প্রজাপতির_রং🦋
Part_16
#Writer_NOVA
আজও একঘেয়েভাবে কানের কাছে টেবিল ঘড়িটায় এলার্ম বেজে যাচ্ছে।বালিশের ওপর হাতড়ে সেটাকে নিয়ে ঘুমের মধ্যেই বন্ধ করে দিলাম।ঘুমের রেশ কাটেনি।মাথাও ঝিমঝিম করছে।হাত-পাগুলো অবশ হয়ে আসছে।উঠতে চাইলেও উঠতে মন চাইছে না।বালিশে আবার মাথাটা হেলিয়ে দিতেই এলার্ম বেজে উঠলো।এই ঘড়ি আমাকে শান্তিতে ঘুমতে দিবে না। এবার বন্ধ না করে বালিশের নিচে মাথা দিয়ে দুই কান চেপে ধরলাম।এলার্ম বন্ধ না করলে কি ও থামবে।এক বস্তা বিরক্তি নিয়ে উঠে বসতেই হলো।ঘড়ি হাতে নিয়ে এলার্ম বন্ধ করলাম।আমি পরপর ৫ মিনিট পর চারটা এলার্ম দিয়ে রাখি।একটা শেষ হলেই আরেকটা শুরু হয়ে যায়।দূর থেকে আজানের সুর ভেসে আসছে।ডিম লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম আমার পুত্রধন বালিশে পা দিয়ে মাথা পায়ের দিকে দিয়ে উল্টো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। ওকে ঠিক করে শুইয়ে দিলাম। এর কাজই হলো ঘুমের মধ্যে সারা খাট ঘুরা।চুলগুলো খোপা করতে করতে রওনা দিলাম ওয়াসরুমের দিকে।
এরিনঃ কি রে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আজ না তোর অফিসের প্রথম দিন।এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে তো দেরী হয়ে যাবে।রান্না করবি,শো করবি তারপর আবার অফিস।আজ থেকে আবার আরেকটা যুদ্ধ শুরু হলো তোর।নিজেকে শক্ত কেন তৈরি কর তার জন্য।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালের ফ্রেশ বাতাস উপভোগ করছিলাম।নামাজ পরে বারান্দায় দাঁড়াতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। তখন চারিদিকে একটা আবছা আলোতে ঘিরে থাকে পৃথিবী। অন্ধকার বিদায় নিয়ে আলোর আগমন হয়। যেটা উপভোগ করতে আমার অন্যরকম একটা ভালো লাগা কাজ করে।এরিন আমার পাশে দাঁড়িয়ে এসব কথা বললো।আমি ঘাড় ঘুরিয়ে নিষ্পলক চোখে ওর দিকে তাকালাম।
এরিনঃ কি হয়েছে তোর?
আমিঃ আমার আবার কি হবে?
এরিনঃ তুই কি আমাদের থেকে কিছু লুকাচ্ছিস?ইদানীং তোকে প্রায় আপসেট দেখা যায়।
আমিঃ তুই আজ এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেলি?হিমি কি ঘুমোচ্ছে? তোর ক্লাশ কয়টায়?
এরিনঃ কথা ঘুরিয়ে ফেললি।তুই আজকাল বড্ড অদ্ভুত হয়ে গেছিস।
আমি ওর কথার উত্তর দিলাম না।মুচকি করে হেসে বাইরের দিকে মন দিলাম।পূর্ব দিগন্তে রক্তিম আভা দেখা যাচ্ছে। কিছু সময়ের মধ্যে সূর্যি মামাকেও হয়তো দেখা যাবে।আন্ধাকারের কোন রেশ থাকবে না। আমাদের জীবনটাও যদি এমন হতো।সূর্যের আলো দিয়ে সব অন্ধকার দূর করা যেতো।তাহলে হয়তো এতটা অসহ্যকর জীবন অতিবাহিত করতে হতো না।
এরিনঃ রান্না করবি না?
