#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৫,০৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
০৫
*আয়াদ সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাইক থেকে নেমে অর্শির হাত জোড়া শক্ত করে চেপে ধরলো। অর্শি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আয়াদ অর্শিকে নিজের দিকে টেনে আনে। অর্শি একটু হকচকিয়ে উঠে আয়াদের ব্যবহারে আয়াদ অর্শির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অর্শি বেশ বুঝতে পারছে আয়াদ প্রচন্ড রেগে আছে। অর্শি আয়াদের দিকে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো
— আয়াদ ভাইয়া এমন হঠাৎ করে রেগে গেলেন কেনো? কি হয়েছে? আমি আপনার রাগের কারন বুঝতে পারছি না।
— তাই না! আমার রাগের কারন বুঝতে পারছিস না? আমিও তোর ব্যবহারের কারন খুঁজে পাচ্ছি না। আমার কি মনে হয় জানিস? তুই চাচ্ছিস যে আমি তোর সাথে ঠিক সেই কাজটাই করি যা সে দিন করিনি।
আয়াদের রাগে ফিসফিসিয়ে বলা কথাটা অর্শির মনে মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করলো। অর্শির বুঝতে বিন্দুমাত্র সমস্যা হলো না যে আয়াদ কি বুঝিয়েছে। আয়াদের কথা শেষ হতেই অর্শির চোখ জোড়া ছলছল হয়ে এলো। আয়াদ অর্শির দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে তাচ্ছিল্য কর কন্ঠে বলতে লাগলো
— এসব নাটক অন্য কোথাও করিস। আমার সামনে এসব নাটক দেখাস না। তোর এই নাটক গুলো বড্ড অসহ্য লাগে আমার।
অর্শি মাথাটা নিচু করে নিলো। আশে পাশে আয়াদের বন্ধরা নিশ্চুপ হয়ে অর্শির দিকে তাকিয়ে আছে। অর্শি লজ্জায় মাথা নত করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদকে কিছু বলার মতো ভাষা নেই তার মুখে। আয়াদ অর্শিকে নিরব দেখে আর কিছু বলল না। নিজের বাইকে উঠে বসে বাইক স্টার্ট করলো আয়াদ। অর্শি আয়াদের বাইকের পাশে এখনও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আয়াদ চরম বিরক্তি নিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— এখানে কি সারা দিন রাত দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি? বাইকে উঠে বসতে কি চিঠিপত্র পাঠাতে হবে নাকি? অদ্ভুত মেরুদন্ডহীন মেয়ে একটা। গাড়িতে উঠে বস।
* আয়াদের কথা শেষ হতেই বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ আয়াদের বাইকের পিছনে চেপে বসলো অর্শি। অর্শি বসতেই আয়াদ বাইক নিয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে পরে। অর্শি নিশ্চুপ হয়ে বাইকে বসে আছে। আয়াদ বাইক চালাচ্ছে। কিছু সময় যেতেই আয়াদ মনে মনে ভাবতে লাগলো “অর্শির সাথে কি বেশি করে ফেললাম? মেয়েটা আমার কথায় হয়তো কষ্ট পেয়েছে। তাই হয়তো চুপ করে আছে। আয়াদ অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— কিরে ঐ ছেলেটার কি খবর?
অর্শি চুপ করে আছে। অর্শি আয়াদের কোনো কথার উত্তর দিলো না। আয়াদ আবারও অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলল
— কিরে চুপ করে আছিস কেনো? কিছু বলছিস না যে? বল তো ঐ যে ক্রাশ আছে না! তার কি খবর? সকালে করে না ব্রাশ উনি আবার ক্রাশ! বল বল তোর ক্রাশের খবর কি? কিছু বলেছে আর?
