গ্রামের ছেলেটি -(পর্ব- ২২ তম এবং শেষ)

0
1000

#গ্রামের_ছেলেটি

পর্ব- ২২ তম এবং অন্তিম

স্বপন

নিলিমা গাড়ি চালাচ্ছে আমি ওর পাশে বসে আছি,,

আমিঃ নিলিমা একটা কথা বলব,,,
নিলিমাঃ হুম বলো,,,
আমিঃ কালকের ছেলেটা কে ছিলো,,,
নিলিমাঃ ফ্রেন্ড কেন কি হয়েছে,,
আমিঃ ফ্রেন্ড,,,
নিলিমাঃ শিমুল তুমি আমাকে,,,,
আমিঃ না, আবার তোমার ছেলেটির প্রতি এতো গুরুত্ব দেয়া,,
নিলিমাঃ আরে আমরা পুরোনো বন্ধু অনেক দিন পর দেখা তাই, আর তুমি আমাকে ওকে নিয়ে এরকম ভাবো,,,
আমিঃ যেখানে আমি নিজে উপস্থিত আছি সেখানে তুমি ছেলেটার সাথে এমন ভাবে কথা বলছিলে যেন আমি তোমার কেউ না অপরিচিত কেউ। এমন মনে হচ্ছিলো আমিই মনে হয় জোর করে তোমাদের মধ্যে ঢুকে পরেছিলাম,,
নিলিমা গাড়ি থামিয়ে দিলো,,,

নিলিমাঃ তুমি বলতে চাচ্ছ এখন আমি আমার বন্ধুদের সাথে কথা বলব না তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেবো,,,
আমিঃ আমি তা বলি নি
নিলিমাঃ তুমি তা বলো নি কিন্তু তা বলতে বাকি রেখেছ কোথায়, আর শুনো আমি ফ্রেন্ডদের ছাড়তে পারবো না। এতে যে যা ভাবুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না,,
আমিঃ আমি জাস্ট এটাই বলতে চেয়েছি ফ্রেন্ড আর বয়ফ্রেন্ডের মধ্যে তফাত টা বুঝাতে চাচ্ছি,। ,যে ফ্রেন্ডকে বয়ফ্রেন্ড এ কনভার্ট করে ফেলো না।
নিলিমাঃ কি বলছ এসব তোমার মাথা ঠিক আছে,,,
এই বলে আমি গাড়ি থেকে নেমে গেলাম,,,

নিলিমাঃ কি হয়েছে গাড়ি থেকে নামছ কেন, ঠিক আছে আমার কাউকে লাগবে না যাও তোমরা সবাই যাও আমি একাই ভালো থাকবো,,,,

আমি কিছু না বলে চলে গেলাম, আর পিছনে ঘুরে তাকালাম না,,,,,বাসায় চলে এলাম,,,,

এইদিকে রাইসা আর রাকিবের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে।
অফিসে স্বাভাবিক ভাবে গেলাম কাজ করছি যেন কিছু হয় নি,,,। এদিকে নিলিমার সাথে তার পর থেকে কোন কথা আর কোন যোগাযোগ করি নি,,,,নিলিমাও কোন প্রকার যোগাযোগ করেনি।

রাইসাঃ কি করছিস বেশি ব্যস্ত নাকি,,
আমিঃ না কেন,,,
রাইসাঃ আজকে একটু ম্যাডামের সাথে যেতে পারবি, আমি আর রাকিব এক সাথে বেরবো ভেবেছিলাম।
আমিঃ না, আর বেরুবি যেহেতু অফিস শেষে গেলেই তো পারিস।
রাইসাঃ দেখ রাকিব প্লিজ আজকের মত এই হেল্প টুকু কর,,,

আমি অনেক মানা করার পর ও রাইসা না শুনে চলেগেলো।

নিলিমা এসে আমাকে ডাক দিলো, আমি চলে গেলাম নিলিমার সাথে,। গাড়িতে বসে আছি আমি কোন কথা বলছিনা,,নিলিমা ।

নিলিমাঃ কি হলো এভাবে চুপ করে বসে আছো যে, এখনো রাগ করে আছো দেখি,,,
আমিঃ না ম্যাডাম এমনি, আর রাগ কেন করবো,,,,
নিলিমাঃ রাগ করনি আবার ম্যাডাম বলছ,,,
আমিঃ আমরা মনে হয় অফিসের কাজে যাচ্ছি,৷ তাই আমার মনে হয় সেই বিষয়ে কথা বললে ভালো হয়।
নিলিমাঃ ঠিক আছে আজকে অফিসে শুধু অফিসের কথা ছাড়া অন্য কোন কথা হবে না,,,

