#পবিত্র ভালোবাসার বন্ধন
(৪ ও শেষ পর্ব)
লেখক – আবির চৌধুরী
নীলা আর তার শ্বাশুড়ি অপারেশন রুমের দিকে এগিয়ে গেল।ওখানে গিয়ে রাবেয়া বেগম চিৎকার দিয়ে কান্না শুরু করে দিল। নিশানের বন্ধুরা সবাই রাবেয়া বেগমের দিকে এগিয়ে এসে সান্ত্বনা দিতে থাকল।
— আন্টি চিন্তা করবেন না কিছু হবেনা নিশান ঠিক হয়ে যাবে।
রাবেয়া বেগম কারো কথা কানে না নিয়ে কান্না করেই যাচ্ছে। এবার নীলা নিশানের বন্ধুদের কাছে জিগ্যেস করলো,
— কি ভাবে হলো এসব?
তারপর মারুফ নীলা কে সব কিছুই খুলে বলল।
মারুফ — ভাবি নিশানের অপারেশন চলছে কিছুক্ষণের মধ্যে অপারেশন শেষ হয়ে যাবে চিন্তা করবেন না।
এবার নীলা গিয়ে রাবেয়া বেগমকে নিয়ে একটা বেঞ্চের উপর বসল। কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার বের হয়ে এলো।
ডাক্তার — রোগীর বাড়ির লোক কে আছে?
ডাক্তারের কথা শুনে নীলা তাড়াতাড়ি করে ডাক্তারের সামনে চলে এলো।
–জ্বী ডাক্তার আমরা রোগীর বাড়ির লোক উনি এখন কেমন আছেন?
— আপনি কে হোন রোগীর?
— জ্বী আমি অনার স্ত্রী।
— ওহ তা হলে ঠিক আছে। উনি এখন সম্পন্ন বিপদ মুক্ত আছেন। মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে এখন কোমায় আছে তবে এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেয় কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। আর আমি একটা নার্স দিয়ে দেবো যে সব সময় রোগীর খেয়াল রাখবে।
— ডাক্তার নার্সের কোনো প্রয়োজন নেই আমি সব সময় ওনার পাসে থাকব।
নীলার কথা শুনে নিশানের সব বন্ধুরা অবাক হয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ডাক্তার কথাটা শুনে একটু খুশি হলেন। কারণ এসব রোগীদের জন্য পরিবারের লোকেরাই ভালো।
ডাক্তার — তা হলে ভালোই হয়। ভালো করে রোগীর সেবা যত্ন করলে রোগী খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।
— আমারা কি এখন ওনার সাথে দেখা করতে পারি?
— নাহ, এখন পারবেনা। কিছুক্ষণ পরে রোগীকে কেবিনে শিপ্ট করা হবে তখন দেখা করতে পারবেন। আর হে রোগীর সামনে বেশি কান্না কাটি করা যাবে না ওকে?
