মেঘবৃষ্টির গল্পকথা -(পার্ট:১৩)

0
484

#মেঘবৃষ্টির_গল্পকথা
#লেখনীতে_সাবরিন_জাহান
পার্ট:১৩

হলুদ ডে,
বৃষ্টিঃ তিশা!

তিশাঃ কি?

বৃষ্টিঃ আমার ফোন কই?

তিশাঃ আমার কাছে।

বৃষ্টিঃ দে।

তিশাঃ নো ওয়ে!

বৃষ্টিঃ কেন?

তিশাঃ বিয়ের আগে বর কনের কথা নিষিদ্ধ।

বৃষ্টিঃ কোন গ্রন্থে লেখা আছে?

তিশাঃ তা জানি না,তবে নিষিদ্ধ। ওকে টাটা।

বলে চলে যেতে নিলো।

বৃষ্টিঃ কালকে রাতের কাহিনী শুনবি না তিশা?

তিশা ঘুরে বললো,
তিশাঃ তোদের আজাইরা কাহিনী শোনার জন্য ফোন আমি দিবো না।

বৃষ্টিঃবেশ,তবে আমিও বলবো না দুল্লু এসেছিল।

তিশা ভ্রু কুচকে তাকালো।

তিশাঃমানে?

বৃষ্টিঃঅর্ক বড় দেবর দুলাভাইজি এসেছিল কালকে।

তিশা নড়ে চড়ে উঠলো। বৃষ্টির পশ ঘেষে বসলো।
তিশাঃসত্যি এসেছিলো?

বৃষ্টিঃ আমি বলবো না।

তিশাঃ আরে বল না।

বৃষ্টিঃমোবাইল প্লিজ!

তিশা মুখ ফুলিয়ে মোবাইল এনে দিলো।

তিশা:এবার বল!

বৃষ্টি:মাঝরাতে আমি ঘুরতে যাওয়ার পর চুপি সারে কেও রুমে এসে নিজের প্রেয়সীকে দেখে মনের ব্যাকুলতা কে শান্ত করতে কেও এসেছিল।বাকিটা তোর দায়িত্বে বুঝে নে।
বলে হেলতে দুলতে চলে গেল।তিশা ওখানেই দম মেরে বসে রইলো।

আয়েশা:বৃষ্টি!

বৃষ্টি:হুমম।

আয়েশা:কি হলো তোর?হলুদ শেষ হয়েছে সেই কবে,তুই এখনও চেঞ্জ করিস নাই।

বৃষ্টি:যাচ্ছি!
আয়েশা:কি হয়েছে তোর?

বৃষ্টি দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
বৃষ্টি:জানি না,কেন জানি চিন্তা হচ্ছে।সব কেমন শান্ত!ঝড়ের পূর্বাভাস।

আয়েশা:এমন মনে হওয়ার কারণ?

বৃষ্টি:বিকেল থেকে মেঘকে ট্রাই করছি।ধরছে না।

আয়েশা: ওহো,এবার বুঝলাম।তুই ফ্রেশ হয়ে আয় ,দেখবি মেঘ তোর সামনে। যা।

বৃষ্টি মুচকি হাসলো আয়েশার অবাস্তব কথা শুনে।ফ্রেশ হয়ে একটা সাদা থ্রি পিস পরে নিলো।বের হওয়ার সাথে সাথে ওর চোখ কপালে।মেঘ টিশার্ট আর ট্রাওজার পড়ে সোফায় বসে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে,বাসায় যেমন ছিল চলে আসছে।

বৃষ্টি:আপনি?

মেঘ:আয়েশা বললো,আমার বউটা নাকি আমায় খুব মিস করছে!

বৃষ্টি:ফোন ধরছেন না কেনো?

মেঘ:আরে ভাই ফোন দিচ্ছিলো না।

বৃষ্টি:তিশার মত!

মেঘ:তোমাকে তো তাও দিয়ে দিলো!

বৃষ্টি মেঘের পাশে বসে বললো,

বৃষ্টি:বুদ্ধি থাকলে উপায় হয়!

মেঘ:মানে?

বৃষ্টি:অর্ক ভাইয়া কালকে রাতে এসেছিল!

মেঘ:কি?

বৃষ্টি:হুমম!

ফ্ল্যাশব্যাক
মেঘ:বাড়ি যাবে না?

বৃষ্টি:আরেকটু থাকি?

মেঘ:নো,ঠান্ডা লাগবে চলো।

বৃষ্টি মেঘের সাথে হাটা লাগালো।
বৃষ্টি:এই মিস্টার ক্যাবলা কান্ত।

মেঘ বৃষ্টির দিকে তাকালে বৃষ্টি রাস্তায় বসে পড়লো।

মেঘ: কী হলো?

বৃষ্টি: পা ব্যাথা করছে!

