গল্প – আমার একটাই তুমি
.
Part – 5
.
writer – ArFin_$uMon
.
.
যাক বাবা অবশেষে সবাই মানল জুলিকে কিন্তু হঠাৎ ওই কথাটা মনে পড়লে অনেক খারাপ লাগল। আসলেই তো উনি আমার কেউ-ই হয় না আমরা তো শুধু ফ্রের্ন্ড আর আমরা তো শুধু নাটক করছি হয়তো কিছুদিন পর জুলি নিজের পায়ে দাড়িয়ে গেলে বোধ হয় আমাকে ভুলে যাবে।
সত্যি হয়তো আমার জায়গা অন্য কেউ নিয়ে নেবে এই অধিকারটা। তখন আবার আব্বু আম্মু কে আমার ম্যানেজ করতে হবে। এই সব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি জুলি রুমে আসল। এসেই আমাকে ইশারা দিয়ে বলল..
জুলিঃ- কি ব্যাপার কি এত ভাবছেন হুম?
আমিঃ- তেমন কিছুই না আসলে আপনার কথায় ভাবছিলাম। রাতে খাবার পর থেকে তো আপনার আর খোঁজ নেই তাই আপনার কথায় ভাবছিলাম।
আমার কথা শুনে কি যেন ইশারায় বলল কিন্তু কি বলল আমি বুঝতে পারলাম না। আমি বুঝতে পারছি না দেখে খাতায় কি যেন লেখা শুরু করল। কিছুক্ষন পর আমার কাছে লিখা টা দিল..
জুলিঃ- জানেন তো আমার আব্বু আম্মু আর মামার থেকে বেশি আপনি আমার জন্য এত টেনশন করেন এত ভাবেন। কথাটি শুনতে হয়তো হাস্যকর লাগছে কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনি সত্যি অনেক ভালো আপনার মতো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।
কথা গুলো পড়ে আমার সত্যি অনেক হাসি পাচ্ছে। আমাকে হাঁসতে দেখে উনি আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কিন্তু তার এই চোখের চাউনি আমার কাছে অনেক আর্কষনীয় লাগছে মনে হচ্ছে কোন মায়াবি পরী আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
একটু পর জুলির কাশির শব্দে বাস্তবে ফিরলাম। উনি ইশারার মাধ্যমে আমাকে বোঝাচ্ছিল আপনি পাগলের মতো হাসতেছেন কেন?
আমিঃ- না আসলে একটা কথা মনে পড়লো তো তাই আচ্ছা একটা কথা সকালে আম্মু আব্বুর কথায় আপনি কষ্ট পেয়েছেন?
জুলিঃ- উনি মাথা নেড়ে বলল না
আমিঃ- সত্যি বলছেন তো আপনি ?
এরপর খাতায় আবার কি যেনে লিখতে লাগল লিখা শেষ হলে আবার আমার কাছে দিল..
জুলিঃ- দেখুন আপনার আব্বু আম্মু মানে আমার ও আব্বু আম্মু আর উনারা যদি আমাকে চড় ও মারে তাও আমি কিছু মনে করব না কারন তারা আমার গুরুজন। ছোটবেলা থেকে বাবা মার আদর পায়নি কিন্তু মামা মামি আমার জন্য অনেক করেছে। আর আজ আমার নতুন আম্মু আমাকে ভাত খায়িয়ে দিছে এর পর ও আপনি বলছেন আমি রাগ করে আছে নাকি হুম?
আমিঃ- না আসলে আমি ওইভাবে বলতে চাইনি আমি ভাবলাম হয়তো রাগ করে আছেন তাই আর কি বললাম। আচ্ছা একটা কথা আপনি কোনদিন কোন রিলেশন করেছেন?
