গল্প – আমার একটাই তুমি
.
Part – 3
.
writer – ArFin_$uMon
.
.
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুরু হলো আরেক ঝামেলা। ১০ টার মধ্যে অফিস এ যেতে হবে কিন্তু জুলি কে একা রেখে কিভাবে যাব আর আব্বু আম্মু এখন এই গুলো জানলে তো আরো বেশি ঝামেলা হবে। কি যে করি এখন? আপুকে কি সব বলে দিব? হুম সেটাই ভালো হবে আপু যে ভাবেই হোক আব্বু আম্মুকে ম্যানেজ করতে পারবে যেই ভাবা সেই কাজ আর জুলি এখনও ঘুমিয়ে আছে আমি বাইরে থেকে দরজা টা লক করে আপুর রুমে গেলাম। আমাকে এত সকালে রুমে আসতে দেখে আপু বলল..
আপুঃ- কিরে এত সকাল সকাল আজ উঠলি যে?ব্যাপার কি হুম? না জুলি রুম থেকে তোকে বের করে দিয়েছে?
আমিঃ- কি যে বলিস না তুই। আসলে তোকে একটা কথা বলার ছিল। তোর কাছ থেকে আমি একটা জিনিস লুকিয়েছি।
আপুঃ- কি এমন কথা হুম? যেটা বলতে এত ভয় পাচ্ছিস আবার কোন ঝামেলা পড়িস নি তো তুই?
আমিঃ- না আপু ঝামেলা না ঠিক কিন্তু জুলিকে আমি বিয়ে করি নি।
আপুঃ- কি বলছিস তুই মাথা ঠিক আছে তো তোর,? তুই যদি ওকে বিয়ে না করিস তাহলে ও বিয়ের ড্রেস পড়ে ছিলো কেন হুম? আর এতরাতে তুই ওকে কোথায় পেলি ।
একটু পর আমি আপুকে কালকের সব ঘটনা খুলে বললাম কিভাবে জুলির সাথে দেখা হলো সবকিছু শোনার পর আপু বলল..
আপুঃ- তুই কি পাগল হুম? একটা অচেনা মেয়েকে নিয়ে বাসায় চলে আসলি। আব্বু আম্মু জানলে কি হবে ভাবতে পারছিস?
আমিঃ- আপু আমি জানি আমি ভুল করছি কিন্তু মেয়েটা কে দেখে আমার অনেক মায়া হচ্ছিল আর তখন যদি ওকে রাস্তায় রেখে আসতাম তাহলে রাস্তার কুকুরগুলো ওকে ভোগ করত। ওদের থেকে বাঁচাতেই ওকে বাসায় নিয়ে আসি।
আপুঃ- হুম সবকিছুই তো বুঝলাম এখন কি করতে বলছিস আমাকে?
আমিঃ- তেমন কিছুই না আপু আসলে আমি তো ৫ টা অবদি অফিস এ থাকব তুই শুধু এতক্ষন জুলিকে দেখে রাখবি আর ভুলেও যেন আব্বু আম্মু রুমে ডুকতে না পারে।
আপুঃ- আচ্ছা ঠিক আছে আর কালকে তো আব্বু আম্মু নানু বাড়ি যাবে প্রোবলেম হবে না আর এই ১ দিন আমি চোখে চোখে রাখব। কিন্তু মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দর আমার ভাই এর সাথে ভালো মানাবে।
আমিঃ- কি যে বলিস না তুই আচ্ছা আপু তুই একটু চা নাস্তা বানিয়ে দে অনেক ক্ষুদা লাগছে আর আমার অফিসে যেতে হবে।
আপুঃ- আচ্ছা ঠিক আছে বানাচ্ছি তুই দাত ব্রাশ করে ফ্রেস হয়ে নে আমি বানিয়ে আনছি আর জুলি কেও উঠতে বল।
এরপর আমি রুমে এসে দেখি জুলি এখনো ঘুমিয়ে আছে আমি আর ওকে না ডেকে বাথরুমে এ গিয়ে ফ্রেস হয়ে রুমে এসে জুলিকে ডাক দিলাম একটু পর উনি উঠে পড়লেন আর আপুও আমাদের নাস্তা নিয়ে রুমে আসলো।
এরপর সকালের নাস্তা খেয়ে জুলিকে সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা লক করে অফিসের দিকে রওনা হলাম। যাওয়ার আগে আপুকে বললাম..
