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছি। কিছু সময় ভেবে শয়তানি করতে মন সায় দিলো। মনে মনে বললাম,
—সরি এনজিও সংস্থা, আপনার বাসর করা আজ হবে না। মাফ করে দিয়েন।
খট করে ছিটকিনি খোলার শব্দ পেতেই নড়েচড়ে বসলাম। লেহেঙ্গা খামচে শক্ত করে ধরলাম। অভিনয় শুরু করতে হবে। বেচারার জন্য একটু মায়াও হচ্ছে। তবু আমি নিরুপায়। সে ধীর পায়ে আমার সামনে এগিয়ে আসছে। যত এগিয়ে আসছে তত ভয় বাড়ছে। চট জলদী উঠে তাকে দেখে ভয় পাওয়ার ভঙ্গি করে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে বললাম,
— একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। দূরে যান বলছি।
হঠাৎ আমার এই আচরণে বেচারা পুরোই ভরকে গেল। বিস্ফোরিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো। মুখটাকে কুচোমুচো করে বললো,
— কি করছি আমি?
— কিছুই না। যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন। একদম কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।
— বউকে যদি স্পর্শ করতে না পারি তাহলে বিয়ে করে লাভ কি আমার?
—ওতো লাভ-লোকসানের হিসাব আমি বুঝি না। যা বলছি তা করেন।
— আমার অপরাধ?
— ওয়েট খুঁজতেছি।
এনাজ কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকালো। আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে পুরনো স্মৃতির ঝুলি খুলে বসলাম। কিন্তু এনাজের কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছি না। তাই (😁) এই ইমোজির মতো করে একটা হাসি দিয়ে বললাম,
— আসসালামু আলাইকুম। পা ধরে সালাম করা গুনাহ। তাই মুখে সালাম দিলাম।
— ওয়া আলাইকুমুস সালাম। এবার এই বান্দার অপরাধটা যদি একটু বলতেন মহারাণী। তাহলে বড় উপকৃত হতাম।
— বলছি, একটু ভেবে নেই।
— হু ভাবতে ভাবতে সারারাত কাটিয়ে দিন। আমি নিচে বসে বসে মশা মারি।
আমি খাট থেকে লাফ দিয়ে নেমে তার সামনে এসে দুই হাত কোমড়ে রেখে বললাম
— বিয়েতে অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে এসেছিলো। তাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলেন। এই আপনার অপরাধ।
— এতবড় মিথ্যা বললে?আমি এক নারীতে আসক্ত। তাই অন্য কারো দিকে তাকাতেও ইচ্ছে হয়নি।
ধরা পরে গেলাম। কি এক ঘাটোরা আইডিয়া খুঁজেছি। তার দিকে অপরাধী দৃষ্টিতে তাকিয়ে নখ কামড়াতে লাগলাম। সে এক পা দু পা করে আমার সামনে এগিয়ে আসছে। আমি কেঙ্গারুর মতো করে পেছাতে নিলেই সে এক হাতে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আমাকে তার সাথে মিশিয়ে নিলো। তার ঠান্ডা হাতের স্পর্শ কোমড়ে পেতেই চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে তার দিকে তাকালাম। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করে হাতুড়ি পিটচ্ছে কেউ। সে নেশাক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে লো ভয়েজে বললো,
— আর কোন অপরাধ আছে?
— না মানে হু আছে।
দ্রুত মাথা নাড়াতে দেখে উনি মুচকি হাসলেন। আমি তার হাত আমার কোমড় থেকে সরানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি আরম্ভ করলাম। উনি হাত না সরিয়ে আরো শক্ত করে ধরলো। আমি নিজেকে সংকুচিত করে নিলাম। সে আমার ঠোঁটের দিকে ঠোঁট এগিয়ে দিলো। যেই মুহুর্তে অধর যুগল ছোঁয়াবে সেই মুহুর্তে আমি এক হাতে মুখ আটকে ফেললাম।সে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
— সমস্যা কি?
— কিছু না।
— তাহলে মুখ আটকালে কেন?
— এমনি।
— আমি তোমার হাসবেন্ড টিডি পোকা।
— আমি জানি।
— তাহলে এতো মোচড়ামুচড়ি করছো কেন?
