#মেঘবৃষ্টির_গল্পকথা
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
পার্ট:02+03
মেঘ:সরি?
বৃষ্টি: নো টেনসন বস, ডেয়ার ছিল।কমপ্লিট করে ফেলেছি বাই!
বলেই ঘুরে আসতে নিলে মেঘের কথা শুনে থমকে গেলো।কথাটা ছিল এই যে,”আই লাভ ইউ টু!”
বৃষ্টি: ওয় হ্যালো!বললাম না ডেয়ার ছিল।
মেঘ: বাট আমি তো সিরিয়াসলি নিয়েছি।
বৃষ্টি:আর ইউ ম্যাড!
মেঘ: নো।
বৃষ্টি এক হাতে নিজের ঘাড় স্লাইড করতে করতে বললো,
বৃষ্টি: লিসেন আমার ঘাড়ের একটা রগ এমনেই ত্যাড়া।কাওকে মেরে হাত ভেঙ্গে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি। সহজ কথা সহজ ভাবে বলছি কেটে পড়ুন।
মেঘ:সো হোয়াট মিস?
বৃষ্টি:নিজের লিমিট এর মধ্যে থাকুন মিস্টার মেঘ!!
মেঘ:মেঘালয় মেঘ নিজের লিমিটেই আছে।আসলে কি বলোতো তোমার তো একটা রগ ত্যাড়া,আমার তো দুইটাই ত্যাড়া। যা চাই তা পাই।
বৃষ্টি:এই তুই কোন ইয়ারের স্টুডেন্ট রে?
মেঘ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।একবার আপনি ,তারপর ডিরেক্ট তুই।মেঘ বুকে হাত গুঁজে দাড়িয়ে বললো,
মেঘ: আই এম মেঘালয় মেঘ, দা নিউ লেকচারার অফ দিস ভার্সিটি।
বৃষ্টি হতভম্ভ হয়ে রইলো।শেষ মেষ ভার্সিটির লেকচারার কে প্রপোজ করলো আর তুই করে বললো।
বিভোর: উৎস!
উৎসঃ আজকে শেষ আমরা।
আভি: আবি ভি টাইম হে, পাতলি গলি ছে নিকাল লো।
রাইসা:সব গুলা এখানে দাড়া,তোদের জন্য বৃষ্টি ফাসছে!
বৃষ্টি: হে হে! নিউ স্যার।আসলে আমি জানতাম না ,আব কিছু মনে করবেন না। ডেয়ার ছিল।হি হি।টাটা।
বলে ঘুরতে গেলেই মেঘ বলে উঠলো,
মেঘ:নাম কি?
বৃষ্টি:কেন বলবো?
মেঘ:টিচারের সাথে বেয়াদবি!
বৃষ্টি নিজের রাগ সংযত করে বললো,
বৃষ্টি:স্পর্শিয়া বৃষ্টি।
মেঘ:সো কিউট নেইম।মেঘালয় মেঘ আর স্পর্শিয়া বৃষ্টি।দারুন কাপল।
বৃষ্টি:এক্সট্রিম হয় যাচ্ছে না।
মেঘ:একদমই না।
বলেই ৩২ পাটি দাত দেখালো।বৃষ্টির এখন নিজের মাথা নিজেই ফাটাতে ইচ্ছে করছে।কেন যে এই নমুনাকে প্রপোজ করলো।টিচার বলে কিছু বলতেও পারছে না।
মেঘ:কোন ইয়ার অ্যান্ড কোন ভার্সন?
বৃষ্টি দাতে দাত চেপে বললো,
বৃষ্টি:থার্ড ইয়ার,বাংলা ভার্সন।
মেঘ:ওকে তাহলে আবার দেখা হবে,বাই বাই সুইটি!
বলেই গাল টেনে চলে গেলো।
বৃষ্টি: তালগাছ একটা!
বিভোররা ওর কাছে এলো,
বিভোর:এবার কী হবে?
উৎসঃ আমি শুধু ভাবছি ওকে কেও আই লাভ ইউ টু বলেছে।
আভি:একদম,এই গুন্ডিকে?
