গল্প – পিচ্চি বউ পর্ব – ৬

0
835

গল্প – পিচ্চি বউ
পর্ব – ৬

– রাত হয়ে এসেছে। ডিনার শেষ করে সোফায় এসে চোখ বন্ধ করে বসলাম।খুব মাথা ব্যথা করছে। মিথিলা এসে আমার পাশে বসল,
-অভ্র
-বল
-তুই ঠিক আছিস?
-হ্যাঁ
-চোখ বন্ধ করে আছিস কেন?
-মাথা ব্যথা করছে খুব।
-তোর মাথা ম্যাসেজ করে দিব?
কিছু বললাম। আগের মত চুপ করে বসে থাকলাম। মাথায় কমল হাতের স্পর্শ পেলাম। খুব যত্ন করে ম্যাসেজ করে দিচ্ছে মিথিলা। স্বপ্নের কথা কিছু বলা হয় নি তাকে,
-মিথু
-হু
-জানিস, আজকে যখন তুই বাসার বাইরে গিয়েছিলি, আধো ঘুম, আধো জাগরণের মাঝে খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখলাম…
-কি দেখলি?
-তোকে সাথে নিয়ে কোনো এক পাহাড়ি এলাকার ঘুরতে গিয়েছি। হাত ধরে হাটছিলাম, হঠাৎ তুই আমার হাত ফসকে পাহাড়ের খাঁদে পরে গেলি। সাথে আমিও অতলে হারিয়ে যেতে শুরু করলাম। কিন্তু কে যেন আমার হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করল। তার চেহারা দেখতে পেলাম না।
চোখ খুললাম, আমার কথা শুনে মিথু কিছুটা হাসতে শুরু করল,
-তুই আমাকে নিয়ে আজকাল স্বপ্নও দেখিস?
-ব্যাপারটা মোটেও হাস্যকর না।
-জানি তো। কেন জানি হাসতে ইচ্ছে করল।
-তোর বাচ্চামি স্বভাব ভালো হবে না কোনদিন?
-সম্ভবনা শূন্যের কাছাকাছি।
.
এবার আমার হাসি পেল। পাগলি টা আসলেই মনে হয় কখনও গম্ভীর হতে পারবে না।
-অভ্র, তোর হাসিটা সুন্দর!
-বাব্বাহ, তুই আমার হাসিও খেয়াল করেছিস? আর কি কি দেখলি?
-এই, তুই একটা গবেট, ছাগল, গরু, উজবুক, ছন্নছাড়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
খুব জোরে হেসে উঠলাম। কারণ আমাকে নিয়ে কেউ এ ধরণের কথা কোন দিন বলে নি।
-তোর কেন এমন মনে হয়?
-কেন বলব তোকে?
.
উঠে গেলাম! ঘুমোতে হবে গত ২দিন অনেক ধকল পার হয়েছে।
কিন্তু এ কি? বেডে গিয়ে দেখি কোলবালিশ নেই।
-মিথু
-বলে ফেলুন অভ্রবাবু
-কোলবালিশ কোথায়?
-রুম সার্ভিসে ফেরত দিয়ে দিয়েছি।
-কিইইইহ? কেন?
-কোলবালিশটাকে কেন যেন সতিন সতিন মনে হয়
-তোকে কি করা দরকার এখন? ভালো কথা, কোলবালিশ ছাড়া তুইও তো ঘুমোতে পারিস না!
-আমার বর আছে না? তাকেই না হয় কোলবালিশ বানিয়ে নেব।
-কিসের বর? আমি তোর কোলবালিশ হতে রাজি না!
-যাহ, লাগবে না, আমি বুঝি না তোর মত আন রোমান্টিক একটা ছেলে কোন মেয়ে বিয়ে করতে চাইবে?
-ছাড় তোর রোমান্টিকতা। আমি ঘুমাতে গেলাম
.
