শিশির_ভেজা_রোদ্দুর Part_26

0
1085

শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_26
#Writer_NOVA

— কে? কে আপনি?

আমার গলার স্বর বারবার কেঁপে উঠলো। কিন্তু সে আমাকে ছাড়ছে না। অসহ্যকর একটা অবস্থা। পারছি না আমি তাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে চলে যেতে। কান্না থেমে গেলেও সে থেমে থেমে ফোঁপাচ্ছে।চোখটা না বাঁধলে এতক্ষণে তার মুখে জোরে একটা ঘুষি বসিয়ে দিতাম। তিন ঘন্টার বেল পরে গেছে। সবাই এখন বেরিয়ে যাবে। কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে তো আরেক সর্বনাশ। রাগে হাত দুটোকে মুঠ করলাম। তাতেও যেন রাগ কমছে না। আমি খামচি দেওয়ার জন্য এক হাত উঠিয়ে তার মুখের সামনে নিতেই, সে তার এক হাত দিয়ে আমার দুই হাত পেছনে মুচড়ে ধরলো। আরেক হাতে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলো। আমি এবার বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠেয় বললাম,

— কি অসভ্যতামী শুরু করেছেন? ছাড়ুন আমাকে। নয়তো আমি চেচিয়ে সারা কলেজের মানুষ এক করে ফেলবো। ইডিয়ট, আমার কোমড় ছাড়েন। নোংরামি করার জায়গা পান না? একটা মেয়েকে একা পেয়ে সুযোগের স্বদ্যবহার করছেন? পরিবার থেকে কি এই শিক্ষা পেয়েছেন?

ভেবেছিলাম এসব বললে রেগে ছেড়ে দিবে। কিন্তু আমি হতাশ। সে এখনো পূর্বের ন্যায় আমাকে ধরে রেখেছে। আমার হাতেট কব্জির হাড্ডি বোধহয় এই ভাঙলো। এত শক্ত করে কেউ ধরে। সে একটা শব্দও করলো না। আমি আবারো তার হাত থেকে ছুটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলাম। তাকে থ্রেট দিতে লাগলাম।

— দেখুন, আমাকে ছেড়ে দিন। নয়তো সত্যি খারাপ হয়ে যাবে। বোবা নাকি? কথা বলতে পারেন না? আচ্ছা বুঝলাম কথা বলতে পারেন না? তার সাথে কি কানে কালাও? আমার কথা কি শুনতেও পারছেন না? আচ্ছা জ্বালাতো! আমার হাত ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি তো। ষাঁড়ের মতো শক্ত হাড্ডি। আমার হাতের কচি হাড্ডিগুলোকে ভেঙেই ফেলবে। ও আল্লাহ কোথায় তুমি? এই বেডার হাত থেকে বাঁচাও আমায়।

— আই এম সরি রাই! আই এম রিয়েলি সরি। আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও প্লিজ।

তার কন্ঠস্বর শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। মোচড়ামুচড়ি থামিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। তার মানে এতক্ষণ ধরে আমি তার কাছে আছি। হুট করে সারা শরীর রাগে রি রি করতে লাগলো। হাত দুটোকে আচমকা তার থেকে ঝাড়া মেরে ছাড়িয়ে নিলাম। মানুষ মাত্রাতিরিক্ত রাগলে তার শরীরে এমনি আলাদা শক্তি চলে আসে। আমারও তার বিপরীত হয়নি। এতক্ষণ তার শক্তির সাথে পারছিলাম না। আর এখন এক ঝাড়ায় নিজেকে তার থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছি। একটানে চোখের কাপড়টা সরিয়ে দেখলাম সে কান্না চোখে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

— আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে স্পর্শ করার?

— রাই আমার কথাটা শুনো।

— থামুন মিস্টার রোশান দেওয়ান। কিছু বলার অধিকার আপনার নেই। আপনি তা বহু আগে তা নিজে নষ্ট করে ফেলেছেন। আচ্ছা আপনার কি লজ্জা করে না? কোন মুখে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন? ও আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনাদের দেওয়ান বাড়ির ছেলেদের আবার লজ্জা-শরম এমনি কম। কথার বেলায় ঠিকই খই ফুটে। কিন্তু কাজের বেলায় ঠনঠনাঠন ঘন্টা। আমি চিন্তা করছি মানুষ কতটা বেহায়া হলে আবার ফিরে আসে?