বৃষ্টি একবার ওদের দিকে তাকিয়ে আশে পাশে কিছু খুঁজলো,
বিভোর: কিরে কি খুঁজিস?
উৎসঃ কিছু হারিয়েছে?
বৃষ্টি উত্তর না দিয়ে নিচ থেকে একটা মোটা ডান্ডা কুড়িয়ে নিলো।
আভি এক ঢোক গিলল,
আভি:এটা দিয়ে কি করবি?
বৃষ্টি:বেশি কিছু না,তোদের পিঠে একটু ট্রাই করবো এটা কতটা শক্ত।
আভি:বিভোর, উৎস ভাগ।নাহলে এই ডান্ডা আজ আমাদের পিঠে পড়বে!
বলেই দৌড়,
বৃষ্টি:হারামী গুলো দাড়া।
ওদের পিছে দিল দৌড়।
রাইসা:এবার?
আয়েশা:ওদের কে এবার আমিও বাঁচাতে পারবো না!
নুরি:আমার কান্না পাচ্ছে!
আয়েশা:কেন?
নুরি:আমার ক্রাশ বৃষ্টিকে আই লাভ ইউ বললো?
রাইসা ঠাস করে নুরির পিঠে মারলো।
রাইসা:তোর ক্রাশের গুষ্টি কিলাই,শালী।সারাদিন খালি ক্রাশ ক্রাশ!
আয়েশা:চল ওদের খুঁজি।
ঐদিকে
বৃষ্টি:তোরা দাড়াবি ?আমি ধরতে পারলে তোদের আর রেহাই নাই।
আভি: জান বাঁচানো ফরয বইন।
বৃষ্টি: দেখাইতেছি ফরজ তোকে।
বিভোর,আভি, উৎস দৌড়ে দৌড়ে এক ফাঁকা রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো।হয়রান হয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে পড়লো তিনজন।
আভি:সব তোর জন্য,কে কইছে এই আবুইলা ডেয়ার দিতে?
উৎসঃ হো,এখন জীবন বাঁচানো ফরজ হয়ে গেছে।
বিভোর:আমি কি ঢোল পিটিয়ে কইছি তোদের আমার সাথে তাল মিলাতে?
আভি:আরে ভাবলাম তুই একা মাইর খাবি তাই আমরাও খাই! হে হে(বেক্কল মার্কা হাসি দিয়ে)
উৎসঃ তোর ভোতা মুখ বন্ধ রাখ।
বৃষ্টি:আলোচনা শেষ?
তিনজন সামনে তাকালো,বৃষ্টি ডান্ডা হাতে নিয়ে নিয়ে ওদের সামনেই বেঞ্চের উপর বসে আছে,
উৎসঃ ভুততততততত!
বিভোর:শালা চিৎকার কম কর,এটা ভুত না, গুন্ডি!
উৎসঃ ও ভিতরে কেমনে আইলো?
আভি:পিছনের দরজা দিয়ে।
উৎসঃ শালা,ঐটা বন্ধ করিস নাই কেন?
আভি:দাড়া করতেছি।
বিভোর:এখন করে লাভ কি?
আভি:যাতে কোনো পাবলিক না দেখে,এক মেয়ের হাতে তিন পুরুষ নির্যাতন।নাহলে পুরুষ নির্যাতনের দায়ে বৃষ্টিকে পুলিশ নিয়ে যাবে।
উৎসঃ তুই নোবেল পাস নাই?
আভি:শেখ হাসিনা মোরে চক্ষে দেখে না।
বৃষ্টি:হইছে?
বিভোর:বইন,মাফ কইরা দে।আর জনমে এই রকম ডেয়ার দিবো না!
বৃষ্টি:তোরে তো..মানে,খুন করলেও শান্তি হবে না!শালা,আর কোনো নমুনা পাস নাই?এই অভদ্র স্যার রেই প্রপোজ করতে দিতে হইলো?
উৎসঃ আমরা কেমনে কমু,উনি যে স্যার?
বৃষ্টি:মুখ বন্ধ রাখ,নাহলে সত্যি খুন করে ফেলবো!