উনি মাথা নেড়ে বললেন না।
আমিঃ- আমি বিশ্বাস করতে পারলাম না। আমার মন বলছে আপনি আমাকে ডপ দিচ্ছেন আমি জানি আপনি রিলেশন করছেন।
এবার আমাকে থামতে বলে উনি ইশারা দিয়ে আমাকে বোঝাতে লাগল কিন্তু আমার মাথায় কিছুই ডুকছে না আর ডুকবেই বা কিভাবে ছোটবেলা থেকেই তো ফেইল এর ফেইল করে আসছি কত মার ও খায়ছি আম্মুর কাছে। এইসব ভাবতে ভাবতে দেখি উনি খাতায় লিখে খাতাটা আমার হাতে দিল..
জুলিঃ- আমি জানি হয়তো আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে এটাই সত্যি আর এখনকার যুগে কেউ-ই বিশ্বাস করতে চাই না। আমি চাচাদের ওখানে ক্লাস ৭ অবদি ছিলাম আর তখন চাচি আমাকে খুব চোখে চোখে রাখত। এরপর ক্লাস ৮ থেকে মামাদের ওখানে গেলাম মামা আমার সব কথায় রাখত সব ইচ্ছায় পূরন করত কিন্তু মামার একটাই কথা ভদ্র হয়ে স্কুলে যেতে সেজেগুজে যাওয়া যাবে না এরপর থেকেই আমি বোরকা পড়ে স্কুলে যেতাম আর এখানেই আমার বড় আপু আমাকে গার্ড দিত আর আমি ছোট থেকে ইন্টার অবদি গার্লস স্কুল কলেজেই পড়েছি তাই প্রেম আমি কোনদিন-ই করি নি।
আমিঃ- হুম সব কিছুই তো শুনলাম আর আপনার কথাও বিশ্বাস করলাম। আচ্ছা প্রেম না করেন নাই কিন্তু কাউকে কি ভালো লাগত বা কাউকে কি মনে মনে ভালোবাসতেন?
এবার আমি ওর ইশারা বুঝতে পারলাম ইশারায় আমাকে বলল।
জুলিঃ- না সেরকম কাউকেই ভালো লাগেনি কিন্তু অনেক ছেলে আমার পিছন পিছন ঘুরত আর অনেক প্রেমের প্রস্তাব ও পেয়েছি। কিন্তু ফ্যামিলির মান -সম্নান এর দিক চিন্তা করে আমি আর এই দিকে আগাই নি।
আমিঃ- আপনার যা চেহারা যেকোনো ছেলেই আপনার প্রেমে পড়ে যাবে। আমিও অলরেডি পড়ে গেছি। (বিড়বিড় করে বললাম)
এরপর জুলি আমাকে ইশারায় বলল আপনি কি কিছু বলছেন আমাকে?
আমিঃ- কই না তো কি বলব? কিছুই বলি নি তো একটু পর দেখি আপু রুমে এসে বলল..
আপুঃ- কি ব্যাপার আমি কি ভুল সময়ে চলে আসলাম।
আমিঃ- আরে না ভুল সময়ে আসবি কেন? আর আমরা এমন কোন important জিনিস নিয়ে কথা বলছি না যে তোর আসাতে প্রোবলেম হবে।
আপুঃ- হুম বুঝলাম জুলি তোমাকে আম্মু রুমে ডাকছে।
একটু পর জুলি মাথা নিচু করে রুম থেকে চলে গেল। হয়তো আপু এসেছে মনে হয় লজ্জা পেয়েছে কিন্তু যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকিয়ে একবার হাসলো।
জুলি চলে যাওয়ার পর আপু আমাকে বলল..
আপুঃ- কি ব্যাপার হুম জুলি চলে গেছে বলে কি আমার ভাইয়ের মন খারাপ হুম? আর আমার ট্রিট কই হুম।
আমিঃ- তোর শুধু ফাইজলামি আর ফাইজলামি মন খারাপ করব কেন হুম। আর একটু আগে কি যেন ও ট্রিট না কিসের ট্রিট দিব তোকে হুম।
আপুঃ- ট্রিট মানে আমি যে তোদের জন্য আব্বু আম্মুকে মিথ্যা বললাম। অনেক রিকুয়েষ্ট করার পর তারপর আব্বু আম্মু তোদের মেনে নিয়েছে।
আমিঃ- ওই দুপুরেই তো আমি তোকে ট্রিট দিলাম এখন আবার ট্রিট চাস কেন হুম?
