গল্প – আমার একটাই তুমি
.
Part – 9
.
writer – ArFin_$umon
.
.
পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে দেখলাম জুলি এখনো আমার হাত চেপে ধরেই আছে। আমি উনার কপালে হাত দিয়ে দেখলাম এখন জ্বর নেই একদম। আমার হাতের ছোঁয়া পেয়ে জুলি চোখ মেলে তাকায়..
আমিঃ- এখন কেমন বোধ করছেন?
উনি উঠে বসে ইশারায় বলল আগের থেকে অনেক ভালো।
আমিঃ- এখন তো জ্বর নেই একদম আর যখন ভালোবোধ করছেন তো আজ কি ভার্সিটি যেতে পারবেন? ভার্সিটি গিয়ে ভর্তির কাজটা সেরে আসলে ভালো হতো।
উনি ইশারায় বলল যে যেতে পারবে।
আমিঃ- তো গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিন।
ইশারায় আচ্ছা বলে উনি ফ্রেশ হতে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর ওনি ওয়াশরুম থেকে বের হলে আমি উনাকে রেডি হতে বলে আমিও ওয়াশরুম এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিলাম।
তারপর দরকারি সব কাগজপএ গুলো নিয়ে
৮:০০ টায় আমরা বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হলাম ভার্সিটি যাবার জন্য। আমাদের বাসা থেকে ভার্সিটি বেশি দূর না এই গাড়ি করে যেতে ৩০ মিনিট লাগে…
আমি গাড়ি ড্রাইভ করছি আর উনি চুপচাপ বসে আছেন কেউ কোনো কথা বলছি না। মাঝ রাস্তায় আসতেই জুলি আমার হাতে খোঁচা দিয়ে ইশারা করে বলল পানি খাবে। আমি গাড়ি এক সাইডে পার্ক করে একটা দোকানে গেলাম পানির বোতল কিনতে। জুলিও গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো। আর উনি গাড়ি থেকে নামতেই উনার সামনে একটি বাইক এসে দাড়ালো। বাইক এ বসা ব্যাক্তি টি বললো..
-কিরে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে নতুন বিয়ে করে বেশ ভালোই আসছ দেখছি হু।
জুলি চুপচাপ দাড়িয়ে ওর কথাগুলো শুনে যাচ্ছে। আমি পানির বোতল কিনে এনে গাড়ির কাছে আসতেই দেখলাম ঐ ব্যাক্তিটা জুলিকে কিসব বলতেছে। আমি জুলির পাশে গিয়ে দাড়াতেই আমাকে উদ্দেশ্য বলতে লাগলো..
-কিরে আমার হবু বউ এর নতুন জামাই খুব তো আনন্দে আছিস। এখন ভালোই ভালোই আমার হবু বউকে আমার হাতে দিয়ে দে।
আমি জুলির দিকে তাকালে ইশারায় বলল যে উনার সাথেই ওর বিয়ের কথা ছিল যেই বিয়ের আসর থেকে ও পালিয়ে ছিল।
আমি ঐ লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম..
আমিঃ- দেখুন ও আপনাকে বিয়ে করতে চায় না। জোর করে বিয়ে করে কি সুখী হতে পারবেন।
-ঐ বেটা আমি সুখী হব কিনা সেটা তোর দেখতে হবে না। ওকে আমি নিয়ে যাচ্ছি।
উনি বাইক থেকে নেমে এসে জুলির ডান হাত ধরে টেনে বাইক এর দিকে নিয়ে যেতে লাগল। আমি উনার পথ আটকিয়ে মারলাম এক ঘুষি কিন্তু উনি হালকা বসে পড়ায় ঘুষিটা পাশে থাকা ল্যাম্প পোস্ট এ গিয়ে লাগল।
তখন আমি উনার শার্টের কালার ধরে জুলির হাত থেকে উনার হাত ছাড়িয়ে আবার দিলাম এক ঘুষি। ঘুষি খেয়ে বেচারার নাক দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো। তখন উনি নিজের হাত দিয়ে নাক চেপে ধরে বসে পড়লো। একটুপর উঠে দাড়িয়ে আবার আমার দিকে তেড়ে আসতে লাগলো। তখন পাশে তাকাতেই দেখি একটা কাঠের টুকরো পরে আছে ওটা হাতে নিলাম আমার কাছে আসতেই ওর পায়ের মধ্য দিলাম কয়েকটা বাড়ি। বাড়ি খেয়ে রাস্তায় পড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। একটুপর কোনোরকম ভাবে উঠে দাড়িয়ে বাইক এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বাইক এ উঠে চলে যাবে কিন্তু যাবার আগে বলে গেল তোদের কে আমি দেখে নিব। এই বলে বাইক স্টার্ট করে চলে গেল।
আর এইদিকে আমি মারামারি করতে গিয়ে খেয়াল-ই করি নি যে আমার হাত কেটে গেছে। কিন্তু কিভাবে কাটল আমি নিজেও জানি না তারপর হঠাৎ মনে পড়ল ওই লোকটা কে ঘুষি দিতে গিয়ে উনি সড়ে যাওয়া
তে একটা ঘুষি পাশে থাকা ল্যাম্প পোস্ট এ গিয়ে লাগল। অনেক ব্যাথা করছে কিন্তু জুলি একটু পর উনার ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে ক্ষত জায়গাটা বার বার মুছে দিচ্ছে। আমি সেই দিকে খেয়াল না করে উনাকে বললাম..
