#এক_মুঠো_রোদ
#Writer_নৌশিন_আহমেদ_রোদেলা
#part_18
#collected Sk Galib
— আপনি কি করে জানলেন, মিস.রোজা?
— আব..আপনার বাবার একটা চিঠি পেয়েছিলাম আমি। আমার যতটুকু মনে হয় চিঠিটা আপনার বাবার শেষ চিঠি ছিলো। আই মিন, যাওয়ার আগের চিঠি।
রোজার কথায় ভ্রু কুঁচকালো মৃন্ময়। চিন্তিত গলায় বললো,
— কই! আমি বা মা তো এই চিঠিটার কথা জানতাম না। উনি বান্দরবান যাচ্ছেন, এই কথা লেখা আছে বুঝি সেখানে?
রোজা খানিক ভাবলো। তারপর বললো,
— না। সরাসরি লেখা নেই। তবে উনি ওখানে বান্দরবানের টিকেট নিয়ে কিছু একটা লিখেছিলেন। চিঠির লেখাগুলো পুরনো হওয়ায় অনেকটায় ল্যাপ্টে গেছে। তবে, আমার বিশ্বাস উনি বান্দরবানই গিয়েছেন।
মৃন্ময় রোজার দিকে পূর্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। মুখ দিয়ে জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালো সে। পাশের টেবিলের ড্রয়ার থেকে রিভলবার বের করে খুবই স্বাভাবিকভাবে রোজার দিকে তাক করলো । ডানহাতে কপালের চুলগুলো ঠেলে দিয়ে একটা ঢোক গিলে, বুক ভরে শ্বাস নিলো মৃন্ময়। কিছুক্ষণ চোখ নামিয়ে রেখে চট করেই রোজার চোখের দিকে তাকালো । হয়তো শক্তি সঞ্চয় করছিলো। নিজের অনুভূতিগুলোর বিপক্ষে লড়াই করার শক্তি! রোজা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময়কে আবারও এগ্রিসিভ হয়ে পড়তে দেখে চরম রকম বিস্মিত সে। রোজা মেনেই নিয়েছিলো, মৃন্ময় হয়তো তাকে ছেড়ে দিবে। কিন্তু এ কি? এই ছেলে ক্ষণে ক্ষণে এভাবে রূপ পাল্টায় কেন? কি চায় ও? সত্যিই কি মেরে ফেলতে চায় রোজাকে? যদি মারারই ছিলো তাহলে এতোক্ষণ ওমন আচরণের কারণটাই বা কি? রোজার হাজারো প্রশ্নের উত্তরে শক্ত কন্ঠে জবাব দিলো মৃন্ময়,
— আপনার কাজ শেষ, মিস. রোজা। গেট রেডি ফর….!
মৃন্ময়ের কথায় অবিশ্বাসের স্বরে বলে উঠলো রোজা,
— আ আপনি…আপনি সত্যিই মেরে ফেলবেন আমায়? সত্যিই?
মৃন্ময় কিছু বললো না। শুধুমাত্র রিভলবারটা আরো কাছে এনে ধরলো সে। যার অর্থ, হ্যাঁ সত্যিই। রোজা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— তাহলে, তখন মেরে দিলেন না কেন?
নিশ্চুপ মৃন্ময় এবার নড়েচড়ে দাঁড়ালো। টেবিল থেকে একটা রিমোট নিয়ে বাটন চাপতেই দেয়ালে লাগানো টিভি স্ক্রিনে ভেসে উঠলো রোজার চেহারা। রোজা কিছুটা খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো জায়গাটা মিষ্টার.আরিয়ার বেডরুম। তারমানে….