— আমার একটু সময় লাগবে এনজিও সংস্থা।
— কোন সময় দিতে পারবো না।
— প্লিজ একটু মেনে নিন। এতদিন যখন অপেক্ষা করতে পারছেন তাহলে আরেকটু করে নিন।
— তখন আমার বউ ছিলে না তুমি। কিন্তু এখন শরীয়ত মোতাবেক তুমি আমার বউ।
— তাহলে আমাকে পনেরো মিনিট সময় দিবেন। আপনি একটু রুমের বাইরে যান প্লিজ।
উনি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
— কেন?
— আমার খুব অস্বস্তি লাগছে। ড্রেস পাল্টাতাম। বেশি না যাস্ট পনেরো মিনিট।
— আমি রুমে থাকলে কি সমস্যা?
— কোন সমস্যা না। আমি একটু একা থাকতে চাইছি। প্লিজ মানা করেন না।
এনাজ কিছু সময় কপাল কুঁচকে ভাবলো। তারপর কপালের ভাজ স্বাভাবিক করে বললো,
— আচ্ছা আমি যাচ্ছি। তবে অনলি পনেরো মিনিট। এরপর কিন্তু আমি ছাড়ছি না।
আমি বিরবির করে বললাম,
— সেই সুযোগ দিলে তো।
উনি চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললো,
— কি বললে তুমি?
— কিছু না।
— মনে রেখো পনেরো মিনিট।
কোমড় ছেড়ে কপালে টাইট করে একটা চুমু দিলো। আমি তার থেকে ছাড়া পেয়ে বড় করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লাম। উনি দরজা অব্ধি গিয়ে আবার ফিরে এলো। আমি মুখে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে রইলাম। উনি পকেট থেকে একটা লকেট সহো চেইন বের করে গলায় পরিয়ে দিলো।
— এটা আমার মায়ের পক্ষ থেকে ছোট উপহার। চেইনটা আম্মুর ছিলো। সবসময় আম্মু বলতো এটা তিনি নিজ হাতে তার বড় ছেলের বউকে পরিয়ে দিবে। কিন্তু আজ আম্মু নেই বলে আমিই পরিয়ে দিলাম। শত বিপদেও আমি এটা বিক্রি করিনি। কারণ এটা আমার মায়ের দেয়া তার বউমার জিনিস। এটার ওপর আমার কোন অধিকার নেই। এটা সবসময় তুমি পরে থাকবে।
তার গাল বেয়ে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো। আমি তার চোখের পানি মুছিয়ে দিতেই সে গালে আলতো করে চুমু দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। উনি যেতেই আমি ধপ করে খাটে বসে পরলাম। গলার চেইনটা হাতে নিয়ে দেখলাম ফুলের লকেট। আমার শ্বাশুড়ির চিহ্ন। সুতির একটা ড্রেস নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ওয়াসরুম থেকে এসে মাথাটা কোনরকম আঁচড়িয়ে বালিশে মাথা হেলিয়ে দিতেই সারাদিন ক্লান্তি এসে ঘিরে ধরলো। কোমড় ব্যাথা করছে অনেক। আমি ঘুমাতে চাইনি। কিন্তু ক্লান্তির দরুন মিনিট চারের মধ্যেই ঘুমের রাজত্বে চলে গেলাম।
মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেতেই জেগে গেলাম। স্পর্শ আমার বহু চেনা। কিন্তু উঠলে আমি শেষ। তাই ঘুমের ভান করে পরে থাকাই বেটার। আজকে আমি আর কিছু পারবো না। বলছিলাম একটু সময় দিতে। তাতো ভালো লাগলো না। এখন বুঝুক মজা!এনাজের কথা শুনে আমার পেট ফেটে হাসি আসার জোগাড়। হালকা করে এক চোখ খুলে দেখতে পেলাম সে এক হাত গালে দিয়ে ফ্লোরে বসে আছে। বিরবির করে কান্নার ভান করে বলছে,
— আহা, কি ঘুম! আমার বাসররাত চম্পট করে দিয়ে আমার বউ কি শান্তিতে ঘুমাচ্ছে! মনে মনে এই প্ল্যান করছিলে তাই না? আমিও এগুলো মনের ডায়েরিতে লিখে রাখবো। সবকিছু সুদসুদ্ধ উসুল করবো। কি আর করবো আমি? ঠাস ঠাস করে মশা মারি। না আজকে মশাও নেই। তাহলে কি বাসর করতে না পারার শোকে ফিট খেয়ে পরে থাকবো? আইডিয়া মন্দ নয়। কিন্তু আমার বউ এমনটা না করলেও পারতো। দিলো রে দিলো, আমার বাসররাতটা নষ্ট করে দিলো।আমার বাসররাত😭।
