#গ্রামের_ছেলেটি
পর্ব- ৩
ডাক্তার মাকে দেখে বললেন…
ডাক্তারঃ দেখুন এনার সমস্যা কারন হলো নিয়মিত না খেয়ে থাকার জন্য হয়েছে। আর চিন্তা করে বেশি তাই।
আমিঃ কি বলছেন… (আমি একটু অবাক হয়ে বললাম।)
ডাক্তারঃ হ্যা.. আমি ওষুধ লিখেছি নিয়মিত খাওয়াবেন। আর ঠিকমতো খাবার খেলে ঠিক হয়ে যাবে। আর চিন্তা যত কম করবে ততই তার জন্য উপকার হবে।
আমিঃ হুম ঠিক আছে ডাক্তার সাহেব।
তারপর মায়ের জন্য ঔষধপত্র কিনে নিয়ে বাড়িতে চলে গেলাম মাকে নিয়ে।বাড়িতে এসে ছোট বোন কে জিজ্ঞেস করলাম……
আমিঃ এই সুমা তুই কি করিস মা যে খাবার না খেয়ে থাকে তা তুই দেখস না।
সুমাঃ আমি কি করব..ভাইয়া মাকে অনেক বার বলেছিলাম কিন্তু আমার কথা শুনে কে।
আমিঃ আমাকে তো বলতে পারতি নাকি।
সুমাঃ আমি তোমাকে অনেক বার বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু মা কিছুতেই আমাকে বলতে দিত না। এমন কি এইযে অসুস্থ হয়েছে তাও বলতে মানা করেছিল। যদি তুমি আবার চিন্তা করো তাই আমাকে কখনোই ঠিকমতো কথা বলতে দিতনা।
আমিঃ (আমি চুপ হয়ে গেলাম কিছু বললাম না)
মায়ের কাছে গিয়ে বসি। কিছু ক্ষন পরে রাকিবের ফোন এলো…
আমিঃ হ্যালো…
রাকিবঃ কিরে আন্টির কি অবস্থা এখন।
আমিঃ এইতো ডাক্তার দেখিয়ে আসলাম।
রাকিবঃ তা ডাক্তার কি বলল? আন্টির কি হয়েছে তাকিছু বলছে।
আমিঃ হুম…বলছে,না সারাদিন না খেয়ে থাকায় আর চিন্তার করার জন্য এইসব হয়েছে। ডাক্তার বলছে ঠিকমতো খাবার খেলে ঠিক হয়ে যাবে।
রাকিবঃ তাহলে খাবার খাইয়ে দিছোত এখন?
আমিঃ না এখন খাওয়াব।
রাকিবঃ আচ্ছা তাহলে তুই আন্টিকে খাওয়া। পরে কথা হবে রাখি।
রাকিব ফোন রেখে দিল আমি সুমাকে ডাক দিয়ে খাবার নিয়ে আসতে বললাম…
আমি মায়ের কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি মা ঘুমাচ্ছেন আমি মাকে আসতে করে ডাক দিয়ে উঠালাম।
সুমা খাবার নিয়ে এসেছে। আমি মাকে আসতে করে বসিয়ে দিলাম। তারপর আমি ভাত মাখিয়ে মায়ের মুখের সামনে ধরলাম। আমি মায়ের মুখে ভাত দিতে মা খাবার খাচ্ছে আর চোখ বেয়ে পানি পরছে। আমি বুঝতে পারছি মা কি কারণে কান্না করছে।
আমি মাকে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে ঘুমাতে দিয়ে আসি।
পরেরদিন মা একটু সুস্থ হয়ে উঠে। তাই মায়ের কাছে গিয়ে বসলাম। বসে কিছু কথা বললাম…
আমিঃ দেখ মা বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এখন যদি তুমি ও আমাদের ছেড়ে চলে যাও তাহলে আমার সুমার কি হবে।(কাদতে কাদতে বললাম মায়ের হাত ধরে)
মাঃ কিরে পাগল কাদছিস কেন? আমি কি বলছি তোদের ছেড়ে চলে যাব।
আমিঃ তাহলে তুমি ঠিকমতো খাবার খাওনা কেন।