— আপনি খুব বোকা মিস.রোজা। আপনি এই বাড়িতে কখন কি করছেন সবই জানা ছিলো আমার। আপনার বন্ধু…মিষ্টার তীর্থ! এসিস্ট্যান্ট সিকিউরিটির জব করছে রাইট? মিস. রোজা, মিস. রোজা….প্রতিপক্ষকে এতো দুর্বল ভাবতে নেই। কিন্তু এই ভুলটা আপনি করছেন। বাবার ঘরে ইভেন প্রতিটি ঘরেই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে এন্ড ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন… বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজগুলো শুধু কন্ট্রোল রুম নয়, আমার এই সিক্রেট রুম থেকেও দেখা যায়। এনিওয়ে, আমি কথায় ফ্লো হারিয়ে ফেলছি। তো, যা বলছিলাম, আপনি যে বাবার রুম থেকে একটা কাগজ পেয়েছেন তা আমিও জানতাম কিন্তু এটা জানতাম না কাগজটাতে এক্চুয়েলি কি লেখা আছে। আমি আপনাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলে আপনি চিঠির কথাটা বলতেন না তাই….
— তাই এমন নাটক করলেন?
— নাটক? নাটক কোথায় করলাম, মিস. রোজা? আমি তো জাস্ট ঠান্ডা মাথায় আপনাকে প্রশ্ন করলাম। যার উত্তর খুব ইজিলি দিয়ে দিলেন আপনি। আমি তো জোর করি নি।
রোজার নিজের মাথাটাই ইট দিয়ে মেরে দু’ভাগ করে দিতে ইচ্ছে করছে। সে এতোটা ফলিস কি করে হতে পারে? রোজার ভাবনার মাঝেই আবারও বললো মৃন্ময়,
— কাগজটা সম্পর্কে ইনফরমেশন নেওয়া শেষ হয়েছে আমার। সেই সাথে শেষ হয়েছে আপনার লাইফটাইমও। আই এম সরি মিস.রোজা বাট আমার কাছে আর কোনো অপশন নেই। আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। ইভেন কাউকেই বিশ্বাস করি না।
— দেখুন! আপনি এমনটা করতে পারেন না। আমি আপনাকে হেল্প করেছি…আপনার আমার প্রতি থেংকফুল থাকা উচিত।
মৃন্ময় ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।
— থেংকফুল? রিয়েলি? সরি! মিস.রোজা। আমি থেংকফুল থাকতে পারছি না কেননা আপনার ইনফরমেশনটা ভুল কারণ বাবা সেদিন বান্দরবান যান নি।
রোজা অবাক চোখে তাকালো। বিস্মিত কন্ঠে বললো,
— তাহলে কোথায় গিয়েছিলেন মিষ্টার. আরিয়া?
মৃন্ময় হাসলো। ট্রিগারে আঙ্গুল রেখে শীতল গলায় বলে উঠলো,
— সেটা না’হয় না জানায় থেকে যাক আপনার।
রোজা আর ভাবতে পারছে না। বিপদের সময় ব্রেনের সেলগুলোও যেন অদ্ভুতভাবে কর্মহীন হয়ে পড়ে। কোনো আইডিয়াই থাকে না মাথায়। মৃন্ময় রিভলবার রিলোড করলো সাথে সাথেই চোখদুটো বন্ধ করে নিলো রোজা। ট্রিগার টিপে দেওয়ার এক সেকেন্ড আগেই চিৎকার করে বলে উঠলো রোজা,
— এক মিনিট! এ এ এক মিনিট…
মৃন্ময় ভ্রু কুঁচকালো। ট্রিগার থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে প্রশ্নমাখা চোখে রোজার মুখের দিকে তাকালো। রোজা চোখ পিটপিট করে বলে উঠলো,
— আ..আমার কাছে আপনার বাবার চিঠি আছে। আপনি সেটা থেকে কোনো না কোনো ইনফরমেশন পেতে পারেন। লাস্ট চিঠি কিছু একটা সাইন তো নিশ্চয় রেখেছিলেন। যা আমার চোখে পড়ছে না সেটা হয়তো আপনার চোখে পড়ে যাবে…জাস্ট থিংক।
মৃন্ময় কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
— কোথায় সেই চিঠি?
