শিশির_ভেজা_রোদ্দুর Part_16

0
1148

শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_16
#Writer_NOVA

❝আগার তুম মিল যাওয়ো
পুরানডা ছোর দিংগে হাম❞

বারান্দায় বসে সকালের আকাশ দেখছি আর চেচিয়ে উল্টো পাল্টা লিরেক্সে গান গাচ্ছি।কফি ঠান্ডা হয়ে শরবত হয়ে গেছে।তাও আমার কোন তাল নেই।কফিকে শরবত বলারও একটা কারণ আছে। মনে রং লাগছে তো তাই আজ মনের সুখে এক চামচের বদলে দুই চামচ চিনি দিয়ে কফি বানিয়েছি।তাও গান গাওয়ার তালে ঠান্ডা হয়ে পারফেক্ট শরবত হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠার পর থেকে মনটা আজ ফুরফুরে। কিন্তু কি কারণে তা খুঁজে পাচ্ছি না।মাঝে মাঝে কারণ ছাড়াই আমার মন ভালো থাকে আবার কারণ ছাড়াই মন খারাপ। এক চুমুকে শরবতটুকু সাবাড় করে চোখ মুখ খিঁচে ফেললাম।বাপরে কি মিষ্টি রে।এর পরেরবার মনের সুখের ঠেলায় আর যাই করি চিনি বেশি দিয়ে কফি বানাবো না।তন্বী ঘুম ঘুম চোখে এসাইনমেন্ট কমপ্লিট করছে।ওর স্যার ওদের একগাদা এসাইনমেন্ট দিয়েছে। সেগুলো কমপ্লিট করতে করতে বেচারী বুড়ি হয়ে যাবে। ওকে জ্বালানোর আইডিয়া আমার মাথায় বেশ কিছু সময় ধরে ঘুরছে।তাই আবার জোরে জোরে চিৎকার করে হেড়ে গলায় গান শুরু করলাম।

❝আগার তুম মিল যাওয়ো
পুরানডা ছোর দিংগে হাম
তুমে পা কে যামানে কো
রিস্তা তোর দিংগে হাম
আগার তুম মিল যাওয়ো
পুরানডা ছোর দিংগে হাম❞

উল্টো পাল্টা কি গাইছি তা আমি নিজেও জানি না। আমি জানি ভুল হয়েছে। তারপরেও থেমে নেই। তন্বী একবার কটমট চোখে আমার দিকে তাকালো।আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের মতো গান গাইতে লাগলাম।এবার তন্বী টিকতে না পারে চেচিয়ে উঠলো,

—নোভাপু, দয়া করে তোমার ফাটা বাঁশ গলার গান বন্ধ করো।আমি আর নিতে পারছি না।আমাকে দয়া করে শান্তিমতো একটু এসাইনমেন্টগুলো করতে দাও।আমি অজ্ঞান হলে এগুলো শেষ কে করবে?যদি তোমার গান শুনে আমি সত্যি সত্যি অজ্ঞান হই তাহলে সব এসাইনমেন্ট তোমাকে দিয়ে করাবো।তোমার যদি এতই গান গাইতে ইচ্ছে করে তাহলে দয়া করে বাথরুমে যাও।সেখানে চেচিয়ে গান গাইলেও আমার কানে ততটা লাগবে না।

আমি মুখ বাঁকিয়ে ওকে ভেংচি কেটে বললাম,
—এর জন্য কারো ভালো করতে নেই। আমি তোর একঘেয়েমী দূর করতে গান শুনিয়ে বিনোদন দিতে চাইলাম।আর তুই আমাকে অপমান করছিস।যা শুনাবো না তোকে গান।আমার গান শোনার জন্য দুদিন পর দেখিস বড় বড় অডিশন থেকে লোক আসবে।

—অনেক চাপা মারছো বোইন,এবার থামো।তোমার এই গান শুনলে সাধারণ পাবলিক তোমাকে গালি-গালাজ করে পচা ডিম,টমাটো ছুঁড়ে মারবে। আর বড় বড় অডিশনের লোকরা তো বহু দূরেই থাক।ভুলে যদি তারা এসেও পরে তাহলে তাদের জন্য এম্বুলেন্স ভাড়া করতে হবে।

—কেন?