নিলিমার দিকে তাকিয়ে দেখি রাগ হয়েছে, আমি অন্য দিকে তাকিয়ে থাকি। নিজেই হাসি চলে আসে কিন্তু সেটা নিলিমাকে বুঝতে না দিয়ে।
নিলিমা নেমে চলে গেলো আমার জন্য দাড়ালো না রেগে। আমিও ওর পিছনে দিলাম দোড়,,

এভাবে চলতে থাকে কিছু দিন।৷

রাইসা আর রাকিবের বিয়ের দিন চলে এলো, রাকিবকে বললাম বিয়ের আগে একটা পার্টি দিতে। তারপর বন্ধুরা মিলে একসাথে পার্টি করলাম৷ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি শরির কেমন যেন করছে মনে হয় ড্রিংক করে এরকম হয়েছে। শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার গায়ে কাপড় নেই,,। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি এটা আমার রুম না। চারদিকে ভালো করে তাকাতেই দেখি বাতরুম থেকে কে যেন। তোয়ালে দিয়ে চুল মুচতে মুচতে বের হচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,,

আমিঃ কে,,কে,,,আর আমি এখানে কিভাবে এলাম,,,

চুল গুলো ঠিক করে তাকাতেই দেখি নিলিমার

নিলিমাঃ সেটা তো আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করা উচিত,, তুমি ওতো রাতে আমার বাড়িতে তাও আবার মাতাল অবস্থায়।
আমিঃ এসেছি নিজেই কি বলছ, তাহলে আমার কিছু মনে নেই কেন,, আমার পোশাক,,,,
নিলিমাঃ আমি পাল্টেছি তোমার কাপড় ধুয়ে দিয়েছি। কাপড় থেকে গন্ধ আসছিলো কিসব খেয়েছ। এসব কবে থেকে শুরু করেছ।
আমিঃ কি বলছ এই প্রথম তাই তো আল্প তেই,, আমি এসে কিছু কি করেছিলাম,,
নিলিমাঃ হাহাহাহাহা কেন,,,
আমিঃ না আসলে আমার কিছু মনে নেই কিভাবে এলাম বুঝতে পারছিনা,,
নিলিমাঃ তুমি বাবাকে আমি ভেবে যা বলেছ আমি তো ,,,,
হায়রে আল্লাই যানে কি বলেছি, আমি উঠে চলে যাওয়া দিলাম,,, বেরিয়ে দেখি নিলিমার বাবা সোফায় বসা আমি তাকে সালাম দিয়ে তারাতাড়ি করে বেরিয়ে আসি।,,

, ভালোই অনেক সুন্দর করে ওদের বিয়ে হয়ে গেলো।
রাইসা আসে নি যে কদিন আমি প্রয়োজনে নিলিমার সাথে থেকেছি। এভাবে চলতে থাকে
অফিসে বসে আছি,,,নিলিমা এখনো অফিসে আসে নি রাইসা আমার কাছে আসছে,,,

রাইসাঃ কি করছিস তুই,,,,
আমিঃ কেন কিছু বলবি,,,
রাইসাঃ না তেমন কিছু না এমনি আসলাম। তা তোর বিয়ে নিয়ে কি খবর??
আমিঃ হুম করি করলেই তো স্বাধীন জীবনকে পরাধীন হয়ে যাবে,,,,
রাইসাঃ মানে,,,,
আমিঃ এই তুই যেমন রাকিবের স্বাধীন জিবনকে পরাধীন করেছিস,,,বেচারা এখন একটু বাইরে সময় কাটাবে তোর কারণে তাও করতে পারছেনা। বিয়ের আগে যত রাত হক কেউ ফোন করে জিজ্ঞেস করতো না, আর এখন।
রাইসাঃ কি রাকিব তোকে এসব কথা বলেছে,,,দাড়া আজকে বাসায় যেয়ে নি,,,
আমিঃ এই এই তুই আবার রাকিবকে কিছু বলিস না। রাকিব কিছু বলেনি আমি তো এমনি মজা করে বলছি,,
রাইসাঃ সেটা পরে দেখা যাবে,,তুই সত্যি সত্যি বল তো বিয়ে কবে করবি।
আমিঃ দেখি ভালো কোন মেয়ে পাই আগে তারপর দেখা যাবে,,
রাইসাঃ মানে তাহলে ম্যাডাম,,
আমিঃ তোর ম্যাডামকে কে বিয়ে করবে, সবসময় আমাকে বলবে, এটা করবে না ওটা করবে না। সারা ক্ষন শুধু প্যারা দিয়ে যাবে। আর আমি কিছু বললে এটা তার লাইফ সে যেটা চাইবে তাই করবে,,। তাই আমি আর কিছু বলব না, ওর যা ইচ্ছে তাই করুক তাতে আমার কি,,,।
নিলিমাঃ তাই বুঝি তোমার কিছু না,,,