তিনজন মুখে হাত দিয়ে বসলো,বৃষ্টি ডান্ডা ফেলে দিলো,তাই দেখে তিনজনের জানে পানি এলো।পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে পরলো রাইসা,নুরি,আয়েশা।
রাইসা:এগুলোর চেহারা এখনও দেখি ঠিকঠাক,মারিস নাই এদের?(বৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে)
বিভোর:তুই কি সত্যি আমাদের বন্ধু?
রাইসা:আমি কেন তোদের বন্ধু হতে যাবো?
উৎসঃদূরে গিয়া মর।
নুরি:ওদের ছাড়লি কেন,মার এগুলোরে।আমার ক্রাশ টা এদের কারণে তোরে প্রপোজ করল।
বৃষ্টি বিরক্তিকর চোখে তাকালো।নুরি গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইলো।
উৎস: টিউব লাইট!মুখ বন্ধ কর।
নুরি: উষ্টা দিবো,আমার নাম নুরি,একদম উল্টা পাল্টা নামে ডাকবি না।
আভি: ইস,যেই না চেহারা নাম আবার পেয়ারা ।
বৃষ্টি:তোরা থামবি?
সবাই চুপ করে গেল।
বৃষ্টি:কি যেনো নাম? ও হ্যাঁ,মিস্টার মেঘালয় মেঘ!উনি এই স্পর্শিয়া বৃষ্টিকে চিনে না।আমার পিছনে লাগা,উনার জন্য অনেক ভারী পড়বে।
আয়েশা:চল ক্লাস আছে।লাস্ট ক্লাস অন্তত করতেই হবে।
সবাই ক্লাসে গেলো।ওখানে গিয়ে ওরা সব লাস্ট এর তিন বেঞ্চ দখল করে বসলো।
আদিল:তোরা কই ছিলি?
রাইসা:কাজে?
আদিল:তোদের আবার কি কাজ?আর বৃষ্টি চেহারা তোর এমন পেঁচার মত কেন?
রাইসা:লম্বা কাহিনী!
আদিল:কি?
নুরি সব খুলে বললো,
আদিল:লো,তাহলে নেক্সট ধামাকা এখানে হবে!
বৃষ্টি:মানে?
আদিল:যেই নিউ লেকচারের কথা তোরা বলছিস,এখন তারই ক্লাস,আমাদের সাথে।
বিভোর, উৎস,আভি বড় বড় চোখ করে তাকালো।বৃষ্টি ক্ষিপ্ত চোখে ওদের দিকে তাকালো।
উৎস:এবার আমরা কিছুই করি নাই!
বৃষ্টি:তোদের কাচা চিবাতে মন চাচ্ছে,কেটে কুচি কুচি করে ভেজে খেলে ভালো হবে।
ওরা তিনজন ঢোক গিলল।তখনই প্রবেশ করলো প্রিন্সিপ্যাল আর নিউ লেকচারার মেঘালয় মেঘ।
প্রিন্সিপল: ডিয়ার স্টুডেন্ট দিস ইজ ইউর নিউ ম্যাথ লেকচারার।মিস্টার মেঘালয় মেঘ।অ্যান্ড মেঘ ইটস ইউর ক্লাস রুম। আই হোপ ইউ উইল ডু ইউর বেটার পারফরম্যান্স।
বৃষ্টি:শালার বান্দর, ফটর ফটর করে ইংরেজিতে কি গালি দিচ্ছে আল্লাহ্ জানে!
বৃষ্টি কথাটা শুধু মাত্র বিভোরদের শোনার জন্য বললো।এই শুনে আভি জোড়ে হেসে দিল। যার ফলে প্রিন্সিপ্যাল এর তীক্ষ্ণ নজর এর শিকার হলো আভি।
প্রিন্সিপ্যাল: ইউ স্ট্যান্ড আপ! ডু ইউ থিঙ্ক আই অ্যাম টেলিং সাচ কাইন্ড অফ ফানি থিং?
আভি বিভোর কে খোঁচা দিয়ে বললো,
আভি: কিরে বললো?
বিভোর: তোমার কি মনে হয় আমি কোনো মজার কথা বলছি!