আমিঃ- এইটুক কেটে যাওয়াতে আমার কিছু হবে না! আপনি গাড়িতে গিয়ে বসুন! কিন্তু উনি আমার কথা না শুনে এখনো আমার হাত ধরে টিস্যু দিয়ে জায়গা টা চেপে ধরে আছে ভালোই ব্লিডিং হচ্ছে ওখান থেকে।
আমিঃ- জুলি চলুন এবার আমার অফিসে যাওয়ার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।(একটু রেগে)
এরপর উনি আমার রাগি কন্ঠ শুনে মুখে কালো করে গাড়িতে এসে বসল। এই হলো মেয়েদের সমস্যা কিছু বললেই রাগ আর রাগ? এরপর আমিও আর কিছু না ভেবে গাড়ি চালাতে থাকলাম। একটু পর বাসার সামনে এসে দাড়ালাম কিন্তু
এই ৩০ মিনিট একবার ও কথা বলে নি। মুখ কালো করে জানলার দিকে তাকিয়ে ছিল।
শুধু যাওয়ার আগে উনি আমাকে ইশারায় বলল একবার উপরে আসুন। আমি প্রথমে না করে দিছিলাম কিন্তু উনি জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। জুলির মায়াবি চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা আমাকে বার বার ওর দিকে আকৃষ্ট করছে বারবার মনে হয় উনি কি কিছু বলতে চাই আমাকে। এরপর আমি আর না করতে পারলাম না কারন সেইসময় একবার একটু রেগে কথা বলছি মুখ কালো করে ছিল তাই বাধ্য হয়ে উনার সাথে উপরে আসলাম।
এসে দেখি রুমের দরজা খোলা যাক বাবা বাঁচলাম আর আম্মু হয়তো ছাঁদে গেছে আমাকে এই অবস্থায় দেখলে আরেক তাল বাহানা শুরু করে দিতো। ক্লাস ৬ এ থাকতে একবার সামান্য আপেল কাটতে গিয়ে হাত একটু কেটে গিয়েছিলো বলে সে কি কান্নাকাটি। এরপর উনি আমার হাত ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে ড্রয়ার থেকে সেভলন বের করে হাতে ভালো ভাবে ব্যান্ডেজ করে দিল।
এরপর আমি উঠে যেতে লাগবো ঠিক তখনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বসতে বলল। আর ইশারায় বলতে থাকল খুব রাগ না আপনার হাত দেখিয়ে বলছে সামান্য কেটে গেছে বলে এত অবহেলা করছেন কেন? এরপর হাত দিয়ে ইশারায় আমাকে বসতে বলে উনি রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। কি যে হচ্ছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না । জুলিও কি আমাকে মনে মনে ভালোবাসে না এটা আমার ভুল ধারনা। উনি তো আমাকে শুধু উনার একজন ভালো বন্ধু ভাবে কিন্তু উনার চোখের ভাষা তো আমাকে বার বার ইঙ্গিত করছে যে জুলি আমাকে ভালোবাসে। এই সব
ভাবতে ভাবতে দেখি জুলি আমার জন্য এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে আসল। এরপর আমাকে ইশারা দিয়ে বোঝাল এইটুক খেয়ে তারপর অফিসে যাবেন।
আমিঃ- আচ্ছা আপনি আবার এর মধ্যে এইগুলো করতে গেলেন কেন? আমি তো বললাম আমি ঠিক আছি আপনি খালি খালি আমার জন্য কষ্ট করে হাতে ড্রেসিং করে দিলেন এক জায়গা থেকে ঘুরে এসে আবার রান্নাঘরে গিয়ে দুধ গরম করলেন। শুধু শুধু কষ্ট করছেন কেন?