আপুঃ- তখন তো কেস সলভ এর আগে আমাকে খায়িয়েছিস এখন তোর কেস সলভ করে দিলাম। তাই খাওয়াবি আর আমাকে শুধু তুই না জুলি কেও দিতে হবে ট্রিট।
আমিঃ- আচ্ছা বাবা সামনের শুক্রবার দিব কিন্তু তার আগে বল আব্বু আম্মুকে কিভাবে ম্যানেজ করলি।
আপুঃ- তেমন কিছুই না শুধু বলেছি জুলির চাচারা গুন্ডা আর ওকে বাসা থেকে বের করে দিলে আমার ভাইয়ের এর ক্ষতি হবে আরও অনেক মিথ্যা কথা যা তোকে বলে বোঝাতে পারব না।
এরপর আমি আর কিছু বললাম না আর আপুর ফোনে কে যেন ফোন করছে তার সাথে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল আপু। একটু পর জুলি এককাপ কফি নিয়ে আমার রুমে আসল আমার হাতে কফির মগটা দিয়ে কি যেন বলতে যাবে তার আগেই আবার আম্মু ওকে ডাক দিল। কি আর করার আমিও কম্পিটার এ বসে অফিসের কিছু কাজ করতে লাগলাম। এরপর রাত ১০.৩০ এর দিক আপু খাওয়ার জন্য ডাক দিলো। একটু পর আমি খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আজ আমার পছন্দের খাবার রান্না হয়েছে আমি তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে খেতে বসলাম যেই এক নোকলা মুখে নিছি সেই আমার বমি চলে আসল। এরপর আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললাম..
আমিঃ- কি রান্না করেছ আম্মু নুন হয়নি ঝাল হয় নি? কে রান্না করছে এটা।
আম্মুঃ- তোর বউ জুলি।
আব্বুঃ- কিরে এবার কথা বলছিস না কেন?
আমিঃ- না ভালোই হয়েছে খাবার গরম ছিল বলে টেস্ট লাগছিল না এখন ঠিক আছে।
আমার কথা শুনে আব্বু আম্মু ২ জন-ই হাঁসছে এরপর আমি আর কিছু বললাম না মনে মনে ভাবতে লাগলাম হয়তো জুলি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছে। তারপর রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে কানে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম। জুলি যে কখন রুমে আসছে খেয়াল করি নি। একটু পর উনি আমার হাতে একটা কাগজ দিল..
জুলিঃ- আমি জানি রান্না ভালো হয়নি আজ-ই আমি প্রথম রান্না করলাম এরপর থেকে আর ও ভালো করার চেষ্টা করবো। কিন্তু একটা কথা তখন বলতে চাচ্ছিলাম আপনি কখনো রিলেশন করেছেন? কিংবা আপনার কাউকে ভালো লাগে নাকি?
আমিঃ- না আমিও আপনার মতো কখনও রিলেশন করি নি। কিন্তু এক জনকে ভালো লাগে?
জুলিঃ- কে (ইশারা দিয়ো বলল)
আমিঃ- আপনাকে..মানে ফ্রেন্ড হিসেবে।
কথাটা শুনে জুলির মুখ টা কালো হয়ে গেল। একটু পর বিছানায় বসা থেকে শুয়ে উনি ঘুমিয়ে পড়ল অন্যদিকে মুখ করে। আর আমি এসে সোফায় শুয়ে পড়লাম। আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম উনি কি আমাকে খারাপ ভাবলো নাকি। এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই। সকালে জুলির গোঙ্গানির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
.
.
চলবে……………………
।
।
★[কেমন হচ্ছে জানাবেন]★