শিশির_ভেজা_রোদ্দুর Part_07

0
1406

শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_07
#Writer_NOVA

❝বয়স আমার হইলো কুড়ি,
কুড়ি থিকা হইছি বুড়ি।
পাড়ার লোকে গল্প করে,
আমার বয়স নিয়া।
আমায় নাকি কেউ কোনদিন,
করবো না যে বিয়া ❞🥀

সারা ছাদে পায়চারি করে দাঁত ব্রাশ করছি আর বেসুরা গলায় চেচিয়ে গান গাইছি।মাঝে মাঝে আমার আবার এরকম বেসুরা গলায় জোরে জোরে চেচিয়ে গান গাইতে ভীষণ ভালো লাগে।ব্রাশটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এই মুহুর্তে দাঁত ব্রাশ করে আমার গান গাওয়ার মুডটা নষ্ট করতে চাইছি না।আজ ফজরের নামাজ পরে আর ঘুমায়নি।রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পরেছি বলে ঘুমটাও জব্বর হয়েছে। ফ্রেশ মুডে থাকায় গান গেয়ে সেটাকে আরো চাঙ্গা করে নিচ্ছি। হঠাৎ পেছন থেকে একজন আমাকে বললো,

—কি করো বউ?আমি তোমাকে সারা বিল্ডিং-এ খুঁজে হয়রান আর তুমি এখানে?

“বউ” ডাক শুনে হেরে গলার গান থামিয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে পেছনে তাকালাম।তাকিয়ে দেখি বাড়িওয়ালার বড় নাতি ইফাত দুই হাত গুঁজে আমার দিকে (😒)এই ইমোজিটার মতো করে তাকিয়ে আছে।
আমি কপাল কুঁচকে ইফাতকে জিজ্ঞেস করলাম,

—এই তোর বউ কে?

—কেন তুমি!

—আমি তোর বউ কবে হলাম?

—কেন ভুলে গেছো নাকি?

—সত্যি ভুলে গেছি।

—তুমি না বলছিলা দাদাভাইয়ের থেকে ছাদের চাবি তোমাকে এনে দিলে তুমি আমাকে বিয়ে করবা।

—ঐটাতো কথার কথা ছিলো।

—আমি জানি না। তোমার এখন আমাকেই বিয়ে করতে হবে।

—কেন?

—আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

এর কথা শুনে আমার স্ট্রোক করার অবস্থা। পিচ্চি ছেলে বলে কি?বয়স মাত্র ১০ বছর।সে নাকি আমাকে ভালোবাসে।এই পিচ্চি পোলা অবসর থাকলেই আমার সাথে আঠার মতো লেগে থাকবে।কয়দিন ধরে ওর মায়ের কাছে বায়না ধরেছে আমাকে ছাড়া নাকি বাঁচবে না। বিয়ে করলে আমাকেই করবে।এতদিন শুধু আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ করতো।সেদিন ছাদের চাবির জন্য পটিয়েছিলাম।সকালের দিকে যেদিন তাড়াতাড়ি উঠে যাই সেদিন আমি ছাদে আসি।তাই ওকে বলছিলাম ওর দাদার থেকে চাবি নিয়ে আসতে।তখন এই পিচ্চি পোলা একটা আজব শর্ত জুড়ে দিলো।বলে কিনা আমি যদি ওকে বিয়ে করি তাহলে আমাকে চাবি এনে দিবে।তখন বিষয়টাকে দুষ্টামি ধরে আমিও বলেছিলাম ওকে বিয়ে করতে রাজী।তারপর যে এত কান্ড হয়ে যাবে তা যদি জানতাম তাহলে এই বাচ্চা ছেলের থেকে দশ হাত দূরে থাকতাম।

আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ইফাত আবারো জিজ্ঞেস করলো,

—তুমি আমাকে বিয়ে করবা না?

আমি স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে কেউ আমার বাকশক্তি কেড়ে নিয়েছে। চোখ দুটো উল্টে দুই হাত কোমড়ে রেখে বললাম,

—আমি তোর কয় বছরের বড় তা কি তুই জানিস?সঠিক সময়ে বিয়ে হলে তোর সমান একটা ছেলে থাকতো আমার।কিন্তু আমার বাবা-মা আমাকে বুড়ি বানাচ্ছে। তাই তো মনের দুঃখে গান গাইতাছি।

কথাগুলো বলে জোরে চেচিয়ে আবার গান গাইতে শুরু করলাম।

“বয়স আমার হইলো কুড়ি
কুড়ি থিকা হইছি বুড়ি”

পুরো গান আর গাইতে দিলো না। তার আগেই ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে তন্বী দুই হাত কানে দিয়ে চিৎকার করে বললো,

—চুপ করো নোভাপু।আমাকে অজ্ঞান করার ধান্দায় আছো নাকি? এই গান খোলা আকাশের নিচে গাইয়ো না।

আমি চোখ দুটো ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করলাম,

—কেন?

