#হৃদয়ের_ঠিকানা৩য় পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
আমি তোতলাতে তোতলাতে কাইফ ভাইয়াকে বললাম,
– তু তু তুমি এখানে কি কি কিভাবে আসলে? রিয়া কক কোথায়?
– এখানে রিয়ার থাকার কথা না। আমার থাকার কথা তাই আমি আছি ও নাই।
কাইফ ভাইয়া চোখ গরম করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
আমি মাথা নিচু করে নিলাম। আমি বলে ফেলেছি কাইফ ভাইয়াকে ভালোবাসি৷ এখন বড্ড ভয় হচ্ছে। আমাকে কোনোভাবে বিষয়টা কাটাতেই হবে। তাই মাথায় নিচু করেই মনগড়া গল্প শুরু করলাম আবার,
– কাইফ ভাইয়া তুমি আমার উপর রাগ করোনা। আমি আমার সব বান্ধবীকে বলেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু এটা সত্য নই। আমি তো তোমাকে বলেছিই আমি কাকে ভালোবাসি।
কাইফ ভাইয়ার রাগ একদম উধাও হয়ে গেলো মনে হলো। বাকা একটা হাসি দিয়ে বলল,
– তুই আমাকে বড্ড বোকা পেয়েছিস। এবার তোর ক্লাস আমি নেবো। দেখবো তোর কত ধৈর্য।
আমি অবাক হতে কাইফ ভাইয়াকে বললাম,
– তুমি আমার কি ক্লাস নেবে কাইফ ভাইয়া? আমরা দুইজন তো দুই সাব্জেক্টের স্টুডেন্ট।
কাইফ ভাইয়া আগের মতই বাকা হাসি দিয়ে বলল,
– কিসের ক্লাস নেবো সে পরে বুঝতে পারবি। আগে একটা কথার উত্তর দে তো! তুই বললি তুই অন্য কাওকে ভালোবাসিস। তাহলে তোর বান্ধবীদের সাথে আমার কথা কেন বলেছিস?
আমি ঢোক গিলে ভাবতে লাগলাম কি বলবো এটা। অবশেষে কিছু একটা মনে চলে আসলো, তাই গড়গড় করে বলে দিলাম,
– যাকে আমি ভালোবাসি সে আর আমি ছাড়া কেও জানেনা আমাদের রিলেশনের বিষয়ে। আমার এক বান্ধবীর ভাই আমাকে প্রপোজ করতে এসেছিলো, আমি নিজেকে বাচানোর জন্য বলে দিই, তুমি আর আমি একে অপরকে ভালোবাসি।
কথাগুলো বলে নিজের হাত দিয়ে নিজেরই ঘাড় চাপড়াতে মন বলল। এতো সুন্দর করে মিথ্যা বানালাম কিভাবে! কাইফ ভাইয়া আমি দিকে একভাবে তাকিয়েই রইলো। কেমন দৃষ্টি ওটা আমার জানা নেই। তবে একথা বলতে পারি, তার চোখের মায়া থেকে বের হতে চাইনা৷
কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকার পর কাইফ ভাইয়া বলল,
– তোকে একটা কথা আমি আজীবন বলে এসেছি আর তা হলো সত্যকে গোপন রাখবিনা। দেখিস একদিন মিথ্যা বলার জন্য তুই অনেক বড় কিছু হারাবি।
এবার একটু বেশিই ভয় পেলাম। আমার সব কথা তাহলে ধরে ফেলল না তো! আমি আবার তোতলাতে তোতলাতে বললাম,
-তুমি ঠিক কিসের কথা বলছো কাইফ ভাইয়া। আমি হঠাৎ কি মিথ্যা বললাম।
যদিও মিথ্যা বলেছি তবুও এমন একটা ভাব নেওয়ার চেষ্টা করলাম যেন আমি সব সত্যি বলছি।
কাইফ ভাইয়া হোহো করে হাসতে লাগলো রেস্টুরেন্টের মধ্যেই। আশেপাশের সবাই কেমন ভাবে যেন কাইফ ভাইয়ার দিকে তাকাতে লাগলো কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
– শোন তোকে একটা গল্প শোনাই। রাস্তা দিয়ে দুইজন হেটে যাচ্ছিলো। একজন চোর আরেকজন সাধারণ পথিক। হঠাৎ দূর থেকে একজন পুলিশ বলতে বলতে দৌড়ে আসতে থাকে। এরপর কি হলো বলতো?
