সুখপাখি
১০.
আবির কাচুমাচু করছে। শিমু তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রইলো আবিরের দিকে। কড়া গলায় বললো,
— “এই কয়দিন ধরে রাতের বেলা কোথায় যান আপনি?”
আবির মুখটা হা করে একহাত দিয়ে চেপে ধরে বললো,
— “তুমি জানতে আমি যে বেরিয়ে যেতাম?”
— “ঢং রাখুন। এবার বলুন কোথায় যান?”
— “বলা যাবে না এখন। সারপ্রাইজ।”
শিমু ভ্রু কুচকে বললো,
— “কিরকম সারপ্রাইজ?”
আবির বিরক্ত হয়ে “চ” রকমের শব্দ উচ্চারণ করলো। তারপর কপাল কুচকে বললো,
— “বলে দিলে তো আর সারপ্রাইজ থাকবে না তাই না? অপেক্ষা করো খুব তাড়াতাড়ি জানতে পারবে।”
শিমু কিছু না বলেই শুয়ে পরলো। আবির বেশ বুঝতে পারছে শিমু গাল ফুলিয়ে রেখেছে। আবিরও শুয়ে পরলো। মনে মনে বললো,
— “এখন তোমার খারাপ লাগবে জানি। কিন্তু কাল যখন সারপ্রাইজ পাবে তখন দ্বিগুণ খুশি হবে।”
পরেরদিন আবির বাজার করে দিয়ে অফিসের জন্য তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। বারোটার সময় ফিরে আসে। শিমুকে নিচে ডাকলো। শিমু আসতেই চোখে হাত দিয়ে নিয়ে গেলো একটা রুমে। রুমে এনে চোখ খুলে দেয়। শিমু পুরো রুমটা দেখে অনেক অবাক হয়েছে। আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
— “এটা আগে বার ছিলো না?”
— “হ্যাঁ।”
শিমু আরো অবাক হলো। পুরো ঘরের নকশা বদলে দিয়েছে আবির। মদের যেসব সরঞ্জাম ছিলো সব ফেলে দিয়ে এটাকে নামাজের ঘর বানিয়েছে। জানালা দিয়ে হুরহুর করে বাতাস আসছে। পুরো রুম সাদা রঙের। পর্দাও সাদা রঙের। জায়নামাজ আর কোর’আন এর জন্য আলাদা তাক বানিয়েছে। বড় একটা বুকসেল্ফে সব হাদিস এবং কিছু উপন্যাসের বই। একটা পড়ার টেবিল আছে। সেখানে দুইটা চেয়ার। টেবিলের উপর একটা খাম আর একটা প্যাকেট রাখা। শিমু সেখানে গিয়ে দেখলো টেবিলের অপর পাশে শিমুর সব বই রাখা। শিমু অবাক হলো। আবিরের দিকে তাকালে আবির মুচকি হাসি দেয়। খামটা খুলে দেখলো তাকে কলেজে ভর্তি করানো হয়ে গেছে। প্যাকেট খুলে দেখলো কলেজের ড্রেস। শিমু খুশিতে খাম এবং কলেজ ড্রেস জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। দৌড়ে এসে আবিরকে জড়িয়ে ধরে। আবির মুচকি হাসে। বললো,
— “প্রতদিন রাতে চুপিচুপি এখানে আসতাম সবকিছু ঠিক করার জন্য। এবার খুশি? সত্যি বলে দিয়েছি।”
শিমু আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আবিরকে। এতোটা খুশি লাগছে আজ বলে বোঝানো যাবে না।
পরেরদিন থেকেই শিমু কলেজে যাওয়া শুরু করে দেয়। পড়ালেখা করে মনোযোগ দিয়ে।
—————————————-