—তাহলে যে কাক তাদের দলের সদস্য মনে করে তোমাকে নিয়ে যাবে।

—তন্বীরে!!আজ তোর খবর আছে😤।

আমি দৌড়ে ওর কাছে যাওয়ার আগেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো।আমি আবার ইফাতের সামনে এসে দাঁড়ালাম। কাঠ কাঠ গলায় বললাম,

—তোর মায়ের কাছে বিচার দিতে হবে। বাচ্চা পোলাপাইন পেকে গেছে। তোরে যেন সামলে রাখে।

—তুমিও মিলায় নিয়ো আমি ছাড়া তুমি আর কারো হতে পারবা না।বউ হলে এই ইফাতের হইবা।তুমি যদি আমার না হইতে পারো তাহলে আর কারো হতে দিবো না।তুমি শুধু আমার।আমি তোমারেই বিয়া করুম।

—বুঝছি,তোর দাদারে কইতে হইবো এই বাচ্চা পোলাপাইন নিয়া বাংলা ছায়াছবি দেখতে বসবেন না।আপনার নাতির ওপর বাংলা মুভির বিখ্যাত ডায়লগের প্রভাব পরছে।যার কারণে আমারে সারাক্ষণ মুভির ডায়লগ শোনায়।ঐ তোর দেখি এখনো নাক টিপলে সর্দি পরে।তুই আমারে কিভাবে বিয়ে করবি হ্যাঁ?

—আমার তোমার ভবিষ্যতের জামাই হই।তাই সম্মান দিয়া কথা কইবা।তুই কইরা কও কে?ভালোবাইসা তুমি কইতে পারো না।

—ওরে আমার ভালোবাসার নাগররে!! আমি এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনমু।এর মধ্যে যদি না যাস এখান থিকা,তাহলে তোরে কোলে কইরা ছাদের থিকা ফালায় দিমু।জানে বাঁচতে চাইলে জলদী ভাগ।১…….২…….৩

—যাইতাছি, যাইতাছি।তবে মনে রাইখো একদিন তুমি বুঝবা আমি তোমারে কত ভালবাসতাম।তখন তুমি আমার লিগা কাঁদবা।কিন্তু আমারে পাইবা না।বুঝবা আমি তোমার জন্য কত পাগল ছিলাম।

—তোর বাংলা ছবির ডায়লগ শেষ হইছে?পড়ালেখা রেখে সারাদিন বাংলা মুভি দেখা ছুটাইতাছি তোর।দুই আনার পুঁচকে পোলা কথা কয় ষোল আনার মতো।আবারো দাঁড়ায় রইছিস।গেলি এখান থেকে। তোরে যদি আমার আশেপাশে দেখি।তাহলে সত্যি কথা তোরে কোলে নিয়া এমন আছাড় মারমু তুই পুরা গাইল্লা যাবি।

—একদিন বুঝবা এই ইফাত তোমার জীবনে কি ছিলো!!

—আবার!!

আমি ঠোঁট কামড়ে রাগি ভঙ্গিতে ইফাতের দিকে তেড়ে যেতে নিলেই ইফাত ছাদের দরজা দিয়ে দৌড়ে পালালো।এই পিচ্চি পোলা দাদার সাথে বাংলা মুভি দেখতে দেখতে পেকে ঝুনা হয়ে গেছে। কি করলাম এই ব্যাঙের ছাতার জীবনে।একটা ১০ বছরের পিচ্চি পোলা নাকি আমারে ছাড়া মইরা যাইবো।ভাই তোমরা কেউ বিষ খাও আমি মরে যাই।

