প্রজাপতির_রং🦋 Part_09

0
1239

প্রজাপতির_রং🦋
Part_09
#Writer_NOVA

—- হেই গাইস, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আমি RJ নোভানাজ চলে এসেছি আপনাদের মাঝে আমার শো Love Complain নিয়ে।আমি লাভ কুইন থাকবো আপনাদের সাথে বিকেল চারটা থেকে ছয়টা।এখন সময় চারটা বেজে তিন মিনিট। তো কথা না বলে শুরু করা যাক আপনাদের শো লাভ কমপ্লেন।আপনাদের ভালোবাসার বিরুদ্ধে কিংবা প্রিয় মানুষটার বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ আছে তা করতে পারেন।আমি লাভ কুইন নোভানাজ যথাসাধ্য চেষ্টা করবো তার সলিউশন দেওয়ার।আমাকে আপনি ম্যাসেজ করে বা অফিসিয়াল পেইজে কমেন্ট করে আপনার অভিযোগটি তুলে ধরতে পারবেন।এক্ষেত্রে আপনাকে যা করতে হবে।মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে আপনার নাম,আপনার লোকেশন এবং আপনার ভালোবাসার মানুষের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি টাইপ করে পাঠিয়ে দিবেন ২৬৯৫৬৯ এই নাম্বারে।আপনাদের বোঝার সুবিধার্থ আমি নাম্বারটি আবার বলছি ২৬৯৫৬৯। কমেন্ট করতে হলে আপনাকে আমাদের অফিসিয়াল পেইজে যোগ হতে হবে।www.dhakafm90.4bd এটা লিখে সার্চ দিলে চলে আসবে।তবে ৭লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ এর উপরে লাইক যেই পেইজে আছে সেটাই আমাদের অফিসিয়াল পেইজ।অন্যগুলো আমাদের নয়।সেখানে আমি একটা পোস্ট করেছি একটা টপিক নিয়ে। যেটা হলো, “এক কাপ চায়ের সাথে তুমি কাকে চাও?” সেখানের কমেন্ট বক্সেও আপনার কথপোকথন লিখে পাঠাতে পারেন।অনেক বকবক হয়েছে। চলুন একটা গান শোনা যাক।আমার প্রিয় সিঙ্গার ইমরান মাহমুদুল ও পালাক মুছালের কণ্ঠে “সবাই চলে যাবে”গানটি শুনে আসি।আশা করি আপনাদেরও ভালো লাগবে।ফিরছি গানের পরপরি।

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

সবাই চলে যাবে, একজনি পারবে না
একজন কেউ থাকুক, যে তোমাকে ছাড়বে না(×০২)
মন ভালো নেই, জানি মন তবু হারবে না
একজন কেউ থাকুক, যে তোমাকে ছাড়বে না
সবাই চলে যাবে, একজনি পারবে না
একজন কেউ থাকুক, যে তোমাকে ছাড়বে না

একজনি কেউ ভালোবেসে যাবে,
থেকে থেকে দুঃখ শুধু পাবে।
করবো না কেউ হিসেব-নিকেশ
কার ধার ধারবে না।(×০২)
মন ভালো নেই, জানি মন তবু হারবে না
একজন কেউ থাকুক, যে তোমাকে ছাড়বে না
সবাই চলে যাবে, একজনি পারবে না
একজন কেউ থাকুক, যে তোমাকে ছাড়বে না

একজনি কেউ হৃদয় বুঝে নিবে
সাগর সেঁচে মুক্তো এনে দিবে
চাইলেও পাবে না চাইলেও
নিজের কথা ভাববে না।(×০২)
মন ভালো নেই, জানি মন তবু হারবে না
একজন কেউ থাকুক, যে তোমাকে ছাড়বে না
সবাই চলে যাবে, একজনি পারবে না
একজন কেউ থাকুক, যে তোমাকে ছাড়বে না

♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪

—হ্যালো লিসেনার,আপনারা শুনছেন ঢাকা এফএম 90.4। আমি লাভ কমপ্লেইন নিয়ে লাভ কুইন নোভানাজ আছি আপনাদের সাথে। ফিরলাম গানের পরপরি। এই গানের মর্মটা কিন্তু অনেক গভীর।যদি মনোযোগ দিয়ে শুনেন তাহলে কিন্তু অনেক কথার উত্তর পাবেন।ওকে,কথা না বলে আমি কতগুলো ম্যাসেজ ও কমেন্ট চেক করে নেই। আপনারা কিন্তু ম্যাসেজ কিংবা কমেন্ট করতে ভুলবেন না। নরসিংদী থেকে আরিফা আছে আমাদের সাথে। সে জিজ্ঞেস করেছে আপু কেমন আছো? আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আরিফা।তুমি কেমন আছো? গাজীপুর থেকে সোহেল আছে আমাদের সাথে। আপু,তোমার দুটো শো আমার অনেক পছন্দ। আমি সবসময় তোমার শো দুটি শুনি অনেক ভালো লাগে। ধন্যবাদ সোহেল তোমাকে।সিলেট থেকে রাহুল লিখেছে, আপু তোমার ভয়েসটা অনেক কিউট। আমাকে বলবা এতো কিউট কেন? রাহুল ভাইয়া তুমি কিন্তু আমাকে পাম মারছো।আমার ভয়েস মোটেও কিউট নয়।খুব খুব বাজে।আমার থেকে কাকের ভয়েজ বেশি সুন্দর আমি জানি।ঢাকার সাভার থেকে লতা ম্যাসেজ করেছে আমাকে, সত্যি ভালোবাসা বলতে তুমি কি বুঝো আপু? আচ্ছা লতা তোমার উত্তরটা আমি একটু পরে দিচ্ছি। তার আগে আমি কতগুলো কমেন্ট চেক করে আসি।স্বপ্নের রাজকুমার কমেন্ট করেছে, হেই আপু হোয়াটসঅ্যাপ? আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন? তোর জন্য পাগল নামক আইডি থেকে একজন কমেন্ট করেছে, আপু আমি একজনকে অনেক ভালোবাসি।কিন্তু সে আমায় প্রচুর সন্দেহ করে।এখন আমার করণীয় কি? আচ্ছা, আমি তার উত্তর দিচ্ছি। আপু নাকি ভাইয়া আমি তা জানি না। আপনার আইডির নাম দেখে বোঝার উপায় নেই। আপনাকে একটা কথা বলতে চাই,সন্দেহ নিয়ে ভালেবাসা যায় না। অতিরিক্ত সন্দেহ ভালোবাসা নষ্টের মূল কারণ। আমি আপনাকে সাজেস্ট করবো ঐরকম সন্দেহযুক্ত ভালোবাসা থেকে বেরিয়ে আসুন।তবে হুট করে বেরিয়ে আসবেন না।আগে তাকে বুঝাবেন।যদি সে না বুঝে তাহলে চলে আসুন।আশা করি আপনি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন।আবু তালহা হোসেন কমেন্ট করেছে, সব মেয়েরাই ঠক,প্রতারক। ওরা কাউকে ভালবাসতে পারে না। এরা ছেলেদের মন নিয়ে খেলা করে।আহারে, বুঝতে পারছি ভাইয়া আপনি খুব বড়সড় একটা ছ্যাকা খেয়ে বেঁকা হয়ে গেছেন।তাই এসব পাগলের মতো কথা বলছেন।আরেকটা কথা ভাইয়া,আপনি সব মেয়ের কাছে যান কেন বলেন তো? যাক গে আপনার কথায় আমি কিছু মনে করিনি।আমার মেয়ে লিসেনাররাও কিছু মনে করবে না।কারণ আমরা পাগলের কথায় কিছু মনে করি না।আর হ্যাঁ তালহা ভাইয়া আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।মেয়েটা খারাপ হতে পারে, তবে মেয়েরা নয় তেমনি ছেলেটা খারাপ হতে পারে ছেলেরা নয়। এঞ্জেল তুলি প্রশ্ন করেছে “ভালোবাসার মানেটা তোমার কাছে কি আপু?” তামিম হাসান জিজ্ঞেস করছে, ভালোবাসা কি? ওকে, ওকে আমি তিনটা প্রশ্ন স্কিপ করে গেছি।সেই তিনটা প্রশ্নের উত্তর একসাথে দেই।

গলা শুকিয়ে আসছে আমার।সামনের ডেস্ক থেকে পানির বোতল নিয়ে খানিকটা পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিলাম।তারপর আবার বলা শুরু করলাম।

