ভ্যাম্পায়ার সিটি -(পর্ব_১৩)

0
351

#ভ্যাম্পায়ার_সিটি
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১৩

“ভ্যাম্পায়ার লিঙ্কনের রক্ত চুষে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর আকাশের মুখের দু’টো দাঁত বড় বড় হয়ে ঠোঁটের পাশ বেয়ে বেরিয়ে এসেছে। এবং সেই সঙ্গে মানুষের আকৃতি পাল্টে গিয়ে ক্রাউনের মতন বিশাল একটা দানবের আকৃতি ধারণ করেছে। যেটা দেখে আকাশের নিজের লোকজন এবং ডেমন হান্টারদের ভয়ে চোখ বড় বড় হয়ে গিয়েছে। আকাশ দানবের আকৃতি ধারণ করার পর বিকট আওয়াজে চিৎকার করতে থাকে। এমন সময় লিঙ্কন তাকে বলে,

–তোর হয়তো বিশাল কষ্ট হচ্ছে মানুষ থেকে নিজেকে ভ্যাম্পায়ারে রুপান্তরিত করায়। তবে টেনশন নেই তোর এই কষ্ট কিছু সময়ের মাঝেই লাঘব হয়ে যাবে। আসলে তোর এমন কষ্ট হওয়ার কারন হচ্ছে আমি ভ্যাম্পায়ার সম্প্রদায়ের একজন রাজা। আর তুই আমার রক্তই পান করেছিস। তাই তোর একটু বেশি কষ্ট হচ্ছে। তবে দেখিস কিছু সময়ের মাঝে তোর থেকে সম্ভব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। আর তুই হবি পৃথিবীর সব চাইতে শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার৷ এছাড়া তোর তোর মধ্যে এক্সট্রা কিছু ক্ষমতা রয়েছে। যেটা কিনা আমি তোকে প্রথম দেখাতেই বুঝে ফেলেছিলাম। তাই তোর আর তেমন কোনো সমস্যাও হবে না। আমরা তো দিনের আলোতে বের হলে সমস্যা হতো। কিন্তু তোর বেলায় কোনো সমস্যাই হবে না। তুই দিন-রাত উভয় সময়েই বের হতে পারবি এবং তার সঙ্গে ভ্যাম্পায়ারের রূপ টাকেই আড়াল করে রাখতে পারবি। তাই এবার আর কোনো চিন্তা-ভাবনা না করে সোজা গিয়ে নিজের প্রিয় মানুষ টাকে ঐ শয়তানের হাত থেকে বাঁচা। আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। আমি আমার সব টুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি তাকে মারার। কিন্তু আমি পরাজয় হয়েছি। তাই তুই এবার আমার তরফ থেকেও তার উপরে বদলা নিস।
.
লিঙ্কন এসব বলেই চুপচাপ হয়ে যায়। মানে তার সমাপ্তি হয়ে গেছে। আকাশ লিঙ্কনের সমস্ত কথাবার্তা শোনার পাশাপাশি তার নিরবতা দেখে নিজের লোকজনকে বলে,

–তোরা আমাকে দেখে আকস্মিক দৃশ্য ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকার কোনো মানে নেই। কারন আমি ভাম্পায়ার হলেও আমি এখনো তোদের ভাই আছি। আর এই রূপ টাকে আমি যে কোনো সময় কন্ট্রোল করতে পারবো। তাই এবার তোরা সবাই মিলে আমার সঙ্গে চল। ক্রাউনের বারোটা বাজাতে হবে। ওর কতো বড় সাহস সে আমার সামনে অবনীকে খারাপ উদ্দেশ্যে তুলে নিয়ে গেছে। ক্রাউন তো শেষ। আমরা আগামীকাল রাতে তার শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে নিজেই আজকে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করে দিয়ে গেছে। তাই তার আর ছাড় নেই। তাকে আমরা সবাই মিলে আজকেই শেষ করবো। তাই তোরা সবাই আমার সাথে চল। আর সঙ্গে করে আলট্রা ভায়োলেট কিরণের তৈরী অস্ত্র নিয়ে নে।
.
আকাশের কথায় রাজ বলে উঠে,

