#বাবুইপাখির_অনুভূতিপর্বঃ০২
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
—
_________________
দেয়ালের সাথে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। চোখ দিয়ে লাল আভা বের হচ্ছে তার আর ওনার এমন কাজে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে আহি তার দিকে। হুট করে আদ্রিয়ান কোথা থেকে চলে এলো ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না আহি। অন্যদিকে আদ্রিয়ান রেগে আহির গলা চেপে ধরে বললো,
‘ তোমার সাহস কি হলো আমায় লাভ লেটার দেওয়ার?’
হুট করে এমন ভয়ানক কান্ড দেখে হকচকিয়ে বিছানা ছেড়ে চোখ খুলে শোয়া থেকে উঠে বসলো আহি। আশেপাশে তাকাতেই সে বুঝতে পারলো সে রিনিদের বাড়িতে রিনির বিছানায় ঘুমিয়ে আছে তার মানে কিছুক্ষন আগে যা দেখলো তা স্বপ্ন ছিল। কথাটা মাথায় আসতেই চোখ তুলে তাকালো আহি। কি ভয়টাই না পেয়েছে সে বাবা গো বাবা ওটা চোখ ছিল নাকি অন্যকিছু। আই উইস আর কোনোদিন যেন ওই রাগী লাল চোখওয়ালা হনুমানের সাথে দেখা না হয়। ভেবেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো আহি। শরীরটা একটু ক্লান্ত থাকায় বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিল সে কিন্তু এখন ঠিক আছে। দিন দুপুর এইরকম ভয়ানক স্বপ্ন দেখবে সে এটা একদমই কল্পনার বাহিরে ছিল আহির। গলায় হাত দিয়েই এগিয়ে চললো সে ওয়াশরুমের দিকে।’
____
ক্লান্ত শরীর নিয়ে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো আদ্রিয়ান প্রচন্ড ক্লান্ত সে। আর তার পাশেই সোজাসুজি সোফায় গায়ের কোটটা খুলে গা এলিয়ে দিলো নিলয় সেও বড্ড ক্লান্ত। বিয়ে বাড়ি মানেই হলো এক গা লোকজন হইচই চেঁচামেচি আরো কত কি সবকিছুতেই চরম বিরক্ত লাগছিল আদ্রিয়ানের ভালো হয়ে সে ফিরে এসেছে। হঠাৎই বলে উঠল নিলয়,
‘ আজ সত্যি খুব ক্লান্ত লাগছে আমার?’
‘ আমারও।’
এরপর দুজনই কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। হঠাৎই নিলয় বলে উঠল,
‘ আজ তাহলে যাই বস কাল অফিসে দেখা হবে?’
নিলয়ের কথা শুনে চোখ বন্ধ করেই ক্লান্তি মাখা কন্ঠে বললো আদ্রিয়ান,
‘ ঠিক আছে মাই পারসোনাল এসিস্ট্যান্ট।’
আদ্রিয়ানের কথা শুনে হাসলো নিলয় তারপর গায়ের কোটটা হাতে নিয়ে চললো সে। হঠাৎই নিলয়ের কোটের পকেট থেকে আহির দেওয়া সেই লাভ লেটারটা পড়ে গেল নিচে। নিচে কিছু পড়তেই নিলয় চটজলদি নিচ থেকে কাগজটা উঠালো তারপর লেটার দিকে তাকিয়ে একপলক হেসে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো সে,
‘ দোস্ত তোর লাভ লেটার?’
নিলয়ের কথা শুনে চোখ খুলে তাকালো আদ্রিয়ান তারপর ঠোঁট উল্টে বললো সে,
‘ হোয়াট?’
উওরে হাসলো নিলয়। নিলয়ের হাসি দেখে কিছুটা ক্ষিপ্ত মেজাজ নিয়ে বললো সে,
‘ ও টাকে ফেলে দিস নি কেন?’
‘ মনেই ছিল না তখন যে পকেটে রেখেছিলাম তবে যাই বল মেয়েটার কিন্তু সাহস আছে বারন করা সত্বেও আবার গাড়ির সামনে আসলো?’