আমি অনার্গল বলে দিলাম,
– কি আর হবে! চোর সেখান থেকে পালিয়ে যাবে আর ভালো লোকটা সেখেনি দাঁড়িয়ে থাকবে।
কাইফ ভাইয়া দুই হাতের তালু একজায়গায় করে নিজের মুখ মুছে বলল,
– এইতো বুঝতে পেরেছিস। এটা কেন বললাম জানিস? আমি বলিনি যে তুই এখন মিথ্যা বলছিস কিন্তু তুই নিজেই ধরে নিচ্ছিস তুই মিথ্যা বলেছিস।
– কাইফ ভাইয়া তুমি কি বলছো আমি বুঝতে পারছিনা। সব কথা আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
– তোর কিছু বুঝতে হবেনা। যা বোঝার আমিই বুঝে নিয়েছি৷ এখন বাসায় চল।
– আমাকে আগে বলো, আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তুমি কোথায় গিয়েছিলে? জানো মামী কত চিন্তা করেছে তোমার জন্য?
– হ্যা আমার মা আমার জন্য চিন্তা করবেনা তো কি তুই করবি?
বায় দা রাস্তা, তোর চোখ এমন ফোলা ফোলা লাগছে কেন আমার কাছে? সারারাত কাদিস নি তো?
আমি একটা ঢংগি হাসি দিয়ে বললাম,
– ক.ক কাদবো কেন কাইফ ভাইয়া। সকালে ঘুম থেকে উঠেই এখানে চলে এসেছি সে জন্যই হয়তো এমন লাগছে।
– ঠিক আছে বাসায় চল৷ আজকে একজন স্পেশাল গেস্ট আসবে বাসায়।
– তুমি আমার কথার উত্তর দাও। গেস্ট আসবে কি ফেস্ট আসবে আমি কি শুনতে চেয়েছি সেটা? তুমি আগে বলো কালকে কোথায় ছিলে? আমি সব খবর নিয়েছি তুমি তোমাদের ফেয়ারওয়েলে যাওনি।
কাইফ ভাইয়া একদম স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
– বন্ধুর বাসায় ছিলাম। চল এখন আর কথা বাড়াস না। মায়ের সাথে দেখা করতে হবে। একদিন মাকে দেখিনি।
আমিও আর কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে পড়লাম কাইফ ভাইয়ার সাথে। আমি কি ভুল কিছু করছি! কাইফ ভাইয়া তো আমাকে ভালোবাসে। তাহলে আমি কেন ভালোবাসতে পারবোনা? আমিতো ভালোবাসিই কিন্তু তাকে জানাতে পারিনা। হয়তো কোনোদিন পারবোওনা।
আমাদের পরিণতি হবে অন্য রকম। কাইফ ভাইয়ার আগেই হয়তো মামা-মামী আমার বিয়ে দিয়ে দেবে। অনেক কাদবো কাইফ ভাইয়ার জন্য। তাকে হারানোর যন্ত্রণা হয়তো দিনকে দিন, মাসকে মাস, বছরকে বছর আমি সয়ে যাবো, তবুও তাকে পাওয়ার চেষ্টা করবোনা। নিজের ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য আমি এতো বড় স্বার্থপর হতে পারবোনা। পারবোনা আমি মামা-মামীর সাথে বেইমানি করতে। জীবন গেলেও না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় পৌছে গেলাম। বাসায় ঢুকতেই শুটকি মাছের গন্ধ পেলাম। ওড়না দিয়ে নিজের নাক মুখ কোনোরকমে ঢেকে দৌড়ে নিজের ঘরের ওয়াসরুমে চলে গেলাম। শুটকির গন্ধ আমার একদম সহ্য হয়না তাই ওয়াসরুমেই বমি করা শুরু করে দিলাম।
কিছুক্ষন পর মামী আমার ঘরে আসলো। ততক্ষণে আমি ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েছি। মামী আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
