#মেঘবৃষ্টির_গল্পকথা
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
পার্ট:04+05
বিভোর: হাফ লেডিস কাকে বললি?
আয়েশা: অভিয়াসলি তোমাকে!
বিভোর কটমট চোখে তাকালো।
উৎসঃ বাই দা অটো রিক্সা,বৃষ্টি এই মেঘের ব্যাপারটা কি?মানে বুঝলাম না,ফার্স্ট দেখায় এত পাগল।
বৃষ্টি:এগুলো কিছুই না।জাস্ট আমাকে উত্যক্ত করার উপায়।
আদিল:তোকে কেন উত্যক্ত করবে।
বৃষ্টি:জানি না,বাদ দে।
তখনই বৃষ্টির ফোন মেসেজ আসে।
“আমাকে নিয়ে না ভেবে ভার্সিটি থেকে বের হও,আমি গেটে।”
বৃষ্টি ভাবতে লাগলো এটা আবার কে?
তখনই আবার মেসেজ,
“জামাই কে এত জলদি ভুললে চলবে,মেঘ!বৃষ্টির মেঘ।জলদি আসো”
বৃষ্টি:ইহ,উনি বলল আর আমি যাবো,কাজ নাই আর।
আবারো মেসেজ,
“না আসলে,তুলে নিয়ে আসবো। মেঘালয় মেঘকে তুমি চিনো না।”
বৃষ্টি:হাহ,আমিও স্পর্শিয়া বৃষ্টি, যাবো না মানে যাবো না।
নুরি:বইন,যদি সত্যি তুলে নিয়ে যায়।
বৃষ্টি:আমাকে কি তোর অন্য সবার মত মনে হয়।
রাইসা:কিন্তু..
মেঘ: হাই!
আয়েশা:এত সত্যি সত্যি এসে গেছে।
মেঘ:চলো।
বৃষ্টি: মগের মুল্লুক নাকি?
মেঘ:আম..দেখো আমি জানি তুমি চাচ্ছো তোমাকে আমি কলে তুলে নিয়ে যাই,কিন্তু দেখো, ভার্সিটি তে কত লোক।তোমার তো লজ্জা লাগবে,তাই না ।
বৃষ্টি স্তব্ধ চোখে তাকালো।এই লোক কি পাগল?
বৃষ্টি:দেখুন, স্যার বলে আপনাকে রেসপেক্ট করছি,তার মানে এই না যে যা ইচ্ছা তাই করেন।
মেঘ:তুমি যাবে?
বৃষ্টি:না!
মেঘ:ওকে
বলেই কোলে তুলে নিলো।আর গাড়ির উদ্দেশ্যে হাটা লাগালো।
বৃষ্টি:ওই মিয়া নামান।দেখেন ভালো হচ্ছে না।আমাকে কিন্তু এখনও চিনেন না।আমি কিন্তু আপনাকে খুন করে ফেলবো।
মেঘ এসবে কান দিচ্ছে না।বৃষ্টি ছোটাছুটি করেই যাচ্ছে।ওদের পিছু পিছু আয়েশারাও এলো।মেঘ বৃষ্টিকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে বসলো।
বৃষ্টি:আপনি কিন্তু আপনার লিমিট ক্রস করছেন।আপনার সাহস তো কম না এই বৃষ্টিকে ছুঁয়েছেন।আপনাকে আমি ..
মেঘ:চুপ..খালি প্যাক প্যাক করে(ধমক দিয়ে)
ধমক শুনে বৃষ্টি কিছুটা ভয় পেলো।
মেঘ:আরেকটা কথা বললে মাথায় তুলে আছার মারবো।মুখে আঙ্গুল দিয়ে বসে থাকো।জলদি(ধমক দিয়ে)
বৃষ্টি জলদি করে মুখে আঙ্গুল দিল, তা দেখে মেঘ মুচকি হাসলো।
বাইরে থেকে আয়েশা,
আয়েশা:চিমটি মি!
নুরি:আমাকেও!
রাইসা:সেম।
উৎস,বিভোর,আদিল,আভি:বৃষ্টি কারোর ধমকে চুপ হলো!!
নুরি,রাইসা,আয়েশা:সিরিয়াসলি!!
ব্যাপারটা ওদের কাছে পানি আর তেল এক সাথে মিশার মত।যেই বৃষ্টি থ্রেট এ ভয় পায় না ,সে সামান্য ধমকে ভয় পেলো!