আমি চমকে উঠি পিছনে তাকিয়ে দেখি নিলিমা।

আমিঃ আরে নিলিমা না সরি ম্যাডাম আপনি কখন এলেন,,,
নিলিমাঃ এই তো যতক্ষন ধরে আপনি আমার সম্পর্কে বলছিলেন,,,,রাইসা এদিকে আসো তো,,
রাইসা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে চলে গেলো,,,
আমিঃ সরি আসলে আমি মজা করে,,,

চলে গেলো,,,,,।
,,,,,,

আজকে অফিস বন্ধ নিলিমা আমাকে ফোন করে একটা রেস্টুরেন্টে যেতে বলে আমি ওর বলা মতো চলে গেলাম,,,

গিয়ে দেখি নিলিমা বসে আছে আর ওর সেই বন্ধু নিচে হাটু গেড়ে বসে ওর দিকে হত বারিয়ে দিয়ে । আমি একটু কাছে গিয়ে দেখি একটা আংটি নিয়ে। নিলিমা সেদিকে তাকিয়ে আছে মুখে হাসি,,,। নিলিমা আমাকে খেয়াল করেনি

আমিঃ কংগ্রাচুলেশনস,,, ( আমি ওদের কাছে গিয়ে বলি)

নিলিমা আমাকে দেখে ঘাবড়ে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

নিলিমাঃ তুমি কখন এলে,,,
আমিঃ এই জন্যই বুঝি সারপ্রাইজ বলেছিলে,,সত্যি আমার জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ ছিলো,,,।
নিলিমাঃ দেখো তুমি যা ভাবছো সেরকম কিছু না, একটু সান্ত হয়ে বসো আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলছি,,,,,
আমিঃ কি বলবে তুমি,,। এর জন্যই বুঝি আমাকে এরিয়ে চলতে তাই না, আমার সাথে থাকতে এখন আর ভালো লাগে না বুঝি,, ,,

এই ছেলে আমার সাথে কথা বলতে আসলে আমি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকি,, গায়ে হাত তুলি

একসময় নিলিমা আমাকে এসে চর মারে,,,আমি আর কিছু না বলে,,,
আমি সেখান থেকে চলে আসি,,,

বাসায় চলে এলাম মা অনেক বার ডাকে সেদিকে না তাকিয়ে চলে গেলাম রুমে গিয়ে বসে রইলাম। শরিরে রাগে মনে হচ্ছে আগুন লেগেছে। চোখের সামনে ওই দৃষ্য ভেসে আসে। রাগে নিজের মাথার চুল নিজেই টানছি।

সন্ধ্যায় রাকিবের কল৷ ,

আমিঃ হ্যালো,,
রাকিবঃ কিরে কতবার কল করছি ফোন ধরছিস না কেন কি হয়েছে তোর,,,
আমিঃ কিছু না ঘুমিয়ে ছিলাম ফোন সাইলেন্ট করা ছিলো,,,
রাকিবঃ ওহ বেরুবি এখন,,
আমিঃ হুম আসতেছি,,,

চলে গেলাম রাকিবের কাছে ,,,,

আমিঃ কি হয়েছে এরকম কেন করছিস,,,
রাকিবঃ ভাই বিয়া করছি না যেন বাশ খেয়েছি,,,
আমিঃ কেন তোদের আবার কি হলো ভালোই তো যাচ্ছিলো,,
রাকিবঃ সব তোর দোষ তুই নাকি বলেছিলি আমাকে নাকি রাইসা আমার মন মতো সবকিছু করতে দেয় না,,তাই আজকে বাসা থেকে বের করে দিছে। বলছে আমার নাকি আজকে বাসায় না গেলেও চলবে,,,
আমিঃ ভালোই হয়েছে,,,
রাকিবঃ তোর কি হয়েছে ,,,
আমিঃ কিছু না,,,
রাকিবঃ না কিছু হয়েছে শুর যেন কেমন কেমন লাগছে,,,