— রাই, একবার আমাকে একটু বলার সুযোগ দাও? প্লিজ একবার আমার কথাটা শুনো। আমি তোমায় ভুল বুঝেছিলাম। আমি……

রোশানের পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি তাকে হাত দিয়ে থামিয়ে বললাম,

— ব্যাস, অনেক বলেছেন। আর কিছু শুনতে চাই না আমি। সরল মনে অনেক বেশি ভালোবেসে ছিলাম তো তাই তার ফল উপহার দিয়েছেন। তা যে মেয়েকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাকে মেরে দিয়েছিলেন তার সামনে দাঁড়ানোর মতো মুখ আপনার কিভাবে হলো? আপনি না সেদিন খুব বড় মুখে বলেছিলেন আমাকে আপনার মুখ দেখাবেন না। আমিও যেন আমার মুখ আপনাকে না দেখাই। তারপরেও বেহায়ার মতো আপনাকে বুঝানোর জন্য কতবার গিয়েছি। কিন্তু অপমান,ধিক্কার ছাড়া আর কিছুই পাইনি। তা আপনি নিজের ঐ চেহারাটা দেখাতে কোন সম্মান নিয়ে এসেছেন?

— আমি তোমাকে এখনো ভালোবাসি রাই।

— ঐ তোর ভালোবাসার নিকুচি করি। (কিছুটা থেমে) ভালোবাসা শব্দটা না আপনার মতো মানুষের মুখে মানায় না। তাই ঐ শব্দ উচ্চারণ করে তাকে কলুষিত করেন না। আর হ্যাঁ, আমাকে রাই বলে ডাকবেন না। রাই বলার কোন অধিকার আপনার নেই। আমার পিছু নেওয়া ছেড়ে দিন। নয়তো আমি একশান নিতে বাধ্য হবো। আপনাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমি এখানে এসেছি। দয়া করে আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। আমি সব ভুলে নতুন জীবন শুরু করেছি। যার মধ্যে পুরোনো কোন আবর্জনা আমি দেখতে চাই না। যদি আবর্জনা এসে আমার জীবনে জুটে তাহলে তাকে ড্রেনে ছুঁড়ে ফেলতে ২য় বার ভাববো না।মাইন্ড ইট।

— আমি ভুল ছিলাম রাই। আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিলো। আমাকে প্লিজ মাফ করে দাও। তোমাকে আমি ঠিক কোথায় কোথায় খুঁজেছি তা তোমার ধারণাও নেই। পাগলের মতো তোমায় হন্যি হয়ে খুঁজেছি। কিন্তু কোথাও তোমায় পাইনি।

— হয়েছে আর সাধু সাজতে হবে না মিস্টার রোশান। আপনাদের মতো মানুষকে আমি হারে হারে চিনে ফেলেছি। আপনাদের মতো মানুষদের মাফ হয় না। আসলে মন থেকে মাফ নামক শব্দটা আসেই না। যা করেছেন আমার সাথে তাতে আমি কখনও মাফ করবো না। একবার মাফ করলে যে ২য় বার আমার সাথে এমন করবেন না তার গ্যারান্টি কি?

রোশান আমার পায়ের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে হাত দুটো জোর করে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

— আমি জানি যা করেছি তা কখনো মাফ করার যোগ্য নয়। কিন্তু তবুও বলবো মাফ করে দিও।

— সেদিন আমি আপনার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে এভাবেই কাকুতি-মিনতি করেছিলাম। কিন্তু আপনি আমার ভালোবাসাকে লাথি মেরে আমার গায়ে মিথ্যে অপবাদ ঢেলে নিজে গা সারা হয়ে হাসতে হাসতে চলে গিয়েছিলেন। কি মনে পরে কিছু? দুই বছর আগের সেই বিষাক্ত অতীত আপনার কি করে মনে পরবে? সেগুলো তো আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। আমি না সপ্তাহে সপ্তাহে বয়ফ্রেন্ড পাল্টাই, আমার কোন মান-সম্মান নেই, নিজেকে কিছুদিন পর নিলামে উঠাবো, নিজের শরীর দেখিয়ে ছেলেদের আকর্ষণ করি, এমনকি পতিতা-দের সাথেও আমায় তুলনা করতে দ্বিধা করেননি। আমার মতো মেয়ে আপনার ভালোবাসার যোগ্য নয়। তার থেকে প্রস্টিটিউড মেয়েদের ভালোবাসলে আপনি ভালো করতেন।

চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। তবুও আমি থেমে নেই। আজ তাকে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।কেন আমার জীবনটা নিয়ে খেললো সে? কিছু সময় থেমে আবার বললাম,

—আমার সাথে ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় করেছেন। বাজি ধরে প্রেম করতে এসেছিলেন। বলুন কোনটা মাফ করবো? সারা কলেজের স্টুডেন্টের সামনে আমাকে এই মিথ্যে অপবাদগুলো দিয়েছেন। একজন বাবার কাছে তার মেয়ের মানহানি যে কতটা কষ্টকর তা কি আপনি জানেন? আমার বাবা-মা তুলে কথা বলতেও দ্বিধা করেননি। আপনারা তো বাংলা সিনেমাকেও হার মানিয়ে দিয়েছেন। এগুলো সবসময় আগে বাংলা মুভিতে দেখেছি। কিন্তু কে জানতো আমার সাথে যা তাই হবে। সেদিন যখন প্রিন্সিপালের রুমে আমার বাবা সবার কাছে বলেছিলো এগুলো মিথ্যে। ক্ষমতার দাপটে সেই মিথ্যেগুলোই সত্য হয়ে গিয়েছিল। আমার বাবা শুধুমাত্র আপনার কারণে আমার সাথে ছয় মাস কথা বলেনি। বাবার আদুরে মেয়ে হয়েও বাবার সাথে কথা বলতে পারিনি ৬ মাস, মানুষের কত কটু কথা সহ্য করতে হয়েছে। এক পাতা হাই পাওয়ারের ঘুমের ঔষধ খেয়েও সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম ভাগ্যের জোরে। আরেকদিন হাত রগ কাটতে গেলে তায়াং ভাইয়া দেখে ফেলে। নয়তো এই নোভার কোন অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে থাকতো না। বলুন না কোনগুলো মাফ করবো? আদোও কি আপনি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য?

চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আমি ঠিক কি করে এসব সহ্য করে বেঁচে আছি তা আমিই জানি। আমার জীবনে তখনকার অবস্থাটা সিনেমাকেও হার মানিয়ে ফেলেছিলো। গ্রাম এলাকার মানুষ এমনি তিলকে তাল বানাতে খুব পারদর্শী। তারা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমাকে যা নয় তাই শুনেয়েছে। আব্বু লজ্জায় বাড়ির বাইরে বের হতে পারতো না। যার কারণে নবাবগঞ্জ থেকে বাসায় আসতে চাইতো না। আম্মু স্কুলে গেলে তাকে একেকজন একেক কথা জিজ্ঞেস করতো, পিঞ্চ মেরে কথা শুনাতো। আমিতো নিজেকে চার দেয়ালে বন্দি করে ফেলেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে প্রমাণ হয় এসব মিথ্যে ছিলো। সবাই চুপ হয়ে যায়। কিন্তু তবুও একবার যে মেয়ের শরীরে কলঙ্কের দাগ লেগে যায় সেটা মিথ্যে হলেও সারাজীবন তার শরীরে লেপ্টেই থাকে।

তবে আলহামদুলিল্লাহ, আমি সব বাঁধা জয় করে নতুন করে বাঁচতে শিখেছি। গ্রামের মানুষ হয়তো সেসব কথা ভুলতেও বসেছে। তবে আবার যে খোঁচা মেরে উঠাবে না তার বিশ্বাস নেই। এই পুরো ব্যাপারটায় আমায় মানসিক সাপোর্ট দিয়েছে তায়াং ভাইয়া,আম্মু, খালামণি এবং আব্বুও। এসব কারণে পড়াশোনা করতে পারিনি। ভাইয়ার অণুপ্রেরণায় পরীক্ষা দিলাম। ততটা ভালো রেজাল্ট না করলেও খারাপ করিনি। তারপর আমাকে তাদের কাছে নিয়ে এলো। কলেজে ভর্তি করে দিলো। তারপর থেকে সব ভুলে আবার প্রাণোচ্ছল হওয়া শুরু করলাম। কিন্তু কে জানতো এই রোশান যে আবার আমার কাছে ফিরে আসবে। তাচ্ছিল্যে হেসে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,

