গ্রামের ছেলেটি -(পর্ব- ১৪ তম)

0
399

#গ্রামের_ছেলেটি

পর্ব- ১৪ তম

স্বপন

নিলিমাকে অফিসের কাছে নিতে এসেছে রাজিব। নিলিমা চলে গেলো রাজিবের সাথে,,,সারাদিন কাজের মধ্যে কেটে গেলো আজ অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশি কাজ করেফেলেছি।
রাইসাঃ কিরে বাসায় যাবি না,,,
আমিঃ হুম যাবো আর একটু কাজ বাকি আছে এটা শেষ করেই যাবো,,,
রাইসাঃ বাহ তুই তো প্রথমে বলছিলি তুই নাকি করতেই পারবি না, এখন দেখছি আসতে আসতে সব করে ফেলছিস,। মিটিংয়ে তো মোটামুটি ভালোই প্রেজেন্টেশন দিলি। এখন আবার অফিস শেষে ও কাজ করছিস।
আমিঃ সেটা তো তুই মিটিংয়ে বেশির ভাগ কাজ করে দিলি। আমি কি করেছি,,,,,
রাইসাঃ হুম হয়েছে চল বাসায় যাওয়া যাক।
আমিঃ হুম হয়েগেছে চল,,,

আমি আর রাইসা রাস্তা দিয়ে হাটছি একসাথে।

রাইসাঃ কিরে এরকম মুখ গোমড়া করে কি নিয়ে চিন্তা করিস??
আমিঃ হুম কিছু না, ভালো লাগছে না তাই।
রাইসাঃ কেন ভালো লাগছে না নিলিমার কথা মনে করে,,,
আমি চুপ করে আছি রাইসার কথার কোন উত্তর না দিয়ে। রাইসার চলে গেলো ওর বাসায় আমি ও চলে আসলাম। রাতে সুয়ে মোবাইল টিপছি, হটাৎ আমার ম্যাসেঞ্জারে একটা ম্যাসেজ আসে আমি দেখলে তারপর, একটা কল আসে কথা বলে দেখি নিলিমার কল,,

আমিঃ হ্যালো,,,
নিলিমাঃ কি করছো,,
আমিঃ শুয়ে আছি তুমি,,
নিলিমাঃ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, কেন জানি ঘুম আসছে না,,,
আমিঃ তা হটাৎ আমাকে ফোন করলে,,,
নিলিমাঃ ফোনে তোমার নাম্বারটা সামনে তাই ভাবলাম তোমাকে একটু কল দেই।
আমিঃ (চুপ হয়ে আছি কিছু বলছি না,,কি বলব,,)
নিলিমাঃ রাতে খেয়েছো,,,
আমিঃ হুম,,,তুমি
নিলিমাঃ হুম,,,
আমিঃ তোমার বাবার কেমন আছে,,,
নিলিমাঃ হুম ভালো,,,
আমিঃ তোমার বিয়ের কি খবর,,,
নিলিমাঃ এই তো আজকে রিং পছন্দ করে এলাম দাঁড়াও তোমাকে ছবি দিচ্ছি,,,(তার পর আমার ম্যাসেঞ্জারে দুইটা ছবি দিলো, ছবিতে দেখি ডায়মন্ড এর রিং)
আমিঃ ওয়াও এতো ডায়মন্ড এর রিং এর তো অনেক দাম তাই না,,।
নিলিমাঃ হুম অনেক দাম,
আমিঃ থাক আমার এসব দেখে আর কি হবে বলো আমি কি আর এসব দিতে পারবো।
নিলিমাঃ তাও ঠিক আচ্ছা আমি তোমার হবুবউকে ডায়মন্ড রিং গিফট করবো ঠিক আছে,,,
আমিঃ ( আমি শুনে হেসে দেই,) তাই ,,,

আমি নিলিমার কথা শুধু শুনছি কেন জানি না আমার মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। চোখে পানি জলজল করছে,,,

