ভ্যাম্পায়ার সিটি -(পর্ব ১৪ ও শেষ)

0
689

#ভ্যাম্পায়ার_সিটি
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#অন্তিম_পর্ব

“ক্রাউন চটজলদি মাটি থেকে উঠে তার ভয়ানক রূপটা ধারণ করে বসে। এবার হয়তো লাগবে ভ্যাম্পায়ারদের নিজের মধ্যেই ইতিহাসের সব চাইতে বড় লড়াই টা। ক্রাউন নিজের রূপ পরিবর্তন করা মাত্রই আকাশের দিকে তুফানের গতিতে তেড়ে যায় তাকে মারার জন্য। কিন্তু সে আকাশের শরীরে স্পর্শ করতেই পারে না। কারন আকাশের শরীরে স্পর্শ করার আগেই অদৃশ্য থেকে কিছু একটা ক্রাউনকে আঁটকে দেয়। সে বেশ কয়বার আকাশকে মারার ট্রাই করে, কিন্তু আকাশের শরীরে সে স্পর্শই করতে পারে না। আর এই স্পর্শ না করতে পারার কারন হচ্ছে অবনীর রক্ষাকবচ। ক্রাউন বেশ অবাক হয় আকাশকে মারতে না পারায়। এমন সময় আকাশ আবারো ক্রাউনের শরীরে লাথি মেরে তাকে কয়েক হাত দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলে। দূরে নিয়ে ফেলার পর ক্রাউনের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে,

–আমাকে মারা তোর সাধ্যের বাহিরে। তুই আমার কোনো কিছুই করতে পারবি না। তাই ভালোয় ভালোয় নিজেকে আত্মসমর্পণ করে দে আমাদের কাছে। না হয়তো ভয়ানক ভাবে মরতে হবে তোকে।
.
আকাশের কথায় ক্রাউনের রাগ যেনো ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ক্রাউন মাটি থেকে উঠে চোখ বন্ধ করে মনে মনে কিছু পাঠ করে। পাঠ করার কিছুক্ষণ পরেই তার মাথার শিংটা অনেক জোরালো ভাবে জ্বলতে আরম্ভ করে। যার কারনে পুরো ভ্যাম্পায়ার মহল আলোকিত হয়ে যায়। অনেক প্রখর আলোকরশ্মি ছড়াচ্ছে ক্রাউনের মাথার সেই শিংটা থেকে। এরপর আবার সে তুফানের গতিতে দৌড়ে যায় আকাশকে মারার জন্য। ” অপরদিকে আকাশ শান্তশিষ্ট ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কারন সে জানে অবনীর রক্ষাকবচ তাকে বাঁচিয়ে নিবে। কিন্তু আকাশের এই চিন্তা ধারা এবার ভুল প্রমাণিত হয়। ক্রাউনের এবারের আক্রমণে অবানীর রক্ষাকবচ ও আকাশকে ক্রাউনের হাত থেকে বাঁচাতে পারে না। ক্রাউন তেড়ে গিয়ে সোজা আকাশের মুখে সজোড়ে একটা ঘুষি মেরে বসে। যার ফলে আকাশ ঘুরে মাটিতে পড়ে যায়। আর তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে আরম্ভ করে। যেটা দেখে এবার ক্রাউন তাচ্ছিল্যের সুরে আকাশকে বলে,

–কিরে মূর্খ, তুই কি ভেবেছিস আমায় সহজেই তুই হারিয়ে দিবি? আমাকে সহজেই তুই বিট করবি? তাহলে শোন এটা তোর ভুল ধারণা। কারন তোরা মানুষ হওয়ার পরেও যদি আধ্যাত্মিক শক্তিকে রপ্ত করতে পারিস, তাহলে ভাব আমরা মানুষ নয়। আমরা তো মানুষ রূপে শয়তান। তাহলে আমরা কতো অজানা শক্তিকে রপ্ত করেছি। এবার তো তুই শেষ। তোর কোনো দাদা এসেও তোকে আমার হাত থেকে আজ বাঁচাতে পারবে না। আয় এবার আমার সাথে লড়াই কর। দেখি কি ভাবে তুই আমাকে পরাজয় করিস।
.
আকাশ ক্রাউনের কথা শুনে মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায়। তারপর নাক-মুখ থেকে রক্ত মুছে নিয়ে ক্রাউনের দিকে ক্ষিপ্ত নজরে তাকিয়ে থাকে। আকাশের ক্ষিপ্ত চাহনি দেখে ক্রাউন আবার আকাশকে বলে,