বৃষ্টি আবার আস্তে আস্তে বললো,
বৃষ্টি:আমার তো তাই মনে হয়।
আভি আবার হেসে দিল।আর সাথে সাথে মুখ চেপে ধরলো।
প্রিন্সিপ্যাল:ওহ এতক্ষণ তো খেয়াল ই করি নাই।মিস্টার মেঘ আপনাকে কিছু ব্রিলিয়ান্ট নামক গরুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
মেঘ:সরি?বুঝলাম না।
প্রিন্সিপ্যাল:দাড়ান বুঝাচ্ছি। সো এইযে ব্রিলিয়ান্ট নামক গাধারা দাড়ান একটু।
বৃষ্টি বিরক্তি সহকারে উঠে দাড়ালো।সেই সাথে আদিল,নুরি,রাইসা,আয়েশা আর বিভোর ও।আভি তো আগেই দাড়ানো।
প্রিন্সিপ্যাল:এইযে এদের দেখছেন,এদের ভার্সিটিতে দেখবেন ঠিকই কিন্তু ক্লাসে পাবেন না।আজকে কি করে ক্লাসে আছে জানি না।এই কারণে গরু বলা,আর ব্রিলিয়ান্ট বলার কারণ হলো সারাবছর ক্লাস না করেও টপ টেনে এরাই থাকে।তাই এরা ব্রিলিয়ান্ট নামক গরু।
বৃষ্টি:আর আপনি যেটা বললো সেটা প্রশংসা নামক অপমান।
ক্লাসে হাসির বন্যা বসে গেলো।
প্রিন্সিপ্যাল:মিস স্পর্শিয়া বৃষ্টি,আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন আমি এই কলেজের প্রিন্সিপাল?
বৃষ্টি:একদমই না!
প্রিন্সিপ্যাল:আপনি মিস্টার ফারাজ ব্যানার্জির মেয়ে না?
বৃষ্টি হাত মুঠো করলো,
বৃষ্টি:আমি স্পর্শিয়া বৃষ্টি আর এটাই আমার পরিচয়।আমার বাবা কে বা আমি কার মেয়ে সেটা নয়।
প্রিন্সিপ্যাল: প্রিন্সিপ্যাল এর সাথে কেও এভাবে কথা বলে?
আয়েশা বৃষ্টির হাত চেপে ধরলো, তাই আর কোনো জবাব দিলো না ও। প্রিন্সিপ্যাল আরো কিছু কথা বলে বেরিয়ে গেলেন।
মেঘ:মিস বৃষ্টি,তুমি কাইন্ডলি সামনে এসে বসো।
বৃষ্টি:কিন্তু কেনো?
মেঘ:আমার অর্ডার তাই,
বৃষ্টি:আমি বাধ্য নই।
মেঘ বৃষ্টির কাছে গেলো,আর আস্তে করে বলল,
মেঘ: আই হোপ তুমি চাইবে না,আমাকে প্রপোজ করার ব্যাপারটা লিক হোক।
বৃষ্টি রাগী চোখে তাকালো,ব্যাগ নিয়ে চুপ চাপ সামনের বেঞ্চে চলে গেলো।মেঘ মুচকি হাসলো।আর ক্লাস নিতে শুরু করলো।প্রথমদিন দেখে তেমন কিছু করালো না।ক্লাস শেষে ওরা বেরিয়ে গেলো।তখনই আয়েশার ফোন বেজে উঠলো, ও শুধু হ্যাঁ বলে কেটে দিল।মুড অফ করে রইলো।
বৃষ্টি:কি হয়েছে?
আয়েশা:বাবা ফোন করেছে।
বৃষ্টি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
বৃষ্টি:আমি যেনো এখনই বাসায় আসি তাইতো?
আয়েশা চুপ করে রইলো।
বৃষ্টি:আদিল!
আদিল:বল!
বৃষ্টি:অনেক দিন রাত করে আড্ডা দেওয়া হয় না। আজকে বাইক রাইডে যাবো।
আয়েশা:বৃষ্টি,বাবা তোকে যেতে বলেছে,তুই কেনো অবাধ্য হচ্ছিস?