‘ তোর কোনো কাজ না থাকলে চিঠিটা যাওয়ার সময় রাস্তায় ফেলে দিস।’
‘ এমন করিস কেন দেখতো কত সুন্দর করে চিঠিটা সাজিয়েছে মেয়েটা আমি তোকে পড়ে শোনাবো?’
নিলয়ের কথা শুনে ফট করে উঠে দাঁড়ালো আদ্রিয়ান তারপর চোখ গরম করে নিলয়ের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
‘ তুই যাবি আমার সামনে থেকে?’
‘ আরে বাবা যাচ্ছি তো রেগে যাচ্ছিস কেন?’
এই বলে চিঠিটা আদ্রিয়ানের রুমে থাকা বুকশেলফের উপরে রেখে বললো নিলয়,
‘ এখানে চিঠিটা রেখে গেলাম ভালো লাগলে পড়ে দেখিস আবার ফেলে দিস না কিন্তু,যতই হোক লাভ লেটার বলে কথা।’
বলেই দৌড়ে পালালো নিলয়। আর আদ্রিয়ান কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারলো না চরম বিরক্ত লাগছে তাঁর। আদ্রিয়ান বেশি কিছু না ভেবে হন হন করে উপরে চলে গেল। আর গোলাপি খামের ভিতর থাকা চিঠিটা পড়ে রইলো তাঁর বুকশেলফ জুড়ে।’
______
বিকেল_৫ঃ০০টা…
বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে আহি। গায়ে থাকা ভাড়ি লেহেঙ্গা খুলে ফেলেছে অনেক আগেই। বর্তমানে একটা গোলাপি রঙের জর্জেট থ্রি-পিচ পড়ে দাঁড়িয়ে আছে সে আয়নার সামনে।’এমন সময় সেখানে এসে হাজির হলো নীরব আহিকে উল্টোদিক ফিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো সে,
‘ হয়েছে তোর এখন তো বের হতে হবে?’
উওরে মুচকি হেঁসে পিছন ফিরে বললো আহি,
‘ হুম হয়েছে। আমায় কেমন লাগছে ভাইয়া?’
উওরে আহির মাথা থেকে পা অবদি স্ক্যান করে বললো নীরব,
‘ রোজ যেমন লাগে তেমন।’
নীরবের কথা শুনে আহি মুখ ভাড় করে বললো,
‘ তুমিও না ভাইয়া কখনো আমার প্রশংসা করই না।’
‘ এত প্রশংসা করে কি হবে শুনি?’
‘ যাও তো তুমি আমি আসছি।’
উওরে হাল্কা হেঁসে চোখে চশমাটা ঠিক করে বেরিয়ে গেল নীরব। নীরব হলো আহির প্রতিবেশী প্লাস বন্ধু একই বিল্ডিং এর উপর নিচ ফ্লাটে থাকে তাঁরা। সেই ছোট বেলা থেকেই একসাথে আছে দুজন। নীরব আহির থেকে দু’বছরের বড়। নীরবের এই বিয়েতে আসার কারন হলো দুইটা এক রিনি তাকে ইনভাইট করে ছিল আর দুই রিনির বড় ভাই সোহানের বেস্ট ফ্রেন্ড সে। সে হিসেবেও ইনভাইটেট নীরব। তাই তো না চাইলেও আসতে হয়েছে তাকে।’
রিনিদের বাড়ির বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আহি, সোহান নীরবসহ নীবরের আরো দুটো ছেলেফ্রেন্ড সাথে মীরা। মীরাও নীরবের বন্ধু একই সাথে পড়ে তাঁরা। তবে এই মেয়েটাকে একদম পছন্দ হয় না আহির। কারন সবসময় নীরবের গায়ের সাথে চিপকে চিপকে থাকে সে। যেটা একদমই অপছন্দের বিষয় আহির। অতঃপর সবাইকে বিদায় জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো নীরব ওঁরা। সবার আড়াল থেকে কিছুটা দূরে আহির হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো রিনি। রিনির এমন কাজে আহি অবাক হয়ে বললো,
‘ তোর আবার কি হলো, হাত ধরে টানছিস কেন?’