এইটুকু বলে বেডের এক পাশে গিয়ে শুয়ে পরলাম, মিথুও এসে আমার কাছ ঘেষে শুয়ে পরল।কিছু বললাম না। চোখ লেগে এসেছে। গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছি, হঠাৎ মিথুর হাত আমার বাহুর উপর চলে আসল, নাহ এ মেয়েকে নিয়ে মত বিশাল মুসীবত! কোলবালিশ ছাড়া ঘুমায় না, অথচ তাকে সতিন মনে করে ফেরত দিয়ে এসেছে। নিজের কাছে কিছুটা অস্বস্তি লাগছে। কিন্তু কিছু করার নেই।
.
পাগলীটা দিন দিন আপন করে নিতে চাচ্ছে! আমি কি পারছি ওর প্রাপ্য ওকে ফিরিয়ে দিতে? নাকি অবিচার করছি মেয়েটার সাথে? এমন কোনো মেয়েকে এখনও দেখি নি, যে তার বরের পুরনো ভালবাসাকে তার জন্মদিনে বাসায় হাজির করে। সব কিছু জানার পরেও কোনো রকম হাঙ্গামা না করে সব কিছু নিরবে নিভৃত্বে মেনে নিয়ে আমাকে ভালোবাসতে চাইছে। আমি কি পারব ওকে ভালোবাসা দিয়ে আজীবন নিজের কাছে আগলে রাখতে? পারব কি সুন্দর একটি জীবন তাকে উপহার দিতে? ভাবতে ভাবতে আমিও ঘুমিয়ে গেছি। আগে কার সেই কোলবালিশের বদ অভ্যাসের দরুণ কখন আমার একটা হাত তার বাহুতে চলে গেছে খেয়াল করিনি। যেহেতু কিছু করার নেই তাই মিথুর দিকে ঘুরে শুলাম। ঘুমন্ত অবস্থায় একদম পরীর মত লাগছে তাকে, কি মায়াবী চেহারা, মনে হচ্ছে তার প্রতিটি নিশ্বাস অনুভব করতে পারছি,সাথে বুকের প্রতিটি হৃদ স্পদন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি…
.
সকাল হয়ে গেছে, মিথুর মিস্টি কন্ঠে ঘুম ভাঙ্গল
-এই অভ্র, অভ্র।
-কি হয়েছে?
-উঠ না। দেখ সকাল টা কত সুন্দর আজকে। চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
-আরেকটু ঘুমাই?
-চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে, ওঠ না!
.
উঠে পারলাম। চা খেয়ে ফ্রেস হয়ে পাগলীটাকে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। রিসোর্ট থেকে একটু এগিয়ে দেখি ফুলের দোকান। মিথুকে নিয়ে আগে সেখানে গেলাম। সুন্দর দেখে একগুচ্ছ কালো গোলাপ কিনে তার হাতে ধরিয়ে দিলাম। আবার হাঁটতে শুরু করেছি, আজকে মিথু না, আমিই আগে ওর হাতটা ধরলাম, একটু লজ্জা পেল মনে হচ্ছে। তাতে কি? সে তো আমার স্ত্রী। সকাল টা আসলেই আজ খুব সুন্দর। রৌদ্রজ্জল চারিদিক। বেশ লাগছে তাকে নিয়ে হাঁটতে। দেশ থেকে কেউ এখনো ফোন দেয় নি, আসলে ফোনে কথা বলতে বরাবরই আমার কেন জানি না বিরক্ত লাগে। তবে আজকে কি মনে করে যেন আম্মু কে ফোন দিলাম,
-হ্যালো আম্মু।
-কি বাবা? ভুলে গেছিস আমাদের এখনই?
-কি যে বল না?
-হা হা, সময় কেমন কাটছে।
-যার সাথে পাঠিয়েছ, কেমনই বা কাটতে পারে?
মিথু পাশ থেকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল আমার দিকে।
-মিথু কোথায়?
-পাশে আছে।
-দে তো। মেয়েটার সাথে ভালো ভাবে কথা বলতে পারলাম না!