নিলিমাঃ হুম,,আর জানো রাজিব বলেছে বিয়ের পর নাকি আমাকে ওর সাথে নিয়ে যাবে,। হানিমুনে প্যারিস নিয়ে যাবে আরো কত কি আমি শুনে তো পাগল হয়ে গেছি।
আমিঃ ভালো,,,,
নিলিমাঃ শুধু ভালো,,আচ্ছা তুমি বিয়ে করবে না, তোমারো তো বয়স কম হলো না। তুমি চাইলে আমি তোমার জন্য মেয়ে দেখে দিতে পারি।
আমিঃ আমার বিয়ে তাও আবার তুমি মেয়ে দেখে দিবে,, তা কিভাবে শুনি,,
নিলিমাঃ তা জানি না ,, আচ্ছা তোমার কাছে তামান্নাকে কেমন লাগে,,,
আমিঃ হাহাহাহ,,,তামান্না কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে,,
নিলিমাঃ হ্যা হবে না কেন, আমি যানি তামান্নাকে পছন্দ করে আমি দেখেছি। আর আমি যদি রাজিব আর ওর মাকে বলি তাহলে তারা না করতে পারবে না। আর তারা তোমাকে অনেক পছন্দ করে।
আমিঃ হাহাহাহ,,আচ্ছা তোমার তো ঘুম আসছে না তাহলে একটা গল্প শুনবে,যেটাকে গ্রামের ভাষায় কিচ্ছা বলে,,যদি সেটা শুনে তোমার ঘুম আসে।।।
নিলিমাঃ হুম বলো,,,,
আমিঃ একছিলো মুইলগা তার এই দুনিয়াতে কেউ ছিলো না সে একা। তার একটা তাল পাতা দিয়ে ঘর ছিলো আর একটা মুরগী ছিলো,। সেই মুরগিকে একটা শিয়ালে নিতে আসে কিন্তু সেটা মুইলগার কাছে ধরে পরে। সে মুইলগার কাছে আকুতি মিনুতি করে বলে সে যে তাকে ছেড়ে দেয়। আর যদি সে ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে রাজার মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে। এই শুনে সেও রাজি হয়ে যায়,,তারপর শেয়ালটা রাজার কাছে যায় মুইলগার বিয়ে তার মেয়ের সাথে দিতে। রাজার কাছে গিয়ে মুইলগার নামে অনেক প্রসংশা করলো মুইলগা তার দেশের রাজা আরো অনেক কিছু বলে। শেয়ালের কথা শুনে রাজাও মুগ্ধ হয়ে রাজি হয়ে যায়।
নিলিমাঃ কি বলছ শেয়ালের কথায় রাজা রাজি হয়ে গেলো,,
আমিঃ শেয়ালকে কি শুধু শুধুই পন্ডিত বলা হয়, আর এটা গল্প বাস্তব না,,
নিলিমাঃ তারপর কি হলো,,
আমিঃ তারপর কি শেয়াল মুইলগার কাছে গিয়ে বলে। তারপর মুইলগা বলে আমার কাছে তো রাজোকিও কাপড় কই পামু আমার কাছে আর কিছুই নাই। শেয়াল বলে সেটা আমি যোগার করে দিবো। তার কথা মত সব কিছু ব্যবস্থা করে গেলো বিয়ে বাড়ি হাতির পিঠে চরে। তাকে রাজা আনন্দ করে বরং করে নিলো। এখন মুইলগার সামনে নানান ধরনের খাবার দেখে তো সে আনন্দে কোনটা রেখে কোনটা খাবে বুঝে উঠতে পারছে না। তারপর ইচ্ছে মতো করে খেয়ে নিলো এদিক ওদিক না তাকিয়ে। বিয়ে হয়ে গেলো রাত হয়ে গেছে তাই তারা সকালে রওনা দেবে। রাতে ঘুমিয়ে আছে হটাৎ মুইলগা রাজার পেটে মোচড় দিলো,,এখন কি করবে এমন সমস্যা হয়ে গেছে উঠার আগেই সব শেষে,,
নিলিমাঃ হাহাহাহাহ, (নিলিমার হাসি থামছেই না,,)তারপর