আমিঃ হুম।
এরিনঃ চল তোকে সাহায্য করি।আজ তোকে এমনি অনেক ধকল সহ্য করতে হবে।
আমিঃ আমি সামলে নিতে পারবো।তোর কিছু করতে হবে না।
এরিনঃ বেশি কথা বলিস না তো। চল আমার সাথে।
এরিন জোর করে আমাকে টেনে কিচেনের দিকে যেতে লাগলো।আজ বেশি কিছু করবো না। সকালের জন্য পাউরুটি টোস্ট, ডিম অমলেট ব্যাস শেষ। এই শর্টকাট রান্নার বুদ্ধিটা অবশ্য এরিনেরই।এই মেয়ে দুটো না আমাকে এতটা বুঝে যে ততটা আমিও বুঝতে পারি না।এরিন,হিমি আর তায়াং ভাইয়া না থাকলে যে আমি নাভানকে নিয়ে কোথায় থাকতাম তা একমাত্র আল্লাহ জানে।নিজেকে এদের জন্য খুব ভাগ্যবতী মনে হয়। মিনিট পনেরোর মধ্যে সব কাজ হয়ে গেলো।টেবিলে খাবার সাজিয়ে আমি খেতে বসে পরলাম।আর এরিন আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
এরিনঃ কি রে খাচ্ছিস না কেন?কখন থেকে খাবার নিয়ে বসে আছিস।খেয়ে তৈরি হয়ে নে।শো করতে কি যাবি না?
আমিঃ আমার কিছু খেতে মন চাইছে না। জানিস, এরিন আমার না মনে হচ্ছে আমার সাথে খুব খারাপ কিছু হতে চলেছে। আমি আগাম ঝড়ের পূর্বাভাস পাচ্ছি। মনটা বড্ড আনচান করছে।
এরিনঃ আরে তেমন কিছুই না।সারাদিন নানা কিছু নিয়ে অযথা চিন্তা করতে থাকিস তাই এমন হচ্ছে। কাজে ব্যস্ত থাকলে দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।
আমিঃ সেদিন রাতে নাভানকে নিয়ে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি। ওকে নিয়ে অনেক ভয় করছে। ওকে একটু সাবধানে রাখিস।গতকালে তায়াং ভাইয়া বললো ওকে নাকি গত দুইদিন ধরে কেউ ফোলো করছে।আমার ভীষণ ভয় করছে এসব চিন্তা করে।নাভান,তায়াং ভাইয়ার কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না রে।তোরা তো জানিস এই ভাইটা আমার জন্য কি কি করেছে। ও যা করেছে আজকাল আপন ভাইও এমন করে না।এনাজ মারা যাওয়ার পর আমাকে একমাত্র তায়াং ভাইয়া সামলিয়েছে।ও ছিলো বলেই আজ আমি ও নাভান বেঁচে আছি।এখনো সবার আগে আমাদের কথা ভাবে।নিজের জীবনের পরওনা না করে আমাদের জন্য পাগল হয়ে যায়।কোথাও যাতে আমার বা নাভানের কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল ওর।এতে যদি নিজের জীবনও বাজি রাখতে হয় তাতেও দ্বিধা করে না।যে আমাদের মা-ছেলের জন্য এতকিছু করছে তার বিপদে আমি কিছু করতে পারছি না। নিজেকে এখন ইউসলেস মনে হচ্ছে।
এরিনঃ তুই খামোখা চিন্তা করছিস।আল্লাহ আছে তো আমাদের সাথে। উনি যা ভালো মনে করবে তাই আমাদের সাথে ঘটবে।
আমিঃ হুম তাও ঠিক।আমি উঠছি।গোসল সেরে তৈরি হতে হবে।
এরিনঃ কিছুই তো খেলি না।আমি কি টিফিনবক্সে করো দিয়ে দিচ্ছি।শো এর মাঝে খেয়ে নিস।
আমিঃ আমার গলা দিয়ে কিছু নামছে না।আর মনে হয় না নামবে।
এরিনঃ চুপচাপ খেয়ে নিবি।চিন্তা করতে করতে নিজের কি হাল করেছিস দেখছিস।আমি টিফিনবাক্সে দিয়ে দিলাম।
আমি কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে এরিনকে জড়িয়ে ধরলাম।এই মেয়েটার আমার সবদিকে নজর।আমি কিসে ভালো থাকবে, কোনটাতে আমার ভালো হবে তার দিকে খেয়াল রাখবে।এরিনকে ছেড়ে ধীর পায়ে রুমের দিকে হাঁটতে লাগলাম।
🦋🦋🦋
