গল্প – আমার একটাই তুমি
.
Part – 6
.
writer – ArFin_$uMon
.
.
আমি তাড়াতাড়ি উঠে দেখি উনি ব্লাউজ আর অর্ধেক শাড়ি পড়ে আর টাওয়াল জরিয়ে আছে।আমার হাতে একটা কাগজ দিয়ে মুখ অন্যদিকে করে দাড়িয়ে আছে। উনাকে এই অবস্থায় দেখে আমার অনেক লজ্জা লাগছে। আমি কাগজটা পড়তে শুরু করলাম..
জুলিঃ- এই যে শুনুন আমার দিকে ভুলেও থাকাবেন না কিন্তু আমি শাড়ি পড়তে পারি না আর কাল রাতে আম্মু বলল এখন থেকে শাড়ি পড়তে কিন্তু আমি এখন কিভাবে পড়ব বলুন আম্মুকে ডাকতাম কিন্তু তারা সবাই এখন ও ঘুমিয়ে আছে আর আপু ও। আপনি একটু আপু কে ডেকে দিন না।
কথা গুলো পড়ে আমার অনেক হাসি পাচ্ছে এত বড় মেয়ে অথচ শাড়ি পড়তে পারে। একটু পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ৭টা বাজে। এত সকালে আপু বা আম্মুকে ডাকবো কিনা ভাবছি?
আমিঃ- আচ্ছা এত সকালে কি উনাদের ডাকা ঠিক হবে। আপনি একটু নিজে চেষ্টা করুন না আমি রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছি। আর শাড়ি পড়া কি এমন কঠিন কাজ হুম? একটু চেষ্টা করুন ঠিকই পারবেন।
আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর রাগে দাত কটমট করে ইশিরায় বলল..
জুলিঃ- আপনি মনে হচ্ছে খুব পারেন তা এতই যখন পারেন তাহলে পড়িয়ে দিন কিন্তু একটা শর্ত আছে আপনার চোখ বন্ধ করে পড়িয়ে দিবেন।
আমিঃ- আজব মেয়ে তো আমি চোখ বন্ধ করে কিভাবে পড়াব হুম।
এরপর উনি ইশারায় বললেন..
জুলিঃ- দেখুন আমি শুধু কুঁচি দিতে পারি না। আপনি ওটা কিভাবে করতে হয় দেখিয়ে দিন।
আমি একটু পর ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে একটা একটা পার্ট করে শাড়ির কুঁচি ভাঁজ করে উনার হাতে দিয়ে দিলাম। এরপর আমি সোজা বাথরুম এ চলে গেলাম। এই প্রথম আমি কোন মেয়ের এত কাছিকাছি আসলাম। একটু পর আমি রুমে এসে দেখি উনার শাড়ি পড়া কমপ্লিট। উনি আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছে।
ভেজা চুলে অনেক সুন্দর লাগছে উনাকে। তারপর ফ্যানের বাতাসে জুলির চুল থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ আসছে যা আমাকে আরো বেশি আকৃষ্ট করে তুলছে। আমি একভাবে তাকিয়ে আছি বলে জুলি কিছুটা বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
উনি বেড়িয়ে যাওয়ার পর আমার নিজের কাছে অনেক খারাপ লাগতে লাগল কেন যে আমি উনার দিকে এই ভাবে তাকিয়ে থাকতে গেলাম হয়তো উনি আমাকে খারাপ ভাবল। না এবার থেকে আমি আর এই ভাবে তাকিয়ে থাকব না। উনি হয়তো আমাকে ফ্রেন্ড-ই ভাবে আমিই বার বার উনাকে নিয়ে একটু বেশি বেশি ভাবছি।
আমি আর কিছু না ভেবে একটু পর গোসল শেষ করে রেডি হয়ে অফিসের দিকে যাব ঠিক তখনি জুলি দরজার সামনে এসে দাড়ালো। উনার হাতে পরোটা আর ডিম ভাঁজি। তাহলে উনি আমার
জন্য নাস্তা বানাতে গিয়েছিলো? এরপর উনি আমার হাতে প্লেট টা দিয়ে বলল..
জুলিঃ- খেয়ে নিন? আর এবার থেকে না খেয়ে অফিস এ যাবেন না।(ইশারায়)
আমিঃ- আচ্ছা আমি যে প্রতিদিন না খেয়ে অফিসে যায় সেটা আপনাকে কে বলল? আম্মু না আপু সত্যি করে বলুন তো কে?
জুলিঃ- আম্মু (ইশারায়)
আমিঃ- আপনি খেয়েছেন সকালে?
জুলিঃ- উনি মাথা নেড়ে না উত্তর দিলেন।
আমিঃ- কেন? এখন খেয়ে নিন ?
