ভ্যাম্পায়ার সিটি -(পর্ব_১০)

0
305

#ভ্যাম্পায়ার_সিটি
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১০

“অদ্ভুত ভাবে ভ্যাম্পায়ার সম্প্রদায়ের রাজা লিঙ্কন এবং তার সাথে থাকা বিশাল আকৃতির ভ্যাম্পায়ার গুলোও আকাশের সামনে ঝুঁকে বসে। যেটা দেখে আকাশ এবং বাকি সবার হুঁশ উড়ে যায়। সবাই চোখ পাকিয়ে তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু অন্যদিকে আকাশের রাগের মাত্রাটা আরো বেড়ে যায়। কারন সে অবাক হলেও নিজের রাগের কাছে পরাজয় হয়। গতবারেও লিঙ্কন একই ভাবে তাঁদের সাথে ভালো মানুষির অভিনয় টা করেছে। এবারো হয়তো একই ভাবে তাঁদের সামনে কোনো ধরনের অভিনয় করছে। তাই আকাশ রাগান্বিত কন্ঠে লিঙ্কনকে বলে,

–এই তুই আবার কোন নাটক সাজিয়েছিস রে?
গতবার তো বেশ নেতিবাচক কথাবার্তা বলছিলি। কিন্তু পরে কি করলি, সেই একই ভাবে মানুষের হত্যা করলি।
.
আকাশের কথা শুনে লিঙ্কন ঝুঁকে বসা থেকে উঠিয়ে দাঁড়ায়। তারপর আকাশকে বলে,

–দেখ আমি জানি না তুই কে। আর তুই আমাকে বর্তমানে কি ভেবে এতগুলো কথা শুনেছিস সেটা আমার অজানা। তবে আমি তোর কাছে নত স্বীকার এজন্যই করেছি, কারন তোর সাহায্যের প্রয়োজন আমার।

–বাহ এখন তো দেখছি বেশ নাটক মারাচ্ছিস। মনে হচ্ছে যেনো দুনিয়ার বুকে কিছু সময় আগেই তুই টপকেছিস। আর তুই আমার থেকে কিসের সাহায্য চাইছিস? তুই তো নিজেই সব কিছু করতে পারিস।

–আমি কোনো নাটক মারাচ্ছি না। আমি সত্যিই তোর কাছে সাহায্যের জন্য এসেছি। আর আমি যদি নিজেই সব করতে পারতাম তাহলে তোর কাছে কখনোই আসতাম না।

–যাক গে তোর সাথে অতিরিক্ত কথা বলার কোনো ইচ্ছেই নেই আমার। আর তুই নাটক করছিস না কি করছিস সেটা উপর ওয়ালাই ভালো জানেন। এবার তুই সেসব বাদ দিয়ে রেখে আমার কাছে কি জন্য এসেছিস সেটা বল।

–গতকাল রাতে আমি ক্রাউনকে রুস্তমের হত্যাকারীকে খোঁজার দায়িত্ব দিয়ে নিজের মহলে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এরপর জমিনের বুকে কি হয়েছে আমি কিছুই জানি না। কিন্তু একটু আগে বাকি একজন গড অফ ভ্যাম্পায়ারকে কে যেনো মেরে ফেলেছে। যেটার আভাস আমি ঘুমে থেকেই পেয়েছি। তাই তোর কাছে আমি ছুটে এসেছি সাহায্যের জন্য। তুই আমাকে সাহায্য কর।

–তোদের সম্প্রদায়ের রাজাকে মেরেছে সেজন্য তোরা নিজেরা কোনো পদক্ষেপ নে। খামোখা আমার কাছে এসে কেন এসব বলছিস? আর আমি তোদের কি সাহায্য করবো?

–কারন শুধু আমি কেন পুরো ভ্যাম্পায়ার সম্প্রদায়েরর সমস্ত লোকজন একত্রে হয়ে চেষ্টা করলেও সেই হত্যাকারীর কিছুই করতে পারবো না। সেই হত্যাকারী আমাদের আরেকজন গড অফ ভ্যাম্পায়ার যিনি ছিলেন তাকে মেরে তার সমস্ত শক্তি নিজের দখলে করে নিয়েছে। যার দরুন সে অবিনশ্বর বা ইম্মোটাল হয়ে গেছে। মানে এক কথায় বলতে গেলে অমর হয়ে গেছে৷ আর সে এখন দুনিয়ায় তাজ্জব রটিয়ে বেড়াবে।

–মানে কি এসবের বুঝলাম না!

