প্রেমানুরাগ পর্ব-১৬

0
716

প্রেমানুরাগ পর্ব-১৬
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথি

প্রিয়া অবাক হয়ে সানাফকে জিজ্ঞাসা করে,
–ভাইয়ু উনি এখানে কেন?

সানাফ জারিফের দিকে একবার তাকিয়ে প্রিয়ার দিকে ফিরে নরম কন্ঠে বলে,
–তোকে দেখতে এসেছে। কেমন লাগছে এখন?

পুলকিত হয় প্রিয়ার মন। এক অব্যক্ত ভালো লাগায় ছুঁয়ে যায় তার মন। প্রিয়া খুশি মনে বলে,
–ভালো লাগছে।

প্রিয়া উঠার চেষ্টা করে। সে নিজে সানাফের জন্য নুডুলস রান্না করবে। এই কয়দিনে সে কিছু সহজ ফাস্টফুড রান্না শিখে ফেলেছে। প্রিয়াকে উঠতে দেখে সানাফ প্রিয়ার হাত ধরে বলে,
–কি হয়েছে? উঠছিস কেনো? শুয়ে থাক।

প্রিয়া হাসি মুখে বলে,
–আমাদের বাসায় তোমার বন্ধু আজ প্রথম এসেছে তাকে আপ্যায়ন তো করতে হবে।

জারিফ এতোক্ষন প্রিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল। মেয়েটা এই অসুস্থ শরীরেও তার আপ্যায়নের জন্য উঠতে চাইছিল। আর মেয়েটাকে খুশি খুশি লাগছে।

“কারো খুশির কারন হতে পারাটা সৌভাগ্যের ব্যাপার।”

জারিফ এবার হাসি মুখে প্রিয়াকে বলে,
–আপনাকে ব্যাস্ত হতে হবে না। আপনি রেস্ট করুন।

প্রিয়ার হৃদমাজারে ঝংকার তোলে জারিফের বলা প্রতিটা শব্দ। ভালোবাসার মানুষটার সামান্য কেয়ার যেনো হৃদয় ছুঁয়ে যায় আবার সামান্য অবহেলা জন্ম দেয় পাহাড় সমান অভিমান।

সানাফ প্রিয়ার পড়ালেখার খোঁজ নিলো। তারপর প্রিয়ার মা ওদের জন্য কিছু ফল, কেক ও কফি নাস্তা খেতে দিয়ে বলে গেছে যেনো দুপুরে খেয়ে যায়। দুপুর ১টা তো বাজে। এসময় দুপুরের খাবার না খাইয়ে তিনি যেতে দিবেন না। জারিফ অনেকবার বলেছিল চলে যাবে কিন্তু প্রিয়ার মায়ের জোরে ও শেষ পর্যন্ত প্রিয়ার আকুতি ভরা আবদারে মানা করতে পারেনি।
জারিফ ছটফটে প্রিয়ার সাথে এখনকার প্রিয়াকে মেলাতে চাইছে। আগে জারিফের সাথে তিনবার যখন কথা হয়েছিল তখন নিজের দুষ্টমি দিয়ে হাসিয়েছিল প্রিয়া জারিফকে।

দুপুরের খাবারের পর সানাফরা চলে যাবার আগে জারিফ প্রিয়ার সাথে একা কিছু কথা বলতে চাইলে প্রিয়ার মা প্রথমে ইতস্তত করছিল পরে প্রিয়ম ও সানাফের আশ্বাসে কিছু বলেনি। জারিফ প্রিয়ার পাশে চেয়ার টেনে বসে বলে,