কয়েকদিন ধরে আবিরের শরীরটা খারাপ করছে। চোখ, মুখ কেমন যেনো শুকিয়ে গেছে। আজ আবির অফিসে যায়নি। বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। শিমুও তাই কলেজে যায়নি। শিমুর খুব চিন্তা হচ্ছে হঠাৎ কি হলো যার কারণে এতো শরীর খারাপ তার। শিমু আনমনে রান্না করছিলো তখনই আবিরের ডাক শুনা যায়। শিমু বলে ডাক দেয়। শিমু আতকে উঠে। এভাবে ডাকছে যেনো কোনো বিপদ হয়েছে। চুলা বন্ধ করে দৌড়ে রুমে যায়। দেখলো আবিরের পুরো শরীর কাপছে। দুইহাতে মাথা চেপে ধরেছে। অবস্থা বেগতিক। শিমু দৌড়ে এসে খাটের উপর বসলেই আবির বললো,
— “শিমু আমার পুরো শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে। আমার মাথায় ভিষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি পারছি না শিমু। আমার শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে।”
শিমু কেঁদে দেয়। আবিরের মাথাটা টেনে এনে বুকের সাথে চেপে ধরে। দিশেহারা হয়ে গেছে শিমু। কি করবে বুঝতেই পারছে না। বুকের সাথে মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরে সূরা ফাতেহা পড়তে শুরু করে। অনেকক্ষণ পড়ার পর আবিরের মোবাইল থেকে আবিরের বন্ধু আরফানকে কল দেয়। আবির হাত পা ছেড়ে দিয়েছে। শিমু ভয় পেয়ে যায়। আরফান এবং শাকিল আসে। দারোয়ান চাচাও দৌড়ে আসে। শিমু বোরকা পরে নেয়। তারা আবিরকে ধরে গাড়িতে বসায় শিমু আবিরের মাথার পাশে বসে মাথাটা কোলে নিয়ে বসে। কিছুই বুঝতে পারছে না শিমু। কান্না করেই যাচ্ছে নিরবে। আরফান বললো,
— “হঠাৎ কি হলো ভাবি?”
— “কয়েকদিন ধরেই শরীর খারাপ যাচ্ছিলো। আজ খুব বেশি অসুস্থ হওয়ায় অফিসে যায়নি। একটু আগে আমাকে ডেকে বললো উনার পুরো শরীর নাকি অবশ হয়ে যাচ্ছে। তারপরই এই অবস্থা।”
হাসপাতালে পৌছে গেলে ডাক্তার আবিরকে দেখে ইমারজেন্সীতে ভর্তি করে। শিমুর চাচি, দাদি চলে আসেন তাথইকে নিয়ে। শিমু কান্না করেই চলেছে। সৈয়দা খাতুন শিমুকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। রাবেয়া তাথইকে নিয়ে শিমুর পাশে বসে আছে। শিমু কেঁদে কেঁদে বললো,
— “দাদি উনার কেনো এই অবস্থা হয়ে গেলো? এতোদিন তো ভালোই সুস্থ একজন মানুষ ছিলো। হঠাৎ আজ এমন কেনো হলো? দাদি উনার কিছু হলে আমি কিভাবে থাকবো?”
শিমু কান্নায় ভেঙে পরে। এরই মধ্যে আফরাও আসে। শিমুর দাদি সরে গেলে আফরা শিমুর পাশে বসে। আফরার কাধে মাথা রেখে কেঁদেই যাচ্ছে। আফরা বললো,
— “শিমু এভাবে ভেঙে পরো না। ধৈর্য্য ধরো। আল্লাহকে ডাকো। বিপদ তিনি দিয়েছেন তিনিই সমাধান করে দিবেন। ভরসা করো আল্লাহর উপর।”
শিমু কান্নার বেগ কমিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বললো,