— আছে। চিঠি আছে, বাট চিঠিটা এমনি দিবো না আমি। চিঠির পরিবর্তে আমার জীবনের সিকিউরিটি দিতে হবে আপনাকে।
মৃন্ময়ের চোখ সরু হয়ে এলো মুহূর্তেই। চাঁপা রাগী গলায় বলে উঠলো,
— আর ইউ ট্রায়িং টু প্লে উইথ মি? আপনি চিঠির দোহাই দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে চাইছেন? যেন পরবর্তীতে এসব নিউজ খবরের পাতায় পাতায় ছাপাতে পারেন?
— নো। নো। আপনি আমায় ভুল বুঝছেন মিষ্টার. মৃন্ময়। আমি খবর ছড়াবো না। তাছাড়া জীবন বাঁচানোটা যেখানে ফরজ সেখানে এটুকু দোহাই তো আমি দিতেই পারি। কোনো ইনফরমেশন না পেলেও আপনার বাবার শেষ চিন্হ হিসেবে চিঠিটা আপনার কাছে রাখা উচিত, নয় কি?
— আপনি আমায় কনভেন্স করার চেষ্টা করছেন মিস. রোজা?
রোজা দাঁত বের করে হাসলো। একটা ঢোক গিলে নম্র গলায় মাথা দুলিয়ে বলে উঠলো,
— অনেকটাই। তবে, কথাগুলো কিন্তু সত্য। একবার ভেবে দেখুন।
মৃন্ময় রিভলবার পকেটে রেখে হাত ঝাড়লো।
— ওকে ফাইন। আমি কনভেন্স হলাম। এবার চিঠিটা দিন।
— এভাবে কিভাবে? আগে প্রমিজ করুন চিঠির বদলে আমার জীবন… ডিল ফাইনাল, তারপর।
মৃন্ময় মৃদু হাসলো।
— ওকেই। বাট আমার কোনো নিউজ লিক হলে….(ঘাড়ে হাত ঘষতে ঘষতে) আপনার ভাই তো ধানমন্ডি স্কুলে পড়ে তাই না? জাতীয় সংসদের দক্ষিণ পাশেই তো ওর স্কুল, ঠিক বললাম?
রোজা ঢোক গিলে জোড়পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো,
— হবে না। আই মিন কোনো নিউজ লিক হবে না।
— ওকে। তাহলে এবার চিঠিটা দিন।
আবারও হাসলো রোজা। মুখ কাঁচুমাচু করে বলে উঠলো,
— চিঠি তো বাসায়। আমাকে যেতে দিন। আমি এনে দিই?
মৃন্ময় কপাল কুঁচকে তাকালো। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
— আমাকে পাগল মনে হয় আপনার? আমি আপনাকে ছেড়ে দিই আর আপনি চিঠি না দিয়েই পালিয়ে যান?
— আ আমি পালাবো না। সত্যি!
মৃন্ময় কিছুক্ষণ রোজার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে শীতল কন্ঠে বলে উঠলো,
— ওকে ফাইন। যান। আপনাকে দু’ঘন্টা সময় দিচ্ছি। এই দু’ঘন্টার মধ্যে চিঠি নিয়ে আমার কাছে না পৌঁছালে….
রোজা ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো,
— না পৌঁছালে?
মৃন্ময় হাসলো। হাসিমাখা মুখেই বলে উঠলো,
— আপনার ফ্রেন্ড তীর্থ কিন্তু এখনও কন্ট্রোল রুমেই আছে মিস.রোজা। কন্ট্রোল রুমের নেটওয়ার্ক এখন থেকে দু’ঘন্টার জন্য জ্যাম থাকবে। অর্থাৎ, আগামী দু’ঘন্টা তীর্থের সাথে কোনোরকম যোগাযোগ সম্ভব হবে না আপনার। আর এই দু’ঘন্টার মধ্যে আপনি না ফিরলে নেটওয়ার্ক অন হয়ে যাবে ঠিক বাট আপনার বন্ধু হয়তো যোগাযোগের অবস্থায় থাকবে না। আই থিংক, ইউ ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড, রাইট?