– মারে শুটকি রান্না করে ভুল করেছি বল? তুই যে একদম সহ্য করতে পারছিস না।
আমি কিছু বলবো তার আগেই কেও বলল,
– ওর সহ্য হয়না তো কি হয়েছে যে আজকে বাসায় আসবে এটা তার প্রিয় খাবার।
হঠাৎ করেই কাইফ ভাইয়ার কথার ধরণ পাল্টে গেলো কেন আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে সে আবার বলতে লাগলো,
– মিতু আসবে তুমি তো জানোই মা। সাওদাকে কোন ঘরে শিফট হতে হবে তুমি বলে দাও। মিতু আবার এই ঘরে ছাড়া শুতে পারেনা।
মামী কাইফ ভাইয়াকে বলল,
– আমার ভাইজি কোথায় থাকবে সেটা আমিই ঠিক করবো। ও দরকার হলে আমার কাছে থাকবে। এই ঘরের মালিক একমাত্র সাওদা। ও ছাড়া এখানে কেও থাকবেনা। তুই যা এখান থেকে সারাক্ষণ মেয়েটার পিছনে লেগে থাকিস।
কাইফ ভাইয়া চলে গেলো কিন্তু কয়েক মণ আঘাত দিয়ে গেলো আমাকে। তার কথার ইঙ্গিত আমি বুঝতে পেরেছি। আমাকে স্টোর রুমে থাকার কথা বলছে।
আমার চুপ থাকা দেখে মামী আমাকে বলে,
– তুই ওই পাগলটার কথায় রাগ করিস না মা। ও তোকে রাগানোর জন্যই কিন্তু এসব বলেছে।
আমি মৃদু হাসি দিয়ে বলি,
– না মামী আমি স্টোর রুমে শুতে পারবো। ওখানে একটা খাটও আছে।
মামী আমাকে বাধা দিয়ে বলে,
– তোর কথার মধ্যে অনেক যন্ত্রণা মা। আমি চাইনা এই যন্ত্রণা আরও বাড়ুক। তুই এখানেই থাকবি।
আমি এবার একটু জোর গলায় বললাম,
– না আমি ওই ঘরের থাকবো। এখানে গেস্ট থাকবে। তুমি আমার জন্য সারাজীবন অনেক কিছুই করেছো। আর কিছু করিওনা মামী, কাইফ ভাইয়া যা বলছে সেটাই হবে৷ তুমি এই নিয়ে এতো চিন্তা করো না।
মামী আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে আমাকে নিজের বুকে টেনে নিয়ে বলল,
– আমি যে মা। আমার মত তোরা কেও বুঝবিনা আর বুঝতে হবেও না। তুই তোর ঘরেই থাকবি এটাই ফাইনাল নাহলে আমি কিন্তু বাসার ভিতরে শুবোনা।
অবশেষে মামীর কথা মেনে নিলাম।
🍁
ঘন্টা খানেক পর মিতু নামক সেই আপু বাসায় আসলো। মামীর সাথে কুশলাদি বিনিময় করে আমার সামনে এসে বলল,
– সাওদা?
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিই। সে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কানে ফিসফিস করে বলে,
– তুমি তো দেখতে একদম পরীর মত হয়ে গেছো। তুমি বাসায় থাকতে কাইফ আমাকে পছন্দ করে কেন বুঝলাম না।
আমি কথাটা যেন শুনেই না শোনার ভান করলাম। কিন্তু আমার মন তো আমাকে বারবার বলছে কাইফ আমাকে ভালোবাসে না। কেনই বা বাসবে। আমি কি তাকে ভালোবাসি বলেছি? একটা ছেলে কতদিন অপেক্ষা করবে। ঠিক করেছে কাইফ ভাইয়া মিতু আপুকে চয়েজ করে।
তবে একটা জিনিস আমার মাথায় ঢুকছেনা। যে মানুষটা কালকেও বলল আমাকে ভালোবাসে সে আজকেই কিভাবে মিতু আপুকে পছন্দ করে এই কথা বলে ফেলল!
,
,
চলবে
,
চেক দেওয়া হয় তাই দয়া করে বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।