বৃষ্টি:আমি যাবো না।
আয়েশা:তোর প্রবলেম কি?কেনো বুঝিস না তোর এই অবাধ্য হওয়া তোকে আরো ওদের কাছে খারাপ বানাচ্ছে!কাকী কে আরো সুযোগ করে দিচ্ছে তোর নামে কু কথা বলার।
বৃষ্টি:যদি মিস্টার ফারাজ নিজে আমাকে ফোন করে বলতো উপস্থিত হতে,হয়তো হতাম।কিন্তু…আর বাকি রইলো কু কথা বলার?আমাকে কখনো নিজের হয়ে বলার সুযোগ দিয়েছে?
আয়েশা কিছু বললো না,কি বা বলবে।আজও ওর কাছে অজানা কেনো তারা বৃষ্টির সাথে এমন করে!বৃষ্টিও তো একই পরিবারের একই মায়ের মেয়ে।
#চলমান
(কেন জানো মনে হচ্ছে গল্পটা ভালো হচ্ছে না।নিজের কাছেও কেনো যেনো অগোছালো লাগছে।এটা কি শেষ করে দিবো?)
#মেঘবৃষ্টির_গল্পকথা
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
পার্ট:০৩
(আয়েশার বাবার নাম পাল্টে সালমান উদ্দিন রাখা হলো)
বৃষ্টি:বারোটা বেজে গেছে আয়েশা,তোকে চলে যেতে বলেছি!
আয়েশা:তুই যেখানে আমি সেখানেই।
বৃষ্টি:মিস্টার সালমান উদ্দিন রাগ করবে।
আয়েশা:করলে করুক।
বৃষ্টি:আয়েশা!
আয়েশা:তুই গেলেই আমি যাবো।
বৃষ্টি আর উপায় না পেয়ে বাইকে বসলো।আর আয়েশা ওর পিছনে।ভার্সিটির পর ওরা সবাই বাইক রাইডে বের হয়েছে।আড্ডা মজা করে হাই ওয়ে তে বসেছিল।এখন সবাইকে বিদায় দিয়ে চললো।
বাড়িতে ঢুকে আস্তে করে দরজা বন্ধ করে দিল আয়েশা।
“এত রাত কেনো হলো?”
নিজের চশমা কে নাকের ডগায় উঠিয়ে প্রশ্ন করলেন সালমা বেগম।
বৃষ্টি:আরে কারিনা কাপুর!এখনও ঘুমাও নাই?
সালমা: হতচ্ছারি।তোদের টেনশনে আমার অবস্থা শেষ।তোদের বাপ রেগে ফায়ার।জলদি নিজের রুমে যা।তোদের বাপ ঘুমাচ্ছে।
আয়েশা:দিদুন এত টেনশন করো না।বৃষ্টি চল!
“এক পাও নড়বে না দুইজন।”
আয়েশা মিয়িয়ে গেলো।কিন্তু বৃষ্টি স্বাভাবিক।সালমান উদ্দিন সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলেন।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,
সালমান:রাত বারোটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট!এত রাত করে কোন ভদ্র লোকের মেয়েরা বাড়িতে আসে বলতে পারো?
আয়েশা:বাবা আসলে!
সালমান:চুপ,আয়েশা।তোমাকে বলেছিলাম ওকে নিয়ে বাড়িতে পাঁচটার মধ্যে থাকতে,আর তুমি?