–ভাই আমরা জানি আপনি আমাদের ভাই এই রয়েছেন। কিন্তু কথা হচ্ছে অবনী ভাবীকে আমরা কোথায় খোঁজ করবো? ক্রাউন শয়তান টা ভাবীকে সঙ্গে করে কোথায় নিয়ে গেছে আল্লাহ ভালো জানে।

–রাজ আমার বুদ্ধিমত্তা বলছে ক্রাউন অবনীকে নিয়ে যে কোনো একটা গড অফ ভ্যাম্পায়ারের মহলে গেছে। কারন তার মূখ্য প্ল্যান ছিল রাজত্ব করা। আর রাজত্ব করতে হলে অবশ্যই একটা রাজমহল প্রয়োজন। তাই আমি শিওর সে যে কোনো একটা রাজ মহলেই অবনীকে নিয়ে গেছে।

–ভাই ধরে নিলাম ভাবীকে শয়তানটা রাজমহলে নিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা সেই রাজমহল টাকে খুঁজে বের করবো কি ভাবে?

–এটা নিয়ে তোদের ভাবতে হবে না। কারন আমি চোখের সামনেই ভ্যাম্পায়ারদের সমস্ত রাজমহলের নকশা দেখতে পাচ্ছি।

–ভাই কি বলেন!

–হুম সত্যিই বলছি। আর আমি লিঙ্কনের রক্ত পান করার পর থেকে আরো অনেক কিছুকেই উপলব্ধি করতে পারছি। ভ্যাম্পায়ার সম্প্রদায় সূচনা হওয়ার পর থেকে যতো ভ্যাম্পায়ারের উৎপত্তি হয়েছে, তাঁদের সবার চেহারাও আমার চোখের সামনে ভাসছে। এছাড়া ভ্যাম্পায়ার সম্প্রদায়ের সমস্ত গোপন তথ্য আমি আপনা-আপনই জেনে গেছি। আমার ভিতরে অনেক কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে। আর এসব হওয়ার আসল কারন হয়তো লিঙ্কের রক্ত পান করা৷

–হ্যাঁ ভাই এটাই হবে। কারন আপনি তার রক্ত খেয়ে তার শক্তিকে রপ্ত করে নিয়েছেন। তার সাথে সাথে হয়তো লিঙ্কনের ভিতরে থাকা সমস্ত তথ্য আপনি জেনে গেছেন।

–হুম।
আচ্ছা শোন এখন চল সবাই আমার সাথে। আমি তোদের সবাইকে আইকিউ করে রাস্তা দেখাচ্ছি। তোরা গাড়ি নিয়ে বের হ। আমি সামনে থেকে তোদেরকে পথ দেখাচ্ছি। আর ডেমন হান্টার এবং জম্বুকের রাজা সুফিয়ান আপনারাও আমার লোকেদের সাথে আসেন।
.
আকাশের কথায় তার নিজের লোকদের পাশাপাশি সবাই সম্মতি জানায়। তারপর আকাশ কলা বাদুড়ের মতন উড়ে গিয়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে লিঙ্কনের শক্তির প্রয়োগ করে আইকিউ করতে করতে ভ্যাম্পায়ার মহলের সামনে গিয়ে পৌঁছায়। ভ্যাম্পায়ার মহলের সামনে গিয়ে পৌঁছানোর পর সবাই দেখে ভ্যাম্পায়ার মহলের সামনে দানব আকৃতির ভ্যাম্পায়ার গুলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভ্যাম্পায়ার মহলকে পাহারা দিচ্ছে। যেটা দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু আকাশের ভিতরে ভয়ভীতি বলতে কিছুই নেই। কারন তার ভিতরে এখন নিজের প্রাণের থেকেও প্রিয় মানুষটাকে বাঁচানোর তাড়না বেশি। এছাড়া সে এটাও জেনে যায়, যে লুফিয়ানা শহরের দানব গুলোকে ক্রাউন ইতিমধ্যে নিজের গোলাম বানিয়ে নিয়েছে। তবে বর্তমানে তার লোকজন ঘাবড়ে যাওয়ার সে স্বাভাবিক রূপে ফিরে এসে সবাইকে বলে,