—তা আপনার জারা কি আপনাকে ছেড়ে দিয়েছে নাকি? যার জন্য এতকিছু করলেন। সে আপনাকে ছেড়ে দিলো? আহারে খুব খারাপ লাগছে।

— রাই, আমাকে কিছু বলতে দাও।

— হুশ🤫। কোন কথা নয়। যা বলার তাতো আগেই বলে দিয়েছেন। এখন আর কিছু বলতে হবে না। আমাকে আরেকদিন ফলো করলে আমি আপনাকে ভাইয়ার হাতে মার খাওয়াবো। ভাইয়া যদি জানে আপনি এখানে এসেছেন তাহলে আপনাকে জানেই মেরে ফেলবে। তাই আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। আমার জীবন থেকে কেউ চলে গেলে তাকে ২য় বার ফিরে আসতে দেই না। আপনার মতো বৈইমান মানুষকে তো আরো আগে নয়। আমার সহজ সরল মনের প্রশ্রয় নিয়ে আপনি আমাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়েছেন। আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আমি কখনও কল্পনায়ও ভাবিনি রোশান আমার সাথে এমন কিছু করবে। আপনাকে ভালোবাসার বিনিময়টা খুব সুন্দর করে ফেরত দিয়েছেন। আমি সত্যি ধন্য। এমন একজনকে ভালোবেসে। এন্ড নাও ইউর লাভ ইজ মাই ফুট। ওকে বায়।

💖💖💖

কথাগুলো বলে ঝড়ের গতিতে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলাম। এক নজরও পেছনে তাকালাম না। বাইরে আসতে দেখি শারমিন আমাকে খুঁজছে। চোখের পানিগুলো মুছে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে শারমিনের সামনে দাঁড়ালাম। শারমিন চেচিয়ে বলে উঠলো,

— ঐ ছেমরি কই ছিলি তুই? তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমি পাগল হয়ে যেতাম। একটু পর তো মাইকে এনাউন্সমেন্ট করতে হতো।

— এই তো এদিকে ছিলাম।

— কোনদিকে?

— আরে ভাই এদিকেই রে। হয়েছে অনেক বকরবকর করছেন। এবার চলেন। আজকে ঝালমুড়ি খাবো।

— আচ্ছা চল।

দুজনে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেলাম। ঝালমুড়ির দোকান থেকে দুজন দুই ঠোঙা ঝালমুড়ি নিয়ে কথা বলতে বলতে গেইটের বাইরে এলাম। এসে দেখি সেখানে আগের থেকে এনজিও সংস্থা দাঁড়িয়ে আছে। পুরোপুরি দাঁড়িয়ে বলা যায় না। বাইকের সাথে হেলান দিয়ে মোবাইল গুতাচ্ছে। চোখে একটা সানগ্লাস, শার্টের হাতা দুটো ফোল্ড করা,তার বিখ্যাত আগোছালো স্টাইলের চুল। একদম আমার পছন্দের বাঙালি স্টাইল। আমি দেখেও না দেখার ভান করে সামনে এগিয়ে গেলাম। শারমিন আমাকে খোঁচা মেরে বললো,

— এই ঐটা এনাজ ভাইয়া ছিলো না?

— হুম তো?

— কথা বললি না যে?

— উনাকে দেখলেই কথা বলতে হবে?

— এই তোর কি হয়েছে রে? কখন থেকে ত্যাড়া ত্যাড়া উত্তর দিচ্ছিস।

— যাক বাবা আমি আবার কি করলাম?

— তোর হাব-ভাব ভালো ঠেকছে না।

— আমি আজ অনেক খুশি জানিস?

— কেন?

