চিরেকুটের_শব্দ (পর্ব ৪)

0
1118

#চিরেকুটের_শব্দ (পর্ব ৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

ওদিকে তার প্রিয় স্বামি অন্য একটা মেয়ের বুকে শুয়ে আছে। অন্য কারো কাছে সুখ খুজতে ব্যস্ত সে। অর্ণব একটা পাতলা চাদরের নিচে ঈষিতাকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। এদিকে অর্থি তাকে নিয়ে হাজারও স্বপ্ন বুনতে ব্যস্ত।

আজ সারাদিন ঈষিতাকে সময় দিলো অর্ণব। দিন শেষে এখন পাতলা চাদরের নিচে একে অপরের সাথে মিশে আছে এক হয়ে।
বুকের উপর শুয়ে থাকা অবস্থায় অর্ণবের চুলে হাত দিয়ে বিলি কাটছে ঈষিতা। অর্ণবের গাল ভর্তি কয়েকটা চুমু দিয়ে বললো,
– ওই মেয়েটাকে কবে বের করবে বাসা থেকে? সব যেন দিন দিন অসহ্য লাগছে আমার কাছে।
অর্ণব চোখ বুজে শুয়ে আছে। ঈষিতার কথায় কোনো ভাবান্তর নেই তার মাঝে। অর্ণবের এমন নিরবতা দেখে রাগ হলো ঈষিতার। অর্ণবের বুক থেকে মাথা তুলে বললো,
– কি হলো, চুপ করে আছো কেন? তুমি কি সত্যিই ওই মেয়েটাকে বাসা থেকে বের করে আমায় বিয়ে করবে? নাকি এইসব মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আমায় আবারও ব্যবহার করছো?
অর্ণব এবার কপালের চামড়া ভাজ করে ঈষিতার দিকে তাকালো। অর্ণবে দৃষ্টিতে অন্য দিকে চোখ ফিরিয়ে নিলো ঈষিতা। শান্ত ভাবে অর্ণব বললো,
– তোমার কি মনে হয়?
ঈষিতার সোজা উত্তর,
– আমার কি মনে হয় আমি জানিনা। আমি শুধু জানি, আমি তোমাকে চাই। আর তুমি যত তারাতারি সম্ভব এসব ঝামেলা সরাও। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না৷
একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেললো অর্ণব।
– আরো কিছুদিন যাক। হুটহাট কোনো কাজ করা ঠিক না। ঠান্ডা মাথায় করাই ভালো।
– আর যদি মেয়েটা না যায়? আর সবাইকে যদি বলে দেয় এইসব তোমার জন্যই হচ্ছে, তখন?
– ও এটা করবে না। আর করার সুজুগও পাবে না। আর করলেও তা তখন বুঝা যাবে।
হুট করেই উঠে বসে ঈষিতা। ঈষিতার এমন কান্ডে অবাক হলো অর্ণব। সব কিছু বুঝার চেষ্টা করতে ইষিতার দিকে তাকিয়ে রইল। হুট করে ঈষিতা বললো,
– মেরে দিবো,,,
অর্ণব একটু অবাক হয়ে বললো,
– মানে?
– অর্থিকে,,,,
– তুমি কি পাগল? লাভ কি হবে? শেষে তো জেলেই পরে থাকতে হবে।
– কেউ জানলে তো জেলে যাবো, তাইনা?
– দেখো ঈষিতা আমি কিছুই বুঝছি না তোমার মাথায় কি চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে?
– সোজা ভাবে বলি, তুমি অর্থিকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে। বাকিটা আমিই দেখে নিবো। এর পর সবাই জানবে এটা একটা এক্সিডেন্ট।
অর্ণবের কাছে এতোক্ষন এগুলো ঈষিতার পাগলামি মনে হলেও এবার সিরিয়াস ভাব নিয়ে বললো,
– তুমি কি পাগল হলে ঈষিতা? তুমি যেমন একটা মেয়ে আর সেও তো একটা মেয়ে। তাই বলে তোমার জন্য আমি আরেকটা মেয়ের জীবন নিয়ে নিবো?
– তার মানে আমি আর ওই মেয়ে, তোমার কাছে দুজনই এক? আমার কোনো গুরুত্বই নেই তোমার কাছে? আর বলো, ভালোবাসো।
অর্ণব কিছু না বলে চুপচাপ রইলো।
,
,
ছাদ থেকে কাপড় গুলো নিয়ে আসলো অর্থি। মাগরিবের নামাজ পড়ে রুমে এসে বসলো ফোনটা হাতে নিয়ে। তখনই ভাইয়ার মেসেজ আসলো। খুশিতে যেন দু জোখ ভরে আসে অর্থির। খুশি মনে দ্রুত মেসেজ সিন করে সে।
– কেমন আছিস বোন?
– আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া, আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
– হুম ভালো।
– বাবা মা আর ঐশি কেমন আছে?
– হুম তারাও ভালো আছে।
– আচ্ছা ভাইয়া আমি কি তোমার আসল বোন না? আমি কি বাবা মায়ের আসল মেয়ে না?
– এমন কেন বলছিস?
– তাহলে এতোদিন হয়ে গেলো তবুও আমি ভালো আছি কিনা এটা জানারও কারো সময় নেই। মনে হচ্ছে তোমরা যেন মুক্তি পেয়ে গেছো আমার থেকে? আমার তো খুব কষ্ট হয় তোমাদের জন্য। বাবা মায়ের কি আমার জন্য একটুও খারাপ লাগে না?
– মন খারাপ করিস না বোন। ইদানিং ব্যস্ততা একটু বেশি। তাই সময় হচ্ছে না। এই দুই এক দিনের মাঝেই আমি দেখতে আসবো তোকে। তার পর তোকে বাড়ি নিয়ে আসবো। কয়েক দিন বাড়ি থেকে ঘুরে যাবি।
মুহুর্তেই যেন অর্থির মন টা আনন্দে নেচে উঠলো। খুশিতে হকচকিয়ে বললো,
– সত্যি ভাইয়া?
– হুম সত্যি,,, আর ওখানে তোর কোনো কষ্ট হচ্ছে না তো বোন?
– না ভাইয়া কি বলো, এখানে সবাই খুব ভালো। ওরা আমাকে নিজের মেয়ের মতোই আদর করে। মনে হচ্ছে আমি তোমাদের কাছেই আছি। খুব ভালো এখানে সবাই।
– যাক আলহামদুলিল্লাহ, শুনে ভালো লাগলো।

