#একমুঠো_রোদ_আর_প্রজাপতি_বিস্কুটপর্ব_৪
#মৌমি_দত্ত
দর্শকের মাঝে প্রথম দিকের রোতে ছিলো আবির। আবিরের মুখে বাঁকা হাসি। এক এক করে সবাই লাইন ধরে কংগ্রাচুলেট করছে আয়াশ ও অনিন্দিতাকে। এবার পালা এলো আবিরের। আবিরও হাসিমুখে এগিয়ে এলো দেখে চমকালো আয়াশ আর অনিন্দিতা। আবির হাত বাড়িয়ে আয়াশের দিকে দিলো হ্যান্ডশেক করতে। এরপর বললো,
– কংগ্রাচুলেশনস স্যার। তবে আশা করবো আপনি ভালো থাকবেন। কেননা যে মেয়ে মূহুর্তের মাঝে আমাকে ছেড়ে আপনার হয়। সে আপনাকে ছেড়ে অন্য কারো হবে না?
আয়াশের মুখে সন্দেহের রেখা দেখা দিলো। অবিশ্বাসের চোখে তাকালো অনিন্দিতার দিকে। যে খানিকটা দূরে সবাইকে দেখিয়ে বেড়াচ্ছে হাতের আঙ্গুলে থাকা বড় হীরের আংটিটা। তা দেখে মৃদু হাসলো আবির। নিজের গলার থেকে আইডি কার্ড খুলে আয়াশের হাতে দিয়ে বললো,
– হ্যাভ এ হ্যাপি লাইফ স্যার। রিজেগ্নেশন লেটার পাঠিয়ে দেবো ইমেইলে। সাইন করে রাখবেন৷ কারণ আমি কোনো ভাবেই ব্যাক করছিনা। নিজের কোম্পানী খুলবো।
আয়াশের কাছ থেকে হাসি মুখে সড়ে এসে দাঁড়ালো আবির অনিন্দিতার কাছে। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো সিনক্রিয়েটের ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো অনিন্দিতা। আবির তা দেখে হেসে সবার সামনেই জড়িয়ে ধরলো অনিন্দিতাকে। আর তা দেখে সবাই কানাকানি করতে লাগলো। কিন্তু তারা তো আর আবিরের কথা শুনতে পায়নি। আবির অনিন্দিতাকে জড়িয়ে ধরেই হাসিমুখে কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
– অনি! তোমার রিলেশন নিয়ে আমি ৩ সপ্তাহ ধরে জানি। তোমার বাবা মা আজকে তোমার অফিসের এসব কান্ড লাইভ দেখছিলো তোমার ছোট ভাইয়ের মোবাইলে, তোমার পোশাক, তোমার রঙচঙ মাখা রূপ সব দেখেছে গ্রামের বাড়িতে বসেই। তুমি যে আমাকে বলোনি, তুমি ডিভোর্সী। তা খুব স্বত্তর হয়তো আয়াশ জেনেই যাবে তোমার মা বাবার থেকে। বা তোমার পাস্ট হাজবেন্ড থেকে। বা’বাই।
আবির বের হয়ে চলে এলো নিজের ব্যাগ পত্তর নিয়ে। আজ সে অনেকদিন পর নিজের মনের কথা শুনছে। মনের কথা মেনে কাজ করতে যাচ্ছে। আজকে সে আগে বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাবে। নিজের কোম্পানী বানাবে এটা পরের স্বপ্ন। আগে এই চাকরির জন্য হারানো বন্ধুদের সাথে বসবে। আর রাতে তো সারপ্রাইজ থাকবেই সবার জন্য।
.
.
অনেকটা তাড়াতাড়িই চলে এসছে মিশু আজকে। আফিনার অবশ্য হ্যাল্পই হলো। মিশুর সাথে আড্ডা দিতে দিতে সময় কেটে যাচ্ছে তার। আড্ডার এক কথায় আফিনা বলেই ফেললো,
– জানিস, অনি নাকি আবিরের মতোই ঝাল কম খায়।আমার কি যে হবে এই দুইটারে নিয়ে।
অবাক হলো নতুন নাম শুনে। কৌতুহল দমাতে জিজ্ঞেস করে ফেললো সবজি কাটতে কাটতে মিশু।
– এই অনিটা কে গো আন্টি?
আফিনা অবাক হলো। আবিরের ভক্ত হিসেবে তো মিশুর কাছ থেকেই জানলো সে অনির কথা।
– মানে? তুইই তো আমাকে জানিয়েছিলি আবিরের রিলেশন নিয়ে।
অবাক হয়ে হাত কেটে ফেললো মিশু আচমকা। তবুও সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললো,
– মানে? আমি তো আন্দাজেই বলেছিলাম। আমাকে খুলে বলো প্লিজ।
আফিনা হো হো করে হেসে ফেললো,
– হ্যাঁ রে। আবির মনে হয় তোকে চমকে দিতে চেয়েছে অনিকে সামনে এনে। অনিন্দিতা শেখ নামে ও একটা মেয়েকে ভালোবাসে। আজকে তাকেই তো নিয়ে আসছে ডিনারে। ৪ বছরের সম্পর্ক বললো।
কাটা জায়গায় ছুড়ি ডেবে ধরলো নিজের অজান্তেই মিশু। আফিনা তা দেখে চমকে চিৎকার করে উঠলো,
– মিশু! কি করছিস?
