#তোমার_পিছু_পিছুপর্ব-২৩
তামান্নার সারাটাদিন কাটলো শপিংমলেই। নীলময়ীর পিছন পিছন ও আর বর্ন সম্পুর্ণ শপিংমল বোধহয় ৫ বার চক্কর দিয়ে ফেলেছে….. শেষেরদিকে তামান্নার পা ব্যাথায় টনটন করতে লাগলো। তাই যখন ওরা মলের এক্সিট ওয়ের দিকে হাটা ধরল তামান্না যেনো হাফ ছেড়ে বাচল….…দ্রুত বাসায় যাওয়া প্রয়োজন….. এখন যদিও তামান্না একা থাকে…. দেড়ি করলেও কেউ কিছু বলার নেই……. কিন্তু এই উটকো ঝামেলা থেকে যত দ্রুত সম্ভব ছুটকারা পাওয়া প্রয়োজন।
শপিংমল থেকে বের হয়ে তামান্না একপ্রকার দৌড়াতে শুরু করল।
-মিস তামান্না…. ওহো মিস তামান্না….. আপনি এরকম দৌড়াচ্ছেন কেনো!!!
বর্নর কথায় পিছন ফিরলো তামান্না…..
-ইয়ে মানে স্যার….. আসলে এখনতো ৫টার বেশিই বাজে….. তাই ভাবছিলাম আর কি….. ইয়ে…. আমি নাহয় বাসায় চলে যাই!!
-আপনি আমাকে ফেলেই চলে যাচ্ছেন কেনো!!!
-জ্বী?
তামান্না ভ্রু কুচকে চেয়ে রইল বর্নর দিকে। এই ব্যাটা কি বলতে চায় !?
-চলুন গাড়িতে উঠুন…..
-না স্যার ঠিক আছে…. আমি স্যার কোন একটা বাসে উঠে যাবো….
-বাসে যাবেন কেনো….. আমি পৌছে দিচ্ছি….. আর তাছাড়া এখন বাস পা…………………
-অইতো,,, অইতো স্যার,,,,, আমার বাস চলে যাচ্ছে….. আমি আসি স্যার……
বর্নর জবাবের অপেক্ষা না করেই তামান্না প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে একটা বাসে উঠে পড়ল।
বর্ন তাকিয়ে রইল বাসের দিকে…… বাসে যাতায়াত করা কি এতোই মজার!!!
কাধে কারো হালকা চাপড় পেয়ে বর্ন ঘুরলো….. নীলময়ীর হাতে কোল্ড কফি,,,,স্ট্রটা কফিতে ঘুরাতে ঘুরাতে নীলময়ী বলল
-কি ব্যাপারে!!! আমাদের বিজোড় সংখ্যা কই?
-বাসায় চলে গেলো…..
-আর আপনি যেতে দিলেন!!!! ধুররর মিয়া!!! আমার ঘুরাঘুরিতো এখনো শেষই হয়নি…… আরে আমার ডিনারও বাকি!!! ওহ নো!!!!
বর্ন একবার আকাশের দিকে তাকালো…. মেঘ করতে শুরু করেছে……
👇👇👇
ঠিক ১০টার দিকে বর্নর গাড়ি নীলময়ীদের বাড়ির সামনে…হালকা বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে……. নীলময়ী ঘুমিয়ে পানি হয়ে আছে। বর্ন খুব সাবধানে ওকে ডাকতে শুরু করল। জেগে উঠে নীলময়ী খুব আয়েশ করে আড়মোড়া ভাংলো,,,,গাড়ি ছেড়ে একবার বের হওয়ার আগে….
-থ্যাংক্স টু ইউ….. আমার দিনটা খুব ভালো কেটেছে।
নীলময়ী গাড়ির দরজার হাত রাখতেই বর্ন হালকা করে ডাকলো….. নীলময়ী দেখল,,বর্ন পকেট থেকে একটা ব্লু ভেলবেট বক্স বের করল।
-ইয়ে মানে নীলময়ী….. হ্যাপি বার্থডে…… এটা…. ইয়ে,,, আরকি,,,,, আপনার জন্য……
নীলময়ী এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হাত বাড়িয়ে বক্সটা নিলো।
– আপনাকে কে বলল,,,,,আজ আমার………
-তখন,,,,,,,,,দুপুরে,,,,,,, রেস্টুরেন্টে আপনি একটা আস্ত বার্থডে চকলেট কেক অর্ডার করলেন….. এবং সারাদিন কিছুক্ষন পর পর আপনার ফোন চেক করছিলেন…….. তাই আমি ভাবলাম….. আর কি……. ইয়ে,,,,, আমার ধারনা ভুলও হতে পারে……
নীলময়ী বক্সটা খুলল,,,খুব সুন্দর একজোড়া ছোট ডায়মন্ড ইয়ারিং…..
-বাবা….. আজ সারাদিনেও একবার আমাকে উইশ করেনি জানেন…… তাই ফোন চেক করছিলাম
…।
তারপর কিছুক্ষন নিঃস্তব্ধতা।
-ধন্যবাদ…. গুড বয়…….
নীলময়ীর কেনো যেনো হঠাৎ খুব কান্না পাচ্ছে….. গাড়ির দরজায় আরো একবার হাত রাখতেই বর্ন আবার ডেকে উঠল।
-নীলময়ী……ধন্যবাদ আপনাকেও।
-অগ্রীম? ঠিক আছে….. আপনার বার্থডে -তেও আমি গিফট কিনে দিবো।
মুচকি হাসলো বর্ন….
