#যে_গল্পের_নাম_ছিলনা পর্ব ১৫
– Farhina Jannat
১৫.
ভয়ে চোখ বুজে ফেলেছিল সিদ্রা। চোখ খুলতেই ওই লোককে দেখে জোরে চিৎকার দিয়ে উঠল ও। লোকটাও ওর হঠাৎ চিৎকারে চমকে গিয়ে ফেলে দিল ওকে। মাটিতে পড়েই ভয়ার্ত চোখ নিয়ে পিছু হটল সিদ্রা। লোকটা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল সিদ্রা লোকটাকে, তারপর উল্টো ঘুরে দৌড় দিল বনের মধ্যে।
“আরে আরে, কি করছিস!” বলতে বলতে লোকটাও উঠে ছুটল সিদ্রার পেছন পেছন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পরপর এতগুলো ঘটনায় খালা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এবার সম্বিত ফিরে পেয়ে উনিও লোকটার পিছু নিল।
জ্বরের জন্য তো এমনিই দুর্বল হয়ে আছে শরীর, বেশি দূর যেতে পারলনা সিদ্রা। একটু পরেই লোকটা ধরে ফেলল ওকে।
“এই, কি হল তোর হঠাৎ? এমন পাগলের মত ছুটছিস কেন?” ধরেই জিজ্ঞেস করল লোকটা।
কোন কথা না বলে লোকটার হাত ছাড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগল সিদ্রা, যেন ওর ওপর কিছু একটা ভর করেছে। লোকটা ওকে ধরে জোরে একটা ঝাঁকুনি দিল।
“ওই! কি হয়েছে তোর! এমন করছিস কেন? জ্বীনে ধরেছে নাকি?” থামল সিদ্রা, একটু যেন শান্ত হল।
“জ্বীনে তো আপনাকে ধরেছে। আপনি একটা মাথা খারাপ লোক। আপনি…..আপনি একটা খুনি!”
“কি! পাগল-সাইকো তো আগে থেকেই বলছিলি, এখন আবার খুনি কোথা থেকে আসল? দুইদিনের জ্বরে কি মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে তোর?” এখনো লোকটা ওর কথায় মজা নিচ্ছিল।
“খুনি নন আপনি? আমার মতই একটা মেয়েকে খুন করে আপনি ওইখানে কবর দিয়ে রাখেননি?” আঙুল তুলে দেখাল সিদ্রা।
এতক্ষণে বুঝল লোকটা কাহিনী কি, চোঁ করে মাথায় রক্ত উঠে গেল তার। ঠাস করে একটা চড় মেরে সিদ্রাকে মাটিতে ফেলে দিল লোকটা।
“আমি খুনি? আমি?” উঠিয়ে আরেকটা চড় মারল। তারপর দুহাত দিয়ে ওকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল, “আরে খুনি তো তুই! তোর জন্য আমার ভাইটা আজ ওখানে শুয়ে আছে! শুধু তোর দুদিনের কিউরিওসিটি মেটানোর মাশুল দিচ্ছে আমার ভাই ওখানে শুয়ে, আর তুই আমাকে খুনি বলছিস, আমাকে!” ‘কিউরিওসিটি’ শব্দটা কেমন মুখ বাঁকিয়ে ব্যাঙ্গ করে উচ্চারণ করল লোকটা।
লোকটার কথায় হতভম্ব হয়ে গেল সিদ্রা, পরক্ষণেই হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রোগীর মত হা হা করে হেসে উঠল, “এতদিন ছিল, আমি খারাপ মেয়ে, ছেলেদের সাথে প্রেম করে বেড়াই, আমার হাজারটা প্রেমিক, আর এবার আমি উনার ভাইকে খুন করে ফেলেছি” হা হা হা “আরে খুন করা তো দূরের কথা, আপনার ভাইকে আমি চিনিনা, জানিনা, দেখিনি পর্যন্ত!” হাসি থামিয়ে চিৎকার করে বলল সিদ্রা।
রাগে যেন উন্মাদ হয়ে গেল লোকটা, দুহাত দিয়ে সিদ্রাকে গাছের সাথে ঠেঁসে ধরল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, চিনিসনা জানিসনা, এমনি এমনি দিনের পর দিন প্রেম করেছিস ওর সাথে!?”
