গল্প – পিচ্চি বউ পর্ব – ৪

0
1257

গল্প – পিচ্চি বউ
পর্ব – ৪

সকাল হয়ে গেছে, পাগলীটা এখনও হাত ধরে ঘুমিয়ে আছে, চেহারা খানিকটা শুকিয়ে গিয়েছে। যাবে না ই বা কেন? হয়ত আরো ভয়ংকর কিছু ঘটে যেতে পারত। সৃষ্টিকর্তার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া তেমন কিছু হয় নি, বেচারির জন্য খুব মায়া লাগছে। আজকে রিলিজ দিয়ে দেবার কথা। মিথিলা এখনও ঘুম থেকে জাগে নি। হাত ধরে ঘুমিয়েছে, কোথাও যেতে পারছি না। আমার মত ছন্নছাড়া মানুষ কারো জন্য চিন্তা করছে? ভাবা যায় না…
কিছু সময় পর সে নিজে জেগে উঠল,
-তুই রাতে ঘুমাস নি? [মিথিলা]
-না [আমি]
.
ডক্টর এসে আরেক বার রিপোর্ট দেখে আমাকে তার চেম্বারে ডাকল। ওর পাশ থেকে উঠে গিয়ে ডাক্তারের সাথে দেখা করতে গেলাম। তার ভাষ্য’র সারাংশ হল, চাইলে পেসেন্ট কে নিয়ে আজকে দুপুরের পরে চলে যেতে পারি। কেবিনে ফিরে মিথিলা কে জানালাম। সে বলল ঠিক আছে, নার্স এসে নাস্তা দিয়ে গেল, উঠে বসেছে পাগলিটা, ভাবলাম নিজে খেতে পারবে, আবার কি মনে করে যেন নিজে খাইয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, চেয়ার টেনে কাছে গিয়ে বসে খাইয়ে দিতে শুরু করলাম,
-তুই এত ভালো কেয়ার নিতে পারিস, জানতাম না তো!
ওর কথায় খুশি হব না রাগ করব বুঝতে পারছি না,
-কোনো কথা বলবি না, জানিস কত হেনেস্ত হতে হয়েছে? যদি ভালো মন্দ কিছু একটা হয়ে যেত?
-তুই আছিস না? কিচ্ছু হবে না!
আর কিছু বললাম না, চুপ করে খাওয়ানো শেষ করে উঠে ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসলাম। মিথু আবার ডাকল,
-অভ্র…কালকে যদি আমার কিছু একটা হয়ে যেত, কি করতি?
-আমি বেঁচে যেতাম…
হাঁসতে শুরু করেছে পাগলীটা, বাহ ওর হাসিটা তো বেশ সুন্দর।
-শোন, আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে যা নিয়ে আয়!
-পারব না
-যা না, প্লীইইইইইইইইইইইইইইজ
এত করে যখন বলছে না গিয়ে পারলাম না, নিচে নেমে এলাম, আইসক্রিম পার্লার থেকে বেশ কয়েকটা আইসক্রিম নিয়ে আবার হসপিটালের দিকে রওনা দিলাম, রাস্তায় একটা ফুলের দোকানে কালো গোলাপ দেখে চোখ আঁটকে গেল, নেওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে নিয়ে নিলাম বেশ কয়েকটা। কেবিনে ফিরে দেখি আমার ফোন মিথুর হাতে, চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কপালে দুঃখ আছে,
-আমার ফোন ধরেছিস কেন?
কোন কথা বলছে না, অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,
-তোর ফোনে ইহিতা নামের ফোল্ডারে একটা মেয়ের এতগুলো ছবি কেন?
কি বলব কিছু খুঁজে পাচ্ছি না, কিছু একটা বলতে হবে,
-তাতে তোর কি?
-আমার কি মানে? আমার বরের ফোনে অন্য মেয়ের ছবি আমি সহ্য করব ভেবেছিস?
-সিরিয়াসলি? আচ্ছা, বাদ দে এইসব, অনেক বড় কাহিনি পরে একসময় বলব… এই নে তোর আইসক্রিম!
-ফুল কি ইহিতার জন্য কিনেছিস?
-কি যা তা শুরু করেছিস? তোর জন্য এনেছি [দিনে দুপুরে এত বড় মিথ্যা কিভাবে বললাম?]
-সত্যি?
-হুম
-জানিস আমার কালো গোলাপ অনেক পছন্দ…
-যাক, কিছু একটার সাথে মিলে আছে তাহলে…
.
