প্রেমালয় ২- ৪.

0
919

#প্রেমালয় ২- ৪.
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

অন্ধকার একটা ঘরে এভাবে বেধে রাখায় ভয়টা গাড় হতে থাকে শিশিরের। মনে হচ্ছে চার পাশে কে যেন হাটা চলা করছে। সারা শরির কাপছে প্রচুর। ধিরে ধিরে চোখ দুটু বন্ধ হয়ে আসার পর আর কিছু মনে নেই তার।
সকালে উঠে নিজেকে বিছায় আবিষ্কার করলো শিশির। তবে সে একা নয়। মুগ্ধর বুকে শুয়ে আছে সে। আর তাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে মুগ্ধও।
চার পাশ টা নিস্তব্দ পরিবেশ। সবে মাত্র সকাল হচ্ছে। ভোরের পাখি গুলোও কিচির মিচির গান পাইছে। এটাই তো সময় এই বাড়ি থেকে বের হওয়ার।
নিজের থেকে মুগ্ধর হাত টা ধিরে ধিরে সরিয়ে নিলো সে। এর পর চুপিচুপি হেটে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় শিশির। দরজা দিয়ে আরেক বার উকি দিয়ে দেখে নেয়, না মুগ্ধ ঘুমাচ্ছে। এখন চাইলেই এই বাসা থেকে বের হওয়া যাবে। সারা রাত চেয়ারের সাথে বেধে রাখায় ঘুম হয়নি শিশিরের। শেষ রাতে অজ্ঞান হওয়ার পর মুগ্ধ শিশিরকে নিয়ে খাটে শুইয়ে দেয়।
ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি পুরোপুরি। মনে হচ্ছে এখানে সুয়ে পরলে এখনই ঘুম চলে আসবে তার। কিন্তু এতো সকাল সকাল এমন সুজুগ হয়তো আর পাবে না সে। সবার এখনো ঘুম ঘুম রেশ কাটেনি। যা করার খুব তারাতারিই করতে হবে।
কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধাহয়। দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নামতেই পা পিছলে পরে যায় শিশির। কারো চিৎকার কানে আসতে আচমকাই ঘুম ভেঙে যায় মুগ্ধর। খাট থেকে নেমে দৌড়ে শিড়ির গোড়ায় আসতেই দেখে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে শিশির। আর মাথা থেকে রক্ত ঝরছে তার।
,

