ডায়েরী শেষ পাতা -(পর্ব ০২)

0
444

# গল্প – #ডায়েরী_শেষ_পাতা

# পর্ব ০২

# লেখনীতে – #Sazzad_KR
.
.
নম্রতার সাথে কেটে যাওয়া অতীতের মূহুর্তগুলো সাজ্জাদ সহজে ভুলতে পারছে না৷ যত বার ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে ততবার নম্রতার সাথে দেখা হয়ে ভুলে থাকা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে,, প্রথমে ভেবেছিল সে নম্রতাকে একটা সুযোগ দিবে আবার কাছে ফিরে আসার জন্য তবে এখন আর দেবে না৷ সেদিনের মতো শপিং করে বাসায় এসে ডিনার করে ঘুমিয়ে গেল। পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে খাবার খেয়ে রুমে এসে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো নতুন অফিসের উদ্দেশ্য। অফিসে প্রথম দিন হওয়ায় কেমন যেন একটা আনইজি ফিল করছে৷ অচেনা সবার মাঝে সে একা একজন নতুন মানুষ। সবাই বার বার তার দিকে তাকাচ্ছে একটু পর অফিসের পিয়ন এসে সাজ্জাদকে একটা রুম দেখিয়ে ওখানে যেতে বলল। পিয়ন কথামতো রুমটার দিকে হাঁটা শুরু করলো রুমের ভেতর প্রবেশ করে দেখতে পেল একজন লোক বসে আছে সাজ্জাদ দেখে লোকটি তাকে চেয়ারে বসতে বলল,,সাজ্জাদ চেয়ারে বসার পর লোকটি বলল

‘ শুন এত লোকের ভেতরে আমি তোমাকে এই অফিসের ম্যানেজার হিসেবে বেছে নিয়েছি আশা করছি তুমি আমার কথার বাইরে যাবে না ‘

সাজ্জাদ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানিয়ে বলতে লাগল

‘ আপনারা যেভাবে বলবেন সেভাবে কাজ করার চেষ্টা করব আপনাদের কথার বাইরে যাব না ‘

‘ হুম। আপনাকে বলি আমি হলাম এই অফিসের বস কোন প্রকার সমস্যা হলে আমাকে বলবেন ‘

‘ জ্বী স্যার ‘

‘ পিয়ন আপনাকে কেবিন দেখিয়ে দিবে সেখানে গিয়ে বসে থাকুন একটু পর আপনাকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য একজন ট্রেনার যাবে এবং আপনাকে ৩ মাসের ট্রেনিং দেওয়া হবে ‘

‘ জ্বী স্যার সেটা আমি জানি লেটারে লেখা ছিল ‘

‘ তাহলে নতুন করে কিছু বলব না আমি পিয়নকে বলে দিচ্ছি ওনি আপনাকে কেবিন দেখিয়ে দিবে ‘

এই বলে ওনি পিয়নকে ডেকে সাজ্জাদের কেবিনটা দেখিয়ে দিতে বললেন। পিয়ন কেবিনে দেখিয়ে দিল সাজ্জাদ কেবিনে বসে অপেক্ষা করতে লাগল একটু পর একজন এসে কাজ গুলো বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেল। সারাদিন অফিসে কাজ করে বিকেলে বাসার দিকে রওনা দিল,, তারপর থেকে রোজ অফিসে যেত এবং কাজ করতো। এভাবে দেখতে দেখতে ১০মাস কেটে গেল। সাজ্জাদ এই ১০ মাসে নম্রতার সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেনি। সাজ্জাদ যেদিন অফিস জয়েন করেছিল তার ৩ দিন পর নম্রতার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল,, তারপর থেকে ওর ব্যাপারে কোন খোঁজখবর সাজ্জাদ আর নেয়নি৷ এদিকে সাজ্জাদের আম্মু সাজ্জাদকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে কিন্তু সাজ্জাদ এখন বিয়ে করতে রাজি না।

———-

সাজ্জাদ অফিস শেষ করে বাসায় এসে রুমের ভেতর বিছানায় বসে বিশ্রাম করছিল এমন সময় সাজ্জাদের আম্মু ও অবণি দুজনে একসঙ্গে রুমে প্রবেশ করল। দুজনে রুমে আসতে দেখে সাজ্জাদ শুয়ে থাকা থেকে বসে পড়ল। তখন আম্মু সাজ্জাদের হাতে কয়েকটা ছবি ধরিয়ে দিয়ে বলল