রাকিবকে বললাম সব,,,

দুজনে বসে আছি,,,,

আমিঃ বিবাহিত জীবন কেমন কাটছে তোর,,
রাকিবঃ এই যে যখন গাল্ফ্রেন্ড ছিলো তখন ছিলো বাইরে প্যারা আর এখন সেই প্যারা ঘরে নিয়েছে,,বাবু সোনা বলে প্রথম অনেক ভালোবাসা দেখাবে কিন্তু এরপর বলবে,,বাবু এই কাজটা একটু করে দেও না,,ওই টা একটু এনে দেও না। বাতরুম থেকে শুরু করে রুম মোছা ঘরের সব কাজ করাবে,,,
আমিঃ হাহাহ সত্যি তাহলে আমি বেচে গেছি কি বলিস বিয়ে না করে,,,

এরি মধ্যে রাকিবের ফোন বেজে উঠল,,

আমিঃ কিরে ফোন দেখে তারপর আবার রেখে দিলি কেন,,
রাকিবঃ বউ ফোন করছে বের করে দিয়েও সান্ত হয় নি এখন আবার কল করে জালাচ্ছে,,,

কয়েকবার কল করার পর ফোন রিসিভ করে,,

কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দিলো,,,

আমিঃ কি হয়েছে কি বলে,,,
রাকিবঃ আর কি বলবে,, তোর কথা জিজ্ঞেস করলো বললাম একসাথে আছি,,বললো আসতেছি বলে ফোন রেখে দিলো,,,,,

আমরা কথা বলছি এরি মধ্যে দেখি রাইসা চলে ও এসেছে,,,

রাইসাঃ তোদের মধ্যে আবার কি হয়েছে,, ফোন ধরছিস না কেন,,
আমিঃ কি আর হবে কিছু না এমনি ফোন ধরছিনা।
রাইসাঃ কিছু তো একটা হয়েছে ম্যাডামে কন্ঠ শুনে মনে হলো কাদছেন,,,,

রাইসা আর রাকিব দুই জনে আমার দুই পাশে বসে ঝগড়া করছে আমি মধ্যে খানে,,। ঝগড়া করছে এরা মাঝখানে মার খাচ্ছি আমি,,,

আমিঃ থামবি তোরা নাকি আমি উঠে চলে যাবো,,

কে শুনে কার কথা আমি উঠে চলে গেলাম দূরে দাঁড়িয়ে দেখছি ওদের ঝগড়া। আমি একা দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি । এরি মধ্যে রাকিব চিল্লাতে থাকে আমি এসে দেখি রাকিব রাইসাকে কলে নিয়ে খুসিতে এমন করছে।

আমিঃ বাহ এই তো কিছুক্ষন আগে দুইজনে ঝগড়া কর ছিলি এখন আবার এমন করছিস মানে কি,,,
রাকিবঃ আজকে আমি অনেক খুসি,,
আমিঃ কেন,,, হটাৎ,,
রাকিবঃ আমি বাবা হতে চলেছি,,,
আমিঃ সত্যি নাকি,,,এটা তো অনেক বড় সুখবর। তাহলে তো আজ রাতে পার্টি হয়ে যাক,,,
রাকিবঃ ওকে বল কি খাবি,,,
আমিঃ যে সুখবর টা দিয়েছে তাকেই জিজ্ঞেস কর,,,,

রাইসা লজ্জা পেয়েছে,,তারপর রাইসা বলে ওদের বাসায় বসে করবে। আমিকে নিয়ে গেলো ওদের বাসায়,,,

রাকিবের বাসায় আছি রাইসা বাসায় সব কিছুর আয়োজন করার কথা বলে কিন্তু আমি আর রাকিব বলি আজকে আমরা সবকিছু করবো,,,। আমি আর রাকিব রান্না করছি আর রাইসা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে আর মুখ চেপে হাসছে,,,