কপাল ভালো ছিল আইসক্রিমের সাথে কালো গোলাপের সুবাধে এ যাত্রা বেঁচে গেলাম। মিথুকে নিয়ে রিসোর্টে ফিরেছি, রুমে ফিরে সে আবার ঘুমিয়েছে, যদিও বেশি সময় না। উঠে আবার বায়না ধরল সে শপিং করতে যাবে। এ কি মুসীবত? সারা রাত দু চোখের পাতা এক করতে পারি নি, একটু ঘুমবো, তার কোনো উপার দেখতে পাচ্ছি না। কিছু করার নেই, তাই তৈরি হয়ে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম, সে তো মহা খুশি, দেখে মনে হবে না, গত কাল তার উপর দিয়ে কত বড় এক বিপদ চলে গেছে।
.
মার্কেটে গিয়ে, তার কেনা কাটার অবস্থা দেখে আমার অবস্থা, ছেড়ে দে বাপ কেঁদে বাঁচি, এইরকম হয়ে গেল। আমার দু-হাত ভর্তি ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে সে এটা ওটা কিনেই চলেছে। হুট করে সে এক শপে ঢুকে কি যেন খুঁজতে থাকে, আমি বার বার জিজ্ঞা করে যাচ্ছি, কি খুঁজছিস? তার কোনো সাড়া নেই। একটু সামনে গিয়ে সে দাঁড়ায়,
-অভ্র
-হু
-এদিকে আয়।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
-কি হয়েছে?
-এই জ্যাকেট দুটো দেখ না
-গরমে মধ্যে তুই জ্যাকেট দিয়ে কি করবি?
-আরে, বোকা আমাদের দেশে তো শীত চলছে, গিয়ে লাগবে না? দেখ কেমন লাগে!
তাকিয়ে দেখি জ্যাকেটের একটা ছেলেদের আরেকটা মেয়েদের। একটা পিছে লেখা, The King এবং আরেকটা পিছনে The Queen! মনের অজান্তে একটু হেসে উঠলাম। আমার গুণ্ডি বউটা এত রোম্যান্টিক বাহ…
.
মার্কেট শেষ করে একটা রেন্টুরেন্টে বসলাম ডিনার করতে। খাবার অর্ডার করে আন মনে বসে ফোন ঘাটাঘাটি করছি, এর মধ্যে মিথু ডাক দিল,
-অভ্র
-বল
-ঐ মেয়েটাকে দেখ।
ফোনের দিকে চেয়ে থেকে বললাম,
-কোনটা?
-আরে, ঐ যে আমাদের সামনের টেবলে।
একরাশ বিরক্তি নিয়ে মাথা তুলে দেখি ইহিতা সাথে আবির ডিনার করছে। আকাশ থেকে পড়লাম। এই মেয়ের সাথে আমার গত ৬ বছর কোনো দেখা নাই। অনেক খুঁজে ক্লান্ত হয়ে প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছি। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, মিথুর কথায় বাস্তবে ফিরে আসলাম,
-এই মেয়ের ছবি তোর ফোনে আমি দেখেছি।
এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করলাম,
-আরে নাহ, তুই অন্য মেয়ের ছবি দেখেছিস,
-না, এই মেয়ের ছবিই আমি দেখেছে, ওর নাম ইহিতা? ঠিক?
হাল ছেড়ে দিয়ে বললাম,
-হ্যাঁ
-এই মেয়ের সাথে তোর কি যেন একটা চক্কর ছিল এক সময়ে? ঠিক?
-হ্যাঁ।
-তাহলে ফুপ্পিকে জানাস নি কেন?
– সে এক ইতিহাস!
-তোর ইতিহাসের গুল্লি মারি, চল কথা বলে আসি!
-ইচ্ছে নেই
-কি বললি?
-বলেছি, ইচ্ছে করছে না!
মিথুও কেন জানি আর জোর করল না, খাবার চলে আসল, কেন যেন মুড টা চেঞ্জ হয়ে গেল। কোনো রকম খাবার শেষ করে মিথু কে নিয়ে রিসোর্টে চলে আসলাম।
.
রাত হয়ে গেছে অনেকটা! মিথু ঘুমোচ্ছে, আমি একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি বিশাল জলরাশির দিকে। ভাবছি ইহিতার কথা, মনের অজান্তে চোখ দিয়ে একফোটা জল চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ল! হঠাৎ কে যেন কাঁধের উপর হাত রাখল, তাকিয়ে দেখি মিথু, কখন ঘুম থেকে উঠে আমার কাছে চলে এসেছে খেয়াল করি নি!