ওদিকে রাতে কাঁদতে কাঁদতে রুমের এক কোনে পরে ঘুমিয়ে ছিলো তীসা। সুশান্ত উঠে দেখে ফ্লোড়ে গুটি সুটি মেরে শুয়ে আছে তীসা। কেমন যেনো একটা মায়া জন্মে উঠলো সুশান্তের মনে। তীসার পাশে দিয়ে বসে সে। তীসার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে তার মুখের উপর পরে আছে। এমন একটা সকালের অপেক্ষায় ছিলো সুশান্ত। সকালে ঘুম ভাঙতেই বৌ এর মায়াবি চেহারাটা সামনে আসবে, আর ওই মুখের উপর এসে ভির জমাবে তার এলোমেলো চুল গুলো। হাত দিয়ে চুল সরিয়ে আলতো করে চুমু এঁকে দিবে তার মুখে। কিন্তু স্বপ্নটা পূর্ন হয়েও অপূর্ণ রয়ে গেলো। কারণ যাকে চেয়েছে সে কোথায় সেটাও জানেনা সে।
তীসাকে দুই একবার ডাকতেই উঠে গেলো তীসা। সকাল সকাল সুশান্তের মুখ টা দেখে একটু ঘাবড়ে গেলো সে। উঠে বসে ভয়ার্ত চেহারায় চুল গুলো কানের পিছনে গুজে নেয় তীসা।
তীসার দিকে চেয়ে সুশান্ত বললো,
– এভাবে ফ্লোরে সুয়ে ছিলি কেন সারা রাত?
– আপনিই তো কালকে বললেন বিছানায় না ঘুমাতে, তাহলে আর কোথায় ঘুমাবো?
– তাই বলে ফ্লোড়ে ঘুমাবি? সোফায়ও তো ঘুমাতে পারতি।
– আমি সোফায় ঘুমাতে পারি না। আর আমাকে নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে। লাইফে তো সবই এলোমেলো হয়ে গেছে। এতটুকু আর বাকি থাকতো কেন?
সুশান্ত আর কিছু বললো না। তার আগেই দরজায় নক দিচ্ছিলো কেও। হয়তো মা এসেছে। সুশান্ত তীসাকে উঠেয়ে বললো,
– তুই এখন আমার বিয়ে করা বৌ। আমার আর তোর মাঝে সম্পর্ক টা যেমনই হোক বািরে মেহমানদের কাছে আমরা স্বামী-স্ত্রী। স্বাভাবিক ভাবেই আচরণ করবি।
এর মাঝে তীসা সুশান্তকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– কোথায় কেমন ব্যবহার করতে হবে, সেটা আপনার আমাকে শিখিয়ে দিতে হবে না। আমি এতোটাও অশিক্ষিত নই। চিন্তা করবেন না, আপনাদের সম্মান বাচাতেই তো আমাকে এনেছেন। তো এতটুকু নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আমার কারণে আপনাদের সম্মানে কোনো আঘাত আসবে না।
সুশান্ত স্থির হয়ে কিছুক্ষন তীসার দিকে চেয়ে আছে। মেয়েটাকে যতটা বোকা ভেবেছিলো এতোটাও বোকা নয়।
কিছু না বলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো সুশান্ত।
তীসা গিয়ে রুমের দরজা খুলতেই খালাকে দেখতে পায় একটা শারি হাতি দাড়িয়ে আছে। ওহ্ সরি, এখন তো আর খালা মনি বললে ভুল হবে। এটা তো এখন সম্পর্কে তার শাশুড়ি হয়।

ভেতরে এসে তীসাকে বললো,
– কি রে তীসা এখনো ফ্রেশ হও নি?
– না খালা মনি, মাত্র উঠলাম।
– আচ্ছা, এই নাও ফ্রেশ হয়ে শারিটা পড়ে নিবে। এর পর আমার সাথে নিচে যাবে। অনেক মেহমান বসে আছে নিচে।
– খালামনি, আমার কেমন জানি ভয় লাগছে এখানে।
– আরে ধুর ওটা ভয় না, হালকা একটু নার্ভাস। এমনটা সবার ক্ষেত্রই হয়। আর শুনো তুমি এখন এই বাড়ির একমাত্র বৌ। পেছনের সব ভুলে আজ থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু করতে হবে। শিশিরকে যেমন আমার ছেলে পছন্দ করেছিলো, ঠিক তেমন তোমাকে পছন্দ করেই নিজের মতে বিয়ে করেছে সে। আরেকটা কথা, এখন থেকে খালা মনি ডাকবে না। আমার একটাই ছেলে আর একটা মাত্র ছেলের বৌ, খালা মনি শুনতে ভালো লাগবে বল? মা ডাকার অভ্যাস করবে ধিরে ধিরে।
,

কিছুক্ষন আগে ডাক্তার এসে মাথায় বেন্ডেজ করে ঔষধ দিয়ে গেলো শিশিরকে। সিড়ি থেকে পড়ে মাথায় চোট লেগেছিলো খুব। অজ্ঞান হওয়া পর ডাক্তারকে ফোন দেয় মুগ্ধ।
একটু রেস্টে থাকতে বলেছে ডাক্তার। শিশিরের মাথার পাশে বসে আছে মুগ্ধ। মায়াবি চেহারাটায় চেয়ে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এর মাঝেই বাবার ফোন এলো। ফোন রিসিভ করে বেলকনিতে চলে যায় মুগ্ধ।
– গত কাল থেকে বাসায় আসছো না কেন? কোথায় ছিলে রাতে?
– বাবা আমার এক ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টি ছিলো।
– তুমি কি ভেবেছো, আমি তোমার খোজ খবর না নিয়েই তোমায় ফোন দিয়েছি? একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো, যেই বাড়িতে আমি অপমানিত লাঞ্চিত হয়েছি, ওই বাড়ির মেয়েকে আমি কখনোই পূত্র বধু হিসেবে স্বীকৃতি দিবো না।
মুগ্ধ কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দেয় তার বাবা। রুমে এসে শিশিরের দিকে চেয়ে আছে মুগ্ধ। আচ্ছা শিশির কি আমায় সত্যিই ভালোবাসে না? আমি এমন পাগলামি করেই কি ওর ভালোবাসা আদায় করতে পারবো। আচ্ছা ধরলাম সে আমায় ভালোবাসে, তাহলে বাবাকেই বা কিভাবে মানাবো? আমি আদৌ বুঝতে পারছি না আমার ভালোবাসা টা কতটুকু পূর্ণতা পাবে?
অফিসে যেতে হবে তাকে। বাবার পর এখন সেই সব সামলায়। কিন্তু শিশিরকে এভাবে একা ফেলে যাওয়াটাও কি ঠিক হবে? চারু মেয়েটাও আসছে না।