আমার হাসি আটকে রাখা দায় হয়ে যাচ্ছে। তবুও খুব কষ্টে মুখ চেপে রাখছি। কম্বল মুড়ি দেওয়ায় রক্ষা।আহা,কি আনন্দ আকাশে-বাতাসে 💃।আমার জামাইয়ের বাসররাতের তেরটা বাজিয়ে দিয়েছি।
#চলবে
#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Weeding_Special_02
#Writer_NOVA
ঘুম ভাঙতেই মনে হলো কেউ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। জানালার ফাঁক দিয়ে এক ফালি আলো এসে অন্ধকার রুমটাকে বেশ আলোকিত করে দিয়েছে। সেই আলোতে স্পষ্ট দেখতে পেলাম এক পুরুষ অবয়ব আমাকে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। একবার ধরফর করে উঠতে গিয়ে খেয়াল হলো আমি আমার জামাই বাড়ি। আর যে আমাকে ধরে রেখেছে সে আমার পরাণের সোয়ামি। তাই যেভাবে ছিলাম সেভাবেই রইলাম।সারারাত ঘুমের কারণে মাথাটা হালকা লাগছে। শরীর ব্যাথাটা একটু কমছিলো। কিন্তু মনে হচ্ছে তা আমার এনজিও সংস্থা আবার বাড়িয়ে দিবে। তাকে সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। এতো বলিষ্ঠ শরীর আমার পক্ষে সরানো দায়। আমি একটু নড়েচড়ে উঠতে নিলে উনি আরেকটু শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো,
— নড়াচড়া করো না তো। একটু ঘুমাতে দাও।
ও আল্লাহ কি বলে এসব! সারারাত ঘুমিয়ে এখনও তাকে আমি ঘুমাতে দিচ্ছি না। আমি তার হাতটা আমার পেটের ওপর থেকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে নিলে ছোট করে এক ধমক দিলেন।তারপর চোখ না খুলে বললো,
— এত নড়াচড়া করছো কেন? ঘুমাতে কি দিবে না নাকি? চুপ করে শুয়ে থাকো।
— আমি ওশাসরুমে যাবো।
— কেন?
— ওয়াসরুমে মানুষ কেন যায়?
উনি ফট করে চোখ খুলে দুষ্টুমির সুরে বললো,
— কেন যায়?
— নাচতে যায়।
— তাহলে আমিও যাবো চলো।
— আপনি যাবেন কেন?
— আমার বউয়ের নাচ দেখতে।
— নাচ দেখতে হবে না। আমি জোরে চিৎকার করে গান গাইবো তা শুনে নিয়েন।
— নাহ আমি তোমার নাচ দেখবো।
— কোন দরকার নেই। আপনার ঘুমের ডিস্টার্ব হচ্ছে তাই চুপচাপ ঘুমান।
— তুমি সাথে থাকলে কোন ডিস্টার্ব হবে না।
— আমি ওয়াসরুমে যাবো। আমার গোসল করতে হবে।
— কেন গোসল করবা? আমি তো কিছুই করিনি।
আমি তার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
— আপনি যে কিছু করেননি তা কি আমি সবাইকে গোসল না করে জানিয়ে দিবো😬?
— এস ইউর উইশ। আমি কিছু করিনি তাই এখন তোমার গোসল করারও প্রয়োজন নেই। পরে করলেও হবে। এখন চুপচাপ শুয়ে থাকো। আমিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে দাও।
— ছাড়েন, আমাকে একটু ওয়াসরুমে তো যেতে দেন।
— গোসল না করলে যেতে দিবো।
— কি ধরনের কথাবার্তা এসব?
— ইহা আপনার শাস্তি মহারাণী। গতকাল আমার সাথে চিটিং করার ফল।
— আমি কোন চিটিং করতে চাইনি।
— কিন্তু করে ফেলছো।
— গালতিসে মিষ্টেক।
— এই গালতির ফল এখন ভোগ করবা।
— ওপর থেকে সরেন।
— কি বলছি মনে আছে? তাহলে ছাড়বো।
— এবার কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
— তুমিও করছো।
— সরবেন?