অর্শি এবারেও চুপ। আয়াদ স্পষ্ট বুঝতে পারছে আয়াদ তাকে উপেক্ষা করছে। আয়াদ নিজের বাইকের সাইডের লুকিং গ্লাসে অর্শির মুখটা দেখে একটা দুষ্টু হাসি দিলো। হাসিটা দিয়ে আয়াদ অর্শিকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই চমকে দিলো। আয়াদ নিজের বাইকটা সজোরে ব্রেক করলো। ব্রেকের টাল সামলাতে না পেরে অর্শি পিছন থেকে সজোরে একটা ধাক্কা দিলো আয়াদকে। আয়াদ ধাক্কাটা অনুভব করতেই অর্শিকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলে উঠলো
— এটা কি হলো? মানে বাইকে বসতে দিয়েছি বলে আমার সাথে চিপকে বসতে হবে? অসহ্য। আমি পর নারী একদম সহ্য করতে পারি না। তার উপর এই মেয়েটা ইচ্ছে করে আমার সাথে ধাক্কা ধাক্কি করেছে। ছিঃ!
অর্শি আর নিরব থাকতে পারলো না। আয়াদকে উদ্দেশ্য করে কান্না ভেজা কন্ঠে বলতে লাগলো
— সরি। আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নাই। বাইকটা থামান আমি নেমে যাবো।
— উহহহহ নেকা কান্না কাঁদছিস কেনো? ইচ্ছে হলে বাইক থেকে লাফ দিয়ে নেমে যা। আমি বাইক থামাবো না। আর বেশি থামুন থামুন করলে আবার ব্রেক করবো।
* অর্শি চুপ করে আছে। আয়াদ মিটমিট করে হাসছে। অর্শির চেহারায় চরম বিরক্তির ছাপ দেখা যাচ্ছে। বাড়ি আসতেই আয়াদ নিজের বাইক থামাতেই অর্শি বাইক থেকে নেমে নিজের রুমের দিকে হনহন করে চলে যায়। আয়াদ পিছন থেকে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে থাকে
— একটা ধন্যবাদ ও দিলি না অর্শি! আর কখনও তোকে বাইকে করে নিয়ে আসবো না আমি। তোর থেকে রাস্তার একটা বিড়াল ভালো। অন্তত আমি লিফ্ট দিলে একটা ধন্যবাদ দিবে। বেয়াদব মেয়ে একটা।
অর্শি আয়াদের সাথে কোনো ঝগড়া করলো না। বিষয়টা আয়াদকে ভিশন ভাবিয়ে তুলেছে। যে মেয়ে কে ক বললে দশ লক্ষ্য করা শুনিয়ে দেয়। আজ সে একদম নিরব! বিশ্বাস হচ্ছে না এটা অর্শি না অন্য কেউ।
— অর্শি ফ্রেশ হয়েছিস? খাবার খেতে আয় মা।
আয়াদের মা এর কথা শুনে অর্শি বিছানা থেকে উঠে বসলো। মনটা আজ ভিশন খারাপ তার। আয়াদের অপমান গুলো আজ তার ব্যক্তিত্বকে ভিশন রকম আঘাত করেছে। সকলের সামনে আয়াদ তাকে যা নয় তাই বলে ছোট করেছে। অর্শি বিছানা থেকে উঠে বসে দেখতে পেলো মা তার পাশে বসে আছে। অর্শি মা কে জড়িয়ে ধরে নিজের চোখের জল ফেলতে লাগলো। অর্শির এমন হুট করে কান্না করাটা আয়াদের মা এর মনের মধ্যে একটু ব্যাকূলতা সৃষ্টি করে দিলো। মা অর্শির কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো
— কি হয়েছে মা? তুই কাঁদছিস কেনো? মেয়েদের কান্না নয়। লড়াই করে বাঁচতে শিখতে হবে। তুই কান্না করিস না। তোকে কি কেউ কিছু বলেছে? আয়াদ তোকে কথা শুনিয়েছে? বল আমায়!