এদিকে মেঘ গাড়ি চালাচ্ছে।বৃষ্টি একবার ওর আঙ্গুল দেখছে আর একবার মেঘকে।ওর নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না,মেঘের ধমকে ও চুপ করে গেছে।
বৃষ্টি:শালার হাত,তুই নিজে নিজে কেন আমার মুখ বন্ধ করালি।আমি তোর মালিক নাকি ওই মেঘ তোর মালিক?(মনে মনে)
মেঘ:তো মিস,কিছু খাবেন?
বৃষ্টি ডানে,বামে মাথা নাড়ল।
মেঘ:বাহ আমার এক ধমকে এত ইমপ্রুভ যে এখনও মুখে হাত দিয়ে আছো।
বৃষ্টি চট পট হাত নামালো। তা দেখে মেঘ জোড়ে জোড়ে হেসে দিল।বৃষ্টি নিজের মাথায় নিজে থাপ্পড় মারলো।
বৃষ্টি:তোর হটাৎ কি হলো রে বৃষ্টি?এমন উদ্ভট কাণ্ড কেন করছিস?পাগলে ধরেছে? কুল কুল!(মনে মনে)
মেঘ কিছু সময় পর এক ফুচকার দোকানের সামনে থামলো।বৃষ্টি এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।ছোটো বেলায় আয়েশার সাথে মজা করে ফুচকা খেতো।ফুচকা নাকি মেয়েদের প্রিয় খাবার।কিন্তু যবে থেকে জেনেছে এই মেয়ে হয়ে বাঁচলে কষ্ট আরো দ্বিগুণ পাবে তবে থেকে এই অভ্যাস ছেড়েছে।
মেঘ: চলো ফুচকা খাবো।
বৃষ্টি:আমি খাবো না।আপনার এত শখ থাকলে আপনি ই খান।আর আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসুন ।
মেঘ ওর কথা না শুনে ওকে টেনে নামিয়ে ফুচকার দোকানে নিয়ে গেলো।
বৃষ্টি:দেখুন,আমি খাবো না।আমার এসব ভালো লাগেনা।
মেঘ:তুমি কি এলিয়েন?
বৃষ্টি:মানে?
মেঘ:প্রত্যেক মেয়ে ফুচকার উপর পি এইচ ডি করেছে।আর তুমি বলছো খাবে না?
বৃষ্টি:আমাকে অন্যদের সাথে তুলনা করবেন না।
মেঘ: নিম পাতা একটা। এত তিতা কেন কথা?একটু মিষ্টি করে,মুচকি হেসেও তো কথা বলতে পারো!!
ততক্ষণে ফুচকা চলেও আসছে।
মেঘ:নেও হা করো।
বৃষ্টি:না।
মেঘ:হা করো।
বৃষ্টি:না মানে না।আমি খাবো না।
মেঘ:চুপ..বলছি না হা করতে,তাহলে?একদম কথা বলবে না।হা করো।(ধমকে বললো)
বৃষ্টি ধমক শুনে হা করলো।মেঘ যত্ন সহকারে ফুচকা খাইয়ে দিলো।বৃষ্টি অবাক চোখে দেখছে।আসলে মেঘ চায় কি?খাওয়া শেষে দুই জন বেরিয়ে গেলো।
এভাবে কেটে গেলো বেশ কয়েক দিন।বৃষ্টি বেশ বিরক্ত মেঘের কাজে ।তাই বিভোর কে একটা প্ল্যান বললো আর সেই মোতাবেক কাজ করতে বললো।আজও মেঘ বৃষ্টিকে নিয়ে এসেছে।ওকে নিয়ে নদীর পাড়ে হাটাহাটি করলো।বৃষ্টির কেনো জানি আর বিরক্ত লাগছে না এসব।অন্য মেয়েদের মত সেও প্রকৃতি উপভোগ করতে ব্যাস্ত।
মেঘ:দেখো আমি জানি তুমি আমার উপর বিরক্ত।কিন্তু বৃষ্টি প্রত্যেকের লাইফে প্রিয় মানুষ কে নিয়ে কিছু কল্পিত শহর থাকে।আমি জানি তুমি অন্য মেয়েদের মত নও কিন্তু তাও আমি এই তুমি টাকেই ভালোবাসি।দুইবছর আগে তোমার বোন আয়েশার বার্থডে তে তোমাকে দেখেছিলাম।তুমি সবার সামনে আসো নি।আড়ালেই অনুষ্ঠান দেখছিলে।কেনো যেনো একটা মায়ায় পড়ে গেছিলাম।সারাদিন তোমার কথা ভাবা নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।আর এই অভ্যাস কে কখন ভালোবেসে ফেলেছি জানি না।শুধু এত টুকু জানি এই অভ্যাস কে বাস্তবে পরিণত করে সারাজীবন চলতে চাই।ভালোবাসতে চাই।
বৃষ্টি চুপ করে সবটা শুনলো।কিছু বললো না।
সন্ধে সাত টায় মেঘ ওকে বাড়ি দিয়ে গেলো।বৃষ্টি সোজা নিজের রুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে বসে ভাবতে লাগলো ,”যেই কাজ করেছে তা কি ঠিক?ভুল করছে নাতো ও?”
