প্রেমালয় ২ ৮.

0
889

প্রেমালয় ২ ৮.
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

– তোমাকে আজ অনেক কথা বলার আছে মুগ্ধ। অনেক সময় মানুষ যা চোখে দেখে ওটাও সত্যি হয় না। আর যা সত্যি তা সবার দৃষ্টির আড়ালে থাকে। সেখানে তোমাদের মাঝেও অনেক গল্প তোমাদের দুজনেরই অজানা। শুনেছি তোমার বেচে ফেরার তেমন একটা গ্যারান্টি দিতে পারছে না কেউ। তাই ভাবলাম মরার আগে হলেও তোমার সত্য’টা জানা দরকার।
যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই তোমাকে ভালো লেগেছিলো আমার। ধিরে ধিরে কখন যে তোমায় ভালোবেসে ফেলি তা নিজেও বুঝতে পারিনি। শিশির আমার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো। তবুও তুমি তার সাথে বেশি চলাফেরা করতে দেখে শিশিরকেও খুব হিংসে হতো আমার। মাঝে মাঝে মনে হতে শিশিরের জায়গাম আমি থাকলে কত’ই না ভালো হতো।
শিশিরকে তোমার সাথে সহ্য হতো না আমার। ধিরে ধিরে শিশিরকেও অসহ্য লাগতে শুরু হলো। এর পর আমার মাথায় চাপে যে তোমাদের আলাদা করতে হবে। কিন্তু তা তোমাদের দুজনের সাথে মিশেই।
শুনেছি শিশিরের খালাতো ভাই সুশান্ত শিশিরকে পছন্দ করতো। ওটার’ই সুজুগ নিয়েছিলাম আমি।
ওই দিন কলেজে হৃদয়ের সাঝে ঝামেলা হওয়ার পর শিশির আমার ফোন থেকে সুশান্তকে ফোন দিয়েছিলো। কিন্তু কথা বলার আগেই হৃদয় তার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নেয়। তারপরই তুমি এসে হৃদয়কে মেরেছিলে খুব। ওইদিন সুশান্তের নাম্বার টা পেয়ে সেভ করে রাখি।
এর পর নির্বাচনের আগের দিন হৃদয়কে আমিই হ্যাল্প করি শিশিরকে তুলে নিয়ে যেতে। আমি চাইলেই তোমাকে খবর দিতে পারতাম। কিন্তু দিই নি কারণ, আমি চেয়েছিলাম শিশিরের কারণে তুমি নির্বাচনে হেরে তার প্রতি রাগ ও ক্ষোভ তৈরি হবে। কিন্তু তুমি তা করোনি। শিশিরকে পেয়ে তুমি রাগের বিপরিতে উল্টো ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলে। আমার প্লেন হেরে গেলো। বিষয়টাকে আমি একটা চ্যালেন্জ হিসেবে নিয়ে নিলাম। যে আমি তোমাদের আলাদা করেই ছারবো।
এর পর সুশান্তকে ফোন দিয়ে তোমাদের বিষয় টা জানিয়ে দিই। আর সুশান্ত এসে শিশিরকে নিয়ে হোস্টেলে ভর্তি করিয়ে দেয়। আর তার থেকে ফোন নিয়ে নেয়। আর বলে দেয় শিশির যেন ক্লাস ব্যাতিত আর কোনো কাজে বাইরে যেতে না পারে। এর পর সুশান্ত দুই দিন পর পর আসতো। তাই শিশিরও যোগাযোগের সাহস পেতো না। আমাকে সব সময় বলতো, কলেজ লাইফ শেষ করে এখান থেকে বের হয়ে খুব ভালোবাসবে তোমায়। তখন সব কষ্ট দুর করে দেবে। কিন্তু এই সময় টা তোমাকে দুর থেকেই ভালোবাসবে সে।
আর তোমাদের এই দুরুত্ব আমার কাজটা সহজ করে দিলো। শিশিরের খবর দেওয়ার বায়না করে তোমার সাথে প্রতিদিন দেখা করতাম। আর ছবি গুলো কেন তুলতাম যানো? যাতে শিশিরকে প্রমান দেখাতে পারি যে আমরা নতুন রিলেশনে জড়িয়েছি। আর তোমাকে এসে জানাতাম যে শিশির বদলে গেছে, তোমাকে তার লাইফে চায় না। তোমার দেওয়া একটা চিঠিও আমি শিশিরকে দিই নি। ওগুলো এখনো আমার কাছে জমা হয়ে আছে। প্রতিদিন পড়তাম। শিশিরের নামটা কেটে আমার নামটা বসিয়ে দিতাম সব চিটিতে। ভালো লাগতো খুব পড়তে।
এভাবেই তোমাদের দুরুত্বটা আকাশ সমান তৈরি হয়। এর পর তুমি যেদিন তুমি দেশ ছেরে চলে যাচ্ছিলে, ওই দিন আমি তোমায় কেন জড়িয়ে ধরেছিলাম যানো? কারণ তখন শিশির তোমার কাছে ছুটে এসেছিলো। আর এই দৃশ্য দেখে চলে গেলো, তোমার সামনে আসেনি। তোমার দেওয়া ডায়রিটাও তার কাছে যায়নি। গিয়েছে আমার লেখা একটা চিঠি। আর তা কেমন ছিলো বুঝতেই তো পারছো?
তোমাদেরকে আলাদা করতে কম কষ্ট করতে হয়নি আমার। আমার এই সফল হওয়াটা অনেক পরিশ্রমের ফল।
আর এখন তোমাকে কথা গুলো এই জন্য বলছি যে, যাতে মরার আগে তুমি সত্যিটা জেনে মরতে পারো।
তোমার প্রতি এখন আর আমার কোনো ফিলিংস নেই। কারণ তুমি বেচে থাকলেও সারা জীবন পঙ্গু হয়ে বাচতে হবে। আর একটা পঙ্গুর সাথে সংসার করে আমার জীবনটা আমি নষ্ট করতে চাই না।