— “যেই ড্রাগ নিতো সেটা অনেক পাওয়ারফুল ছিলো। এতোদিন না নেয়ায় সাইড ইফেক্ট পরেছে। ঠিক সময়ে হাসপাতালে না আনলে উনি হয়তো সারাজীবন এর জন্য প্যারালাইজড বা কোমায় চলে যেতো।”
শিমুর বুকটা ধক করে উঠে। সারা শরীর কেপে উঠে। ভয়ে আফরার হাত শক্ত করে ধরে। আফরা ওকে শান্তনা দেয়। শাকিল এসে বললো,
— “ওরে আমি অনেক বলেছি মাহিনের সাথে এতো বেশি না মিশতে কিন্তু কথা শুনেনি। ওর দেয়া ড্রাগের জন্য আজ এ অবস্থা।”
রাবেয়া লুকিয়ে চোখ মুছেন। তিনি ভাবতেই পারছেন না কিসের পাপের ফল স্বরুপ তিনি মাহিনকে পেলেন। দুপুরে আফরা জোর করে শিমুকে খাইয়ে দিয়ে বাসায় যায়। রাবেয়া শিমুকে জড়িয়ে ধরে রাখেন। সৈয়দা খাতুন তাথইকে খাইয়ে দেয়। বিকেলে ডাক্তার এসে বললো,
— “পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। আপনি দেখে আসতে পারেন।”
শিমুর যেনো জানে পানি এলো। ধীর পায়ে উঠে আবিরের কেবিনের দিকে গেলো। আবির চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। শিমু আবিরের পায়ের কাছে বসে। আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে শিমুর চোখের পানি অঝোরে পরতে থাকে।
পায়ে গরম কিছুর স্পর্শ পেয়ে আবির চোখ খুলে তাকায়। আবিরের হাতে ক্যানেলা ফিট করা। ইশারায় শিমুকে কাছে ডাকে। শিমু পাশে বসতেই আবির বললো,
— “এই বউ আমি মরিনি। ভাবলাম মরে গেছি।”
আবির হাসছে। শিমুর রাগ উঠে গেলো। আবিরের বুকে কিল ঘুসি দিচ্ছে আর কান্না করছে। আবির বললো,
— “বউ আমি ব্যাথা পাচ্ছি। সুস্থ হলে বেশি করে মেরো। এমনিতেও সকালে আরবি পড়তে বসলে কি কম মারো?”
শিমু থেমে যায়। আবিরের বুকে মাথা রেখে বললো,
— “আপনি অনেক পচা। অনেক অনেক অনেক বেশি। এমন কেন আপনি? আপনি জানেন না, আপনার কিছু হলে আমি কিভাবে থাকবো? আপনার কিছু হলে মাহিন ভাইয়া আমাকে আরেকজনের কাছে নিয়ে যাবে টাকার জন্য। আপনি কেনো এসব ভাবেন না? আমার জন্য চিন্তা হয়না আপনার? আপনার একটুও মায়া নেই আমার জন্য। ভালোবাসাও নেই।”
আবির একহাতে শিমুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
— “তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না আমি। আমার সুখপাখি কান্না থামাও।”
শিমু কান্না থামিয়ে সোজা হয়ে বসে। বললো,
— “এখন কেমন লাগছে আপনার? জানেন তখন ডাক্তার কি বলেছে? বলেছে আপনাকে সঠিক সময়ে না আনলে সারাজীবনের জন্য প্যারালাইজড না হয় কোমায় চলে যেতেন।”
শিমু আবার কেঁদে দেয়। আবির শান্ত চাহনি নিয়ে শিমুর আদুরে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। শিমুর নাকটা লাল হয়ে গেছে। নাকের ডগার তিলটা আরো বেশি ফুটে উঠেছে। আবির মৃদু হেসে বললো,
— “কপালে একটু ভালোবাসা দিবে আমায়?”