এনাজ লাফ দিয়ে উঠে মাথার কাছের একটা জানালা খুলে দিলো। আমি সেই সুযোগে সটকে পরতে নিলে মুহুর্তের মধ্যে আমার হাত টেনে নিয়ে আবার যেভাবে ছিলো সেভাবে আমার ওপর শুয়ে রইলো। আমি অবাক কন্ঠে বললাম,
— কি হলো এটা?
— দেখতেই তো পেলে।
— ভালো হবে না কিন্তু।
— না হলে আমার কিছু করার নেই।
— ওপর থেকে সরেন।
— এক শর্তে সরতে পারি?
— আবার কিসের শর্ত?
— একটা লিপ কিস করতে দিবা তাহলে।
— বদমাশ বেডা।
— এখানে বদমাশির কি হলো? এখনও তো বদমাশির কিছু শুরুই করলাম না।আমার বউ আমি যা খুশি করতে পারি। আমার পুরো অধিকার আছে। যদি কিস না করতে দাও তাহলে অন্য কিছু করবো। রাতের কাজ দিনে করতে আমার কোন সমস্যা নেই।
এক চোখ মেরে একগালে শয়তানি হাসি দিয়ে উনি কথাগুলো বললো। আমি তার দিকে চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে তাকিয়ে আছি। এই ছেলের মুখে আজ কিছু আটকাবে না। আমি মুখ খুলে কিছু বলতে নিলে উনি টুপ করে ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বসলো। আমার চোখ দুটো এবার বেরিয়ে যাবে। রাগী গলায় বললাম,
— কি হলো এটা?
উনি লজ্জা পাওয়ার ভান করে বললো,
— বউকে আদর দিলাম।
— এবার কিন্তু বদমাশি হইতাছে।
— বউয়ের সাথে বদমাশি করবো না তাহলে কার সাথে করবো বলো?
— আল্লাহর দোহাই লাগি চুপ করেন আপনি। আমার ঢের শিক্ষা হইছে। আপনার সাথে আর কখনো লাগবো না। এবারের মতো মাফ করেন। আপনার সাথে চালাকি তো দূরে থাক, কোন কথার অবাধ্যও হবো না।
— যাক, বোঝার জন্য ধন্যবাদ। এবার টাইট করে একটা লিপ কিস দিতে দাও তাহলে ছেড়ে দিবো। তবে আজকের রাতে কোন ছাড়াছাড়ি নেই। তোমাকে আমার করেই ছাড়বো।
— না, না এখন আর কিছু ন…..
পুরো কথা আমি শেষ করতে পারলাম না। তার আগেই পরম যত্নে আমার অধর যুগল সে তার অধর দিয়ে আটকে নিলো। আমার বাঁধা দেওয়ার মতো শক্তিটুকুও নেই। কারণ তার পুরো শরীরের ভারটা আমার ওপরেই। হাত দুটো আটকানো। ছাড়া থাকলে ধাক্কা মেরে সরানো যেতো।
💖💖💖
বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে……..
পার্লার থেকে কমিউনিটি সেন্টারে যেতেই দেখি আমাদের বাড়ির মানুষ চলে এসেছে। আজ সাজতে অনেক দেরী হয়ে গেছে। গাঢ় নীল রঙের কাতান শাড়ির সাথে সেম রঙের ঘোমটা। গোল্ডেন স্টোনের জুয়েলারি সারা শরীরে ঝিকমিক করছে। পাশের এক কমিউনিটি সেন্টারে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মোটামুটি বেশ বড় করেই আয়োজন। যদিও মানুষ বেশি নয়। আমাদের বাসার লোক আর এনাজের বন্ধু ও তাদের পরিবার। মোহনার সাথে ভেতরে ঢুকতেই সব আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে এনজিও সংস্থাকে খুঁজতে লাগলাম। এক সময় পেয়েও গেলাম। চাচ্চুদের সাথে কথা বলছে। তার পরনে আজ নীল রঙের কোর্ট-প্যান্ট,পায়ে কালো সু জুতা। আমার দিকে তাকিয়ে এক চোখ মেরে শয়তানি হাসি দিলো। আমি ভেংচি কেটে সামনে তাকালাম। এনাম সামনে এসে এক হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,
— ভাবী সাহেবা, আপনার হুকুমের আগে বান্দা হাজির। দয়া করে আপনি কি আমার সাথে যাবেন? আমি আপনাকে স্টেজে বসিয়ে দিতাম।
আমি মিষ্টি হাসি দিয়ে নিচুস্বরে বললাম,
— নিশ্চয়ই দেবরজী, কেন নয়?