—– আসসালামু আলাইকুম। হ্যালো লিসেনার।শুভ সকাল সবাইকে।আপনারা শুনছেন ঢাকা এফএম 90.4।আমি RJ নোভানাজ আছি আপনাদের শো ভোরের পাখি নিয়ে। সকাল ৭টা থেকে ১০ টা অব্দি আমি থাকছি আপনাদের সাথে। সবাই ভালো আছেন তো? দিনকাল কেমন কাটছে? আমার তো সবকিছু বোরিং লাগে।মুক্ত বাতাসে মনভরে নিঃশ্বাস নিতে পারলে ও পাখির কিচিরমিচির শুনে ঘুমের থেকে উঠতে পারলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যেত।কিন্তু এই ব্যস্ত নগরীতে সেই ফ্রেশ বাতাস তো নেই।সেখানে পাখির দেখা মেলাই ভার।গ্রামে থাকতে প্রতিদিন সকালে পাখির ডাকে ঘুম ভাংতো।সেই দিনগুলো ভীষণ মিস করি।শহরটাতো বড্ড মনমরা ও বিষন্ন। চারিদিকে বিভিন্ন দূষণে আজ আমাদের বেঁচে থাকার অক্সিজেনও দূষিত হয়ে পরছে।এর পেছনে দায়ী কিন্তু আমরা।এই স্বার্থপর শহরে তো কোন পাখির দেখাও মিলে না।পাখির কিচিরমিচির যে নিমিষেই মন ভালো করে দিতে ক্ষমতা রাখে।এখানে শুধু কাকের দেখা পাবেন।সেখানে আমি এসে হাজির হয়েছি ভোরের পাখি নিয়ে। কেমন আছেন আপনারা? তা জলদী জলদী করে আমাকে টেক্সট ও কমেন্ট করে জানিয়ে দিন তো।আমাকে টেক্সট করতে হলে আপনাকে যা করতে হবে।আপনার ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে আপনার নাম, লোকেশন ও মনের কথা টাইপ করে পাঠিয়ে দিতে হবে ২৬৯৩৬৯ এই নাম্বারে।কমেন্ট করতে হলে জয়েন হতে হবে আমাদের অফিসিয়াল পেইজে। কথা না বলে চলুন ঘুরে আসি গানে।আপনাদের পছন্দের গানের কথাও কিন্তু আমায় জানিয়ে দিতে পারেন।আমি তা বাজিয়ে দিবো।সকাল সকাল এক কাপ চায়ের সাথে নিজের পছন্দের গান হলে কিন্তু মন্দ হয় না।কথা না বাড়িয়ে আমি গানে চলে যেতে চাইছি।কোন গানটা শোনা যায়?কোন গানটা? হুম পেয়ে গেছি।আমার প্লে লিষ্টে সবার আগে আমার প্রিয় একটা গানই আছে।এতক্ষণ পাখি নিয়ে কথা বলছিলাম।আর প্লে লিষ্টে দেখছি সর্বপ্রথমে বেলাল খান ও লিজার নিউ সং “পাখি” আছে।দেরী না করে চলুন শুনে আসি।
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
মনের ঘরে বসত করে,ছোট্ট একটা পাখি
সেই পাখিরে যতন করে,মনেই বেঁধে রাখি।
উড়াল পাখি করে আমায় বড় জ্বালাতন
সেই জ্বালাতে ধিকিধিকি জ্বলে সারাক্ষণ
সুযোগ পেলে চতুর পাখি উড়াল দিতে চায়
মনটা আমার খা খা করে ভীষণ যাতনায়।
ও পাখি, পাখিরে তোরেই শুধু ডাকিরে
রোদে রাঙা ভোর, নিশি ঘনঘোর
তোরেই শুধু ডাকিরে
ও পাখি, পাখিরে তোরেই শুধু ডাকিরে
রোদে রাঙা ভোর, নিশি ঘনঘোর
তোরেই শুধু ডাকিরে
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন।লিখতে ইচ্ছে করছে না।)
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
গান চলছে নিজের মতো করে। কিন্তু আমার সেদিকে মন নেই। চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে দিলাম।শো শেষ করে আবার অফিসে যেতে হবে এটা মনে হতেই কান্না আসছে।এত ঝামেলা আর ভালো লাগে না। আমি একটু শান্তি চাই। ঐ তাজের সাথে দেখা হওয়ার আগেই থেকে মানসিক অশান্তিতে ভুগছি।তারপর একটার পর একটা ঘটছে।দরজায় টোকার শব্দ পেয়ে চট করে সেদিকে তাকালাম।
সাইমনঃ আসতে পারি মিসেস আহমেদ ?
