ডায়েরী শেষ পাতা -(পর্ব-০১)

0
1009

‘ তোমাকে অনেকদিন সময় দিয়েছিলাম একটা চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য এখন থেকে সেই সময় তোমাকে দিব না। বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে আগামী শুক্রবার আমার বিয়ে ‘

কথাগুলো বলে ব্যাগ থেকে বিয়ের কার্ড বের করল নম্রতা। সামনে ওর বয়ফ্রেন্ড সাজ্জাদ দাড়িয়ে চুপচাপ মাটির দিকে তাকিয়ে আছে কথা বলার মতো কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না পকেটে চাকরির লেটার। বড় একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি পেয়েছে সে ভেবেছিল চাকরি খবরটা নম্রতাকে সারপ্রাইজ হিসেবে দিবে কারণ ওর বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে কিন্তু এখন সে নিজেই সারপ্রাইজ পেয়ে গেছে, নম্রতা বিয়ের কার্ডটা সাজ্জাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল

‘ এখন আস্তে আস্তে চাকরি খুঁজতে পার কারণ আমি বাবার পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করব তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি তো বেকার। আমার বাবা কোন বেকার ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দিবে না ও সত্য বলতে কি তুমি আমার লেভেলে নেই ‘

নম্রতার মুখে এমন কথা শুনে সাজ্জাদের চোখ দিয়ে দু-ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল ৪ বছর রিলেশন করার পর এখন বলছে লেভেল ঠিক নেই। সাজ্জাদ কি যেন একটা ভেবে নিজের চোখের পানি মুছে নম্রতাকে বলল

‘ আমি যে তোমার লেভেলে নেই এটা তুমি রিলেশনের আগে বলনি কেন? ‘

‘ তখন তো এটা জানতাম না যে পড়াশুনা শেষ করার পরেও তুমি বেকার হয়ে ঘুরবে ‘

সাজ্জাদ কিছু বলল না বিয়ের কার্ড খুলে দেখল সামনের শুক্রবারে বিয়ে। এইসব দেখে সাজ্জাদের কলিজা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না কারণ আগে যে ভালোবাসা নম্রতার চোখে দেখা যেত আজকে সেই ভালোবাসাটা নেই। স্পষ্ট বুঝতে পারছে সেটা অন্য কারো হয়ে গেছে,, নম্রতার কষ্ট হচ্ছে কিনা সেটা জানার জন্য সাজ্জাদ বলল

‘ তোমার কষ্ট হচ্ছে না ৪ বছরের সম্পর্ক শেষ করে দিতে ‘

‘ কষ্ট হবে কেন ভাগ্য যা লেখা থাকবে সেটাই হবে ‘

‘ এখন যদি বলি আমার চাকরি হয়ে গেছে তাহলে কি তুমি এই বিয়েটা করবে ‘

এমন কথা শুনে নম্রতা কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল

‘ কি বলতে চাও তোমার চাকরি হয়েছে ‘

সাজ্জাদ পকেট থেকে লেটার বের করতে গিয়েও কি ভেবে বের করল না কারণ সে নম্রতার উওর জানতে চায়৷ তাই বলল

‘ সেটা পরে বলছি আগে আমার প্রশ্নের উওর দাও ‘

নম্রতা স্বাভাবিক কন্ঠে বললো

‘ এখন তোমার চাকরি হলেও তোমাকে বিয়ে করতে পারব না কারণ বিয়ের আয়োজন অনেক আগে শুরু হয়ে গিয়েছে ‘

এবার সাজ্জাদ পকেট থেকে লেটার বের করে নম্রতার হাতে দিয়ে বলল

‘ একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে ম্যানেজার পদে চাকরি পেয়েছি পরশু থেকে অফিসে জয়েন দিব প্রথমে তিন মাস ট্রেনিং দেওয়া হবে তারপর আমাকে ম্যানেজার বানিয়ে দেওয়া হবে ‘

নম্রতা লেটার হাতে নিয়ে খুলে দেখল সত্যি চাকরি হয়েছে কিনা। লেটার দেখার পর সে বুঝে গেল ম্যানজার হিসেবে ওর চাকরি হয়ে গেছে পরশু থেকে অফিসে যাওয়ার কথা বলা আছে। নম্রতার মুখ দেখে সাজ্জাদ বুঝতে পারছে সে অনেক অবাক হয়েছে,, কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর নম্রতা বলল

