#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ০৬

0
750

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️পর্বঃ০৬
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️

_________________

টপ টপ শব্দে পানি পড়ছে ঝর্ণার,আর সেই পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে আদ্রিয়ান। চোখে মুখে রাগ বিদ্যমান তার। আদ্রিয়ানের বিশ্বাসই হচ্ছে না একটা মেয়ের জন্য তাকে এই সময়ে গোসল করতে হচ্ছে। আহির ওপর ভিষণ ভাবে রেগে আছে আদ্রিয়ান। নেক্সট টাইম দেখা হলে থাপ্পড়ই না দিয়ে বসে সে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে জোরে নিশ্বাস ফেললো আদ্রিয়ান।’

টানা একঘন্টা সাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পড়ে বের হলো আদ্রিয়ান। তারপর ব্লাক রঙের পাজামা সাথে সাদা রঙের ফুলহাতার টিশার্ট পড়ে নিজের চুলগুলো মুছে চার সেকেন্ড আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজের রুম থেকে বের হলো আদ্রিয়ান। নিচে নামতেই সোফার ওপর নিলয়কে বসে থাকতে দেখে বললো আদ্রিয়ান,

‘ তুই এখনো যাস নি?’

‘ না তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম,অফিসের ব্যাপারে কিছু কথা ছিল?’

‘ ওহ হুম বল।’

এতটুকু বলে আদ্রিয়ান গিয়ে বসলো নিলয়ের সোজাসুজি সোফাটায়। তারপর নিলয় কিছু পেপার দেখিয়ে কথা বলতে লাগলো আদ্রিয়ানের সাথে,আর আদ্রিয়ান চুপচাপ মনোযোগ সহকারে শুনতে লাগলো সব। হঠাৎই নিলয় বলে উঠল,

‘ তাহলে কালই নিউজ পেপারে আর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনটা দিয়ে দেই, আদ্রিয়ান?’

উওরে আদ্রিয়ানও কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

‘ হুম।’

‘ ওকে তাহলে আমি যাচ্ছি কাল অফিসে কথা হবে।’

‘ হুম।’

উওরে নিলয় আর কিছু না বলে চলে গেল তার গন্তব্যে। আর আদ্রিয়ান সেও কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থেকে টেলিফোনটা হাতে নিয়ে খাবার অর্ডার করে উঠে দাঁড়ালো হঠাৎই তার চোখ গেল নিলয়ের রাখা সেই গোলাপি খামের চিঠিটার দিকে। তবে আপাতত বেশি কিছু না ভেবে চলে গেল সে উপরে। এই মুহূর্তে আহির কথা মাথায় আসতেই রাগে গা জ্বলছে তার।’

_______

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হলো আহি। এমন সময় উপরের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছিল নীরব আহিকে দেখেই বললো সে,

‘ ভার্সিটি যাচ্ছিস?’

আচমকা নীরবের কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা চমকে উঠলো আহি। পিছন ফিরে নীরবে দেখেই এক দফা ক্রাশ খেলো সে। আকাশী-সাদা মিশ্রিত শার্ট পড়েছে নীরব, সাথে সাদা রঙের জিন্স, হাতে ব্লাক ওয়াচ, চুলগুলো বরাবরের মতোই সুন্দর করে সাজানো সাথে গোল ফ্রেমের চশমা এক কথায় অসাধারণ লাগছে নীরবকে। আহিকে নিজের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর মাথায় একটা চাটি মেরে বললো নীরব,

‘ কোথায় হারিয়ে গেলি তুই?’

নীরবের কাজে হকচকিয়ে উঠল আহি,তক্ষৎনাত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো সে,

‘ হ্যাঁ না মানে হুম ভার্সিটি যাচ্ছি আর তুমি ভাইয়া?’

‘ হুম আমিও যাবো তবে এখন নয় আমার একটা কাজ আছে সেটা সেরে তারপর?’

নীরবের কথা শুনে কিছুটা মন খারাপ নিয়ে বললো আহি,

‘ ওহ!’

‘ হুম তাড়াতাড়ি চল তা না হলে লেট হয়ে যাবি তো?’