আমিঃ হুম।
সাইমনঃ কফি!!!
আমিঃ আপনি কি ইদানীং আরজে ক্যারিয়ার ছেড়ে পিয়নে যোগ দিলেন নাকি মিস্টার সাইমন?
সাইমনঃ হঠাৎ এরকম কথা কেন?
আমিঃ না ইদানীং প্রায় খেয়াল করছি সকালের কফিটা আপনি সবাইকে দিয়ে যান।তাই আমার সন্দেহ হচ্ছে। আপনি আরজে ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে অফিসের পিয়নের চাজরীটা লুফে নিলেন না তো।
সাইমনঃ আপমান করছেন?
আমিঃ একদম না। প্রশ্নই উঠে না।
সাইমনঃ আমার কিন্তু তেমনি মনে হচ্ছে।
আমি কথা না বলে কফির মগে চুমুক দিলাম।ছেলেটা ভীষণ ধুরান্দাজ।এর বায়োডাটার কিছুই আমি জানি না। শুধু আমি নই এই এফএম অফিসের কেউই জানে না। উনাকে জিজ্ঞেস করলেও নানা টালবাহানায় এড়িয়ে যায়।অন্যের পার্সোনাল বিষয় নিয়ে জীবনেও আমার মাথাঘামানোর প্রয়োজন পরেনি।আসলে আমার এই বিষয়টা ভালো লাগে না।তাই আমি এসব করি না।কিন্তু এই মানুষটাকে আমার মনে হয় অনেক বড় ঘাপলা আছে তার মধ্যে।
আমিঃ একটা কথা বলবো আপনাকে?
সাইমনঃ নিশ্চয়ই মিসেস আহমেদ।
আমিঃ আপনি নিজেকে যতটা বোকা প্রকাশ করেন আপনি কিন্তু মোটেও সেরকম নন।আপনি অনেক রহস্যঘেরা একটা মানুষ।এটা আমি ভালো করেই জানি।এবং আপনিও ভালো করে জানেন।তাই এসব বোকা ভাবটা না আমার সামনে প্রকাশ করবেন না।আমার এটা পছন্দ নয়।
সাইমনঃ আপনি সিবিআই অফিসারের বউ ম্যাডাম।আপনার স্বভাবটা তাই স্বামীর মতো হয়ে গেছে। সবকিছুতেই সন্দেহ করেন।
আমিঃ আপনি কথায় কথায় আমার স্বামীকে কেন টানেন বলেন তো? প্রত্যেকটা টপিকে ওর কথা আপনাকে বলতেই হবে।কিন্তু কেন?
সাইমনঃ আপনার স্বামীকে অনেক ভালোবাসতেন তাই না???
আমিঃ আগেও ভালোবাসতাম, এখনো বাসি আর ভবিষ্যতেও বাসবো।কিন্তু আপনি আমার কথা ঘুরানেন কেন?
