#বাবুইপাখির_অনুভূতিপর্বঃ০১
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊
—
ভরা বিয়ে বাড়ির মধ্যে ফাঁকা একটা রুমে ভয়ে জড়সড় হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি আমি। ভয়ে হাত পা কাঁপছে প্রায়। না জানি সামনের রক্তিম বর্ন নিয়ে তাকিয়ে থাকা ছেলেটি কি করে আমার সাথে। এই সব হয়েছে ওই বদমাশ বাচ্চাটার জন্য কাকে বলেছি লাভ লেটারটা দিতে আর কাকে দিয়েছে ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে আসি। কিন্তু এখন কে বাঁচাবে আমায়?’
কিছুক্ষণ আগে…
আজ আমার বান্ধবী রিনির বোনের বিয়ে। সেই উপলক্ষেই বিয়ে বাড়িতে আসা। অবশ্য এই একটা কারন বললে একটু ভুল হবে ভেবেছিলাম আজ আমার প্রান প্রিয় ছোট বেলার ভালোবাসার মানুষ নীরব ভাইয়াকে লাভ লেটার দিয়ে প্রপোজ করবো। সেই অনুযায়ী নীরব ভাইয়ার জন্য একটা লাভ লেটার লিখেছিলাম আমি। কিন্তু কে জানতো এই লাভ লেটারই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। ভাইয়াকে নিজ হাতে লাভ লেটার দেওয়ার সাহস হচ্ছিল না তাই একটা ছোট্ট বাচ্চাকে দিয়ে লাভ লেটারটা পাঠিয়ে ছিলাম নীরব ভাইয়ার দিকে কিন্তু বান্দর বাচ্চাটা ভুল করে নীরব ভাইয়ার জায়গায় অন্য একটা ছেলেকে লেটারটা দিয়ে দিল। ব্যস হয়ে গেলো কাগজের উপরে লাভ লেটার লেখা দেখেই ছেলেটি তো রাগে আগুন বাহিরে সবার সামনে সিনক্রিয়েট করতে চাইনি তাই ফাঁকা রুমে নিয়ে এসে দাঁড় করালো আমায়।
বর্তমানে…
কথাগুলো একের পর এক মাথায় আসতেই ভয়ে ঢক গিলে তাকালাম আমি সামনের ছেলেটির দিকে। চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই গিলে ফেলবে আমায়। আমার ভাবনার মাঝেই সামনের ছেলেটি রাগী কন্ঠ নিয়ে বললো,
‘ তোমার সাহস কি হলো এই ‘আদ্রিয়ান মাহামুদ’ কে লাভ লেটার দেওয়ার?’
ছেলেটির কন্ঠ শুনে ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠলো আমার। এখন কি বলবো আমি সত্যিটা বলে দেই কিন্তু যেভাবে রেগে আছে আমার কথাগুলো বিশ্বাস করবে তো। আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবারো রেগে বললো ছেলেটি,
‘ হোয়াই আর ইউ ডোন্ট টক টু মি, ইস্টুপিট লেডি?’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে ভয়ে কেঁপে উঠল ‘আহি’। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললো সে,
‘ আসলে?’
‘ হোয়াট রাবিশ! এনসার মি কুইকলি?’
এবার তো পারে আহি কান্নায় নিচে গড়িয়ে পড়ে। ভীষণভাবে কান্না পাচ্ছে তাঁর। এ কোন মহা বিপদে পড়লো সে। আহিকে এখনও চুপ থাকতে দেখে রাগে আগুন জ্বলছে আদ্রিয়ানের মাথায়। প্রচন্ড রেগে আছে না জানি রাগের বসে কি করে সে?’ আহি বুঝতে পারছে না সামান্য একটা লাভ লেটারটারের জন্য কেউ এতটা রেগে যায় নাকি। আদ্রিয়ান রেগে আহির দিকে এগোতে এগোতে বললো,
‘ তুমি কথা বলছো না কেন? হোয়াই এনসার মি?’
আদ্রিয়ানের কাজে ভয়ে পিছিয়ে যায় আহি। এক পর্যায়ে পিছাতে পিছাতে দেয়ালের সাথে লেগে যায় আহি। আহি প্রচন্ড ভয় পেয়ে বলে উঠল,
‘ বিশ্বাস করুন আমার কোনো দোষ নেই সব ওই বাচ্চাটার দোষ আমি তো…
আহি আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ানের ফোনটা বেজে উঠল। আদ্রিয়ান বেশি কিছু না ভেবেই ফোনটা হাতে নিলো উপরে তার বন্ধু নিলয়ের নাম দেখে ফোনটা তুললো সে তারপর বললো,
‘ হ্যালো।’
‘ কি করছিস আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি বাহিরে বেরিয়ে আয় মেয়েটার হয়তো তোকে ভালো লেগেছে তাই লাভ লেটারটা দিয়েছে বিয়ে বাড়িতে এই রকম একটু আকটু হয় তুই রাগ করিস না তাড়াতাড়ি বাহিরে চলে আয় আমাদের ফিরতে হবে তো,বেশি রাগারাগি করিস না এতে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না তাড়াতাড়ি চলে যায় তোকে আর এখানে থাকতে হবে না?’
নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে কড়া নজরে তাকিয়ে রইলো আহির দিকে। এই একটা ছেলে যার কথা আদ্রিয়ান সবসময় শোনে। আদ্রিয়ান ফোনটা কেটে কড়া নজরে আহির দিকে তাকিয়ে আঙুল দেখিয়ে বললো,
‘ নেক্সট টাইম তোমায় যেন আর কোনোদিন আমার সামনে না দেখি?’
বলেই হন হন করে বেরিয়ে গেল আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান বের হতেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিলয়ও চললো আদ্রিয়ানের পিছন পিছন। আদ্রিয়ান যেতেই বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগলো আহি। এই প্রথম কোনো ছেলেকে দেখে ভয় পেলো আহি। ভয়ের চোটে কিছু বলতেই পারলো না। মনে হচ্ছিল আর কিছুক্ষন হলেই জানটা বেরিয়ে যাবে,আহি বুকে হাত দিয়েই বলতে লাগলো,
‘ কি লোকরে বাবা এটলিস্ট চিঠিটা তো পড়া উচিত ছিল তাহলেই তো বুঝতে পারতো ওটা ওনার জন্য ছিল না জাস্ট উপরের লেখাটা দেখেই এত রেগে গেল। কিন্তু আমার চিঠিটা তো ওনার কাছেই রয়ে গেল এখন আমি নীরব ভাইয়াকে কি দিবো তার থেকেও বড় কথা আমার চারদিন বসে লেখা চিঠিটা লোকটা নিয়ে চলে গেল। না না আহি এক্ষুনি গিয়ে চিঠিটা নিয়ে আসতে হবে সাথে সত্যিটাও বলতে হবে তারপর ওই বদমাইশ বাচ্চাটাকেও দেখতে হবে হুহ।’
ভেবেই ভাড়ি লেহেঙ্গা ধরে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আহি।’
____
রাগে ফুসতে ফুসতে বিয়ে বাড়ির ভিতর থেকে বের হলো আদ্রিয়ান আর নিলয়। আদ্রিয়ান তো রেগেই বললো,
‘ শুধুমাত্র তোর জন্য মেয়েটাকে ছেড়ে দিলাম না হলে, কত বড় সাহস আদ্রিয়ানকে লাভ লেটার দেয়।’
‘ কুল ডাউন আদ্রিয়ান এত রেগে যাওয়ার কি আছে মানছি তুই মেয়েদের একদম পছন্দ করিস না কিন্তু তাই বলে ওইভাবে ভয় দেখাবি কতটা ভয় পেয়েছিল মেয়েটা।’
‘ তুই কি ওই মেয়েটার সাপোর্ট নিয়ে কথা বলছিস?’
‘ আরে না আচ্ছা বাদ দে ওইসব, চল এখন।’
বলেই ড্রাইভার সিটে গিয়ে বসলো নিলয়। আদ্রিয়ানও বেশি কিছু না ভেবে বসে পড়লো নিলয়ের পাশের সিটে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার। এই জন্যই বিয়ে বাড়িতে আসতে চাই নি সে শুধুমাত্র নিলয়ের জোরাজোরিতে আর তাদের বিজনেস পার্টনার আফজাল সাহেবের মেয়ের বিয়ে তাই এসেছিল সে। না হলে এইসব বিয়ে বাড়ি টিয়ে বাড়ি একদম পছন্দ করে না আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ান গাড়িতে বসে সিট বেল লাগিয়ে জোরে নিশ্বাস ফেললো। আদ্রিয়ান বসতেই নিলয় গাড়ি স্টার্ট দিলো এমন সময় হুট করেই সেখানে দৌড়ে এগিয়ে আসলো আহি। আহিকে দেখেই আরো রাগ বাড়লো আদ্রিয়ানের। রাগী লুক নিয়েই বললো সে,
‘ আবারো ওই মেয়েটা নিলয় কুইকলি এখান থেকে চল।’
উওরে নিলয়ও আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চললো নিজেদের গন্তব্যের দিকে। কারন সে বুঝতে পেরেছে এখানে বেশিক্ষণ থাকলে বড়সড় একটা ঝড় উঠবে।
আহি আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ বিশ্বাস করুন ওই লেটারটা আপনার জন্য ছিল না প্লিজ আমার লেটারটা আমায় ফেরত দিয়ে যান।’
আদ্রিয়ান আহির অর্ধেক কথা শুনলেও উওরে কিছু না বলে গাড়ি করে চলে গেল আর আহি গাড়ির পিছনে কিছুক্ষন দৌড়েও আর ধরতে পারলো না। ইচ্ছে করছে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কান্না করতে। কত কষ্ট করে ওই চিঠিটা লিখে ছিল সে নীরবের জন্য কিন্তু সব ভাবতেই জোরে কান্না পাচ্ছে তাঁর।’
‘ প্রত্যেকবার আমার সাথেই এমন কেন হয়?’