–নিজেকে হারিয়ে ফেলো না। তাহলে কাউকে পাশে পাবে না। আমাকে ভালোবাসো সেটা তোমার ইচ্ছে। আমি যেমন প্রেমাকে জোর করিনি আমাকে ভালোবাসার জন্য তুমিও আমার কাছ থেকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে থেকো না। যদি তোমার ভাগ্য আমার সাথে লিখা থাকে তবে সেটা জুড়বে। নিজেকে কষ্ট দিয়ো না। তোমার বাবা-মা, ভাইরা তোমাকে অনেক ভালোবাসে। সানাফ আমাকে বলেছিল এখানে আসলে নাকি আমি আমার উত্তর পাবো। কিন্তু আমার মনে হয় প্রতিটা সম্পর্কের একটা সহজ সমীকরণ ও সময় থাকে। আমি আপাতোতো নিজের জীবনে কাউকেই জড়াতে চাইনা। নিজেকে স্ট্রং করতে চাই। নিজেকে সময় দিতে চাই যাতে করে ভবিষ্যৎে কারো কস্টের কারন না হই। সামনে তোমার আমার পরিচয় হবে এক নতুন রূপে। টিচার-স্টুডেন্ট। সেটার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রেখো। তুমি তো আমার ডিপার্টমেন্টর। পড়ালেখাতে মনোযোগী হও।

জারিফ কথা গুলো বলে প্রিয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে যায়। প্রিয়া এতোক্ষন জারিফের দিকে শান্ত ভঙ্গিমায় চেয়ে ছিল। জারিফ যেহেতু সব ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছে তাহলে সেও তাই করবে। জারিফের শান্ত হয়ে কথা বলার ভঙ্গিমা প্রিয়ার অতি পছন্দ।

_________

দুই বন্ধু একসাথে দাড়িয়ে সিগেরেট খাচ্ছে। সানাফের সিগেরেটের প্রতি অতিরিক্ত নেশা নেই। তবে জারিফের ইদানীং হয়েছে। তো জারিফকে খেতে দেখে নিজেও জারিফের পকেট থেকে একটা সিগরেট নেয়। জারিফ তা দেখে ফিচলে কন্ঠে বলে,

–সিয়া কিন্তু সিগরেট পছন্দ করে না। তুই তো দুই বছর আগে একটা দুইটা সিগরেট খেতি সেগুলোও বাদ দিয়েছিস তোর লুকানো প্রেমিকা ওরফে আমার বোনের জন্য!

সানাফ নিজেও ফিচলে হেসে বলে,
–তোর বোকা বোনটার জন্য আমি অনেক কিছুই বাদ দিয়েছি। এখন তো বলছে বাইকটাও বাদ দিতে। আমার খারাপ লাগছে সিয়াকে রুডলি বলাতে। আসলে আমি যেমন এখন শুধু নিজের বোনদের দিকটা বেশি দেখছি সিয়াও নিজের ভাইয়ের দিকটা দেখেছে। তখন মৌয়ের অসহায় চাহনি আমার অনেক খারাপ লেগেছে। আর সিয়া বা আমরা আসলেই জানতাম না মৌ কাকে ভালোবাসে। আর একজন মেয়ে হিসেবে সিয়ার এটা ভাবা স্বাভাবিক যে মেয়েরা পছন্দ আছে বলে অনেক সময় বিয়ে পিছায় যদি পরিবার মেয়ের পছন্দে গুরুত্ব দেয় তাহলে।

জারিফ মলিন হেসে বলে,
–বাদ দে। সিয়ার অভিমান হয়নি ওর মনে অপরাধবোধ হচ্ছে বলে চুপ করে আছে। তুই ভালোবেসে বোঝালে সে বুঝবে। আর আমি! আমি আপাতোতো নিজের জীবনে কাউকে জড়াবো না। যে আমার ভাগ্যে থাকবে সে আমার জীবনে আমি না চাইলেও আসবে চাইলেও আসবে। আর প্রিয়াকে পড়ালেখাতে মনোযোগী হতে বলেছি। সামনে আমাদের সম্পর্কের সমীকরণ অন্য হতে চলেছে।

সানাফ মুচকি হাসে। তারপর দুজন দুজনের গন্তব্যে চলে যায়।

________
দেখতে দেখতে কেটে যায় এক সপ্তাহ। সানাফ ওর শ্বশুর-শাশুড়িকে বুঝিয়েছে সবটা। তারা বুঝেছেও। প্রিয়া এখন আগের মতো সবার সাথে কথা বলে। ভার্সিটি, ক্লাস, বন্ধু সব মিলে তার দিন কেটে যাচ্ছে। জারিফকে সে ভালোবাসে আগের মতোই। রাত কিভাবে কাটে সেটা তো তার নিস্তব্ধতা। জারিফ নিজের নতুন জবের প্রিপারেশন নিচ্ছে। নতুন সেমিস্টার শুরু হলেই সে জয়েন করবে।
জারিফ নিজেকে কাজে ব্যাস্ত রাখছে।