‘ এখানে কয়েকজন মেয়ের ছবি আছে একটু দেখে বলতো এর ভেতর কাকে তোর পছন্দ হয়? ‘

সাজ্জাদ ছবিগুলো না দেখে অবণিকে নিতে বলল৷ অবণি ছবিগুলো হাতে নেওয়ার পর সাজ্জাদ ওর আম্মুকে বলল

‘ আমিতো বলছি এখন বিয়ে করতে পারব না,আমার কয়েকদিন সময় প্রয়োজন ‘

তখন সাজ্জাদের আম্মু বলল

‘ আর কতদিন সময় নিবি এখন চাকরি করছিস এখন বিয়েটা করে ফেললে কি হবে ‘

‘ তবুও আমার কয়েকদিন সময় লাগবে ‘

‘ সেটা হবে না আগামী শুক্রবার আমরা মেয়ে দেখতে যাব তার সাথে তুইও যাবি ‘

‘ সেটা শুক্রবারে দেখা যাবে ‘

সাজ্জাদের আম্মু কিছু না বলে ওখান থেকে চলে গেল৷ তখন অবণি সাজ্জাদের পাশে বসে বলতে লাগল

‘ ভাইয়া বিয়ে করলে কি এমন হবে, বলতো ‘

‘ আমার বিয়ে নিয়ে তোর এত মাথা- ব্যাথা কেন? ‘

‘ মাথা-ব্যাথা তো থাকবেই আমার বাড়িতে একটা ভাবী আসবে তার সাথে সারাদিন গল্প করব একা একা থাকতে তো আর ভালো লাগে না ‘

‘ এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশুনা কর সামনে তোর H.S.C পরীক্ষা ‘

‘ সেটা নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না৷ পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি আমি নিয়ে ফেলেছি ‘

‘ সেটা রেজাল্ট হাতে পেতে দেখা যাবে ‘

‘ হুম এখন অনেক কথা বলছিস চল ডিনার করবি ‘

তারপর ওরা দুজনে ডিনার করতে চলে গেল৷ পরেরদিন সাজ্জাদ অফিসে গেল। এত মাসে অফিসের সকল প্রকার কাজগুলো সে শিখে ফেলেছে৷ সারাদিন অফিস শেষে বাসায় ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে একটু বাইরে ঘুরতে বের হলো। কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে বাসায় এসে ডিনার করে ঘুমিয়ে গেল৷ পরেরদিন শুক্রবার থাকায় অনেক বেলা করে ঘুম থেকে ওঠলো সাজ্জাদ। নাস্তা শেষ করে একটু বাইরে যাবে এমন সময় সাজ্জাদের আম্মু বলল

‘ কোথায় যাচ্ছিস এখন? ‘

‘ এই একটু বাইরে ‘

‘ এখন বাইরে যাওয়া লাগবে না রুমে গিয়ে রেডি হয়ে আয় আমরা মেয়ের বাসায় যাব ‘

‘ তোমাকে তো বললাম আমি এখন বিয়ে করব না ‘

‘ তোকে কি বিয়ে করতে বলছি মেয়েটাকে দেখে আসব পছন্দ হলে বিয়ে করবি নাহলে করবি না ‘

সাজ্জাদ ভাবতে লাগল মেয়েটাকে দেখে আসাতে সমস্যা কি এত করে যখন বলছে তখন নাহয় মেয়েটাকে দেখে আসি৷ তাই বেশি কথা না বলে রুমে গিয়ে রেডি হয়ে এলো। তারপর পরিবারকে নিয়ে মেয়ের বাসার দিকে রওনা দিল৷ কিছুক্ষণ পর সবাই মেয়ের বাসায় চলে গেল ভেতরে ঢুকতে বাসার লোকজন এসে তাদের ড্রয়িংরুমে নিয়ে বসিয়ে দিল। সাজ্জাদ ড্রয়িংরুমে বসে আছে ডান পাশে ওর আম্মু, বা পাশে অবণি বসে আছে একটু পর মেয়েকে নিয়ে এসে সাজ্জাদের সামনে বসিয়ে দিল। মেয়েটাকে দেখে পাগল হবার মতো অবস্থা নিজে মনে মনে বলতে লাগল এত সুন্দর মেয়ে হয় কি করে। নম্রতার থেকেও সে বেশি সুন্দরী। সাজ্জাদ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে তখন সাজ্জাদের আম্মু বলল