— ঠিক আছে ডাক্তার ধন্যবাদ।
তারপর ডাক্তার আর কিছু না বলে চলে গেলো। নীলা রাবেয়া বেগমের দিকে এগিয়ে গেল।রাবেয়া বেগম এখনও কান্না করেই যাচ্ছে।
— মা আপনি এখনও কান্না করছেন কেন? উনি ঠিক হয়ে যাবে ডাক্তার বলছে। তেমন কিছুই হয়নি।
— আমি আমার ছেলের সাথে দেখা করতে চাই। আমার ছেলেটা না জানি কতটা কষ্ট পাচ্ছে।
— মা আপনি এইভাবে কান্না করবেন না। একটু পরেই আমরা দেখা করতে যাবো।
নীলা কোনো রকম ভাবে রাবেয়া বেগমকে শান্ত রাখলেন। তার কিছুক্ষণ পরে একজন নার্স এসে বলল রোগীর সাথে দেখা করা যাবে।
এবার নীলা রাবেয়া বেগম কে নিয়ে নিশানের কেবিনে ঢুকে গেল। রাবেয়া বেগম নিশানের কেবিনে ঢুকে হাও মাও করে কান্না শুরু করে দিল।
— মা ডাক্তার বলছে ওনার সামনে যেনো এই ভাবে কান্না না করেন।এতে ওনার ক্ষতি হতে পারে৷
নিশান এখনও কোমায় আছে তার কোনো খবর নেই। তারপর রাবেয়া বেগম নিশানের কপালে একটা চুমু দিল। আর মাথায় হাত ভুলিয়ে দিল।
নীলা নিশানের সব রকম খেয়াল রাখতে শুরু করে দিল। না ঘুমিয়ে সারারাত নিশানের পাসে বসে থাকত। এই ভাবে কেটে গেলো ১০ দিন নিশান এখন আগের থেকে মোটামুটি একটু সুস্থ আছে। নিশান কে দেখার জন্য প্রায় সময় তার বন্ধুরা এসে আবার চলে যেত। যাবেয়া বেগম খাবার নিয়ে আসতেন। এগারো দিনের মাথায় ডাক্তার নিশান কে দেখতে এলো। ডাক্তার নিশানের পরিবর্তন দেখে খুব খুশি হয়ে গেলো।
— নিশান আপনি তো খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এই ধরনের রোগী এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়না আপনি খুব লাকি এমন একটা স্ত্রী ফেলেন যে সারাক্ষণ আপনার পাসেই ছিল।
এবার নিশান নীলার দিকে তাকাল। নীলা কিছুই বলল না চুপ হয়ে রইল।
— এবার ওনাকে নিয়ে বাসায় চলে যেতে পারেন কোনো সমস্যা নেই।
— আরো দুই দিন পরে নিশানকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হলো।
বাসায় নিয়ে নীলা আরো ভালো ভাবে নিশানের খেয়াল রাখা শুরু করে দিল। নীলার এমন সেবাযত্ন দেখে নিশানের মনে নীলার জন্য ভালোবাসার সৃষ্টি হতে লাগলো।
নিশান রুমের ভিতরে শুয়ে আছে। যে নিজে নিজে উঠার চেষ্টা করক কিন্তু কোনো ভাবেই সে পারছেনা। হঠাৎ করে নীলা রুমে এসে দেখে এই অবস্থা নীলা তাড়াতাড়ি করে নিশানের কাছে গিয়ে নিশান কে বসিয়ে দিল।
— কি হইছে আপনার উঠার চেষ্টা করছেন কেন? কিছু দরকার হলে তো আমাকে একটা ডাক দিতে পারতেন?
— না ঠিক আছে আসলে আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো।
— ওহ ঠিক আছে আসুন আমি নিয়ে যাচ্ছি৷
তারপর নীলা নিশানকে নিয়ে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে গেলো।
— আপনার হয়ে গেলে আমাকে ডাক দিবেন আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি৷
নিশান মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল। এবার নিশাম নিজের কাজ শেষ করে নীলা কে ডাক দিল।তারপর সে নিশান কে খাটের উপরে শুইয়ে দিল। হঠাৎ করেই নীলার চুল নিশানের ঘড়ির মধ্যে আটকে গেলো। এবার দু’জন দু’জনের চোখে চোখ পড়লো আর দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে রইল।
হঠাৎ করে কারো আসার শব্দ শুনে নীলা তাড়াতাড়ি করে নিজের চুল গুলা ছাড়িয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। দেখল নিশানের বন্ধু গুলা এসেছে।
মারুফ — কেমন আছেন ভাবি?
— জ্বী আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনার বসেন আমি চা করে নিয়ে আসি।
এই কথা বলেই নীলা রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
তারপর সবাই গিয়ে নিশানের পাসে বসল।
— কিরে এখন কি অবস্থা তোর?