–এভাবে চেয়ে থেকে কোনো কাজ হবে না। তুই আমার সাথে লড়াই করে আমাকে পরাজয় কর। তাহলেই সব কিছুর সমাপ্তি ঘটবে। না হয়তো আমি পুরো শহরকে তসনস করে দিব। শহরের একটা মানুষকেও আমি জীবিত রাখবো না। সবাইকে মেরে ভ্যাম্পায়ারে রূপান্তরিত করবো।
.
ক্রাউনের কথা শুনে আকাশ এই দুষ্কর পরিস্থিতিতেও হাসতে হাসতে ক্রাউনকে বলে,

–শোন আমি কখনো হারতে শিখিনী। আর এবারো হারবো না। তবে ভুলক্রমে যদি হেরেও যাই, তাহলে সেই সময়েই যেনো আমার মৃত্যু হয়।

–হারতে না শিখলেও তোর এবার হারতে হবে। আর মৃত্যু তো এবার তোর নিশ্চিত হবে।

–ঠিক আছে আমিও তৈরী আছি মরার জন্য এবং মারার জন্য। হয় তো মরবো। নয় তো তোর মতন শয়তানকে চিরতরে বিতারিত করবো।

–হুম তাহলে এগিয়ে আয় লড়াই করার জন্য।
.
আকাশ ক্রাউনের কথা মতন লিঙ্কনের শক্তির প্রয়োগ করে ক্রাউনকে মারার জন্য এগিয়ে যায়। আকাশের মাথার মধ্যে ভূত চেপে বসেছে। তার যে করেই হোক ক্রাউনকে হারাতে হবে। তাই সে তেড়েফুঁড়ে গিয়ে ক্রাউনের সাথে মারামারি করতে আরম্ভ করে। ক্রাউন ও আকাশের সাথে মারামারি করতে আরম্ভ করেছে। দু’জনের মধ্যে বেশ বড়সড় একটা যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু যুদ্ধের এক পর্যায়ে আকাশ ক্রাউনের শক্তির কাছে হারতে আরম্ভ করে। ক্রাউন নিজের অদ্ভুত শক্তির প্রয়োগ করে আকাশের অবস্থা নাজেহাল বানিয়ে দিয়েছে। আকাশ তেমন ভাবে ক্রাউনের কিছুই করতে পারেনি। কিন্তু ক্রাউন আকাশের অবস্থা বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। ক্রাউন আকাশকে মেরে আকাশের শরীরের অনেক কয়টা অঙ্গ ডেমেজ করে দিয়েছে। আকাশ বেশ দূর্বল অনুভব করে নিজেকে। তবে সেও হার মানবার মতন মানুষ নয়। নিজের অক্ষত শরীরের দিকে না তাকিয়ে নিজের মতন ক্রাউনের সাথে লড়াই বহাল রেখেছে। তবে বেশিক্ষণ সে ক্রাউনের সামনে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে না। লড়াইয়ের এক পর্যায়ে ক্রাউন আকাশকে আধমরা করে মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। যেটা কিনা পাশ থেকে দাঁড়িয়ে জম্বুকের লিডার সুফিয়ান ও দেখছিল। আকাশের পরাজয়ের অন্তিম সময় দেখে সুফিয়ান ও এবার ক্রাউনের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু আকাশের মতন সেও বেশি একটা সময় ক্রাউনের সামনে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে না। ক্রাউন সুফিয়ানের দুই হাত মোচড়ে ভেঙ্গে দিয়ে তাকে আকাশের মতন ছিটকে মাটির উপরে ছুঁড়ে ফেলে। ক্রাউনকের প্রতিপক্ষ দু’জনেই নাজেহাল অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। আর ক্রাউন শব্দ করে করে হাসছে। কারন তাকে পরাজয় করার মতন লক্ষ্য মাত্রা আর কারোর মাঝে নেই। যেই দু’জন তাকে শেষ করতে ভ্যাম্পায়ার মহলে এসেছিল, সে তাঁদের দুটোকেই উল্টো আধমরা বানিয়ে দিয়েছে।
কিছুক্ষণ পরে সে তাঁদের দুটোকে পুরোপুরি শেষ করে দিবে। তাই সে লুফিয়ানা শহরের একজন ভ্যাম্পায়ারকে আদেশ করে,