এমন সময় আহির হাত ধরে টান দিলো একটা ছেলে তারপর বললো,
‘ আপি আমার চকলেট?’
হুট করে কোনো বাচ্চার কন্ঠ কানে আসতেই চোখ ফিরে তাকালো আহি ছেলেটির দিকে। এই ছেলেটাই হলো সেই ছেলেটা যাকে বলেছিল আহি নীরবকে চিঠিটা দিতে কিন্তু বাচ্চাটা ওই রাগী হনুমানটাকে দিয়ে দিল। আহি রেগে বললো,
‘ তোকে চকলেট দিবো দাড়া দিচ্ছি তোকে চকলেট বান্দর ছেলে তোর জন্য আমার চিঠি হনুমানটা নিয়ে গেল।’
বলেই রাগে তেড়ে আসতে লাগলো আহি ছেলেটার দিকে। আহির কাজে ছেলেটি ভয় পেয়ে দৌড়ে পালালো। এরই মধ্যে সেখানে এসে হাজির হলো রিনি আহিকে এতটা রেগে যেতে দেখে বললো সে,
‘ কি হয়েছে নীরব ভাইয়াকে চিঠিটা দিতে পারিস নি সরি দোস্ত ওদিকে একটু বিজি ছিলাম তাই আসতে পারি নি।’
রিনির কথা শুনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো আহি। আহিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো রিনি,
‘ আজও পারিস নি।’
উওরে ‘না’ বোধক মাথা নাড়ালো আহি। তারপর সবকিছু খুলে বললো আহি রিনিকে। সব শুনে রিনি তো চরম অবাক এত কিছু হয়ে গেল অথচ সে কিছু বুঝতে পারে নি। রিনি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো আহিকে,
‘ যাক বাদ দে তুই আবার আরেকটা চিঠি লিখে বলিস নীরব ভাইয়াকে এখন চল আপুকে বিদায় দিতে হবে।’
বলেই আহির হাত ধরে চললো রিনি। আহিও বেশি কিছু না ভেবে মন খারাপ করে চললো রিনির সাথে। এটা নতুন কিছু নয় এর আগেও অনেক বার আহি নীরবকে প্রপোজ করার চেষ্টা করছিল কিন্তু সাহসের অভাবে কিছুই বলতে পারে। যতবারই নীরবের সামনে গিয়ে কিছু বলবে বলবে ভেবেছে তখনই কোনো না কোনো কারনে আঁটকে পড়েছে সে। তাই ভেবেছিল আহি মুখে নয় চিঠি লিখে জানাবে সব কিন্তু ভাবতেই দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসলো তাঁর।’
___
বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সবাই কারন এখন বিয়ের কনেকে বিদায় জানানো হবে সবাই বেশ মন খারাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আহিও মন খারাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাইকে কাঁদতে দেখে তাঁরও কান্না পাচ্ছে। এমন সময় তার মাথায় হাত রাখলো নীরব তারপর বললো,
‘ Don’t cry?’
নীরবের কথা শুনে হকচকিয়ে উঠলো আহি। সাথে আরো জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করলো সে। আহি এত জোরেই কাঁদতে লাগলো যে আশেপাশের সবাই কনেকে ছেড়ে আহির দিকে তাকিয়ে রইলো।আহির কাজে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল নীরব। আশেপাশে তাকাতেই সবাইকে আহির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বেশি কিছু না ভেবেই আহির হাত ধরে অন্য সাইডে নিয়ে গেল নীরব। তারপর কিছুটা অবাক হয়ে আহির দিকে তাকিয়ে বললো সে,
‘ তোকে কাঁদতে বারন করলাম আর তুই কি না আরো জোরে জোরে কাঁদছিস?’
উওরে আরো জোরে কাঁদতে কাঁদতে লাগলো আহি। আহির কাজে বিষন্ন ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো নীরব,
‘ আরে তুই কাঁদছিস কেন?’
নীরবের কথা শুনে আহি কান্না ভেঁজা কন্ঠ নিয়েই বললো,
‘ সব সময় আমার সাথেই এমন কেন হয় নীরব ভাইয়া?’
‘ কি হয় কি হয়েছে সেটা তো বলবি?’
‘ সেটা শুনে তুমি কি করবে?’
‘ যাহ বাবা আমায় বলবি না?’
‘ না বলবো না।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে তোকে কিছু বলতে হবে না এখন কাঁদিস না।’
বলেই আহির চোখের পানি মুছে দিলো নীরব। তারপর বললো,
‘ তোকে না বলেছি হুটহাট কাঁদবি না কাঁদলে তোকে একদম ভালো লাগে না বুঝলি।’
নীরবের কথা শুনে আহি মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো নীরবের দিকে কিন্তু কিছু বললো না….
!
!
!
!
!
#চলবে…..
_________________
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। অনেকদিন পর নতুন গল্প শুরু করলাম আশা করি তোমাদের ভালো লাগবে তোমাদের ভালো লাগলেই নেক্সট পার্ট দিবো]
#TanjiL_Mim♥️