মিশুর হুশ ফিরলো আফিনার চিৎকারে। জল ছলছল চোখে একবার আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললো সে। এরপর বললো,
– আন্টি আমি আসছি।
এই বলেই ছুটে পালালো সে। অবাক হলো আফিনা। একবার ভাবলো সেও যাবে পিছু পিছু। আবার দেখলো তরকারি প্রায় হয়ে এসছে। তাই যেতে পারলো না।
.
.
বন্ধুদের সাথে দেখা করে খুব খুশী মনে আবির বাসায় এলো। বাইক পার্ক করে কলিংবেল বাজালো বাসার। আফিনা হাসিমুখে দরজা খুলে দেখলো আবির একা।
– কিরে তুই একা কেন? অনিন্দিতা কোথায়?
আবির মায়ের হাত ধরে হাসিমুখে ভেতরে গেলো। এরপর ড্রয়িং রুমের সোফায় মাকে বসিয়ে নিজে মাটিতে বসে মায়ের কোলে মাথা রেখে বলতে শুরু করলো,
– মা আমি অনিন্দিতাকে ভালোবাসতাম। এটা আমার ভুল ধারণা ছিলো। গত ৩ সপ্তাহ আগে আমি জানতে পারি যে ও আমাদের বসের সাথে রিলেশনে আছে আমার পাশাপাশি। ওর সম্পর্কে তোমাকে গতদিন বলতাম না আমি। বলতাম আমার প্রকৃত ভালোবাসা মিশুকে নিয়ে। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখতে ও আমার সাথে কলে ছিলো মোবাইলে। ওকে ঘাবড়ে দিতেই আমি ওকে শুনিয়ে শুনিয়ে তোমাকে রাজি করিয়েছিলাম। তাতে কাজও হয়েছে। ও আর আমার বস আজকে নিজেদের বিয়ের কথা অফিসে এনাউন্স করেছে। আমিও জবটা ছেড়েই দিয়েছি। নিজের কোম্পানী খুলবো আমি। আর আমার পাশে তোমার ছেলে বউ হয়ে থাকবে মিশু আখন্দ।
আফিনা যেন আকাশ থেকে পড়লেন। ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন,
– তুই ঠাট্টা করছিস না তো? মিশুই তোর ভালোবাসা? কিন্তু বাবা ও অনেক ছোট। ওকি তোকে ভালোবাসে? বা ভবিষ্যতে বাসতে পারবে?
আবির মাথা উঁচু করে কিউট স্মাইল দিয়ে বললো,
– আমার মিশুর উপর আমার ভরসা আছে। আমাকে ও ভালোবাসে আমি জানি।
মাথা নিচু করতে গিয়েই ডাইনিং টেবিলের গ্লাসে রক্তের ফোঁটা দেখে আতকে উঠলো আবির। দ্রুত আফিনার হাত চেক করতে লাগলো।
– দেখি দেখি! কোন হাত কেটেছে? ইশশ! কতো কেয়ারলেস তুমি!
আফিনা ততোক্ষনে অপরাধীর মতো পাংশুটে মুখ করে হাত সড়িয়ে নিলো। এরপর খুলে বললো একটু আগের ঘটনা। মায়ের অপরাধী মুখ দেখে কষ্ট হলো আবিরের।
– বেশ করেছো পিচ্চিটাকে এসব বলেছো। তোমার ছেলে সব ঠিক করে নেবে। এবার তুমি বসো, আমি একটু সোহাগ করে আসি তোমার বউমাকে।
আফিনা মৃদু হেসে ছেলের বাহুতে চাপড় মেরে বললেন,
– ভাগ এখান থেকে শয়তান ছেলে।
.
.
আবির দ্রুত দৌড়ে মিশুদের বাসায় গেলো। মিশুদের কলিংবেল বাজাতে খানিক বাদে শুকনো মুখে দরজা খুলে দিলো ইব্রাহিম সাহেব। আবিরকে দেখে খানিকটা অসহায় ভাব দেখা গেলো তার মাঝে। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসেছিলো মর্জিনা। আবির ইশারায় ইব্রাহিম আর মর্জিনাকে চুপ থাকতে বলে শান্ত ভাবে দরজা বন্ধ করলো। এরপর মর্জিনা আর ইব্রাহিমের হাত ধরে তাদের সামনে মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসেই সবটা খুলে বললো অনিন্দিতার ব্যাপার, মিশুকে ভালোবাসা সবটাই। ইব্রাহিম আর মর্জিনার মুখে হাসি ফুটলো। আবিরের প্ল্যানিংয়ে না চাইতেও সাই জানালো তারা। আবির এবার উঠে দাঁড়িয়ে মিশুর রুমের বন্ধ দরজার কাছে গিয়ে বললো,
– এই মিশু? কি হলো তোর? ওভাবে চলে এলি কেন? আরেজ অনিন্দিতা তোর জন্য বসে আছে। জলদি আয়। ডিনার করবো।
মিশুর কান্নার শব্দ এবার স্পষ্ট ও প্রবল গর্জনে শোনা গেলো। আর শোনা গেলো চিৎকার করে বলা কথা,
– আমাকে একা থাকতে দাও আবির ভাই। চলে যাও।
বুক কামড়ে উঠলো উপস্থিত তিনজনের। তবুও মর্জিনা আর ইব্রাহিম মেয়েকে ভবিষ্যতে খুশী দেখবে ভেবে চুপ থাকলো। আর আবির সামনের ধামাকা হবে বলে। আরো অনেকটা বার ডেকে আবির ক্লান্ত হওয়ার ভাণ করে বাসায় ফিরলো।
চলবে,,
পর্ব ৫:
https://www.facebook.com/263481925517338/posts/424539409411588/