মোহনা হাত সরিয়ে দিলো। এনামের হাত ধরে সামনে এগুতে নিয়ে থেমে গেলাম। মোহনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— মোহনা, যাও গিয়ে খেয়ে নাও।
— না ভাবী, পরে খাবো। আগে আপনাকে খাওয়াবো তারপর আমি।
— আমাকে মেবি তোমার ভাইয়ার সাথে খেতে বসতে হবে। তাও সবার শেষে। তুমি খেয়ে নাও।
— আচ্ছা, তাহলে আমি খেয়ে নিবো।
— আমার জন্য তোমার অনেক দেরী হয়ে গেলো।
সরি তার জন্য।
— আরে তুমি সরি কেন বলছো? এটা আমার দায়িত্ব ছিলো। তোমার সাথে সাথে আমিও তো পার্লার থেকে সেজে আসতে পারলাম। এতে তো আমারি লাভ হলো।
আমি মুচকি হেসে এনামের সাথে যেতে লাগলাম। এনামের পরনে কালো রঙের কোর্ট-প্যান্ট। এনাজের থেকে ওর গায়ের রং অনেকটা ফর্সা। কালো তে বেশ লাগছে। এনাজের সামনে দিয়ে যেতে নিলে সে মাথা নিচু করে আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো,
— আজকে রাতে খবর আছে। আমিও দেখবো আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচায়?
আমি দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা হজম করে নিলাম। একবার ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্টেজে উঠে গেলাম। এনাম আমার সাথে বসে কতগুলো ছবি তুললো। ভিডিওম্যান কিছু সময় আমাদের ভিডিও করলো। এনাম যাওয়ার আগে বললো,
— কিছু লাগলে বলেন ভাবী।
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। এনাম দ্রুত পায়ে স্টেজ থেকে নেমে গেলো। আমি হাসিমুখে সবার খাওয়া দেখতে লাগলাম। হঠাৎ কিছুটা দূরে ইফাত, সিফাতকে দেখতে পেলাম। আমি হাত বাড়িয়ে ডাকতেই সিফাত দৌড়ে এলো। কিন্তু ইফাত মুখ গোমড়া করে যেখানে বসে ছিলো সেখানেই রইলো। সিফাতকে আমার পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
— বাসার সবাই কেমন আছে?
— সবাই ভালো আছে। শুধু ছোট বোনের ঠান্ডা লাগছে।
— তোর আম্মু ভালো আছে?
— হ্যাঁ ভালো আছে।
— কে কে আসছিস?
— আমি, ভাইয়া, আব্বু, দাদা এই চারজন আসছি। আম্মু, দাদী বাসায়।
— কালকে আমাদের বাসায় গিয়েছিলি?
— হুম।
— কোথায় তোদের দেখি দেখলাম না?
— তোমাকে সাজাইতেছিলো। তাই হয়তো খেয়াল করোনি।
— ওহ আচ্ছা।
— জানো ভাইয়া না অনেক কান্না করছে তোমার জন্য। তোমার সাথে আর কথা বলবে না বলছে।
আমি মুচকি হেসে ইফাতের দিকে তাকালাম। ইফাত বড় মানুষের মতো মুখটা ঘুরিয়ে ফেললো। সাদ্দাম, শাকিল, তামিম, সাফা, ঝুমা খাবার শেষ করে আমার সাথে কথা বলতে এগিয়ে গেলো। ওদের দেখে সিফাত দৌড়ে ইফাতের কাছে চলে গেলো। সবগুলো গাদাগাদি করে আমার পাশে বসলো। এমনভাব মনে হচ্ছে পারলে আমাকেই সোফা থেকে ফেলে দেয়। তামিম কিছুটা চেচিয়ে আমাকে বললো,
— একটু ঐদিকে যেতে পারিস না?
আমি রেগে বললাম,
— আমাকে সোফা থেকে ফেলে দে। না পারলে কোলে এসে বস তোরা।
সাদ্দাম শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
— আইডিয়া খারাপ নয়। তুই ওঠ আমরা কতগুলো ছবি তুলে নেই।
আমি সবার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিনা। কাউকে তাকাতে না দেখে মেজাজ দেখিয়ে বললাম,
— ঐ সাদ্দাম, শাকিল, তামিম তোদের আমি কি বলছিলাম?
সাফা সেলফি তুলতে তুলতে আমাকে বললো,
— কি বলছিলি ওদের?
