#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [১২ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
সূর্য ঠিক মাথার মাঝখানে ঝকঝকে তকতকে পরিষ্কার নীল আকাশে রোদের তীব্র ঝাঁজ গরমে অতিষ্ট মানুষ জন। বাসায় কেউ নেই বললেই চলে শান্তি সাওয়ার নিচ্ছে। সীমা কাজ করছে কিচেনে। আসলাম সাহেব বাসায় নাই অফিসে জরুরি মিটিংয়ে ইশার কলেজের এক্সাম চলছে এখনো সে বাসায় আসে নি। জারা ড্রাইংরুমে বসে টিভিতে কার্টুন ছেড়ে ফোনে ইনপটেন ডকুমেন্টস চেক করছে কালকেই কোটের রায় দিবে মেয়েটার মৃ/ত্যুর সঠিক বিচার নিতে হবে। অ’প/রা’ধীদের শা’স্তি দিতে হবে না হলে তারা বার বার অন্যায় করে সমাজে বুক উঁচু করে চলবে আর সমাজে দেশে অন্যায় বাড়তে থাকবে তখন অন্যায় করতে দ্বিধা বোধ করবে না কেউ।
জারা পুরো মনোযোগ ফোনে ছিল চারিপাশে কি হচ্ছে সে দিকে ওর খেয়াল ছিল না। হঠাৎ হেঁচকা টানে স্তম্ভিত ফিরে পেলো। চমকে দাড়িয়ে পরলো সামনে তাকিয়ে শানকে শক্ত চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে শান বলল
-‘ কাল সারারাত কোথায় ছিলি? কোন ছেলের সাথে ছিলি? খুব সাহস বেড়েছে না তোর? ‘
-‘ মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি? মুখ সামলে কথা বলবেন! ‘
-‘ মুখ সামলে রাখার মতো কোন কাজটা করিস তুই? রাত-বিরাতে ছেলেদের সাথে বাইরে রাত কাটাস ‘
জারা রেগে হাত ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে বলল
-‘ জাস্ট সাটআপ ওকে। একদম উল্টো পাল্টা কথা বলবেন না। আপনার এসব কথা বলতে বাঁধছে না একটু ও? ওফ্ফ সরি আমি তো ভুলেই গেছিলাম আপনার মিনিমাম কমনসেন্সে নাই কিছু নাই। আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি আপনি আপনার মতো থাকুন আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। কেনো বার বার এমন করছেন? ‘
-‘ তোর সাথে এবাড়ির সম্মান জড়িয়ে আছে। আর তুই রাতে বাইরে থেকে এখন বড়বড় কথা বলছিস? ‘
-‘ সম্মান সম্মান আর সম্মান আপনার সম্মান বোধ আছে? আপনি সম্মান দিতে জানেন? আপনাকে কি বলছি আমার সাথেই সবসময় এমন করেন আপনি আমাকে মানুষ বলে মনে হয় না আপনার ‘
-‘ গলা নিচে নামিয়ে কথা বল। ন্যায় করে আবার গলা বাজি করছিস লজ্জা লাগে না তোর? ‘
-‘ আমার কেনো লজ্জা লাগবে? যেখানে আমার কোনো দোষ-ই নেই! আর গলা নিচে নামিয়ে কেনো কথা বলবো? জানেন আমার এখন আফসোস হয় খুব আফসোস যে সেই দিন কেনো আমার এই সাহস টা হলো না কেনো সেদিন গলা জোর দিয়ে বলতে পারলাম না যে আমি আপনাকে বিয়ে করবো না এই আফসোসটা হয়ত আমার সারাটা জীবন থেকে যাবে। চিন্তা করবেন না আমি আপনাকে এই বাঁধন থেকে মুক্ত করে দিবো কোনো বাঁধা থাকবে না আর ‘