–এই তুই গিয়ে ভ্যাম্পায়ার মহলের অস্ত্রাগার থেকে সব চাইতে বড় রামদা টা নিয়ে আয়। ওদের দু্টোকে মেরে ওদের শরীরের কয়েক হাজার টুকরো করে শহরের পশুপাখিকে বিলিয়ে দিব।
.
ক্রাউনের আদেশে লুফিয়ানা শহরের একটা ভাম্পায়ার অস্ত্রাগার থেকে রামদা আনতে চলে যায়। আর ক্রাউন রামদা আনার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। এদিকে আকাশ আর সুফিয়ান আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকে। এমন সময় সুফিয়ান শক্তি যুগিয়ে উঠে আকাশের কাছে যায়। সুফিয়ানকে আকাশের কাছে যেতে দেখে ক্রাউন কোমর থেকে ধারালো একটা চাকু বের করে দূর থেকেই সেটা সুফিয়ানের দিকে ছুঁড়ে মারে। যেই চাকুটা সোজা এসে সুফিয়ানের পেটে লাগে। সুফিয়ানের পেট থেকে চিড়চিড় করে রক্ত পড়ছে। কিন্তু সে এখনো থেমে নেই। সে আকাশের হাত মাটি থেকে উঠিয়ে নিয়ে সজোড়ে একটা কামড় মেরে বসে।
আকাশ এমনিতেই নাজেহাল অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। তার উপরে সুফিয়ানের কামড়ে যেনো তার রুহুটা এখুনি বেরিয়ে যাবে এমন যন্ত্রণা হচ্ছে তার। আকাশ সুফিয়ানের কামড়ের ব্যথায় কোকাতে আরম্ভ করে। তবে সেই ব্যথা তার শরীর থেকে কয়েক মিনিট পরেই গায়েব হয়ে যায়। এবং সেই সঙ্গে আকাশের শরীরের আকৃতি আরো ভয়ানক রূপ ধারণ করে। এমনিতেই আকাশ পাখনা ওয়ালা দানবে রূপ ধারণ করে আছে। তার উপরে সুফিয়ানের কামড়ে আকাশের শরীরের উপরিভাগ দানব আকৃতির কলা বাঁদুরের রূপে থেকে যায়, কিন্তু শরীরের নিচের অংশ শিয়ালের রূপ ধারণ করে। আকাশকে এখন দেখে দুনিয়ার সব চাইতে জঘন্য এবং ভয়ানক প্রাণী মনে হচ্ছে। পাশ থেকে সুফিয়ান আকাশের এই রূপ দৃশ্য দেখে মাটিতে শুয়ে হাসতে হাসতে ক্রাউনকে বলে,

–তুই আমায় শেষ করে দিয়েছিস তো কি হয়েছে, আমি জানি আর কিছু সময়ের মাঝে আমার মৃত্যু হবে। কিন্তু এই যে মাত্র নতুন করে যার জন্ম হয়েছে, তুই তাকে কি করে আটকাবি? একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখ হায়েনা টার দিকে। তাহলে স্পষ্ট ভাবে নিজের মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবি।
.
সুফিয়ানের হুমকি ওয়ালা কথা শুনে ক্রাউন হাসতে আরম্ভ করে। এমন সময়েই লুফিয়ানার ভ্যাম্পায়ার অস্ত্রাগার থেকে সব চাইতে বড় ছুরিটা এনে ক্রাউনের হাতে দেয়। ক্রাউন ছুরিটা হাতে করে নিয়ে এসে সুফিয়ানকে মাটি থেকে উঠিয়ে তার গলায় ছুরিটা চেপে ধরে তাকে বলে,