–মানে হলো আমাদের আরেকজন গড অফ ভ্যাম্পায়ার যার নাম কিনা লুফিয়ান, তিনার নাম করনেই লুফিয়ানা শহরের নির্মান করা হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টা আমাদের গড অফ ভ্যাম্পায়াররা ছাড়া কেউ এই জানে না। আমাদের সেই গড অফ ভ্যাম্পায়ার লুফিয়ানের কাছে অবিনশ্বর বা অমর হয়ে থাকার শক্তি ছিল। যেই শক্তির কারনে আমরা বছরকে বছর জীবিত থাকতাম। কিন্তু কেউ একজন সেই গড অফ ভ্যাম্পায়ার লুফিয়ানকে মেরে তার সমস্ত শক্তি নিজের কবলে করে নিয়েছে। তাই সেই হত্যাকারী চাইলে এখন যে কোনো কিছুই করতে পারে। তাকে আটকানোর ক্ষমতা আমাদের ভ্যাম্পায়ার সম্প্রদায়ের মাঝে আর কারোর নেই। আর থাকবেও বা কি করে, সে চাইলে লুফিয়ানা শহরের সমস্ত দানব আকৃতির ভ্যাম্পায়ারকে চোখের ইশারায় নাচাতে পারবে। তাই তাকে শেষ করার জন্য তোর সাহায্যের প্রয়োজন।

–ও আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে।

–হুম।

–তার মানে তোদের অগোচরে কেউ একজন এসব করে নিজের শক্তি আরো বৃদ্ধি করতে চাচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে আমি তোকে সাহায্য করে কি পাবো?

–আমার সাহায্য করে তুই কি পাবি জানি না। তবে এটুকু আমি বলতে পারি মানুষজন এসব থেকে মুক্তি পাবে। আর তাছাড়া গতরাতে হয়তো সেই হত্যাকারীই মানুষজনকে মেরেছে। তাই তুই আমাকে সাহায্য কর এসব কিছুকে রোধ করতে।

–ঠিক আছে আমি সাহায্য করবো। তবে একটা শর্তে..

–কি শর্ত?

–তোরা আর মানুষের ক্ষতি করতে পারবি না। আর সেই হত্যাকারী মরে গেলে তোরা তোদের মতন শহর ছেড়ে চলে যাবি।

–দেখ তোর এই শর্তটা আমাদেরকে দিতে হবে না। আমরা এমনিতেই এসব মেনে চলি। আর সেই হত্যাকারীকে শেষ করতে পারলে এমনিতেও আমরা আমাদের স্থানে ফিরে চলে যাবো।

–কথাটা মাথায় থাকে যেনো। হুম এবার তুই এখান থেকে চলে যা। বাকিটা আমরা দেখছি।

–আমার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তুই আমাকে একটা থাকার মতন জায়গা করে দে। কারন সেই হত্যাকারী আমাকেও মারার জন্য আমার তালাশ করছে। তার বর্তমান শক্তির কাছে আমার শক্তি কোনো কিছুই না। তাই আমি তার সাথে লড়াই করে কখনোই পেরে উঠবো না। এজন্য তুই আমাকে অনুগ্রহ করে একটা সুরক্ষিত জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দে।

–ঠিক আছে তোর থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তবে তোর এই দানব গুলোর জন্য আমার কাছে থাকার মতন কোনো জায়গা নেই।

–নাহ ওরা থাকবে না। ওরা এমনিতেও লুফিয়ানা শহরে চলে যাবে। কারন না হয়তো হত্যাকারী লুফিয়ানা শহরের বিশাল আকৃতির ভ্যাম্পায়ারদেরকে তার দলে টেনে নিয়ে তাঁদের শক্তির অপব্যবহার করবে। তাই এরা লুফিয়ানা শহরে ফিরে গিয়ে হত্যাকারীর হাত থেকে লুফিয়ানা শহরকে বাঁচাবে।

–ঠিক আছে তাহলে। তবে শোন তোকে শেষ আরেকটা কথা বলি। তোর সমস্ত কথা বিশ্বাস করে আমি তোকে আশ্রয় দিচ্ছি। কিন্তু তুই যদি কোনো ধরনের কালপিটগিরি করিস, তাহলে তোর অবস্থা একদম নাজেহাল করে দিব।

–ঠিক আছে আমি যদি কোনো ধরনের দু’নম্বরি করি, তাহলে তুই আমার মস্তক আলাদা করে দিস শরীর থেকে।

–হুম মনে রাখিস কথাটা।
.
আকাশ এরপর রাজকে ডাক দিয়ে লিঙ্কনের জন্য একটা থাকার জায়গার ব্যবস্থা করতে বলে। রাজ আকাশের কথা মতন লিঙ্কনের জন্য একটা সুরক্ষিত জায়গা ঠিক করে তাকে সেখানে রেখে বাংলোতে ফিরে আসে। বাংলোতে ফিরে আসার পর আকাশকে বলে,

–ভাই লিঙ্কনকে সুরক্ষিত জায়গায় রেখে এসেছি।

–যাক ভালো করেছিস।

–কিন্তু ভাই আমার একটা কথা আছে।

–কি কথা?