রোজা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই মৃন্ময়ের মাথায় এতো কূটনীতি আসে কোথা থেকে? কিসের সিংগার? এই লোকটির মাফিয়া হওয়ার উচিত ছিলো। ডিজগাস্টিং!!
৩৩.
পায়ের এক জুতো হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোজা। বাসা থেকে চিঠি নিয়ে ফেরার সময় ব্যাগটাই চুরি হয়ে গেছে তার। সেই চুরের পিছু ছুঁটতে গিয়েই রাস্তার কোনো এক ইটে পা আটকে জুতোটা ছিঁড়েছে তার। রোজা একবার জুতোর দিকে তাকাচ্ছে তো একবার চুরের দিকে তাকাচ্ছে। এই মুহূর্তে জুতোর চেয়ে ব্যাগটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার কাছে। তাই, শেষ বারের মতো জুতোর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জুতোর মায়া ত্যাগ করেই দৌড় লাগালো সে। কিছুটা দৌড়ে গিয়ে চলন্ত এক রিক্সাকে উদ্দেশ্য করে দৌড়াতে দৌড়াতেই বলে উঠলো ,
— মামা, যাবেন নাকি?
রিক্সাওয়ালা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। কোনো শাড়ি পরিহিতা সুন্দরী মেয়েকে হয়তো এর আগে কখনো এভাবে দৌড়াতে দেখে নি সে। রিক্সাচালককে চুপ থাকতে দেখে আবারও বলে উঠলো রোজা,
— মামা? সামনে তাকান। রিক্সা নিয়ে গর্তে পড়বেন। সামনের চুরটাকে ধরবো বুঝলেন?যাবেন নাকি?
রিক্সাওয়ালা অবাক বিস্ময়ে মাথা নেড়ে অস্বীকৃতি জানালেন। বিরবির করে বললেন,
— যাইতাম না। ওই দিকে রিক্সা ঢুকতে দেয় না। কনস্ট্রাকশন চলতাছে….
রিক্সাচালকের কথা রোজার কান পর্যন্ত পৌঁছালো কিনা বুঝা গেলো না। সে আগের থেকেও দ্রুত দৌড় লাগিয়ে চুরের পিছুপিছু গলির মোড়ে হারিয়ে গেলো। কিছুটা সামনে এগিয়েই হাঁপিয়ে উঠলো সে। চুর বেচারাও নিশ্চয় হাঁপিয়ে গিয়েছে? কে জানে? হয়তো না! রোজা হাঁটুতে ভর করে ঝুঁকে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে পাশ ফিরে তাকালো। পাশেই বেশ কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের পেছনে সারি সারি কালো গাড়ি। সামনের গাড়ির ডেকের উপর একটা কাগজ বিছিয়ে গম্ভীর মুখে কিছু একটা আলোচনা করছেন কিছু ভদ্রপোশাকদারী লোক। রোজা তাদের উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলে উঠলো,
— এইযে? হ্যালো বয়েজ? ওই লোকটা আমার ব্যাগ চুরি করে আপনাদের কনস্ট্রাকশন বিল্ডিং এ আশ্রয় নিচ্ছে। আমায় হেল্প করুন প্লিজ।
রোজার কথায় সবাই একনজর রোজার দিকে তাকালো। পরমুহূর্তেই নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রোজা ভ্রু কুঁচকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ঝটপট ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে উঠলো,
— আরে! কেমন লোক তোমরা? পুরুষত্ব বলে কিছু আছে? মেয়েদের ধর্ষন করার সময় তো পুরুষত্ব দশআনা অথচ একটা চুর ধরতে পারছো না? কেমন গুন্ডা তোমরা? দেখেই তো বুঝা যাচ্ছে জাত গুন্ডা একেকটা। গুন্ডারা বুঝি এমন হয়? আমি তো ভাবতাম তারা সিনেমার মতো ব্যাপক সাহসী হয় বাট আজ তো দেখি সব ভুয়া! একটা মেয়ের সামনেই সব সাহস কচু ক্ষেতে গিয়ে লুকিয়ে গিয়েছে। কি লজ্জা জনক ব্যাপার এটা..ছি!