দরজার আড়াল থেকে পুরোটা শুনেছে শিশির। চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে তার। কেন সে মুগ্ধকে ভুল বুঝলো? কে জানতো, তার সবচেয়ে কাছের বেষ্টফ্রেন্ডই তার সাথে এভাবে বেঈমানি করবে?
শিশির ভিতরে এসেই মাহিমার গালে একটা চর বসিয়ে দেয়। তার কাতর গলার স্বরও খুব হিংস্র শোনাচ্ছে আজ।
– তোকে আমি বেষ্টফ্রেন্ড না, নিজের বোন ভাবতাম। ভেবেছিলাম কেউ আমায় না বুঝলেও তুই ঠিকই আমায় বুঝিস। কিন্তু তোর অভিনয় গুলো এতোটা দক্ষতার সাথে করেছিস, কেউই ধরতে পারেনি। বেড়িয়ে যা এখন থেকে, আমার দুই চোখের সামনেও যেন কখনো তোর চেহারা না পরে।
মাহিমা হাসতে হাসতে বেড়িয়ে যাচ্ছে। এটা বিজয়ি হাসি।
– এবার বুঝেছিস, ভালোবাসার মানুষটাকে অন্য কারো সাথে দেখলে কতোটা কষ্ট হয়? আর তোর সামনে আসার কোনো প্রয়োজন নেই আমার। মুগ্ধর প্রতিও কোনো ইন্টারেস্ট নেই এখন। আর একটা গুড নিউজ শুন। কাল সন্ধায়ই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ভালো থাকিস তোর পঙ্গুকে নিয়ে। বায়।
,
,
শিশিরের হাত ধরে আছে সুশান্ত। মনে হচ্ছে এখন যেতে না চাইলেও শিশিরকে জোড় করে নিয়ে যাবে সে।
– দেখ শিশির, আমি সত্যিই তোকে খুব ভালোবাসি। আমি বুঝতে পারিনি তোর সাথে এতোকিছু ঘটেছে। তুই আমাকে বিয়ের আসরে রেখে পালিয়ে গিয়েছিস ভেবেই আমি রাগে তীসাকে বিয়ে করেছি। এখন শুধু আমার সাথে চল, আমি এক্ষুনি তীসাকে ডিবোর্স দিয়ে তোকে বিয়ে করবো। আমি তোকে সত্যিই খুব ভালোবাসি শিশির।
একটু বিরক্তি নিয়ে সুশান্তের থেকে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে নেয় শিশির। সুশান্তের থেকে কিছুটা দুরে সরে বললো,
– এটাকে ভালোবাসা বলে না। আপনি যদি সত্যিই আমায় ভালোবাসতেন, তাহলে এভাবে আমার উপর রাগ করে হুট করে বিয়ে করে ফেলতে পারতেন না। খোজ নিয়ে দেখতেন আমি কি সত্যিই পালিয়ে গিয়েছি নাকি আমার কোনো বিপদ হয়েছে? কিন্তু আপনি সেটা করেন নি। কারণ আমার উপর এইটুকু বিশ্বাসও আপনার নেই। বিশ্বাস ছারা সারা জীবন কিভাবে একসাথে থাকবো বলতে পারেন? এখন এসে নিজের মিথ্যা ভালোবাসা দেখাতে আসবেন না। আর শুনে রাখুন, আমি মুগ্ধকেই ভালোবাসি। ওর উপর এতোদিন যেটা ছিলো সেটা শুধু অভিমান ছিলো।
সুশান্ত হেসে বললো,