জুলিঃ- এখন না সবাই ঘুম থেকে উঠুক তারপর।(ইশারায়)
আমিঃ- হুম বুঝলাম। আচ্ছা জুলি আপনি কি বাসায় ও এইভাবে ইশারায় কথা বলতেন না খাতায় লিখে?
উনি মাথা নেড়ে বলল..
জুলিঃ- ২ ভাবেই আরও আমাকে ঘড়ির দিকে তাকাতে বলল।
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৯ বাজে। আর ৩০ মিনিট এর মধ্যে অফিস এ যেতে হবে। আমি তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে বেড়িয়ে পড়লাম। সিঁড়ি থেকে নেমে গাড়িতে যখন উঠতে যাব ঠিক তখনি উনি তাড়াতাড়ি সিঁড়ি থেকে নেমে আমার হাতে একটা বক্স দিল আর সাথে একটা কাগজ দিল। আমি কাগজটা খুললাম..
জুলিঃ- দুপুরের খাবার এই টিফিনবক্স এ আছে সময় করে খেয়ে নিবেন আর সাবধানে যাবেন বাই।
আমিঃ- আপনি এতটুক সময়ের মধ্যে রান্না কিভাবে করলেন।
জুলিঃ- পরে একসময় বলল এখন আপনার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে অফিসের। এখন যান তাড়াতাড়ি আসবেন বাই।(ইশারায়)
এরপর আর আমিও কোন কথা না সোজা অফিস এর দিকে রওনা দিলাম। এরপর আমি অফিসে এসে অফিসের কাজ করতে থাকলাম কিন্তু মন পড়ে আছে জুলির কাছে। এখন বুঝলাম ভালোলাগা টা কি জিনিস। এরপর এই সব চিন্তা মাথা থেকে বেড় করে দিয়ে কাজে মন দিলাম।
এরপর কাজ শেষ করে Lunch টাইমে জুলির দেওয়া টিফিন বক্স খুলে দেখি আমার পছন্দের আইটেম। আমি তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে খাবার টা যখন মুখে দিব তখন-ই জুলির কথা আবার মনে পড়ল উনি খেয়েছে কি? আপু কে একটা কল দিই।আপুকে কল দেওয়ার সাথে সাথে আপু ফোনটা ধরল..
আমিঃ- হ্যালো আপু।
আপুঃ- হুম বল কি হয়েছে?
আমিঃ- তেমন কিছুই না আসলে জুলি কি করছে আর ও কি দুপুরের খেয়েছে?
আপুঃ- বাব্বাহ্ তুই তো দেখি ওকে নিয়ে খুব ভাবছিস ওকে তুই ভালোবেসে ফেলছিস আমি জানি কিন্তু এইভাবে মনের কথা না লুকিয়ে রেখে সামনে গিয়ে বলে দে।
আমিঃ- তোর শুধু আমার সাথে ফাইজলামি করা ছাড়া আর কোন কাজ নাই না? ও কি খেয়েছে নাকি সেটি শুধু বল?
আপুঃ- হুম খেয়েছে প্রথমে না না করছিলো বলছিলো তুই আসলে খাবে তারপর আব্বু রাগ করবে দেখে খেয়ে নিছে।
আমিঃ- আচ্ছা ঠিক আছে এখন ফোন রাখ আর আমি তাড়াতাড়ি আসছি।
আপুঃ- তা তো বটেই এখন তোমার জুলি আছে। এখন তো তাড়াতাড়ি বাসায় আসবাই আর আগে তো রাত ১২ টা বাজলেও তোর খবর থাকতো না।
আমিঃ- বাজে কথা কম বল ফোন
রাখ এখন।
এই টুক বলে ফোনটা কেটে দিলাম তারপর দুপুরের খাবারটি খেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে আবার কাজে মন দিলাম। রাত ৮ টার দিকে অফিস শেষ হলো আমি বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ছি ড্রাইভ করছি আর ভাবছি এই কয়েক দিনে জুলির প্রতি আমি অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ছি। একটু পর জ্যামে আটকে গেলাম পাশ দিয়ে একটা হকার ছেলে কাট গোলাপ ফুলের ডিজাইন এর প্লাস্টিক এর খোঁপার কাটা, ক্লিপ নিয়ে যাচ্ছে ওর কাছ থেকে কিছু ক্লিপ আর খোঁপার কাটা কিনে ওইগুলোর মূল্য পরিশোধ করে আবার ড্রাইভ করা শুরু করলাম।
আর এই দিকে পাশের প্লাট এর আন্টি ভাবিরা জুলিকে বাসায় দেখতে আসছে। একটু পর জুলি সবার জন্য চা বানাতে চলে গেল। এরপর একে একে সমালোচনা শুরু করে দিল।
আন্টিঃ- তা সুমনের আম্মা বউ তো লাখে একটা মাসআল্লাহ্ চেহারা। কিন্তু ভদ্রতা কি জানে না নাকি? আমাদের হাত দেখিয়ে সালাম দিল মুখে একবার ও বলল না।
ভাবিঃ- দেখেছেন আম্মু আপনি এত করে এতগুলো প্রশ্ন করলেন নাম কি? কিসে পড়? অথচ বোবার মত দাড়িয়ে আছে। আন্টি সুমনের বউ কি বোবা…??