–দেখ ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। আমার কথা না হয় বাদ দিলাম। কিন্তু মনে রাখিস তোরা কিন্তু মানবজাতি। আর মানবজাতিকে দুনিয়ার কোনো অশুভ শক্তি এসে হারাবে সেটা কখনোই হবে না। এই পৃথিবীকে উপর ওয়ালা মানবজাতির লক্ষ্যে গড়েছে। এই পৃথিবীতে রাজত্ব করবে মানবজাতিই। তাই তোদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তোরা সাহস নিয়ে ওদের সাথে লড়াই কর। আর আমি ভ্যাম্পায়ার মহলের ভিতরে প্রবেশ করছি।
.
আকাশের কথার উত্তরে রাজ বলে উঠে,

–ভাই আমরা সাময়িক কিছুটা ভয় পেলেও এখন ঠিক আছি। আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন। আর এদিকটা আমরা সামলে নিব।

–এই তো বাহাদুরের মতন কথা বলেছিস। যাক এবার আমি ভ্যাম্পায়ার মহলের ভিতরে প্রবেশ করলাম।

–ঠিক আছে ভাই।
.
আকাশ সবাইকে ভ্যাম্পায়ার মহলের রক্ষীদেরকে সামলাতে বলে সে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য হাঁটা ধরে। এমন সময় পিছন থেকে জম্বুকের লিডার সুফিয়ান আকাশকে বলে উঠে,

–ভাই মহলের ভিতরে আমিও আপনার সাথে যাবো। ক্রাউনের মৃত দেহ দেখে নিজের তৃপ্তি মেটানো বাকি আছে এখনো আমার।

–ঠিক আছে চলেন।
.
আকাশ আর সুফিয়ান ভ্যাম্পায়ার মহলে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে নেয়। কিন্তু তাঁদের সামনেই দানব আকৃতির ভ্যাম্পায়ার গুলো দাঁড়িয়ে আছে। তাই তারা প্ল্যান করে কি ভাবে ভিতরে প্রবেশ করবে। এমন সময় রাজ এবং বাকি সবাই মিলে ভ্যাম্পায়ার মহলের প্রহরীদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করে নেয়। এতে করে ভ্যাম্পায়ার মহলের সমস্ত প্রহরী পাহারা দেওয়া বাদ দিয়ে রেখে রাজদের এবং ডেমন হান্টারদের দিকে এগিয়ে আসে। আকাশ আর জম্বুকের লিডার এই সুযোগ টাকে কাজে লাগিয়ে মহলের ভিতরে প্রবেশ করে। মহলের ভিতরে প্রবেশ করতেই আকাশের মাথা ঘুরে উঠে। কারন ক্রাউন বিশাল সৈন্য সেনা বানিয়ে ফেলেছে। ভ্যাম্পায়ার মহলের ভিতরে অগণিত ভ্যাম্পায়ার ক্রাউনের সুরক্ষার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। আর দূরের একটা উঁচু জায়গায় চেয়ারের মধ্যে এক শিং ওয়ালা ক্রাউন বসে আছে। ক্রাউনকে দেখা মাত্রই আকাশের মাথার সেন্স নড়ে যায়। ক্রাউন ও দূর থেকে আকাশের আগমন দেখেছে। তাই ক্রাউন চেয়ার থেকে নেমে আকাশদের কিছুটা সামনে এগিয়ে জোর গলায় বলে,