মেঘ:আচ্ছা আরেকটু হাটো,সামনে দেখি কিছু পাই কিনা!

বৃষ্টি:না,আমি আর হাঁটবো না।

মেঘ:আরে বাড়ি যেতে হবে।

বৃষ্টি হাত বাড়িয়ে বললো,
বৃষ্টি: কোলে!

মেঘ ফিক করে হেসে দিল বৃষ্টির বাচ্ছামো দেখে,বৃষ্টি গাল ফুলিয়ে রইলো।মেঘ বৃষ্টির কাছে গিয়ে বসলো,

মেঘ:মিস,আপনি কিন্তু বেশ দুষ্টু হয়ে গেছেন।

বৃষ্টি:বর রোমান্টিক না হলে বউকে দুষ্টু হতেই হবে।

মেঘ চট করে বৃষ্টিকে কোলে তুলে নিলো।
মেঘ:বেগম সাহেবা,বিয়েটা হতে দিন।তখন দেখবেন এই ক্যাবলা কান্তর রোমান্টিকতা।

বৃষ্টি হাসলো।মেঘ বাকিটা রাস্তা বৃষ্টি ওভাবেই নিয়ে আসলো।রুমে আসতেই কালো অবয়ব দেখে চিৎকার দিতে নিলেই অবয়বটি বৃষ্টির মুখ চেপে ধরলো।
অর্ক:বৃষ্টি,এটা আমি।অর্ক!

বৃষ্টি:উম উম..

অর্ক:কি হলো?

বৃষ্টি হাতের ইশারা করলো।অর্ক ছেড়ে দিল।

অর্ক:সরি।

বৃষ্টি:আপনি এত রাতে?

অর্ক:ওই দেখতে আসলাম।

বৃষ্টি:কাকে?

অর্ক:আম..
বৃষ্টি:তার মানে দুলাভাই?

অর্ক:বলিয়ে শালী সাহেবা!

বৃষ্টি: ওয়া কেয়া বাত হ্যাঁ!

অর্ক:হুমম,সিক্রেট রাখবে,ওকে?

বৃষ্টি:ওকে!

অর্ক বেরিয়ে গেলো।
বৃষ্টি তিশার পাশে শুয়ে পড়লো।কিন্তু ঘুম আসছে না।চারটা বেজে যাচ্ছে।তখনই ফোন বেঁজে উঠলো।

মেঘ: ঘুমাও নি কেনো?

বৃষ্টি:আসছে না।

মেঘ:গান শুনবে?

বৃষ্টি:হুমম

মেঘ:”ও তুই যাসনে বেশি দূর,আমার গায়ে লাগে রোদ্দুর।
আমার হৃদমাঝারে আয়,
নিয়ে যাবো অচিনপুর।”

বৃষ্টি মুচকি হেসে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেলো।বৃষ্টি ঘুমিয়েছে বুঝতে পেরে মেঘও ওইভাবেই ঘুমিয়ে গেলো।

ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড

মেঘ: এ দেখি আমার থেকেও ফার্স্ট।

বৃষ্টি:হুমম

মেঘ:মুড অফ?

বৃষ্টি:নাতো!

মেঘ:তাহলে কি হয়েছে? টেন্সড লাগছে তোমায়!

বৃষ্টি:জানি না,খুব ভয় করছে!

মেঘ:কিসের?

বৃষ্টি:আপনাকে হারানোর।

মেঘ:বলেছিলাম না?মেঘ বৃষ্টি একে অপরকে ছাড়া মূল্যহীন।

বৃষ্টি:জানি তো ,তবুও!!

মেঘ:আচ্ছা এবার আমকে তুমি করে অন্তত বলো,আফটার অল বিয়ে করছি।

বৃষ্টি: আপনি’ই ঠিক আছে।

মেঘ:না,তুমি।

বৃষ্টি:না আপনি।

মেঘ:তুমি

বৃষ্টি:আপনি।

মেঘ:তুমি…

বৃষ্টি:আপনি…

মেঘ:আপনি..

বৃষ্টি:তুমি..

বলেই মুখ চেপে ধরলো,মেঘ উচ্চস্বরে হেসে দিল।
বৃষ্টি:ধুর!
বলে উঠতে নিলেই মেঘ আবার টেনে বসালো।
মেঘ আস্তে করে বৃষ্টির চুলে হাত গুজলো।
বৃষ্টি:কি করছেন?

মেঘ বৃষ্টির ঠোঁটে আঙ্গুল রেখে বললো,
মেঘ:চুপ!

