সুখের নেশায় পর্ব-৩৩

0
811

#সুখের_নেশায়
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৩৩

চৈত্রিকার চোখ ধাঁধিয়ে আসছে। পল্লব ঝাঁকিয়ে অভিভূত দৃষ্টি মেলে ধরে সামনের দিক। সুন্দর মানুষ শুভ্র রং পরিধান করলে ঠিক কেমন লাগে তার ব্যাখা দেওয়ার ক্ষমতা নেই চৈত্রিকার। মানস্পটে বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত শব্দের অভাব। বড্ড অভাব। সাফারাতের গায়ে জড়ানো শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি দেখে ওর হিচকি উঠছে রীতিমতো। সিনথিয়া পানির গ্লাস নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরল। একটুখানি পান করে পুনরায় সাফারাত এর দিক দৃষ্টি জ্ঞাপন করল চৈত্রিকা। সঙ্গে সঙ্গে শুনতে পায় পুরুষালি গম্ভীর, ব্যগ্র স্বর।

‘ আপনি ঠিক আছেন চৈত্র? ‘

অভ্যন্তরের রণঢাকের আওয়াজে চৈত্রিকা নিজেই অতিষ্ট,বিরক্ত। সমস্ত বক্ষস্থল জুড়ে নিদারুণ কম্পন। শরীরের প্রত্যেক ভাঁজে শিহরণ। চোখ দুটো বেহায়ার ন্যায় কেবল সাফারাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কন্ঠনালি জড়িয়ে আসছে। উফ!এই পরিপক্ব বয়সে এসে কোনো পুরুষের ধারালো রূপে কপোকাত হওয়ার ব্যাপারটা চৈত্রিকার দম বন্ধ করে দিচ্ছে। নিজেকে কিশোরী বয়সের, আবেগি সেই চৈত্রিকার সাথে মিলিয়ে, গুলিয়ে ফেলছে ও। ব্লাশ দেওয়া কপোল দু’টো লজ্জায় দ্বিগুণ লাল বর্ণে ছেয়ে গেল। মাথা নাড়িয়ে জানালো ঠিক আছে। তবে সাফারাত ভ্রুঁ উঁচিয়ে এক দৃষ্টিতে অপলক চেয়ে আছে। যা দেখে থতমত খেয়ে যাওয়ার অবস্থা চৈত্রিকার। দ্রুতপদে চক্ষুদ্বয় নামিয়ে মেঝেতে নিবদ্ধ করে ও।
সাফারাত একটা প্লাস্টিকের চেয়ার টেনে একদম সমুখ বরাবর এবং নিকটে বসে। নত মস্তকে ঝুঁকে থাকা চৈত্রিকার দিকে চাইতেই অধর কার্নিশ ক্ষীণ বাঁকা হয় তার। সিনথিয়া হাত নেড়ে বলে,

‘ কি জামাই সাহেব? আমার ছেলে কোথায়?’

সাফারাত চৈত্রিকার দিকে নজর রেখেই রাশি ভারী কন্ঠে প্রতুত্তরে জানায়,

‘ এক নম্বর পেয়েছে তোমার ছেলের আসার সাথে সাথেই। আয়ান নিচে নিয়ে গেল। আসছে বোধ হয়। ‘

‘ তুমি মামা হয়ে আমার ছেলেটা কে এক নাম্বার করিয়ে আনতে পারলে না?কষ্ট করে আবার আমার জামাই টাকে পাঠালে। বউ দেখার এতো তাড়া? আমরা কি তোমার বউ গিলে খেয়ে ফেলব?’