—তারা তো সবাই অজ্ঞান হয়ে যাবে।তাদের কে তো হসপিটালে নিতে এম্বুলেন্স লাগবে।কানেও কম শুনবে।তোমার এই হেড়ে গলার গান শুনে তো তাদের কান দুটো আস্ত থাকবে বলে মনে হয় না।

আমি রেগে চিৎকার করে বললাম,
—তন্বীরে থাম জলদী।

—তুমি আর গান গেয়ো না।তাহলে আমি অটোমেটিক থেমে যাবো।

—ধূর,মুডটাই নষ্ট। আজকাল শিল্পীদের কেউ সম্মানই দেয় না।

—আসল শিল্পীদের সবাই সম্মান দেয় নোভাপু।কিন্তু বাথরুম সিঙ্গারদের কেউ সম্মান দিবে না। তাদের সম্মান দিতে গেলে দেখা যাবে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষই শিল্পী হয়ে গেছে।

—চুপ থাক তুই। গান গাওয়ার মুডটাই নষ্ট করে দিছিস।

তন্বী হো হো করে হেসে উঠলো। আমি একবার ওর দিকে তাকিয়ে ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবার আকাশের দিকে তাকালাম।মেয়েটা আমার মান-সম্মান পুরো ফালুদা বানিয়ে দিলো।কোথায় যেচে গিয়েছিলাম ওকে জ্বালাতে।সেখানে আমিই অপমানিত হয়ে এলাম।আমার এই হেড়ে গলার উজ্জ্বল প্রতিভা মিশ্রিত কন্ঠটাকে কেউ মূল্যায়ন করে না।যেদিন আমি সুপার সিঙ্গার হয়ে যাবো সেদিন সবাইকে দেখিয়ে দিবো।কিন্তু আমাকে সুপার বাথরুম সিঙ্গার পুরষ্কারটা দেবে কে?এটাও তো ভাববার বিষয়। না,এই পৃথিবীতে আর্টিস্টদের কোন গুরুত্বই দেওয়া হয় না।আমি আজই মঙ্গল গ্রহে পাড়ি দিবো।

💖💖💖

—আসসালামু আলাইকুম বড় আপু।

কলেজ গেইট দিয়ে আমি,তন্বী,শারমিন ঢুকতেই রওনক আমাকে দেখে বিশাল বড় একটা সালাম দিলো।আমি ভিলেন স্টাইলে একটা হাসি দিয়ে সালামের উত্তর নিলাম।

—ওয়া লাইকুমুস সালাম ছোট ভাই।তা খবর কি?দিনকাল কেমন চলে?

—আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কোন মানুষ নেই। তাই রওনক মহাশয় এতো জোরে সালাম দিয়েছে।মানুষ থাকলে এতক্ষণ সে লেজ গুটিয়ে পালাতো।আমার ধারের কাছেও তাকে দেখা যেতো না।তার সাঙ্গপাঙ্গরা মুখে তালা মেরে দাঁড়িয়ে আছে। একেকটার মুখের ভাব-ভঙ্গি এমন যে কেউ তাদের মুখে কলুপ এঁটে দিয়েছে। আজকাল রওনক ও তন্বীর মধ্যে বেশ ভাব দেখতে পাচ্ছি। দুজন দুজনের সামনাসামনি হলেই মিষ্টি হাসি দেয়।সাথে চোখের ইশারায় কথাবার্তাও হয়।লক্ষণ বেশ সুবিধার ঠেকে না আমার।মন বলছে এদের মধ্যে কোন চক্কর চলছে।তন্বী ঠাসিয়ে ধরতে হবে।এমন ভাবে ব্লাকমেইল করে কথা বের করতে হবে যেনো সাপও না মরে আর লাঠিও না ভাঙে।