আস্তে আস্তে বৃষ্টির ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।বৃষ্টি সোফা খামচে ধরে বসে আছে। ঠোঁট ছুঁয়ে দিবে এমন সময় কেও বলে উঠলো,”আমি কিছু দেখি নি”
মুহূর্তেই ছিটকে সরে গেলো বৃষ্টি।

তিশা উল্টো দিকে ঘুরে আছে।

মেঘ:শালী সাহেবা,দিলেন তো সব ভেস্তে।

তিশা:আরে জিজু,আমার কি দোষ?আমি কি জানি নাকি আপনি এখানে?

মেঘ:আচ্ছা উল্টো কেন ঘুরে আছেন? রোমান্সের অলরেডী বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন।

তিশা মেঘের দিকে ঘুরে বললো,
তিশা:সরি।

মেঘ: ইটস ওকে,বিয়ের পর প্রচুর টাইম আছে।

তিশা: তাতো আছেই।

বৃষ্টি বির বির করে বললো,
বৃষ্টি:অতিরিক্ত অসভ্য দুইটা।

বিয়ের দিন,
তিশা এক হাতে লেহেঙ্গা ধরে আরেক হাতে ফুলের ডালা সাজাচ্ছে, বর পক্ষের সবাই এসেছে মেঘ বাদে।সে তার বউ এর জন্য উপহার কিনতে গেছে।তাই ওদের আগে পাঠিয়ে দিয়েছে।

অর্ক: হ্যাল্লো!

তিশা না দেখার ভান করে এগিয়ে গেলো।

অর্ক:ওই চিম্পু,কি হলো?

তিশা: চিমপু কাকে বললেন?

অর্ক:তোমাকে!

তিশা:কি আমি চিম্পু?

অর্ক:ইয়েস!

তিশা: আপনাকে উষ্টা দিবো বলে দিলাম।

অর্ক:ছি ছি!এসব কি কথা?

তিশা:মাঝরাতে আপনি আমার রুমে এসেছেন!

অর্ক:বৃষ্টি বলে দিল!

তিশা: হ্যাঁ,বেশ করেছে।

অর্ক:বউয়ের রুমে গিয়েছি,তাতে কার কি?

তিশা ভ্রু কুচকে তাকালো।কিছু না বলে চলে গেলো।অর্ক মাথা চুলকালো

বৃষ্টি:মেঘ এসেছে?

আয়েশা:না,বৃষ্টি।তুই হাইপার হচ্ছিস কেন? ও আসবে।

বৃষ্টি:জানি না।কিছু ভালো টিকছে না।

ওদিকে,
রাহাত: বর যেনো ,বিয়ে বাড়ির সামনে অবধি যেতে না পারে।জাস্ট কিল হিম।

ওপাশে:ওকে বস।

কল কেটে অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়লো রাহাত।
রাহাত: ফাইনালি,এই রাহাতের গায়ে হাত দেওয়ার সাজা পাবি বৃষ্টি।

গাড়িড্রাইভ করছে মেঘ,বৃষ্টির প্রিয় মতিচুরের লাড্ডু নিতে গিয়েছিল।এখন যাচ্ছে বৃষ্টির কাছে।
মেঘ:আমি আসছি বৃষ্টি।

তখনই একটা ট্রাক সামনে আসলো,আর মেঘ তা দেখে গাড়ি সাইডে নিয়ে ব্রেক কষল।
মেঘ: হোয়াট দা…

কিন্তু ট্রাকটা আবার পিছনে ফিরে মেঘের গাড়িতে ধাক্কা দেয়,ফলে গাড়িটি বড় গাছের সাথে বাড়ি খায়,আর কিছুক্ষণের মাঝেই ব্লাস্ট হয়।

তাই দেখে লোকটি রাহাত কে ফোন করে বললো,”কাম খতম”

বিয়ে বাড়ীতে পিন পিন নিরবতা,পুলিশ এসে জানিয়েছে গাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে,তাই ডেড বডি পাওয়া যায় নি।মেঘের মা কান্না শুরু করেছে।মেঘের বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।অর্ক এখনও বুঝছেনা কি করবে!কাকে সামলাবে?বৃষ্টি পাথরের মত বসে আছে।ইতিমধ্যে সবাই বলা শুরু করেছে এই মেয়েকে কে বিয়ে করবে?
মানুষ!কেও মারা গেছে,তার খোঁজ নেই।এরা আছে বিয়ে নিয়ে।

তাও সবাই বলাবলি শুরু করছে।বৃষ্টির মা বাবা কি বলবে?সব তো অনাকাঙ্ক্ষিত।সবার মুখে আফসোস।কেও তো মেয়ের দোষ বলেই দিয়েছে।সবার আফসোস শুনে মেঘের বাবা আজাদ উদ্দিন বলে উঠলেন

“অর্কের সাথে বৃষ্টির বিয়ে হবে।”

#চলমান

(😴রোজ দিতে চাই,কিন্তু পারি না।কারণ :আম্মু,আন্টির কথা বলার ফ্যাক্ট🙂)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here