— উহু। বাবার কথা মনে পরছে খুব।
অর্শি কথাটা শেষ করতেই কান্না করা শুরু করে দেয়। বাবা এমন একটা বড গাছ যার ছায়া একটিবার জীবনের উপর থেকে সরে গেলে বোঝা যায় রোদের তীব্রতা কতটা প্রখর। অর্শি দুপুরের খাবার খেয়ে নিজের রুমে বসে রেস্ট করতে থাকে।
— হ্যালো, মিস্টার আয়াদ।
এক সুন্দরীর কন্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই ঘাড় ঘুরিয়ে আয়াদ নিজের পাশে লক্ষ্য করলো একটা লেডি কুইন দাঁড়িয়ে আছে। একটা কালো সানগ্লাস চোখের উপরে দিয়ে মেয়েটি আয়াদের দিকে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মেয়েটির দিকে হাস্যজ্বল মুখ করে বলতে লাগলো
— ইয়া আই এম আয়াদ। ইউ মিস ডায়না!
— ইয়া আই এম ডায়না। নাইস টু মিট ইউ।
— থ্যাংক ইউ ম্যাম। টেক ইউর সিট প্লিজ। ইউর প্রজেক্ট ইজ রেডি।
— ওয়াও। গ্রেট ওয়ার্ক।
— থ্যাংক ইউ ম্যাম।
আয়াদ বিকেলের দিকে একটা কপি শপে চলে আসে একটা প্রজেক্ট হ্যান্ড ওভার করতে। প্রজেক্টটা ভেরি কনফেডিনশিয়াল। মিস ডায়নার সাথে মিট করে প্রজেক্ট হ্যান্ড ওভার করলো আয়াদ। আয়াদ ডায়নার সাথে নিজেদের কাজ নিয়ে কথা বলতে লাগলো।
* অর্শি নিজের রুমের মধ্যে মন মরা হয়ে বসে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না তার। আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতো তবে হয়তো তার ভাগ্যটা একটু অন্যরকম হতো। হয়তো তাকে আর কখনও কারো অপমান সহ্য করে বাঁচতে হতো না। হয়তো কারো দয়ার পাত্রী হতে হতো না তাকে। দয়া বলি কেনো জানেন? আরে পরের বাড়িতে আশ্রীতা হয়ে পরে থাকাকে দয়াই তো বলে। আমার ভাগ্যটাই খারাপ। সুখ নামক চিরিয়াটা আমার কপালে নেই। আজ আয়াদ ভাইয়াও সকলের সামনে আমাকে নিজে বাজে মন্তব্য করলো। হাসি তামাশার পাত্রী হয়ে গেলাম আমি। সব ভাগ্য। কথাটা শেষ করতেই অর্শির বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। ভাগ্য খারাপ বলাটা কি আদু উচিত হয়েছে? আজ যদি সে তার মা এর কাছে থাকতো তবে কি হতো? নিশ্চয়ই তার জায়গা এতো দিনে কোনো পতিতালয় হতো। রোজ রোজ তার এই দেহের দাম কষাকষি হতো। সেই বিষাক্ত জীবনের থেকে এই জীবনটা হাজার গুনে ভালো।
* রাতের দিকে অর্শি নিজের রুমে বসে স্টার্ডি করছে। কিছু সময় স্টার্ডি করতেই অর্শির মাথা ঘুরতে থাকে। মাথার মধ্যে প্রচন্ড যন্ত্রনা অনুভব হচ্ছে তার। অর্শি পড়ার টেবিল থেকে উঠে এক কাপ কফি বানাতে চলে যায়। কফি নিয়ে অর্শি নিজের রুমে ব্যাক করতেই সে চমকে উঠলো। অর্শি নিজের রুমে আসতেই দেখতে পেলো…………………………..