💖💖💖

আজ সকাল সকাল তায়াং ভাইয়া ও এনজিও সংস্থা একসাথে কোথায় জানি গিয়েছে। কি একটা কাজ আছে নবাবপুত্তরদের।তাই উদ্ধার করতে গেছে। যার দরুন আমি ও তন্বী রিকশায় করে কলেজ চলে এলাম।তায়াং ভাইয়া থাকলে একটানে বাইকে করে দিয়ে যেতো।কলেজে এসে শুনলাম রাতে নাকি আর কনসার্ট হয়নি।মারামারির রেশ ধরে সব ভন্ডুল হয়ে গেছে। এতে একটু খুশি হলাম,কেউ কনসার্ট দেখতে পারেনি তার জন্য। গতকালের মারামারির আজ বিচার হবে।একজনের মুখে শুনতে পেলাম ছাত্রদলের ছেলেরা নিজেদের মধ্যেই মারামারি করেছে। তার জন্য কলেজ কতৃপক্ষ বিচার ডেকেছে। তাতে আমার কি?আমি এই ভেজালে নেই। এসব থেকে যতদূর সম্ভব আমি দূরে থাকি।কোনদিকে না তাকিয়ে ক্লাশে চলে গেলাম।

গতকাল কনসার্ট ছিলো কোথায় আজ বন্ধ দিবে।তা না করে কলেজ করতে হচ্ছে।যার কারণে হেব্বি বিরক্ত আমি।ক্লাশে ঢুকতেই চিকনা-চাকনা দেশি মুরগীর মতো দেখতে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর পিঠে চাপর দিতে দিতে বললো,

—এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো?

এই চিকনা-চাকনা দেশী মুরগীটা হলো আমার কলিজার টুকরো বান্ধবী শারমিন। এতবড় নাম ডাকতে আমার কষ্ট লাগে বলে আমি শারু বলে ডাকি।গত দুই দিনের কনসার্টে ও আসেনি।ওর বাসার থেকে রাতে আসতে দিবে না।তাছাড়া একটু অসুস্থও ছিলো।

আমি গাল ফুলিয়ে ওকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললাম,

—তোকে খুব মিস করছি।তুই এলে অনেক খুশি হতাম।

—তুই তো জানিস আমার পরিবার কেমন! তোর তো তাও আপন ভাইয়ের মতো একটা খালাতো ভাই আছে। আমার তো কেউই নেই। একা বাসা থেকে কি করে ছাড়বে বল?আমার নিজের বিবেকেও তো বাঁধে।

—তাই তো তোকে বেশি জোর করিনি।

শারমিনের মনটা বিষন্ন দেখে আমারও খারাপ লাগলো।তাই আমি কথা পাল্টানোর জন্য বললাম,

—দেখতো কার ভালো লাগে এসব!গত দুইদিন এতো কিছু হলো কোথায় আজ বন্ধ দিবে।তা না করে আজও কলেজ খোলা।উনারা পড়াশোনা করিয়ে আমাদের একদম বিদ্যাসাগর বানিয়ে ফেলবে।

—বন্ধ তো আগামীকাল।

—কেন?

—ওমা,তুই দেখছি কিছুই জানিস না।আমি দুই দিন না এসে খবর পেয়ে গেলাম।আর তুই এসেও কিছু জানিস না।

—তুই জানিস না,আশেপাশের কোন খবর আমি রাখি না।আমি আমার মতো থাকি।

—হ্যাঁ, জানি।শোন,আজ বুধবার।আজ যদি বন্ধ দিতো তাহলে আগামীকাল আবার কলেজে আসতে হতো।তাই আগামীকাল বন্ধ দিবে আর আজ খোলা।এতে করে সবাই একসাথে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিন বন্ধ পাবে।তাই প্রিন্সিপাল বুদ্ধি করে আজ বন্ধ দেয়নি।এটা তো সিম্পল হিসাব।

—ওহ আচ্ছা। আমার মাথায় তো এই বিষয়টা আসেনি।

—আসবে কি করে?সারাক্ষণ তো তোর মাথায় শয়তানি বুদ্ধি ঘুরে।কিভাবে মানুষকে জব্দ করতে পারবি,কিভাবে ভেজাল করবি,কিভাবে তোর খালাতো ভাইকে ঝামেলায় ফেলতে পারবি।এসব নিয়ে থাকলে সিম্পল বিষয় ঢুকবে কি করে?