-মন খারাপ? [মিথিলা]
-হুম
-অনেক ভালোবাসতি ইহিতাকে?
কিছু বললাম না। গিয়ে পাশা পাশি দুটো রকিং চেয়ারের একটা তে গা এলিয়ে দিলাম। মিথু পাশের চেয়ার টা তে এসে বসল।
-এই অভ্র
-বল
-কি হয়েছিল ওর সাথে?
-বাদ দে, ওর বিষয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না!
-আচ্ছা, চল ঘুমাবি না? গত কাল ঘুমাস নি একটুও
উঠে গিয়ে খাটের একপাশে শুয়ে পড়লাম! সে এসে আরেক পাশে শুয়ে পড়ল! ঘুম আসছে না কোন মতে। পুরনো স্মৃতিগুলো নিয়ে মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষ নিজেদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছে। মাথায় হাতের স্পর্শ পেলাম, মিথু পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। দেখতে দেখতে ঘুম চলে আসল।
.
সকালে বেলা করে ঘুম থেকে উঠলাম, আজ আর মিথিলা বিরক্ত করে নি, কি মনে করে উপরওয়ালা মালুম। উঠার সাথে সাথে দেখি বান্দা চায়ের কাপ নিয়ে হাজির,
-শুভ সকাল
-আজ এত ভালো হয়ে গেলি?
-আমি বরাবরই ভালো
একটু হাসলাম। চা শেষ করে ফ্রেস হয়ে মিথু কে নিয়ে নিজেই বীচে ঘুরতে বেরলাম।পাগলীটা আজকে ইচ্ছে করেই হাত ধরে হাটছে! ভালো লাগছে, চারিদিকের পরিবেশ টা অসাধারণ। একটু এগিয়ে গিয়ে বসলাম দুজনে, সামনে সরু কিছুটা রাস্তা, আনমনে তাকিয়ে ছিলাম নীল সমুদ্রের দিকে। হঠাৎ কে যেন বলল,
-আরে অভ্র না?
বামে ঘুরে দেখি আবির, এক সময়কার পরিচিত ভাই,
-জ্বি ভাইয়া, কেমন আছেন?
-হ্যাঁ ভালো, কবে এসেছ?
-এইত অল্প কয়েকদিন হল। আপনি কি এখানে আছেন?
-হ্যাঁ। আসলে দেশে যাওয়া হয় না অনেক দিন তাই তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ ছিল না!
-ওহ, ভাইয়া পরিচয় করি দেই, এই হচ্ছে আমার মিসেস!
-মিথু, আবির ভাই!
টুকটাক কথা বলছিলাম হঠাৎ আবির ভাইয়া বলল, চল আমাদের বাসায়, কথা শেষ করার আগেই কোথা থেকে যেন ইহিতা চলে আসল,
-এই আবির [ইহিতা]
-আরে, ইহিতা, এসো! দেখ অভ্র এসেছে তার মিসেস কে নিয়ে, হানিমুনে!
-অভ্র, কেমন আছিস?
আবিরের একটা কল আসায় সে একটু পাশে গিয়ে কথা বলতে থাকে,
-যেভাবে দেখতে চেয়েছিলি…
চুপ করে যায় ইহিতা, নিরবতা ভাঙ্গে মিথু,
-আপনি ইহিতা আপু? তাই না?
মৃদু হেসে উত্তর দেয় সে,
-হ্যাঁ।
-আপনার কথা আমাকে বলে নি এই ফাজিল টা, আমি ওর ফোন থেকে বের করেছি।
মিথু একটা বিজয়ী হাসি দিয়ে থেমে গেল, আমি কোন কথা না বলে চুপ করে থাকলাম। ইহিতা আবার বলল,
-তো, বিয়ে করলি কবে?
-এইত কিছু দিন
কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, গলা কেঁপে উঠছে, এর মধ্যে আবির ভাইয়ের কথা শেষ হয়ে যায়, তাকে একটু ব্যস্ত মনে হল, বাসার ঠিকানা দিয়ে ইহিতাকে নিয়ে চলে যায়।
আমি মিথুকে নিয়ে রওনা দিলাম রিসোর্টের দিকে। আসার সময় তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,
-মিথু, আমাদের গল্পটা চাইলে অন্য রকম হতে পারত। তাই না?
বউ আমার একটু মুচকি হাসল শুধু…

চলবে…

পর্ব – ০৫
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1295663383969222&id=934291790106385

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here