–আমায় কেউ হারাতে পারবে না। আমি অমরত্ব পেয়ে গেছি। আমিই এখন সবাইকে শেষ করবো। আর শুরুটা তোকে দিয়েই হবে। তারপর তোর পাশে মরা লাশের মতন পড়ে থাকে মূর্খ টাকে কুপিয়ে মারবো।
.
ক্রাউনের কথায় সুফিয়ান আবারো হাসতে আরম্ভ করে। যেটা দেখে ক্রাউনের রাগ উঠে যায়। ক্রাউন নিজের রাগ কমাতে ছুরিটা সুফিয়ানের গলায় সজোড়ে চালিয়ে দেয়। যার ফলে সুফিয়ানের গলা তার শরীর থেকে আলালা হয়ে যায়। এরপর ক্রাউন একই ভাবে আকাশকে শেষ করার জন্য তার একদম নিকটে যায়। কিন্তু সেই মুহূর্তেই আকাশ হুট করে মাটি থেকে উঠে ক্রাউনের গলা চেপে ধরে তাকে মাটি থেকে জাগিয়ে ফেলে। আকাশের এমন কর্মকান্ডে ক্রাউন ছটফট করতে আরম্ভ করে, আর সাথে তার হাত থেকে ছুরিটাও পড়ে যায়। আকাশ ক্রাউনের গলা এতো জোরে চেপে ধরেছে, যে ক্রাউন সুষ্ঠুভাবে নিশ্বাসটাও নিতে পারছে না। ক্রাউনের মনে হচ্ছে যেনো মৃত্যুর ফেরেস্তা রাগান্বিত হয়ে তার গলা চেপে ধরেছে। ক্রাউন নিজেকে বাঁচানোর বেশ চেষ্টা চালায়। কিন্তু আকাশের শক্তির কাছে বর্তমানে তার পরাজয় স্বীকার করতে হয়। আর পরাজয় স্বীকার করবে নাই বা কেন, আকাশের শরীরে এখন চারজনে শক্তি রয়েছে। লিঙ্কন, সুফিয়ান,অবনী এবং তার নিজের শক্তি। যার কারনে ক্রাউন নিজের অনিচ্ছা থাকা সত্বেও পরাজয় হতে হয়। আকাশ ক্রাউনের গলা চেপে ধরার কয়েক সেকেন্ড পরেই সে তার অন্য আরেক হাত দিয়ে ক্রাউনের মাথার শিংটা মোচড় দিয়ে ভেঙ্গে হাতে নিয়ে নেয়। ক্রাউন এমনিতেই ছটফট করছিল তার গলা চেপে ধরায়। কিন্তু বর্তমানে আকাশ তার মাথার শিং ভেঙ্গে ফেলায় সে যেনো এবার মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। সে আকাশের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আকাশ তাকে ছাড়বার মতন লোক নয়। সে সময় থাকতে নিজের পাওয়ার অসৎ পথে খাটিয়েছে। আর এখন শেষ সময়ে এসে অনুশোচনায় ভুগছে। আকাশ তার শিং ভাঙ্গার পর তার উপরে মায়া না দেখিয়ে তাকে ছিটকে ফিক্কা মারে ভ্যাম্পায়ার মহলের দেয়ালের মাঝে। সাথে ক্রাউনের শিংটাও ফিক্কা দিয়ে মহলের এক সাইডে ছুঁড়ে মারে। “অপরদিকে ক্রাউন দেয়ালের সাথে বাড়ি খেয়ে লেপ্টে পড়ে থাকে মাটির উপরে। সে মাটি থেকে উঠার বেশ চেষ্টা করছে, কিন্তু তাতে সে ব্যর্থ হয়। মহলের বাকি ভ্যাম্পায়াররা নিজের মুনিবের পরাজয় দেখে সবাই আকাশের উপরে হামলা করার জন্য একই সঙ্গে তার দিকে এগিয়ে আসে। এমন সময় ড্রয়িডের সেই বৃত্তের ন্যায় গোলাকার রশ্মিটা অদ্ভুত ভাবে কোথা থেকে এসে যেনো আকাশের চারপাশে ঘুরপাক খেতে আরম্ভ করে। বৃত্তাকার রশ্মিটা আকাশের চারপাশে ঘুরপাক খেতে খেতে বেশ জোরালো ভাবে আলো ছড়াতে আরম্ভ করে। এতে করে আকাশের দিকে তেড়ে আসা অনেক ভ্যাম্পায়ার জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়। আর বাকি যারা বেঁচে থাকে তারা দূরে সরে যায়। এমন সময় ডেমন হান্টার এবং আকাশের লোকজন ও মহলের ভিতরে প্রবেশ করে। মহলের ভিতরে প্রবেশ করার পর সবাই আকাশকে দেখে বেশ অবাক হয়। শুরুতে তারা আকাশকে চিনতে পারে না। কিন্তু আকাশ তাঁদেরকে দেখা মাত্রই বলে,