তখনই ফোন বেজে উঠলো,
বিভোর:কাজ হয়ে গেছে,এখন মেঘ কে এই ভার্সিটি ছাড়তে হবে।
বৃষ্টি কিছু না বলে কেটে দিল। ও যা করলো, ঠিক করলো কি?বৃষ্টি বিভোর কে দিয়ে মেঘের নামে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছে যে মেঘ স্টুডেন্টদের পরীক্ষার প্রশ্ন টাকার বিনিময়ে দিয়ে দেয়।আর প্রমাণ স্বরূপ নকল ছবি।বৃষ্টি চায় মেঘ ওর থেকে দূরে থাকুক।কিন্তু এখন এই জিনিষ ওকে ভাবাচ্ছে। ও কি ঠিক করছে?
সালমা:কিগো কি ভাবছেন?
বৃষ্টি:আরে কারিনা তুমি?
সালমা:এই তুই আমাকে কারিনা বলিস কেন?
বৃষ্টি:আরে আমার দিদুন কত কিউট সা দেখতে।কারিনা কাপুর এর মত।তাই তো ডাকি।
বলেই হাসি দিল।সালমা বেগম অবাক হলেন।
সালমা:আজ কেন জানি মনে হচ্ছে তুই মন থেকে হাসছিস!
বৃষ্টি চুপ হয়ে গেলো।মাত্র কয়েক দিনে ওর এত পরিবর্তন?
সালমা:দি ভাই,একটা কথা বলবো?
বৃষ্টি:বলো।
সালমা:কখনো যদি জানতে পারো,তোমার থেকে এমন এক সত্যি লুকানো হয়েছে, যা তোমার কষ্টের কারণ তখন কি করবে?
বৃষ্টি:হটাৎ এই প্রশ্ন?
সালমা:না এমনেই।
বৃষ্টি: জানা নেই।
দিদুন আর কিছু বলল না।বৃষ্টি নিজের ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেলো।
পরের দিন মেঘ ক্লাস করাচ্ছে,এমন সময় প্রিন্সিপ্যাল ডাকলো।মেঘ বেরিয়ে গেলো।বৃষ্টি উদাস চোখে তাকিয়ে আছে।ওর কেনো ভাল্লাগছে না এসব?কেনো মনে হচ্ছে ওর ঠিক করছে না?আগে তো এমন হয় নি।আগেও এমন অনেক কে নিজের থেকে দূরে রাখার জন্য এমন করেছে।কই তখন তো এত খারাপ লাগে নি ওর।এখন কেনো লাগছে?
“মিস্টার মেঘালয় মেঘ, ইউ আর ফায়ারড”
#চলমান
(পরশু এক্সাম🙂🔪দোয়া প্রার্থী)
#মেঘবৃষ্টির_গল্পকথা
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
পার্ট:০৫
দু হাতে মাথা চেঁপে ধরে আছে মেঘ।কে এত বড় মিথ্যা অভিযোগ দিল বুঝতে পারছে না? প্রিন্সিপ্যাল কে হাজার বোঝানোর পরও বিন্দু মাত্র বুঝে নি।বের করে দিয়েছে তাকে।এদিকে ক্লাস শেষে বৃষ্টিরা বের হতেই গাছ তলায় মেঘ কে বসে থাকতে দেখলো।
বিভোর:আহারে,বেচারা!বৃষ্টির সাথে লাগতে এসে ভুগছে।
বলেই এক দফা হাসলো ওরা।কিন্তু হাসলো না বৃষ্টি।এই মনমরা মেঘকে দেখতে ওর একদম ভালো লাগছে না।ব্যাপারটা আয়েশা লক্ষ করল।কিন্তু কিছু বললো না।
বিভোর:বৃষ্টি ,আজকে পার্টি হবে।চল!