#চলবে…………………………
#আমার_মুগ্ধতায়_তুমি
#পর্বঃ০৬
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্শি নিজের রুমে আসতেই দেখতে পেলো আয়াদ রুমের মধ্যে বসে আছে। আমার রুমে হঠাৎ করে আয়াদ! কি জন্য এলো? কথাটা মনে মনে ভাবতেই কেমন যেনো একটা ঘটকা লাগছে তার। অর্শি রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে আয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াদে দরজার দিকে চোখ পরতেই সে দেখতে পেলো অর্শি দাঁড়িয়ে আছে বাহিরে।
— এই অর্শি ওখানে কি করছিস? এদিকে আয়।
অর্শি কোনো কথা না বলে রুমের মধ্যে এগিয়ে এলো। আয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই অর্শি ভিশন কর্কশ গলায় আয়াদকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— এতো রাতে হঠাৎ আমার রুমে? কি জন্য এসেছেন?
— আসলে ফিরতে একটু লেট হয়ে গেছে। আসলে আমি তোর থেকে ক্ষমা চাইতে এসেছি।
অর্শি আয়াদের সামনে থেকে সরে গিয়ে টেবিলের উপর কফি প্লেটটা রেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আয়াদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো
— আমি না এই বিষয়টা বুঝতে পারি না। আপনি সারা দিন আমায় অপমান করবেন। ছোট করে কথা বলবেন। আর গভীর রাতে এসে ক্ষমা চাইবেন। মানে সত্যি আপনার ব্যবহার গুলো আমায় না সবাইকে চমকে দেয়।
অর্শির খোঁচা মেরে বলা কথাটা আয়াদ শুনতে পেয়েও কিছু বলল না। আয়াদ একটা প্যাক থেকে কিছু জিনিস বের করে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— অর্শি আমার দিকে ফিরে তাকা দেখ তোর রাগ ভাঙাতে কি নিয়ে এসেছি। এই দেখ এগুলো তোর জন্য।
আয়াদ হাস্যজ্বল মুখ নিয়ে অর্শির দিকে কিছু গিফট এগিয়ে দিলো। আসলে গিফট আনার কারন রাগ ভাঙাতে নয়। আয়াদের প্রথম ইনকাম। সেই জন্য আর কি কিছু উপহার দেয়া। অর্শি আয়াদের দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হয়ে বলতে লাগলো
— আপনি আমার জন্য গিফট নিয়ে এসেছেন। রাগ ভাঙাতে না অন্য কোনো মতলবে? আমি বুঝি না কিছু তাই না। এতোটা ছোট আমাকে ভাববেন না মিস্টার আয়াদ। আপনার সম্পর্কে আমার ধারনা হয়ে গেছে। আপনার এই দয়া আমি নিতে পারছি না। ক্ষমা করবেন।
অর্শির কথাটা আয়াদের বুকে এসে লাগলো। আয়াদের হাসি মাখা মুখটা মলিন হয়ে যায়। আয়াদ মাথাটা নিচু করে ঠোঁটের কোণে মিথ্যে হাসি একে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— নারে বাজে কোনো মতলব নিয়ে আমি আসি নাই। আসলে তোকে তো কখনও কিছু দেই নাই। তাই এই প্রথম বার কিছু নিলাম। গিফট গুলো রেখে দে। আমি আসছি।
আয়াদ সোফার উপর গিফট গুলো রেখে অর্শির রুম থেকে বেরিয়ে যাবে ঠিক এই মুহূর্তে অর্শি চেঁচিয়ে বলে উঠলো
— এই আপনার এই ন্যাকামি অন্য কোথাও দেখাবেন। আমার সামনে কোনো ন্যাকামি না। আপনার পরিবার অনেক দয়া করেছে আমার উপর। আমি আর কারোর দয়া নিতে চাই না। এই গুলো নিয়ে চলে যান।