–ভাই হুট করে গড অফ ভ্যাম্পায়ার রুস্তম এবং লুফিয়ানকে মারার মতন ভয়ানক কান্ডটা কে করলো।

–রাজ সেটা নিয়ে তো আমিও ভাবছি।
কিন্তু কোনো উত্তর এই খুঁজে পাচ্ছি না। কারন মানুষদের তো এতো ক্ষমতা নেই, যে তারা ভ্যাম্পায়ারের বিরদ্ধে বিদ্রোহ করে গড অফ ভ্যাম্পায়ারকেই মেরে ফেলবে। এছাড়া ডেমন হান্টাররাও তো কিছু করেনি। কারন তারা বেশিরভাগ সময় আমাদের চোখের সামনে থাকছে। তাহলে মারলো টা কে!

–ভাই আমার মনে হয় জম্বুকরা এমন করেছে। কারন জম্বুক আর ভ্যাম্পায়ারের মধ্যে সাপ, বেজির লড়াই। তাই আমার মনে হচ্ছে জম্বুকরাই হয়তো গড অফ ভ্যাম্পায়ারকে মেরেছে।

–নাহ রাজ এটা কখনোই সম্ভব না। কারন আমরা শহরের আসার পূর্বে হাজার খানিক জম্বুক একত্রে হয়ে এক শিং ওয়ালা ক্রাউনের এই কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। তারা ক্রাউনের ভয়াবহ আকৃতি দেখে যে যার মতন দৌড়ে পালিয়েছে। সেখানে তারা কিনা ক্রাউনের চাইতেও অধিক শক্তিশালী গড অফ ভ্যাম্পায়ারকে মারবে। এটা একদম অবিশ্বাস্য কথাবার্তা।

–তাহলে ভাই এর পিছনে অন্য কেউ আছে।

–হুম অন্য কেউ তো অবশ্যই আছে। আর সেই অন্য কেউ টাকেই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। তবে এখুনি আমরা হাত-পা বেঁধে নেমে পড়বো না। আগে আরো দু’দিন যাক। তারপর আমরা মাঠে নামবো আবারো। সেই পর্যন্ত সবাই নিরব দর্শকের মতন চুপচাপ বসে থাক।

–ঠিক আছে ভাই।
.
আকাশের কথা মতন সবাই আগামী দুইদিন কি হয় সেই অপেক্ষায় বসে আছে। “অপরদিকে ক্রাউন শহরকে নড়কে পরিণত করতে তার দলবল এবং লুফিয়ানের প্রহরীদেরকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। বর্তমানে লুফিয়ানের সমস্ত রক্ষিতারা ক্রাউনের অনুসারী হয়ে গেছে। সবাই মিলে একত্রে হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে গতকালের ন্যায় মানুষের রক্ত খাওয়ায় জন্য। কিন্তু রাস্তার মোড়ে মোড়ে যে সৈনিক আলট্রা ভায়োলেট কিরণের তৈরী অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেটা ক্রাউন জানে না। ক্রাউনের অনুসারী রাস্তায় নামতেই সৈনিকরা তাঁদের উপরে গুলি ছুঁড়তে আরম্ভ করে। এতে করে ক্রাউনের চার-পাঁচজন অনুসারী জায়গার মধ্যে জ্বলে ছাই হয়ে যায়। ক্রাউন তার অনুসারীকে জ্বলে ছাই হতে দেখে বাকি অনুসারীদেরকে বলে,