আম্মুঃ- হুম বোবা আর ওর নাম সালমা আক্তার জুলি। এইবার অনার্স এ ভর্তি হবে কিন্তু অনেক লক্ষী একটা মেয়ে।
এরপর সবাই মিলে অট্টহাসিতে মেতে উঠল আর জুলিকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন বিবৃত মূলক কথা বলছে।
ভাবিঃ- তাহলে সুমন একটা বোবা মেয়েকে বিয়ে করল সমাজে মুখ দেখাবে কিভাবে। আপনারাও বা মানলেন কিভাবে বউ হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন তো..??
আম্মুঃ- এই ভাবে বলছ কেন বউমা? আর পরিচয় এর কথা বললে না তোমরা না পারলেও আমাদের বউকে ঠিকি আমরা পরিচয় দিতে পারব।
এর-ই মধ্যে জুলি সবার জন্য চা বানিয়ে আনল। এক এক করে সবার হাতে চা দিতে লাগল আর সবাই চা ফিরিয়ে দিল। আর একজন বলল..
-এই বোবা মেয়ের হাত এর চা খাওয়ার থেকে না খাওয়া ভালো। সুমনের আম্মা আসি গো।
কথাটা শুনে জুলির চোখ দিয়ে পানি পড়ে গেল। কোন মতে চায়ের কাপগুলো টি টেবিলে রেখে সোজা রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিয়ে কান্না করতে লাগলো।
রাত ৯ টার দিকে আমি বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই আপু এসে দরজা খুলে দিল কিন্তু আপুর মুখটা কেমন জানি কালো কালো দেখাচ্ছে আমি ভাবলাম হয়তো দুলাভাই এর সাথে ঝগড়া করছে। আমি সেই দিকে কান না দিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম। কিন্তু এসে দেখি দরজা দেওয়া।
আমি একটু ধাক্কা দেওয়াতে দরজা খুলে গেল। দেখি উনি বিছানায় শুয়ে আছে আমি উনাকে ডাকতে গেলাম কিন্তু তার আগেই উনি আমার দিকে একটা কাগজ ছুঁড়ে দিল। কাগজটি তে লেখা ছিল..
জুলিঃ- দেখুন
আমার এখন একটুও ভালো লাগছে না আমি কারোর সাথে এখন কথা বলতে পারব না আর রাতে খেতেও পারব না আমাকে মাফ করে দিয়েন আর আমাকে একটু একা থাকতে দিন।
জুলির এমন ব্যাবহার এ সত্যি আমার খারাপ লাগছে আবার মনে একটু সন্দেহ হচ্ছে ওকে কেউ কিছু আবার বলে নি তো? আমি সোজা আপুর রুমে চলে গেলাম..
আমিঃ- এই আপু জুলির কি হয়েছে রে? দেখলাম মন খারাপ। কি হয়েছে আমাকে একটু খুলে বল তো?
এরপর আপু আমাকে সব খুলে বলল। কথাগুলো শুনে আমার মেজাজটা পুরো খারাপ হয়ে গেছে।
আমিঃ- আচ্ছা ওকে যখন এত কিছু বলছিলো তোরাও কি বোবা হয়ে গিয়েছিলি নাকি??
আপুঃ- ভাই আমারা বলছি কিন্তু ঠেস মারা লোকের অভাব তো আর নেই। তুই একটু ওর কাছে যা মেয়েটা আজ অনেক কষ্ট পেয়েছে।
একটুপর আমি আবার রুমে চলে আসলাম। অনেক রকম চেষ্টা করে জুলির সাথে কথা বলতে পারলাম না। এক পর্যায়ে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না বার বার ওর কষ্ট মাখা মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠছে। এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই।
পরেরদিন সকালে এর্লাম এর শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। কিন্তু আজ উঠে দেখি উনি এখনও উঠে নি আমি আর ডাক দিলাম না। অফিসের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে বলে উনার জন্য একটা চিরকুট লিখে মাথার পাশে রেখে অফিসে চলে গেলাম।
.
.
চলবে……………………