আমিঃ এখন শেয়াল দেখে এই অবস্থা এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। হটাৎ শেয়ালের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে,,। শেয়াল মুইলগা রাজাকে পরিস্কার করে রাজ মহলের যত পহরি আছে তাদের দিয়ে আসে। সকালে এই অবস্থা দেখে শেয়াল উলটো রাজাকে বকে,আপনার পহরিরা এসব কি করেছে। এতে আমাদের রাজার কাছে মুখ দেখাবো কি করে। সে তো মনে করবে যে আপনার পহরিরা কোন দিন ও এরকম খাবার খায় নি। রাজার তাদের কাছে নত হয়, এখন যাবার পালা অনেক কান্নকাটি করে মেয়ে বিদায় দেন রাজা। মুইলগা রাজা তার বাড়িতে নিয়ে আসে রাজকন্যাকে। রাজকন্যা জিজ্ঞেস করে রাজমহল কোথায় , রাজকুমারির কথা শুনে মুইলগা বলে ওই যে আমার রাজপ্রাসাদ। রাজকন্যা দেখতে পেলো একটা তালপাতা দিয়ে বানানো ঘর তখন তার মাথায় বাজ পরেছে মনে হলো,,কান্না শুরু করে দেয়। মুইলগা তার বউকে দিয়ে সব কাজ করানোর চেষ্টা করে। এই ধরো ঝারু দেওয়া রান্না করা ইত্যাদি। এখন সে তো এসবের কিছুই পারে না, রাজকুমারী না বললেই দেয় এক ঝাড়ি ভয়ে না পারলেও করতে হচ্ছে,। ৩ দিন পর রাজা এসেছে মেয়েকে নিতে এসে দেখে একটা মেয়ে ঝাড়ু দিচ্ছে সে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, ” মুইলগা রাজার মহল কোথায়” তার কথা শুনে মেয়েটি তাকাতেই দেখে তার মেয়ে। তারপর রাজা তার মেয়ের কাছে সবকিছু শুনলো। শুনে সেই শেয়াল আর মুইলগার কে ধরে নিয়ে আসে। সবার কথা শুনে রাজা দেখে এখানে সবাই কিছু না কিছু দোষ আছে। শেয়াল তার জীবন বাচানোর জন্য এসব করেছে। তার দোষ সে না যেনে শুনে একটা শেয়ালের কথায় তার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে। তাই রাজা পরে সব কিছু মেনে নেয়।

আমার কথা শুনে নিলিমা হাসা শুরু করে দেয়।

নিলিমাঃ তোমার গল্প শুনে তো আমি হাসতে হাসতে মরেই যেতাম।
আমিঃ ঠিক না,, আসলে তখন তোমার অই কথা শুনে আমিও এরকম অবস্থা হয়েছে। এই গল্পের মতো যা বাস্তবে ভিত্তিহিন, এখন মানুষ তার সমানে সমানে না হলে হয় না।

আমি ফোন্টা কেটে দিলাম৷ নিলিমা প্রায় এভাবে আমাকে ফোন দেয় আমাদের মধ্যে অনেক কথা হয়। কথা অবশ্য আমি বলি না নিলিমাই বলে আমি শুধু শুনি আর হুম হুম বলি।

কিছু দিন পর নিলিমার আর রাজিবের এনগেজমেন্ট হয়ে গেলো,। সেদিন সবাই অনেক খুসি আমি ও অনেক খুসি ছিলাম কিন্তু সেটা শুধু মুখে হাসি দিয়েই। মনের মধ্যে ঝড় আর চোখের কনে পানি কাউকে বুঝতে না দিয়ে সব কিছু লুকিয়ে শুধু মুখে হাসি টুকু রাখি। নিলিমার চোখে মুখে খুসির দেখে মনে হচ্ছে আজ পৃথিবীর সব থেকে সুখি সেই। আমি নিলিমার দিকেই তাকিয়ে আছি। তারা দুজন দুজনের হাতে রিং পরিয়ে দিলো, আমি আর সেখানে দারিয়ে থাকলাম না। বাসায় চলে আসি নিরবের একা দাড়িয়ে আছি আর চোখ দিয়ে পানি পরছে।

ইদানিং নিলিমা আমাকে দিয়ে অফিসের কাজ বেশি বেশি করাচ্ছে। তিনি রাজিবের সাথে এখানে সেখানে ঘুরতে যাচ্ছে আর অফিসে আমাদের উপর চাপ দিচ্ছে।

নিলিমা অফিস থেকে বেরিয়ে দেখে রাজিব তার গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে। তার কাছে চলে গেলো,,,,