—😁😁

—দাঁত বের করে হাসিস না।

আমি শারুকে টেনে নিয়ে একসাথে বেঞ্চে বসলাম।তারপর ওকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

—শোন শারু,তায়াং ভাইয়া আর আমার মধ্যে হলো টম এন্ড জেরী সম্পর্ক।দুজন সুস্থির হয়ে কখনো মিলেমিশে থাকতে পারি না। ঝগড়াঝাটি লাগবেই। আমার বয়স ২১ বছর আর ওর ২৮ বছর। অথচ আমার মনেই হয় না আমরা ৭ বছরের ছোট-বড়।বরং মনে হয় আমরা পিঠাপিঠি ভাই-বোন। ও কিন্তু আমাকে তন্বীর থেকে কোন অংশে কম ভালোবাসে না।তুই হয়তো অন্য কিছু ভাবতে পারিস।কিন্তু ভাইয়া আমাকে নিজের বোনের চোখে দেখে। ওর যে আমার প্রতি বোনের ভালোবাসা আছে সেটা কখনো প্রকাশ করে না।কিন্তু আমার কিছু হলে পাগল হয়ে যায়।আমি সত্যি ধন্য ওর মতো একটা ভাই পেয়ে।যে কোন অংশে আমার নিজের ভাইয়ের থেকে কম নয়।

—দোয়া করি তোরা যেনো সবসময় এমনি থাকতে পারিস।

—শুকরিয়া!!জানিস শারু কি হয়েছে?

—কি?না বললে জানবো কি করে?

—তায়াং ভাইয়ার এক ফ্রেন্ড আসছে অস্ট্রেলিয়া থেকে।দেখতে,শুনতে মাশাআল্লাহ 😍।আমি কিন্তু সেই লেভেলে ক্রাশ খাইছি।

—তাই নাকি!!!

—হো😌।

—ঘটনা কি সব খুলে বলতো?

—ম্যাম আসছে। পরে বলবোনি।

—ওকে।

আমাদের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ক্লাশে ম্যাম ঢুকে পরলো।লক্ষ্মী মেয়ের মতো ক্লাশ করছি।হঠাৎ ক্লাশের শেষ পর্যায় কতগুলো ছেলে ম্যামের পারমিশন নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।একজন আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—তোমাদের মধ্যে নোভা কে?

আমার নাম শুনে চমকে আমি শারমিনের দিকে তাকালাম।তাকিয়ে দেখি ও আগের থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেগুলোর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম রওনকের দলের।ওমনি আমার হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেলো।ছেলেটা বিরক্ত মুখে আবারো জিজ্ঞেস করলো,

—তোমাদের মধ্যে নোভা কে বলো?

আমি শারমিনের বাহুতে এক হাত ঢেকে মুখ লুকালাম।কিন্তু কাজ হলো না। এক মেয়ে আমাকে দেখিয়ে দিলো।ছেলেটা আমার সামনে এসে বললো,

—লুকিয়ে কাজ হবে না। আমাদের সাথে চলো।

আমি বড়সড় একটা ঢোক গিলে তাদের দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

—কেন?

—রওনক ভাই তোমাকে ডাকছে।

–কিসের জন্য ডাকছে?

—সেটা গেলেই বুঝতে পারবে।

—আমি পরে যাবো।

—বড় ভাই এখন ডাকছে মানে এখুনি যেতে হবে।

—পরে গেলে হবে না।

—তুমি তো দেখছি অতিরিক্ত কথা বলো।এখুনি,এই মুহুর্তে তোমাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।

ছেলেটার ধমক মিশ্রিত কন্ঠে আমি কিছুটা কেঁপে উঠলাম।শারমিনের দিকে তাকাতেই ও চোখের ইশারায় যেতে বললো।আমি মনে মনে লা ইলাহা ইল্লা আনতা সোবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যলিমিন পড়তে পড়তে দুরুদুরু বুকে ক্লাশ থেকে তাদের সাথে বের হয়ে গেলাম।আল্লাহ জানে আজ আমার কপালে কি আছে!!!সবাই দোয়া করেন।আমি যাতে ঐ বেডা রওনকের হাত থেকে বেঁচে ফিরতে পারি।কিন্তু সেখানে গিয়ে……….

#চলবে

“নায়ক কে” তা অনেকে বুঝতে পারছেন না!! যারা আমার এই জুটির গল্প আগে পড়ছেন তারা তো জানেন কে নায়ক।কিন্তু যারা নতুন তাদেরকে বলেছি, গল্পের নায়ক হলো এনাজ।আমি কাজিন লাভ স্টোরি লিখি না।তাই তায়াং নায়ক হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here