সাইমনঃ নাহ্ তেমন কিছু না।আপনার মুখে আপনার স্বামীর অনেক কথা শুনেছি। তার ব্যক্তিত্ব আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। এমন একটা গুড পার্সোনালিটি মানুষের বউয়ের সাথে আমি কথা বলতে পারি তাতে আমি আনন্দিত।তাকে ভালো লাগে বলেই কথায় কথায় আমি তার নাম নেই।
আমিঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম কি? আর আপনি উত্তর দিলেন কি?
সাইমনঃ আমি আসলে আপনার মতো এত গুছিয়ে কথা বলতে পারি না।শো করেন।আপনার লেট হচ্ছে।
কথাগুলো একদমে বলে দ্রুত বের হয়ে গেলো সাইমন।একে আমার দিনকে দিন রহস্যময় মনে হচ্ছে। এর মধ্যে বড় কোন ভেজাল নিশ্চয়ই আছে। আমি আর একে নিয়ে মাথা ঘামালাম না।এমনি টেনশনে শেষ। নতুন করে অন্য কোন টেনশন মাথায় নিতে চাই না। কফির মগে ধীরে সুস্থে চুমুক দিলাম। ব্যাকগ্রাউন্ডে নেহা কাক্করের “ইস ম্যে তেরা ঘাটা, ম্যারা কুছ নেহি যাতা” সং টা বাজছে।
🦋🦋🦋
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে লিফটের কাছে চলে এলাম।আজ অফিসে প্রথম দিন।একটা চাপা ভয় ও উত্তেজনা কাজ করছে।প্রথম দিনই অলরেডি পাঁচ মিনিট লেট।যামে পরেছিলাম।জয়েনিং লেটারটা সাইড ব্যাগেই আছে।এরিনের দেওয়া টিফিনবক্সটা যেভাবে দিয়েছিলো সেভাবেই আছে। ভুলেও খুলিনি।লিফটে এসে দেখলাম আগের থেকে মানুষ ছিলো।
আমিঃ আমাকেও নিয়ে যান।
লিফট মাত্রই বন্ধ হতে শুরু করেছিলো।আমার কথা শুনতেই একজন দরজার মাঝখানে হাত দিয়ে তা থামালো।আমি দ্রুত ভেতরে ঢুকে পরলাম।ঢুকতেই ২৬/২৭ বছরের একটা ছেলেকে দেখতে পারলাম।
—- হাই!!!!
অদ্ভুত তো।চেনা নাই, জানা নেই আমাকে হাত নাড়িয়ে হাই জানালো।আমি কপাল কুঁচকে তার দিকে তাকালাম।তার পরনে কোর্ট-প্যান্ট, চোখে চশমা।আর মুখে চুইংগাম নিয়ে গরুর জাবরকাটার মতো করে চাবাচ্ছে। মাঝে মাঝে জিহ্বা দিয়ে বাবল বানাচ্ছে। তার বাবলগুলো যখন ফাটছে তখন টাস টাস শব্দ সৃষ্টি করছে।যেটা আমার বিরক্ত লাগছে।কে জানে কে ছেলেটা?পুরো লিফটে সে আর আমি।আমি চোখ নামিয়ে সামনে দৃষ্টি দিলাম। আমি আল্লাহ আল্লাহ করছি যাতে অফিসের বস কিছু না বলে।তাজরানকে তো ভালো করেই চিনি।কিন্তু আরিয়ান যদি কোন ভেজাল করে।টুইং শব্দ করে লিফটের দরজাটা খুলে গেল।আমি আর সে একসাথেই লিফট থেকে নেমে গেলাম ৪র্থ ফ্লোরে। আমি দ্রুত পায়ে সেদিনের সেই হলরুমে চলে গেলাম।
আমিঃ আসতে পারি???
আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে নজর দিলো।আদর সবাইকে কিছু একটা বুঝাচ্ছিলো।আমার দিকে না তাকিয়ে সে মুখে একটু বিরক্তি প্রকাশ করলো।কিন্তু আমার দিকে তাকাতেই তার বিরক্তি ফুস।হাসি মুখে আমাকে বললোো।
আদরঃ জলদী আসুন।নয়তো দেরী হয়ে যাবে।
আমিঃ শুকরিয়া।
আমি ভেতরে প্রবেশ করে একটা চেয়ার টেনে বসলাম।এখনো অনেকে আমার দিকে কিরকম করে যেনো তাকিয়ে আছে। আমি সেদিকে খেয়াল না করে সামনের দিকে মন দিলাম।আদর খুব মনোযোগ সহকারে কতগুলো প্রেজেন্টেশন বুঝিয়ে দিচ্ছে।
—– আদর, তোমাকে তাজরান ভাই ডাকছে।তুমি একটু শুনে আসো।ততক্ষণে আমি এদিকটা সামলাই।
মৃদুস্বরের একজন কণ্ঠ শুনে চট করে দরজার দিকে তাকালাম।লিফটের সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। সে শান্তপর্ণে ভেতরে ঢুকলো।
আদরঃ সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।এ আমাদের কোম্পানির আরেক ওনার। উনার নাম আরিয়ান আজওয়ার।তাজ স্যারের ছোট ভাই। (আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে) স্যার, আপনি একটু এখানে থাকুন।আমি আসছি।
আমিঃ ওহ্ এই চুইংগাম খাওয়া জাবরকাটা গরুটাই তাহলে আরিয়ান।এটা কোনভাবে আমার দেবর এনাম নয় তো? চাল-চলনে তো মনে হয় না। আল্লাহ ভালো জানে।দুই ভাই চেহারা পাল্টিয়ে ঘুরছে কিনা।আমি এদের চক্করে পাগল হয়ে যাবো।(মনে মনে)
আদর মিনিট চারের মধ্যে ফিরে এলো।এসেই সামনের টেবিলে কতগুলো ফাইল এলোমেলো করতে লাগলো।একসময় সবুজ রঙের একটা ফাইল হাতে নিয়ে আমাকে ডাকলো।
আদরঃ মিসেস নোভা ইসলাম কে?
আমিঃ জ্বি আমি।(দাঁড়িয়ে)
আদরঃ আপনাকে তাজ স্যার ডাকছে।এই ফাইলটা নিয়ে উনার সাথে দেখা করে আসুন।
আমি ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলাম।এই তাজ কি আমাকে বের করে দিবে নাকি? যদি বের করে দেয় তাহলে হাতেনাতে ধরবো কি করে আমার এনাজকে।আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফাইলটা নিয়ে এগুতে লাগলাম। পেছন থেকে আদর ডাকলো।
আদরঃ ম্যাডাম শুনুন।
আমিঃ জ্বি বলুন।
আদরঃ এখানে একটা ছোট টুকরো কাগজ আছে। সেটাও নিয়ে যান।
আদরঃ জ্বি দিন।
আদরঃ ম্যাম, আপনি কিন্তু আবারো সেদিনের মতো ভয় পাচ্ছেন।এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমার স্যার বাঘ বা ভাল্লুক নয় যে আপনাকে খেয়ে ফেলবে।
আমিঃ তেমম কিছু নয়।একটু নার্ভাস লাগছে।প্রথম প্রথম তো তাই।
আদরঃ অল দ্যা বেস্ট ম্যাম।
আমিঃ শুকরিয়া।
চার ভাজ করা কাগজের টুকরোটা নিয়ে আমি ভীরু পায়ে তাজের কেবিনের দিকে যেতে লাগলাম।যত এগুচ্ছি ততই আমার হৃৎপিণ্ডটা ধপধপ করছে।এত নার্ভাস হওয়ার তো কথা নয়।তবুও কেন হচ্ছি জানি
না। কে জানি এত ভয় এসে কোথা থেকে ভর করছে। আলতো হাতে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই যা হলো তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।ভেতরে যেতেই ___________
#চলবে
রি-চেইক দেওয়া হয়নি। আমার রি-চেইক দিতে অনেক কষ্ট লাগে।দয়া করে ভুল-ভ্রান্তিগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।