শাকিল কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
— কি বলছিলি?
আমি ফোঁস করে একবার নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম,
— বলছিলাম না, আমার জামাইকে বলতে, “জিতছেন ভাই, জিতছেন।” তোরা কি তা বলছিস?
তামিম জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো,
— একেবারে ভুলে গেছিলাম রে।
আমি মুখটাকে থমথমে বানিয়ে বললাম,
— জলদী গিয়ে বলে আয় যা। ওর বন্ধুরা সামনে থাকলে বলিস। অন্য কারোর সামনে বলার দরকার হলে। কি বলতে হবে মনে আছে তো?
শাকিল বললো,
— হুম মনে আছে। তাকে বলবো, “জিতছেন ভাই জিতছেন। আমাদের নোভার মতো মেয়ে দুটো পাবেন না। আপনার সুন্দর জীবনটাকে তেজপাতা বানাতে ও একাই যথেষ্ট।”
— কি বললি তুই?
— আরে রাইগো না, রাইগো না। আমি বিষয়টা বুঝিয়ে বলছি।
— বেশি বাড়িয়ে বলতে হবে না। যা বলার তা বলবি। তোরা যে বেশি বাড়িয়ে বলতে গিয়ে আমার মান-ইজ্জ্বত খেয়ে আসবি তা আমি জানি।
আমাদের কথার মাঝে সাদ্দাম ভ্রু নাচিয়ে বললো,
— বলতে পারলে কি দিবি? তুই যদি এখান থেকে উঠে আমাদের একা ছবি তুলতে দিস তাহলে বলবো যা।
আমি আস্তের ওপর সাদ্দামের পায়ে একটা লাথি মেরে মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
— তোদের কিছু বলতে হবে না। যা ভাগ।
আমরা যে কথা বলছি সেদিকে সাফা, ঝুমার কোন খেয়াল নেই। তারা হাঁসের মতো ঠোঁট দুটো চোখা করে সেলফি তুলতে ব্যস্ত।
💖💖💖
কিছু সময় পর…..
সোফার এক কোণায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি আমি। আমার হারামী বন্ধু-বান্ধবীগুলো আমাকে সোফায়ও জায়গা দেইনি। আমার জামাইকে আমার শিখানো ডায়লগ “জিতছেন ভাই জিতছেন” বলে এসে আমাকেই সোফায় থাকতে দেইনি। ইভা, অনন্যা,অর্থি একবার আমার সাথে দেখা করে সারা কমিউনিটি সেন্টার চক্কর মারছে। নূর আপিকে এতখন তায়াং ভাইয়ার সাথে দেখা গিয়েছে। এখন কোথায় জানি না। মোহনা, শাহেদের সাথে। তন্বী, রওনক, তওহিদ ভাইয়া ও শারমিন একসাথে খেতে বসেছে। আমি অসহায়ের মতো সবার দিকে তাকিয়ে আছি।আমাকে দেখে তায়াং ভাইয়া এগিয়ে এসে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো। তারপর মিষ্টি হেসে বললো,
— কিরে রাত কেমন কাটলো😷?
আমি তায়াং ভাইয়ার দিকে কটমট করে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বললাম,
— তায়াং ভাইয়া আমি তোর ছোট বোন।
— বন্ধুর বউ হিসেবে জিজ্ঞেস করছি।
ওর বাহুতে জোরে একটা কিল দিয়ে বললাম,
— ভালো হয়ে যা ভাইয়া, ভালো হয়ে যা।
— তুই ভালো হয়ে যা। গতকাল রাতে ছেলেটার সাথে ঠিক করিসনি।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
— এটাও বলে দিয়েছে?
— জানে জিগার দোস্ত। আমাকে বলবে না তো কাকে বলবে?
— হইছে চুপ কর। সব বন্ধু একিরকম। মুখে কোন লাগাম নেই। কোথাও কি বলতে হয় আর করতে হয় সেটাই জানিস না।
— তা কেমন আছিস?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই।
— আলহামদুলিল্লাহ।
— এখানে দাঁড়িয়ে কেন?
— আমাকে সোফায় জায়গা দিচ্ছে না।
— বন্ধু-বান্ধবগুলা এমনি হয়।
— তুই আমাদের সাথে যাবি না?