বৃষ্টি:তোরা যা,আমি পরে আসছি।কিছু কাজ আছে।
আদিল:কিন্তু…
বৃষ্টি:বললাম না যা।
ওরা আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো।বৃষ্টি বড় করে নিশ্বাস নিয়ে ,মেঘের পাশে গিয়ে বসে পড়লো।এদিকে পাশে কেও বসেছে টের পেয়ে মেঘ তাকালো।বৃষ্টিকে দেখে খানিকটা চমকালো। এই মুহূর্তে বৃষ্টিকে কোনোভাবেই আশা করে নি ও।
বৃষ্টি:মন খারাপ?
মেঘ:হুমম,কিছুটা।
বৃষ্টি:কারণ?চাকরি থেকে বের করে দিয়েছে বলে?
মেঘ:না,আমার নামে এই মিথ্যা অপবাদ এসেছে বলে।
বৃষ্টি জিজ্ঞাসাশুচক দৃষ্টিতে তাকালো।
মেঘ:লাইফে আমি প্রায়োরিটি দেই আমার বাবা-মা,চরিত্র আর প্রিয় মানুষকে।সেখানে আমাকে বলা হচ্ছে আমি নাকি স্টুডেন্টদের টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন সাপ্লাই করি। যা আমার চরিত্রে এক বড় অপবাদ, তা মানতে কষ্ট হচ্ছে।কে করলো,কেনো করলো,বুঝছি না।কিন্তু তার কারণে আজ বিষিয়ে গেলাম।একবার যদি জানতে পারি সে কে,এই জনমে তাকে ছাড়বো না।কারণ সে আমার চরিত্রে আঘাত হেনেছে।
বৃষ্টি চুপ করে রইলো।
মেঘ:ভার্সিটি আসার মূল কারণ তুমি,নাহলে বাবার অফিস ছেড়ে এই ভার্সিটির টিচার হওয়ার উদ্দেশ্য আমার কোনো কালেই ছিল না।কিন্তু…
বৃষ্টি:আচ্ছা বাই,আমার কাজ আছে।
মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।কিছু বললো না।বৃষ্টি উঠে গেটে চলে গেলো।বৃষ্টি বুঝতে পারছে বড় ভুল করেছে।অনেক বড় ভুল।এতদিন এই দিকটা ভাবে নি।এর আগে তিনজনকে বের করেছে এইভাবে।অবশ্য দোষ তাদের ছিল। তারাই বৃষ্টি আর ভার্সিটির আরো মেয়েকে বাজে ভাবে দেখতো।স্পর্শ করতো।তাই তাদের সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আফসোস নেই।কিন্তু মেঘের ব্যাপারটা আলাদা। ও না কোনো মেয়েকে বাজে ভাবে দেখেছে ,সেখানে স্পর্শ করাতো দূর।বৃষ্টি ঘুরে হাটা দিলো। উদ্দেশ্য প্রিন্সিপ্যাল এর রুম।নিজের রুমে বসে নিউ লেকচারার দরকার বিজ্ঞাপন লিখছেন প্রিন্সিপ্যাল।তখনই টোকা পড়লো দরজায়।
প্রিন্সিপ্যাল:ইয়েস কাম ইন।
বৃষ্টি: আসসালামু আলাইকুম!
প্রিন্সিপ্যাল বিস্মিত চোখে তাকালো।বৃষ্টিকে এখানে আশা করেননি,সেখানে এমন ভদ্র ব্যাবহার।
প্রিন্সিপ্যাল:তুমি?
বৃষ্টি রুমে ঢুকে দরজা আবজিয়ে মাথা নিচু করে দাড়ালো। প্রিন্সিপ্যাল অবাকের উপর অবাক।যেই বৃষ্টি মাথা উচু ছাড়া কথাই বলে না,সে আজ মাথা নিচু করে আছে।বৃষ্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলা শুরু করলো,
বৃষ্টি:স্যার,আমি স্পর্শিয়া বৃষ্টি।গত কাল আপনাকে যেই তথ্য দেওয়া হয়েছে,অর্থাৎ বলা হয়েছে যে মিস্টার মেঘালয় মেঘ স্টুডেন্টদের টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন সাপ্লাই করে,সেটা সম্পূর্ণ ভুল ও বানানো প্রমাণের সাপেক্ষে।
প্রিন্সিপ্যাল:তুমি যে ভুল বলছো না ,তার প্রমাণ?