–আসলে তোর মরনের ভয় নেই। তুই আমার খোঁজ করতে করতে ভ্যাম্পায়ার মহল পর্যন্ত চলে এসেছিস। বাহ তোর সাহসের মাত্রা বেশ প্রশংসনীয়। তবে শোন এখনো সময় আছে নিজের জান বাঁচিয়ে নিয়ে পালা এখান থেকে। দেখ আমি কিন্তু সচারাচর কাউকে সুযোগ দেই না। কিন্তু তোকে একটা সুযোগ দিচ্ছি। কারন তোর প্রিয়তমাকে আমি নিয়ে এসেছি। আজ থেকে দু’দিন পর আমাবস্যা রাত। আমি সেই আমাবস্যার রাতে তোর সুন্দরীকে বিয়ে করে তার সাথে ফুলশয্যা করবো। তারপর আগামী আমাবস্যায় আমাদের সংসার আলোকিত করে একটা সন্তান জন্ম নিবে। তুই আমার এই কাজে বাঁধা দিতে আসিস না। না হয়তো মারা পড়বি। তাই বলছি কি আমার সুযোগ টাকে ঠুকরে না দিয়ে লুফে নে। এবং এখান থেকে পালিয়ে যা।
.
ক্রাউনের কথা শুনে আকাশের শরীরের রক্তমাংস উত্তেজনায় টগবগ করতে আরম্ভ করে। তার সাথে সাথে আবার আকাশের চেহারার রং ও ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের ন্যায় লালবর্ণ ধারণ করেছে। আকাশ নিজেকে আর কন্ট্রোল করে রাখতে না পেরে হুট করেই দানবের রূপ ধারণ করে বসে। যেটা দেখে ক্রাউন কিছুটা ঘাবড়ে যায়। তবে সে পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে সিংহাসনের মতন চেয়ার টাতে হেলান দিয়ে বসে পায়ের উপরে পা উঠিয়ে দেয়। “এদিকে আকাশ দানবের রূপ ধারণ করে মহলের ভিতরের প্রহরীদেরকে মারতে মারতে ক্রাউনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আকাশের সাথে সাথে সুফিয়ান ও সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ক্রাউনের মহলের ভিতরের প্রহরীরা আকাশ এবং সুফিয়ানকে আটকানোর বেশ চেষ্টা চালায়, কিন্তু আকাশ এতোটা হিংস্র হয়ে গেছে, যে সে সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই চিঁড়ে ফিড়ে দু’টুকরো করছে। প্রহরীদেরকে মারতে মারতে আকাশ আর সুফিয়ান ক্রাউনের চেয়ারের সামনে গিয়ে হাজির হয়। তখনি ক্রাউন আবার বলে উঠে,

–আরে মুর্খ তোকে একটা সুযোগ দিলাম কিন্তু তুই সেটাকে লুফে না নিয়ে আমায় মারতে সামনে চলে এসেছিস। তুই কি ভেবেছিস লিঙ্কনের শক্তির দ্বারা তুই আমাকে হারাতে পারবি? আর তোর সঙ্গের এই জম্বুক হারামি আমার কিছু করতে পারবে? তাহলে শোন তোদের এটা ভুল ধারণা। আসছে আমাবস্যার আগে আমি নিরিবিলি ভাবে থাকতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এই দু’দিন একদম শান্তশিষ্ট থাকবো। কারোর কোনো প্রাণ নিব না। কিন্তু তোরা আমাকে আর শান্ত থাকতে দিলি না। নিজে সেধেই আমার কাছে মরতে এসেছিস। যাক কি আর করা মরার জন্য তৈরী হয়ে নে। আর শোন তোদের শেষ কোনো ইচ্ছা থাকলে চটাচট বলে ফেল..
.
ক্রাউনের কথাবার্তা শুনে আকাশের রাগের মাত্রা আরো কয়েকশত গুন বেড়ে যায়। তাই সে সেকেন্ডের মধ্যেই তেড়ে গিয়ে ক্রাউনের শরীরে অপ্রত্যাশিত ভাবে সজোড়ে এক লাথি মেরে বসে। যার ফলে ক্রাউন চেয়ার থেকে উল্টে পড়ে যায়। আকাশের এমন আচরণে ক্রাউনের ও রাগ উঠে যায়। তাই সেও চটজলদি মাটি থেকে উঠে তার ভয়ানক রূপটা ধারণ করে বসে। এবার হয়তো লাগবে ভ্যাম্পায়ারদের নিজেদের মধ্যেই ইতিহাসের সব চাইতে বড় লড়াই টা…..

চলবে….

ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।
আগামী পর্বে সমাপ্তি করে দেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here