অর্শি গিফট গুলো আয়াদের দিকে ছুড়ে দিলো। আয়াদ অর্শির দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালো। এই সব অর্শি কি বলছে? মানছি আমি ওর পিছনে লাগি। আমায় নিয়ে যা খুশি বল। কিন্তু বাবা মা আমার পরিবারকে টানার কি হলো? আয়াদ অর্শিকে উদ্দেশ্য করে একটু কর্কশ গলায় বলতে লাগলো
— আমার দেয়া জিনিস গুলো ফিরিয়ে দিতেই পারিস তবে অর্শি আমার পরিবারকে নায়েক যেটা বললি ওটা সত্যি উচিত হয় নাই। আমার পরিবার তোকে নিজেদের মেয়ের মতো মনে করে। দয়া করে বা অন্য কিছু নয়। আমার মা বাবা কখনও তোকে আলাদা করে দেখে নাই। কিন্তু আফসোস তুই সব সময় তাদেরকে আলাদা করে দেখিয়েছিস। তুই আমার পরিবারকে আপন ভাবতে পারিস নাই। সেই জন্যই তাদের ভালোবাসা তোর কাছে দয়া মনে হয়।
আয়াদের কথা শেষ হতেই আয়াদের মা অর্শির রুমের সামনে চলে এলো।
— কিরে আয়াদ এখানে কি করছিস? আর অর্শিকে কি বলছিস তুই? সারা দিন ঝগড়া না করলে হয় না? দেখছিস তোর জন্য আমার মেয়েটা মন খারাপ করে থাকে। তুই একটু ঝগড়া না করলে কি হয়?
মা কথাটা বলে অর্শির রুমের মধ্যে চলে যায়। আয়াদ একটা তাচ্ছিল্যকর হাসি দিয়ে অর্শিকে উদ্দেশ্য করে বলে
— দেখ একে দয়া না ভালোবাসা বলে। তোকে বুঝিয়েও লাভ নেই।
আয়াদ গিফটের প্যাকেটটা ফ্লোর থেকে তুলে ডাসবিনে ফেলে দিয়ে নিজের রুমে চলে এলো। ”অর্শির জন্য এতো শখ করে গিফট গুলো নিয়ে আসাই ভুল ছিলো। দয়া দেখাই আমি। আরে তোকে আমি কখনও দয়া দেখাইনি। এমনি খুশি হয়ে তোর জন্য কিছু জিনিস নিয়ে এসেছিলাম। আরে ভালো না লাগতে পারে। হয়তো রেগে আছিস। তাও তো জিনিস গুলো না ফেলে দিয়ে রেখে দিতে পারতিস। আমি তো চলেই এসেছিলাম। যাক আমার ভুল ছিলো যে ভুলের সাজাটা মনে হয় আমাকে সারা জীবন ধরে পেতে হবে”। কথাটা আপন মনে বলছে আয়াদ। অর্শির কথা গুলো বড্ড কষ্ট দিচ্ছে তাকে। আয়াদ নিজের রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলো।
“আয়াদ ভাইয়া তো সত্যি বলেছে। মা বাবা কেউ তো আমায় তাদের মেয়ের থেকে মন মনে করে না। তবুও কেনো আমি তাদেরকে নিজের আপন মনে করতে পারি না? কেনো মনে হয় সবাই আমার নিজের মা এর মতো নিজের সার্থে আমাকে ব্যবহার করে। কেনো আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না? একবার বিশ্বাস ভেঙ্গে গেছে বলে কি এমনটা হচ্ছে আমার”! বিছানায় শুয়ে শুয়ে অর্শি ভাবছে কথা গুলো। আয়াদের সাথে রাগ দেখিয়ে উল্টোপাল্টা কথা গুলো বলে দিলাম। উনি হয়তো রাগ করেছে। তবে ওনার এটাই প্রাপ্য। কারন উনি আমায় অনেক আঘাত করেছেন। তার কাছে এই আঘাতটা সামান্য।
*সকাল হতেই অর্শি ফ্রেশ হয়ে নিলো। অর্শি নিজের জামা কাপড় গুছিয়ে নিলো। অর্শিকে রেডি হতে দেখে আয়াদের মা অর্শির রুমে আসতেই অর্শিকে রেডি হতে দেখে প্রশ্ন মাখা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো
— কিরে অর্শি এই সকাল সকাল রেডি হচ্ছিস যে! কোথাও কি বের হবি?