বৃষ্টি নিজের ফোন বের করে অরজিনাল ফটো বের করলো যেখানে কাবার্ড ওয়ালা কাগজ দিচ্ছে।সেটাকেই এডিট করে মেঘের প্রতিচ্ছবি বসিয়েছে।
বৃষ্টি:আমি জানি আমি যা করেছি ঘোর অন্যায়,এইজন্য আপনি চাইলে আমায় শাস্তি দিতে পারেন।আমি মাথা পেতে নিবো।কিন্তু অনুরোধ একটাই,মেঘ স্যার যেনো কিছু না জানে প্লিজ স্যার!
প্রিন্সিপ্যাল:বেশ জানবে না।আর সত্য স্বীকারের জন্য তোমায় সাজা পেতে হবে না।ওয়ার্ড বয়,মিস্টার মেঘালয় মেঘ কে ডাকো।
বৃষ্টি:আমি আসছি স্যার।
বলে বেরোতে নিলেই প্রিন্সিপ্যাল বলে উঠলো,
প্রিন্সিপ্যাল:মিস বৃষ্টি,আপনার মধ্যে এত পরিবর্তন কি মিস্টার মেঘের জন্য?
বৃষ্টি প্রশ্ন শুনে থমকে দাড়ালো।কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। প্রিন্সিপ্যাল মুচকি হাসলো।এই বয়সটা তারও পার করা।
মেঘ:স্যার ডেকেছেন।
প্রিন্সিপ্যাল:ওহ মেঘ, একচুয়ালি আ’ম সরি।কিছু ভুল ইনফরমেশন এ আপনাকে অপদস্ত হতে হলো।ব্যাপারটা সম্পূর্ণ বানোয়াট ছিল যা আমি বুঝতে পারি নি।তাই আপনার কাছে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
মেঘ:কাজটা কে করেছে?
প্রিন্সিপ্যাল:সরি সেটা বলতে পারছি না।
মেঘ:কিন্তু..
প্রিন্সিপ্যাল:প্লিজ!
মেঘ আর কথা বাড়ালো না,বেরিয়ে গেলো।
রাস্তায় আনমনে হাঁটছে বৃষ্টি।বার বার নিজেকে প্রশ্ন করছে।তুই কি পাল্টে গেছিস? দিদুনের সেদিনের কথা আর আজকে প্রিন্সিপ্যাল এর কথা ওকে বিষিয়ে তুলছে। ও পাল্টে গেছে? কার জন্য?মেঘ?আর ভাবতে পারছে না ও।মাথাটা ওর ঝিম ধরে গেছে।এদিকে কে সামনে গাড়ি আসছে তার বিন্দু মাত্র উপস্থিতি ওর মাঝে নেই। ও নিজে ভাবনা নিয়ে ব্যাস্ত,হুট করে কেও টান দিতেই তার বুকে গিয়ে পড়লো বৃষ্টি।বৃষ্টি ভয় পায় নী ,তবে যার বুকের মাঝে সে আছে,তার হার্ট বিট শুনেই মনে হচ্ছে,বৃষ্টির থেকে তার ভয় অনেক বেশি।বৃষ্টি চোখ তুলে তাকিয়ে আবিষ্কার করলো মেঘকে।মেঘ এর চোখে ভয়।হারানোর ভয়! যা বৃষ্টি দেখতে পারছে।
মেঘ: আর ইউ ম্যাড?এখনই তো কিছু হয়ে যেতো!
বৃষ্টি কিছু না বলে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘ যে তাকে বকছে,সেদিকে ওর খেয়াল নেই।শুধু দেখছে সামান্য ব্যাপারে মেঘের হাইপার্নেস কে।
মেঘ একটু শান্ত হলো।বৃষ্টির কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলল,
মেঘ: কেনো এমন করো? বুঝো না কষ্ট হয়?
বৃষ্টি কিছু না বলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।চুপচাপ হাটা লাগলো।বাড়িতে কারো সাথে কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেল।আকাশের দিকে আনমনে তাকিয়ে ভাবছে,
“আমি কি ভালোবাসি মেঘ কে?”