শিমু কান্না থামিয়ে ভেজা নয়নে আবিরের দিকে তাকায়। আবিরের এখনো শীতল চাহনি। আবারো বললো,
— “প্লিজ।”
শিমু এগিয়ে গিয়ে আবিরের কপালে ভালোবাসার পরশ দিলো। আবির চোখ বন্ধ করে রাখে। খুব ভালো লাগছে তার। শিমুকে বললো,
— “তখনের মতো বুকে মাথা রাখো প্লিজ।”
শিমু তাই করলো। এভাবে অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেলো। আবিরের খুব ভালো লাগছে। কেনো যেনো মনে প্রশান্তি। নিজের মন বলছে, যাক এতোদিনে কাউকে পেলি যে তোকে হারানোর ভয়ে কাঁদে। আবির কথাটা ভেবেই মুচকি হাসলো। শিমুর চুলে চুমু দেয়।
—————————————-
আবির এখন পুরোপুরি সুস্থ। ডাক্তার বারবার বলেছে কোনো ভাবেই যেনো ড্রাগ এবং ড্রিংকস এর আশেপাশে না যায়। আবিরকে বাসায় আনা হলো। দাদি এবং তাথই এখানেই রয়ে গেলো। রাবেয়া বাসায় গেলেন। কারণ ওই বাড়িটা খালি রাখা ঠিক হবে না। মাহিন আবার কি কান্ড রটায় সেই ভয়ে চলে গেলেন। তাথই আবিরের হাতের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। এক পা আবিরের পেটের উপর। দুজনে কথার ঝুলি খুলে বসেছে। বকবক করেই যাচ্ছে। শিমু আবিরের জন্য খাবার নিয়ে এলো। এসে ওদের দুজনকে এভাবে দেখে হেসে দিলো। হাসির আওয়াজে দুজনে মাথা তুলে তাকিয়ে মুখ ভেঙিয়ে আবার নিজেদের মতো গল্প শুরু করে। শিমু মনে মনে বললো,
— “বাপরে আজ আমি পাত্তা পেলাম না। হুহ।”
আবিরের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
— “উঠুন। নাস্তা এনেছি খেয়ে নিন।”
— “তুমি খাইয়ে দাও।”
— “নিজের খাবার নিজে খান।”
তাথই বসে বললো,
— “শিমুপু আমাকে আর আবিরকে খাইয়ে দাও না।”
তাথই এর এমন আদুরে আবদারে শিমু না করলো না। তাথই সূতির লাল ফ্রক পরেছে। পিঠ পর্যন্ত নেমে আসা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে আছে। শিমু পাশে বসতেই আবিরও উঠে বসে। তাথইর কপালের চুল সরিয়ে দিয়ে কপালে চুমু দেয়। আবির বসলে তাথই আবিরের কোলে বসে। শিমু প্রথমে তাথই এর মুখে খাবার দেয় তারপর আবিরকে। দুইজনকে খাইয়ে দিচ্ছে। আবির তাথই এর চুল গুলো ঝুটি করে দেয়। নিজের বাচ্চাকে যেভাবে আদর করে আবির তাথইকে ঠিক সেভাবেই আদর করছে। যদিও তাথই শালিকা হবে আবিরের। কিন্তু আবির সে নজরে দেখে না। একটা বাবার মতোই স্নেহ করে। দুজনকে খায়ানো শেষ হলে আবিরকে ওষুধ খাইয়ে দেয়। দুজনে আবার আগের মতো শুয়ে শুয়ে গল্প জুড়ে দেয়। তাথই নিজের মনগড়া হাজার গল্প আবিরকে শুনাচ্ছে। আর আবির হাসছে। দেখে মনে হচ্ছে বাবা, মেয়ে। সৈয়দা খাতুন ওদের দেখে হাসলো। তাথই কখনো বাবার আদর পায়নি। আর মাহিন কখনো ওকে কাছে টেনে নেয় না। তাথই মাহিনের কাছে আসলেই বকা দিবে আর নাহয় থাপ্পড় দিয়ে দূরে সরিয়ে দিবে। আবির ওকে এভাবে স্নেহ করায় এতো শত গল্প জুড়ে দিয়েছে তার সাথে।