‘ উনাকে গিলে তোমরা হজম করতে পারবে না। কারণ উনাকে হজম করার ক্ষমতা শুধু আমার। অযথা শক্তি ব্যয় করবে না আমি জানি। ‘

সাফারাতের কথা শুনে হাসির রোল ছড়িয়ে পড়ে পুরো ছাঁদে। চৈত্রিকা ভীষণ অবাক হয়। সময়ের সাথে সিনথিয়া ও সাফারাত এর সম্পর্ক কি সুন্দর একটা রূপ নিয়েছে!দু’জন যেন ভাই-বোন। এত সুন্দর খুনসুটি দু’জনের মাঝে। তন্মধ্যে বিল্ডিংয়ের প্রায় সকল ভাড়াটিয়া হাজির হয়েছে অনুষ্ঠানে। মিম কে দিয়ে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সাফারাত। সে চায় না চৈত্রিকার এই রাত টা পানসে কাটুক। উপস্থিত সকলেই সাফারাত এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কিছু কিছু মেয়ে তো ফিসফিস করছে সাফারাতের লুক নিয়ে। তার মধ্যে পাশ থেকে একটা মেয়েলি মিষ্ট স্বর কর্ণপাত হয় চৈত্রিকার।

‘ চৈত্র আপুর ভাগ্য টা অনেক ভালো। নয়ত আমরা কেন এতো সুন্দর বড়লোক ছেলে পাই না?ইশ!আমাদের হাসবেন্ড যেন এমন সুদর্শন হয়। চোখ সরানো দায় হয়ে পড়ছে। ‘

চৈত্রিকার স্পৃহা,অভিলাষ জাগে মেয়েটার মুখে মেহেদী লেপে দিতে। কাউকে নিজের সুখের ভাটা হতে দিবে না ও। সারাজীবন দুঃখে জর্জরিত হয়ে যাওয়া মানুষ যদি একটুখানি সুখের নাগাল পায় তবে চেষ্টা করে নিজের প্রাণপণ দিয়ে সেই সুখ টুকু আগলে রাখার। চৈত্রিকাও তার ঊর্ধ্বে বা নিম্নে নয়। একদমই তেমন।

মিম হলুদের ঢালা নিয়ে মাঝ সিঁড়িতেই পা রাখতেই হুট করে সামনে দিহান এসে হাজির হয়৷ অকস্মাৎ এহেন কান্ডে মিম ভড়কে যায়। দেহের তাল সামলাতে ব্যর্থ হয়ে পশ্চাতে পড়ে যেতে উদ্যত হওয়া মাত্র হাত টা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে দিহান। নিজের বুকে টেনে এনে শক্ত করে চেপে ধরল। ও নিজেই প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। মিম বুকে মাথা রেখে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে থাকে অনবরত। পাঞ্জাবি খামচে ধরে তিরিক্ষি মেজাজে বলে উঠল,

‘ কি করছিলেন আপনি?এখনই পড়ে ম’রে যেতাম আমি। ‘

দিহান মিমের রোষপূর্ণ কন্ঠ শুনে ফুৃস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল।

‘ ভুল হয়ে গেল মিম-ডিম। তবে ভুল করেও লাভ হলো। আহ কি শান্তি! ‘

দিহানের কথার মানে বুঝতে পেরে চট করে বুক থেকে সরে এলো মিম। কিন্তু সরে আসার পূর্বে ও এক কান্ড করে বসলো। শক্তি প্রয়োগ করে দুম করে কিল বসিয়ে দিল দিহানের বুক বরাবর। ব্যাথায় ককিয়ে উঠল দিহান। চোখ কটমট করে তাকালো ওর দিকে। কিন্তু পাত্তা পেল না। উল্টো মিমের ক্রোধান্বিত দৃষ্টি সিঁড়ি তে ছিটকে পড়ে থাকা হলুদের ঢালার পানে। দিহান সেদিকে নয়ন জোড়া রেখে বলে,

‘ আমি আবার আনিয়ে দিব। রেগে যেও না প্লিজ। ‘

‘ আপনি আমাকে ভীষণ জ্বালান। সবসময় জ্বালান। যেদিন থেকে জীবনে এসেছেন জ্বালিয়ে ছাড়খাড় করে ফেলছেন জীবনটা। ‘

রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে কঠিন বাক্যগুলো আওড়ালো মিম। দিহান তা আমলে না নিয়ে এক হাত চেপে ধরে সাইডে নিয়ে এলো। নিচে হাঁটু গেড়ে বসে বলে উঠল,

‘ পা টা দাও তো। ‘

মিম ভ্রুঁ কুটি করে তাকালো। কপালে ভাজ পড়ল ওর। শঙ্কিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
‘ কেন?’
‘ ভেঙ্গে দিব তাই। ‘
‘ কি আপনি আমার পা ভেঙে দিবেন?’–কিছুটা উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠে মিম। দিহান পা ধরে নিজের উরুতে রেখে বললো,
‘ হুম। তারপর সারাদিন রাত শুধু আমার কোলেই থাকবে। ‘

মিমের শ্বাস ভারী হয়ে আসতে শুরু করলো হঠাৎ, আকস্মিক। আমতা আমতা করে বলে উঠল,
‘ কি করছেন?’
দিহান তৎক্ষনাৎ জবাব দিল না। মুখ তুলেও চাইল না। পকেট থেকে একটা পায়েল বের করে হাতে নিল। অতঃপর লেহেঙ্গা টা একটুখানি উপরে উঠিয়ে পড়িয়ে দেয় পায়ে। তারপর মৃদু হেসে বলে উঠল,
‘ তোমাকে সারাক্ষণ জ্বালাতন করার জন্য হৃদয়ে পৌঁছার রাস্তা ক্লিয়ার করছি। ‘

মিম ঝটপট পা সরিয়ে আনল। বয়সে মোটামুটি ছোট হলেও অবুঝ নয় ও। দিহানের কথার ধাঁচ এবং মানে বুঝতে সময় লাগল না। বরং হৃদয় স্পর্শ করলো তা। এক পশলা বৃষ্টি হয়ে বক্ষে বিঁধে বাক্যটা তীব্রভাবে। শিরশির করে উঠে দেহখানি। পালানোর তাগিদে বড় বড় পা ফেলে দ্রুত বেগে প্রস্থান করে দিহান কে ফেলে রেখে। দিহান প্রথমত বিস্ময়াহত হয়। পরক্ষণেই নিজেও ছুটে চলে মিমের পিছু পিছু।

চৈত্রিকার মেহেদী দেওয়া প্রায় শেষের পথে। প্রিয়ন্তী, দিহান আজকের ফটোগ্রাফার। ইচ্ছেমতো পিক তুলছে দু’জন। মেহেদী দেওয়া শেষ হলে সাফারাত চৈত্রিকার পাশে এসে দাঁড়ায়। মেয়ে দু’টো নিজের জায়গা ছেড়ে দেয়। চৈত্রিকাকে উঠতে সাহায্য করে মিম। সাফারাতের পাশে দাঁড়ায় ও। আলতো করে কোমর জরিয়ে কাছে টেনে নেয় সাফারাত। দিহান সঙ্গে সঙ্গে একটা পিক ক্লিক করে। চৈত্রিকা কেবল থ হয়ে রইল সাফারাতের মুখের দিকে তাকিয়ে। পাঞ্জাবি আঁকড়ে ধরতে নিলে সাফারাত কড়া সুরে বলে উঠল,