—- ভালোবাসা শব্দটা শুনলেই আমরা ভাবি আসলে এটা কি? এটা দিয়ে কি হয়?আসলে ভালোবাসা একটা সুন্দর অনুভূতি। যাকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না কিন্তু মন দিয়ে অনুভব করা যায়।ভালোবাসা মানুষের জীবনে আশির্বাদ আবার অভিশাপও বটে।একমাত্র ভালোবাসাই মানুষকে বদলে দিতে পারে।ভালোবাসা হচ্ছে এক ধরনের পাগলামি। এখানে ঢুকে গেলে হারাতে চাইলেও হারানো যায় না।ফিরাতে চাইলেও ফিরানো যায় না। চার অক্ষরের এই শব্দটার মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক অভিমান,খুনশুটি,রাগ,
ঈর্ষা,হিংসা নামক বস্তু। আমার হাসবেন্ড এনাজকে যদি আমি জিজ্ঞেস করতাম তোমার কাছে ভালোবাসা মানে কি? সে খুব সহজ সরল একটা উত্তর দিতো। যা আমার ভীষণ ভালো লাগতো। ও বলতো ভালোবাসা হলো একটা প্রজাপতির মতো। যদি শক্ত করে ধর মরে যাবে। যদি হালকা করে ধর উড়ে যাবে আর যদি যত্ন করে ধর কাছে রবে।আমিও তাই মনে করি।ভালোবাসা সত্যি একটা প্রজাপতি। আর রাগ,হিংসা,ঈর্ষা,অভিমান ইত্যাদি ইত্যাদি হলো প্রজাপতি একেকটা রং।যাদের ছাড়া প্রজাপতিটা অসম্পূর্ণ। প্রজাপতি ও তার রং নিয়েই ভালোবাসা।

কোথায় জানি একটা পোস্ট কিংবা কোন গল্পে দেখেছিলাম।আমার ঠিক মনে নেই। তবে তার মধ্যে সত্যি ভালোবাসা নিয়ে কথা ছিলো। কথাগুলো ছিলো এমন।

একসাথে অনেকগুলো প্রেম করে টাইম পাস করলে আপনি বেঁচে যাবেন।কিন্তু একজনকে সত্যি ভালোবাসলে আপনি মরে যাবেন।সত্যি মরে যাবেন।তাকে দেখার জন্য আপনার অদ্ভুত এক যন্ত্রণা হবে।রাত-বিরেতে তার কন্ঠ শুনতে মন চাইবে।তার জন্য আপনার চিন্তা হবে।প্রেমে পরা আর ভালোবাসার মধ্যে অনেক তফাত আছে।প্রেমে সবাই পরে।রোজ ৪/৫ টা প্রেম করা এখনকার সময় কোন ব্যাপার না।কিন্তু একজনকে সত্যিই মন থেকে ভালোবাসা অনেক কঠিন।তার প্রতি ল্যায়াল থেকে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য আপনাকে অনেক সেক্রিফাইস করতে হবে। এমনকি পরিবারের বিরুদ্ধেও যেতে হবে। সত্যি ভালোবাসা বলতে এগুলো বোঝায়।যারা ৪/৫ টা প্রেম করে জীবন কাটিয়ে দেয় তারা বেঁচে যায়।আর যারা সত্যি ভালোবাসে তারা ফেঁসে যায়।সারাজীবনের জন্য ফেঁসে যায় একজনের কাছে।তবে এই ফেঁসে যাওয়ার মধ্যে অদ্ভুত এক প্রশান্তি আছে। যা শুধু সত্যি ভালবাসলে পাওয়া যায়।

কথাগুলো বলতে বলতে এক অজানা ঘোরে চলে গিয়েছিলাম।এনাজকে খুব মনে পরছে।যার কারণে চোখের কর্ণার বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পরছে গাল বেয়ে।পানি মুছে আবারো মনোযোগ দিলাম শো করতে।