‘ তোমার চাকরি হয়েছে এটা আগে বললে তোমাকেই বিয়ে করতাম। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব না কারণ…………. ‘

বাকী কথাগুলো বলছিল এমন সময় নম্রতার ফোন বেজে ওঠলো। তাই ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করল তখনি সাজ্জাদ মোবাইল স্কিনের দিকে তাকাল দেখল বেবি দিয়ে একটা নাম সেভ করা৷ এই নামে কল দেখে নম্রতা বলল

‘ আচ্ছা ভালো থেকো হয়তো আর কোনদিন কথা হবে না তুমি আমার থেকেও ভালো মেয়ে পাবে ‘

নম্রতা হাঁটা শুরু করে দিল। সাজ্জাদ নম্রতাকে কোনো প্রকার বাধা দিচ্ছে না কারণ সে দ্বিতীয় একজনের স্পর্শ পেয়েছে যার ফলে প্রথম ভালোবাসাকে ভুলে গেছে, পাশের একটা বেঞ্চ ছিল সাজ্জাদ গিয়ে সেখানে বসে পড়লো। নম্রতার দেওয়া বিয়ের কার্ডটা বার বার খুলে দেখছিল চাকরি পেতে সামান্য লেট হয়েছে দেখে সে আজ অন্য কারো হয়ে গেল। তবুও লাখ লাখ শুকরিয়া জানাচ্ছে আল্লাহর দরবারে কঠিন সময় দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে ভালোবাসাটা সত্য ছিল কিনা কারণ নম্রতা তাকে ভালোবাসলে আজকে এভাবে চলে যেতে পারতো না অন্য একটা ছেলের সাথে নিজের বিয়ের আয়োজন করতে পারত না। বিয়ের কার্ডটা পাশে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে মনে মনে বলতে লাগল নম্রতা যেমন আমাকে ভুলে গিয়েছে আমিও ওকে ভুলে যাব জানি অনেক কষ্ট হবে তবুও এটা ছাড়া কিছু করার নেই। বসে বসে নম্রতার সাথে কাটানো মূহুর্তগুলোর কথা ভাবছিল তখন সাজ্জাদের ফোনটা বেজে ওঠলো পকেট থেকে ফোনটা বের করে হাতে নিয়ে দেখল আম্মু নামটা স্কিনে ভাসছে বুঝতে বাকী রইলো না আম্মু ফোন করেছে তাই কলটা রিসিভ করলো তখন সাজ্জাদের আম্মু ওপাশ থেকে বলল

‘ হ্যালো? কোথায় আছিস তুই ‘

সাজ্জাদ নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বলল

‘ এইতো বাসার পাশে আছি ‘

‘ বাসায় আসবি কখন ওষুধ কিনছিস কি? ‘

‘ বাসায় একটু পর যাব৷ যাওয়ার সময় ওষুধটাও কিনে নিয়ে যাব ‘

‘ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি বাসায় আসিস ‘

সাজ্জাদ কিছু না বলে কলটা কেটে দিয়ে ফোনটা পকেটে রেখে দিল। চারিদিকে সন্ধ্যা নেমে আসছে আশে পাশের ঝোপ গুলো থেকে ঝিঝি পোকা গুলো ডাকছে যার জন্য বুঝাচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে,, সাজ্জাদ হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সন্ধ্যা ৭ টা বাজে ৭.১৫ থেকে একটা টিউশনি আছে সেখানে গেলে বেতন পাব সেই টাকা দিয়ে মায়ের ঔষুধ কিনে নিয়ে বাসায় যাওয়া যাবে। সে হাঁটা শুরু করল টিউশনিতে যাওয়ার জন্য। সাজ্জাদ পড়াশুনা শেষ করে চাকরি খুঁজছিল এতদিন কোনো প্রকার চাকরি না থাকার কারণে টিউশনি করে চলতো। পরিবারে একটা বোন ও মা আছে,, সাজ্জাদের বাবা নেই সে মারা গেছে কয়েকবছর আগে তখন থেকে সে নেমে পড়েছিল জীবন যুদ্ধে। নম্রতা ছিল ওর গালফ্রেন্ড চার বছরের সম্পর্ক ছিল তাদের। কথা ছিল সাজ্জাদ চাকরি পেলে তারা বিয়ে করবে কিন্তু আজকে কি হলো সেটা তো উপরে পড়ে এলেন। সাজ্জাদের পরিচয় দিতে দিতে যেখানে টিউশনি করানো হবে সেখানে এসে গিয়েছে। ১ ঘন্টা পড়িয়ে বেতন নিয়ে ওখান থেকে বের হয়ে এসে মায়ের জন্য ওষুধ কিনে বাসায় চলে এলো।