— হু যাবো তো।
— নূর আপির সাথে কথা হয়েছে।
— হুম।
— এবার রওনক ও তন্বীর ব্যবস্থা কর।
— হ্যাঁ, তাই করবো।
তায়াং ভাইয়াকে আবির ভাইয়া ডাকতেই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। ভিডিওম্যান আমাদের ভিডিও করবে। তাই আমার হারামী বন্ধু-বান্ধবীগুলো উঠে গেলো। অবশেষে আমি বসতে পারলাম। এনাজ স্টেজে উঠে আমার পাশে ঘেঁষে বসলো। আমি কিছুটা দূরে সরতে চাইলে আমার পেছন দিয়ে এক হাত দিয়ে আমার বাহু চেপে ধরলো। আমি একবার তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে ভিডিও-এর লাইটের দিকে তাকালাম। উনি কানের সামনে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো,
— এতো পালাই পালাই ভাব কেন?
আমি বিরবির করে বললাম,
— জামাইয়ের হাব-ভাব বেশি ভালো না তাই।
— হু যত পালানোর পালাও। আমিও তো দেখবো পালিয়ে যাও কোথায়? শুধু শুধু এত কষ্ট করছো। শেষে তো আমার কাছে ধরা দিতেই হবে।
— এত সহজে না।
— আমিও আজ দেখবো।
— ভয় দেখান কেন?
— ভয় না সত্যি কথা বলছি।
— আমি আজকে আপনার সাথে থাকবো না।
— দেখা যাবে।
আমি কাঁদো কাঁদো ফেস করে তার দিকে তাকাতেই সে এক গালে কিলার টাইপের হাসি দিলো। কানের কাছ থেকে মুখ সরানোর আগে কানে টুপ করে একটা চুমু খেলো। আমি খাইয়া ফালামু লুকে তার দিকে তাকালাম।ইচ্ছে করছে তার ঠোঁট দুটো জোরে টেনে দিতে। ভিডিওম্যান আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— ভাবী, চোখ দুটো ছোট করেন। মনে তো হচ্ছে আমার ভাইকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন।
এনাজ শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
— তাই করবে ভাই। দেখেন না চোখ দুটো কি পরিমাণ বড় করছে।
আমি নিচু স্বরে এনাজকে বললাম,
— হু যতখুশি শয়তানি করেন। দিন তো আপনারই।
— রাতও আমারি।
আমি দাঁত কিড়মিড় করে বললাম,
— লুচ্চামির ওপর কি ডিগ্রি করছেন😤?
এনাজ সামনের দাঁতগুলো দেখিয়ে বললো,
— না, অনার্স কমপ্লিট করছি। আমার আরো কত রোমান্টিক অত্যাচার সহ্য করতে হবে তোমাকে। সবে তো শুরু।
আমি মৃদুভাবে আমার কপালে একটা চাপর মেরে মাথা নিচু করে রাখলাম। এনাজ মুচকি হাসছে। ভিডিওম্যান ভিডিও করে অন্যদিকে চলে গেলো।আমি তার থেকে অনেকটা দূরত্ব রেখে বসছি।এনাজ হাতের ইশারা করে তার কাছে ডাকলো। আমি মাথা নাড়িয়ে মানা করলাম। সে লো ভয়েজে বললো,
— একটা কথা শুনো।
— কোন কথা নেই। আবার লুচুমি করবেন।
— কিছু করবো না।
— আপনাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই।
— আসতে বলছি।
— আমি আসবো না।
— বলছিলাম কিছু করবো না। তোমার তো ভালো লাগলো না। ওয়েট আমিই আসছি।
উনি উঠে এসে আমার কানের কাছে মুখ আনলো। আমি কিছুটা পিছিয়ে গেলাম। তখন কেউ দেখেনি বলে রক্ষা। এখন যদি কেউ দেখে নেয় তাহলে কি ভাববে? এই ছেলের মাথায় তা নেই। হাত দিয়ে আটকে গালে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে দ্রুত পায়ে স্টেজ থেকে নেমে গেলো। আমি সবার দিকে তাকালাম। কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে কি হবে? এই বেডার তো কিছু না। আমিই লজ্জা পাবো। সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম যার যার কাজে সে ব্যস্ত। শুধু তার বন্ধুগুলো আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। তার মানে তারা দেখছে। আমি লজ্জায় দ্রুত মাথা নিচু করে ফেললাম।
#চলবে
বাকি সবাই রোমান্টিক গল্প কিভাবে লিখে ভাই🤧? আমি তো এতটুকু লিখেই লজ্জায় শেষ।