রান্না শেষ করে খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখি,,রাইসা বলল এবার আমাদের ফ্রেশ হতে যেতে আমরা ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আমি বাসায় কল করে বলি আমি রাকিবের বাসায় খেয়ে আসবো,,,

এরিমধ্য রাকিব খাওয়ার জন্য ডাকতে আসে,,,

আমি চলে গেলাম গিয়ে বসে পরি খেতে,,কলিং বেল বেজে উঠল, রাইসা উঠে চলে গেলো,,। রাইসা দরজায় দাঁড়িয়ে কি কি জেন বলে আমি খেতে লাগলাম কেন জানি খুদা অনেক বেশি লেগেছে। লাগবে না কেন দুপুরে খাওয়া হয় নি।

এর জন্যই বন্ধুদের থাকাটা জরুরী, বাসায় থাকলে মনে হয় রাতের খাবার ও খাওয়া হতো না। বাসায় শুধু ওসব ভেবে ভেবে নিজে নিজেই কষ্ট পেতাম,,।

রাকিব বসতে বলে আমি সামনে তাকিয়ে দেখি নিলিমা খাবার মুখে দেবো তখনি। নিলিমা আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে। চেহারার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে কান্না করতে করতে,,।

রাইসা নিলিমাকে সামনে প্লেটে খাবার দেয় কিন্তু নিলিমা না খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি ওকে ইসারায় জিজ্ঞেস করলাম,, কি হয়েছে আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন,,,। আমার দিকে তাকিয়ে রাগ খাবারের উপর দেখাচ্ছে,,

আমি খাওয়া শেষ করে উঠে চলে গেলাম,,, আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি আর ফোন টিপছি,,রাকিব আমার পাশে দাঁড়িয়ে,,

রাকিবঃ শিমুল এই শিমুল,,,
আমিঃ কি হয়েছে,,,,
রাকিবঃ নিলিমা বসে আছে যা গিয়ে একবার কথা বল, দেখ কি বলে শুনলে কি হয়।,,

নিলিমা রাকিবের কথা শেষ না হতেই চলে আসে,,, রাকিব চলে যায়,,

নিলিমাঃ ভালোই তো দিব্বি আছো আমিই একা কষ্ট পেয়ে গেলাম,,,
আমিঃ মানে,, তোমার ভালো থাকার কথা নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছ এখানে তোমার কোথায় কষ্ট, আর রইলো আমার কথা। দেখানো কষ্ট পেয়ে মানুষের কাছে বেচারা হওয়ার কি দরকার।
নিলিমাঃ তার মানে আমি সব কিছু অভিনয় করছি,,,,
আমিঃ যেমনটা তুমি মনে করো,,

আমি নিলিমার পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম,,, আমি গিয়ে রাকিব কে বললাম আমি চলে যাচ্ছি। রাকিব আমাকে যেতে দিলো না। রাইসা আর রাকিব অনেক জোরাজোরি করে। তারপর আর কি থেকে গেলাম,,,

আমি আর রাকিব এক রুমে, রাইসা আর নিলিমা অন্য রুমে,,,
রাকিব বলল তুই ঘুমা আমি আসতেছি,, এই বলে রাকিব চলে গেলো,,।আমি আমার বাসায় ফোন করে বলে দিলাম আজকে আর বাসায় আসা হবে না।

ফোন টিপতে টিপতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি,,,

সকালে ঘুম ভেঙে গেলো,, আমার বুকের উপর দেখি নিলিমা সুয়ে আছে,,আমাকে জড়িয়ে ধরে আমি ও ওকে জড়িয়ে ধরে আছি। আমি নিলিমার দিকে তাকিয়ে আছি,, এরপর আমি ওর ঠোঁট ধরে টান দেই,। হাত দিয়ে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে আবার জড়িয়ে ধরে,,আমি ওর কপালে চুমু খেলাম,নিলিমা ঘুমের ঘোরে হেসে দিলো। আমি ওর দুই গাল চেপে ধরি,,, নিলিমা আমার হাত সরিয়ে বলে,,

নিলিমাঃ কি করছো ব্যথা লাগচ্ছে তো,,,

আমি চমকে উঠি এখানে না রাকিবের থাকার কথা নিলিমা কি করে এলো। আমি কোথাও ভুল করছি না তো। আমি আমার চোখ ঠলে নিলাম ভালো করে এর পর নিলিমা বলে ডাক দিলাম,,