এরপর আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিল না হাত দিয়ে আমাকে থামতে বলল। আর ঘড়ির দিকে ইশারা করে বলল দেখুন কয়টা বাজে। আমি আর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি খেয়ে বাসা থেকে বের হলাম। আসার সময় দেখি জুলি বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছে তারপর আমাকে ইশারা করে বলল বাই আমিও উনার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে অফিসে চলে আসলাম।
কিন্তু অফিসে এসে ওই ব্যাক্তির লাস্ট কথা টুকু বার বার মনে পড়ছে। তোদের দেখে নিব। না একবার যখন জুলির খোঁজ পেয়ে গেছে উনাকে একা কিছুতেই ছাড়া যাবে না। আমি জুলিকে কিছুতেই হারাতে পারব না যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি উনাকে আমার মনের কথা জানাব।
আর এইদিকে ওই ব্যাক্তি টা মার খেয়ে দ্রুত বাইক চালিয়ে জুলিদের বাসার সামনে এসে উনার চাচার নাম ধরে ডাকছে রহিম সাহেব! ও রহিম সাহেব কোথায় আপনি তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বের হন।জুলির চাচা বাসায় বসে টিভি দেখছিলো চিল্লা চেল্লির আওয়াজে একটু পর উনি বাইরে বের হলো..
জুলির চাচাঃ- কি ব্যাপার ভাই আপনি এইরকম চিল্লা পাল্লা করছেন কেন? আর আপনার এই অবস্থা হলো কেমন করে?
-আরে রাখেন আপনার আলগা পিরিত আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের ভাইজি কে অন্য একটা ভালো বিয়ে দিয়ে তো খুব শান্তিতেই আছেন আপনারা।
জুলির চাচাঃ- ভাই আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আর জুলি তো বিয়ের রাতে পালিয়েছে আমরা বিয়ে দেব কেন? ও এখন কোথায় তা আমরা কেউই জানি না।
-থাক আমি আর কোন কিছু শুনতে চাই না তোর ওই ভাইজি একটা ছেলের হাত ধরে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।আর তুই আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফুটানি মারছিস না তোকে আমি এক সপ্তাহ সময় দিলাম এর মধ্যে তুই আমার টাকা দিবি না হলে তোর ভাইজিকে দিবি। না হলে আমি কতটা খারাপ হতে পারি তোকে বোঝাই দিব।
এইবলে ওই ব্যাক্তি বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল। জুলির চাচার মাথা গরম হয়ে গেছে উনাকে অনেক খারাপ ভাষায় গালি খেতেই হয়েছে শুধু জুলির জন্য এরপর উনি রুমে এসে জামা প্যান্ট পড়ে জুলি কে খুঁজতে বের হলো। যেই জায়গাই আমাদের লাস্ট দেখেছিল ওখানে গিয়ে অনেক লোক কে জুলির ছবি দেখিয়ে ওর কথা জিজ্ঞাস করল কিন্তু কেউই জুলির কোনো পরিচয়
দিতে পারল না। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে আসলেন রহিম সাহেব।
জুলির চাচিঃ- দেখ আমার মনে হয় বিয়ের রাতে জুলি আমাদের এখান থেকে পালিয়ে ওর নানু বাড়ি গিয়ে উঠছে। তারপর ওর নানু রা কোন ভাল ছেলে দেখে ওর সাথে বিয়ে দিয়ে দিছে।
জুলির চাচাঃ- আরে আবল তাবল কি বলছো তুমি ও এখানকার কিছুই চেনে না নানুবাড়ি যাবে কিভাবে আর ওর নানা বাড়ির লোকেরা এত বড় সিধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের জানাতো। ও অন্য কোথাও আছে।
জুলির চাচিঃ- তাহলে মেয়েটা ওইদিন রাতে কোথায় গেল আর উনি তো বললেন ওকে একটা ছেলের সাথে দেখছে তাহলে ওই ছেলেটি বা কে?