এভাবে কয়েকদিন কেটে গেলো। তাথই এবং দাদি চলে যায়। আবির আবার নিজের কর্মজীবন শুরু করে। শিমু তার পড়ালেখা শুরু করে। শিমু কমার্সের ছাত্রী। কোনোকিছু না বুঝলে আবির ওকে বুঝিয়ে দেয়। বাসায় ওয়াই ফাই লাগিয়েছে আবির। কারণ আবির যখন বাসায় থাকবে না শিমু যদি কোনো পড়া না বুঝে তাহলে যেনো ইন্টারনেটে সার্চ করে পড়া বুঝে নেয়। আবির রাতে শিমুকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবে তার আগের জীবনের কথা। কেমন রগচটা মানুষ ছিলো সে। আর এখন একদম সাধারণ একটা জীবনে সে ফিরে এসেছে। শিমু বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। শিমুর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো। মেয়েটার চেহারার দিকে তাকালে বাচ্চা বাচ্চা লাগে। শিমুর কপালে চুমু দিয়ে মনে মনে বললো,
— “সত্যিই স্বামী স্ত্রী দুজনে একে অপরের পরিপূরক। তোমাকে না পেলে বুঝতাম না। আমার পিচ্চি বউ।”
—————————————
কয়েকদিন ধরেই আবির খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবে। সেদিন সন্ধ্যায় ফিরে আবির নামাজের ঘরে এসে একটা হাদিসের বই পড়লো। এরপর থেকে খুব বেশি গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকে। একটা ডিসিশান নিচ্ছে আবির। আজ ডিসিশান নেয়া শেষ। সে মনে মনে খুব খুশি। হাদিসের বইয়ে পড়েছে, “মেয়ের ফ্যামিলি যদি বিয়েতে রাজি না হয় তাহলে সে বিয়ে বাতিল করেছে রাসূল (সাঃ)।”
শিমুর বিয়েতে তার পরিবার রাজি ছিলো না। স্বয়ং শিমুও রাজি ছিলো না। তাই আবির খুব গভীর ভাবে চিন্তা করলো কিভাবে কি করা যায়। এছাড়াও অপর এক হাদিসে পড়েছে, “চুপি চুপি যদি কেউ বিবাহ করে তাহলে তা বিবাহ বলে গণ্য হবে না। তা হবে জেনা (পরকিয়া)। কারণ বিবাহ গোপণে করার কাজ নয় কিন্তু জেনা গোপনে করার কাজ। তাই বিবাহের সময় সবাইকে জানিয়ে বিবাহ করতে বলেছে। –(ওমর ফারুক রাঃ)”
আবির ডিশিশান নিলো সে আবার শিমুকে বিয়ে করবে। এবার সে সবাইকে জানিয়ে বিয়ে করবে। আবির শিমুর বাসায় গেলো। চাচি এবং দাদি দুজনকেই জিজ্ঞেস করলেন,
— “শিমুর সাথে যখন আমার বিয়ে হয় আপনারা কি রাজি ছিলেন?”
সৈয়দা ইতস্তত করে বললেন,
— “আসলে…।”
— “দাদি আপনি ইতস্তত করবেন না প্লিজ। সত্তিটাই বলুন।”
— “না বাবা আমরা কেউ রাজি ছিলাম না।”
— “ইসলামের দৃষ্টিভঙি অনুসারে আমাদের বিয়ে বাতিল হয়েছে। দাদি আমি শিমুকে আবার বিয়ে করতে চাই। আপনারা এবার রাজি?”
সৈয়দা খাতুন এবং রাবেয়া হেসে বললেন,
— “হ্যাঁ আমরা রাজি।”
— “আজই আপনারা আমার বাসায় যাবেন। যেহেতু আমরা এখন পাত্র পাত্রী তাই একই ঘরে একা থাকা ঠিক হবে না।”
আবির সব বুঝিয়ে বেরিয়ে এলো। একটু পর আবিরের ড্রাইভার ওদের আবিরের বাড়িতে নিয়ে যাবে। আবির একটা ক্যাবে করে আফরানের অফিসে গেলো। শাকিলও সেখানেই কাজ করে। তাদের দুইজনকে বলতেই তারাও খুশি হলো। আবির অফিসে এলো। অফিসের সব কলিগদের দাওয়াত দেয়া হলো। আবির বাসায় এলো। দাদিকে বললো শিমুর সাথে কথা বলবে। দাদি একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলেন। আবির বললো,
— “শিমু এর আগে আমাদের যেভাবে বিয়ে হয়েছে সেটা তো ইসলামের নিয়ম অনুসারে বাতিল হলো। আমি তোমাকে আবার বিয়ে করতে চাই। তুমি রাজি আছো?”
— “না।”
আবির হতাশ হলো। সাথে অবাকও হলো। শিমু আর তাকে চায়না। আবিরের ঘাম ছুটে গেলো। এদিকে শিমু মুখ টিপে হাসছে। আবিরের দিকে এক নজর তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে দিলো। আবির হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো শিমুর দিকে। আবির আবার বললো,
— “তুমি রাজি?”
