শিশির_ভেজা_রোদ্দুর Part_32

0
1152

শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_32
#Writer_NOVA

দুপুরের খাবার টেবিলে সব গোল করে বসে আছে। আমি চেয়ার টেনে নূর আপির সাথে বসতে নিলেই তায়াং ভাইয়া আমার থেকে চেয়ার কেড়ে নিয়ে নিজে বসে পরলো। আমি রেগে ওর দিকে তাকিয়ে এনাজের পাশের চেয়ারে ধপ করে বসলাম। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো। আমি বিরবির করে ওকে বকে প্লেটটা ঠাস করে আমার সামনে রাখলাম। আজ কলেজ বন্ধ। আগামীকাল নূর আপি, মামী চলে যাবে। তাই সব একসাথে হৈ-হুল্লোড় করে বাসা মাতিয়ে ফেলেছি। ইফাত একবার উঁকি মেরেছিলো। তবে বেশি সুবিধা করতে পারেনি বলে ছুটে পালিয়েছে। মামী, খালামণি আমাদের খাবার বেড়ে দিচ্ছে। হঠাৎ পায়ের মধ্যে লাথি পরতেই আল্লহ গো বলে চেচিয়ে উঠলাম। সব ব্যস্ত হয়ে গেলো। মামী এগিয়ে এসে বললো,

— কি হলো আবার আমার বড় ভাগ্নির?

খালামণি পানির জগ নিয়ে এগিয়ে এলো। পায়ে পানি ডলতে বলে বললো,
— কিসের সাথে ব্যাথা পেলি? নে পানি ডলে দে।

তায়াং ভাইয়া শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
— লেদি তো। নিশ্চয়ই চেয়ারের সাথে ব্যাথা পাইছে।

আমি ওর দিকে একটা খাইয়া ফালামু লুক দিলাম। আমার বরাবরি ও বসছে। আর লাথিটা যে ভাইয়া দিয়েছে তাতে আমি ড্যাম সিউর। ওর শক্ত হাড্ডির পায়ে ভীষণ ব্যাথা পেয়েছি। আজ সারাদিন ধরে শুধু শুধু আমার সাথে লেগে রয়েছে। আমি এনাজের কারণে ওকে কিছু বলতেও পারি না। আবার সইতেও পারি না।এনাজ এগিয়ে এসে আমার পায়ে পানি দিয়ে ডলতে লাগলো। সাথে ইচ্ছে মতো আমাকে বকে ধুয়ে দিলো।

— কোন দিকে ধ্যান থাকে তোমার টিডি পোকা? এখানে খেতে বসছো ঠিকমতো বসে থাকবা। তা না করে এখানেও লাফাতে হবে। আর কোথায় লেগেছে বলো?

— আরে আরে আপনি আমার পা ধরছেন কেন?

— চপ।

তার রামধমকে আমি চুপ হয়ে গেলাম। যদিও আজ প্রথম সে আমার পায়ে হাত দিচ্ছে না। তবুও বিষয়টা দৃষ্টিকটু দেখায়।সব মিলে আমাকে বকতে লাগলো। নূর আপি দৌড়ে ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে এলো। এনাজকে বরফ দিয়ে বললো,

— ভাইয়া বরফ ধরেন।

এনাজ নূর আপির থেকে বরফ নিয়ে পায়ে ডলতে লাগলো। আমার লাগছে সুড়সুড়ি। একে তো সে আমার বড় হয়ে আমার পা ধরেছে। তাতে কিরকম অস্বস্তি লাগছে। আর বরফের ঠান্ডায় পায়ে সুড়সুড়ি লাগছে। তাই আমি বারবার পা সরিয়ে নিচ্ছিলাম। এনাজ জোরে ধরে বরফ ডলতে ডলতে বললো,

— আরেকবার পা সরালে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।

— এনজিও সংস্থা আপনি আমার পা ছাড়েন। আমার সুড়সুড়ি লাগছে তো আমি কি করবো?

— চুপচাপ বসে থাকো। ব্যাথা পাওয়ার সময় তো মনে থাকে না। এখন এতো সমস্যা কেন?

আমি চুপ হয়ে গেলাম। একে পা ছাড়তে বললেও কোন লাভ হবে না। তন্বী মুখ টিপে হেসে বললো,
— আমি জানি কে করেছে।

আমি মুখ ঝামটা মেরে বললাম,
— চুপ থাক শয়তান ছেমড়ি। তুই আর কথা বলিস না। সবাই আমাকে বকতে আরম্ভ করেছে। অথচ আমাকে যে তায়াং ভাইয়া এতো জোরে লাথি মারলো তার কি হবে? তাকে কিছু বললে না। তোমরা সবাই আমাকে বকার জন্য ছুতো খুঁজো।