জুলির চাচাঃ- আরে এডমিশন কোচিং করত না ওখান থেকে হয়তো কোন ছেলের সাথে প্রেমে জরিয়ে গেছে। কাল একবার আমি ভার্সিটি গিয়ে খোঁজ নিব ও আসে কি না? না আসলে তখন ওর নানু বাড়ি যাব গিয়ে আসল কাহিনি বের করব?হাতে তো এখন ও ৬ দিন সময় আছে এর মধ্যে কিছু একটা করতে হবে।
জুলির চাচিঃ- আচ্ছা আমি একটা কথা বলি ও যখন চলে গেছে তাহলে ওর জন্য এত করে কি হবে? যে যেখানে থাকুক আমাদের এর মধ্যে যাওয়া কি ঠিক হবে? এর থেকে ভালো তুমি ঐ ব্যাক্তির টাকা ফেরত দিয়ে দাও।
জুলির চাচাঃ- এই একদম চুপ তুমি কি পাগল হয়ে গেছ ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে আমি নতুন একটা ব্যবসা শুরু করছি এখন টাকা কিভাবে দিব? যেভাবেই হোক জুলিকে আমি ফিরিয়ে আনব আর পরের মেয়ের জন্য এত দরদ দেখিয়ে লাভ নেই।
জুলির চাচিঃ- এই কাজ গুলো ঠিক হচ্ছে না ও আমাদের মেয়ের বয়সী। তুমি আর একবার ভেবে দেখ এর থেকে ওর ঠিকানা যোগাড় করে ওদের মেনে নিই আমরা।
জুলির চাচাঃ- দেখ আমাকে জ্ঞান দিতে আসবা না এমন ভাব করছ যেন ও আমাদের মেয়ে। আমি আর এখন একটা কথাও ওর সম্পর্কে শুনতে চাই না আমাকে খেতে দাও আমার কাজ আছে।
এরপর চাচিও আর কিছু না বলে উনার স্বামীকে খেতে দিল।
রাত ৮ টা বাজে অফিস সবেমাত্র শেষ হলো আমি একটু পর গাড়ি নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বের হলাম।প্রতিদিন এর মতো আজও জ্যামে আটকে গেলাম। ১০ মিনিট পর আবার ড্রাইভ করা শুরু করলাম। গেটের সামনে এসে হঠাৎ গাড়ির জানলা দিয়ে চোখ বেলকুনির দিকে গেল। দেখি জুলি বেলকুনিতে দাড়িয়ে আছে আমাকে দেখা মাত্র দৌঁড় দিয়ে চলে গেল। হয়তো দরজা খুলতে যাচ্ছে আমি একটু পর সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলাম।
যা ভাবছি ঠিক তাই উনি আমার জন্য দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে। আমার দিকে একটু হেঁসে আবার দৌঁড় দিল। কি হলো যে উনার বুঝতে পারছি না। আজকে সকালে এতকিছু হলো উনার তো টেনশনে থাকার কথা কিন্তু জুলিকে দেখে মনে হচ্ছে অনেক হাসি-খুশি। আমি আর কিছু
না ভেবে রুমের দরজা আটকিয়ে আমার রুম এ আসতে যাব ঠিক তখনি আম্মু চিল্লানি দিয়ে বলল..
আম্মুঃ- এই তোর হাতে কি হয়েছে রে? ব্যান্ডেজ করা কেন? কিরে কি হলো বল?
আমিঃ- আম্মু আসলে অফিসে যাওয়ার আগে গেটের এর সাথে একটু খোঁচা লেগে সামান্য কেটে গেছে। এই আর কি আমার কিছুই হবে না কালকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে তুমি টেনশন করো না।
আম্মুঃ- এই মিথ্যা কথা বলছিস কেন? সামান্য কাটলে কি হাতে কেউ ব্যান্ডেজ করে হুম আর দেখে মনে হচ্ছে তো অনেকটাই কাটছে। সত্যি করে বলতো কিভাবে কাটছে?
