প্রেমানুরাগ পর্ব-২০

0
678

প্রেমানুরাগ পর্ব-২০
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথি

অনুরাগ ইন্ডিয়াতে ফিরে গেছে চারদিন হলো। প্রেমা আবারো আগের মতো হাসি-খুশি ও খুনশুঁটিতে মেতে থাকে। প্রেমার মা আজ ছুটির দিন বলে মেয়েকে জোর করে রান্নাঘরে নিয়ে এসেছেন রান্না শিখাবেন বলে। প্রেমা তার মাকে বুঝিয়েও পারলেন না। তিনি নাছোড়বান্দার মতো আজ মেয়েকে ধরেছেন। তার ভাষ্যমতে,

“তোর শ্বশুর যদি ঝামেলা করে তাহলে তুই রান্না করে খাইয়ে তার মান ভাঙাবি। পুরুষ মানুষের পেটের খোঁজ থেকে মনের খোঁজ পাওয়া যায়।”

প্রেমা চোখ মুখ বেজার করে মায়ের সাথে রান্না করছে।

অনুরাগ নিজের কাজে খুব ব্যাস্ত। মুভিটা শেষ করতে আরো চারমাস লাগবে। মুভি শেষ হবার আগে বিয়ের ব্যাপারটা তুলতে পারছে না। আজ সকাল সাতটা বাজে শুটিং স্পটে থাকতে হয়েছে কারন ভোর সকালের কিছু শট ছিল। রাতের কোনো শট না থাকায় রাত ৮টার মধ্যে বাড়ি ফিরে আসে। অনুরাগের বাবা এসময় পত্রিকা পড়ে। রাত ৯.৩০ পর সে রাতের খাবার খায়। প্রতিদিন অনুরাগ রাত ৯.৩০ তে ফিরে তারপর বাপ-ছেলে একসাথে ডিনার করে যার যার রুমে চলে যায়। একে অপরের সাথে খুব একটা কথা হয়না। মু্ভির কাজ নিয়ে টুকটাক কথা হয়। আজ সাহেল খান ছেলেকে তাড়াতাড়ি ফিরতে দেখে ছেলেকে বলেন,

–গো এন্ড ফ্রেশ। দেন আই হেভ টু টক উইথ ইউ।

অনুরাগ বাবার মতিগতি না বুঝে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাবার রিডিং রুমে যায়। সাহেল খান ছেলেকে দেখে বলে,

–নেক্সট কি এ্যাকশন টাইপ মুভি করবে নাকি রোমান্টিক?
(হিন্দিতে বলেছে আমি বাংলায় লিখলাম)

অনুরাগ কপালে হাত ঘষে বলে,
–নো ড্যাড। আমি রিসেন্টটা করার পর লং ব্রেকে যাবো। তোমার প্রডাকশন হাউজ থেকেই তো তিনটা মুভি ও একটা শর্টফ্লিম করেছি। আর মিউজিক ভিডিও তো তিন-চারটা করলাম। আমার নিজেকে ও পারসোনাল লাইফকেও সময় দেয়া লাগবে।

সাহেল খান চিন্তিত স্বরে বলে,
–কত সময় ব্রেক চাও?

অনুরাগ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–স্পেসিফিক টাইম ঠিক করা নেই। তবে ছয় মাস কোনো ভালো মুভি পেলেও সাইন করবো না। ছয় মাস পর যদি মন মতো কাহিনী পাই তবেই সাইন করবো।

সাহেল খান গম্ভীর স্বরে বলে,
–আমার তোমাকে নিয়ে একটা মুভি ভাবা আছে। সেটা..

অনুরাগ তার বাবাকে থামিয়ে বলে,
–প্লিজ ড্যাড! তোমার ইচ্ছেতে আমি মুভির জগতে এসেছি বলে যে সব কিছু তোমার হিসেবে চলবে তা কিন্তু না। তুমি নিজেও ভালো করে জানো আমি ইন্টারেস্টেড ছিলাম না। তুমি আমাকে বাধ্যও করতে পারতে না যদি মম আমাকে সে প্রমিসটা না করাতো। তুমি তোমার পারসোনাল লাইফকে মিডিয়ার সাথে মিলিয়েছো বলে যে আমাকেও তাই করতে হবে তা কিন্তু না।

সাহেল খান ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
–তুমি কি বলতে চাচ্ছো অনুরাগ?