– মুগ্ধকে ভালোবাসিস তুই? যে এখন মৃত্যুর সাথে লড়ছে? কি পাবি তাকে ভালোবেসে? মরে গেলে তো গেলোই, আর বেচে থাকলেও পঙ্গু হয়ে জীবন কাটাতে হবে।
– সে বেচে থাকলেও আমি তাকে ভালোবাসি, মরে গেলেও আমি তাকে ভালো বাসি আর চলাফেরা করতে না পারলেও আমি তাকেই ভালোবাসি। প্রয়োজনে সারাজীবন তার সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিবো। তাকে নতুন করে বাচার উৎসাহ দিবো। তবুও তাকে আর কষ্ট দিবো না আমি। আর আপনি যদি আমায় সত্যিই ভালোবেসে থাকেন, তাহলে তাহলে আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখবেন? আপুকে মন থেকে মেনে নিন। তার তো কোনো দোষ নেই। তীসা আপু খুব ভালো একটা মেয়ে, দেখবেন আপনার সংসার টা খুব সুন্দর করেই গুছিয়ে রাখবে। ভালো থাকবেন, আসছি আমি।
,
,
মুগ্ধর মাথার পাশে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে শিশির। আস্তে আস্তে মুগ্ধ শিশিরকে বললো,
– এখন আর আমাকে ভালোবেসে তোমার কি হবে? কিচ্ছু পাবে না তুমি। তুমি বরং তোমার ভালোবাসার কাছেই চলে যাও। আজ আর তোমাকে কেউ বাধা দিবে না।
– আমার ভালোবাসা শুধুই আপনি। অন্য কাউকে আমি কখনোই ভালোবাসিনি।(শিশিরের সোজা জবাব)
– আমি আর স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারবো না। তবুও ভালোবাসবে আমায়?
– ভালোবাসা কখনো দিক দেখে কমে যায় না। ভালোলাগা, মোহ এসব দিক দেখে কমে যায়। আর আপনি আমার মোহ নয় যে দিক দেখে কমে যাবে, আপনি আমার কোনো নেশা নয় যে লেবু তে কেটে যাবে, আপনি আমার ভালোবাসা যা কখনো কমবে না।
– আমার সাথে এভাবে সারাজীবন কাটাতে পারবে না তুমি।
– সেটা সময়ই বলে দিবে।
আজ মুগ্ধর চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। উঠে বসে হাতে পায়ের বেন্ডেজ গুলো খুলতে থাকে সে। শিশির শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এতো অসুস্থ একটা মানুষ কিভাবে স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ করছে? বুঝে উঠতে পারছে না এসব কি হচ্ছে। সব যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
মুগ্ধ সব খুলে নিচে নেমে দাড়ালো। শিশিরের দুই গালে হাত রেখে কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়ে বললো,
– সারা জীবন এমনই থেকো।

~ চলবে?,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here