আমিঃ- আপু জুলির দিকে খেয়াল রাখিস আর রুমে যেন কেউ ডুকতে না পারে আমি কেস খেতে চাচ্ছি না। আর জুলির হাত কেটে গেছে ওকে একটু খায়িয়ে দিস।
আপুঃ- বাহ্ তুই তো দেখছি ওর জন্য অনেক টেনশন করিস হুম? মনে হচ্ছে তোর বিয়ে করা বউ হুম।
আমিঃ- আপু আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে বাই।
এইবলে আমি অফিসে চলে আসলাম কিন্তু মন পড়ে আছে আপুর কাছে বার বার আপুকে ফোন করে জুলির খবর নিচ্ছি। দুপুর ২ টা বাজে এই নিয়ে আপুকে ৬ বার কল করছি জুলি কি করছে উপর আল্লাহ জানে।
আর এই দিকে জুলি রুমের মধ্যে শুধু পায়চারি করছে বার বার যখন বাইরে থেকে আপু দরজা খুলছে ওর মনে হচ্ছে এই বুঝি সুমন আসছে। কিন্তু আপুকে দেখে বার বার মুখ কালো হয়ে যাচ্ছে। দুপুর ৩টার দিকে আপু রুমে আসল।
আপুঃ- জুলি এই দিকে আসো আমি খায়িয়ে দিচ্ছি ৩টা বাজতে যাচ্ছে সাড়াদিন কিছু খাও নি।
একটু পর জুলি কাগজে লিখে বলল উনি খেয়েছেন?
আপুঃ- সুমন এর কথা বলছো ওর ঠিক আছে নাকি কখন কি করে মনে হয় খেয়েছে আবার নাও খেতে পারে এখন তুমি খেয়ে নাও।
জুলিঃ- উনি আসলে তারপর খাবো (ইশারার মাধ্যমে)
আপুঃ- ওর আসতে অনেক দেরি হবে তুমি খেয়ে নাও আর ও খেয়েছে আমি একটু আগে ওকে ফোন দিয়েছিলাম। একটু পর আপু জুলিকে খায়িয়ে রুমের দরজা লক করে বাইরে থেকে লক করে চলে গেল।
আর এই দিকে আমার ও অফিস শেষ হয়ে গেল। ৫. ৩০ দিকে বাসায় আসলাম এসে কলিং বেল বাজাতেই আপু এসে দরজা খুলে দিল তারপর বলল..
আপুঃ- যান আপনার জুলি আপনার জন্য টেনশনে অস্থির হয়ে আছে যান উনার কাছে।
আমিঃ- আপু তোর শুধু ফাইজলামি আর ফাইজলামি।
আমি একটু পর রুমের দরজা খুলে ভেতরে ডুকলাম। আমাকে দেখেই উনি শোয়া থেকে উঠে বসল তারপর আমি বললাম..
আমিঃ- কি খবর এতক্ষন কিভাবে সময় পার করলেন।
জুলিঃ- হাতে একটা গল্পের বই দেখাল।
আমিঃ- গল্পের বই পড়ে আচ্ছা খেয়েছেন আপনি
জুলি মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানালো
আমিঃ- আচ্ছা ঠিক আছে আপনি রেস্ট নিন পড়ে কথা হবে।
এই বলে আমি ফ্রেস হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে কম্পিটার এ মুভি দেখছিলাম। রাত ১০ টার আম্মু খেতে ডাকল। আমি খাওয়ার টেবিলের ওখানে গেলাম ভাতের প্লেট নিয়ে রুমে চলে আসব ঠিক তখনি আব্বু বলল..
আব্বুঃ- কিরে তোর কি হয়েছে সাড়াদিন রুমের দরজা বন্ধ করে কি করিস তুই আগে তো সাড়াদিন ই বাইরে থাকতি আর ২টা প্লেট দিয়ে কি করবি তুই?
আমিঃ- আসলে অফিসের কাজের চাপ বাড়ছে তাই রুমেই বসে বসে কাজ করি আর ২টা প্লেট নিচ্ছি এখন খাব না কাজ করছি তাই আর একটা প্লেট নিয়ে ডেকে রাখব।
এই বলে আমি রুমে চলে আসলা। এসে জুলিকে খায়িয়ে আমি খেয়ে অফিসের কিছু কাজ করতে করতে ১টা বেজে গেল। জুলি ঘুমিয়ে পড়ছে আমি ও আর দেরি নি করে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম আর কাল তো শুক্রবার যাক একটু আরামে ঘুমাতে পারবো।
পরেরদিন সকালে চেঁচামেচির শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল আমি তাড়াতাড়ি উঠে দেখি জুলি রুমে নেই। আব্বু আম্মুর রুম থেকে আওয়াজ হচ্ছে তাহলে কি উনি আব্বু আম্মুর কাছে ধরা পড়ে গেছে? আমি দৌঁড়ে ওই রুমে গেলাম।
মনে মনে যা ভাবছি ঠিক তাই। গিয়ে দেখি সবাই জুলিকে প্রশ্ন করছে আর উনি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে সব শুনছে। আপু ও বাসায় নেই যে ওর হয়ে কথা বলবে। মেয়েটা চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে চোখে দিয়ে অজস্র পানি পড়ছে।
আম্মুঃ- এই মেয়ে কথা বলছো না কেন হুম? আমার ছেলের রুমে তুমি কি করছিলে? আর তুমি আমাদের বাসায় কিভাবে এলে আর ছেলের সাথে তোমার কি সম্পর্ক? কি হলো বলো?