‘ আপনার মেহেদী লেপ্টে যাবে চৈত্র। বি কেয়ার ফুল। ‘

চৈত্রিকা লাজুক হাসে। সাফারাতের দিকে চেয়ে থাকে অনিমেষ নেত্রে। দৃষ্টি অপলক,নির্নিমেষ। হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলে দৌড়ে এসে কোমর ঝাপটে ধরে ওর। আকস্মিকতায় পড়ে যেতে নিলে সাফারাত সামলে নেয়। তবে চৈত্রিকার মনে হলো ওর পায়ের নিচের ভূতল কেঁপে উঠেছে। মাথা টা ঝিমঝিম করছে। বিদেশি বাচ্চাদের মতো অত্যাধিক ফর্সা, কিউট একটা ছেলে। চুলগুলো একদম আয়ানের মতোন ব্রাউন কালার। বাচ্চা টার মায়াবী চেহারা দেখে হতভম্ব নয় চৈত্রিকা। বরং নিজের সাথে ঘটে যাওয়া এতোদিনের ঘটনার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই বাচ্চা ছেলে টা। চৈত্রিকার এতোকালের গোলকধাঁধা যেন হুট করেই সলভ হয়ে গেল। চক্ষু বড় বড় করে তাকালো ও সাফারাতের দিক। সাফারাত ওর সেই দৃষ্টি এড়িয়ে সিনথিয়ার ছেলে আয়মান কে কাছে টেনে আনে। ছেলেটা দাঁত দেখিয়ে মিষ্টি হাসে। চৈত্রিকার বিস্ময়ে ভরা চেহারায় নজর রেখে বললো,

‘ মামি মণি ইউ লুকস সো প্রিটি। ‘

সিনথিয়া পাশ থেকে বললো–‘ আমার ছেলে চৈত্র। জানি এটা তোদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। ‘

চৈত্রিকা স্মিত হাসল। সত্যিই আয়মানের সাথে ওর দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। গায়ে জড়ানো জারবেরা,প্রতিদিন কারো জারবেরা দেওয়া, টিউশন হতে ফেরার সময় একটা বাচ্চা ছেলের অর্থাৎ আয়মানের মামী মণি ডেকে জারবেরা দেওয়া, বাবার অপারেশন এর টাকা,রাস্তায় পানি ও ভর্তা দেওয়া সবকিছু একটা মানুষ এর কাজ। এই মানুষ নাকি আবার প্রতি/শোধ নিতে এসেছিল। অথচ আড়ালে উজার করে ভালোবাসতে নিজেকে আটকাতে পারে নি। চৈত্রিকার ইচ্ছে করছে মানুষটার বুকে মাথা ঠেকিয়ে বলতে এতো ভালো না বাসলেও পারতেন সাফারাত। এতো সুখের নেশায় আমায় উম্মাদ করার প্রয়োজন কি খুব বেশি ছিল?আমি আপনার নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছি আজ নতুন করে। নতুন করে আপনার কাছে ছুটে যাওয়ার উদ্দীপনা খুঁজে পাচ্ছি ভালোবাসার টানে,সুখের নেশায়।
____________________

এসির ঠান্ডায় সাদা ধবধবে নরম ও তুলতুলে বিছানায় জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে চৈত্রিকা। খানিক সময় আগেই প্রিয়ন্তী,সিনথিয়া রুমে দিয়ে গেল ওকে। ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে পুরো কক্ষ। আবার বারান্দা হতে ধেয়ে আসা দখিনা অনিলে রুমের পর্দাগুলো উড়ছে এলোমেলো, অবিন্যস্তভাবে। গায়ে লাল খয়েরী বেনারসি জড়িয়ে চুপচাপ অপেক্ষার প্রহর গুণছে চৈত্রিকা সাফারাত এর। অন্য বেলায় তো এই লোকের অনেক তাড়া থাকে কাছাকাছি আসার অথচ আজ এক ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করাচ্ছে ওকে। বসে থাকার দরুন পা দুটো ব্যাথা করছে ক্ষীণ। শাড়ি সামলে চৈত্রিকা বিছানা ছাড়ে। একটু হাঁটলে ভালো লাগবে তা ভেবে। কিন্তু যার জন্য এতক্ষণ বসে বসে প্রতীক্ষা করলো সেই লোক চৈত্রিকা দাঁড়ানো মাত্র দরজা খুলে হাজির। চৈত্রিকার অন্তস্থল ধ্বক করে উঠল। শরীরের রক্ত হিম হয়ে এলো।