অনুরাগ আর দুইদিন পর বাংলাদেশে আসবে। মিডিয়ার থেকে লুকিয়ে তাকে বাংলাদেশে আসতে হবে। ডিরেক্টরের কাছ থেকে সপ্তাহ খানেকের ছুটি নিয়েছে। প্রেমাকে অনুরাগ বুঝিয়ে আবার আগের মতো করেছে। সবাই সব জানলেও প্রেমার বাবা এখনো অনুরাগের ব্যাপারটা জানে না। অনুরাগ প্রেমাকে আজকে ভিডিও কল করেছে পুরো দুইদিন পর। দুইদিন সে অতিরিক্ত কাজ করে পরের কাজ কিছুটা পুষিয়ে নিয়েছে। অনুরাগ ফিচলে কন্ঠে বলে,

–শোনো রাজরানী, তোমার হিটলার বাবাকে ভয় পাবা না একদম। তোমার বাবা যদি তোমাকে আমার কাছে আপোষে না দেয় তবে আমি আবার তোমাকে তুলে নিয়ে যাবো। এরপর একবারে তোমার বাবার নাতি-নাতনি সহ তার সামনে হাজির হবো আমরা। তখন দেখবো কিভাবে না মানে!

প্রেমা কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
–আমার বাবা মোটেও হিটলার না। সে একটু গম্ভীর তবে আমাকে খুব ভালোবাসে। কালকে আমাকে তার কাছে নিয়ে বসিয়ে বলেছে, সে বুঝতে পারেনি আমার অন্য পছন্দ থাকতে পারে। সে আমাকে জোর করবে না। আমার পছন্দের মানুষের সাথেই আমাকে মেনে নিবে। বাবা আমাদের আদর করে অনেক তবে সেটা প্রকাশ করেনা। আমার বাবা যদি তোমাকে না মানে তাহলে তুমি সিনেমার মতো বাবার পিছনে লেগে থাকবে তাকে মানাতে। নাহলে যে রাজরানীকে রাজ্যে নিতে পারবে না!

অনুরাগ চোখ ছোট ছোট করে বলে,
–খুব তো মুখে বুলি ফুটছে তোমার। একয়দিন তো শুধু কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়েছো। তোমার ভাই তো সব ঠিক করলো। ভাবছি তোমাদের ওখানে গিয়ে তোমার ভাইকে একটা টাইট হাগ দেবো।

প্রেমা হাই তুলতে তুলতে বলে,
–আচ্ছা দিয়ো। পারলে ভাইয়াকে কিসিও দিও। আই ডোন্ট মাইন্ড। ভাইয়ার বউ আছে। আর আমাকে এখন আমার তুলতুলে বিছানা ডাকছে।

অনুরাগ বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,
–খুব ভাব নেওয়া হচ্ছে তাই না! এখন তো আমাকে চিনোই না। যাও ঘুমাও তুমি। আমার মতো অভাগা আর কে? বউ যার দুঃখ বুঝে না!

প্রেমা ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
–এখানে আপনাকে কেউ এক্টিংয়ের জন্য নোভেল দিবেনা। তাই অভিনেতার রোল থেকে বের হয়ে শ্বশুরকে কেমনে মানাবেন সেটা ভাবেন। গুড নাইট।

প্রেমা কল কেটে দেয়। অনুরাগ চোখ ছোট ছোট করে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে বলে,
–যাহ! কেটে দিলো। বাবার আদর পেয়ে সে এখন উড়ছে। একবার শ্বশুরবাবা আমাকে মেনে নিক তারপর তোমার রাতের ঘুম হারাম করবো রাজরানী। জাস্ট এগারলি ওয়েটিং ফর দেট মোমেন্ট।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি করবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here