— হ্যাঁ, মা আমি একটু চট্টগ্রাম থেকে ঘুরে আসতে যাবো। মনটা আজ কাল ভালো লাগছে না। তাই একটু বাহির থেকে সময় কাটিয়ে আসলে হয়তো ভালো লাগবে।
— ওহহহ। আচ্ছা টাকা নিয়েছিস?
— না। আমার কাছে যা আছে তাতে চলবে।
— মেয়ে মানুষ বাহিরে যাচ্ছিস টাকা না নিলে যদি কোনো বিপদ হয়। উহু এই দাঁড়া আমি টাকা নিয়ে আসছি।
— মা লাগবে না টাকা। শোনো আমার কথা…..
অর্শির কথা না শুনে মা চলে গেলেন। অর্শি মা চলে যেতেই আবার নিজের ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। আসলে অর্শি একটা যাচ্ছে না। সাথে অর্শির দুইজন বান্ধবী ও যাবে। এমনিতে একা কোথাও যাওয়ার মতো সাহস অর্শির নেই। অর্শি রেডি হয়ে আয়াদের মা এর থেকে টাকা নিয়ে সবাইকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় আয়াদকে কোথাও দেখলো না অর্শি। মা এর থেকে শুনেছে আয়াদ নিজের রুমে ঘুমিয়ে আছে। অর্শি লেট না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
* বাড়ি থেকে বেরিয়ে অর্শি চলে যায় তার বান্ধবীর বাড়ি সেখান থেকে রেলস্টেশন যাবে। আর তারপর চট্টগ্রাম। অর্শি অনুর বাড়ি গিয়ে দেখলো অনু একদম রেডি। অনু অর্শিকে দেখে বেশ খুশি হয়ে হাস্যজ্বল মুখে নিয়ে বলতে লাগলো
— বাহ আজকে তো তোকে দারুন লাগছে। তো আয়াদ ভাইয়া কোথায়? দেখছি না যে!
— এই ওয়েট আয়াদ ভাইয়া কোথায় মানে উনি আসবেন কেনো?
— ওমা তোকে একা ছাড়বে বুঝি? আমরা তো ৫টা টিকেট নিয়েছি। গতবার ও তো আয়াদ ভাইয়া আমাদের সাথে গিয়েছে।
— হ্যাঁ, তবে আর যাবেন না।
— ওহহ।
আয়াদ আসছে না শুনে অনুর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। অর্শির এই সব সহ্য হয় না। তাই অর্শি মুখে একটা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে অনু আর বাকি দুজন মিলি ফারজানা কে নিয়ে বেরিয়ে পরলো। রেলস্টেশন এসে অর্শি ট্রেনে উঠে পরলো। অর্শির পাশের সিটূ আয়াদের বসার কথা। অর্শি একা বসে জানলা খুলে দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। কিছু সময় যেতেই ট্রেন চলতে শুরু করলো। ট্রেন স্টার্ট হতেই অর্শি জানালা বন্ধ করে দিলো। জানালা বন্ধ করতেই অর্শি দেখতে পেলো তার পাশের সিটে দুম করে একটা ছেলে এসে বসে পরলো। ছেলেটি বসতেই অর্শি চরম বিরক্তি নিয়ে বলে উঠল
— এই ছেলে এটা তোমার সিট না। এটা আমাদের সিট। এখান থেকে উঠে যাও।
— যদি না উঠি তো!
ছেলেটির কথা শুনে অর্শি রাগে গজগজ করতে লাগলো। কতবড় সাহস আমাদের সিটে উড়ে এসে বসে আবার বলছে উঠবে না। অর্শি চিৎকার করে টিটিকে ডাকতে যাবে ঠিক এই মুহূর্তে ছেলেটি অর্শিকে অবাক করে দিলো। ছেলেটি অর্শির…………………..
#চলবে………………………