————

ডিনার শেষ করে নিজের রুমের বারান্দার রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে বাইরের ব্যস্ত শহর দেখছে এবং ভাবছে কত বেঈমান মানুষ বাস করে এই ব্যস্ত শহরে সবাই শুধু টাকার পেছনে ছুঁটে,, এমন সময় সাজ্জাদের ছোট বোন নাম অবণি এসে বলল

‘ শুনলাম তোর নাকি চাকরি হয়েছে? ‘

অবণি সাজ্জাদের থেকে তিন- বছরের ছোট তাই তুই বলে ডাকে এতে সাজ্জাদ কিছু মনে করেনা৷ অবণির প্রশ্নের উওর দেওয়ার জন্য সাজ্জাদ বলল

‘ হুম হয়েছে তোকে এই খবর কে দিয়েছে? ‘

‘ আম্মু কাছে থেকে শুনলাম খবরটা ‘

‘ হুম তুই খুশি হয়েছিস? ‘

‘ শুধু আমি কেন আম্মুও প্রচুর খুশি হয়েছে। এতদিনে আমাদের আর কোন কষ্ট থাকবে না ‘

সাজ্জাদ কিছু বলল না নিচের রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে তখন অবণি আবার বলল

‘ চাকরিতে জয়েন দিবে কবে ‘

‘ পরশু থেকে ‘

‘ ওও তাহলে এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো বেশি রাত জেগে থাকা ভালো না ‘

বলে অবণি নিজের রুমে চলে গেল। সাজ্জাদ আরো কিছুক্ষণ বারান্দায় দাড়িয়ে থেকে রুমে এসে খাটে শুয়ে পড়লো। শুয়ে শুয়ে নম্রতার সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো বলতে লাগল কি করে পারল আমার সাথে এমন করতে ও আমাকে ভালো না বাসলে কি হবে আমিতো নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি এত সহজে ওকে ভুলে যাওয়া সম্ভব হবে না। তবে কষ্ট হলেও ভুলে যেতে হবে কিন্তু তার আগে শেষ একটা চেষ্টা করবে। এগুলো ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেল বুঝতে পারল না৷ সকালে অবণির ডাকে ঘুম ভাঙ্গল সাজ্জাদ, ঘুম থেকে নাস্তা করে নম্রতার বাসার সামনে চলে দিকে যেতে লাগল। নম্রতাকে ভালো করে বুঝানোর জন্য সেখানে যাচ্ছে। সাজ্জাদ নম্রতার বাসার সামনে গিয়ে কল দিল কিন্তু সে কল রিসিভ করল না। বিয়ের জন্য বাসা সাজানো হচ্ছে। সাজ্জাদ বাসা সাজানো দেখছিল সাথে নম্রতাকে কল দিয়ে যাচ্ছিল৷ ঠিক সেই মূহুর্তে রাস্তায় একটা গাড়ি এসে থামল তার একটু পর নম্রতা তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠে চলে গেল। রাস্তার ওপরদিকে দাড়িয়ে আছে সাজ্জাদ এইরকম দৃশ্য দেখে তার কিছু করার নেই সে ভেবেছিল শেষ বারের মতো নম্রতাকে বুঝাবে কিন্তু সেটা হলো না৷ মনে মনে একটা জেদ ধরে বসল বেঁচে থাকতে কোনোদিন নম্রতার কথা ভেবে কষ্ট পাবে না এমন ভাবে বাঁচবে যেন এই নামে কেউ জীবনে ছিল না,,,একপ্রকার জেদ নিয়ে সাজ্জাদ বাসার দিকে হাঁটা শুরু করল। রাস্তা দিয়ে আনমনে হেঁটে যাচ্ছে এমন সময় কেউ একজন ডান হাত ধরল,, সাজ্জাদ পেছনে তাকিয়ে দেখল ওর কাছের বন্ধু পিয়াস৷ পিয়াসের সাথে অনেকদিন পর দেখা হলো সাজ্জাদের প্রায় সপ্তাখানেক এর মতো কোন প্রকার যোগাযোগ হয়নি। আজকে দেখা হয়ে সাজ্জাদের অনেক ভালো লাগলে,, সাজ্জাদ কিছু বলতে যাবে তার আগে পিয়াস বলল