এদিক-সেদিক তাকিয়ে হাই তুলে রওনককে উদ্দেশ্য করে বললাম,

—সূর্য আজ বোধহয় পশ্চিম দিক দিয়ে উঠেছে।

আমার কথা শুনে রওনক বোকার মতো জিজ্ঞেস করলো,

—কোথায় না তো।সূর্য তো পূর্ব দিক দিয়ে উঠেছে। পশ্চিম দিক দিয়ে উঠলে তো এতক্ষণে কেয়ামত হয়ে যেতো।

—সোজা জিনিস বুঝেও না বোঝার ভান কেন করেন?আমি কোন হিসেবে কথাটা বলেছি তাতো আপনি জানেন?তাহলে আবার বোকা সাজছেন কেন?

আমি কিঞ্চিত বিরক্তির সহিত রওনককে কথাগুলো বললাম।রওনক মাথা চুলকাতে চুলকাতে তন্বীর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারা করলো।তন্বীও চোখের ইশারায় কি জানি বুঝালো।ওদের কথা ওরাই বুঝলো।মাঝখানে আমি বেকুবের মতো তাকিয়ে রইলাম।শারমিন তো সেই কখন থেকে হা করে তাকিয়ে আছে। বেচারী আমাদের কারোর কথার কিছুই বুঝতে পারছে না।আমি কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,

—কি হচ্ছে এখানে?

তন্বী ইতস্তত গলায় বললো,
—কই কিছু না তো।

—আমি তো দেখলাম কিছু হচ্ছে। আই কানেক্টেডও দেখলাম। তা দুজনের চোখে চোখে কি কথা হলো?ভাবসাব তো আমার ভালো ঠেকছে না।কি চলছে দুজনের মধ্যে?

রওনক কিছুটা চমকে বললো,
—কি আর চলবে?আমি তো শুধু ওর দিকে তাকালাম।তাতেই কি দোষ হয়ে গেলো?

—শুধু তাকালে দোষ হতো না। কিন্তু চোখ চোখ তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে তাই দোষ হয়েছে।

রওনক মৃদুস্বরে আমাদের বললো,
—তেমন কিছুই না।(সাথেরগুলোকে উদ্দেশ্য করে বললো)এই চল তোরা।আসছি।

রওনক “আসছি” কথাটা তন্বীর দিকে তাকিয়ে বলে দ্রুত প্রস্থান করলো।শব্দটা উচ্চারণ করার সময় যে রওনকের দুই ঠোঁটের মাঝখানে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেছিলো তা অন্য কেউ খেয়াল না করলেও আমার জহুরি চোখের আড়াল হয়নি।যে জিনিসটা আমার সন্দেহ হবে আমি সেটা জহুরির তীক্ষ্ম চোখে লক্ষ্য করি।তাই তেমন কিছু নজরে এড়ায় না।তন্বী দ্রুত পায়ে সামনে চলতে চলতে বললো,

—আমার ক্লাশে দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমি গেলাম।

তন্বী যে সাইড কাটিয়ে চলে গেল। তা ভালো করে বুঝে ফেলছি।কিন্তু ওকে তো আমি পরে জোকের মতো জেঁকে ধরবো।এখন কিছুই বলবো না। শরমিন অসহায় মুখে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

—আমাকে কি বলবি একটু আগে এখানে কি হলো?আমি তো তোদের কথার কিছুই বুঝলাম না। রওনক তোকে সালাম দিলো,তোকে আপু বললো।তুই ওকে ছোট ভাই বললি।তন্বীর এভাবে চলে যাওয়া।কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার।