নিলিমাঃ কি হলো ডাকছ কেন আর একটু ঘুমতে দেও,,,

আমারো কেমন যেন নিলিমাকে ধরে রাখতে ভালোই লাগছিলো,,তাই আমি ওকে ধরে থাকি,,,

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম নিলিমা এখনও ঘুমাচ্ছে। রাকিব দেখে বলে,,

রাকিবঃ কিরে ঘুম ভেঙেছে তাহলে,,,,
আমিঃ হুম,,,,,রাতে তুই বললি আসতেছি বলে গেলি তোর আর খবর নেই সকালে দেখি নিলিমা পাশে,,
রাকিবঃ আয় বস,,,

আমি গিয়ে ওর পাশে বসি,,

রাকিবঃ তা রাতে সব কিছু মিটেছে,,,
আমিঃ সবকিছু মিটবে মানে,,,
রাকিবঃ এই যে দুই জনের মান অভিমান আর কি। এখন তুই পার্টি দিবি কবে,,
আমিঃ কি বলছিস কিসের পার্টি আমি তোর কথার কিছু মাথায় আসছে না,,,,
রাকিবঃ তোর হাতে কি ওটা,,,( হাতের দিক দেখিয়ে বলে)
আমিঃ কোথায়,,( এই বলে হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার হাতে আংটি পড়ানো,,)

আমি দেখে অবাক এই আংটি এলো কোথা থেকে এটা তো,,,

রাকিবঃ নিলিমা আমার কাছে সব বলেছে,, আচ্ছা নিলিমাই তো তোকে ফোন করে নিয়ে ছিলো তাই না,,
আমিঃ হুম তো,,
রাকিবঃ আসলে আংটিটা ছিলো তোর জন্য, তখন নিলিমার কাছে দেখে ছেলেটা নিয়ে ওকে মজা করে প্রোপোজ করে । তুই এখন ঠান্ডা মাথায় ওর কাছে গিয়ে চুপ করে শোন গিয়ে তখন কি হয়েছিলো,,,
আমিঃ কি বলছিস,,,
রাকিবঃ আরে সালা যা গিয়ে শোন নিলিমা তোকে আরো আগেই বলতে চেয়েছিলো কিন্তু কিভাবে বলবে তা বুঝে উঠতে পারে নি,,যখনি বলতে চেয়েছে তখনি কিছু না কিছু ঘটেছে,,
আমিঃ আরে ভাই তোকে বলেছে তো তুই বলনা,,
রাকিবঃ ওকে তুই কি এর মধ্যে নিলিমাদের বাসায় রাত কাটিয়েছিলি,,
আমিঃ হুম,,তোর বিয়ের আগেই কিন্তু নেশায় রাতে কিভাবে গেলাম তা মনে নেই,,।
রাকিবঃ তাহলে রাতে যা হয়েছে তাও তো মনে নেই তাই না,,
আমিঃ হুম,,,
আমি নিলিমার কাছে চলে গেলাম,,,,,,

গিয়ে দেখি নিলিমা ঘুমিয়ে আছে,,,,আমি গিয়ে ওর মাথায় হাত দেই। নিলিমা চোখ মেলে দেখে,, আমি হেসেদিলো,,

আমিঃ নিলিমা তুমি বলেছিলে কি যেন বলবে কি,,,

নিলিমার চোখে পানি চলে আসে বাচ্চাদের মতো করে কান্ন করতে থাকে। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে থাকি, নিলিমা আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকে। এরপর আমার হাত নিয়ে ওর পেটের কাছে ধরে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম নিলিমা প্রেগন্যান্ট আমি খুসিতে নিলিমার গালে হাত দিয়ে ধরে কপালে চুমু দিলাম। আমার চোখে পানি চলে আসে,,আমি নিলিমা জরুরি ধরে থাকি,,

আমিঃ চলো,,,
নিলিমাঃ কোথায়,,
আমিঃ আজকে আমরা বিয়ে করবো,,,
নিলিমাঃ কিন্তু ,,,
আমিঃ কোন কিন্তু নয়,,,

এই বলে নিলিমাকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলাম,,,,
আমি রাকিবের কাছে চলে গেলাম ওকে গিয়ে বললাম,,