— ভালোই আছি এখন।
— ভাবি কিন্তু তোর খুব টেককেয়ার করে দেখছি৷
নিশান কিছু না বলেই চুপ হয়ে গেলো।
এবার রাজ বলে উঠল দেখ নিশান তুই যে মেয়েকে অবহেলা করলি সেই কিন্তু তোর বিপদের সময় সারাক্ষণ পাসে ছিল। তুই তো কিছু জানিস না। মেয়েটা না ঘুমিয়ে তোর পাসে সারারাত বসে ছিল। তোর সব খেয়াল রাখছে। আমার মনে হয় মেয়েটা তোকে ভালোবাসে না হলে কেউ কারোর জন্য এতো কষ্ট করেনা। তুই ভাবিকে আর অবহেলা করিস না তুই ভাবিকে মেনে নে এবার।
নিশান কিছুই বলছেনা চুপচাপ সবার কথা শুনেই যাচ্ছে। আর মনে মনে ভাবছে। মেয়েটাকে তো আমিও ভালো বেসে পেলছি। যাকে ভালোবাসা যায় কাকে কি অবহেলা করা যায়?
একটু পরে নীলা সবার জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসল৷ তারপর সবাই চা খেয়ে আরো কিছুক্ষণ গল্প করে সবাই চলে গেলো। এই ভাবে কেটে গেলো আরো ১৫ দিন৷ নিশান এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে। নিজে নিজে হাটাহাটি করতে পারে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে নীলা রুমে এসে নিশানের বিছানা থেকে একটা বালিশ নিয়ে নিচে এসে ঘুমাবে এমন সময় নিশান নীলার হাত ধরে ফেললো। নীলা হা হয়ে তাকিয়ে রইল নিশানের দিকে।
হঠাৎ নিশানের এমন কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেলো নীলা৷
নিশান — নীলা আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিয় আমি তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যাবহার করছি।
— আরে ক্ষমা চাওয়ার কি আছে! আপনি আমার স্বামী। আপনার পায়ের নিচে আমার জান্নাত। এই ভাবে বলবেননা আপনি।
নীলার মুখে এমন কথা শুনে নিশানের চোখ বেয়ে পানি নামতে শুরু করে দিল। নীলা নিশানের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল — আমি আপনার কথায় কোনো কষ্ট পাইনি। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে যান৷
— তোমাকে আর নিচে ঘুমাতে হবে না তুমিও আজ থেকে আমার পাসেই ঘুমাবে।
— কিহ! সত্যি নাকি?
— হুম একটা কথা বলতে চাই তোমাকে ।
— কি কথা বলবেন?
এবার নিশান খাট থেকে নেমে এসে নীলার খুব কাছে চলে এলো। দুজন অনেক টাই কাছে চলে এলো। দুজনের শ্বাস নিঃশ্বাস দুজনেই শুনতে পারছে। নীলা একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিছু করে দাড়িয়ে রইল। নিশান নীলার মাথা টা উপরে তুলে আলতো করে নীলার কপালে একটা চুমু খেল। নীলা অবাক হয়ে আছে। নীলা মনে মনে ভাবছে এটা কি আমি স্বপ্ন দেখছি? নিশান যেনো নীলার মনের কথাটা পড়েই ফেলল।
— এটা স্বপ্ন নয় নীলা। এটা সত্যি। আর আমি তোমাকে কোনো কষ্ট পেতে দেবো না। তোমাকে এই কয়েক দিনে খুব ভালোবেসে ফেলছি। i love you. love you so much…
নীলা নিশানের মুখে এমন কথা শুনে নিশানের বুকে নিজের মাথা লুকিয়ে ফেলল আর বলতে থাকলো আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি।
দুজন দুজনকে এই ভাবে অনেক্ষন জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। এবার নিশান আবার নীলার কপালে একটা চুমু দিয়ে কানে কানে বলতে থাকলো — চলো বাসর টা আজকেই সেরে ফেলা যাক!
নীলা লজ্জা পেয়ে নিজের মুখ দেকে ফেললো।
তারপর নিশান নীলাকে কোলে তুলে খাটের উপরে শুইয়ে দিল। আর লাইট অপ করে দুজনেই হারিয়ে গেলো গভীর অরন্যে।তারপর থেকে শুরু হলো তাদের ভালোবাসার নতুন করে পথচলা।
___________সমাপ্ত__________