— আজকে একজনকে ইচ্ছেমতো কথা শুনিয়ে দিয়েছি। তার কোন কথা শুনিনি। যার জন্য মনে মনে একটা পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে। আমার জীবনটা এলেমেলো করে দিয়েছিলো। মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলো। সেগুলো চাইলেও আমি ভুলতে পারবো না। কিন্তু যে কথা শুনিয়েছি তাতে একটু হলেও মনের জ্বালা মিটবে।

— এই তুই কি বলছিস? আমি তো আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারছি না।

— তোর আর বুঝতে হবে না। মাথা মোটা মেয়ে। ঐ দেখ রিকশা আসছে। জিজ্ঞেস কর যাবে কিনা।

শারমিনকে রিকশায় উঠিয়ে আমি রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। হাতের ঝালমুড়ি শেষের পথে। এই দুপুর বেলা একটাই সমস্যা। শারমিনের বাসার দিকের রিকশা পাওয়া গেলেও আমাদের বাসার দিকের রিকশা পাওয়া যায় না। হঠাৎ আমার সামনে একটা বাইক থামলো।

— এই যে মিস টিডি পোকা!

—😏😏

— আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে আমার পা ব্যাথা হয়ে গেলো। আর টিডি পোকা আমাকে দেখেও লাফিয়ে লাফিয়ে এদিকে চলে এসেছে।

— আমি কাউকে অপেক্ষা করতে বলিনি।

— তুমি বলোনি ঠিক আছে। কিন্তু তোমার ভাই বলেছে তোমাকে নিয়ে যেতে। গত আধা ঘণ্টা ধরে গেইটের সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

— দাঁড়িয়ে আছেন কেন চলে যেতেন।

— তায়াং তোমায় বাসায় পৌঁছে দিতে বলছে। আর আমি আমার বন্ধুর কথা শুনবো না, এটা কখনো হয় না। জলদী চলো।

“এ্যাহ, এসেছে ভালোবাসা দেখাতে। একটুও যাবো না আপনার সাথে। আমি কে যে আপনার সাথে যাবো? যান গিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে যান। এখন আমার প্রতি দরদ দেখানো হচ্ছে।” মনে মনে কথাগুলো বলে একটা ভেংচি কাটলাম। তারপর কঠিন গলায় বললাম,

— আমি চলে যেতে পারবো। আপনি চলে যান।

— দেখো আমায় রাগিয়ো না। নয়তো সবার সামনে ঠাটিয়ে এক থাপ্পড় মেরে বসবো।

— ইস, আমি বুঝি ছেড়ে দিবো।

— তুমিও আমাকে মারবে?

— আমি কখন বললাম মারবো?

— এই যে বললে আমি বুঝি ছেড়ে দিবো।

— এর মানে কি দাঁড়ায় আমি আপনাকে মারবো?

— হ্যাঁ, তাইতো।

— জ্বি না। আমি দুষ্ট হতে পারি। তবে বেয়াদব নই।

— হুম বুঝলাম। জলদী এবার বাইকে উঠো।

— আমি আপনার সাথে যাবো না।

— কেন কি হয়েছে? আমি কি করছি?

—কিছুই করেননি।

— এতো ত্যাড়ামি করছো কেন?

— কই নাতো।

— আচ্ছা চলো তোমায় আইসক্রিম খাওয়াবো।

— সত্যি 😁!

— হুম, তিন সত্যি।

— তাহলে যেতে রাজী আছি।

আইসক্রিম হলো আমার আরেক দূর্বলতা। আমি যত রাগ করি না কেন এর কথা বললে আমিও আইসক্রিমের মতো ঠান্ডা হয়ে যাই। আইসক্রিমের লোভে দ্রুত এনাজের বাইকে উঠে বসলাম। এর সাথে যে আমি কথা বলবো না বলে পণ করেছিলাম তাও ভুলে গেলাম। আমি তার পেছনে বসে কাঁধে এক হাত রাখতেই সে মুচকি হেসে বাইক চালু করলো।

#চলবে

আগামী পর্বে চেষ্টা করবো অতীতটাকে পুরো ক্লিয়ার করে দিতে। এই অতীত নিয়ে বেশি পর্ব টানতে চাইছি না। আমি একটু অসুস্থ। তারপরেও আজকে ১৯০০+ শব্দ দিয়েছি। যদি নেক্সট, নাইস,স্টিকার কমেন্ট করেন তাহলে আগামীকাল গল্প পাবেন না😒।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here