তারপর চলে গেলাম আমি আর নিলিমা বিয়ে করতে। বিয়ে করে আমি আমার বাসায় চলে এলাম নিলিমা ওর বাসায়,,
বাসায় আসতেই মা কথায় কথায় বিয়ে কথা বলে ফেলে আমি তাকে বলে দিলাম আমি আর নিলিমা বিয়ে করে নিয়েছি। মা শুনে খুসি হয়েছেন বলে নিলিমাকে নিয়ে আসলি না কেন৷

এরপর পারিবারিক ভাবে নিলিমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে এলাম,,,

আমি আর নিলিমা বাসর ঘরে দুজনেই আজ অনেক খুশি।

আমিঃ নিলিমা,,,
নিলিমাঃ হুম,,
আমিঃ সেই রাতে কি হয়েছিলো,,,
নিলিমাঃ আমি বলতে পারি না,,,( লজ্জা পেয়ে)
আমি নিলিমাকে জরিয়ে ধরে আছি,,লজ্জায় আমার বুকে মুখ লুকায়)
আমিঃ তা কেমন করে হয়,,তাহলে আমি কিভাবে বুঝবো আমি ছিলাম,,
নিলিমাঃ মানে,,,, (রেগে আমার দিকে তাকিয়ে)

আমি মুচকি হেসে বলি,,,

আমিঃ সরি মজা করছি,, তুমি তো অনেক স্বপ্ন দেখেছিলে হানিমুনে প্যারিস যাবে তাহলে এখন কি করবে,,,,
নিলিমাঃ মানুষ কত কিছুই তো চায় সবকি পায়,, আমি তোমাকে পেয়েছি এটাকি কম কিছু আমার জন্য,,,,
আমিঃ তাই,,,ঠিক আছে বলো কোথায় যাবে প্যারিস,
নিলিমাঃ ওতো টাকা কোথায় পাবে,,,,
আমিঃ আমার শ্বশুর মশাইর টাকা পয়সা কম আছে নাকি,,,
নিলিমাঃ মজা করছো আমার সাথে,,,ঠিক আছে চলো তোমাদের গ্রামে ঘুড়ে আসি কিছুদিন এর জন্য সবাই মিলে।।
আমিঃ তাই ওকে,,,,

গ্রাম থেকে ঘুরে এলাম সবাই মিলে,,,
সকালে ঘুমিয়ে আছি এর মধ্যে নিলিমা ডাকাডাকি শুরু করে,,
নিলিমাঃ কি হলো উঠও না অফিসে যাবে না দেরি হয়ে যাবে তো ওগো শুনছ,,,,
আমিঃ হুম,,,( আমি নিলিমার হাত ধরে টেনে আমার কাছে নিয়ে আসি,,,)
নিলিমাঃ ছাড়ো আমার অনেক কাজ আছে।
আমিঃ পরিবর্তন ঠেকছি আজকে ডাকের মধ্যে,,,
নিলিমাঃ শ্বাশুড়ি মা বলেছেন স্বামীর নাম ধরে ডাকতে নেই,,,
আমিঃ বাহ একদম সেকালের বউদের মতো মনে হচ্ছে,,
নিলিমাঃ হয়েছে উঠো,,,

আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম,, ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে খাবার টেবিলে চলে গেলাম। গিয়ে দেখি মা খাবার টেবিলে খাবার রাখছে আর নিলিমা মাকে সাহায্য করছে,,আমি গিয়ে সুমার পাশে বসে পরি,,,

খেয়ে অফিসে চলে গেলাম,, মাসুদ সাহেব আর সুমন সাহেব শুরু হয়ে গেলেন,

সুমন সাহেবঃ শিমুল ভাই বিয়ে করলেন দাওয়াত দিলেন না,,।
আমিঃ আরে ভাই বিয়েটা হটাৎ করে হয়ে গেলো কাউকে যানাতেও পারিনি,,
মাসুদ সাহেবঃ তা ভাই ভাবির রান্না কেমন আমাদের একদিন দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতেও তো পারেন নাকি,,,
আমিঃ আরে ভাই কি বলব আপনার ভাবির রান্না একবার মুখে দিলে আবার মুখে দিতে ইচ্ছে করবে না,,,
মাসুদ সাহেবঃ কি বলে এতো খারাপ রান্না করে,,,
আমিঃ শুধু কি তাই সে তো রান্না ঘরের কাছেই যেতে পারে না,,,,
সুমন সাহেবঃ বর্তমানের মেয়েরা শুধু মডেলিং করতে পারে, রান্না অ ক খ জানে না।