কথাটা বলেই ঠোঁট উল্টালো রোজা। পাশ থেকে কালো করে মোটা ছেলেটা বলে উঠলো,
— ওই মাইয়া? কও কি? বেশি কথা বললে না একদম খবর করে দিমু।
— হুম৷ সেটাই পারবেন। খালি মেয়েদের খবরই তো করতে পারেন। আবে…এতোই খবর করার সাহস থাকলে ওই চুরটাকে ধরে এনে দেন দেখি। ধরে আনতে পারলে সবার দুপুরের লান্স ট্রিট কনফার্ম । এখন ভেবে দেখুন, ব্যাগটা না আনতে পারলে একটা মেয়ের সামনে আপনাদের গুন্ডা জাতির মান ইজ্জত শেষ!
কথাটা বলতে বলতে হাতের ইশারা করে ফাঁস দেখালো রোজা। লোকগুলো একে অপরের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি বিনিময় করেই দ্বিধাভরা চোখে পাশে দাঁড়ানো ফর্মাল পোশাকদারি ছেলেটির দিকে তাকালো। ছেলেটি চোখ ইশারা করতেই চিৎকার করে করে ছুঁটে গেলো সব। পুরো বিল্ডিং খুঁজে কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাগসহ চুরটিকে ধরে এনে রোজার সামনে দাঁড় করালো ওরা। চুরটিকে সামনে পেয়েই দুর্বলতা বুঝে লাথি লাগালো রোজা। এক লাথিতেই চোখ-মুখ কুঁচকে বসে পড়লো সে। পাশের ছেলেগুলো জিহ্বায় কামড় দিয়ে ড্যাবড্যাব করে রোজার দিকে তাকিয়ে আছে আর ফর্মাল গেটাপের ছেলেটা হালকা কেশে অন্যদিকে তাকালো। একটা লাথি দিয়েই শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে চুরের হাত থেকে ব্যাগটা ছুঁটিয়ে নিলো রোজা। ব্যাগের ভেতর চিঠিটা চেক করে আবারও রাগী দৃষ্টিতে তাকালো সে।
— ওই? আমি যে কখন থেকে বলছিলাম.. “দাঁড়া, দাঁড়া! ” দাঁড়ালি না কেন?
পাশ থেকে কেউ একজন ফিসফিস করে বলে উঠলো,
— পাগল নাকি বস? চুররে খাড়াইতে কইলেই খাড়াবো নাকি? চুর কি ওর মামা লাগে?
রোজা সেদিকে কান না দিয়ে চুরের দিকে খানিক ঝুঁকে এসে বলে উঠলো,
— নাম কি?
ছেলেটি ইতস্তত করে বলে উঠলো,
— মোখলেস।
— মোখলেস? ভালো! এনিওয়ে, কেন চুরি করেছিস ব্যাগ? সত্য কারণ বললে ছাড়া পাবি নয়তো পাবি না উল্টো আগের জায়গায় মারবো এক লাথি, মামলা একদম ডিশমিশ!
কথাটা বলেই চোখ টিপলো রোজা। ছেলেটা ভয়মাখা চোখে মুখ-কাঁচুমাচু করে বলে উঠলো,
— জরিরে কাঁচের চুরি কিইনা দিমু।
রোজা ভ্রু কুঁচকালো,
— জরিটা কে?