–এই তোরা কয়েকজন গিয়ে অবনীকে মহলের ভিতর থেকে খুঁজে বের কর। আর আমি ক্রাউনকে দেখছি।
.
আকাশের কথা শুনে সবাই বুঝে যায় সামনের অদ্ভুত আকৃতির দানবটা তাঁদের আকাশ ভাই। তাই রাজ কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আকাশের কথা মতন মহলের একদম ভিতরে গিয়ে অবনীকে খুঁজতে আরম্ভ করে। আর এদিকে আকাশ ছুরিটা মাটি থেকে নিজের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে ক্রাউনকে মাটিতে থেকে উঠিয়ে এনে তার চেয়ারের সামনেই তাকে আবার ছিটকে ফেলে। তারপর ক্রাউনের ছুরিটা দিয়েই সবার সামনে মায়া দয়া ছাড়া ক্রাউনকে কোপাতে আরম্ভ করে। আকাশ শুরুতে ক্রাউনকে কুপিয়ে তার দুই হাত শরীর থেকে আলাদা করে ফেলেছে। তারপর ক্রাউনের বুকে পাড়া দিয়ে ছুরির ধারালো মাথাটা তার কপালের উপরে ঠেকিয়ে ধরে বলে,

–সুফিয়ান বলেছিল না তোর মৃত্যুর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবি আমার মাঝে? নে ভালো করে দেখে নে। আর গল্প সময় বাকি তোর জীবনের। আমার লোকজন আমার প্রিয় মানুষটাকে খুঁজে আনলেই তোর সমাপ্তি ঘটবে।
.
আকাশের কথায় ক্রাউন কাঁদো কাঁদো কন্ঠে আকাশের কাছে নিজের প্রাণের ভিক্ষা চাইতে থাকে। কিন্তু আকাশ তার সেই কথায় ভ্রূক্ষেপ না করে অবনীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। এভাবে কিছুটা সময় যাওয়ার পর রাজ অবনীকে মুক্ত করে তার সামনে নিয়ে আসে। ক্রাউন অবনীকে একটা রুমের মাঝে বন্দী করে রেখেছিল। আর রাজ রা তাঁকে এখন সেখান থেকে মুক্ত করে এনেছে। আকাশ অবনীকে দেখা মাত্রই বলে,

–প্রিয় জলদি আমার কাছে আসো। আমার কাছে এসে ছুরিটা তার মাথার খুলিতে ঢুকিয়ে দাও। সে নাকি অমরত্ব পেয়েছে। তুমি একটু তার অমরত্বকে মিটিয়ে দাও তো।
.
আকাশের কথায় অবনী শুরুতে কিছুটা ঘাবড়ে যায়। কারন সে আকাশকে এই ভয়ানক অবস্থায় দেখে চিনতেই পারেনি। কিন্তু পাশ থেকে রাজ তাকে আকাশের বিষয়ে খুলে বলে। তখন অবনী নিজেকে সামলে নিয়ে আকাশের কাছে এসে ছুরিটা ধরে সজোড়ে চাপ দিয়ে ক্রাউনের খুলির ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। যার ফলে ক্রাউন সেখানেই মৃত্যুবরণ করে। ক্রাউন মৃত্যুবরণ করার পর কয়েক সেকেন্ড যেতেই বেঁচে থাকা সমস্ত ভাম্পায়ার আকাশের দিকে মাথা নুইয়ে ঝুঁকে তাকে মালিক বলে স্বীকার করে। যেটা দেখে আকাশ সবাইকে বলে,

–আমি তোদের মালিক নই। তাই তোদের আমার সামনে মাথা নোয়াতে হবে না। কিন্তু আমি তোদের মালিক না হলেও মালিকের মতন একটা জিনিস আদেশ করবো। আজ থেকে তোরা সবাই এই মহলের চার দেয়ালের মাঝে বন্দী থাকবি। তোরা কেউ এই মহল ছেড়ে বের হবি না। আর মানুষের উপরে তো হামলা ভুলেও করবি না। না হয়তো তোদেরকেও কিন্তু আমি শেষ করে দিব ক্রাউনের মতন।
.
আকাশের আদেশ শুনে সবাই একত্রে হয়ে আকাশকে বলে,