সাফারাত এক নজর চেয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। গাঢ় সেই দৃষ্টিতে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে গেল চৈত্রিকা। ওর কি করা উচিত?দাঁড়িয়ে থাকা নাকি বসে পড়া?বউরা তো বাসর ঘরে বসেই থাকে তাই না?নাকি দাঁড়িয়েও থাকে?ওর মতো এমন করে কি এই সময়টা তে সকল বউ মানুষ কনফিউজড হয়?সাফারাত যত এগিয়ে আসছে চৈত্রিকার বুকের অশনী,দুরুদুরু ততই বেড়ে চলেছে। ছাব্বিশ বছরের জীবনে এমন ফিলিংসটা খুবই ভয়ংকর মনে হচ্ছে চৈত্রিকার। শক্ত, কঠোর,পরিবার সামলানো মেয়েটা আজ একজন পুরুষের উপস্থিতিতে কেমন নেতিয়ে পড়ছে। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে পড়ছে।

সাফারাত মাঝে দূরত্ব রেখে থেমে গেল। চৈত্রিকার পা হতে মাথা অব্দি নিজের ঈগল চোখের সূক্ষ্মতা নিয়ে সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণ করলো সে। চেহারার গম্ভীরতা সরে গিয়ে ঠোঁটে দুর্বোধ্য হাসি ফুটে উঠে তার। নরম গলায় প্রশ্ন করে,

‘ পানি খাবেন?’

চৈত্রিকা স্তম্ভিত হয়ে যায়। মাথা নেড়ে সায় জানায়। ওর ভীষণ পিপাসা পেয়েছে। সাফারাত এক গ্লাস পানি দিতেই ও বিছানায় বসে রুদ্ধশ্বাসে পান করে পুরো গ্লাসের জল। সাফারাত আলতো করে একহাতে নিজের শক্তপোক্ত হাত ডুবিয়ে দিল। কাছে এগিয়ে গিয়ে দীর্ঘ এক চুম্বন আঁকে চৈত্রিকার কপালে। চক্ষুদ্বয় বুঁজে আসে চৈত্রিকার। গাল ছুঁয়ে গড়িয়ে যায় অশ্রুকণা। এই কান্নার মানে টা ভিন্ন। খুবই ভিন্ন। সাফারাত নাকের ডগায়ও ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। চৈত্রিকার গায়ের ভারী গহনাগুলো অতি সন্তর্পণে খুলে একপাশে রাখে সে। চৈত্রিকা নিজেকে ধাতস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তবুও বারংবার লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছে সে।

‘ বলেছিলাম চৈত্র আপনি আমার কাছাকাছি এলে একদম তুলে নিয়ে আসব আপনাকে। আজ সত্যি সত্যি নিয়ে এলাম। ‘

চৈত্রিকা বুঝতে পারল সাফারাত সেই রাতের কথা বলছে। বর্ষণমুখর সেই রাতে আবেগের বশে সাফারাত এর কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকেছিল ও। চৈত্রিকার তরফ হতে সেটাই ছিল সাফারাতের কাছাকাছি যাওয়া প্রথমবার। সাফারাত এর তেজী স্বরে চৈত্রিকা অল্পসল্প নড়েচড়ে উঠে। সাফারাত হাত টা শক্ত করে মুষ্টিমেয় করে কাছে টেনে নিল ওকে। চৈত্রিকার এক হাত গিয়ে ঠেকে তার বুকে। প্রগাঢ় দৃষ্টি দু’জনের। একে অপরের তপ্ত নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে মুখশ্রীতে। অভ্যন্তরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। উত্তাল পাতাল গর্জে উঠছে অনুভূতিরা।

সাফারাত কোলে তুলে নিলো চৈত্রিকাকে। বিছানার মাঝখানে বসিয়ে দিয়ে ড্রয়ার থেকে একটা কাগজ এবং হাতে একটা চেক নিয়ে এলো। চৈত্রিকার দিকে বাড়িয়ে দিতেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো ও।