এর মাঝেই দরজার সামনে তার শাশুড়ি এসে বললো,
-নবাবজাদির মতো যে এখানে বসে আছো, রাতের খাবার কি আমাদের কপালে জুটবে? নবাবজাদির মতো ফোন গুতালে রাতের খারাব রান্না করবে কে? কথা বলারও তো শক্তি নেই। সারাদিন ফোন নিয়ে করোটা কি শুনি? এটা তোমার বাবার বাড়ি নয় যে, পায়ের উপর পা তুলে খাবে। আর প্রতিদিন সন্ধায় যে চা বানিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলাম তা কি ভুলে গেছো? ফোন রেখে দ্রুত এসে কাজে হাত লাগাও।

শাশুড়ি এক গাদা কথা শিনিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে। সারাদিন কাজ করে এখন মাত্র একটু ভাইয়ার সাথে কথা বলার জন্য ফোন টিপছিলাম। আর বলছে সারাদিন ফোন নিয়ে থাকি।
একটা নিশ্বাস ছেরে ভাইয়াকে আবার মেসেজ দিলো,
– আচ্ছা ভাইয়া এখন আসি, পরে কথা বলবো। মা ডাকছে আমাকে। বলেছিনা ওরা আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভাবে, একটু চোখের আড়াল হলেই ওরা খুজে তাদের কাছে ডেকে নিয়ে যায় আমাকে। এখানে সবাই খুব ভালোবাসে আমাকে, খুব।
,
,
রাত তখন ১১ টা। সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। আর অর্থি বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে চুপচাপ। পরিবেশ টা কতো সুন্দর। একটু একটু করে নিস্তব্দ হয়ে যাচ্ছে রাত টা। সবাই ঘুমের দেশে পারি জমাচ্ছে রাতটাকে একা করে। তার একটা স্বপ্ন ছিলো। এমন নির্জন রাতে প্রিয় মানুষটার কাধে মাথা দেখে একসাথে ছাদে বসে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে তার কথা শুনবে।