–জ্বি আজ থেকে আমরা এই মহলের ভিতরেই থাকবো। আপনার আদেশের অমান্য কেউ করবো না।

–মনে থাকে যেনো। এবার আমরা চললাম।
.
আকাশ সবাইক হুকুম করে অবনীকে কোলে তুলে নেয়। তারপর নিজের লোকদেরকে বলে,

–তোরা সবাই গাড়ি করে বাংলোতে পৌঁছা। আমি অবনীকে নিয়ে আসছি।
.
আকাশের কথায় সবাই ভ্যাম্পায়ার মহল থেকে বেরিয়ে গাড়ি করে বাংলোর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
অপরদিকে আকাশ অবনীকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে ভ্যাম্পায়ার মহল থেকে উড়াল দিয়ে উড়ে যায়।
অবনী আকাশের কোলে গুটিশুটি মেরে বসে রয়েছে। আর আকাশ তাকে উড়িয়ে বাংলোতে নিয়ে যাওয়ার বদলে নদীর পাড়ে নিয়ে আসে। নদীর পাড়ে নিয়ে এসে অবনীকে মাটিতে নামিয়ে দিয়ে সে স্বাভাবিক রুপে ফিরে আসে। স্বাভাবিক ভাবে ফিরে আসার পর অবনীকে বলে,

–যাক অবশেষে সমস্ত ঝামেলার ইতি ঘটেছে। এবার আমরা একে অপরকে আপন করে নিতে পারবো। আমাদের পথের সমস্ত কাটা মরে গিয়েছে।
.
আকাশের কথায় অবনী কোনো উত্তর না দিয়ে চুপটি করে আকাশকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে আলতো করে একটা কামড় মেরে কিছুটা রক্ত চুষে নেয়। আকাশ অবনীর এমন আচরণ দেখে তাকে জিজ্ঞাস করে,

–অবনী এটা কি করলে তুমি?

–প্রিয় তুমি ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছো। তো আমি সাধারণ থেকে কি করবো? তাই তোমার বুকের কিছুটা রক্ত চুষে নিয়ে আমিও নিজেকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে নিলাম। এবার হিসাব বরাবর। বড় জামাই দু’জনেই ভ্যাম্পায়ার।

–তাই বলে এভাবে আমায় কামড় মারবে?

–বিয়ের পর তুমিও আমায় কামড়ে এটার শোধবোধ করে নিও। এবার আমায় জড়িয়ে ধরে উড়াল দিয়ে বাসার পথে রওয়ানা দাও।

–এটার শোধ আমি তুলবো। বিয়ের পর আদর করার বাহানায় খচ করে কামড় দিয়ে বসবো তোমার শরীরে। তখন মজা বুঝবে একদম।

–ঠিক আছে প্রিয় যা খুশি তোমার। আমি তোমায় কোনো কিছুতেই বাঁধা দিব না। এবার বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হও।
.
আকাশ আর কোনো কথাবার্তা না বলে অবনীকে জড়িয়ে ধরে উড়াল দেয় বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তবে সে অবনীকে আর কিছু না বললেও হাওয়ায় উড়তে উড়তে মনে মনে বলে,

–এখন চুপ থাকলেও বিয়ের পর মজা দেখাবো তোমায়। কামড়ে তোমার ঠোঁট ফুলিয়ে দিব। বাকি অংশের কথা আর নাই বললাম। কারন আমি যাই বলি না কেন পাঠক-পাঠিকারা শুনে ফেলবে। তাই এখন মুখে তালা লাগিয়ে বাসায় চলে যাবো। বাকি বিয়ের পরে কি কি হতে পারে অবনীর সাথে সেসব আপনারা কল্পনাতেই ভেবে নিয়েন। নিজের ইতিহাস আর লোকজনের সামনে পাাবলিক করতে চাচ্ছি না।

সমাপ্তি…!

গল্পের সমস্ত ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন। আর এই গল্পের আরো সীজন আসতে পারে ভবিষ্যতে। তবে সেটা এখন নয়। সেটা আসলেও বহু পরে আসবে।আজকের মতন চললাম। আবারো দেখা হচ্ছে নতুন কোনো গল্পের সাথে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন। খোদা হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here