‘ হুম।’

বলেই চলে গেল আহি।

‘ ইস চিঠিটা ড্রয়ারে রেখে এসেছি তা না হলে এখন দেওয়া যেত না ধুর ভালো লাগে না।’

বলতে বলতে এগিয়ে গেল আহি। আর নীবর কিছুক্ষন আহির যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে আহির যাওয়ার উল্টো পথ দিয়ে হাঁটা শুরু করলো।’

____

বাস স্টপের সামনে সাদা সেলোয়ার-কামিজ,খোলা চুলে সাথে চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে অথৈ। নতুন শহর,নতুন জায়গা তারপরও বিন্দুমাত্র ভয় কাজ করছে না তার ভিতর। চুপচাপ বুকে একটা বই লুকিয়ে রেখে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সে বাসের জন্য। হঠাৎই একটা বাস আসায় আশেপাশের সবাইকে আগে উঠতে দিয়ে তারপর উঠলো অথৈ। কারন ভিড়ের মধ্যে তারাহুড়ো করে বাসে উঠতে একদম পছন্দ করে না অথৈ লাগলে দাঁড়িয়ে যাবে তারপরও সবার মাঝ দিয়ে বাসে উঠবে না সে। নিজের চশমাটা ঠিক করে ধীরে সুস্থে বাসে উঠলো অথৈ। সে উঠতেই বাস চালক বাস স্টার্ট দিয়ে চলতে শুরু করলো। হঠাৎই ভিতরে ঢুকতে গিয়েই কিছু একটা দেখে বাহিরে তাকালো অথৈই। বাহিরে তাকাতেই দেখলো সে একটা ছেলে বাসের পিছনে দৌড়াচ্ছে আর বাস থামাতে বলছে।’

.

এদিকে নিজের কাজ শেষ করে বাস স্টপ পর্যন্ত আসতে একটু লেট হয় নীরবের। তাই বাস ধরার জন্য দৌড়াচ্ছে নীরব। সে দেখেছে একটা মেয়ে তাকে দৌড়াতে দেখেছে আর এটাও আন্দাজ করতে পারছে যে সে যত জোরে চেঁচিয়েছে সেটাও মেয়েটা শুনেছে। নীরব ভেবেছিল হয়তো মেয়েটা তাকে সেই শারুক খান আর দিপাকা পাদুকারের চেন্না এক্সপ্রেসের মুভিটার মতো হাত বারিয়ে সাহায্য করবে কিন্তু তার সেই ভাবনাকে ভুল প্রমানিত করে মেয়েটা একপলক তার দিকে তাকিয়ে আবার ভিতরে ঢুকে গেল। সাথে নীরবের আশার আলো নিভে গেল হয়তো আজ তার ভার্সিটি যেতে সত্যি সত্যি লেট হবে খুব। ভেবেই বাসের পিছনে আর না দৌড়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে আর তাকিয়ে রইলো তাকে নিরাশ করে চলে যাওয়া বাসের দিকে। হঠাৎই নীরবকে অবাক করে দিয়ে বাসটা দাঁড়িয়ে পড়লো তাঁর থেকে কিছুটা দূরে। বাসটাকে থামতে দেখে নীরবের আর বুঝতে বাকি রইলো না ওই মেয়েটাই গাড়িটা থামিয়েছে। নীরব প্রচন্ড খুশি হয়ে দৌড়ে গিয়ে উঠলো বাসে। যাক মেয়েটা মুভির মতো না হলেও তার স্ট্যাইলে হেল্প করলো।’

নীরব বাসে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো ঠিক অথৈর পিছনে। কারন সব সিট ভর্তি করে মানুষ বসা। অথৈ নীরব দুজন দুজনের দিকে একপলক তাকিয়ে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো দুজন দু’দিক ফিরে।’

____

তুমুল বেগে এক্সাইটেড হয়ে করিডোর থেকে দৌড়ে নিজের ক্লাসের দিকে যেতে গিয়ে আচমকা একটা ছেলের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যায় রিনি। ঘটনাক্রমে সামনের ছেলেটি কিছু করার বা বোঝার আগেই সবটা হয়ে যায়। হুট করে এমন কিছু হওয়ার জন্য মটেও প্রস্তুত ছিল না রিনি। প্রচন্ড ব্যাথা আর রাগ নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো সে,

‘ চোখে দেখেন না নাকি এইভাবে কেউ হুট করে সামনে চলে আসে নাকি?’

সামনের মেয়েটির কথা শুনে শুভ বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ আশ্চর্য! আমি কি করলাম? আপনি নিজেই তো দৌড়ে এসে পড়লেন আমার সামনে?’

ছেলেটির কথা শুনে রেগে আগুন হয়ে বললো রিনি,

‘ আপনি কি করলেন মানে?’ আপনার জন্যই তো পড়ে গেলাম আমি?’

‘ আমার জন্য পড়েন নি আপু?’

শুভর এবারের কথা শুনে রাগে আরো আগুণ রিনি,প্রচন্ড রেগে শুভর কলার ধরে বললো সে,

‘ ওই মিয়া আমায় কোন এনগেল থেকে আপনার আপু মনে হয় হুহ?’

হুট করে রিনির এমন কান্ডে এক প্রকার চমকে আর ঘাবড়ে গেল শুভ। কিছুটা ঘাবড়ানো মুখ নিয়ে বললো সে,

‘ আরে আরে আপু এটা কি করছেন?’

‘ আবার আপু,তোকে তো আমি এমনিতেই পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাইছি তারপর আবার আপু?’