‘ শোন আজ নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করতে পারিস নি ঠিক আছে কিন্তু কাল আবার প্রপোজ করবি এইবার না পারলে আমি নিজে গিয়ে নীরব ভাইয়াকে বললো তোর কথা।’
‘ না বোন প্লিজ এমন করিস না।’
‘ এমনটা না চাইলে আজ রাতের মধ্যে আর একটা চিঠি লিখে কাল ভার্সিটি গিয়ে নীবর ভাইয়াকে দিবি বুঝলি।’
‘ এক রাতের মধ্যে লিখতে হবে আগের টা লিখতে আমার চারদিন লেখেছিল।’
‘ ওতশত জানি না কালকের মধ্যে প্রপোজ করবি মানে করবি তা না হলে..
রিনির পুরো কথা শেষ করার আগেই আহি বলে উঠল,
‘ প্লিজ বোন রাগ করিস না আমি তো ট্রাই করি কিন্তু কিছুতেই হয়ে ওঠে না।’
আহির কথা শুনে এক প্রকার রেগেই বললো রিনি,
‘ কচু করোস তুই। সেই স্কুল লাইফ থেকে তুই শুধু ট্রাই করেই যাচ্ছিস কিন্তু কিছু করতে আর পারছিস না। এরপর দেখবি অন্যকেউ এসে নীরব ভাইয়ার হাত ধরে নিয়ে যাবে তুই কিছু করতেও পারবি না। এমনিতেও ওই মীরা আপুকে আমার মটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না তাই বলছি সময় থাকতে বলে ফেল আহি।’
রিনির কথা শুনে আহিরও বেশ খটকা লেগেছে সত্যি তো যদি তার আগে নীরব ভাইয়ার লাইফে অন্যকেউ চলে আসে তাহলে সে কি করবে? না না এমনটা হতে দেওয়া যাবে না কালই সে আবার নীরবকে প্রপোজ করবে। আর এবার প্রপোজ করেই ছাড়বে। কথাগুলো ভেবে আহি রিনির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তুই ঠিকই বলেছিস আমি কাল নীরব ভাইয়াকে প্রপোজ করেই ছাড়বো।’
‘ এই না হলে কথা। একদম ভয় পাবি না ফট করে চিঠিটা নীরব ভাইয়ার হাতে দিয়ে চট করে চলে আসবি, আর শোন আমি কাল বা পরশু ভার্সিটি না গেলেও দু’দিন পর ঠিক যাবো আর গিয়ে যেন শুনি তুই প্রপোজ করতে পেরেছিস নীবর ভাইয়াকে।’
‘ হুম।’
এমন সময় আহির নাম ধরে ডাক দিলো নীরব। নীরবের কন্ঠ শুনে আহিও রিনিকে বাই বলে দৌড়ে চললো ওদের সাথে। আর রিনি নিরাশ হয়ে আহির যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘ এবার পারবি তো আহি নাকি এবারও,,
ভাবতেই ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে আসলো তাঁর।’
_____
গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে আহি। তার সামনেই নীরব মীরা সাথে ওদের দুজন বন্ধুরাসহ সবাই মিলে হাসাহাসি করছে আর আড্ডা দিচ্ছে। সবার মাঝে নিজেকে কেমন যেন বনমানুষ বলে মনে হচ্ছে আহির। আহি যাও একটু বলবে তাও মীরার সাথে নীরবের হাসাহাসি করে কথা বলাটার জন্য মোটেও ভালো লাগছে না আহির। তাই তো সে একদম চুপচাপ হয়ে বসে আছে। ছোট্ট একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আহি।
‘ হয়তো রিনি ঠিকই বলেছে আমি বলতে বলতে নীরব ভাইয়ার লাইফে অন্যকেউ চলে আসবে।’
কথাগুলো মনে মনে ভেবে বড্ড মন খারাপ হয়ে গেল আহির। চুপচাপ নিজের মাথাটা জানালার পাশে হেলিয়ে দিলো আহি আর ভাবলো…
নীরবের সাথে আহির প্রথম আলাপ হয়েছিল স্কুলে বসে। তখন আহির বয়স ছিল সাত কি আট আর নীরবের দশ কি এগারো। সেদিন স্কুলে যেতেই একটা ছেলের সাথে তুমুল বেগে ঝগড়া লাগে আহির সাথে। এক পর্যায়ে সেই ছেলেটা ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আহিকে আর তখনই সেখানে হাজির হয় নীরব। গোলগাল ফর্সা চেহারার একটা ছেলে,নীরব ছোট বেলা থেকেই গোল ফ্রেমের চশমা পড়ে। এখনও পড়ে আর এই চশমাতেই বেশ সুন্দর লাগে নীরবকে। নীরবের নামটাও যেমন নীরব তেমনি ছেলেটাও শান্ত সৃষ্ট আর নীরব টাইপের। আহি তো সেদিন ছোট্ট নীরবকে দেখেই ভালো লাগার মুহূর্তে চলে যায়। যদিও তখন সে ভালোবাসা নামেও যে কিছু আছে সেটা জানতো না। নীরব সেদিন দৌড়ে এসে আহির দিকে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো,
‘ ঠিক আছো তুমি?’