কিছুক্ষন ধরে অর্থির দিকে চেয়ে আছে অর্ণব। অর্থির ফর্শা ত্বক, চিকন ঠোঁট, মায়াবি চোখ যেন মুহুর্তেই মুগ্ধ করে ফেললো তাকে। অর্থির মাথা থেকে পা পর্যন্ত চেয়ে একটা ঘোরের মাঝে চলে গেলো সে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও মায়াবতি মেয়েটা তার সামনে দাড়িয়ে আছে।

হুট করে কেউ এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই কেঁপে উঠে অর্থি। কানের পাশে ঠোঁট ছোয়াতেই সারা শরির অবশ হয়ে যায় তার। পেছন ফিরে তাকানোর আগেই তাকে কোলে তুলে নেয় অর্ণব। কিছু বলার শক্তিও যেন পাচ্ছে না অর্থি। অর্ণবের দিকে চেয়ে এটাও বুঝা যাচ্ছে না, অর্ণব কি তাকে ধিরে ধিরে ভালোবাসতে শুরু করেছে, নাকি গভির রাত হওয়ার তার পুরুষত্ব জেগে উঠেছে?
অর্থি চাইলেও অর্ণবকে কিছু বলতে পারছে না। পারছে না নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে। যাই হোক স্বামী তো, এই প্রথম তাকে এতোটা কোছে টেনে নিলো সে।

সকালে ঘুম ভাঙতেই অর্ণবকে পাশে দেখে অবাক হয় অর্থি। হুট করে মনে পরে কাল রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনা টা। মুহুর্তেই লজ্জায় সারা শরির গুটিয়ে আসে তার। উঠতে গেলেই অনুভব করে মাথাটা প্রচুর ধরে আছে। ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে ৬ টা পার হয়ে গেছে। ফজরের নামাজও আদায় হলো না আজ। আবার এখন নাস্তা না বানালে, এক গাদা কথা শুনতে হবে।
আর কিছু না ভেবে চুপচাপ একটা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে সবার জন্য নাস্তা তৈরি করতে হবে।
,
,
আজ দিনটা কেমন অন্য রকম মনে হচ্ছে। কারণ টা হয়তো অর্ণব। তবে আজ অন্য একটা বিষয় খুব মনে পরছে তার। প্রান্তর কথা কেন আজ খুব মনে হচ্ছে সে জানেনা। তবে বুঝতে পারছে আজ প্রান্তকে মনে পরছে খুব। ছেলেটা কতো পাগলামি করেছিলো তার জন্য। কতোভাবে তার ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলো। অর্থি চাইলেও তাকে কিছু বলতে পারেনি। কারণ অর্থি মনে করতো তার ফ্যামিলি তার জন্য যেই সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই তার জন্য ভালো হবে।

আজ সন্ধায় বাসায় ফিরে আসে অর্ণব। এতো তারাতারি বাসায় ফিরে আসার কারণ টা বুঝতে পারেনি অর্থি। হয়তো আজ কাজের চাপ একটু কম ছিলো।
অর্ণব এসে অর্থির সামনে দাড়ালো। অর্থির দুই গালে হাত রেখে বললো,
– রাতের শহর টা দেখবে? বের হবে আমার সাথে।
অর্থির চোখ দুটু আনন্দে নেচে উঠলো। সে ঝটপট মাথা ঝাকালো। যার মানে সে যাবে। অর্ণব একটু হেসে বললো,
– আচ্ছা দ্রুত রেডি হয়ে নাও।
অর্থি খুশি মনে রেডি হতে চলে গেলো। তবে আজ অর্ণবের ভালোবাসার মাত্রা একটু বেশিই মনে হচ্ছে তার কাছে।

To be continue…..

~ একটা কথা- অনেকেই বলছেন এমন একটা ক্যারেক্টারলেস ছেলে পরে যদি ভালো হয়ে অর্থির কাছে ক্ষমা চায়, আর অর্থি যদি মাফ করে দেয়, তাহলে গল্পটা ভালো হবে না। তাদের জন্য আমি ছোট্ট একটা মেসেজ দিয়ে রাখি, গল্পের নাম দেখেই বুঝতে পারছেন যে এটা কোনো রোমান্টিক স্টোরি নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here