বলেই আরো শক্ত করে কলার চেপে ধরলো রিনি শুভর। রিনির কাজে তো চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম শুভর। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হয় আহি, রিনিকে দেখে আর ওর কান্ড দেখে এগিয়ে এসে বললো আহি,

‘ আরে আরে এটা তুই কি করছিস রিনি?’

এতটুকু বলে তাকালো আহি সামনের ছেলেটির দিকে, ছেলেটির মুখ দেখেই বললো আহি,

‘ আরে শুভ তুমি এখানে?’

আহির কথা শুনে রিনি অবাক হয়ে বললো,

‘ তুই এই আপু পাগলকে চিনিস আহি?’

‘ কি আপু পাগল মানে?’

আহির কথা শুনে রিনি কিছু বলার আগেই শুভ বলে উঠল,

‘ দেখ না আপু হুট করেই কেমন ব্যবহার করছে?’ নিজেই এসে আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল আর এখন আমার সাথেই বাজে ব্যবহার করছে এই আপু।’

শুভর কথা শুনে শুভর কলার ছেড়ে দিয়ে বললো রিনি,

‘ ওকে আপু বলতে বারন কর আহি তা না হলে আমি যে কি করবো তার ঠিক নেই?’

এতক্ষণ পর আহি বুঝতে পারলো রিনি এত ভয়ংকর ভাবে রেগে কেন গেল। আহি রিনিকে টেনে এক সাইডে এনে বললো,

‘ শান্ত হ এটা ভার্সিটি সবাই কি ভাবছে বলতো?’

‘ তুই আগে ওই পাগলটাকে আমার সামনে থেকে সরা?’

‘ আচ্ছা দেখছি আমি তুই এখানেই দাঁড়া।’

উওরে কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়ালো রিনি। আর আহি শুভর দিকে তাকিয়ে এগিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

‘ ওর কাজের জন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি তোমায় তো কালকেই বলে ছিলাম।’

‘ হুম বুঝতে পারছি আপু,আর ওই মেয়েটার জন্য তোমায় ক্ষমা চাইতে হবে না,এমনিতেও আমি যে কাজের জন্য এসেছিলাম সেটা শেষ তাই এখন চলে যাচ্ছিলাম আর তখনই।’

‘ ওহ।’

‘ হুম ওকে বাই পড়ে কথা হবে।’

‘ঠিক আছে।’

উওরে শুভ আর কিছু না বলে একপলক রিনির দিকে তাকিয়ে চলে গেল। বাবা গো বাবা সামান্য ‘আপু’ ডাকায় কেউ এতটা রেগে যায় যদি ‘আন্টি’ ডাকতাম তাহলে তো মনে হয় খুনই করে ফেললো আমায়।– ভেবেই চলে গেল শুভ।’

আর এদিকে কিছুটা বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো আহি রিনিকে,

‘ এটা তুই কি করলি?’

‘ কি করেছি মানে যা করেছি বেশ করেছি।’

এতটুকু বলে খুব এক্সাইটেড আর উৎসাহের সাথে বললো রিনি,

‘ এখন ওসব বাদ দে আগে বল নীরবভাইয়াকে বলেছিলি? কি বললো সে তোর চিঠি পড়ে। এটা জানার জন্যই তো এক্সাইটেড হয়ে আসতে গিয়ে ওই খাম্বাটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম। যাগ গে আগে বলতো বলতে পেরেছিস?

উওরে আহি মাথা নিচু করে মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘না’

আহির কথা শুনে রিনি চেঁচিয়ে বললো,

‘ কালও পারিস নি?’

উওরে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বোধক মাথা নাড়ালো আহি। আর রিনি আহির মাথা নাড়ানো দেখে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো, যার জন্য সে তার বোনের বউভাতে পোলাও না খেয়ে শুধু মাংস খেয়ে চলে আসলো সেটাই হলো না।’

রিনির রিয়েকশন দেখে আহি কি বলবে বুঝতে পারছে না তাই সেও চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।’

_____

আচমকা বাস ব্রেক কষতেই পড়ে যেতে নিলো অথৈ সাথে সাথে নীরব তাকে ধরে ফেললো। কিছুক্ষনের জন্য হলেও কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিল অথৈ। নীরব অথৈর দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আর ইউ অলরাইট?’

উওরে অথৈ চটজলদি নীরবের কাছ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে চোখের চশমাটা ঠিক করে বললো,

‘ হুম থ্যাংক ইউ।’

বলেই আর দু’মিনিট দেরি না করে চটজলদি বাস থেকে নেমে পড়লো সে। আর নীরব জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অথৈর দিকে হঠাৎই নীরবের মনে পড়লো তারও তো এখানেই নামতে হবে ভেবেই চটজলদি নেমে পড়লো সে।’….
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here