রাজিবঃ ওয়াও তোমাকে এই শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছে,,,,
নিলিমাঃ (নিলিমা লজ্জা পেয়ে হাত দিয়ে মাথার চুল সামনে থেকে সরিয়ে কানের পিছনে নিয়ে) তাই থ্যাংকস,,,
রাজিবঃ বলো কোথায় যাবে তুমি যেখানে বলবে আজ সেখানে সেখানে তোমাকে নিয়ে ঘুরবো সারাদিন।
নিলিমাঃ তাই☺️☺️কিন্তু আমি তো এখন বাসায় যাবো,।
রাজিবঃ কেন,,,,
নিলিমাঃ আসার সময় বাবার শরিরটা একটু খারাপ দেখলাম তাই ডাক্তার আংকেলকে কল করেছিলাম দেখি গিয়ে ডাক্তার আংকেল কি বলে গেলো,,,
রাজিবঃ আংকেল কি হয়েছে,,,
নিলিমাঃ এতো উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই বাবার তেমন কিছু হয়নি।
রাজিবঃ আচ্ছা চলো আমি ও যাবো তোমার সাথে,,
নিলিমাঃ না,,না তুমি শুধু শুধু কি জন্য যাবে,,,।তোমার যাওয়ার দরকার নেই,,
রাজিবঃ তাহলে তোমাকে অন্তত বাসায় নামিয়ে দেই, আংকলকে দেখে তারপর আমরা ঘুরতে বের হবো ।
নিলিমাঃ হুম চলো,,,,

নিলিমা বাসায় এসে দেখে তার বাবা সোফায় বসা তার কাছে যায়।

নিলিমাঃ বাবা এখন তোমার শরির কেমন আছে,,
নিলিমার বাবাঃ আমি বলেছিলাম না আমার কিছু হয় নি তুই শুধু শুধু চিন্তা করেছিস। এই বয়সে এরকম একটু হয়।
রাজিবঃ আংকে আপনার শরিরের কি অবস্থা এখন,,
নিলিমার বাবাঃ আরে রাজিব বাবা যে বসো আমি একদম ঠিক আছি। তুমি এখানে কিভাবে,,
রাজিবঃ নিলিমা বলল যে আপনি অসুস্থ তাই আপনাকে দেখতে চলে এলাম।
নিলিমার বাবাঃ তোমরা কোথাও বের হবে নাকি,,,
রাজিবঃ জি আংকেল চেয়েছিলাম তো বেরোতে কিন্তু আপনার এই অবস্থায়,,,
নিলিমার বাবাঃ আরে আমার কিছু হয় নি যাও তোমরা আমি ঠিক আছি।

নিলিমার বাবার কথা শুনে তারা দুজন চলে এলো,

নিলিমা রাজিবের গাড়িতে উঠে চলে গেলো,, । রাজিব গাড়ি চালাচ্ছে আর নিলিমা তার
পাশের সিটে বসে আছে,,
গাড়ির গ্লাস নিচে নামিয়ে দিয়ে নিলিমা বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে , আর বাতাশে নিলিমার চুল গুলো এলোমেলো হয়ে উড়ছে।৷ নিলিমা বার বার তার চুল গুলো ঠিক করছে, আর রাজিব তার সেই দিকে কিছুক্ষন পর তাকিয়ে দেখছে,,আর মুগ্ধ হচ্ছে। চুপচাপ বসে আছে কেউ কিছু বলছে না। রাজিব নিলিমাকে প্রথম এ ডাক দিলে শুনতে পায় না। কি যে চিন্তা করছে বাহিরে তাকিয়ে, রাজিবের ডাকে নিলিমার ঘোর কাটে,,,

রাজিবঃ কি ভাবছো,,
নিলিমাঃ কই কিছু না এমনি,,কেন,,
রাজিবঃ না একদম চুপ চাপ বসে আছো কিছু বলছো না। আমি কয় বার ডাক দিলাম শুনছ না।
নিলিমাঃ ভাবছি আমাদের কথা, এই কিছুদিন আগেও না তুমি আমাকে চিনতে বা আমি তোমাকে চিনতাম। কিন্তু আজ আমরা একসাথে কয়দিন পর আমাদের বিয়ে। কত স্বপ্নই না দেখেছি জানি না পুরোন হবে কি না।
রাজিবঃ হুম তাই তো, আচ্ছা বলো তোমার কি স্বপ্ন ছিলো শুনি, দেখি আমি তা পুরনো করতে পারি কি না,,
নিলিমাঃ তাই থাক এখন গাড়ি ঠিক মতো চালাও,,, (নিলিমা রাজিবের মুখ ধরে সামনের দিকে করে বলে)
রাজিবঃ তোমাকে দেখতে আজকে এতো সুন্দর লাগছে কি তোমার থেকে চোখ সরাতে পারছি না।
নিলিমাঃ রাজিব কি করছো এভাবে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালালে এক্সিডেন্ট করবে।

রাজিব নিলিমার কথা শুনছে না। নিলিমা এতো করে বলছে রাজিব তার নিজের ইচ্ছে মতো গাড়ি লাচ্ছে,। রাজিব নিলিমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে হটাৎ তার সামনে একটা গাড়ি চলে আসে। নিলিমা চিতকার দিলে রাজিব সামনে তাকিয়ে দেখে, রাজিব গাড়ি সামনে থেকে সরাতে সরাতে ততক্ষনে লেগে গেলো গাড়ির সাথে।