— “হ্যাঁ।”
আমার ঘাম ছুটিয়ে তিনি হাসছেন। বিয়ে হোক তারপর মজা দেখাবো। আবির চলে গেলো। বিয়ের জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছু আবির, বাড়ির দারোয়ান এবং গাড়ির ড্রাইভার তিনজনে মিলে পালন করলো। তারা যেনো মন ছোটো না করে তাই বাজার সদাই তাদের নিয়ে করলো।
শিমুর চাচি, দাদি, আফরা আর অফিসের কয়েকজন মেয়ে মিলে হলুদ লাগালো শিমুকে। এরপর বউ সাজিয়ে নিচে নেয়া হলো। একদিনেই সব আয়োজন করা হয়েছে। আবির সোনালি রঙের পাঞ্জাবি পরেছে। শিমু লাল রঙের হালকা ডিজাইনের কাতান শাড়ি। শিমুকে নিয়ে নামার সময় শিমু একটা মেয়ের থেকে শুনলো,
— “আবির স্যারকে কত পটাতে চেয়েছি তিনি পটলোই না। পটা তো দূরে থাক কোনোদিন ভালো করে তাকায়ও নি। আর আজ বিয়ে করছে। মেয়েটা সত্যিই লাকি।”
আরেকজন বললো,
— “হ্যাঁ। উনিতো অফিসে কোনো মেয়ের দিকে তাকাতো না। কিন্তু রগচটা ছিলেন অনেক।”
শিমু মুচকি হাসলো। তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো। আবির তাথইকে কোলে নিয়ে খেতে বসেছে। নিজেও খাচ্ছে তাথইকেও খাইয়ে দিচ্ছে। সবাই চলে গেলো। শিমুর দাদি, চাচি তারা রইলেন। তাথই আবিরের কোলে ঘুমিয়ে গেলে তাকে রাবেয়ার কাছে রেখে রুমে গেলো। আবির রুমে ঢুকলেই শিমু সালাম দেয়। আবিরও সালাম দেয়। আবির এগিয়ে গিয়ে শিমুর ঘোমটা তুলে। মায়াবী লাগছে খুব। হাত বাড়িয়ে কপালে হাত রাখতে গেলে শিমু দুকদম পিছয়ে যায়। আবির হো হো করে হেসে দেয়। বললো,
— “ভয় পাওয়ার দরকার নেই। আমি আর সেই অমানুষ নেই।”
শিমুকে কাছে টেনে কপালে হাত রেখে দোয়া পড়লো। দুজনে নামাজ পড়ে নেয়। সবশেষে দুজন বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। শিমু আমতা-আমতা করে বললো,
— “আজও কি প্রপ্রথম ররাতের মমতো..।”
শিমুকে টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়। আবির বললো,
— “চলো শুয়ে পরি। ঘুম আসছে।”
দুজনে শুয়ে পরে। মাথার কাছের জানালা খোলা রেখেছে। পুরো চাঁদের আলো এসে পরছে দুজনের উপরে। হালকা বাতাসে শিমুর চুল উড়ছে। আবির শিমুর চুল কানে গুজে দিয়ে বললো,
— “শিমু আমি হয়তো সবসময় তোমাকে নিয়ে চাঁদ দেখা, আকাশ দেখা, লং ড্রাইবে নিয়ে যাওয়া, অনেক অনেক শপিং করে দেয়া এসব আবদার পূরণ করে দিতে পারবো না। সবসময় ভালোবাসি ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তুলতে পারবো না। তবে প্রতিদিন রাতে তোমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমাবো। তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবো। অসুস্থ হলে সেবা করবো। মন খারাপ হলে হয়তো হাসাতে পারবো না। তবে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরবো। তুমি কি তাতে খুশি হবে শিমু? নাকি আমাকে ছবির নায়কের মতো রোমান্টিক হতে হবে?”
শিমু আবিরের বুকে দুইহাত ভাজ করে রেখে হাতের উপর থুতনি রেখে বললো,
— “পরিবর্তন হওয়ার দরকার নেই যেমন আছেন আমি তেমনই চাই আপনাকে। শুধু সুন্নাহ মেনে চললেই হবে।”
শিমুর গালে এক হাত রেখে মায়াবী মুখটার দিকে তাকালো। চাঁদের আলো পরায় আরো স্নিগ্ধ লাগছে শিমুকে। মুখটা টেনে ধরে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো। তাদের জীবনের নতুন পথ চলা শুরু হলো।
চলবে,,,
® নাহার।