‘ চেকের মাধ্যমে আপনার কাবিন নামার টাকা পরিশোধ করে দিলাম। এবং এটা এই বাড়ির দলিল। এখন থেকে আমার মায়ের বাড়িটা আপনার চৈত্র। ‘

ক্ষণিকের জন্য স্তব্ধতা চৈত্রিকা কে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিল। পরমুহূর্তেই দ্রুতবেগে বলে উঠল,

‘ কি বলছেন আপনি?’
‘ আমার জীবনে থাকা টা আপনার জন্য মোটেও সহজ নয়। চাঁদ যেমন সুন্দর তেমনি তার গায়ে কলঙ্ক আছে। এই বাড়ির সৌন্দর্যের মাঝেও বিষাক্ত কিছু মানুষ ছড়িয়ে আছে। যারা আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে চৈত্র। আপনি বাড়ির ওনার মানে আপনি সেফ। আপনাকে আমি আমার জীবনে জড়াতে চাই নি। আবার না জড়িয়েও থাকতে পারি নি। আমি জানি আপনি অবাক হচ্ছেন তবে আমি চাই আমার থেকে উপহার হিসেবে আপনি এটা গ্রহণ করুন। ‘

কাঁপা কাঁপা হাতে দলিল টা হাতে নেয় চৈত্রিকা। সাফারাত লহু স্বরে বলে উঠল,

‘ ভয় পাচ্ছেন?’
‘ আপনার কথায়। ‘
‘ রিলেক্স। শেষ নিঃশ্বাস অব্দি আপনার ঢালস্বরূপ আমায় পাবেন। ‘

বিনিময়ে চৈত্রিকা মৃদু হাসলো। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায় সাফারাত চৈত্রিকার হাসি মাখা চেহারায়। হাত বাড়িয়ে বেড সাইডের পাশে অবস্থিত ল্যাম্পশেড অফ করে দিল। চৈত্রিকা চমকে গিয়ে বিছানার চাদর খামচে ধরে। রুমের ড্রিম লাইটের আলোয় ওর কম্পনরত ঠোঁট দেখে বেসামাল হয়ে পড়ে সাফারাত। নিজেকে আটকাতে ব্যর্থ হয় সে। নিজের শুষ্ক ওষ্ঠজোড়া দিয়ে নরম অধর দু’টো গভীরভাবে আঁকড়ে ধরে সাফারাত। ঘাড়ের নিচে হাত গলিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল চৈত্রিকাকে। চৈত্রিকা অনুভব করতে থাকে গাঢ় এই অনুভূতি। সাফারাতের নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়া ওর হৃদয়ের গতি নিয়ন্ত্রণ হারা করে চলেছে। বড় বড় শ্বাস ফেলতেই গলায় ছোট ছোট উষ্ম পরশ অনুভব হয়। মুহুর্তেই ঠোঁটের স্পর্শ অধিকতর প্রবল ও গাঢ় হতে শুরু করে। চৈত্রিকা সাফারাত কে ঝাপটে ধরলো। শক্ত করে আলিঙ্গনে বাঁধার প্রয়াস চালালো। বাঁকা হাসল সাফারাত। চৈত্রিকাকে শুয়ে দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে অধর ছুঁয়ে দিল। ফিচেল স্বরে বললো,

‘ চৈত্র মাসের রুক্ষ শুষ্ক জীবনে আজ হতে অহর্নিশি বর্ষণ হয়ে ঝড়ব আমি। বর্ষণের তান্ডব সামলাতে রাজি তো আপনি চৈত্র মাস? ‘

#চলবে,,,!

( অনেকেই দেখি #সাফারাত কে সারাফাত পড়েন। 🤧 আজকে সবাই পাঁচ বার করে সাফারাত উচ্চারণ করবেন। তাহলে আর নামটা কোনোদিনও ভুলবেন না। 😁 মজা করছি। কেউ আবার রাগ করিয়েন না। কেমন আছেন সবাই?মানুষ মাত্রই তো ভুল। সবাই আমার গল্পের ভুল-ভ্রান্তি, ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here