উওরে ‘হ্যা’ বোধক মাথায় নাড়িয়ে নিজের হাত এগিয়ে দিয়েছিল আহি। এরপর নানা ভাবেই তাদের সাথে কথা হয় আর শুরু হয় বন্ধুত্ব দুজনেই দুজনের প্রতিবেশী হওয়ায় আরো বেশি ভালো বন্ধুর সম্পর্ক তৈরি হয় তাদের। একসাথে স্কুলে যাওয়া, একসাথে খেলাধুলা, পড়াশোনাও একসাথে করতো দুজন। ছোট বেলা থেকেই আহি পড়াশোনায় তেমন ভালো নয় অংক তো তার মাথায় ঢুকতেই চায় না,অন্যদিকে নীরব ছিল তার একদম উল্টো মেধাবী আর ক্লাসের টপ বয় হওয়া একজন স্টুডেন্ট। অংক তার কাছে যেন পানির মতো সহজ। আর এই কারনেই নীরব সেই ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় হেল্প করে আহিকে। আর আহি সে তো নীরবেই বার বার মুগ্ধ, তার চেহারা,তার পড়াশোনার ধরন, তার স্টাইল সবকিছু। আর সেই মুগ্ধতাই এখনও বয়ে চলছে আহির মাঝে। কখন যে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেললো নীরবকে বুঝতেই পারে নি আহি। কিন্তু ছোট বেলাটা এখন হারিয়ে গেছে আগে নীরব প্রায় কাছাকাছি থাকতো কিন্তু এখন অনেক দুরত্ব ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আহি।’
হঠাৎই কারো মুখে নিজের নাম শুনে নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো আহি। সামনেই নীরবের দিকে তাকাতেই আবারো মুগ্ধতা এসে গ্রাস করলো তাকে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইলো সে নীরবের দিকে। গোল ফ্রেমের চশমা, হাতে কালো ঘড়ি,গায়ে ফুল হাতার ওয়াইট টিশার্ট,কালো জিন্স চুলগুলো সুন্দর করে সাজানো। যেন এক অন্যরকম ধ্যানে আঁটকে পড়েছে আহি। আচমকাই আহির ধ্যানের মাঝখানে ওর মাথায় চাটি মেরে বললো নীরব,
‘ কোন ভাবনায় মগ্ন তুই সেই কখন থেকে ডাকছি তোকে কানে যাচ্ছে না আমরা চলে এসেছি বের হ গাড়ি থেকে।
হুট করে নীরবের এমন কাজে আর কথা শুনে হকচকিয়ে উঠলো আহি তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললো সে,
‘ না মানে..
‘ রাখ তোর না মানে চল তাড়াতাড়ি সবাই চলে গেছে শুধু তুই আমিই রয়ে গেছি।’
এতটুকু বলে আহির হাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে বের করলো নীরব তারপর চললো নিজেদের গন্তব্যের দিকে।’….
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️