বৃষ্টি:ওকে কি বলছেন? যা বলার আমাকে বলুন।কারণ লেট আমার কারণেই।
সালমান:তোমাকে আর কি বলবো?সারাদিন কিভাবে আমাকে ছোট করা যায় সেই ভাবনায় থাকো।আয়েশা,তুমিও এই বেয়াদব মেয়েটার সাথে মিশে এর মত হয়ে যাচ্ছ।
বৃষ্টি তাচ্ছিল্যের হাসি দিল।
সালমান:তোমার কারণে আমার মান সম্মান সব যাচ্ছে।সারাদিন ছেলেদের মত উদ্ভট কাজ কারবার করে বেরাও।মারপিট,আড্ডা এই সব নিয়েই থাকো!আরে তোমার স্পর্শ আংকেলের মেয়ে তিশা কে দেখো!কত টা ভদ্র।
বৃষ্টি: কারো সাথে এই স্পর্শিয়া বৃষ্টিকে তুলনা করবেন না মিস্টার সালমান উদ্দিন।আমি আমার মত।আপনাদের মন মত হওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা আমার নেই।
পিছন থেকে বৃষ্টির কাকী শর্মিলা বলে উঠলো,
শর্মিলা:দেখেছেন ভাই,আপনার মুখের উপর কথা বলে,আবার বাবা কে নাম ধরে ডাকে। কত বড় বেয়াদব।
রুমি (বৃষ্টি ও আয়েশার মা):বৃষ্টি এসব কোন ধরনের অসভ্যতামি!লজ্জা করে না,বাবাকে নাম ধরে ডাকতে।
বৃষ্টি:আদো কি উনি আমার বাবা?
সালমা:স্পর্শিয়া!এসব কি বলছিস?
বৃষ্টি:ঠিক বলছি,মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এটা আমার পরিবার।
সালমান:ভার্সিটিতে কি জন্য যাও?মারপিট করতে?
বৃষ্টি:ওরা মেয়েদের উত্যক্ত করেছে,ইভেন আমাকেও বাজে ভাবে ছুঁয়েছে!এবার বলুনতো ঠিক করেছি না বেঠিক?
সালমান:ওদের আর দোষ কি?ছেলেদের মত প্যান্ট শার্ট পরে ঘুরে বেরালে এমনি হবে।
বৃষ্টি হাসলো।
বৃষ্টি:শর্মিলা কাকী সেদিন তোমার মেয়ে কথা হাঁটু অবধি শরীর দেখানো কাপড় পরে বাজারে গিয়েছিল,আর ছেলেরা টিজ করেছিল।তাই বাবা সরি সালমান উদ্দিন লোক লাগিয়ে কি মার টাই না মেরেছে।
শর্মিলা:মাঝখানে আমার মেয়েকে টানছো কেনো?
বৃষ্টি:আমি কাওকে টানছি না।জাস্ট তফাৎ দেখাচ্ছি।আসলে কি বলুন মিস্টার সালমান,আপনার অসুবিধা পোশাক বা আমার আচরণে নয়।অসুবিধার কারণে অন্য যা আমি জানি না।আয়েশা আর কথা যেই বাড়ির মেয়ে আমিও সেই বাড়ির মেয়ে।কিন্তু ওদের বেলায় সব কিছু এক আমার বেলায় আরেক।বাধ্য হয়েও দেখেছি,কিন্তু মূল্য দেন নি।আমাকে সত্যি করে বলবেন!আপনাদের মূলত রাগ কিসের আমার উপর?
রুমি: শাসনের ওভাবে দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছো।
বৃষ্টি:শাসনের অভাব?রিয়েলি?কোন দিন নেই যেদিন আপনারা আমাকে খোটা দেন নী,শাসন করেন নী?বলুন ভালোবাসার ওভাবে পাথর হয়ে যাচ্ছি।আপনাদের মত পাষাণ মানুষের কাছে থেকে অসভ্য হয়ে যাচ্ছি।
সালমান:বৃষ্টি!
বৃষ্টি কিছু না বলে উপরে চলে গেলো।এক হাতে ছিল মুঠি করে ধরে রাগ সংযোজন করছে।কান্না আর আসে না।এখন যা আসে তা শুধু রাগ।হাত মুঠি করে জানালায় কাছে ঘুষি দিল, কাচ ফেঁটে গেলো আর তার দ্বারা বৃষ্টির হাত।রক্ত পড়ছে হাত থেকে,আর তা দেখে মানসিক প্রশান্তি পাচ্ছে বৃষ্টি।
সালমা:স্পর্শিয়া এগুলো কি করলি?
বৃষ্টি চুপ করে কাটা হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
আয়েশা ফার্স্ট এইড নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
আয়েশা:কি আর করবে?রাগ দেখাবে নিজের উপর?