ছেলেটি লাজুক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠলো,
— আমার গার্লফ্রেন্ড। তার চুরি পড়তে মন চাইছে। আমারে কইছে, যদি আজকের মধ্যে চুরি কিনে না দিই তাহলে আমার সাথে ব্রেকআপ কইরা সামনের বাড়ির ড্রাইভারের লগে প্রেম করবো।
মোখলেসের কথায় ফিক করে হেসে উঠলো রোজা। হাসি থামিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে নিয়েই বলে উঠলো,
— তোর তো দেখি লং স্টোরি রে। আজ সময় নেই নয়তো ফুল স্টোরি শুনতাম।
কথাটা বলতে বলতে ব্যাগ থেকে দু’শো টাকা বের করে মোখলেসের হাতে দিতে দিতে বললো,
— আমার বাজেটে দু’শো টাকায় বুঝলি?এর থেকে বেশি হবে না। এগুলো দিয়ে চুরি কিনে প্রেম বাঁচা যদিও তোর পাখি খাঁচায় বেশিদিন টিকবে না। আর শোন, টাকা কম পড়লে ওই ভদ্রলোকের( হাত ইশারা করে) থেকে নিবি বুঝলি?
কথা শেষ করে ইশারা করা লোকটির দিকে তাকিয়ে হাসলো রোজা। কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে নম্রভাবে বললো,
— মিষ্টার. রাফিন চৌধুরী রাইট? মোষ্ট বেড পার্সন ইন দিজ কান্ট্রি! নাইস টু মিট ইউ।
রাফিনও হাত বাড়ালো। রোজা স্মিত হেসে বলে উঠলো,
— আমার মনে হয় মানুষ যায় করুক না কেন তাকে তার কাজের দিক দিয়ে টপে পৌঁছানো উচিত। এজ লাইক, ভালো হলে সুপার ভালো। অনেকটা সাধু-সন্ন্যাসীর মতো আর খারাপ হলে সুপার খারাপ অনেকটা ইবলিশের মতো। মাঝামাঝির লোকগুলো তো শুধুই ভুক্তভোগী। সেদিক থেকে চিন্তা করলে আপনি কিন্তু সফল,, বেড পার্সনের দিক থেকে একদম টপে পৌঁছে গেছেন। কনগ্রাচুলেশন এন্ড অল দ্যা বেস্ট অলসো।
রাফিন মাথা নিচু করে নিজের মনে হাসলো। রোজার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— থেংক ইউ!
— মাই প্লেজার! তবে হ্যা, আপনার এই পালিত সন্ডাদের আমার পক্ষ থেকে লাঞ্চের ট্রিট দিয়ে দিবেন প্লিজ। আমার জন্য দৌঁড়ালেও লাভটা কিন্তু আপনারই হলো… এক্সারসাইজ হয়ে গেলো আরকি। আজ আসি।
কথাটা বলে একপা এগিয়ে গিয়েও আবার পিছুলো রোজা। ঘাড় ঘুরিয়ে রাফিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
— এন্ড… শার্টের কালারটা সুন্দর! নাইস শার্ট।
রোজার কথায় হেসে উঠলো রাফিন। মৃদু হাসিমাখা মুখেই রোজার যাওয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে। পাশ থেকে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো আসিফ,
— ভাই? তেজ দেখছেন? একদম বাপের মতো হইছে।
রাফিন ভ্রু কুঁচকালো। ঘাড় কাত করে বললো,
— বাপের মতো মানে? কে ওর বাবা?
আসিফ মাথা চুলকে বলে উঠলো,
— ভাই? এইডা রাদিব আহমেদের মাইয়া। ওইযে, কইছিলাম না? সুন্দরী মাইয়া? এটাই ওইটা।
রাফিন কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের কাজে মন দিতে দিতে বাঁকা হেসে বিরবির করে বলে উঠলো,
— পার্ফেক্ট ডটার ফর রাদিব! ব্রেভ গার্ল। মুখের ওপর অপমান করে গেলো, ইম্প্রেসিভ।
রাফিনের কথাগুলো আসিফের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না। সে আগের মতোই চুপচাপ দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। রাফিনের ব্যবহার কিছুই বুঝে না সে। কে জানে? কি আছে তার মনে?
# চলবে…
#part_19
https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943495856500542/
#part_17
https://m.facebook.com/groups/459470204903112/permalink/943495379833923/