🦋🦋🦋

—– আহারে, বেচারী। একে তো অল্প বয়সে স্বামী হারিয়েছে। তার মধ্যে সকাল, সন্ধ্যায় কাজ করতে হয়।মেয়েটার জন্য খুব কষ্ট গয় গো।স্বামী ছিলো
সি বি আই অফিসার।আর তাকে এখন রেডিও তে কাজ করতে হয়েছে। বুঝেছেন ভাবী একেই বলে কপাল।আল্লাহ কাকে কখন কোথায় নিয়ে যায় তা কেউ বলতে পারে না।স্বামী হারিয়ে সন্তান নিয়ে কষ্ট করছে।শ্বশুর-শাশুড়ি নেই। রাত-বিরেতে ফিরলেও কেউ কিছু বলে না।তাই এখন রাত করেই ফিরে।সবসময় তো সাদা কাপড়ে নিজেকে মুড়িয়ে রাখে।কিন্তু ভেতরে দেখেন গিয়ে ঠিকই রং লেগেছে। সেদিন দেখলাম সন্ধ্যা বেলায় এক ছেলে বাইকে করে দিয়ে গেলো।তুই বাপু বিধবা মেয়ে। তোর এতো ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি কি? কে জানে স্বামী সত্যিই মরেছে নাকি মেরে ফেলেছে। যাতে নাগরের সাথে রাত-বিরেতে দেখা করে ফিরতে পারে।

শো শেষ করে ফিরতে আজ একটু দেরী হয়ে গেছে। মাগরীবের আজান দিয়েছে বহু আগে। বাসার সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই পাশের ফ্ল্যাটের দুই ভাবীর কথা কানে আসলো।তারা যে এসব কথা আমাকে বলছে তার কোন সন্দেহ নেই। মানুষ কতটা নিচ মন-মানসিকতার হলে এসব কথা বলতে পারে আল্লাহ মালুম।এরা প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে।উদ্দেশ্য হলো আমাকে নানা কথা শুনানো।এদের অভ্যাসই পুরো দালানের মানুষদের নিয়ে সমালোচনা করা। আমি তাদের কথা পাত্তা না দিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজালাম।তখুনি আরেকজন বলে উঠলো।

—- দেখছেন ভাবী দেখছেন।কিরকম বেয়াদব মেয়ে। এতগুলো কথা বললাম কোন উত্তর দিলো।যার শিক্ষার অভাব আছে সে কিভাবে রাত করে বাসায় ফিরবে না।ছেলেটাকে বাসায় রেখে কে জানে কোন ছেলের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে যায়।আমার তো মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় এই মেয়ের বিয়ে হয়েছে নাকি।কে জানে কার পাপের ফসলে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। এখন তো আমি সিউর ঐ বাচ্চাটা জারয সন্তান।আর এই মেয়ের চরিত্রে সমস্যা আছে। নষ্টা মেয়ে না হলে কি এতদিন বাপ-মা এসে দেখে যেতো না।স্বামী মারা গেছে এটা হলো ডাহা মিথ্যা কথা। বয়ফ্রেন্ডের কারণে হয়তো প্রেগনেন্ট হয়েছে। তারপর বয়ফ্রেন্ড বাচ্চা নিতে অস্বীকার করছে।তাই বাচ্চাসহ পালিয়ে আসছে।আমি এসব ভালো করেই জানি।ঐ তো সেদিন খবরে——-

আমিঃ স্টপ। (চিৎকার করে)

কানে দুই হাত দিয়ে চিৎকার করেই বলে উঠলাম কথাটা।আমি আর নিতে পারছি না।একটা মেয়ের বিষয়ে না জেনে এত বাজে কথা কি করে বলতে পারে মানুষ। ততক্ষণে এরিন দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। আমাকে ধরে জিজ্ঞেস করলো।

এরিনঃ কি হয়েছে নোভা?

আমি এরিনের কথায় উত্তর না দিয়ে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললাম।