বৃষ্টি:আচ্ছা কারিনা কাপুর,বলো তো ,আমি কি সত্যি উনাদের মেয়ে?
সালমা:এসব কি বলছিস?মার দিবো আরেকবার এসব বললে,আয়েশা তুই ওকে ওষুধ লাগিয়ে দে।
বলেই বেরিয়ে গেলো।আয়েশা ওকে ওষুধ লাগিয়ে খাইয়ে দিলো।তারপর দুইজন ঘুমিয়ে গেলো। সালমা নিজের রুমে খাটের উপর বসে গভীর চিন্তায় মগ্ন,তখনই ফোন বেজে উঠলো।
সালমা:বল।
ওপাশে কেও জবাব দিল,
কেও:বৃষ্টি কি করছে?
সালমা:ঘুমাচ্ছে।
কেও:আজকেও কি কোনো ঝামেলা হয়েছে?
সালমা: প্রতিদিনই হয়, মেয়েটা কষ্টে মরে যাচ্ছে,আর এসবের জন্য দায়ী তুই।না আমাকে কিছু করতে দিচ্ছিস না নিজে কিছু করছিস!কেন মেয়েটা কে এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস।আজ তোর জন্য ওকে এত কিছু সহ্য করতে হচ্ছে।তুই থাক তোর মত।ওর খবর নেওয়া লাগবে না।
বলেই কেটে দিলো।ওপাশে থাকা ব্যাক্তিটি কেঁদে দিলো।আসলেই সব তার জন্য হয়েছে।কিন্তু এখন কি করে সব ঠিক করবে।আর বৃষ্টি সত্যি জানতে পারলে কি ওকে ক্ষমা করবে?
ক্লাসে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো বৃষ্টির গ্যাং।তখনই আসলো তিশা।
তিশা: কিরে বৃষ্টি?কেমন দিলাম!
বৃষ্টি: ওহো তার মানে তুই ই মিস্টার সালমান কে মারপিটের কথা বলেছিস?
তিশা:হাহ,আমার সাথে পাঙ্গা নিতে যাস না,হেরে যাবি।
বৃষ্টি: স্পর্শিয়া বৃষ্টি কথায় কম ,কাজে বেশি করে। ডোন্ট থিঙ্ক আমি বসে থাকবো চুপচাপ ।জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি।
তখনই গার্ড এলো।
গার্ড:তানজিন তিশা কে?
তিশা:আমি!
গার্ড: প্রিন্সিপ্যাল ডাকছে।
তিশা ভরকে গেল,হুট করে প্রিন্সিপ্যাল কেনো ডাকছে?বৃষ্টির দিকে তাকাতেই দেখলো ও বাঁকা হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
তিশা:তোকে পরে দেখে নিব।
প্রিন্সিপ্যাল এর রুমে ঢুকে দেখল সেখানে স্পর্শ আর প্রিন্সিপ্যাল কি নিয়ে কথা বলছে।
স্পর্শ:এসব কি তিশা?
তিশা:কিসব বাবা?
স্পর্শ:তুমি গত এক সপ্তাহ ভার্সিটি এসেছো ঠিকই কিন্তু কোনো ক্লাস করো নি।কেনো?
তিশা চুপসে গেল।বাবাকে বরাবরই ভয় পায় ও।
স্পর্শ:কি হলো?
তিশা:আসলে..
স্পর্শ:চুপ.. স্যার আই এম সরি,এরপর থেকে এমন হবে না।আর তিশা, নেক্সট টাইম এমন হলে আমার থেকে খারাপ কেও হবে না।
বলেই বেরিয়ে গেলো।
তিশা হাত মুষ্টি করে বললো,
তিশা: আই উইল নট স্পেয়ার ইউ মিস স্পর্শিয়া বৃষ্টি।
মেঘ:এই বৃষ্টির ফোঁটা শুনো।
বৃষ্টি বিরক্তি সহকারে মেঘের কাছে গেলো।
বৃষ্টি:আপনাকে কিন্তু আমি খুন করবো।
মেঘ: সে তুমি করতেই পারো।বলছিলাম বিকেলে ঘুরতে যাবে?