অনুরাগ হতাশ হয়ে বলে,
–আমি নিজের পারসোনাল লাইফ সিকিউর রাখতে চাই। আমি তোমার মতো রটানো কথায় ভাইরাল হতে চাইনা। নিঃসন্দেহে তুমি একজন অসাধারণ অভিনেতা কিন্তু তোমার পরিবারের কাছে তুমি আইডল হতে পারোনি। আমি নিজের পারসোনাল যেটুকু মিডিয়াতে প্রকাশ করা দরকার শুধু ততোটুকই করবো।

সাহেল খান বিরক্তিতে বলে,
–কথায় কথায় কেনো তুমি পুরোনো কথা টানো? যা ছড়াতো সবটা গুজুব ছিল তা তোমার মাও জানতো। তোমার মায়ের পরে আমি অন্যকারো সাথে রিয়েলি ইন্টিমেট হইনি।

অনুরাগ বলে,
–মমের আগেও তোমার তিনবার ব্রেকআপ ছিলো ড্যাড। যা তোমার বর্তমানকেও কস্ট দিয়েছিল। সাথে আরো রটানো গুজব। আমি চাইনা আমার লাইফে এমন কিছু হোক। আমি এব্রোডে গিয়েও কারো সাথে কখনো ইন্টিমেট হইনি বিকজ মম আমাকে নিষেধ করেছিল। মমের শক্তি আমি ছিলাম। আমি আমার মমকে দেয়া কথা সবসময় রাখবো।

সাহেল খান এবার চেয়ার থেকে উঠে ছেলের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
–গত সপ্তাহে কি বাংলাদেশ নিজের মমকে দেয়া কথা রাখতে গেছিলে? নাকি অন্যকিছু?

অনুরাগ হকচকিয়ে যায়। সে তো কাউকে জানায়নি সে কোথায় যাচ্ছে! তবে কি তার বাবা এয়ারপোর্ট থেকে খবর নিয়েছে? হতাশ হয় অনুরাগ। তারপর মনে মনে আওড়ায়,

“নো ড্যাড, তোমাকে আমি এখনি কিছু জানাবো না। আমার এই মুভিটা শেষ হওয়ার পর যা হবার হবে।”

অনুরাগ মুখে বলে,
–বাংলাদেশ কেনো গেছিলাম সেটা আমার পারসোনাল। আর মায়ের কথা রাখার ব্যাপারটা এখানে এনো না। তোমার সাথে চারবার কাজ করে আমি সেই প্রমিস ফুলফিল করে ফেলেছি। এরপর তোমার থেকেও আমি প্রমিস নিয়েছি। তুমি আমার পারসোনাল লাইফে আর ইন্টারফেয়ার করবে না বা মায়ের ওয়াদার দোহাই দিবে না। মা কিন্তু এটা কখনো বলেনি যে আমার পারসোনাল কোনো চয়েজ থাকবে না!

অনুরাগ চলে আসে সেখান থেকে। সাহেল খান ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আপন মনে সগোউক্তি করে,

“আমার জীবনে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই অনুরাগ। আমার সবকিছু তোমার জন্যই। নিজের কিছু ভুলের জন্য অনেক কিছু হারিয়েছি। নিজের সন্তানের কাছে আজ আমি স্বার্থবাদী। আজ তোমার পারসোনাল লাইফে কোথাও আমি নেই।”