আমিঃ আপনারা কি কোন মেয়ে মানুষের কাতারে পরেন? না জেনে, আমার বিষয়ে কত নোংরা নোংরা কথা বললেন।আমি আপনাদের কোন বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছি।আমার সাথে যে আপনারা লেগেছেন।আমার কথা না হয় বাদই দিলাম আমার নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে নিয়ে কথা বলতে আপনাদের মুখে বাজলো না।আমার বৈধ সন্তানটাকে কোন হিসেবে আপনারা জারয সন্তান বলেন? আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলতে সাহস আপনাদের কে দিয়েছে? মানুষের সাথে ঝগড়া করার জন্য কি সবসময় গলা চুলকায়? আমি একটা বিবাহিত মেয়ে। আমার সন্তান বৈধ।কোন পাপের ফসল নয়।আর আমি কষ্ট করে খেটে উপার্জন করি।শরীর দেখিয়ে পতিতা ব্যবসা করি না। আমার জীবনটা আপনাদের মতো আনন্দের নয়।সারাটা দিন আমায় বহু কষ্ট করতে হয়।আপনারা তা কি বুঝবেন?পারেন তো শুধু অন্যের বিষয় না জেনে বাজে বাজে কথা বলতে।নিজের স্বামীকে নিজের চোখের সামনে খুন হতে দেখেছেন? চোখের পলকে নিজের আপন মানুষগুলোকে বদলে যেতে দেখেছেন? আপনারা জীবনের মানে কতটুকু বুঝেন? হয়তো আপনারা আমার বয়সে বড়।কিন্তু আমি এই ২৪ বছর বয়সে যে শিক্ষা পেয়েছি তার ৫% ও আপনারা পাননি।আপনাদের মতো আমার জীবনটা হেসেখেলে পার করার মতো নয়।সমাজে সিঙ্গেল মাদার হয়ে বেঁচে থাকার মর্ম জানেন? রাত করে ভাইয়ের বাইকে ফিরলে একটা মেয়ে দুশ্চরিত্রা হয়ে যায়?আমার বিয়ে নিয়েও আপনাদের সমস্যা। ওকে বিশ্বাস না হলে আমার গ্রামের বাড়ি খোঁজ নিয়ে জেনে আসেন।আমার বাবা সারা গ্রাম দাওয়াত করে খাইয়ে, ধুমধাম করে আমার বিয়ে দিয়েছে।আর আমার ছেলেটাও বৈধ।কোন জারয সন্তান নয়।ওর বাবার পরিচয় আছে।কারো বিষয়ে কথা বলার আগে ভেবেচিন্তে বলবেন।আরেকদিন আমার কিংবা আমার ছেলের নামে এসব কথা বললে আমি বাড়িওয়ালার কাছে তো নালিশ করবোই।সাথে আপনাদের স্বামীদেরকেও আপনাদের এই কুকর্মের কথা জানাবো।চল এরিন।

এরিনঃ আপনাদের সমস্যাটা কি বলবেন? এই বাসায় আসার পর থেকে আমাদের সাথে লেগে আছেন।আমরা কি আপনাদেরটা খেতে যাই নাকি পরতে যাই।নাকি আপনাদের স্বামী ছিনিয়ে নিতে যাই।এতো কিসের সমস্যা আপনাদের? বলি,চুলকানির সমস্যা আছে নাকি? বাসায় কি সবসময় কচু রাখেন।এত চুলকানির সমস্যা থাকলে মলম কিনে ব্যবহার করবেন।তা যদি কেনার পয়সা না থাকে তাহলে আমাদের বলেন।আমরা আবার ভিক্ষুকদের ফিরিয়ে দেই না।যদি মলমে কাজ না হয় তাহলে অন্য ব্যবস্থা করবো।

হিমিঃ কি হইছে এতো চেচামেচি কেন?

আমিঃ কিছু হয় নাই।চল ভিতরে চল।তুই নাভানকে একা রেখে আসছিস কেন হিমি? এরিন এদের সাথে আর কথা বাড়াস না।এরা পরনিন্দা করার জন্য সবসময় ওত পেতে থাকে।মান-সম্মানের ভয় এদের নেই।

আমাদের কথা শুনে তারা রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো।আমরা তাতে পাত্তা না দিয়ে ভেতরে চলে এলাম।দরজা আটকে বড় করে একটা শ্বাস নিলাম।

এরিনঃ টেনে নিয়ে আসলি কেন? আমি আরো কতগুলো কথা শুনিয়ে দিতাম।পাইছে টা কি? যখন সুযোগ পাবে কথা শুনিয়ে দিবে।ওদের কোন পাকা ধানে মই দেই আমরা।ফাউল মহিলা।মন চায় উষ্ঠা মেরে ড্রেনে ফেলে দেই।তারপর সেখান থেকে চুবিয়ে আনি।

হিমিঃ আমাকে কেউ বলবে হইছেটা কি?

আমিঃ এরিনের থেকে জেনে নিস।আমি আর এসব বিষয় কথা বলতে চাইছি না।

নাভানঃ আম্মু, বাবা কো? বাবা আসে না?