আমিঃ- আম্মু আমি কি দুধ এর শিশু যে তুমি এত চিন্তা করছো আমি সত্যি বলছি হাতে একটু খোঁচা খায়ছি কালকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
এরপর আবার আম্মু কিছু বলতে চাচ্ছিলো তার আগেই আমি রুমে চলে আসলাম। এসে ড্রেস চেইন্জ করে বাথরুমে শাওয়ার নিতে চলে গেলাম। শাওয়ার শেষ এ টাওয়াল দিয়ে মাথা হালকা মুছে টাওয়ালটা খাটের পাশে রাখা টেবিলে রেখে বসে আছি একটু পর জুলি রুমে আসল। আমার চুল ভেজা দেখে উনি টাওয়াল দিয়ে আমার মাথা মুছিয়ে দিতে লাগলো আমি প্রথমে না করি কিন্তু উনার জেদ এর সাথে পেরে উঠলাম না তাই বাধ্য হয়ে জুলির কথা শুনতে হলো। আমি উনাকে ডাক দিবো তার আগেই উনি রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। এরপর আমি বসে টিভি দেখতে লাগলাম।
১০.৩০ এর দিকে জুলি এসে খাওয়ার জন্য ডাক দিলো তারপর রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে পায়চারি করছি কিন্তু ১১.২০ বাজতে যাচ্ছে জুলি রুমে আসছে না। এরপর আমি বারান্দায় গিয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে রাতের আকাশ এর দিকে তাকিয়ে আছি। একটু পর মোবাইল বের করে দেখি ১১.৪০ বাজে এরপর রুমে গিয়ে ল্যাপটপ অন করে অফিসের কিছু কাজ করছিলাম এর মধ্যে দেখি উনি আমার জন্য এক মগ কফি এনে পাশের টি টেবিলে রাখল।
আমিঃ- আচ্ছা আপনি তো আজ দেখি আমার জন্য অনেক কিছু করছেন?
উনি মাথা নেড়ে উত্তর দিলেন কি এমন করলাম।
আমিঃ- না মানে সকালে মাড়ামাড়ি করার পর আমার হাত কাটছে দেখে আমার হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। আমার ব্লিডিং হয়েছে অনেক বলে আমার জন্য নিজের হাত পুড়িয়ে গরম দুধ নিয়ে আসলেন তারপর এখন আমি প্রতিদিন এই টাইমে কফি খাই বলে আমাকে কফি করে দিলেন।
এরপর আমাকে হাত দিয়ে ৫ মিনিট ওয়েট করতে বলল তারপর খাতায় কি জানি লিখতে থাকল। লিখা শেষ হলে খাতা টা আবার আমার হাতে দিল..
জুলিঃ- আচ্ছা আপনি এইভাবে কথা বলছেন কেন? আপনি আমার জন্য ওই অসভ্য ব্যাক্তির সাথে মাড়পিট করলেন। এই কাজ গুলো করলে কি হয়েছে সারাদিন তো আমি বাসায় থাকি। এই রকম বললে আর কিন্তু আপনার কোন কাজ করে দিব না।
আমিঃ- আরে আপনি কি আমার উপর রাগ করছেন?
উনি মাথা নেড়ে না উত্তর দিল।
আমিঃ- আসলে আমি এমনি শুনছি প্লিজ মাইন্ড কইরেন না।
জুলি আবারও মাথা নেড়ে বললেন রাগ করেন নি।কিন্তু এবার আমি বুঝতে পারলাম উনার ঘুম আসছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেকি ১২ টা বাজে।
আমিঃ- জুলি আপনার হয়তো ঘুম পেয়েছে আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন কাল সকালে কথা হবে।
উনি আর কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল এরপর আমি আবার অফিস এর কাজ করতে মন দিলাম। একটু পর আমার ও চোখে ঘুম চলে আসল। আমি সব কিছু গুছিয়ে কাপটা রান্নাঘরে রেখে রুমে এসে দেখি উনি কাঁপছে ফ্যানের বাতাসে চাদরটা উনার শরীর থেকে সড়ে গেছে। এরপর আমি চাদর টা দিয়ে জুলির শরীর ডেকে সোফায় এসে শুয়ে পড়লাম। কিন্তু চোখ বুজলেই জুলির হাসি মাখা মুখ টা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বার বার মনে হচ্ছে উনি হয়তো আমাকে ভালোবাসে এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখগুলো লেগে গেছে মনে নেই।
.
.
চলবে……………………