রাস্তার লোকজন এগিয়ে এলো সবাই তাদের বের করে হাস্পাতালে নিয়ে যায়।

আমরা খবর পেয়ে চলে গেলাম হাসপাতালে গিয়ে দেখি রাজিবের মা, বোন, নিলিমার বাবা সবাই কান্না করছে। তারা দুজন এখন আইসিইউতে চিকিৎসায় আছে। আমাকে দেখে স্যার আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। আমার ও চোখে পানি চলে আসে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। নিলিমার বাবাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করি নিলিমার কিছু হবে। কিন্তু তাতে কি আর তার কান্না থামে তার এক মাত্র মেয়ে তার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তার কি হবে।

ডাক্তার এসে বলে তাদের দুজনের রক্ত প্রয়োজন অনেক রক্ত বের হয়ে গেছে। ডাক্তার বলে একজনের রক্ত আমাদের কাছে আছে কিন্তু আর একজনের রক্ত মিলছে না। আমরা সবাই রক্ত দেয়ার জন্য বলি। ডাক্তার বলে আপনাদের মধ্যে কারও সাথে মিল আছে তা পরিক্ষা করতে হবে। পরিক্ষা করে দেখে আমার রক্তের সাথে মিলে। তারপর আমি রক্ত দেই, রক্ত রাজিবের লাগছে।

আমি স্যারকে বলি বাসায় যেতে আমরা এখানে আছি। সে যেতে না চাইলে আমরা জোর করে তাকে বাসায় যেতে বলি। রাকিব কে দিয়ে তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেই।

রাতে আমি থেকে যাই নিলিমার কাছে হাসপাতালে,। নার্স আমাকে এসে বলে এই ওষুধ গুলো লাগবে নিয়ে আসতে। আমি চলে গেলাম, গিয়ে দেখি তামান্না তার ভাইয়ের জন্য ওষুধ নিয়ে আসতেছে। আমি গিয়ে তার কাছে জিজ্ঞেস করি,,

আমিঃ আপনার ভাইয়ের এখন কি অবস্থা,,,
তামান্নাঃ ভালো,,,আর আপুর কি ঠিক আছে,,
আমিঃ ভালো এখন ঘুমাচ্ছে,,,

আমি ওষুধ নিতে চলে গেলাম তামান্নাও চলে গেলো তার ভাইয়ের কাছে।
রাতে আমি নিলিমার বেডের পাশে বসে আছি আর নিলিমাকে দেখছি। দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি তার ঠিক নেই। সকালে নিলিমার ঘুম ভেঙে যায় দেখে আমি ঘুমিয়ে আছি ওর হাত ধরে। নিলিমা ওর আর একহাত দিয়ে আমার চুল ধরে নাড়া দেয়।

আমার ঘুম ভেঙে যায়, আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখি নিলিমা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি নিলিমাকে জিজ্ঞেস করি,,

আমিঃ কিছু বলবে,,,,
নিলিমাঃ (নিলিমা ইসারায় বলে না)
আমিঃ এক মিনিট আমি আসতেছি,

কিছু ক্ষন পর আমি একটা পরিস্কার কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে আসি। তারপর নিলিমাকে বসিয়ে তার মুখ হাত সেই কাপড় দিয়ে মুছিয়ে দেই। নিলিমা কিছু বলছে না শুধু তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি তারপর কিছু ফল কেটে নিয়ে, আমি হাত দিয়ে নিলিমাকে খাইয়ে দেয়ার জন্য তার মুখের সামনে নেই। কিন্তু নিলিমা তাকিয়েই আছে,,,

আমিঃ কি হলো নেও,,, হা করো,,
খেতে চায় না করে,,
নিলিমাঃ রাজিব কেমন আছে,,
আমিঃ তিনি এখন ভালো আছে,,
নিলিমাঃ আমি দেখবো ওকে,,,
আমিঃ ঠিক আছে আগে খেয়ে তার যাওয়া যাবে। নেও
নিলিমা আমার কথা মতো খেয়ে নেই। নিজে এখনও ঠিক মতো সুস্থ না সে আবার আরেক জনকে দেখতে যাবে। নিজেই ঠিক মতো দাড়াতে পারে না এখনো।

চলবে,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here