‘ আপনাদের মত থাকলে দুজনে আলাদা করে কথা বলে আসুক ‘

ওনার কথায় সকলে হ্যাঁ জানালো। তাই সাজ্জাদ ও মেয়েটাকে একটা আলাদা রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হলো কথা বলার জন্য৷ এখন সাজ্জাদ সামনে মেয়েটা দাড়িয়ে আছে। সাজ্জাদের মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছে কিন্তু মেয়েটার সাজ্জাদকে পছন্দ হয়েছে কিনা সেটা জানে না তখনি মেয়েটি বলল

‘ আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে? ‘

‘ পছন্দ হবে না কেন অবশ্যই পছন্দ হয়েছে৷ আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়েছে ‘

‘ হুম৷ আপনার নাম কি? ‘

‘ আমার নাম সাজ্জাদ৷ আপনার নাম কি? ‘

‘ আমার নাম নুসরাত ‘

সাজ্জাদ কিছু বলতে যাবে এমন সময় দরজার অবণি নক করে বলল

‘ ভাইয়া বাইরে এসো তোমাদের জন্য সবাই বসে আছে ‘

তখন তারা বাকী কথাগুলো বলতে পারল না৷ দুজনে রুমের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো ড্রয়িং রুমে এসে দেখে তাদের বিয়ে দিন ঠিক করে ফেলেছে সাজ্জাদ এতে কোন প্রকার বাধা দেয়নি কারণ মেয়েটাকে সাজ্জাদের পছন্দ হয়েছে৷ আগামী সপ্তাহে রবিবারে বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। সকল প্রকার কথা শেষে সাজ্জাদ সহ সকলে বাসা থেকে বের হয়ে এলো তারপর বাসায় ফিরে গেল,,বাসায় এসে সাজ্জাদের আম্মু সাজ্জাদকে বলল

‘ তোর যত বন্ধুবান্ধব আছে সকলকে বিয়েতে ইনভাইট করবি ‘

‘ ঠিক আছে ‘

‘ কালকে গিয়ে কার্ড ছাপানোর কথা বলে আসিস ‘

‘ এত টাকা খরচ করা লাগবে না। বন্ধুবান্ধব আত্নীয়- স্বজনের ভেতরে বিয়ের কাজ করে ফেললে ভালো হবে ‘

‘ ঠিক আছে তুই যেমন চাস তেমনি হবে ‘

তারপর সাজ্জাদ কিছু বলল না বিয়ের আয়োজন করার জন্য অফিস থেকে ১ সপ্তাহ ছুটি নিল সাজ্জাদ,, দেখতে দেখতে বিয়ের দিন খুব কাছে চলে এলো কালকে বিয়ে।
সাজ্জাদের বাসা লাইটিং এ সাজানো হয়েছে বাসা পুরো মেহমান৷ সবাই যার যার মতো কাজে ব্যস্ত

———-

পরেরদিন বিয়ের সকল কার্যকর্ম শেষ করে নুসরাতে নিয়ে বাসায় এলো। সবাই এখন নতুন বউ দেখায় ব্যস্ত এই ফাঁকে সাজ্জাদ ছাদে গিয়ে বসে থাকতে লাগল। রাত ১২ টার দিকে সে রুমে প্রবেশ করলো৷ নুসরাতে দেখল সে খাটের উপর বসে আছে সাজ্জাদ জানতো এই রাতে মেয়েরা তার স্বামীকে সালাম করে কিন্তু সে তো কিছুই করতে এলো না হয়তো আনইজি লাগছে যার জন্য আসেনি যায় হোক সাজ্জাদ সেটা নিয়ে মাথা না গামিয়ে খাটের দিকে যেতে লাগল…….

#চলবে……………
( কোথাও ভুল হলে ক্ষমা করবেন পরবর্তী পর্বগুলো বড় করে পাবেন। গল্পের কোথাও ভুল হলে ক্ষমা করবেন গল্পটি কেমন হলো জানাবেন ও গল্পটি প্রতিদিন দুপুর ১টায় পাবেন। আজকের পর্বটা বোধয় বেশি গুচ্ছিয়ে লিখতে পারিনি 😓 তবুও একটু মানিয়ে নিয়েন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here