শান চমকালো জারার দুই বাহু ধরতেই জারা ব্যথাতুর শব্দ তুলে ছলছল চোখে তাকালো শানের দিকে। শান বুঝতে না পেরে আরো জোরে বাহু খামছে ধরে বলল
-‘ কি বললি তুই? ‘
-‘ যেটা শুনছেন সেটাই ‘
আরো জোরে চেপে ধরতেই জারা আর সহ্য করতে না পেরে কেঁদে উঠে বলল
-‘ ছাড়ুন আমার লাগছে ‘
শান হাতে তরল পদার্থ অনুভব করলো সাথে সাথে বিষময় নিয়ে হাতে দিকে তাকালো জারা নিজের বা হাত দিয়ে ডান হাত চেপে ধরে নিজের রুমের দিকে দৌড় দিলো। শান তখন স্তব্ধা মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। স্তম্ভিত ফিরতেই সেও জারা পিছনে গেলো।
জারা রুমে গিয়ে ডান হাতের থাকা ব্যান্ডেজ খুলে ফেললো। খতটা গভীর ধারালো ছু/রি লাগছে কাল যখন লোকটাকে সাইম মারছিল তখনি লোকটা সুযোগ বুঝে জারাকে আ’ঘা’ত করছিল। কাল রাতে শায়রী ব্যান্ডেজ করে দিয়েছিল আর খুলেলি অলসেমী করে কিন্তু এখন কিছুই করার নাই খুলতেই হবে কা*টা জায়গায় চাপ লেগে রক্ত বের হচ্ছে আবারও শুভ্র রংয়ের ব্যান্ডেজটা লাল রংয়ের হয়ে ভিজে চপচপ করছে। জারা হাতের ব্যথায় চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
জারা হাত নিয়ে এতোই ব্যস্ত ছিল যে দরজা আটকাতে ভুলে গেলো। শান রুমে ঢুকে এসে ফাস্ট এডেট বক্স নিয়ে জারার পাশে বসে জারার হাত টেনে নিজের কাছে আনলো জারা নিজের জেদ বজায় রেখে হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু পারলো না শান লাল চোখে তাকিয়ে রইলো যেনো এখনি ঔ চোখ দিয়ে সব ভর্স করে দিবে জারা ভশ পেলেও বলল
-‘ ছাড়ুন কি করছেন? আমি ব্যান্ডেজ করতে পারবো ছাড়ুন ‘
-‘ আর একবারও হাত সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা কর তোর হাত কেটে রেখে দিবো ‘
জারা কিছু বলল না। শুধু চুপচাপ ব্যথা সহ্য করতে লাগলো দাঁতে দাঁত চেপে। চোখ দিয়ে অনলগল অঝর ধারায় পানির পরছে আর ফুপাচ্ছে। ব্যান্ডেজ শেষ শান বলল
-‘ এমনটা কিভাবে হলো? কে করেছে এমনটা? ‘
জারা কান্নারত অবস্থায় বলল
-‘ যে-ই করুক আপনি তো খুব খুশি হয়েছেন না। আমার কষ্টে তো আপনার খুশি হবারই তো কথা এই খুশিতে পার্টি দেন একটা ‘
শানের ইচ্ছে করছে জারাকে গাল ফাটিয়ে চ-ড় মারতে কিন্তু শান সেটা করলো না নিজেকে সংযত করে জারাকে ধমক দিয়ে বলল
-‘ আমি যেটা বলছি সেটার উত্তর দে না হলে খুব খারাপ হবে ‘
জারা কিছুটা দমে গেলো ভয় পেলো। মিনমিন করে কালকের ঘটনা সর্টকাটে শানকে বলল। সব শুনে শান বলল
-‘ গুড ‘
বলে উঠে চলে যাচ্ছিল গুড বলায় জারার মনোক্ষুন্ন হলো তবুও জারা নিজেকে সামলিয়ে তখন জারা বলল
-‘ এসব কথা মনিকে বলবেন না প্লিজ মনি টেনশন করবে আর আমি সেটা চাইছি না আশা করি আমার কথাটা রাখবেন ‘
শান শুনলো কি-না কে জানে গটগট করে চলে গেলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