তায়াং ভাইয়া অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
— আমি তোকে কখন মারলাম? কোন প্রমাণ আছে যে আমি তোকে মেরেছি? প্রমাণ ছাড়া কথা বলিস না।

আমি দুই হাতে মোনাজাত ধরে চেচিয়ে বললাম,
— আল্লাহ তোমার কাছে বিচার দিলাম। তায়াং ভাইয়ারে তুমি শায়েস্তা করো।(তন্বীর দিকে তাকিয়ে) ঐ ছেমড়ি মোনাজাত ধর।

আমার কাহিনি দেখে সবাই মিটমিট করে হাসতে লাগলো। তায়াং ভাইয়া সবে কিছু বলতে মুখ খুলতে নিয়েছিলো। নূর আপির এক ধমকে চুপ হয়ে গেলো।

— তানভীর ভাইয়া আপনি আরেকটা কথা বললে আপনাকে এখানে রাখা হবে না। নিচে বসিয়ে আপনাকে খাবার দেওয়া হবে।

তায়াং ভাইয়া ইনসেন্ট ফেস করে বললো,
— কিনু🥺?

নূর আপি আবার ধমকে বললো,
—আবার কথা বলেন।

তায়াং ভাইয়া ঠোঁটে আঙুল রেখে বাচ্চাদের মতো আধো সুরে বললো,
— আত্তা আমি তুপতাপ🤫।

তায়াং ভাইয়ার কান্ড দেখে আমার হাসি পেলো। তবে না হেসে আমি একটা ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। এনাজ বরফ ডলা শেষ করে বেসিন থেকে হাত ধুয়ে এসে আমার পাশে বসলো। আমি মনে মনে ফন্দি এঁটে ফেলেছি। আজ তায়াং ভাইয়ার খবর আছে। মামী, খালামণি কিচেন থেকে খাবার নিয়ে এসে সবাইকে সার্ভ করে দিতে লাগলো।

💖💖💖

সবাই চুপচাপ খাচ্ছি। তায়াং ভাইয়া আমাকে জ্বালানো শুরু করেছে। এই মনে করলেন মাছের কাটা ছুড়ে মারে, মাঝে মাঝে পানির ছিটা মারে। কিংবা পা দিয়ে খোঁচা মারে। আজ ওর মধ্যে শয়তানি আত্মা ভর করেছে। প্রতিদিন আমার ওপর ভর করে। আজ আমার ওপর ভর না করে ওর কাছে চলে গেছে। দুষ্টামী করে আবার ভ্যাবলাকান্তের মতো দাঁত কেলাচ্ছে। মামী গোশতের তরকারি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তায়াং ভাইয়ার সামনে গিয়ে বললো,

— তানভীর, গরুর গোশতের তরকারি দিবো।

আমি মনে মনে ভাবি এই তো আমার সুযোগ। এই সুযোগ তো হাতছাড় করা যাবে না। ফট করে বলে উঠি,

— মামী ওকে গোশত দিয়েন। ওর এলার্জীর সমস্যা। গরুর গোশত খেলে শরীর অনেক চুলকায়। তবে আপনি চাইলে ওকে মূলা দিয়ে যে শুটকি রান্না করেছেন সেই তরকারি দিন। ভাইয়ার তো মুলা অনেক পছন্দ। ভাইয়ার মুলা তরকারি পেলে আর কিছু লাগে না। এখন যদিও মুলার সিজন নয়। কিন্তু পরশু চড়া দামে যে হাইব্রিড মুলাগুলো খালামণি বাজার থেকে কিনে এনেছিলো সেগুলো ওর জন্য কিনে আনছিলো। ভাইয়া কবের থেকে বলছে আম্মু মুলার তরকারি রান্না করো। তার জন্য তো আজকে রান্না করছে।

ভাইয়া রেগে আমার দিকে তাকালো। আসলে তায়াং ভাইয়া মুলার গন্ধই সহ্য করতে পারে না। মুলা খাওয়াতো দূরে থাক। যেদিন বাসায় মুলার তরকারি রান্না হবে সেদিন ভাইয়া বাসায় খাবে না। তাই খালামণি বাসায় এই সবজিটা আনেই না। খালামণি শুধু তার জন্য আধা কেজি মুলা এনেছিলো।তা দিয়ে তরকারি রান্না করেছে। তাও শুধু তার একার জন্য।তন্বী মিটমিট করে হেসে কিছু বলতে চাইলে আমি ওকে ইশারায় চুপ করে থাকতে বলি। তন্বীও চুপ হয়ে যায়।আমার সাথে সুর মিলিয়ে বলে,

— হ্যাঁ মামী। আমার ভাইয়া মুলার তরকারি অনেক পছন্দ করে। আপনি ভাউয়াকে অন্য কোন তরকারি দিয়েন না। শুধু মুলাই দেন।