—আচ্ছা তোকে প্রথম থেকে সব খুলে বলি।

—জলদী বল।

শারমিনকে প্রথম থেকে সব খুলে বললাম।সব কথা শুনে শারমিন চোখ দুটো রসগোল্লা করে বললো,

—তুই একা এতকিছু করে ফেলছিস।আর আমাকে একটু জানালিও না।

—এই যে এখন জানালাম।বকরবকর না করে জলদী পা চালা।ক্লাশে বোধহয় স্যার চলে গেছে।

দুজন দ্রুত হাঁটতে লাগলাম। হঠাৎ আমার চোখ পরলো প্রিন্সিপালের রুমের দিকে।আমাদের ক্লাশে যেতে হলে তার রুম ক্রস করে যেতে হয়।স্যারের রুম থেকে এ্যাশ কালারের ব্লেজার, গলায় ছাই কালার ওড়না,কালো প্যান্ট পরিহিত একটা সুদর্শন চেহারার ছেলে বের হলো। সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে মোবাইলে কারো সাথে কথা বলতে শুরু করলো। তাকে দেখে অলরেডি আমার পা থেমে গেছে। সারা পৃথিবী মনে হচ্ছে ঘুরছে।ছেলেটার পেছন দিকে ঘুরে থাকলেও তার এক সাইড আবছা বোঝা যাচ্ছে। আর সে যে আমার ভয়ানক অতীত।তাকে চিনতে তো আমার ভুল হতে পারে না। আমি এক কদমও এগুতে পারলাম না। সারা শরীর আমার ঠান্ডা হয়ে আসছে।আমার মস্তিষ্ক তখন একটা কথাই জানান দিলো। তা হলো,”নোভা এখান থেকে পালা।নয়তো তুই তোর অতীতের সম্মুখীন হবি।যা তোকে আবারো কুঁড়ে কুঁড়ে বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছেটাকে মেরে ফেলবে।” আমিও মস্তিষ্কের কথায় সায় দিলাম।সে আমার দিকে ঘোরার আগেই আমি পেছন দিকে দৌড় দিলাম।পেছন থেকে শারমিন ডেকে বলছে,

—এই নোভা কি হয়েছে তোর?তুই দৌড়াচ্ছিস কেন?বলবি তো কি……

ওর কথা শোনার টাইম নেই আমার।আমি ঐ মানুষটার মুখোমুখি হতে চাই না।কিছুতেই চাই না।
এর জন্যই তো সব ছেড়ে এখানে চলে এসেছি।কলেজের পেছন দিকে এসে হাঁপাতে লাগলাম। আরেকটু সময় সেখানে থাকলে আমি নির্ঘাত জ্ঞান হারাতাম।কিন্তু আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না,”সে এখানে কেন?”

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম। যারা প্রজাপতির রং গল্পটা পড়েছেন তারা বলুন তো ছেলেটা কে হতে পারে?গেইস করুন,পেয়ে যাবেন।

আরেকটা কথা,আজকাল গল্প লিখতে একটুও ভালো লাগে না। তবুও কষ্ট করে মনটাকে ধরে বেঁধে লিখতে বসি।এখন আর আগের মতো দুই বা আড়াই ঘন্টা ব্যয় করে বিশাল গল্প লিখতে ইচ্ছে করে না।এক ঘন্টা সময় নিয়ে লিখতে বসি।এক ঘন্টায় যতটুকু লিখতে পারি ততটুকুই দেই।এখন থেকে এতটুকু করেই গল্প দিবো।একঘন্টায় ১২০০+ শব্দ লিখতে পারি।তাই প্রতিদিন এতটুকু গল্পই পাবেন।১২০০+ শব্দ লিখলেও সেই নেক্সট, নাইস,স্টিকার কমেন্ট পাবো।আর ২৫০০+ লিখলেও একি অবস্থা। সেই হিসেবে আমার এক পর্বে এক ঘন্টা ব্যয় করে ১২০০+ লেখাই যুক্তিযুক্ত। কারো আমার ওপর অভিযোগ থাকলে আমার কিছু করার নেই। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।যেদিন মন চাইবে সেদিন এমনি বড় করে দিবো।আর কেউ বড় করে দিতে বললেও কারো কথা আমি শুনছি না।ছোট করে গল্প দেওয়ায়, আমার ওপর রাগ হলেও আমার কিছু করার নেই। আমারও রাগ হয় নেক্সট, নাইস,স্টিকার কমেন্ট দেখলে।আমিও যেমন চুপচাপ সব হজম করে নেই। আপনারাও একটু কষ্ট করে হজম করে নিয়েন🌚।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here