ফোনটা মিথুর কাছে দিলাম। তাও লাউড স্পিকারে,
-আসসালামুওয়ালাইকুম ফুপ্পি
-ওয়ালাইকুমুসসালাম মা, কেমন আছিস?
-ভালো ফুপ্পি! আপনারা কেমন আছিস?
-ভালো মা। তোদের ছাড়া বাড়িটা শুন্য শুন্য লাগছে…
-আমারও খুব খারাপ লাগছে।
-তাড়াতাড়ি চলে আয় তো, আর পাগলটার দিকে খেয়াল রাখিস!
-ঠিক আছে ফুপ্পি
.
বলে ফোন রেখে দেয়। বীচ থেকে একটু সামনে নাকি খুব সুন্দর একটা জায়গা আছে। মোটামুটি স্বচ্ছ পানি, সামনে সু-বিশাল ঝর্ণা, আশেপাশে লম্বা লম্বা গাছ। বোর্ট নিয়ে চলে গেলাম সেখানে। পাশাপাশি বসেছি দুজন। চারিদিকের পরিবেশ দেখে হঠাৎ মাথায় কু-বুদ্ধি চাপল। এখানকার পানির গভীরতা বেশ অনেকটা, ভাবলাম মিথুকে একটু ভয় দেখানো যাক, ওর পাশ থেকে উঠে বোর্টের একদম সামনে চলে গেলাম,
-কোথায় যাচ্ছিস?
-এখানেই
-কি হল আবার?
-শরীর টা ভালো লাগছে না!
একদম সামনে গিয়ে মাথা ঘুরে পানিতে পরে যাওয়ার ভান করলাম। পরে সাথে সাথে ওখান থেকে একটু দূরে সাঁতরে চলে আসলাম। মিথু দৌড়ে এসে আমাকে দেখতে না পেয়ে চিৎকার দিল, সাথে কান্না জুড়ে দিল। মুখে বেদনার ছাপ স্পষ্ট খেয়াল করলাম। বাচ্চা মেয়েদের মত কাঁদছে আর আমার নাম ধরে ডাকছে। বোর্টের ক্রু অনেকে ঝাঁপিয়ে পরেছে আমাকে উদ্ধার করতে, নাহ বেশি হয়ে যাচ্ছে। সাঁতরে কাছে চলে গেলাম। মিথু যে রেলিং ধরে দাঁড়ানো ঠিক সেখানে গিয়ে উঠলাম,
-কি হয়েছে আমার বউটার?
-অভ্র…
বলে আবার কাঁদতে শুরু করেছে, উপরে উঠে আসলাম।
-হা হা, একটু মজা করছিলাম, জানিস আমি কলেজে থাকতে সুইমিং চ্যাম্পিয়ন ছিলাম।
কিছু না বলে মিথু আমাকে জড়িয়ে ধরল, এখনো কেঁদেই যাচ্ছে।
-এই মিথু!
-কোনো কথা বলবি না! [ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে]
-ভয় পেয়েছিস?
-হু
.
বুঝলাম অনেক বেশি ভয় পেয়েছে। তাই ওকে বুকে আগলে রেখে আরো অনেক টা সময় ঘুরে সন্ধ্যার পরে রিসোর্টের দিকে রওনা দিলাম। আসতে আসতে রাত হয়ে গেল, তাই একবারে ডিনার করে রুমে আসলাম। মিথুর মনটা মনে হয় এখনো খারাপ হয়ে আছে তখনকার কাজটার জন্য। আসলেই এমন ফাজলামো উচিত হয় নি। ওর খুব কাছে গিয়ে বসলাম,
-আচ্ছা, তখন যদি আমার কিছু হয়ে যেত?
মিথু ক্রুর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ, তারপর শার্টের কলার ধরে টান দিয়ে খুব কাছে নিয়ে, পরম ভালোবাসায় আলিঙ্গন করে নিল…

চলবে……

পর্ব – ০৭
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1297355313800029&id=934291790106385

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here