রুমে এসে ধপ করে চেয়ারে বসতেই নাভান পাশের রুম থেকে এসে প্রশ্নটা করলো।আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে এরিন, হিমির দিকে তাকালাম।

নাভানঃ বাবা কই? বাবা, আসে না। বাবা আসবে?

আমিঃ এরিন,হিমি ও এসব কথা কার থেকে শুনলো? ওর ছোট মাথায় কে এসব ঢুকালো? ওর সামনে বাবা নিয়ে কথা না বললে তো ও এসব কথা জীবনেও বলবে না। আমি না বলছি ওর সামনে বাবা নিয়ে কোন কথা বলবি না।

এরিনঃ আমি কিছু বলিনি।

হিমিঃ সরি নোভা। আসলে আমি বিকালে বাবার সাথে কথা বলেছিলাম।তখন নাভান আমার সাথে ছিলো।ও হয়তো সেখান থেকে শুনে বলছে।

আমি নাভানের দিকে হাত দুটো বাড়িয়ে দিতেই নাভান আমার কোলে এলো।আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওকে বললাম।

আমিঃ তোমার বাবা ঐ দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে। সেখান থেকে কিভাবে আসবে বলো?

নাভানঃ বাবা,আসতে বলো।

আমিঃ তোমার বাবা জীবনেও আসবে না।

নাভানঃ না, আমার বাবা লাগবে।আমি বাবার কাছে দাবো(যাবো)।

আমিঃ নাভান, মর্জি করো না।(ধমকের সুরে)

নাভানঃ আমি বাবার কাছে দাবো। না, আমি বাবার কাছে দাবো।

নাভান কোল থেকে নেমে ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে কান্না করতে লাগলো।আমার প্রচুর রাগ উঠে গেলো।একটু আগে এমনি মানুষের কথায় মেজাজ বিগড়ে গেছে। এখন আবার নাভানের মর্জি করায় রাগটা আরো বেড়ে গেলো।চট করে নাভানকে ফ্লোর থেকে তুলেই দুই গালে কষিয়ে দুটো চড় মারলাম।এতে নাভান আরো জোরে কাঁদতে লাগলো। এরিন,হিমি দুজনে এসে আমার থেকে নাভানকে সরিয়ে ফেললো।ওরা বুঝতে পারেনি আমি যে নাভানকে মারবো।

হিমিঃ কি করলে এটা? এভাবে কেউ মারে?

এরিনঃ অন্যের জিদ ছেলেটার ওপর দেখাস কেন?

আমিঃ ওকে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যা।নয়তো ওকে আমি মারতেই থাকবো।সারাদিন ওর জন্য খেটে খেটে আমি মরি।আর তার এখন বাবাকে লাগবে।ও নাকি বাবার কাছে চলে যাবে।আমার থেকে এখন ওর বাবা বেশি হয়ে গেছে।

রাগে আমার সারা শরীর জ্বলছে। কিন্তু নাভান এখনো বাবা,বাবা বলেই চেঁচাচ্ছে।আমি রুমে গিয়ে লাইট অন না করে, ফ্যান চালু করে খাটে শুয়ে পরলাম।চোখ দিয়ে অনরবত পানি পরছে। সারাদিনের ক্লান্তিতে আমার চোখ দুটো বুজে এলো।নাভান ওর খালামণিদের সাথে আছে।হঠাৎ ঘুমের ঘোরে মনে হলো কেউ আমার ওপর তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে।তার উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার উপর পরছে।তার শরীরের ঘ্রাণটাও আমার বড্ড চেনা।চোখ খুলতেই আমি________

#চলবে

ভাবছিলাম আজকে ১৩০০+ শব্দ লিখবো।কিন্তু গতকাল দেইনি বলে ২৩০০+ শব্দ লিখছি আজ।প্রচন্ড মাথাব্যথা নিয়েও আপনাদের জন্য গল্প লিখছি।এরপরেও যদি আজকের পর্বে নেক্সট, নাইস পাই তাহলে আগামী ২ দিন গল্প পাবেন না।সাথে কয়েক পর্বে গল্পটা শেষ করে দিবো।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি আজকে।আর না পেলে কি করবো তাতো বলেই দিলাম।

#Part_08

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here