মাঃ কি করব বল। তুই কি করিস কি খাছ কিছুই যানিলা। এভাবে কি করে আমার মুখে ভাত যায় ক।
আমিঃ তুমি কোন চিন্তা করনা তো আমি অনেক ভালো আছে। একটা জব পাছি। তুমি কোন চিন্তা করবেনা।
মাকে আমার সত্যি কথা বলা যাবেনা তাহলে মা আবার ভেঙে পরবে।
মাঃ আগে তো তোর বাপ ছিল তাই তোর কোন চাপ ছিলনা। নিজের পড়াশোনা করতি আবার কিছু বাড়িতে পাঠাতি। কিন্তু এখন তো সব চাপ তোর উপর বাবা।
আমিঃ দেখও মা তুমি আমার কোন চিন্তাই করও না আমি ভালোই থাকি ঢাকায়। আর আমার পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকরি খুজে তোমাকে আর সুমাকে নিয়ে যাব আমার কাছে।
মাঃ দেখ বাবা আমি এতকিছু বুঝিনা তুই ভালো ঠাকলেই হবে আমার আর কিছু লাগবে না।
আমি আর কিছু বললাম না। মা মানেই মমতায় আঁচলের ছায়ায় ঘেরা। সন্তান যেখানেই থাকুক মা তার জন্য চিন্তা করে। মায়ের ভালোবাসায় কোন সার্থ থাকে না।(যেখানে এই মাকেই নতুন কারো ভালোবাসা নামে নাটকের জন্য অবহেলা করি)কিছু ক্ষন পরে সুমা মায়ের জন্য খাবার নিয়ে আসল।
আমি মাকে নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দিলাম তারপর ওষুধ খাইয়ে দিলাম।
তারপর আমি আর সুমা খাবার খেয়ে নিলাম। খেয়ে একটু আমাদের গ্রাম ঘুতে বেরিয়ে পরলাম।
রাকিবকে ফোন করলাম।
রাকিবঃ হ্যালো..
আমিঃ কেমন আছিস…?
রাকিবঃ ভালো আছি। তুই কেমন আছিস।
আমিঃ ভালো বন্ধু, তুই যা উপকারটা করলি বন্ধু।
রাকিবঃ আরে আমি না তোর বন্ধু আর বন্ধু যদি বন্ধুর বিপদে না এগিয়ে আসে তবে কে আসবে বল। আচ্ছা বাদ দে আন্টি কেমন আছে সেটা বলত এখন।
আমিঃ মা এখন কিছুটা সুস্থ আছে।
রাকিবঃ ওহ আচ্ছা। তুই তাহলে কবে আসবি ঢাকায়?
আমিঃ দেখি যদি মায়ের কাছে গিয়ে যদি মায়ের আর কোন সমস্যা না হয় তো তাহলে কালকেই চলে আসব।
রাকিবঃ ওকে ঠিক আছে। ভালো থাকিস রাখি।
আমিঃ ওকে…
আমি কিছু ক্ষন ঘুরেফিরে বাড়ির দিকে চলে আসি। দুপুরে মাকে জিজ্ঞেস করলাম…..
আমিঃ মা তুমি কেমন আছো? খারাপ লাগছে নাকি?
মাঃ নাহ বাবা আমি এখন আগের থেকে অনেক ভালো আছি।
আমিঃ ও তাহলে আজকে তোমার গোসল করতে হবে না আমি পানি এনে তোমার হাত পা মুছে দিচ্ছি।
এই বলে আমি পানি এনে মায়ের কাছে নিয়েগেলাম। তারপর মায়েকে ঠিক মত করে পানি দিয়ে শরির মুছে দিলাম।
রাতে মায়ের কাছে গিয়ে বললাম যে কালকে আমাকে ঢাকায় যেতে হবে। মা বলল আর কিছু দিন থাকতে কিন্তু আমি থাকিনি। কারণ আমাকে তো আমার কর্তব্য পালন করতে হবে। মা কখনোই চায়না তার সন্তান তার কাছ থেকে দূরে থাকুক। তবু্ও কি করার যেতে হবে।
পরের দিন গ্রামে থেকে আবার ঢাকায় চলে আসি।।।।
চলবে…….
স্বপন…( XA Sawpon)