–এই তোরা সকলের শোন, আজকে আমরা আর মানুষের উপরে হামলা করবো না। কারন প্রতিদিন মানুষের রক্ত খেতে খেতে বোরিং হয়ে গেছি। তাই আজকে আমরা জম্বুকদের উপরে হামলা করবো। তবে তোরা আবার ভাবিস না যেনো আমার কয়েকজন অনুসারী মরায় আমি ভয় পেয়ে গেছি। যদি এমনটাই ভাবিস তাহলে একটা জিনিস দেখাচ্ছি তোদের। তোরা সবাই সেটা দেখ।
.
ক্রাউন তার অনুসারীদেরকে একটা জিনিস দেখাচ্ছি বলে দু’জন সৈনিকের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে। যার ফলে সৈনিকরা নিজের অনিচ্ছা সত্বেও গুলি ফেলে দিয়ে পাগলের মতন ক্রাউনের কাছে ছুটে আসে। সৈনিকরা ক্রাউনের কাছে ছুটে আসার পর সে দু’জন সৈনিকের গলায় কামড়ে তাঁদের রক্ত খেয়ে নিয়ে তাঁদেরকে মেরে ফেলে। তারপর আবার তার অনুসারীদের বলে,

–নে তোদের সবাইকে আমার শক্তি দেখিয়ে দিলাম। এবার তোরা সবাই আমার সাথে চল জম্বুকদের উপরে হামলা করবো। তারপর সবাই মিলে জম্বুকদের রক্ত খাবো।
.
ক্রাউন তার অনুসারীদেরকে সঙ্গে নিয়ে জম্বুকদের উপরে হামলা করার জন্য রাস্তাঘাট ছেড়ে কোনো এক বিশাল গুহার মধ্যে প্রবেশ করে। যেই গুহার ভিতরে হাজারের উপরে জম্বুক ঘুমিয়ে আছে। আর এই গুহা সম্পর্কে ক্রাউন বহু আগেই অবগত হয়েছে। ক্রাউন গুহাতে প্রবেশ করার পরে গুহার সমস্ত জম্বুককে মেরে তাঁদের রক্ত খেয়ে নেয়। তার শক্তির সাথে কেউ পেরে উঠে না। সেই গুহার ভিতরেই জম্বুকের লিডার ছিল। ক্রাউন এবং তার অনুসারীরা সবাইকে মেরে জম্বুকের লিডারের উপরে হামলা করার জন্য তার দিকে অগ্রসর হয়। তখনি জম্বুকের লিডার নিজের রূপ পাল্টে নিয়ে শিয়ালের রূপ ধারণ করে দৌড়ে সেই গুহা থেকে নিজের জান বাঁচিয়ে নিয়ে পালায়। ক্রাউন এবং তার অনুসারী সবাই জম্বুকের লিডারের পিছনে পিছনে ছুটতে আরম্ভ করে। কিন্তু জম্বুকের লিডার নিজের বুদ্ধির প্রয়োগ করে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কোন মতে নিজের জান বাঁচিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ক্রাউন এবং তার অনুসারী জম্বুকের লিডারকে আর ধরতে পারে না। তাই জন্য তারা আবার ফিরে আসে। ফিরে আসার পর ক্রাউন সবাইকে বলে,

–আজকের মতন সবাই নিজের নিজের অবস্থানে চলে যা। আগামীকাল খুব বড়সড় হামলা করবো। আজ যতো রক্ত খেয়েছি, তাতে করে আমার বেশ কয়দিন রক্ত না খেলেও চলবে। তাই আজকে আর ছুটাছুটি করে নিজের পুরো এনার্জি নষ্ট করলাম না। কারন আগামীকাল আমার প্রিয় মানুষটাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য অনেক বড় ধ্বংসযজ্ঞ চালাবো আমি। আর তার জন্য বেশ শক্তির প্রয়োজন। তাই এখন আর শক্তির অপচয় না করে কফিনের ভিতরে ঘুমিয়ে পড়লাম। তোরা সবাই যে যার মতন চলে যা।
.
ক্রাউন তার অনুসারীদেরকে চলে যেতে বলে সে কফিনের ভিতরে ঢুকে৷ ঘুমিয়ে পড়ে। আর তার অনুসারীরা তার কথা মতন সেখান থেকে চলে যায়। “ঐদিকে বেশ রাত হওয়ায় আকাশ আর অবনী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। দু’জনে বেশ শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে। কিন্তু তাঁদের এই শান্তির ঘুম যে আগামীকাল ক্রাউন হারাম করে দেওয়ার পায়তারা করছে, সেই বিষয়ে আকাশ আর অবনী কোনো কিছুই জানে না। তারা দু’জন নিশ্চিন্তে শান্তশিষ্ট ভাবে ঘুমিয়ে আছে। তবে আগামীকাল তারা দু’জন এক সাথে ঘুমোতে পারবে কিনা তা উপর ওয়ালাই ভালো জানেন…

চলবে….

ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here