-তার প্রয়োজন নেই….. আপনি নিজেই আমার জন্য গিফট……. নীলময়ী আপনি কি জানেন,,,,,,, আমার জীবনে আপনি আমার প্রথম বন্ধু…… আপনার আগে আমার কোন বন্ধু ছিলো না…….. ক্লাসমেট ছিলো,,,, যাদের আমি বন্ধু বলতাম……. কিন্তু আপনি আমার সত্যিকারের……,,এবং….. এবং………… এই বন্ধুত্বটা আমি খুব যত্ন করে রাখবো……… তাই আপনাকে ধন্যবাদ নীলময়ী।
কিছু না বলেই নীলময়ী গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে গেলো……. এখন ওর আরো বেশি করে কান্না পাচ্ছে……
👇👇👇
রাত ১১টার কাছাকাছি বাজে….তামান্না বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে। ওর মাথা প্রচন্ডরকম ধরেছে। টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজ ওর মাথায় ডুমডুম আঘাতের মত লাগছে। কি মুসিবত!!! সারাদিন হাটাহাটি করে পা ব্যাথা করার কথা…… মাথা কেনো ব্যাথা করছে,!!!! মাথাটা কেটে ফেলল কেমন হয়!!
হঠাৎ ফোনের আওয়াযে তামান্না উঠে বসল,,, ফোনটা হাতে নিল। অপরিচিত নাম্বার। কার হতে পারে!! ফোনটা রিসিব করে “হ্যালো” বলতেই অপর পাশ থেকে উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে প্রশ্ম এলো,
-মিস তামান্না,আপনাদের ওখানে কি বৃষ্টি হচ্ছে?
-শুধুমাত্র আমাদের এখানে না স্যার, পুরো ঢাকাতেই বৃষ্টি হচ্ছে।
-মিস তামান্না, আপনাদের বাসার উপর কি ছাদ নাকি টিনের চাল?
-টিনের চাল, স্যার।
– টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দ খুব দারুণ শোনায় তাই না,,!
-জ্বী স্যার, এতোই দারুণ শোনায় যে তা একদম আমার মাথার ভিতর ঢুকে গেছে।
-আমাদের বাড়িতেতো ছাদ তাই আমি শুনতে পারবো না,, কিন্তু জানেন জানলার কাচে বৃষ্টি ঝাপটা মেরে যে শব্দ করে তাও কিন্তু দারুন।
-বলতে পারবো না স্যার, আমি টিনের চালে অথবা কাচের জানালায় বৃষ্টি পড়ার শব্দ কখনো মনযোগ দিয়ে শুনিনি।…………..কিন্তু…..…
-কিন্তু!
-কিন্তু ঝুম বৃষ্টিতে কোনো বিশাল বড় গাছের নিচে দাঁড়িয়ে গাছের পাতায় পাতায় বৃষ্টি পড়ার শব্দ শোনাটা আমার কাছে দারুন লাগত।
-তাই নাকি,,!! আসলেই তো,,এইদিকটা কখনোই আমি ভাবি নি।আচ্ছা, মিস তামান্না, আপনি কখনো এরকম বৃষ্টিতে ধোয়া উঠা গরম চায়ের কাপ নিয়ে বাগানে বসে কখনো চা খেয়েছেন।
-না স্যার, এরকম সৌভাগ্য আমার কখনো হয় নি।
-উপর দিয়ে ঠান্ডা বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পড়ছে আর ভিতরে যাচ্ছে গরম গরম চা।ঠান্ডা গরম একসাথে।অন্যরকম এক অনুভুতি জানেন।
-কিন্তু স্যার, ঝুম বৃষ্টিতে পুকুরে চিৎ সাতার দেওয়ার অনুভূতিও কিন্তু অসাধারণ, তা জানেন কি!!
-কিন্তু আমি যে সাতার পারি না।
বর্ন এমনভাবে কথাটা বলল যে তামান্নার হাসি চলে এলো। কিন্তু হাসিটা চাপিয়ে গেল। বসের কথা শুনে কোনো এমপ্লয়ি যদি হাসে সেটা কি ভালো হবে,,,!!
-আচ্ছা মিস তামান্না আপনার কি গোলাপ ফুল ভালো লাগে,,লাল লাল গোলাপ ফুল?
– না স্যার। কোনো স্ট্রং স্মেলের ফুলই আমার পছন্দ না।
-ও তাহলে!!
– তাহলে,,,!!! আমার জাতীয় ফুল পছন্দ।
-মানে!!
-জাতীয় ফুল অর্থাৎ সাদা সাদা ধবধবে শাপলা ফুল। নৌকা বেয়ে শাপলা ফুল তোলা খুবই মজার একটা ব্যাপার…………….
-মিস তামান্না শু…………………..
ফোনটা কেটে গেল। ফোনটা নামিয়ে রেখে তামান্না দেখল ওর মনটা ফুড়ফুড়ে হয়ে গেছে। খুশি খুশি লাগছে। আর অবাক করা বিষয় ওর মাথা ব্যাথাটা নেই। যেই মাথা ব্যাথার জন্য কিছুক্ষণ আগে নিজের মাথা কেটে ফেলতে মন চাইছিল তা এখন একদম গায়েব। আশ্চর্য্য!!
বর্ন ফোনটা নামিয়ে রেখে হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল ফোনের উপর ভেসে থাকা নাম্বারটার দিকে। তারপর ফোনটা সামনে এগিয়ে ধরে বলল” জরজরি বেগম, ফোনটা কেটে গেল। মনে হয় আপনার ফোনের টাকা শেষ।” ঘুমে ডুলতে ডুলতে জরজরি বেগম ফোন হাতে বর্নর রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
(আসছে)