মামী তো আমাদের কথা সত্যি ভেবে নিলো। মুলার তরকারির বাটি হাতে নিয়ে বাটির অর্ধেক ভাইয়ার প্লেটে তুলে দিলো। ভাইয়া চোখ বড় বড় করে তার প্লেটের দিকে তাকিয়ে রইলো। খালামণি নামাজ পরতে চলে গেছে। সে থাকলে এই শয়তানি করতে পারতাম না। এনাজ ভ্রু কুঁচকে তায়াং ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলো,

— কিরে তায়াং তোর আবার এই তরকারি কবের থেকে এতো ফেভারিট হলো? আমি তো জানতাম না। তুই সত্যি আমাদের তায়াং তো। যে কিনা……. আউচ।

এনাজ পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে আমি আমার বা হাত দিয়ে তার বা হাতে একটা চিমটি মারলাম। সে আউচ বলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— চিমটি মারো কেন?

— এদিকে আসেন। কানটা এদিকে বাড়ান। আপনার সাথে আমার কথা আছে।

— কি কথা?

এনাজ কান বাড়িয়ে দিতেই আমি বললাম,
— তায়াং ভাইয়াকে জ্বালাচ্ছি। একদম ওর পক্ষ নিবেন না। তাহলে কিন্তু ঐ পুরো বাটি মুলার তরকারি আপনাকে খাওয়াবো।

— না না। আমার মুলা পছন্দ নয়। আমি আর কিছু বলবো না।

তায়াং ভাইয়া হুংকার মেরে বললো,
— তোরা ফিসফিস করে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিস তাই না? একবার শুধু অপেক্ষা কর শাঁকচুন্নি। তোর খবর আছে।

তায়াং ভাইয়া কাঁদো কাঁদো মুখে প্লেট থেকে এক টুকরো মুলা নিয়ে মুখে দিলো। বেচারার বোধহয় ভেতর থেকে সবকিছু গুলিয়ে আসছে। একবার মুখ বাঁকিয়ে এক হাতে মুখ আটকে রাখলো। এখন বেচারা পারছে না উঠে যেতে। কোনরকম সেটাকে গিলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— হাতি ফাঁদে পরলে চামচিকাও লাথি মারে।

নূর আপি মিটমিট হেসে তাকে বললো,
— তানভীর ভাইয়া আপনার না এতো পছন্দ। তাহলে খাচ্ছেন না কেন?

আমি তায়াং ভাইয়াকে এক চোখ মেরে নূর আপিকে বললাম,
— এত কম দেখে ভাইয়া বোধহয় খেতে চাইছে না। মামী ওকে পুরো বাটির তরকারি দেন। নয়তো ভাইয়া আজ ভাত খাবে না।

মামী তায়াং ভাইয়াকে বললো,
— তানভীর আরো তরকারি লাগবে।

তায়াং ভাইয়া মাথা উঁচু করে কাঁদো কাঁদো মুখে প্লেটের ভাত নাড়তে-চাড়তে বললো,
—না মামী😵।

আমি শয়তানি হাসি দিয়ে চেচিয়ে বললাম,
— আরে ভাইয়া লজ্জা পাস কে? আমরা আমরাই তো। আহারে ভাই আমার। বেচারা এত দিন পর প্রিয় খাবার দেখে খুশিতে বোধহয় চোখে পানি চলে আসছে। খুশিতে খেতেই পারছে না।ভাইয়া তুই দেখিয়ে দে তুই সব তরকারি শেষ করে দিবি। তায়াং ভাইয়া কাউকে ভয় পায় নাকি।

এনাজ বললো,
— হ্যাঁ, তায়াং দেখিয়ে দে। তুইও পারিস।

তায়াং ভাইয়া মাথা উঠিয়ে কটমট করে এনাজের দিকে তাকিয়ে বললো,
— শালা,তুইও ওদের মতো শুরু করছিস।

এনাজ দাঁত বের করে একটা হাসি দিলো। আমরা সবাই মিটমিট করে হাসছি। মামী ডাল আনতে কিচেনের দিকে চলে গেল। তায়াং ভাইয়া আমাদেরকে হাসতে দেখে আরো রেগে গেলো। অল্প একটু ভাতের সাথে মুলার তরকারি মেখে মুখে দিতেই ওয়াক ওয়াক করে মুখে হাত দিয়ে বেসিনের দিকে ছুটলো। একদম ঠিক হয়েছে। এবার বোঝ মজা। আমার সাথে লাগার মজা এবার হারে হারে টের পাবি। ভাইয়া উঠে বেসিনের দিকে যেতেই খাবার টেবিলে উচ্চ হাসির রোল পরলো।

#চলবে

আজকে লেখার কোন ইচ্ছে ছিলো না। জোর করে এতটুকু লিখছি। তাও এখানে ১২০০+ শব্দ আছে।জানি না কিরকম হয়েছে। ভুল-ভ্রান্তি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here