বৃষ্টি:জি না।
মেঘ:আরে এমন করো কেনো?আমরা তো নিউ কাপল,তাই না।
বৃষ্টি: কাপলের গুষ্টি কিলাই।আমরা কোনো কাপল না।আপনি স্যার আর আমি স্টুডেন্ট। হুশ।
মেঘ:আরে ভবিষ্যতে তো হব।
বৃষ্টি: মরে গেলেও না।
বলেই হাটা লাগালো আর মেঘ জোড়ে বললো,
মেঘ:হব হব,তখন পুরো দুনিয়া জানবে আমাদের ব্যাপারে,সবার মুখে মুখে থাকবে মেঘ বৃষ্টির গল্পকথা।
বৃষ্টি না শোনার ভান করে চলে গেলো।মেঘ মুচকি হাসলো।বৃষ্টিকে ও এখন থেকে না প্রায় দুই বছর আগে থেকেই চিনে।মেঘের বাবা আর বৃষ্টির বাবা খুব ভালো বন্ধু।একবার পার্টিতে বৃষ্টিকে দেখেছিল।সেই থেকে ওকে ওর ভাল্লাগে।আর তার পরিণাম স্বরূপ ভালোবাসা।বৃষ্টির জন্যই তার এই ভার্সিটিতে আসা।
আভি: ও তানু।শুনো না।
তানহা: দেখুন,আপনি কিন্তু আমাকে অনেক ডিস্টার্ব করছেন।বৃষ্টি আপুকে বলে কেলানি খাওয়াবো বলে দিলাম।
আভি:সে তুমি যাই করো,দেখো বেশি কিছু তো বলি নাই।জাস্ট তোমার ফ্রেন্ড আইরিনের সাথে একটু লাইন করে দেও প্লিজ।
তানহার বুক মোচড় দিয়ে উঠলো।নিজের ভালোবাসার মানুষ তার কাছেই অন্য কাওকে জুড়ে দিতে বলছে। ছল ছল চোখে ঘুরে চলে গেলো।আর আভি ফুশ করে শ্বাস ছাড়লো।
উৎসঃ ওই নুরি।
নুরি:কি?
উৎসঃ বিভোরের ব্যাপারটা কি বলতো?
নুরি:কি?
উৎসঃ দেখ আমাদের সবাইকে ও তুই করে বললেও আয়েশা কে তুমি বলে।কারণ কি?
নুরি মুচকি হেসে বলল,
নুরি: দেয়ার সামথিং স্পেশাল ব্রো!
উৎসঃ থাপ্রাইয়া তোর স্পেশাল গিরি বের করবো।
নুরি:আরে,আজব তো! চেতিস কেন?
উৎসঃতোর কোন জন্মের ভাই লাগি, ফ্রেন্ডেরে ভাই করতে লজ্জা করে না।পেত্নী একটা।
নুরি:শালার মহিষ,তোরে উষ্টা দিবো, সর ।
রাইসা:তোরা আবার শুরু।
আদিল:জীবনেও শোধরানো যাবে না তোদের।
বৃষ্টি:ওদের শুধরিয়ে কি করবি?নিজেরা শোধরা আগে।
আদিল:মানে?
বৃষ্টি:ইহ,মানে? যেনো ভাজা মাছ টা উল্টে খেতে জানে না।তুই আর রাইসা ইটিশ পিটিস করবি আর আমরা কেও জানবো না।
উৎস,নুরি চোখ ছোট ছোট করে তাকালো।রাইসা আর আদিলের মুখ চুপসে গেলো।
বিভোর:কি নিয়ে কথা বলতেছিস?
বৃষ্টি:তোর বিয়ে নিয়ে।
বিভোর মেয়েদের স্টাইলে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিমা করে বললো,
বিভোর:সত্যি,কবে রে? আহ.. মরে যাই মরে যাই। মোর বিয়া।আহা।উফ,কি আনন্দ যে লাগছে।
ওর কাণ্ড দেখে বৃষ্টি বির বির করে বললো,
বৃষ্টি:শালা হাফ লেডিস!
#চলমান
(পরীক্ষা সামনে, তাই একটু অনিয়ম হবে)