তখনই আসলো আফিয়া,তিশার মা।
আফিয়া:বৃষ্টি!
বৃষ্টি:হুমম।
আফিয়া:দেখ এই শাড়িটা,তোদের ফেয়ার ওয়েল এ পড়ার জন্যদারুন না!
বৃষ্টি হাসলো।দিদুন আর আয়েশার পরে এই আফিয়া আর স্পর্শ আংকেল ই ওকে ভালোবাসে।
বৃষ্টি:আমি শাড়ি পড়ি না,মামনি(বৃষ্টি আফিয়া কে মামনি বলে)
আফিয়া:পড়িস না মানে কি?পড়তে হবে।নাহলে রাজকুমার খুজবো কিভাবে?
বৃষ্টি: যার লাইফ টাই কষ্টের মশগুর তার আবার রাজকুমার!
তাচ্ছিল্যের হাসিতে কথাটা বললেও আফিয়ার বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো।
আফিয়া:এটা আমার শাড়ি,বিয়ের আগের।বেশ দারুন,তাই তোকে দিলাম।
বৃষ্টি:কি আজব না?যেখানে আমার মাকে এসব করার কথা ছিল সেখানে তুমি এসব করছো।আর তিশা কি এসব মেনে নিবে?
আফিয়া:ওর মানা তে কিছু যায় আসে না। আর ধরে নে না,আমি ই তোর মা।
বৃষ্টি ছল ছল চোখে বললো,
বৃষ্টি:সত্যি যদি হতে,হয়তো আজ ব্যাপারটাই অন্য হতো।
আফিয়া আর কিছু বলতে পারলো না।শাড়িটা খাটের উপর রেখে বেরিয়ে গেলো।তখনই কেও আফিয়ার হাত টেনে নিয়ে গেল নিজের ঘরে,আর দরজা বন্ধ করে দিল।
আফিয়া:মা!
সালমা:কেনো এসেছিস এখানে?
আফিয়া:বৃষ্টি..
সালমা:চুপ,ওর নাম নিবি না।মেয়েটা আজ তোর জন্য এত কষ্ট পাচ্ছে।আরে কমছে কম যদি সবাইকে সত্যি টা বলতে দিতি তাহলে হয়তো ও কিছুটা হলেও সুখে থাকতো।
আফিয়া:আমি নিরুপায় ছিলাম
সালমা:না,তুই নিরুপায় না,তুই শুধু নিজের সুখের কথা ভেবে গেছিস!ওই মেয়েটার কথা ভাবিস নাই,তোর কি মনে হয় যদি কখনও বৃষ্টি সত্যি জেনে যায় আর সত্যি জানার পর ও কি তোকে ভালোবাসবে?
আফিয়া বিস্ফোরিত চোখে তাকালো, আসলেই তো সত্যি জানার পর বৃষ্টি কি ওকে এভাবে ভালোবাসবে?
এদিকে,
বৃষ্টি কিছু ভাবতে না পেরে আয়েশার কাছে গেলো। আয়েশাই বলতে পারবে ও কি ভালোবাসে মেঘকে!বৃষ্টি আয়েশার রুমে গিয়ে চমকে গেলো।আয়েশা হাঁটু মুড়ে বসে কাঁদছে।রুমের জিনিস পত্র ও ছড়িয়ে আছে।বৃষ্টি ওর কাছে গিয়ে বসলো।
বৃষ্টি:আয়েশা কি হয়েছে?
আয়েশা:আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে রে বৃষ্টি।বাবা তার বন্ধুর ছেলের সাথে ঠিক করেছে।কিন্তু আমি যে অন্য কাওকে ভালোবাসি।
বৃষ্টি: লে হালুয়া।তাহলে তোর বাপকে বল! সে তো তোর কথা শুনবে!
আয়েশা:বাবা ওকে দু চোখে সহ্য করতে পারে না।
বৃষ্টি:বাহ,আমি ছাড়াও সালমান উদ্দিন কাওকে সহ্য করতে পারে না।আচ্ছা হ্যা 🥴
আয়েশা অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,
আয়েশা:ছেলেটা আর কেও না,বিভোর!
বৃষ্টি:মার ডালা🤐
#চলমান
(পরীক্ষা চলতেছে🥴কেও ভাববেন না এটা আজকে লিখছি।আগে লেখা ছিল।আজকে দিলাম🤐)