আব্বুঃ- আজব মেয়ে তো ২জন বয়স্ক ব্যক্তি এত গুলো প্রশ্ন করছে আর এই মেয়েটা চুপচাপ বোবার মতো দাড়িয়ে আছে। দেখে তো মনে হচ্ছে ভদ্র বাড়ির মেয়ে তাহলে গুরুজনদের সম্মাণ করতে বাবা মা শেখায় নি তোমাকে?
আম্মুঃ- এই ওইভাবে বলো না আমি আবার জিজ্ঞাস করছি। আম্মু তুমি ভয় পেওয়া না বলো আমাদের? সুমন কি তোমাকে বিয়ে করেছে?
আমিঃ- আম্মু আব্বু আমি বলছি। তোমাদের না জানিয়ে একটা বড় ভুল করে ফেলেছি। আমি জুলিকে বিয়ে করছি?
আব্বুঃ- হুম বুঝলাম বিয়ে করছো মেয়েটাও অনেক সুন্দর আমার আর তোর আম্মুর অনেক পছন্দ হয়েছে কিন্তু এই মেয়েটা কি কাউকে সম্মান দিতে জানে না ?
আমিঃ- আমি তোমাদের এখন যেটা বলব সেটা শুনে হয়তো তোমাদের পা এর নিচ থেকে মাটি সরে যাবে। আসলে কিভাবে যে বলব?
আম্মুঃ- এত প্যাঁচাল না করে সোজা ভাবে বল তো? মেয়েটার নাম কি বাসা কোথায়? ফ্যামিলি কি রকম?
আমিঃ- ওর নাম সালমা আক্তার জুলি আর ও বোবা কিন্তু আমি ওকে অনেক ভালোবাসি এবং ও আমাকে। বাসা থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছিলো তাই আমরা পালিয়ে বিয়ে করছি।
আব্বুঃ- তুই কি পাগল হয়ে গেছিস একটা বোবা মেয়েকে নিয়ে কেউ সংসার করতে পারে না আর একে আর যাই হোক আমার ছেলের বৌ হিসেবে পরিচয় দিতে পারব না। এর থেকে তুই একে ওর বাসায় দিয়ে আয়।
আমিঃ- কেন আব্বু ওকে যখন বিয়ে করেছি তখন সব দায়িত্ব আমিই নিব। আর তোমরা তো একটু আগেই বললে ওকে তোমাদের পছন্দ হয়েছে।
আম্মুঃ- তখন তো আর জানতাম না যে মেয়েটা বোবা।
আমিঃ- তো কি হয়েছে আম্মু? বোবা রা কি মানুষ না ওদের কি বেঁচে থাকার অধিকার নেই। ও আমার সাথেই থাকবে।
আব্বুঃ- অসম্ভব এই মেয়েকে আমরা কখনই মেনে নিতে পারব না। আর একটা বোবা মেয়েকে নিয়ে আমার আত্নীয় স্বজনদের সামনে মুখ দেখাতে পারব না। তুই একে ওর বাসায় দিয়ে আসবি।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই জুলি কান্না করতে আমার রুমে চলে গেল। আমি শুধু আব্বু আম্মুর উদ্দেশ্য করে বললাম আমার পক্ষে জুলিকে ছাড়া থাকা অসম্ভব। এই টুকু বলে আমার রুমে চলে আসলাম। এসে দেখি উনি কাগজে কি যেন লিখছে আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে একটু পর উনি আমার হাতে কাগজ টা দিল।
আপনি আমার জন্য যতটুক করেছেন তা আমার কাছে অনেক এখনকার দিনে একটা মেয়ের জন্য এত কিছু করা মানে অনেক আপনার এই ঋন আমি কোনদিন ও শোধ করতে পারব না।
আমি চাই না আমার জন্য একটা ফ্যামিলির মধ্যে অশান্তি হোক। শুধু আমার জন্য আপনি একটার পর একটা মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। কেন করছেন এইগুলো কে হই আমি আপনার একটা বাইরের মেয়ের জন্য যথেষ্ট করেছেন আর না সব সত্যি টা বলে দিন নাহলে আমিই বলে দিব আপনার বাবা-মা কে।
আমার নিয়তি তে হয়তো শুধু কষ্ট লেখা আছে। যাইহোক আমার জন্য আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না। আমি আজই এখান থেকে চলে যাবো যদি কোন ভুল করে থাকি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
কথা গুলো পড়ে আমি একবার উনার দিকে তাকিয়ে সত্যিই তো উনি কে হয় আমার? কেন আমি উনার জন্য এত কিছু করছি। এর আগে তো কোন মেয়ের জন্য এতটা ভাবি নি? উনার মুখের দিকে তাকালে আমার কেন এত খারাপ লাগে? তাহলে কি আমি উনার প্রেমে পড়ে গেলাম? এই সব ভাবতেছিলাম তখন জুলির গোঙ্গানির শব্দে কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরলাম।
.
.
চলবে……………………