‘ এতদিন কোথায় ছিলি? কোন প্রকার যোগাযোগ করিস নাই ‘

‘ এইতো সাময়িক কিছু কাজে ব্যস্ত ছিলাম ‘

‘ ওও শুনলাম তোর নাকি চাকরি হয়েছে ‘

‘ হুম কালকে থেকে জয়েন করব ‘

‘ অনেক ভালো হয়েছে। আচ্ছা তাহলে যা পরে কথা হবে আমার একটা জরুরী কাজ আছে ‘

পিয়াস চলে গেল। পিয়াস বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করে ৩ মাসের ছুটিতে বাসায় এসেছে। পিয়াস চলে যাওয়ার পর সাজ্জাদ ওর বাসার দিকে হাঁটতে শুরু করল। একটু পর বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো আজকে শরীর তেমন ভালো লাগছে না। বিকেল পযন্তু রুমে শুয়ে থাকল দুপুরে লাঞ্চ করার জন্য অবণি অনেকবার ডেকে গেছে কিন্তু সাজ্জাদ খাবে না বলে দিয়েছে।

সন্ধ্যার হওয়ার একটু আগে অবণি রুমে প্রবেশ করে সাজ্জাদের পাশে গিয়ে বসে বলল

‘ ভাইয়া কি হয়েছে তোর দুপুর থেকে কিছু খাচ্ছিস না কেন ‘

সাজ্জাদ চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল অবণির কথা শুনে চোখে খুলে বলল

‘ এমনি শরীরটা ভালো লাগছে না তাই ‘

অবণি তাড়াহুড়ো করে কপালে হাত দিল জ্বর আছে কিনা এটা দেখতে কিন্তু শরীর স্বাভাবিক আছে তাই অবণি বলল

‘ জ্বর তো আসেনি। তাহলে কি হয়েছে? ‘

‘ জ্বর – ঠান্ডা এগুলো কিছুই হয়নি। এমনি শরীরটা ভালো লাগছে না ‘

‘ ওও কালকে তো নতুন অফিসে যাবে জামা-কাপড় কিছু কিনে নিয়ে আয় পুরনো গুলো পড়ে তো যাওয়া যাবে না ‘

‘ হুম একটু পর যাব ‘

‘ ওও তুই শুয়ে থাক আমি তোর জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি ‘

‘ এখন না একেবারে রাতে নাস্তা করব ‘

‘ ঠিক আছে ‘

অবণি কিছু বলল না চুপচাপ চলে গেল সাজ্জাদ আরো কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শপিংমলের দিকে যেতে লাগলো।৷ শপিংমলে গিয়ে শার্ট – প্যান্ট কিনে বের হয়ে যাওয়ার সময় দেখল নম্রতার পরিবার শপিংমলে প্রবেশ করছে।সামনে নম্রতার বাবা – মা- ভাই এবং পেছনে নম্রতা, একটা ছেলে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে বোধয় সেই ছেলেটা নম্রতার হাজবেন্ড। সাজ্জাদ সেদিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে না থেকে বাসার দিকে যেতে লাগল। সে যেহেতু একবার বলেছে নম্রতাকে মনে করবে না তো করবে না

চলবে……………

# গল্প – ডায়েরী শেষ পাতা

# সূচনা পর্ব

# লেখনীতে – #Sazzad_KR

[ বিঃদ্রঃ- গল্পের কোথাও ভুল হলে ক্ষমা করবেন। ভালো রেসপন্স পেলে পরবর্তী পর্ব তাড়াতাড়ি দিব গল্পটি কেমন হয়েছে সেটাও জানাবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here