আমরা যা যা বলছিলাম নিলিমা আর রাইসা পিছনে দারিয়ে সব শুন ছিলো,,,আমি পিছনে ঘুরে দেখি ওরা দাঁড়িয়ে আছে,,, নিলিমা চলে গেলো আর রাইসা কে আমি জিজ্ঞেস করি,,

আমিঃ কতক্ষন থেকে এখানে,,,
রাইসাঃ শুরু থেকে,,,
আমিঃ আমাকে আগে বলবি না,,,এখন বাসায় গেলে আমার খবর আছে,,এখানে কিছু বলবে না। কারণ অফিসে জানানো হয় নি আমি আর নিলিমা স্বামি স্ত্রী। আমি নিলিমার ক্যাবিন এ গেলাম,,

নিলিমাঃ আমি রান্না ঘরে যেতে পারি না,,,
আমিঃ আসলে আমি ও রকমটা বলতে চাইনি,,
নিলিমাঃ সেটা বাসায় গেলেই বোঝা যাবে নে।

আমি বেরিয়ে এলাম, এহাত কমড়ে দিয়ে আর একহাত দিয়ে মাথা চুল কাচ্ছি,,,রাইসা দেখে মুচকি মুচকি হাসি দিলো,,,

রাতে বাসায় এসে খাবার খেতে চাইলে নিলিমা বলে তোমার জন্য খাবার রান্না করা হয় নি।।
আমিঃ মানে,,কেন,,
নিলিমাঃ তুমিই তো বলেছ আমার রান্না করা খাবার খাওয়া যায় না তাই তোমার জন্য রান্না করি নি,,,।।
আমিঃ আরে আমি তো মিথ্যা বলেছিলাম,,,কারণ তারা তোমার হাতের রান্না খেতে চেয়েছিলো,,তাই,,
নিলিমাঃ তো তার জন্য তুমি আমার বদনাম করবে,,,
আমিঃ আরে বুঝছোনা তারা বাসায় আসতে চেয়েছে বলে আমি বলেছি তুমি রান্না পারো না। আসলে তো তোমার অনেক কষ্ট হতো আর তুমি এই অবস্থায় এতো কষ্ট করবে তাই। তারা তো যানে না তুমি আমার বউ,,,,
নিলিমাঃ যাই হোক আজকে তুমি খাবার পাবেনা,,,

আমি আর কিছু না বলে শুতে চলে গেলাম রাগ করে,,,
আমি ঘুমিয়ে আছি নিলিমা রুমে আসে এসে দেখে আমি ঘুমিয়ে আছি,,,

নিলিমাঃ কি হলো ঘুমিয়ে গেলে নাকি,,

আমি কোন কথা বলছি না,,নিলিমা আমাকে ধরে মাথায় হাত দিয়ে বলে,,

নিলিমাঃ এই শুনছ উঠো, উঠে খেয়ে নেও,,
আমিঃ না খাবো না,, তুমি নিয়ে যাও,,
নিলিমাঃ বাবা রাগ করেছে দেখছি,,,উঠো আমি খাইয়ে দিচ্ছি,,
আমিঃ না খাবো না বললাম তো তুমি নিয়ে যাও,,,
নিলিমাঃ ঠিক আছে তুমি না খেলে আমিও খাবো না,৷
আমিঃ মানে তুমি এখনো খাও নি,,
নিলিমাঃ তুমি না খেলে আমি খাবো কি করে,,,
আমিঃ তাই বলে এখন ও না খেয়ে থাকবে,,,
নিলিমাঃ আচ্ছা উঠো এখন আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি,,

তারপর আমি উঠে ওয়াস রুমে গিয়ে এসে বসি,, নিলিমা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে,
আমিঃ তুমি খাওনি তাহলে আমার সাথে খাও,,,

এরপর আমি নিলিমাকে খাইয়ে দিলাম,,,,

❤️❤️এইভাবেই চলতে থাকে শিমুল আর নিলিমার অসমাপ্ত ভালোবাসার গল্প,,,❤️❤️❤️

আজকের মতে এখানেই শেষ,, আবার দেখা হবে অন্য কোন গল্পে অন্য কোন নামে,,,,

,,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here