কিছুক্ষন পর চারু মেয়েটা আসলো। শিশিরের দেখা শুনার জন্য আজ থেকে এই বাসায়ই থাকবে সে। চারুকে বলল, শিশিরের খেয়াল রাখতে আর কোনো প্রব্লেম হলেই তাকে ইনফর্ম করতে।
চারু কিচেনে গিয়ে গোচগাচ করছে সব। সব এলোমেলো হয়ে আছে।
মুগ্ধ রেডি হয়ে নিলো অফিসে যাওয়ার জন্য। শিশিরের পাশে বসে আলতো করে কপালে চুমু এঁকে দিলো শিশিরের। এর পর উঠে আসার সময় মুগ্ধ অনুভব করে শিশির তার হাত টা শক্ত করে ধরে আছে। মুগ্ধ আবারও শিশিরের পাশে বসলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শিশির মুগ্ধর কোলে মাথা রেখে বললো,
– কোথায় যাচ্ছেন আপনি? বারবার আমার থেকে দুরে সরে যান কেন? আমি আপনাকে যতই কাছে টানতে চেয়েছি আপনি ততোই দুরে সরে গেলেন। একবারও বুঝতে চাইলেন না আমি কতটুকু ভালোবাসি আপনাকে। আপনি আমায় অবহেলা করলেন। এর পর যখন আমি নিজে থেকেই দুরে সরে গেলাম, তখন আবার আমার লাইফে আসলেন। কেন এতো কষ্ট দেন আমায়? এতোই যখন ভালোবাসেন, তাহলে কেন ওইদিন চিটিতে লিখেছিলেন,
আপনাকে ক্ষমা করে দিতে আমায় চান না,,
আমি আপনার আবেগ ছিলাম মাত্র, ভালোবাসা না।

আর কিছু বলেনি শিশির, আবার চোখ বুজে আছে। একটু অবাক হলো মুগ্ধ। শিশির কি অসুস্ততায় আবোল তাবোল বকলো? নাকি কিছু একটা মেসেজ দিলো তাকে? কিসের চিঠির কথা বললো সে?
,

সুশান্ত রুমে এসে দেখলো একটা নীল শারি পড়ে আয়নার সামনে বসে আছে তীসা। চুল গুলো খোলা, পিঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আয়নার সামনে বসে সাজছে তীসা। একটু পর মা এসে নিচে নিয়ে যাবে তাকে। সুশান্তর চোখ আটকে রইলো তীসার দিকে। অদ্ভুত এক আকর্শন। কিন্তু বেশিক্ষন তাকালো না সে। কারন শারি পড়া কোনো সুন্দরি মেয়ে মানেই, স্পষ্ট মায়াজাল।
সুশান্তের ঘোর কাটলো ফোনের টুংটাং শব্দে। অচেনা একটা নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো,

” শিশিরকে হয়তো আপনারা সবাই ভুল বুজে আছেন। সে পালিয়ে যায় নি, তাকে কিডনাপ করা হয়েছে। মুগ্ধ তার একটা বাংলোতে বন্ধি করে রেখেছে আপনার শিশির পরীকে।

To be continue…..

~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরুধ রইলো।💖

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here