__________

দুই মাস পেরিয়ে গেছে। সবার জীবন গতিশীল। জারিফ আজকে প্রিয়াদের ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করবে। আজকে নতুন সেমিস্টার শুরু হয়েছে। প্রিয়া তো খুব এক্সাইটেড। এখন শুধু দেখার পালা জারিফের কোনো ক্লাশ পায় কিনা প্রিয়া। জারিফ আজ প্রথম দিন হিসেবে কিছুটা নার্ভাস। প্রথম ক্লাশ পড়েছে থার্ড ইয়ারের প্রথম সেমিস্টার মানে সেভেনথ সেমিস্টারের ক্লাশে। তারপর আবার সিক্সথ সেমিস্টারেরও ক্লাশ আছে। আজ দুটোই ক্লাশ।

প্রিয়া মুখ ভার করে এসে প্রেমার পাশে বসে। আজকে তার আর ক্লাশ নেই। প্রেমার আবার এক ঘন্টা পর ক্লাশ আছে। প্রেমা ক্যাম্পাসে নিশিদের সাথে বসে ছিল। প্রিয়াকে মুখ ফুলাতে দেখে প্রেমা জিজ্ঞাসা করে,

–কি হয়েছে তোর? এমন প্যাঁচার মতো করে মুখ করেছিস কেন?

প্রিয়া মুখ ভার করেই বলে,
–একটা ক্লাশ কি উনি নিতে পারেন না বলো? আমি খোঁজ নিয়েছি উনি প্রথম বর্ষের থার্ড সেমিস্টারের কোনো ক্লাশ নিবেন না। এটা কোনো কথা!

প্রেমা কিছুই বুঝেনা প্রিয়া কার কথা বলছে। প্রেমা জিজ্ঞাসা করে,
–কার কথা বলছিস?

প্রিয়া সরলভাবে বলে ফেলে,
–কে আর জারিফ! সে আমাদের কোনো ক্লাশ নিবে না।

প্রেমা চোখ বড় বড় করে বলে,
–জারিফ ভাইয়া না তোর টিচার এখন? তো ভার্সিটির ভিতরে এমনে নাম ধরে ডাকিস কেন! মানুষ বাজে বলবে।

প্রিয়া প্রেমাকে টেনে তুলে বলে,
–আমার খুদা লেগেছে আপু। চলো তো ক্যান্টিনে যাবো।

প্রেমার আর কি করার। খুদা তারো লেগেছে। দুপুর ১.৩০ বাজে। ক্যান্টিনে টিচারদের জন্য একটা আলাদা সেকশন আছে। সেখানে স্টুডেন্টরা যেতে পারে তবে কয়েকটা টেবিল বাদে বাকিগুলাতে স্টুডেন্টরা বসতে পারে। প্রিয়ারা সেখানেই যায়। খাবার অর্ডার করে প্রিয়া ক্যান্টিনের চারদিকে তাকাতে গিয়ে দেখে জারিফ প্রিয়াদের এক ম্যাম রিনা ম্যাম ও তন্ময় স্যারের সাথে বসে বসে খাচ্ছে আর হেসে হেসে গল্প করছে। প্রিয়ার এটা দেখে রাগে নিজের হাতে নিজেই খামচি মারছে এখন। রিনা ম্যাম আনম্যারিড আর তন্ময় স্যার নিউলি ম্যারিড। এখন ওখানে জারিফও আনম্যারিড। প্রিয়ার এবার কান্না পাচ্ছে। প্রিয়া টেবিল থেকে উঠে বাহিরের দিকে চলে যাচ্ছে। তার খাওয়ার ইচ্ছাটাই চলে গেছে। প্রেমা শান্তর মোবাইলে কি যেনো দেখছিল। প্রিয়াকে হুট করে উঠে হনহনিয়ে চলে যেতে দেখে প্রেমা অবাক হয়ে গেছে। প্রেমা কিছুটা জোরে প্রিয়াকে ডাক দেয়। ক্যান্টিনে যেহেতু টিচাররা আছে তাই এখানে সাইলেন্ট থাকতে হয়। হঠাৎ প্রেমার প্রিয়াকে জোরে ডাকার দরুন জারিফ সহ তার কলিগরা সেদিকে তাকায়। জারিফ দেখে প্রিয়া চলে যাচ্ছে আর প্রেমাও ব্যাগ নিয়ে সেদিকে যাচ্ছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি করবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here