ব্যাথায় কাতরে উঠল সিদ্রা।
“আমি কারো সাথে প্রেম করিনি, কতবার বলব আপনাকে?”
“আবার মিথ্যা কথা!” এই বলে লোকটা আবার মারতে যাচ্ছিল সিদ্রাকে, খালা এসে লোকটার হাত ধরে ফেলল।
লোকটা বিস্মিত হয়ে খালার দিকে তাকাল, “তুমি আমাকে বাধা দিচ্ছ কেন? তুমিও কি এই মেয়ের দলে চলে গেলা নাকি!”
সজোরে হাত আর মাথা নাড়াল খালা। ইশারায় বলল, জ্বরের মানুষ, আর মার খেলে মরে যাবে।
হুঁশ ফিরল যেন লোকটার, ছেড়ে দিল ওকে। ধপ করে পড়ে গেল সিদ্রা, আগুন চোখে তাকাল লোকটার দিকে।
“ঠিকই বলেছো খালা, কিন্তু এই মিথ্যাবাদীকে শিগগীর আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যাও। নাইলে কি করতে কি করে ফেলব আমি জানিনা!” বলল লোকটা।
খালা জোরে জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে সিদ্রাকে উঠাল। সিদ্রা কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু খালা ওর মুখ চেপে ধরে কিছু না বলতে ইশারা করল। তারপর ওকে ধরে প্রায় টেনে নিয়ে যেতে লাগল ঘরের দিকে।
ওরা চলে যেতেই লোকটা ছুটে গেল কবরটার কাছে, হাঁটু গেড়ে বসে দুহাতে মুখ ঢেকে কান্নায় ভেঙে পড়ল। কিছুক্ষণ কান্নার পর একটু শান্ত হয়ে বলতে লাগল,
“ভাইরে, তুই দেখছিস তো, আমি প্রতিশোধ নিচ্ছি। তোকে যে কষ্ট দিয়েছে, আমি কিভাবে তাকে শাস্তি দিচ্ছি। তুই শান্তি পাচ্ছিস তো ভাই! তুই কোন চিন্তা করিসনা, আমি ওই সিদ্রাতুল মুনতাহা কে এত সহজে ছাড়বোনা। ওকে আমি এভাবেই শাস্তি দিব, আজীবন শাস্তি ভোগ করবে ও আমার হাতে!” শেষের কথাগুলো যেন চিবিয়ে চিবিয়ে উচ্চারণ করল লোকটা।
“কিন্তু তুই এমন একটা মেয়ের জন্য এরকম কাজ করলি, যে এখন তোকে চিনতেই অস্বীকার করছে! একবারও আমার কথা ভাবলিনা! ভাবলিনা, তুই চলে গেলে আমার কি হবে! আমাকে একা করে দিয়ে কেন চলে গেলি!” দুচোখ বেয়ে অশ্রু নেমে এল লোকটার।
“শুধু তুই যদি আমাকে একবার বলতি, আমি তোকে বুঝিয়ে দিতাম, এসব দুইটাকার মেয়ে তোর যোগ্য না। তুই আমাকে একবার কেন বললিনা ভাই।” হাতের মুষ্টি দিয়ে মাটিতে আঘাত করছিল লোকটা, “যে ভাই তুই চাইলে তোর জন্য সারা দুনিয়া হাজির করে দিতে পারে, সেই ভাইয়ের কাছে তোর মনের কথা কেন একবার মুখ ফুটে বললিনা ভাই, কেন…….?”